১৯৯১ সাল। ঝিকঝিক করে পাহাড়-পর্বত, নদী ও মেঘমালা ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে হগওয়ার্টস এক্সপ্রেস। শিক্ষক, শিক্ষার্থী বোঝাই এ ট্রেন সমবেগে ছুটে চলেছে হগওয়ার্টসের উদ্দেশে। ট্রেনের এক কামরায় বসে গল্প-গুজবে মেতে আছে সদ্য পরিচিতি পর্ব সারা হ্যারি পটার ও রন উইজলি। হঠাৎই এগারো বছর বয়সী ফুটফুটে, মায়াবী চেহারা, ও বাদামি-চুলো এক বালিকা উপস্থিত হলো সেখানে। এভাবেই ফ্যান্টাসি পাঠকদের প্রিয় চরিত্র ফর্দে যুক্ত হয়েছিল হারমায়োনি গ্রেঞ্জার নামক সপ্রতিভ এক কাল্পনিক চরিত্রের নাম।
স্বভাবে চালাক-চতুর, আচরণে কঠোর-কোমল এই ফুলকুমারী, মেধার জোরে কাঁপিয়েছে হগওয়ার্টসে আঙিনা, দাপিয়ে বেড়িয়েছে জাদু জগতের জাদুকরী ভুবন। হ্যারি পটার ও রন উইজলিকে সাথে নিয়ে তৈরি করেছে পৃথিবীর জনপ্রিয় কয়েকটি ত্রয়ীর মধ্যে একটি। হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির এই মহীয়সী, প্রতিভাবান, ও ধীশক্তিসম্পন্ন এই জাদুকরের নানা দিক নিয়ে আজকের লেখার আয়োজন।
হাউজ র্যাভেনক্লতে হারমায়োনি
মেধার রঙে হগওয়ার্টসের ভুবন রাঙানো হারমায়োনি যে হাউজ গ্রিফিন্ডরের সেরা কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্যতম, সে বিষয়ে কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, তার সমসময়িক নারী জাদুকরদের মধ্যে সে ছিল অন্যতম সেরা একজন। 'হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্স' বইয়ে বর্ণনা করা আছে, হগওয়ার্টসে হারমায়োনির হাউজ নির্বাচনের সময় সর্টিং হ্যাট গোলকধাঁধায় আটকে গিয়েছিল। হ্যাট প্রথমে চেয়েছিল, তাকে হাউজ র্যাভেনক্ল'র জন্য নির্বাচন করতে। এর পেছনের কারণটাও অবশ্য যুক্তিযুক্ত। কারণ, এ হাউজের শিক্ষার্থীরা বেশ পড়ুয়া স্বভাবের অধিকারী হবার পাশাপাশি তাদের বুদ্ধির ধারও থাকে বেশ।
সকল গুণের অনুপম মিশ্রণে গড়া হারমায়োনির পড়ুয়া, বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তা স্বভাবই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ফুটে উঠেছে সবচেয়ে বেশি। কেউ এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলে, সর্টিং হ্যাট সে শিক্ষার্থীকে হাউজ র্যাভেনক্লয়ে পাঠায়। কিন্তু উপরোক্ত গুণগুলোর পাশাপাশি অসম সাহসের অধিকারী এবং নিয়ম ভাঙতে পটু হওয়ায়, সে হ্যারি ও রনের সাথে স্থান পায় হাউজ গ্রিফিন্ডরে।
অপারগতা
'হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অভ আজকাবান'-এ সিরিয়াস ব্ল্যাক উল্লেখ করেছিলেন, হারমায়োনি গ্রেঞ্জার তার সময়ের সেরা নারী জাদুকরদের মধ্যে অন্যতম একজন। সিরিয়াস ব্ল্যাক যে অত্যুক্তি করেননি, এর প্রমাণ খোদ দর্শক ও পাঠকরাই। হ্যারি পটার এবং রন উইজলি বিপদের গ্যাঁড়াকলে ফেঁসে গেলে, প্রতিবার তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে প্রত্যুৎপন্নমতি হারমায়োনি গ্রেঞ্জার।
একটা মানুষ সবদিকে নিখুঁত হতে পারে না। হারমায়োনিও কিছু দিকে দুর্বল ছিল। সেগুলোর মধ্যে, ব্রুমস্টিক দিয়ে আকাশে ওড়া, ভবিষ্যৎ গণনা আর দাবা খেলা অন্যতম। খোলা ময়দানে সবাই মাটি থেকে হাতে ব্রুমস্টিক তুলতে সফল হলেও, সফলতার মুখ দেখল না হারমায়োনি। অন্যান্য জিনিসে বইয়ের আত্মস্থ বিদ্যার দ্বারা পার পেলেও, এই ব্যবহারিক বিদ্যায় সে আর কুলিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে নেভিল লংবটমের পাশে তাকেও বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হলো।
ভবিষ্যৎ বিদ্যার ক্লাসেও প্রচণ্ড অনীহা ছিল হারমায়োনির। কারণটাও স্পষ্ট। এ বিষয়েও বইয়ের জ্ঞান কোনো কাজে দেয় না। যদি ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা থাকে, তবেই এ বিষয়ে মোটামুটি ভালো করা যায়। দুর্ভাগ্যবশত, হারমায়োনি ছিল সে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত। তুখোড় দাবাড়ু রন উইজলি দাবা খেলায় যতটা পারদর্শী ছিল, হারমায়োনি দাবাতে ছিল ততটাই আনাড়ি।
এসব কারণে, সে প্রফেসর ট্রিলনি, ব্রুমস্টিক দিয়ে আকাশে ওড়া, ভবিষ্যৎ গণনার ক্লাস, বা দাবা খেলা- কোনোটাই তেমন পছন্দ করত না।
O.W.L.S এ ১১
উইজার্ডিং এক্সামিনেশন অথোরিটির পক্ষ থেকে হগওয়ার্টস পড়ুয়া পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের একপ্রকার পরীক্ষা নেয়া হয়, যা আউল বা O.W.L (অর্ডিনারি উইজার্ডিং লেভেল) নামে পরিচিত। হ্যারি এবং রন এ পরীক্ষায় ৭ স্কোর অর্জন করেছিল, যা যথেষ্ট প্রশংসার যোগ্য। অর্থাৎ, এ মানের নাম্বার অর্জন করতে পারলেই, একজন ছাত্রকে প্রথম সারির মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে, ছান্দসিক হারমায়োনি ওই পরীক্ষায় পাক্কা ১১ স্কোর বাগিয়ে নেয় নিজের ঝুলিতে।
হগওয়ার্টস মহাযুদ্ধের জন্য সে বছর শেষ বর্ষ সমাপ্ত করতে না পারায়, আবারো ফিরে যায় হগওয়ার্টসে। হ্যারি পটার, আর রন উইজলি পরীক্ষায় বসতে অসম্মতি জানালে, সে একাই পাড়ি দেয় বাকি পথ। N.E.W.T পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফলাফলের মাধ্যমে হগওয়ার্টসের পড়ালেখার পাট চোকায় হারমায়োনি। সে কোন বিষয় নিয়েছিল, তা এখনো অজানা, কিন্তু সে বরাবরের মতোই পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছিল। এতশত কুখ্যাত ডেথ-ইটার ও যমদূত ভলডেমর্টের সাথে লড়াইয়ে ক্লান্তির ভারে ভেঙে পড়ার পর, বাকি দুই বন্ধুকে ছাড়া আপনি কি পুনরায় লেখাপড়ায় সমাপ্তি অর্জনের জন্য হগওয়ার্টসে ফিরে যেতেন? তবে পড়ুয়া এবং অধ্যবসায়ী হারমায়োনির এ পদক্ষেপ বেশ স্বভাবজাতই।
হারমায়োনি ও বোগার্ট
হগওয়ার্টসে বোগার্ট নামে একপ্রকার আকৃতি পরিবর্তনকারী ভূত আছে, যাকে শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত করানো হয় 'ডিফেন্স অ্যাগেইনস্ট ডার্ক আর্টস' কোর্সে। যে জিনিসে মানুষের অধিক ভয়, বোগার্ট সে ভয়কে পুঁজি করেই তার সামনে সে জিনিসের রূপ ধারণ করবে। হ্যারির বোগার্ট পাজি ডিমেন্টর, রনের বোগার্ট বৃহদাকৃতির মাকড়সা থাকলেও হারমায়োনির বোগার্ট ছিল স্বয়ং প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। চিকন চশমার এই চতুর নারীকে এড়িয়ে চলত সে। পড়াকু স্বভাবের হারমায়োনি পরীক্ষায় ফেল করাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পেত। আর "হারমায়োনি সব বিষয়ে ফেল করবে" বলে একবার খোঁটা দিয়েছিলেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।
প্রিফেক্ট হারমায়োনি
নিজে হগওয়ার্টসের নিয়মকানুনের তেমন তোয়াক্কা না করলেও, এর ব্যবস্থাপনার প্রতি আলাদা একটা সম্মান ছিল হারমায়োনির। অর্থাৎ, সে ইচ্ছা করে নিয়ম ভাঙত না। হ্যারি অথবা রন কোনো বিপদে পড়লেই, অনিচ্ছাবশত তাকে কানুন ভাঙতে হতো। কর্তৃত্ব ফলানো ও অন্যকে উপদেশ দেয়ার সময় তেজস্বী হারমায়োনি ছিল অন্যদের থেকে এককাঠি সরেস। মানুষ তাকে পছন্দ করুক বা করুক, তাতে তার কিছু আসে যায় না। সেদিকে সে তেমন কর্ণপাত করত না। তার এই দুর্দান্তপনা ও পরিপক্বতা তাকে পৌঁছে দিয়েছিল দক্ষ এক প্রিফেক্টের আসনে। প্রিফেক্ট হবার পর, বাকপটু ফ্রেড ও জর্জের সাথে তার দ্বন্দ্বও হয়েছে কয়েকবার। কারণ, যমজ দুই ভাই উইজলি'স উইজার্ড হুইজেস নামক দোকানের জন্য যে জাদুকরী জিনিস উদ্ভাবন করেছিল, এদের মধ্যে কিছু ছিল হগওয়ার্টসের আইন-কানুনের পরিপন্থী।
ডাম্বলডোরের মৃত্যুর পর
হগওয়ার্টসের সাবেক প্রধান শিক্ষক, প্রয়াত মহান জাদুকর অ্যালবাস ডাম্বলডোরের দপ্তরে গোপনে প্রবেশের সাহস কোত্থেকে পায় হারমায়োনি? হ্যাঁ, ডাম্বলডোরের মৃত্যুর পর সবার দৃষ্টির অগোচরে তার কার্যালয়ে ঢুকেছিল হারমায়োনি গ্রেঞ্জার। কিন্তু তার উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। সে ওখানে পা রেখেছিল, 'সামোনিং চার্ম' ব্যবহার করে হরক্রাক্স সম্পর্কিত সকল বই-পুস্তক বের করার উদ্দেশ্যে। যা দিয়ে ধ্বংস করা যাবে, ডার্ক লর্ড ওরফে ভলডেমর্টের প্রাণভোমরা।
মাগলবর্ন হারমায়োনি
মাগলবর্ন বলতে এমন জাদুকরদের বোঝায়, যাদের পিতামাতা জাদু-ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষ, অথচ তারা নিজেরা জন্মেছে জাদুকরী ক্ষমতা নিয়ে। হারমায়োনি গ্রেঞ্জার ছিল এমনই একজন। একইভাবে মোর্নিং মার্টল, হ্যারি পটারের মা লিলি ইভান্স, অ্যালবাস ডাম্বলডোরের মা কেন্ড্রা ডাম্বলডোরও ছিলেন মাগলবর্ন। প্রশ্ন থাকতে পারে, সাধারণ মাগল পরিবারে জন্মেও তাদের মধ্যে জাদুকরী ক্ষমতা এলো কীভাবে? আকর্ষণীয় এ উত্তরটা পাওয়া যাবে স্কুইবদের কাছে। স্কুইব হলো মাগলবর্নদের ঠিক বিপরীত, অর্থাৎ জাদু পরিবারে জন্মেও যাদের কোনো জাদু ক্ষমতা নেই। জাদু জগতে এমন পরিচিত কয়েকজন স্কুইব হলো হগওয়ার্টসের তত্ত্বাবধায়ক অ্যারগাস ফ্লিচ, প্রফেসর গিল্ডরয় লকহার্টের দু বোন, ডলোরেস আমব্রিজের ভাই, ম্যারিয়াস ব্ল্যাক প্রমুখ।
এ রকম স্কুইবদের জাদুর জগতে থাকার অনুমতি মেলে না। এর পরিবর্তে তারা ঠাঁই পায় জাদুহীন মাগল সমাজে। পরবর্তী সময়ে তারা কোনো মাগলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাধারণ মাগল হিসেবে জীবনযাপন শুরু করে। কিন্তু তাদের ডিএনএ-তে নিহিত প্রচ্ছন্ন জাদুকরী ক্ষমতা কোনো এক প্রজন্মে হয়ে উঠে প্রকট। এভাবে মাগল দম্পতির ঘরে জন্ম নিলেও তারা আপাদমস্তক একজন জাদুকর হিসেবে চিহ্নিত হয়। হারমায়োনির মা-বাবা দুজনেই ছিল দন্ত-চিকিৎসক। এগারো বছর বয়সে হারমায়োনি সর্বপ্রথম তার এই জাদু ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পেরেছিল। তবে তাদের বংশে থাকা কোনো স্কুইবের সরাসরি তথ্য বইয়ে জানা যায় না।
ডাম্বলডোর'স আর্মি
হারমায়োনি তার বুদ্ধিমত্তা ও জাদু ক্ষমতা ব্যবহার করে 'ডাম্বলডোর'স আর্মি'র সদস্যদের মাঝে যোগাযোগের এক চমৎকার ও গোপন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিল। প্রত্যেককে 'প্রোটিয়ান চার্ম' মন্ত্রপূত একটা মুদ্রা দেয়া হয়েছিল। মুদ্রার কাজ হলো, অনিবার্য কোনো কারণে বৈঠকের সময় পরিবর্তন করা হলে মুদ্রাটাই সে বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেবে। 'মাস্টার কয়েন' নামক আসল মুদ্রাটা রাখা হলো হ্যারির কাছে, কারণ সংগঠনের সকল কার্যক্রম সে পরিচালনা করত। প্রতিটি মুদ্রায় নির্দিষ্ট একটা ক্রমিক নং দেয়া থাকত, যা দেখে সদস্যরা বৈঠকের পরবর্তী তারিখ ও সময় আঁচ করতে পারত।
এছাড়াও হারমায়োনি ডাম্বলডোর'স আর্মির সদস্যদের নিয়মিত উপস্থিতির হিসেব রাখার জন্য জাদু দিয়ে একটা 'ম্যাজিক্যাল অ্যাটেন্ডেন্স শিট' তৈরি করেছিল। যদি কেউ তাদের গোপন অনুশীলনের কথা কাউকে ফাঁস করে দেয়, তবে তারা সেটা 'ম্যাজিক্যাল অ্যাটেন্ডেন্স শিট' এর মাধ্যমে জানতে পারবে। র্যাভেনক্ল'র শিক্ষার্থী চো চ্যাং কিন্তু এভাবেই তাদের কাছে ধরা পড়েছিল।
আইনজীবী হারমায়োনি
দয়াশীলতা ছিল হারমায়োনির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী পরিবারগুলো হাউজ-এলভদের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাত। কুইডিচ বিশ্বকাপের সময় বার্টি ক্রাউচ যেভাবে তার হাউজ-এলভ উইংকির সাথে নির্দয় আচরণ চালিয়েছে, তা দেখে দারুণ ব্যথিত হয় হারমায়োনির সহানুভূতিশীল মন। তাই সে সংকল্প করে, হাউজ-এলভদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সে আইনি লড়াই লড়বে।
সেজন্য চতুর্থ বর্ষে থাকাকালীন সে S.P.E.W (সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অভ এলভিশ ওয়েলফেয়ার) নামে এক সংগঠন দাঁড় করিয়ে ফেলে। গ্রিফিন্ডরের কমন রুমে সংগঠনের প্রচারণা চালালে কিছু শিক্ষার্থী তাতে যোগদানের আগ্রহ দেখায়। গ্রাজুয়েশনের পর মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হবার পর, হারমায়োনি এই জাদুকরী প্রাণীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে আইনজীবী হিসেবে পুনরায় তার লড়াই চালিয়ে যায়।
নামটা এল কোত্থেকে?
১৯৯৯ সালে লেখক রোলিংয়ের এক রেডিও সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, হারমায়োনির বাবা-মা তার নাম রেখেছিলেন কিংবদন্তি উইলিয়াম শেকসপিয়ার রচিত 'দ্য উইন্টার'স টেইল'-এর সিসিলির রানী হারমায়োনির নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। আর সে নাম এসেছে গ্রিক পুরাণে বর্ণিত দেবদূত 'হার্মিস' থেকে, যে মূলত দেবতাদের সঙ্গে স্বর্গলোক ও মরণশীল মানুষদের সঙ্গে মর্ত্যলোক- দু'দিকেই ঠাট কুলিয়ে চলতে পারে। ঠিক তেমনই, হারমায়োনিও ছিল মাগল ও জাদু জগতের মধ্যে এক অপার্থিব যোগসূত্র।
একমাত্র সন্তান?
হ্যারি পটার সিরিজের সিনেমা দেখা দর্শকেরা হারমায়োনির পরিবারে শুধু হারমায়োনি, তার বাবা ওয়েনডেল উইল্কিন্স, এবং মনিকা উইল্কিন্সের দেখা পেয়েছে। কিন্তু তার এক ছোট বোনও ছিল। এক সাক্ষাৎকারে জে. কে. রোলিং তা নিশ্চিত করেছেন। ২০০৪ সালে বিশ্ব বই দিবসে বিবিসিতে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে রোলিং বলেন,
"আমার সবসময় পরিকল্পনা ছিল, হারমায়োনির ছোট বোনকে যেকোনোভাবে গল্পে তুলে ধরব। কিন্তু তাড়াহুড়োয় বা অজানা এক কারণে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। এখন অবশ্য সে চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটানোর ক্ষেত্রে বেশ দেরি হয়ে গেছে।"
স্মৃতিভ্রম
হারমায়োনির মা-বাবা জাদু জগতে ভ্রমণ করলে, সে 'অবলিভিয়েট' মন্ত্র দিয়ে তাদের স্মৃতি মুছে দেয়। তারপর জাদু জগতের ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য তাদের অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেয়। জাদু জগতের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর হারমায়োনি তাদেরকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে এনে, তাদের স্মৃতি পুনরুদ্ধার করে দেয়।
গডমাদার
হ্যারি পটার জিনি উইজলির সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হলে, তাদের কোল আলো করে জন্ম নেয় ফুটফুটে তিন সন্তান। প্রথমজনের নাম রাখা হয় তার বাবা জেমস পটার ও তার গডফাদার সিরিয়াস ব্ল্যাকের নাম মিলিয়ে, জেমস সিরিয়াস পটার। এই ছেলের গডমাদার হয় হারমায়োনি গ্রেঞ্জার।
বাস্তব হারমায়োনি
ব্রিটিশ অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন বেড়ে উঠেছেন হ্যারি পটার সিরিজের হারমায়োনি গ্রেঞ্জারের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতে। বাস্তব জীবনেও তিনি হারমায়োনি গ্রেঞ্জারের সুস্পষ্ট প্রতিরূপ, সে চরিত্রের যেন পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন ঘটিয়েছেন নিজের মধ্যে। স্বভাবে তিনি বইপোকা। নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি সবসময় পর্বতের ন্যায় অটল, পাছে লোকে কিছু বললেও তিনি তেমন একটা কান দেন না। হগওয়ার্টসে যেমন তিনি S.P.E.W-এর মাধ্যমে লড়েছেন হাউজ-এলভদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, তেমনি তিনি বাস্তবেও নারী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি জাতিসংঘের উইমেন গুড-উইল অ্যাম্বাসেডর।
এরিসেডের আয়না
এরিসেডের আয়নার অ্যালবাস ডাম্বলডোর ও হ্যারি পটার দাঁড়িয়ে তাদের সুখময় মুহূর্তগুলোর মেকি স্মৃতিচারণ করেছে, তা হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির সকল পাঁড়ভক্তদেরই জানা। এক সাক্ষাৎকারে জে. কে. রোলিংকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এরিসেডের আয়নার সামনে দাঁড়ালে হারমায়োনি ঠিক কোন জিনিসটা দেখতে পেত? প্রত্যুত্তরে রোলিং জানিয়েছিলেন, সে দেখত ভলডেমর্ট বধের পর, হ্যারি আর রনের সাথে সে হাসিমাখা মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। হারমায়োনি আরও দেখত, সে রন উইজলিকে আষ্টেপৃষ্ঠে আলিঙ্গন করে রয়েছে।
নতুন ভাবনার প্রস্তাব
'হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস' সিনেমায় বেল্লাট্রিক্সকে হারমায়োনির গলায় ছুরি ধরে রাখতে দেখা গিয়েছিল। পুরাদস্তুর অমানবিক ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির বেল্লাট্রিক্স তার প্রতিপক্ষের প্রতি সবসময় চালিয়েছে নির্দয় জুলুমের করাঘাত। তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তাদের। ছুরি দিয়ে তৎক্ষণাৎ খতম করা ঠিক তার সাথে যায় না। পরিচালকেরও এ রকম কোনো দৃশ্য দেখানোর পরিকল্পনা ছিল না। এ দৃশ্য শ্যুট করার বুদ্ধিটা পরিচালককে দিয়েছেন মূলত এমা ওয়াটসন (হারমায়োনি) ও হেলেনা বনহ্যাম কার্টার (বেল্লাট্রিক্স)। পরিচালকও চিত্রনাট্যে ভিন্ন মাত্রার স্বাদ যুক্ত করতে, তাদের প্রস্তাবনা সাদরে গ্রহণ করেছিলেন।
নাম নিয়ে ভজঘট
সিরিজের শুরুর দিকে বের হওয়া বইয়ে, পাঠকেরা হারমায়োনির নাম উচ্চারণে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও গ্যাঁড়াকলে পড়ত। যেমন Hermione কে অনেকে 'হারমিয়োন' বলেও উচ্চারণ করত। সে সমস্যা ও দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে 'হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য গবলেট অভ ফায়ার' বইতে জে. কে. রোলিং এক চমৎকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে ভিক্টর ক্রাম তার নাম উচ্চারণ করেছিল, 'Her-my-oh-nee' বলে।
লাভ পোশনে রন উইজলি
একবার প্রফেসর স্লাগহর্ন পোশনবিদ্যা ক্লাসে হারমায়োনিদেরকে জাদু জগতের সবচেয়ে শক্তিশালী লাভ পোশন 'অ্যামরটেনশিয়া' বানানো শেখাচ্ছিলেন। হারমায়োনি তখন বলেছিল,
"আমরা যা কিছু ভালোবাসি ও পছন্দ করি, তার উপর ভিত্তি করে প্রত্যেকে হয়তো আলাদা আলাদা কিসিমের গন্ধ টের পাচ্ছি। সে হিসেবে আমার নাকে আসছে, কাঁচি দিয়ে কাটা তাজা ঘাসের ঘ্রাণ, চামড়ার কাগজের ঘ্রাণ আর...."
তৃতীয় জিনিসটার নাম বলতে গিয়েও কেন জানি থেমে গেলো হারমায়োনি। পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালে ব্লুমসবেরি ডট কম দিয়ে ওয়েবচ্যাটে ভক্তদের বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর পর্বে রোলিং জানান, তৃতীয় জিনিসটা ছিল রন উইজলির চুলের গন্ধ।
হারমায়োনির প্যাট্রোনাস
'হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অভ ফিনিক্স' থেকে জানা গিয়েছে, হারমায়োনির প্যাট্রোনাস ছিল একটা জলমার্জার। মজার বিষয় হলো, জে. কে. রোলিং হারমায়োনির মাধ্যমেই জাদু জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। অর্থাৎ, তিনি হারমায়োনি গ্রেঞ্জারের মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পেতেন এবং এই চরিত্রটিই ছিল তার সবচেয়ে প্রিয়। ওদিকে প্রাণী হিসেবে জলমার্জারকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন রোলিং। তাই, প্রিয় চরিত্রের প্যাট্রোনাস হিসেবে নির্বাচন করেছেন নিজের সবচেয়ে পছন্দের প্রাণীটিকে।
অনুবাদ দক্ষতা
'হ্যারি পটার অ্যান্ড ডেথলি হ্যালোস'-এ বর্ণিত 'তিন ভাইয়ের গল্প' মূলত 'দ্য টেলস অভ বিডল দ্য বার্ড' বইয়েরই অন্তর্গত। শিশুতোষ এই বই অনেক মজাদার কাহিনী ও মুখরোচক উপাখ্যানে ঠাসা। ডাম্বলডোর এই বই উপহার দিয়েছিলেন হারমায়োনি গ্রেঞ্জারকে, যা পরবর্তী হরক্রাক্স খোঁজায় বিশেষ সাহায্য করেছে। বইটি মূলত প্রাচীন জাদুভাষায় লেখা ছিল বলে, সবার পক্ষে তা পড়া সম্ভব ছিল না। প্রাচীন জাদুভাষার উপর তুমুল দক্ষতা থাকায়, অনুবাদে হাত দেয় হারমায়োনি গ্রেঞ্জার। হগওয়ার্টস থেকে গ্রাজুয়েশনের পর হারমায়োনি বইটি প্রকাশ করেছিল।
সর্বদা মেধা ও বুদ্ধিমত্তার পরিস্ফুটন ছড়িয়ে যাওয়া হাউজ গ্রিফিন্ডরের এই শিক্ষার্থী ছিল অসম সাহসের অধিকারী। যেকোনো শিক্ষার্থীর কাছে সে হয়ে থাকবে সুচরিত দিগদর্শন ও অফুরন্ত অনুপ্রেরণার ভাণ্ডার।
This article is in Bangla. It is about Hermione Granger, a fictional main character in the Harry Potter franchise.
References:
1. https://www.insider.com/harry-potter-interesting-things-to-know-about-hermione-granger?amp
2. https://www.google.com/amp/s/screenrant.com/harry-potter-hermione-trivia-missed-movies/amp/
3. https://www.thegamer.com/harry-potter-hermione-facts-potterheads/
4. https://www.therichest.com/pop-culture/20-facts-even-true-fans-dont-remember-about-hermione-granger/
5. https://www.wizardingworld.com/features/things-you-may-not-have-noticed-about-hermione
Featured Image: Hipwallpaper