Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শার্লক হোমস যাকে ‘সাদামাটা গোয়েন্দা’ বলে তাচ্ছিল্য করেছিল

ঘরে পা দিয়ে ড. ওয়াটসন বন্ধুকে খুঁজে পেলেন আর্মচেয়ারে। শরীর এলিয়ে দিয়ে প্রায় ডুবে আছেন শার্লক হোমস। সবে একটা রহস্যের সন্ধান পেয়েছেন তিনি, বোধহয় তাই নিয়েই চিন্তা করছেন।

“সত্যি বলতে কি বন্ধু,” হোমসের মুখোমুখি বসতে বসতে বললেন ওয়াটসন, “তোমার মত গোয়েন্দা বাস্তবে দেখেছি বলে মনে পড়ে না, কেবল মঁশিয়ে দ্যুঁপার কথাই মনে আসে।এডগার অ্যালান পো’র গল্পের বাইরে যে এরকম কেউ থাকতে পারে আমার ভাবনাতেও ছিল না।”

ধীরে-সুস্থে পাইপ ধরালেন হোমস, একগাল ধোঁয়া উঠে গেল সিলিঙয়ের দিকে। “ওয়াটসন, আমি জানি তুমি ভাবছো দ্যুঁপার সাথে তুলনা করে আমার প্রশংসা করা হচ্ছে। তবে বলে রাখি, দ্যুঁপাকে আমি খুব ভালো কোনো গোয়েন্দা বলে মনে করি না। হ্যাঁ, তার কিছুটা বিশ্লেষণী ক্ষমতা ছিল বটে, তবে সব মিলিয়ে খুব সাদামাটাই আমি বলবো তাকে।”

ওয়াটসন আর হোমসের কথোপকথন; Image Source: Wikimedia Commons

ওপরের ছোট্ট ঘটনাটি আ স্টাডি ইন স্কারলেট থেকে নেয়া। বিস্ময়ের ব্যাপার বটে! ওয়াটসন মনে করছেন দ্যুঁপার কথা বললে বন্ধু খুশি হবে, সেখানে হোমস উল্টো তার যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল! কিন্তু তারও আগের কথা হচ্ছে- এই দ্যুঁপা ভদ্রলোকটি কে? তিনি বিখ্যাত লেখক এডগার অ্যালান পো’র সৃষ্ট একটি চরিত্র, যাকে মনে করা হয় আধুনিক গোয়েন্দাদের পথিকৃৎ।  

কিন্তু দ্যুঁপাকে নিয়ে হোমসের এমন কথাবার্তা কেন? বলা ভালো যে, কোনান ডয়েলের অনেক পাঠকই হোমসের বাগাড়ম্বর ভালোভাবে নেননি। পরবর্তীতে ডয়েল ব্যাখ্যা করেন যে, হোমসের চরিত্রকে তিনি কিছুটা অহঙ্কারিভাবেই এঁকেছেন, ফলে তার মুখ দিয়ে দ্যুঁপার প্রশংসা বের করা সমীচীন মনে করেননি তিনি।

কিন্তু, ডয়েল নিজে দ্যুঁপার ব্যাপারে কি মনে করতেন? এক্ষেত্রে কিন্তু প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেননি তিনি। ১৮৯২ সালের ৮ মে বোস্টন হেরাল্ডে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে গল্পের দ্যুঁপাকে তিনি তার দেখা সেরা গোয়েন্দা বলে দাবি করেন। যদিও এই কথা নিয়ে বহু বিতর্কের সুযোগ আছে, তবে এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, আজকে আমরা ডিটেকটিভ ফিকশন বলতে যে ধারাকে চিনি, তার জন্ম দ্যুঁপার মাধ্যমে, অ্যালান পো’র হাত দিয়ে।   

ডিটেকটিভ ফিকশনের জন্মকথা

অধিকাংশ গবেষক এডগার অ্যালান পো-কেই গোয়েন্দা গল্প বা ডিটেকটিভ ফিকশনের জনকের স্বীকৃতি দেন, যদিও তার আগেও এ ধরনের গল্পের দেখা মেলে। তবে পো-র হাত ধরেই বলা যায় সাহিত্যের এই শাখা বিকশিত হতে আরম্ভ করে। কোনান ডয়েলের মতে, পো ডিটেকটিভ ফিকশনকে সঞ্জীবিত করেছেন। গোয়েন্দা গল্পও যে পাঠক ও সমালোচকদের কাছে সমাদৃত হতে পারে সেটা দেখিয়েছেন তিনিই।

এডগার অ্যালান পো; Image Source: imdb.com

পো-র আগেও কিছু গল্পের বিবরণ পাওয়া যায় যাকে আমরা গোয়েন্দাগল্পের আদিরূপ ধরে নিতে পারি। গবেষকদের কেউ কেউ আরব্য রজনীর ‘তিনটি আপেলের গল্প’কে (The Three Apples) প্রথম গোয়েন্দা গল্প বলতে চান। তবে এই কাহিনীর মূল চরিত্র রহস্যভেদ তো দূরে থাক, বলার মতো গোয়েন্দাগিরির কোনো চেষ্টাই করেনি। সুতরাং অনেকেই এতে দ্বিমত করেন, তারা দাবি করেন- ইতিহাসের প্রথম গোয়েন্দা কাহিনীর উৎপত্তি পার্সিয়ান উপকথা থেকে। পার্সিয়ান এই উপকথার নাম ‘সেরেন্দিপের তিন রাজপুত্র’ (The Three Princes of Serendip)। সেরেন্দিপ আজকের শ্রীলঙ্কার বহু পুরাতন নাম, কাজেই বোঝাই যাচ্ছে এই কাহিনীর প্রেক্ষাপট সেখানেই। রাজপুত্ররাই এখানে গোয়েন্দা, হারানো একটি উট খুঁজে বের করাই তাদের লক্ষ্য।

দ্য থ্রি প্রিন্সেস অফ সেরেন্দিপকে অনেকে ডিটেকটিভ গল্পের পথে প্রথম পদক্ষেপ মনে করেন; Image Source: theteknologist.wordpress.com

১৮২০ সালের কাছাকাছি সময়ে লেখা ‘মাদমোয়াজেল স্কুডেরি’ (Das Fräulein von Scuderi) রহস্যকাহিনী ধরা যেতে পারে। জার্মান রোমান্টিক আর হরর গল্প রচয়িতা হফম্যান (E. T. A. Hoffmann) এর লেখক। ১৮৩৭ সালে প্রকাশিত ‘দ্য সিক্রেট সেল’কেও অনেকে ডিটেকটিভ ফিকশনের তকমা দিয়ে থাকেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে- এই গল্প লিখেছিলেন পো’র প্রকাশক, উইলিয়াম এভান্স বার্টন। অপহৃত এক বালিকাকে উদ্ধারে পুলিশের চেষ্টা নিয়ে কাহিনী বুনেছিলেন তিনি।

তবে ১৮৪১ সালকেই মূলত আনুষ্ঠানিকভাবে ডিটেকটিভ ফিকশনের জন্মসাল ধরা যায়। এই বছর এডগার অ্যালান পো পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেন ফরাসী এক ব্যক্তি, অগাস্ট দ্যুঁপার সঙ্গে। তার লেখা দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গ সৃষ্টি করে সাহিত্যের নতুন এক ধারার। চার বছর পর দ্যুঁপাকে পো ফিরিয়ে আনেন দ্য পার্লয়েন্ড লেটার (The Purloined Letter) এবং দ্য মিস্ট্রি অব মেরি রোঁগ (The Mystery of Marie Roget)।  

দ্যুঁপাকে মোট তিনটি গল্পে হাজির করেছেন পো; Image Source: ericgerlach.com

আগে যা-ই হোক না কেন, এ কথা অনস্বীকার্য যে দ্যুঁপার পর ডিটেকটিভ ফিকশনের হিড়িক পড়ে যায়। বড় আকারে গোয়েন্দা উপন্যাস লেখার প্রতিও ঝুঁকে পড়েন অনেকে। ১৮৬৬ সালে ফরাসি এমিল গ্যাব্রিউর L’Affaire Lerouge এক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে মনে করেন অনেকে। গ্যাব্রিউর গোয়েন্দাই প্রথম নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তথ্য জোগাড় করে রহস্য সমাধান করেন। পাঠকের সাথে অ্যামেচার ডিটেকটিভদের প্রথম পরিচয় হয় তার মাধ্যমেই। একই বছর গোয়েন্দা লেখিক হিসেবে নাম লেখান নারীরাও। মাসিক ব্র্যাডলি ম্যাগাজিনে সিলি রেজিস্টার ছদ্মনামে নামকরা লেখিকা ভিক্টোরিয়া ফুলারের গোয়েন্দা গল্প ছাপা হয়।

গ্যাব্রিউ ব্যতীত গোয়েন্দা উপন্যাস সূচনার কৃতিত্ব যদি কাউকে দিতে হয়, তিনি উইকি কলিন্স। ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত তার দ্য উইম্যান ইন হোয়াইট প্রথম রহস্যোপন্যাস বলে মনে করেন গবেষকেরা। ১৮৬৮ সালে বের হয় দ্য মুনস্টোন, যা তর্কসাপেক্ষে প্রথম ডিটেকটিভ বই ধরা যায়। যদিও অনেকে মনে করেন, এই গৌরব পাঁচ বছর আগে বের হওয়া দ্য নটিং হিল মিস্টোরি‘র, যদিও এর রচয়িতার নাম পাওয়া যায়না। অনেকে তো আরো পিছিয়ে ভলতেয়ারের জাদিগে‘র (Zadig; ১৭৪৮) বা চার্লস ডিকেন্সের ব্লিক হাউজে‘র (১৮৫৩) গায়ে এই টাইটেল সেঁটে দেন। 

উইকি কলিন্সের ‘দ্য মুনস্টোন’কে অনেক গবেষক প্রথম ডিটেকটিভ উপন্যাসের স্বীকৃতি দেন; Image Source: Wikimedia Commons

১৮৭৮ সাল মার্কিন লেখিকা অ্যানা ক্যাথেরিন গ্রিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ডিটেকটিভ ফিকশনের সূচনা করেন দ্য ল্যাভেনওয়ার্থ কেসে‘র মাধ্যমে। প্রায় ৭,৫০,০০০ কপি বিক্রি হওয়া এই বই যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক যুগের বেস্ট সেলারগুলোর অন্যতম। গ্রিনের দেখানো পথে আবির্ভূত হন আরো অনেক নারী রহস্যোপোন্যাস লেখিকা।  

১৮৮৬ সালে রহস্যোপোন্যাসের তালিকায় নাম লেখায় রবার্ট লুই স্টিভেনসনের কালজয়ী এক সৃষ্টি, ডক্টর জেকিল অ্যান্ড মিস্টার হাইড। একই বছর ফার্গাস হিউম নামে এক ব্রিটিশ লেখক রচনা করেন মিস্ট্রি অব আ হ্যানসম ক্যাব (Mystery of a Hansom Cab)। অস্ট্রেলিয়ায় প্রকাশিত এই বই দ্রুতই বেস্ট সেলার লিস্টে উঠে যায়। পরের বছর আর্থার কোনান ডয়েল নামে এক দন্ত চিকিৎসক ফিকশনের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোয়েন্দা শার্লক হোমসকে পাঠকের সামনে নিয়ে এলেন, কিন্তু বিক্রিবাট্টায় ফার্গাস হিউম তাকে ছাড়িয়ে চলে যান।

হোমসের পর ডিটেকটিভ ফিকশনে আগমন ঘটে আরো অনেক রহস্যভেদীর। ১৯২০ এর দশকে কুইন অফ মিস্ট্রি আগাথা ক্রিস্টির কলমে জন্ম নেন এরকুল পোয়ারো এবং মিস মার্পল। কাছাকাছি সময়ে ডরোথি এলো সেয়ার্সের লর্ড পিটার উইমসি এবং  মার্কিন লেখক ফ্রেডেরিক ড্যানেই আর ম্যানফ্রিড ব্যানিংটন লি’র এলেরি কুইন চরিত্র দুটিও জনপ্রিয়তা লাভ করে।

১৯৩০ এর দশককে বলা যায় ডিটেকটিভ ফিকশনের স্বর্ণালি সময়। আগাথা ক্রিস্টি, ডরোথি সেয়ার্স, জোসেফাইন টে, মার্জোরি অ্যালিংহ্যাম আর নেগিও মার্শ এদের বলাই হয় কুইন অফ গোল্ডেন এজ। ড্যাশিয়েল হ্যামেট, রেমন্ড শ্যান্ডলার, মিকি স্পিলেন এদের মত লেখকেরাও পিছিয়ে ছিলেন না। এরপর ডিটেকটিভ ফিকশন কালের ধারায় বিবর্তিত হয়েছে অনেক, চেয়ারে বসে মাথা খাটানো গোয়েন্দাদের স্থান দখল করেছে পৃথিবীজুড়ে ছুটে বেড়ানো অ্যাডভেঞ্চারারেরা। তবে অনেকেই বলে থাকেন, ডিটেকটিভ ফিকশন তার শ্রেষ্ঠ সময় ১৯৩০ এর দশকে পার করে এসেছে।

কুইনস অফ ডিটেকটিভ ফিকশন (বাম থেকে ডানে-ক্রিস্টি, সেয়ার্স, অ্যালিংহ্যাম আর টে); Image Source: crimereads.com

দ্যুঁপার অনুপ্রেরণা

আবার ফিরে যাই এডগার অ্যালান পোর গোয়েন্দার কোথায়, তার থেকেই তো গতি পেল রহস্য সাহিত্য, গোয়েন্দাগিরির পোকা ঢুকে পড়ল পাঠকমহলে।

বহু লেখকই তার চরিত্রকে একেবারে কল্পনা থেকে তৈরি করেন না, বাস্তবে দেখা এক বা একাধিক মানুষের প্রতিচ্ছবি থাকে সেখানে। কোনান ডয়েল যেমন হোমসের অনুপ্রেরণা হিসেবে দ্যুঁপাসহ কয়েকজনের কথা উল্লেখ করেছেন। পো কি তেমন কাউকে দেখেই দ্যুঁপাকে সৃষ্টি করেছিলেন?

গবেষকদের মতে কিন্তু তা-ই। তারা ফরাসি পুলিশ চীফ ফ্রাসোয়া ইউজিন ভিদোককে (François-Eugène Vidocq) মনে করেন দ্যুঁপার প্রাণপুরুষ। ভিদোকের জীবন কিন্তু বেশ চমকপ্রদ। ফরাসি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করেন, এরপর জড়িয়ে পড়েন অপরাধের সাথে। কিছু সময় জেলও খেটেছেন তিনি।

ভিদোককে অনেকেই দ্যুঁপা’র অনুপ্রেরণা মনে করেন; Image Source: Wikimedia Commons

১৮০৯ সালে নেপোলিয়নের রাজত্বকালে পুলিশে চাকরির দরখাস্ত করেন ভিদোক। তার অপরাধজীবনের অভিজ্ঞতাই তাকে সাহায্য করে। চাকরি পেয়ে অপরাধী ধরতে নতুন একটি ডিপার্টমেন্ট তৈরি করেন তিনি, যা আজকের দিনের ফরাসি পুলিশের গোয়েন্দা দফতর বা ‘সুরেতে’র (Sûreté) আদিরূপ।

ভিদোক বহু জটিল অপরাধের রহস্য উন্মোচন করে বিখ্যাত হয়ে যান। ১৮২৭ সালে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়েন তিনি, যেখানে কাজে লাগান মুক্তিপ্রাপ্ত আসামীদের। তবে শিগগিরই ব্যবসা লাটে উঠলে রাজা লুই ফিলিপের শাসনামলে আবার পুলিশে যোগ দেন তিনি। কিন্তু ১৮৩২ সালে তার বিরুদ্ধেই চুরির অভিযোগ উঠলে তাকে পদচ্যুত করা হয়।

ভিদোক এরপর ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলে বসেন, তবে কিছুদিন পরে কর্তৃপক্ষ সেটাও বন্ধ করে দেয়। তবে তিনি ফরাসি জনগণের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। এর একটি কারণ হতে পারে ১৮২৮-২৯ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী, যেখানে তিনি নিজের বিভিন্ন কীর্তিকলাপের বিশাল বিবরণ দিয়েছেন।

তবে আধুনিক গবেষকরা একমত যে ভিদোকের বর্ণনা অনেকাংশেই অতিরঞ্জিত, তিনি নিজেকে জাহির করতে অনেক আষাঢ়ে গপ্পো ফেঁদেছিলেন। আবার এমন অনেক ঘটনা নিজের নামে চালিয়েছেন যেখান তার কোনো সংশ্লিষ্টতাই ছিল না। আত্মজীবনীতে নিজের নামে একটি ক্যাচফ্রেসও প্রচলন করেন তিনি, “আমিই ভিদোক, এবং আমি তোমাকে গ্রেফতার করছি।” অবশ্য কস্মিনকালেও এমন কিছু বাস্তবে তিনি বলতেন বলে প্রমাণ নেই।

যা-ই হোক, এ কথা অনস্বীকার্য যে ভিদোকের মতো বর্ণিল চরিত্র লেখার যথেষ্ট মালমশলা সরবরাহ করে।ফরাসি জনগণের কাছেও রহস্যভেদী হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন তিনি। ফলে পো যে দ্যুঁপা’কে লিখতে ভিদোকের কথা ভেবেছেন তা কষ্টকল্পনা মনে হয় না।  

কেমন ছিলেন দ্যুঁপা?

এডগার অ্যালান পোর একমাত্র চরিত্র এই দ্যুঁপা, যিনি একাধিক গল্পে উপস্থিত হয়েছেন। দ্যুঁপাকে নিয়ে সব মিলিয়ে তিনটি গল্প লিখেছেন পো, পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল সবগুলোই। দ্যুঁপা’র প্রথম গল্প, দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গে পো ডিটেকটিভ ফিকশনে প্রথমবারের মতো অবতারণা করেন বন্ধ ঘরের ভেতর খুনের রহস্যের। দুজন মৃত মহিলা, রক্তমাখা রেজর, স্বর্ণমুদ্রার থলি আর একগাছি চুল এই নিয়ে গল্প।

ইতিহাসবিদ হেলেনা মার্কোভিচ আর বিলিয়ানা অক্লোপসিকের মতে, এই কাহিনীর ভেতর দিয়ে পো পরবর্তীকালের ডিটেকটিভ ফিকশনের কাঠামো তৈরি করেন। অপরাধীকে খুঁজে বের করার অদম্য চেষ্টার সাথে পাঠককে সম্পৃক্ত করে জন্ম দেন নতুন সাহিত্যধারার। কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে প্রথমবারের মতো গল্পে তিনি ব্যবহার করেন গোয়েন্দাকে, যদিও পো’র দ্যুঁপা নিজেকে গোয়েন্দা মনে করতনা। তার আগ্রহ ছিল কবিতায়, কেবল ঘটনার ফেরে গোয়েন্দাগিরি করতে হয় তাকে। দ্যুঁপা পুলিশ বাহিনীকে সাহায্য করেন, যাদের পো দেখিয়েছেন অযোগ্য হিসেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই ছাঁচ পরবর্তী অনেক লেখকই অনুসরণ করেছেন। মনে পড়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ইন্সপেক্টর লেস্ট্রেডের কথা?

দ্যুঁপা কিছুটা অদ্ভুতুড়ে স্বভাবের, মানুষজনের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেই পছন্দ করেন তিনি। রাতের বেলা মোমের আলোয় পাইপ খেতে খেতে রহস্য সমাধান করাই তার বৈশিষ্ট্য। হোমস কিন্তু মোটামুটি একই ফর্মুলা অনুসরণ করে।

পোর গল্পের উপাদানগুলোর দিকে একটু তাকানো যাক। একজন ঘরকুণো ডিটেকটিভ, ঘটনা বর্ণনাকারী বন্ধু, যদিও পো তার নাম উল্লেখ করেননি, দিশেহারা পুলিশ, দুর্বোধ্য রহস্য, যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এসবই আমাদের অতি পরিচিত। হোমস আর পোয়ারো অনেকটা এভাবেই গড়া। এমনকি বন্ধুর চোখে বর্ণনার তাগিদে কোনান ডয়েল ড. ওয়াটসন আর ক্রিস্টি সৃষ্টি করেছেন আর্থার হ্যাস্টংসকে।

অনেকেই মনে করেন, উনিশ শতকে মানুষ বিশ্বাস করত যুক্তির মাধ্যমে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব। ফলে পো যখন দ্যুঁপাকে দিয়ে যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে রহস্য সমাধানের পথ বাতলে নেন, এই ফর্মুলা সাগ্রহে গ্রহণ করে পাঠক। গতি পায় ডিটেকটিভ ফিকশন।

ফিকশনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ডিটেকটিভ শার্লক হোমসকে তৈরি করতে গিয়ে কোনান ডয়েল তাই অনেকটা সচেতনভাবেই দ্যুঁপার ছাঁচ ব্যবহার করেছেন। পোর গল্পের অনেককিছু পরিশীলিত করে হোমসের কাহিনীতে যুক্ত করেছেন তিনি। ১৯০২ সালে প্রকাশিত ‘অ্যাডভেঞ্চারস অব শার্লক হোমস’ গল্পগ্রন্থের ভূমিকায় পোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তিনি এভাবে,

আজকের যুগে সাহিত্যের অনেক ধারার বীজ বুনে দিয়ে গেছেন মহা প্রতিভাধর এক লেখক, এডগার অ্যালান পো। আমরা এখন যে ডিটেকটিভ গল্প লিখছি, তার জনক কিন্তু তিনিই। সত্যি বলতে কি- পো তার লেখনী দিয়ে এই ধারাকে এমনভাবে সমৃদ্ধ করেছেন যে নতুন কিছু তৈরির সুযোগ খুবই কম।”

This is a Bengali language article about the origin of Detective Fiction and the role of Edgar Alan Poe. The article describes the impact Poe’s detective, August dupin had on this genre of fiction and how it influenced writers like Sir Arthur Conan Doyle.

Feature Image © Frédéric Théodore Lix
1. Burrow M. (2019) Holmes and the history of detective fiction. The Cambridge Companion to Sherlock Holmes, , pp. 15-28.
2. Eschner, K. (2017). Without Edgar Allan Poe, We Wouldn’t Have Sherlock Holmes. Smithsonian Magazine
3. Sherlock Holmes Quotes.
4. Encyclopedia Britannica.

Related Articles