Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কায়রো স্টেশন: অস্কারে প্রতিনিধিত্বকারী আরবের প্রথম চলচ্চিত্র

১৯৫৮ সালে রিলিজের পর প্রথম আরব ছবি হিসেবে অস্কারে প্রতিনিধিত্ব করে মিশরের ক্রাইম ড্রামা ফিল্ম কায়রো স্টেশন। শুধুমাত্র আরবি ভাষারই নয়, বরং এটি অস্কারে প্রেরিত আফ্রিকার প্রথম চলচ্চিত্রও। অবশ্য বছরান্তে মিশরীয়দের গণদাবীর মুখে ইউসুফ শাহিনের এই চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করা হয়, যা অব্যাহত থাকে দীর্ঘ ২০ বছর। সত্তরের দশকে নতুনভাবে আবির্ভূত হয় ক্লাসিক ফিল্ম নোয়া (Film Noir) কায়রো স্টেশন। তবে এবার এর শুধু মিশর নয়, বিশ্বসিনেমায় উদ্বেলিত প্রশংসায় ভেসে পাদপ্রদীপের আলোয় আসে ত্রিভুজপ্রেমের ধ্রুপদী মাস্টারপিস। এর ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে নেটফ্লিক্সে যুক্ত হয় ইতালিয়ান নিওরিয়ালিস্ট ধাঁচের এই সিনেমা!

শেষ দৃশ্যে প্রতিশোধের নেশায় খুন করতে উদ্যত হয় ব্যর্থ প্রেমিক! Image Source: Cairo Station film

 

চিত্রপরিচালক ফ্রিটয লাং ও আলফ্রেড হিচককের খানিকটা ছায়া থাকলেও, কায়রো স্টেশনের গল্প ও নির্মাণ একান্ত নিজস্ব। নির্মাতা ইউসুফ শাহিন জীবদ্দশায় সবসময় আত্মতুষ্টির জায়গা থেকে সিনেমা বানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য,

I make my films first for myself. Then for my family. Then for Alexandria.

সিনেমাকে বিশ্বজনীন করার দায়বদ্ধতা তিনি বরাবরই এড়িয়ে যেতে চাইলেও কখনো কখনো তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এর উদাহরণ হিসেবেও বলতে হবে আলোচ্য সিনেমার কথা। বিবিসি’র প্রকাশিত রিভিউয়ে চলচ্চিত্র সমালোচক জেমি রাসেল লিখেছেন,

With its tense score, contrasting performances of Kinawi (twitchy and tightly coiled) and Hannuma (sexy but cruel) and audacious moments of formal brilliance Cairo Station is a cinematic triumph.

চলচ্চিত্র দুনিয়ার বাঘা বাঘা ক্রিটিকের উচ্ছ্বাসের জবাবে অমায়িক শাহিন বলেন,

If the Arab world likes them, ahlan wa sahlan (welcome). If the foreign audience likes them, they are doubly welcome.

১৯৫৮ সালের সাদা-কালো এক ফিল্ম কতটা গভীর বিস্ময়ে মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে, তার অনন্য নজির কায়রো স্টেশন। হালকা ঢঙের কমেডি স্টাইলে শুরু হওয়া ফিল্মের টোন সময়ান্তে বদলে গিয়ে কীভাবে সিরিয়াস ট্র্যাজিক রূপ ধারণ করতে পারে তা দেখলে যে কেউ চাহিনের সিনেমাটিক ট্রিটমেন্টে বিমোহিত হবে। মূল গল্পের প্রধান তিন চরিত্র স্টেশনের কোমল পানীয় বিক্রেতা লাস্যময়ী হানুমা, সংবাদপত্রের ফেরিওয়ালা খুঁড়িয়ে হাঁটা কিনাওয়ি, এবং বলিষ্ঠ এক পোর্টার তথা কুলির কাজ করা আবু সিরি। স্বভাবতই হানুমার পছন্দ শৌর্যবীর্যধারী আলফাম্যান আবুকে। আবার হানুমাকে বেশ ভালোবাসে কিনাওয়ি। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতা আর আর্থিক দুরবস্থার দরুন কোনো পাত্তাই পায় না। এ থেকে বলা অনুচিত না যে, সমাজের নিচুস্তরের মানুষের দিনাতিপাতের সিনেমা কায়রো স্টেশন। তবে সাবপ্লটে উঁচু স্তরের বিচ্ছিন্ন গল্প বলার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। মুভির শুরুর ন্যারেটিভ এবং একাধিক সিকুয়েন্সে অজ্ঞাত এক অভিজাত মেয়েকে স্টেশনে দেখা গেছে। সেখানে প্রেমিকের সাথে সাক্ষাতও করেছে সে। যদিও তার নাম-পরিচয়ের কোনো উল্লেখ করা হয়নি। বলা সমুচিত হবে যে, ব্যাপ্তির নাতিদীর্ঘতায় এমন আরও কিছু চরিত্রের যথাযথ বিস্তার ঘটেনি। এদিকে কায়রো শহরে উদ্ভব ঘটে ভয়ংকর এক সিরিয়াল কিলারের। পত্রিকা মারফত এই তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে যায়। খুনি গা ঢাকা দিয়ে গণমানুষের সাথে মিশে গেছে।

শেষ শটে একাকী মেয়ের ডেপথ অব ফিল্ডে আবু সিরি পাজকোলা করে নিয়ে যাচ্ছে প্রেমিকা হানুমাকে; Image Source: Cairo Station film

 

মুভিতে অপরাপর চরিত্রসমূহের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ রয়েছে কিনাওয়ির। ভিলেন হওয়া সত্ত্বেও চমৎকারভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে তাকে। আর্থিক অস্থিতিশীলতা এবং পঙ্গুত্বের হীনম্মন্যতার পাশাপাশি তার সেক্সুয়াল অবসেশনে দৃষ্টিপাত করেছে আলভেইস অরফানেলিলের সচেতন ক্যামেরা। সেই ক্যামেরায় স্পষ্ট হয়েছে— নারীদেহের প্রতি অবদমিত উৎসাহ তার সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশনকে প্রতিনিধিত্ব করে। ম্যাগাজিন থেকে মডেলদের ছবি কেটে নিয়ে নিজের ফ্যান্টাসির জগত বাস করে কিনাওয়ি। আর হানুমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে সুখী-সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের, যেখানে শহুরে স্টেশনের কোলাহল আর শত মানুষের ভিড় থাকবে না। নির্জনতায় সঙ্গী হবে আবেদনময়ী হানুমা। তবে চরিত্রের কন্টিনিউ শটের বেলায় দৃশ্যমান ত্রুটি আছে। খোঁড়ানো ছাড়াও কিছু কিছু দৃশ্যে কিনাওয়িকে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে দেখা গেছে। আবার মাথার টুপির ছেড়া কখনো কম-বেশি দেখা গেছে। পক্ষান্তরে, মিশরের মেরিলিন মনরো খ্যাত হিন্দ রোস্তম অভিনয় ও শারীরিক সৌন্দর্যে দারুণভাবে চরিত্রায়ন করেছেন হানুমাকে। বিশেষত, তার ভুবনভোলানো চাহনি আর মুখভঙ্গি প্রেমিকমনকে গ্রাস করবেই। উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর তারুণ্যের উচ্ছলতার মিশেলে এমন চরিত্র আমাদের খুব চেনাজানা। রহস্যময় হাসিতে কিনাওয়ির কাছে সে জানতে চায়,

Why do you want me?
You’re on my mind, all the time.

ছেড়া টুপি মাথায় হতদরিদ্র কিনাওয়ি স্টেশনে পত্রিকা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে; Image Source: Cairo Station film

 

এদের তুলনায় আবু চরিত্রের গভীরতা যৎসামান্য। স্টেশনে কুলিদের নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন করার স্বপ্ন দেখে সে। দৃঢ়চিত্তের অধিকারী আবুর নেতৃত্বগুণের সাথে পুরুষতান্ত্রিক কর্তৃত্ব স্থাপনের মনোভাবও পরিলক্ষিত হয়। হানুমাকে বিয়ে করে সুখী জীবনের আশায় সে অর্থ সঞ্চয় করে।

চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অনবদ্য। সময়ের সাথে সাথে কাহিনির গতি যেমন বেড়েছে, তেমনি মিউজিকে টোনের পরিবর্তন এসেছে। লাস্ট সিকুয়েন্সে শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলার আমেজ আর অনভিপ্রেত খুনের ভয় দারুণভাবে সঞ্চারিত হয়েছে কায়রো স্টেশনে। একজন ব্যর্থ প্রেমিকের প্রতিহিংসার বলি হবার ঠিক পূর্বমুহূর্তকে নির্মাতা ক্লোজআপে আচানক চমকে দেখিয়েছেন। সম্মোহন তথা হিপনোটাইজের মাধ্যমে সিনেমার ন্যারেটর দোকানি মাদবুলি, অপরাধী কিনাওয়িকে আটক করতে সক্ষম হয়।

Put on your wedding costume.
It’s your wedding, son, your wedding.

ধারালো অস্ত্র ফেলে সরল বিশ্বাসে কিনাওয়িকে দেয়া বিয়ের কস্টিউম পরার পর বুঝতে পারে- পুলিশের স্ট্রেইট জ্যাকেট পরিয়ে তাকে বেঁধে ফেলা হয়েছে। বুদ্ধিদীপ্ত এই দৃশ্য একইসাথে হৃদয়বিদারক। কারণ, হানুমার বেঁচে ফেরার স্বস্তি আর কিনাওয়ির দুর্ভাগ্য এক ফ্রেমে অস্বস্তিদায়ক আবহ তৈরি করে। ঐ আবহের রেশ না যেতেই পরের শটে জুক্সটাপজিশনে হাজির হয় অজ্ঞাত এক তরুণী। এবার আমরা তাকে রেললাইনের উপর একাকী, নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি!

গান, মেলোড্রামা এবং গল্পের গাঁথুনিতে কায়রো স্টেশন ইউসুফ শাহিনের প্রাণবন্ত ক্লাসিক নির্মাণ। আরবি ভাষায় চলচ্চিত্রের মূল টাইটেল ছিল বাবেল আদি’দ বা লৌহ দরজা (Iron Gate)। কিন্তু পরবর্তীতে নামটি হারিয়ে ওয়ার্ল্ড সিনেমায় ইংরেজি টাইটেল হিসেবে কায়রো স্টেশনই অধিক গ্রহণযোগ্যতা পায়। মাত্র ১ ঘণ্টা ১৭ মিনিটের সাদা-কালো সিনেমাটি দীর্ঘ সময়ের পথ অতিক্রম করে এখনও দর্শকদের কাছে বেশ উপভোগ্য।

পোশাক বদলে ক্যামেরার সামনে ও পেছনে সমভাবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন পরিচালক ইউসুফ শাহিন; Image Source: Youssef Chahine Podcast

আর হ্যাঁ, যে তথ্যটি না বললে অন্যায্য হবে, তা হলো- কিনাওয়ি চরিত্রে কিন্তু পরিচালক নিজেই অভিনয় করেছেন! এবং প্রমাণ করেছেন— অফস্ক্রিনে তিনি যতটা দুর্দান্ত, অনস্ক্রিনেও তার থেকে কম যান না।

Related Articles