Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মারভেলের ‘ক্যাপ্টেন মারভেল’ কতটা মারভেলাস?

প্রযুক্তির চরম শিখরে থাকা ক্রী (Kree) প্রজাতির সাম্রাজ্য সুবিশাল। তাদের নিজেদের মাতৃগ্রহ ‘হালা’ (Hala), যা কি না পুরো ক্রী সাম্রাজ্যের রাজধানী। সামরিক ক্রী জাতির স্টারফোর্স সদস্য হিসেবে হালা’তে প্রশিক্ষণরত তরুণী ‘ভার্স’ বেশ কিছুদিন ধরে দেখে আসছে একই দুঃস্বপ্ন, এক মহিলা বারবার এসে হাজির হন সে স্বপ্নে। কীসের যেন উত্তর খুঁজে ফেরে ভার্স, কিন্তু পায় না।

ক্রী’দের রাজধানী গ্রহ হালা; Image Source: Marvel Cinematic Universe

ক্রী’দের শাসক সুপ্রিম ইন্টেলিজেন্স অবশ্য ভার্সকে সতর্ক করে দেয় তার আবেগ চেপে রাখতে। সময়ে-অসময়ে কমান্ডার ইয়োন-রগের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে থাকে ভার্স। সবই চলছিল ঠিকঠাক, যতক্ষণ না এক মিশনে গিয়ে সব উল্টেপাল্টে যায়- মিশনটি ছিল ক্রী’দের শত্রু স্ক্রাল প্রজাতির বিরুদ্ধে, যারা কি না নিজেদের চেহারা বদলে ফেলতে পারে (শেপশিফটার)।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ভার্স নিজেকে একসময় আবিষ্কার করে পৃথিবী নামের এক গ্রহে। আর সময়টা ১৯৯৫ সাল। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও সে জানত না, এ গ্রহেই ৬ বছর আগে সে বসবাস করত ক্যারল ড্যানভার্স নামের এক সাহসী পাইলট হিসেবে, যার সহকর্মী ছিল সেই মহিলা যিনি বারবার দেখা দেন স্বপ্নে। অবশ্য ক্যারল এটাও জানতো না, খুব শীঘ্রই সে পরিণত হতে চলেছে মহাবিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সুপারহিরোদের একজনে, যার নাম ক্যাপটেন মারভেল! এই অজ্ঞাতনামা ক্যারল ড্যানভার্স থেকে মহাশক্তিধর ক্যাপ্টেন মারভেল বনে যাওয়ার ‘অরিজিন’ গল্পটা নিয়েই মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের ২১তম সিনেমা ‘ক্যাপ্টেন মারভেল’। গল্প আর পটভূমি নিয়ে মাতামাতি না করে চলুন ছবিটি কেমন হয়েছে সেটা ঘেঁটে আসা যাক।

ক্যাপ্টেন মারভেল ছবির একটি দৃশ্য; Image Source: IMDb

আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে ছবিটির মুক্তি দেয়াটা সার্থক হয় মারভেলের নারী সুপারহিরোর প্রথম অরিজিন স্টোরি হওয়াতে। তবে, প্রতিদ্বন্দ্বী ডিসি কমিক্সের প্রথম নারী সুপারহিরো অরিজিন মুভি ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’ এমনিতেই মানসপটে চলে আসে তুলনায়। ব্রি লারসনের ক্যাপ্টেন মারভেল কি পেরেছে গাল গাদৌ’র ওয়ান্ডার ওম্যানকে পেছনে ফেলতে?

কে এগিয়ে? ওয়ান্ডার ওম্যান নাকি ক্যাপ্টেন মারভেল? Image Source: Comic Book

উত্তরটা আসলে এক কথাতেই দেয়া যায়- না! একদমই পারেনি। লাস্যময়ী গাল গাদৌ তার ছবিতে পুরোটা সময়ই দর্শককে মোহান্বিত করে রেখেছিলেন, তাছাড়া সিনেমার গল্পটাও ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আকর্ষণীয়। অথচ ক্যাপ্টেন মারভেলের চিত্রনাট্যের প্রথমার্ধ খুবই ধীর লয়ের, আর দ্বিতীয়ার্ধে তা-ও যা অ্যাকশন সিকুয়েন্সের দেখা মেলে- তা পুরো মুভিকে টেনে তুলতে পারে না মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের অন্য মুভিগুলোর কাতারে। তা-ও ভাগ্য ভালো যে, ছবিতে কিছুটা হলেও টুইস্টের উপস্থিতি ছিল, নাহলে পুরো ছবিটাই হতো পানসে। যখন ছবিজুড়ে নায়িকা ক্যারল ড্যানভার্সের তুলনায় সবসময়ের প্রিয় মুখ নিক ফিউরি বেশি হাত তালি পায়, আর আরও দর্শকপ্রিয় হয় গুজ নামের পার্শ্বচরিত্রের বিড়াল- তখন ক্যাপ্টেন মারভেলের সাফল্য তো প্রশ্নবিদ্ধ হবেই! তবে নিক ফিউরির হাস্যরস আর ‘বিড়ালের’ কর্মকাণ্ড মুভিটিকে জিয়ে রেখেছিল দর্শকদের জন্য। মজার ব্যাপার, ব্রি লারসন বিড়ালের প্রতি অ্যালার্জিক হওয়ার কারণে, তার সাথে বিড়ালের দৃশ্যগুলোতে পুতুল বা ভিএফএক্স ব্যবহার করা হয়!

ক্যাপ্টেন মারভেল ছবির সেই বিড়াল; Image Source: IMDb

স্পেশাল ইফেক্টের দিক থেকে অন্যান্য গড়পড়তার মারভেল ছবির কাতারেই পড়বে ক্যাপ্টেন মারভেল; গার্ডিয়ান অফ দ্য গ্যালাক্সি আর অ্যাভেঞ্জারস সিরিজের তুলনায় কম সিজিআই, আবার ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকা বা আয়রনম্যান ছবিগুলোর চাইতে একটু বেশি; কারণ ক্রী’দের রাজধানী গ্রহ হালা বা অন্যান্য মহাকাশীয় অভিযান দেখাতে গিয়ে প্রয়োজন পড়ে বেশ স্পেশাল ইফেক্টের। আর সত্যি বলতে, এ ছবিতে ক্যাপ্টেন মারভেল’কে আসলে সুপারম্যানের হাই বাজেট নারী সংস্করণই ঠেকেছে। তবে প্রথমবারের মতো ক্যাপ্টেন মারভেল হয়ে ক্যারল ড্যানভার্সের পর্দায় হাজির হওয়ার সময়টুকু গায়ে কাঁটা দেবার মতোই ভালো! কখনও কখনও তার সিনেমাটিক কায়দায় অ্যাকশনে প্রবেশ মনে করিয়ে দেয় থরের কথা।

ক্যাপ্টেন মারভেল ছবির একটি দৃশ্য; Image Source: IMDb

আবহসঙ্গীতের কথা তুললে বলতেই হয়, ক্যাপ্টেন মারভেল মিউজিকের ব্যাপারে একদমই দাগ কাটতে পারেনি মনে, এমনকি অরিজিন ফিল্ম আছে এমন সুপারহিরোদের নাম শুনলেই অজান্তেই মনে যে পরিচিত সুর খেলে যায়, এমন কিছুই নেই ক্যাপ্টেন মারভেলের। ভালো হিসেবে কেবল নব্বইয়ের দশকের গানগুলো ভালো ছিল। অথচ মারভেলেরই আছে ব্ল্যাক প্যান্থার, আয়রনম্যান বা ক্যাপ্টেন আমেরিকার মতো দুর্দান্ত সব অরিজিন ফিল্ম- তাহলে গলদটা কোথায় ছিল এ মুভিতে?

ক্যাপ্টেন মারভেল ছবিতে নিক ফিউরি ও এজেন্ট ফিল কোলসন; Image Source: IMDb

হতে পারে সেটা ব্রি লারসনের অভিনয়। প্রতিদ্বন্দ্বী ডিসি’র ওয়ান্ডার ওম্যান চরিত্রের গাল গাদৌ’র মতো হতে পারেননি লারসন, ছিলেন বেশ নিষ্প্রভ। ক্ষণে ক্ষণে তার চাপা হাসি দর্শকদের কিছুটা আন্দোলিত করলেও এ প্রশ্নটা মন থেকে দূর করতে পারেনি- ক্যারল ড্যানভার্স হিসেবে কি অন্য কেউ আরও ভালো করতেন?

পাইলট ক্যারল ড্যানভার্স; Image Source: IMDb

ফেজ ওয়ান ধাঁচের ক্যাপ্টেন মারভেলের শ্লথ চিত্রনাট্যের জন্য আরেকটি বড় কারণ হলো- অনেক পরে এসে এত বড় একটি চরিত্রের প্রবেশ। ২১তম ছবিতে এসে যখন ফিরে যেতে হয় ত্রিশ বছর আগের পৃথিবীতে তখন আর দর্শকদের পরিচিত অ্যাভেঞ্জারসের দুনিয়ার উত্তেজনা খুঁজে পাওয়া যায় না। অ্যাভেঞ্জারস তো পরের কথা, সেটা এমন এক সময়ের কথা, যখন শিল্ড পর্যন্ত জানে না ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব!

ক্যাপ্টেন মারভেল ছবিতে স্ক্রাল; Image Source: IMDb

ট্রেলারের সুবাদে ইতোমধ্যে ভক্তকুল সকলেই জেনে গেছেন যে আসছে ২৬ এপ্রিল মুক্তি প্রতীক্ষিত অ্যাভেঞ্জারস এন্ডগেমে বড় ভূমিকায় থাকছে ক্যাপ্টেন মারভেল। তাই ৮ মার্চ মুক্তি পাওয়া ক্যাপ্টেন মারভেল ছবির মূল উদ্দেশ্যই ছিল দর্শকদের সাথে ক্যারল ড্যানভার্সের ক্ষমতাগুলোর পরিচয় করিয়ে দেয়া। পুরো অ্যাভেঞ্জারস সিরিজেরই প্রিকুয়েল হিসেবে কাজ করেছে এ মুভিটি, তার সাথে সাথে উত্তর দিয়েছে বহুদিন ধরে চলে আসা কিছু প্রশ্নের।

নিক ফিউরি চরিত্রে স্যামুয়েল জ্যাকসন আবারও জয় করে নেন দর্শকদের মন। দেখা হয়ে যায় এজেন্ট কোলসনের সাথেও। ক্রী’দের মাঝে থাকাকালীন ভার্সের প্রশিক্ষক ইয়োন-রগ চরিত্রে জুড ল বরাবরের মতোই উপহার দিয়েছেন ক্যারিশমাটিক অভিনয়। ব্রি লারসনের অভিনয় সপ্রতিভ হয়ে উঠতে সময় লাগে, যতক্ষণ না ক্যাপ্টেন মারভেল নিজের ক্ষমতা বুঝে ওঠে শেষমেশ; আর ফলস্বরূপ মান রাখার মতো একটি এন্ডিং দর্শকদের উপহার দিতে পেরেছে মুভিটি। আর দুটো পোস্ট-ক্রেডিটের প্রথম দৃশ্যটাই মূলত এন্ডগেমের সাথে এই পুরো মুভির সংযোগ, নিক ফিউরির পেজারের ব্যাপার ব্যাখ্যা করতেই ক্যাপ্টেন মারভেল ছবির অবতারণা। গার্ডিয়ান সিরিজের রোনানকেও দেখা যায় ছবিটিতে! ছবির শুরুতেই মারভেলের স্রষ্টা স্ট্যান লি’র প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়, ক্যামিও হিসেবে স্ট্যান লি’র যে দৃশ্য দেখানো হয় তখন তিনি ছিলেন খুবই অসুস্থ, তাই পুরনো অডিও রেকর্ডিং দিয়ে তার কথা চালিয়ে দেয়া হয়।

রোনান দ্য অ্যাকুইজার; Image Source: IMDb

বর্তমানে আইএমডিভি’তে ৭.১/১০ আর রটেন টম্যাটোজে ৭৯% স্কোর নিয়ে অবস্থান করছে ক্যাপ্টেন মারভেল, যা অন্যান্য হিট মারভেল মুভিগুলোর তুলনায় কমই বলা চলে। তবে বক্স অফিসে তুমুলভাবে সফল ছবিটি। মার্চের ২১ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আয় করে ফেলেছে ৮১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে বাজেট ছিল মাত্র ১৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!  

ভার্স ও তার প্রশিক্ষক ইয়োন-রগ; Image Source: Esquire

প্রথম দর্শনে মুভিটি শেষ করবার পর পরই খুব একটা অভিযোগ থাকে না ক্যাপ্টেন মারভেল নিয়ে, কিন্তু কিছু সময় বাদে রেশ কেটে যাবার পরই আসলে শুরু হয় মনের ভেতর প্রশ্নের ফুলঝুড়ি। স্ট্যান্ড অ্যালোন ফিল্ম হিসেবে ক্যাপ্টেন মারভেল খুব হাততালি পাবার যোগ্য নয়, কিন্তু অ্যাভেঞ্জারসের রাস্তা তৈরি করে দিতে প্রয়োজনীয় একটি মুভি। তবে দিনশেষে এটা আসলে কতটা ক্যারল ড্যানভার্স মুভি ছিল আর কতটা নিক ফিউরি মুভি ছিল সেটা ভাববার বিষয়! সদ্য নিজেকে খুঁজে পাওয়া ক্যারল ২৪ বছর পর ফিরে এসে ক্যাপ্টেন মারভেল হিসেবে কেমন বাজিমাত দেখায় সেটাই এখন দেখবার জন্য মুখিয়ে আছেন ভক্তরা।

This article is in Bangla language and reviews the film Captain Marvel. For more information please visit the hyperlinked websites.

Featured Image: Whats Images

Related Articles