Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাধবন থেকে ম্যাডি হয়ে ওঠা শুদ্ধ এক অভিনেতা

ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথমসারির তারকাদের ভক্তকূলের সরব যুদ্ধের কথা কারও অজানা নয়। সেরার তর্কে চায়ের কাপে রোজ ঝড় ওঠে। দক্ষিণ ভারতে যার রেশ আরও বেশি। তবে একজনের বেলায় সবার মত এক। একদম প্রথমসারির তারকাদের মতোন হরহামেশা আলোচনায় না থাকলেও তার সিনেমা মুক্তি পেলে তাকে এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। সুদর্শন, শিক্ষিত, মার্জিত এই অভিনেতা মাধবন বালাজি রঙ্গনাথ। ভক্তরা ভালোবেসে ডাকে ‘ম্যাডি’ বলে! যার নাম শুনলে কাজ করে অদ্ভুত ভালোলাগা।

১৯৭০ সালের ১ জুন ঝাড়খন্ডের জামশেদপুরে জন্ম নেওয়া মাধবন কোলাপুরের রাজারাম কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। মহারাষ্ট্রের এনসিসি ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পাবার সময় বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। সেই দলের হয়ে ঘুরে আসেন ব্রিটেন। ব্রিটিশ আর্মি, রয়্যাল নেভি এবং রয়্যাল এয়ারফোর্সের অধীনে নেন বিশেষ প্রশিক্ষণ। পাবলিক স্পিকার হিসেবে ঘুরে আসেন টোকিও। পাবলিক স্পিকিংয়ের উপর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন কোর্স করেন মুম্বাইয়ের কৃষ্ণচাঁদ কলেজে। মাধবনের সামনে সুযোগ এসেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। মানুষ যা চায় সবসময় তা পায় না। মাঝেমধ্যে কিছু না পাওয়ার মাঝে লুকিয়ে থাকে নতুন সম্ভাবনা। নির্ধারিত বয়সসীমার চেয়ে ছয় মাস বেশি হয়ে যাওয়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারেননি তিনি।

image source: News18

এরপর ঝুঁকে পড়েন মিডিয়ায়। শখের বশে নিজের সিভি বানিয়ে জমা দেন একটি মডেলিং এজেন্সিতে। পোর্টফোলিও দেখে ডাক দেন বিজ্ঞাপন নির্মাতা সন্তোষ শিব। স্যান্ডেল ট্যাল্ক নামক পণ্যের বিজ্ঞাপনে কাজের সুযোগ পান মাধবন। ১৯৯৭ সালে বিশাল সুযোগ দরজায় কড়া নাড়ে! প্রথম বিজ্ঞাপনের নির্মাতা সন্তোষ তার জন্য সুপারিশ করেন দক্ষিণের কিংবদন্তি পরিচালক মণি রত্নমের কাছে! ‘তামিজসেলভান’ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে তাকে প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন মণি রত্নম। শেষ মূহুর্তে বাদ দিয়ে ফেলেন। কারণ, তার চোখে নাকি বাচ্চাদের মতো চাহনি! অথচ এই চোখ দিয়েই ১৯৯৭ সালে হলিউড মুভি ‘ইনফার্নো’-তে অভিষেক ঘটিয়ে ফেলেন। ভাবা যায়, ভারতীয় এক আনাড়ি টিভি অভিনেতার বড় পর্দায় যাত্রা শুরু হলিউড প্রজেক্টের মাধ্যমে! দর্শক মহলে অত আলোচিত না হলেও মণি রত্নম চোখে চোখে রাখছিলেন। ২০০০ সালে ‘আলাইপায়ুথে’ ছবিতে নিয়ে নেন। প্রতিদান দিতে দেরি করেনি মাধবন। ব্যবসায়িক সাফল্য যেমন এনে দেন ছবিটিকে, নিজেও বাগিয়ে নেন ফিল্মফেয়ারে সেরা নবাগতের পুরস্কার।

Image Source: Art Of It

পরের বছর গৌতম মেননের ‘মিন্নালে’ দিয়ে দর্শকের আরও কাছাকাছি আসেন মাধবন। বিশেষ করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ প্রজন্মের কাছে ছবির ‘রাজেশ’ চরিত্রটি হয়ে ওঠে বন্ধুতুল্য। ২০০১ সালের ভালোবাসা দিবসে মুক্তি পাওয়া মিন্নালের গায়ে ভারতের অন্যতম সেরা রোমান্টিক সিনেমার তকমা লেগেছে বহু আগে। একই বছর বলিউডে রিমেক করেন সেটি। ‘র‍্যাহনা হ্যায় তেরে দিল ম্যায়’ টাইটেলের ছবিতে মাধবনের চরিত্রের নাম ছিল ‘ম্যাডি।’ মাধবন থেকে ‘ম্যাডি’ হওয়া সেখান থেকেই।

Image Source: Times of India

২০০৩ সালে জুটি বাঁধেন কমল হাসানের সঙ্গে! তাতেও সামান্য জড়তা আসেনি ম্যাডির কাজে। ‘সুন্দর’ এর পরিচালনায় দুর্দান্ত ড্রামা সিনেমা ‘আনবে শিভাম’ যতখানি কমল হাসানের ততটাই মাধবনের। বৃষ্টিস্নাত এক দিনে অভিনব কায়দায় এয়ারপোর্টে দেখা হওয়া দুজন মানুষের প্রতিকূলতার গ্যাঁড়াকলে চেপে বসা হয় না বিমানে। শুরু হয় সড়কপথের যাত্রা। যেখানে ওরা একে অপরের সঙ্গী। সেই যাত্রায় কমল হাসান এবং মাধবন গল্পের ডালি খুলে বসে। তাতে ভিন্নজগতে হারিয়ে যাবে দর্শক। 

এরপর পেছন ফিরে তাকাননি। একের পর এক সফল চলচ্চিত্র উপহার দেওয়া ম্যাডির ক্যারিয়ারে ফ্লপ ছবির সংখ্যা হাতেগোনা। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি নজর দিয়েছেন চিত্রনাট্যে। প্রাধান্য দিয়েছেন নিজের পছন্দকে। মিন্নালে দিয়ে তামিলের চকোলেট বয়ের তকমা পেলেও আদতে কেবল রোমান্টিসিজমে কখনোই আটকে ছিলেন না তিনি। মিন্নালের রোমান্টিক রাজেশ, এরপর কমল হাসানের সঙ্গে আনবে শিভামে আনবু চরিত্রের ঠিক পরের বছর, ২০০৪ সালে ইংলিশ-মালায়লাম বাইলিঙ্গুয়াল প্রজেক্ট ‘নাথিং বাট লাইফ’ এর বিপথগামী তরুণের চরিত্র! নিজেকে এভাবে প্রত্যেক বছর ভাঙার দুঃসাহস দেখাতে পারা চাট্টিখানি কথা নয়! তামিল, বলিউড, হলিউড, তেলেগু, মালায়লাম- এত ইন্ডাস্ট্রি মিলিয়েও ২৪ বছরে মাত্র ৫৬টি ছবি করা প্রমাণ করে কাজের প্রতি ন্যূনতম ছাড় দিতে নারাজ তিনি।

Image Source: News18

অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ করেছেন বলিউড দর্শকদেরও! যখন যে চরিত্র করেছেন, প্রভাব ফেলেছেন গোটা সিনেমায়। অল্প সময়ের জন্য পর্দায় থাকলেও ‘রঙ দে বাসন্তী’ ছবির শেষাংশ আবর্তিত হয় তাকে ঘিরে। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র ‘থ্রি ইডিয়টস’ এর ফারহান চরিত্রকে একবারের জন্যেও আমির খানের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। বরং তাকে ছাড়া পূর্ণতাই পেত না এটি। কিংবা তনু ওয়েডস মনু সিরিজের মনোজ শর্মা! তার করা প্রতিটি চরিত্র যখন পর্দায় চলতে থাকে লোকে তখন ভাবতে বসে, এই চরিত্রে ম্যাডির চেয়ে ভালো কে হতে পারতো?

Image Source: IMDB

২০১৬ সালে তামিল-হিন্দি বাইলিঙ্গুয়াল চলচ্চিত্র শালা খাড়ুসের রগচটা বক্সিং টিচার হবার পরের বছরই বিজয় সেথুপতির সঙ্গে আগমন ঘটে ‘বিক্রম ভেদা’য়। বিক্রম ভেদা দেখা প্রত্যকেই চমকাতে বাধ্য এমন অনবদ্য অভিনয় দেখে! শুধু সিনেমায় নয়, ওয়েব সিরিজেও তিনি হতে পারেন ভরসার আরেক নাম তা বুঝিয়েছেন ২০১৮ সালে ‘ব্রীদ’ সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে! প্রথম ছবিতেই সেরা নবাগতের পুরস্কার বাগানো মাধবন ব্রীদের জন্য পান ইন্ডিয়ান টেলিভিশন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড।

Language: Bangla
Topic: Biography of R. Madhavan
References: Hyperlinked inside

Related Articles