Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বেলফাস্ট: এক আইরিশ মধ্যবিত্ত পরিবারের সংগ্রামের গল্প

বেলফাস্ট উত্তর আয়ারল্যান্ডের একটা শহর। নাম দেখে অনুমান করা যায় সিনেমাটি বেলফাস্ট শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা। সিনেমা দেখা শুরু করলে সেই অনুমানেরই সঠিক বাস্তবায়ন দেখা যায়। সিনেমার প্রেক্ষাপট ষাটের দশকের শেষের দিকে আয়ারল্যান্ডে শুরু হওয়া সহিংস আন্দোলন ‘দ্য ট্রাবলস’ এর সময়ে, যা তিন দশক স্থায়ী ছিল। সেই আন্দোলনটায় ধর্ম, রাজনীতি, জাতিগত বিদ্বেষ সবই উপস্থিত ছিল। ওই সময়টায় বেলফাস্টের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সংগ্রাম নিয়েই মূলত সিনেমার গল্প।

শুরুতে দেখা যায় শহরের বিভিন্ন স্থানের রঙিন দৃশ্য, কর্মব্যস্ততা আর আধুনিক স্থাপনার ছবি। আপাত দৃষ্টিতে সেটা বর্তমান সময়ের বলেই মনে হয়। এরপরই দর্শকদের নিয়ে যাওয়া হয় সাদাকালো ছবিতে, ১৯৬৯ সালের ১৫ আগস্টে, বেলফাস্টের এক গলিতে। খুবই প্রাণবন্ত সেই গলি। সেখানকার অধিবাসীরা প্রতিবেশীদের সাথে হাসিখুশি মুখে একে অন্যের খবর নিচ্ছে, শিশুরা খেলাধুলা করছে।

শিশুদের মধ্যে একটা ছেলে বাডি, যে এই গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র। তার চরিত্রটা যেন দর্শকদেরই প্রতিনিধিত্ব করে। তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দর্শকদের বেলফাস্টের ওই সময়টার গল্প বলা হয়। সে গলির রাস্তায় খেলাধুলা করতে করতে হঠাৎ আবিষ্কার করে একদল লোক এসে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। এরা ছিল প্রোট্যাস্টেন্ট সমর্থক। তারা সেই গলিতে থাকা ক্যাথলিকদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিল। হঠাৎ করে হাসিখুশি পরিবেশটা পরিণত হয়ে যায় রণক্ষেত্রে। রঙিন ছবি থেকে সাদাকালোতে চলে আসা যেন শুধু সময়ের ব্যবধানই দেখাচ্ছিল না। ছবির মতো সুন্দর শহরে যে একটা কুৎসিত রূপও লুকিয়ে আছে, সেটাও যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিল।    

সিনেমার পোস্টার; Image Source: IMDb

বাডির পরিবারে তার বাবা-মা, বড় ভাই, আর দাদা-দাদী। তারা একসাথেই থাকে। তাদের বেড়ে উঠা বেলফাস্টেই। বাডি বুঝতে পারে না একই শহরে, একই এলাকায় থেকেও সেখানকার মানুষদের মধ্যে এত বিভেদ কেন। সিনেমায় তাকে একটা রাস্তার ছবি আঁকতে দেখা যায়, যেখানে রাস্তাটি একসময় দুই দিকে চলে যায়। এটা যেন সেখানকার মানুষদের বিভক্তিই নির্দেশ করছিল। সে ধরতে পারে না কে ঠিক, আর কে আসলে ভুল। এ কারণেই দুটি রাস্তায় ভালো আর খারাপ লিখে রাখলেও মাঝখানে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে রাখে। চার্চে গিয়েও শুনতে পায় ক্যাথলিকদের প্রতি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য।    

তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রোট্যাস্টেন্ট গোত্রের অংশ হলেও নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে না। বাডির বাবা পা কাজ করেন ইংল্যান্ডে। প্রতি সপ্তাহের শেষের দিকে আসেন পরিবারের সাথে সময় কাটাতে। আর্থিক দিক দিয়ে তাদের সংগ্রামের জীবন কাটাতে হয়। সিনেমাটিতে দেখানো তখনকার খবরের ক্লিপিং দেখে বোঝা যায়, ষাটের দশকে আয়ারল্যান্ডে বেকারত্বের সমস্যাও ছিল প্রকট।  তার ওপর ট্রাবলসের সংকট। পা পরিবার অন্তপ্রাণ বাবা। কারো সাতেও থাকতে চান না, পাঁচেও না। কিন্তু সমাজ তাকে এমন নির্ভেজাল জীবন কাটাতে দেয় না। প্রোট্যাস্ট্যান্ট সমর্থকরা বলে, তিনি যদি নিজেকে তাদের দলের অংশ মনে করেন, তাহলে তাকেও সহিংসতায় অংশ নিতে হবে। অর্থাৎ, হয় তুমি আমাদের পক্ষে অথবা বিপক্ষে। এর মাঝামাঝি কোনো অবস্থানে থাকার সুযোগ নেই।

সিনেমার একটি দৃশ্য; Image Source: Rob Youngson /Focus Features

তাই প্রোট্যাস্ট্যান্ট পরিবারের হয়েও তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় বেলফাস্ট ছেড়ে যাওয়ার। কিন্তু যেতে চাইলেই কি চলে যাওয়া যায়? শুধু বাডি আর তার বড় ভাইই নয়, তার বাবা-মায়েরও বড় হয়ে উঠা বেলফাস্টে। বেলফাস্টের অলিগলি আর মানুষজন তাদের যতটা চেনা, এখানকার মানুষদের যতটা ভালোবাসা তারা পান, সম্পূর্ণ নতুন জায়গায় গিয়ে কি তারা সেটা পাবেন? এখানকার মানুষদের সঙ্কটে রেখে চলে গেলে নতুন জায়গার মানুষজন তাদের কীভাবে দেখবে? নাকি তাদের ঘৃণা করবে এমন জাতিগত দ্বন্দ্বে লিপ্ত গোষ্ঠীর লোক হওয়ায়? তাদের ভাষার উচ্চারণ নিয়ে কি মজা করবে? বাডিও তার বৃদ্ধ দাদা-দাদীকে রেখে যেতে চায় না।

কিন্তু তারা যদি থেকেও যান, তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে? প্রতিদিন সহিংসতায় খুন হওয়া কিংবা গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের মধ্যে কি তাদের সন্তানরাও থাকবে? ট্রাবলসের সময়টায় এই আইরিশ পরিবারের পিছুটান আর অভ্যন্তরীণ জটিলতাগুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটে ওঠেছে বেলফাস্ট সিনেমাতে।

পরিচালক কেনেথ ব্র্যানা বেলফাস্ট সিনেমায় নিজের ছোটবেলার গল্প তুলে এনেছেন। ৯ বছর বয়সে তিনিও ট্রাবলসের কারণে বেলফাস্ট ছেড়েছিলেন। বাডির মাধ্যমে যেন নিজেকেই তুলে ধরলেন দর্শকদের সামনে। এতে হিউমার ছিল প্রচুর। এই সঙ্কটের সময়টাতেও পুরো পরিবারের সদস্যরা একসাথে চলে যেতেন হলে সিনেমা দেখতে। বাডির দাদা-দাদী চরিত্রে কাজ করা কিয়ারান হাইন্ডস আর জুডি লিঞ্চের কথোপকথনে কমেডি উপাদান ছিল প্রচুর। জুডি লিঞ্চকে জেমস বন্ড সিরিজে এম চরিত্রে দেখে অভ্যস্ত হলেও এখানে তাকে আর দশটা সাধারণ বয়স্ক নারীর চরিত্রেই দেখা যায়। অল্প সময় পর্দায় থাকলেও তাদের দুজনের চরিত্রই যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিল। দুজনই অস্কারে সেরা পার্শ্বচরিত্রের মনোনয়ন পেয়েছেন। কিয়ারান হাইন্ডস নিজেও সত্তরের দশকে ট্রাবলসের সময়টায় আয়ারল্যান্ড ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে যান। পর্দায় প্রোট্যাস্ট্যান্ট চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তব জীবনে তিনি ক্যাথলিক

বেলফাস্ট সিনেমার একটি দৃশ্য; Image Source: FOCUS FEATURES/ UNIVERSAL

বাডির সরলতাও দর্শকদের মনমুগ্ধ হওয়ার একটি উপকরণ বেলফাস্ট সিনেমাতে। বাডি চরিত্রে কাজ করা জুড হিলের রূপালী পর্দায় অভিষেক হয়েছে এই সিনেমা দিয়ে। মাত্র ১১ বছর বয়সী এই খুদে অভিনেতা প্রথম ছবি দিয়েই একগাদা পুরস্কার আর মনোনয়ন পেয়ে বসে আছেন। জেমি ডোরনান এখানে খুবই সাধারণ দায়িত্ববান এক পিতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সন্তানদের বাইরের দুনিয়ার কুৎসিত রূপ থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে তার প্রচেষ্টার সাথে দর্শকদের আবেগ খুব ভালোভাবেই সংযোগ করবে। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা ক্যাটরিনা বালফও ছিলেন দুর্দান্ত। বাফটাতে সেরা পার্শ্ব চরিত্রের মনোনয়ন পেয়েছিলেন এই চরিত্রের জন্য।   

বেলফাস্ট সিনেমার পরিচালক ক্যানেথ ব্র্যানা, যিনি একজন অভিনেতাও; Image Source: BBC

পরিচালক ব্র্যানা কোভিডের লকডাউনের সময় যখন অলস সময় কাটাচ্ছিলেন, ভাবলেন নিজের ছোটবেলার গল্পকেই তুলে নিয়ে আসবেন পর্দায়। তাই লিখে ফেললেন তার নিজের গল্পের ওপর একটা চিত্রনাট্য। এতে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বেশ কিছু ক্লাসিক সিনেমার দৃশ্যও তুলে এনেছেন। যেন নিজের ছোটবেলার সিনেমা দেখার স্মৃতিগুলোই রোমন্থন করলেন। সাদাকালো ছবিতে অনেকটা আত্মজীবনীমূলক গল্প তুলে আনা কয়েক বছর আগে আলফনসো কুয়ারনের রোমা সিনেমার কথাও মনে করিয়ে দেয়।

রোমার মতো মাস্টারপিস একে বলা যাবে না। তবে শৈল্পিক দিক দিয়ে কোনো অংশেই কম নয় বেলফাস্ট। তাই তো সেরা ছবির পাশাপাশি সর্বমোট সাতটি অস্কার মনোনয়ন পেয়েছে ছবিটি। ব্র্যানা নিজেও সেরা পরিচালকের মনোনয়ন পেয়েছেন। থর, ডেথ ইন দ্য নাইলের মতো বাণিজ্যিক ছবির পাশাপাশি সমালোচকদের মন জয় করার মতো ছবিও যে বানাতে পারেন, আরেকবার তার প্রমাণ দিলেন।

বেলফাস্টে নেতিবাচক বিষয় একেবারে ছিল না তা বলা যাবে না। আয়ারল্যান্ডের রাস্তাঘাট যেন একটু বেশিই পরিষ্কার মনে হচ্ছিল। নয় বছর বয়সী বাডির সাথে স্কুলের সহপাঠীর প্রেমের সম্পর্ক দেখানোর চেষ্টাটা একটু অবাস্তব ব্যাপার মনে হতে পারে। এর চেয়ে প্রোট্যাস্ট্যান্ট ছেলের সাথে ক্যাথলিক মেয়ের বন্ধুত্ব দেখিয়ে একটা বার্তা দেখানো পর্যন্ত থাকলেই হয়তো বিষয়টা বাস্তবসম্মত হতো। এছাড়া ব্র্যানা কুয়ারনকে অনুকরণ করতে গিয়ে আরেকটা রোমা বানানোর চেষ্টা করেছেন কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। তবে এসব ছোটখাট দুর্বলতা বাদ দিলে বেলফাস্ট ২০২২ সালের অস্কারে ভালোভাবেই দৌড়ে আছে বলা যায়। রোটেন টমেটোতে ৮৭% ফ্রেশ আর আইএমডিবিতে ৭ এর ওপর রেটিং বলে দেয়, সমালোচকদের পাশাপাশি দর্শকরাও সিনেমাটি ভালোই পছন্দ করেছেন।  

This is a Bengali article written about 2022 Oscar nominated film Belfast. All the references are hyperlinked in the article. 

Featured Image: Rob Youngson / Courtesy Focus Features

Related Articles