Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাগসি: রোমান্সের আদলে ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত গ্যাংস্টারের জীবনী

বেঞ্জামিন সিগ্যাল। ‘বাগসি’ নামেই যিনি সমধিক পরিচিত। তবে তার সামনে কখনো এই নামে সম্বোধন করতে যাবেন না যেন! তাহলে মেরে ভর্তা তো বানাবেনই, হয়তো বেঘোরে প্রাণটাও হারাতে হতে পারে। 

বাস্তব জীবনে ওয়ারেন বিটির কেতাদুরস্ত, চকচকে, মৃদুভাষী ব্যক্তিত্বের কথা কে না জানে! পর্দায়ও যখন তিনি ঠিক এমন একটি রোল প্লে করেন, তখন প্রয়োজনীয় কর্ডগুলো ঠিকমতোই স্ট্রাইক করেন। আর বাগসি (১৯৯১) মুভিতে ঠিক সেই ব্যাপারটাই হয়েছে। নিজের জন্য পারফেক্ট রোলে তিনি হাজির হয়েছেন সকল ধরনের গ্ল্যামার আর কুলনেস নিয়ে। নিজের অভিনয়দক্ষতার মাধ্যমে প্রাণসঞ্চার করেছেন এমন এক চরিত্রের মাঝে— যে সম্মোহনী এক স্বপ্নের সূচনা করে আর তার প্রেমে মজে নিজেই নিজের চিতা রচনা করে। পাঠক নিশ্চয়ই এটা বুঝতে পারছেন যে— সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র বেঞ্জামিন ‘বাগসি’ সিগ্যালের চরিত্রেই উপনীত হয়েছেন বিটি। গ্যাংস্টার না হলে হয়তো এই খ্যাপাটে লোকটার জায়গা হতো হলিউডের ওয়াক অব ফেমে অথবা তার ছবি স্থান করে নিত ডাকটিকিটে। কারণ, লাস ভেগাসে যে ক্যাসিনোর রমরমা বাণিজ্য, লক্ষ্মীর বসতি; এসবের স্বপ্নদ্রষ্টা তো ছিলেন তিনিই।

বেঞ্জামিন ‘বাগসি’ সিগ্যালরূপী ওয়ারেন বিটি; Image Courtesy : Deadline.com

সিনেমা শুরুর খানিকক্ষণের মাঝেই পরিচালক আমাদের বাগসির চরিত্রের ফ্যামিলি ম্যান, লেডিস ম্যান এবং টাফ গাই সত্তার সাথে পরিচিত করিয়ে দেন। এরপর মবের ইনভেস্টমেন্টের টাকা নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে হলিউডের পথে যাত্রা করেন তিনি। এই ঘটনা ১৯৪১ সালের। সেখানে গিয়েই ভার্জিনিয়া হিল (অ্যানেট বেনিং) নামে হলিউডের উঠতি এক লাস্যময়ী সুন্দরীর প্রেমে মজে যান তিনি। এছাড়া হলিউডের রঙিন, গ্ল্যামারাস জগতও আকর্ষণ করে তাকে, সিনেমাকেও ভালোবেসে ফেলেন। এই ভালোবাসা, নিজের গুড লুক, এবং প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে একটা স্ক্রিন টেস্ট দিতেও দেখা যায় তাকে। তবে নিজের সেরা পারফর্ম্যান্সগুলো মবস্টারদের বোর্ডরুমের জন্যই জমা করে রেখেছিলেন তিনি।

কখনো কখনো ইতিহাস আর ব্যক্তি একে অপরের পরিপূরকে পরিণত হন। বলা যায়, তখন ইতিহাসই ব্যক্তিকে বেছে নেয় তার কার্য সম্পাদনের জন্য। সিগ্যালের জীবনে এমন মুহূর্ত আসে যখন তিনি লাস ভেগাসে যান। সবাই যখন চারপাশে বিরান মরুভূমি দেখছিল, তখন তিনি স্বপ্ন দেখেন আলোর রোশনাইয়ে ভরা এক মরুদ্যানের। যেখানে থাকবে বিশাল বিশাল ক্যাসিনো, এবং পারফর্ম করবে নামজাদা সব শিল্পী। আমেরিকার অন্য সব প্রদেশে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও লাস ভেগাসের বিরান প্রান্তরে তা ছিলো বৈধ, যার মাধ্যমে মাফিয়ারা সহজেই নিজেদের কালো টাকা সাদা করতে পারবে। এছাড়া এই কাজের রাজনৈতিক প্রভাব নিয়েও ভেবেছিলেন তিনি। তার মতে, বাকি সব রাজ্য তাদের থেকে তফাতে চলতে চাইলেও লাস ভেগাসে তারা থাকতে পারবেন রাজার হালে। আর কোনোভাবে যদি ক্যাসিনোর ব্যবসা দাঁড়িয়ে যায়, তাহলে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও রাজনীতিবিদদের উপর তারা প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। কারণ, এখানে আইনত তারা অচ্ছুৎ নন। মূলত, তিনি চেয়েছিলেন ‘আমেরিকান ড্রিম’ বা ‘দ্য ল্যান্ড অব অপরচুনিটিজ’-এর আইডিয়া বিক্রি করতে। যা করতে পারলে পুরো দেশ তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকেরা নিজেদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ছুটে আসবে ফুলের মধুর জন্য ঝাঁক বেঁধে আসা মৌমাছিদের মতো। 

হিলের সাথে প্রথম দেখা; Image Courtesy : Imdb.com

তো, নিজের স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি লাস ভেগাসের নেভাডায় ফ্ল্যামিঙ্গো হোটেল নির্মাণের কাজ শুরু করেন। হোটেলের নামের ক্ষেত্রেও নাকি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছেন ভার্জিনিয়া হিল। কথিত আছে— লম্বা পায়ের কারণে প্রেয়সীকে ফ্ল্যামিঙ্গো নামে ডাকতেন বাগসি। এই হোটেল নির্মাণকালে তাকে যেসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেটির উপর সিনেমার সমাপ্তি অনেকাংশ নির্ভরশীল।

এই যে ফ্ল্যামিঙ্গো, বাগসি বা লাস ভেগাসের পাল্টে যাওয়ার গল্প; একে সিনেমায় ঐতিহাসিক গল্পের কায়দায় বলা হয় না। বরং একে বলা হয় রোমান্টিক গল্পের আদলে। সিগ্যাল আর হিলের সম্পর্কের ভেতর দিয়েই গল্পের প্লট এগিয়ে যায়। বিটির সহায়তায় বাগসির চিত্রনাট্য লিখেছেন জেমস টোবাক, পরিচালনায় ছিলেন ব্যারি লেভিনসন। আর এতে সংগীতায়োজন করেছেন কিংবদন্তিতুল্য এনিও মোরিকোনে। গ্যাংস্টার জনরা সূচনাকাল থেকেই যে অপবাদ পেয়ে এসেছে, সেটা এখানেও উপস্থিত। ঠাণ্ডা মাথার সাইকোপ্যাথিক খুনী হওয়া সত্ত্বেও ব্যারি বাগসিকে উপস্থাপন করেছেন চটপটে, মনোমুগ্ধকর, পছন্দনীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তার চরিত্রে অদ্ভুত বৈপরীত্য দেখা গিয়েছে পুরো মুভিতে। একদিকে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনি একজন পুরোদস্তুর ফ্যামিলি ম্যান, যিনি প্রত্যেকদিন সকালে কাজে যান। অন্যদিকে তিনি একজন ব্যভিচারী মাফিয়া বস, যাকে হরহামেশাই মানুষ খুন করতে দেখা যায়। আবার মাফিয়ার সদস্য হয়ে তাদের আইন-কানুনকেও যে খুব একটা শ্রদ্ধা করেন, তা কিন্তু না। টাকা-পয়সা ওড়ানোতে তার জুড়ি মেলা ভার। তার কাছের লোকজনই বলে যে, বাগসি আসলে অর্থকে প্রাপ্য সম্মান দেয় না। 

পর্দায় বিটি আর বেনিংয়ের রসায়ন খানিকটা হলেও আপনাকে ১৯৬৭ সালের বনি অ্যান্ড ক্লাইডের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে, যা সম্ভবত বিটির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা কাজ। খুনী না হলেও ম্যানিপুলেশন এবং সম্মোহনের দিক থেকে হিলও কম যায় না। বিশেষ করে কামভাবের দিক থেকে দুই জুটি যেন একে অপরের পরিপূরক। একপর্যায়ে হিলের আচরণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়, যা আমাদেরকে দ্বিধায় ফেলে দেয়। বাগসির সেটে পরিচয় থেকে পরিণয়ের ফলশ্রুতিতে বিটি আর বেনিং এ বছর তাদের বিয়ের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন করবেন। 

মেয়ার ল্যানস্কি চরিত্রে স্যার বেন কিংসলে; Image Courtesy : Imdb.com

নিজের আগের প্রজেক্ট অ্যাভালনেও পরিচালকের গল্পের প্রেক্ষাপট ছিল চল্লিশের দশক। তাই ইতোমধ্যে চেনা-জানা সময়ের রূপ দানে ব্যারি দেখালেন অনবদ্য নৈপুণ্য। বাগসিতে দেখানো চল্লিশের দশক ভাবগাম্ভীর্য আর আড়ম্বরপূর্ণ, চারদিকে প্রাচুর্যের ঝনঝনানি। আর এসবের সাথে অনায়াসে মিশে যায় গল্পের মুখ্য চরিত্র। তিনি বেভারলি হিলসে গিয়েই প্রাসাদোপম বাড়ি কিনে ফেলেন (গডফাদারের মতো করে বলা চলে- হি মেইড অ্যান অফার দ্য ওনার কুড নট রিফিউজ)। তাকে সময় কাটাতে দেখা যায় বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে, আর হোমড়াচোমড়া ব্যক্তিদের সাথে। সিনেমায় তার যে ইমেজ ফুটে ওঠে, সেটাকে বর্ণনার জন্য একটি সংবাদ শিরোনামই যথেষ্ট। সেটি হলো: গ্যাংস্টার নাকি স্টার? একই প্রশ্ন অন্যান্য গ্যাংস্টাররাও তোলে। আর এই বিষয়টি বাগসির ভবিতব্যেও ভূমিকা রাখে। 

টোবাকের চিত্রনাট্যে দুটি থিম প্রায় সবসময় উপস্থিত থাকে। এগুলোর একটি হলো নারীর প্রতি পুরুষের অত্যধিক টান, যা নেশার পর্যায়েই পড়ে। অপরটি হলো আর্থিক ব্যাপারে পুরুষের উদাসীনতা, যা তার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার বৈশিষ্ট্যসূচক দুটি থিমই এখানে সমভাবে উপস্থিত। 

বাগসিতে ক্যাপোলা বা মারিও পুজোর চেয়ে ভিন্ন ধারার গ্যাংস্টার সিনেমা নির্মাণে ব্রতী হয়েছেন ব্যারি এবং টোবাক। এই ধারার বেশিরভাগ সিনেমাতে যেখানে ইতালিয়ান আমেরিকানদের দেখা যায়, সেখানে এই মুভির বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রই ইহুদি। আবার অন্যান্য সিনেমায় যেখানে মূল চরিত্রদের বেড়ে ওঠার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়, এখানে তা করা হয়নি। গল্পের শুরুতেই বাগসিসহ অন্যান্যরা অপরাধ জগতে প্রতিষ্ঠিত। এবং তারা কীভাবে বর্তমানের অবস্থায় অধিষ্ঠিত হন, সেই ব্যাপারে কোনো আলোকপাত নেই। তবে ক্যাপোলা বা পুজোর মতো ব্যারি আর টোবাকও মাফিয়াদের নিয়মতান্ত্রিক বিজনেস হিসেবেই দেখেছেন। 

হার্ভে কেইটেল অভিনীত মিকি কোহেন; Image Courtesy : Imdb.com

স্যার বেন কিংসলেকে দেখা গেছে মাফিয়া বস মেয়ার ল্যানস্কির চরিত্রে। শুধুমাত্র মেয়ারই বোধহয় খ্যাপাটে বাগসিকে বুঝতেন। আগের সিনেমার গান্ধী চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত এই চরিত্রেও বেন বরাবরের মতো সাবলীল। আরেক প্রখ্যাত অভিনেতা হার্ভি কেইটেলকে নিজের সুনিপুণতা প্রদর্শন করতে দেখা গেছে কোল্ড ব্লাডেড মিকি কোহেন চরিত্রে। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন এলিয়ট গোল্ড।

নব্বইয়ের দশকের সবচেয়ে সেরা গ্যাংস্টার ফিল্মগুলোর তালিকায় বাগসি জায়গা করে নেবে অনায়াসে। ক্রিটিক্যাল এবং কমার্শিয়াল উভয় ক্ষেত্রে সফল সিনেমাটি ৬৪ তম অস্কারে সেরা পরিচালক, সেরা ছবিসহ মোট ৫টি ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়। এবং বেস্ট আর্ট ডিরেকশন এবং বেস্ট কস্টিউম; এই দুটি ক্যাটাগরির পুরষ্কার বাগিয়ে নেয়। এছাড়া গোল্ডেন গ্লোবে পায় সেরা সিনেমার তকমা। তাই অবসর বাগিয়ে বাগসি দেখে নিলে সময়টা ভালোই কাটবে দর্শকের।

Related Articles