Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেয়ার অভ কাঞ্চারাপালেম (২০১৮): যে সিনেমায় ভালোবাসা আছে

আমেরিকান ঔপন্যাসিক এরিখ সিগাল তার ‘লাভ স্টোরি’ উপন্যাসে সম্ভবত ভালোবাসার সবচেয়ে সরল সংজ্ঞাগুলোর একটি প্রদান করেছেন। তিনি বলেছেন,

“ভালোবাসা মানে, যখন আপনাকে কখনোই ‘দুঃখিত’ বলতে হবে না।”

এই সংজ্ঞা শ্রুতিমধুর, কোনো শুভেচ্ছাকার্ড বা পোস্টারে ব্যবহারের জন্য উৎকৃষ্ট। কিন্তু এই সংজ্ঞা কি আসলেই ভালোবাসার অনুভূতির গভীরতাকে ধারণ করতে পারে? 

অ্যান্থোলজি ফিল্ম বলতে সাধারণত একই থিম বা বিষয়ের উপরে বানানো একাধিক শর্টফিল্মের সংকলনকে বোঝায়। আমাদের আজকের আলোচ্য সিনেমা ‘কেয়ার অভ কাঞ্চারাপালেম’ও একটি অ্যান্থোলজি। এর আলোচনায় সিগাল আর তার ভালোবাসার সংজ্ঞাকে টানার কারণ, তেলুগু ভাষার এই অ্যান্থোলজির মূল বিষয়ও ভালোবাসা। সিগালকে ছেড়ে আসুন দেখি কেয়ার অভ কাঞ্চারাপালেম কীভাবে ভালোবাসার সংজ্ঞা দেয়। 

পরিচালক ভেঙ্কটেশ মাহা; Source: dailyhunt.in

নবাগত পরিচালক ভেঙ্কটেশ মাহার এই চলচ্চিত্রে ভালোবাসা মানে ক্লাসের যে মেয়েকে আপনি পছন্দ করেন, তার জন্য গানের কথা সম্বলিত পুস্তিকা কিনে দেওয়া। যেন সে স্কুলের অনুষ্ঠানে যে গানটি পরিবেশন করতে চায়, সেটির কথা মুখস্থ করতে পারে। কিন্তু গানের কথার মানে কী, তা বোঝার মতো বয়স আপনাদের কারোরই হয়নি। ভালোবাসা মানে আপনার সহকর্মী যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সেটি মনে রাখা; এবং বন্ধুর পথ পেরিয়ে মন্দিরে পৌঁছালে তাকে সাথে করে আনা চিনি গোলান পানি পান করতে দেয়া। ভালোবাসা মানে যৌনকর্মী জেনেও কোনো নারীকে ভালোবাসা।

কৈশোর থেকে মধ্যবয়সী; বয়সের বলয় ভেঙে প্রবলভাবে ভালোবাসায় মত্ত মানুষদের নিয়ে রচিত চারটি গল্পের সমন্বয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। এদের সকলের বসবাস বিশাখাপট্টনামের কাঞ্চারাপালেম নামক ছোট একটি এলাকায়। যে এলাকার নামানুসারে এই ‘স্লাইস অব লাইফ’ অ্যান্থোলজির নামকরণ করা হয়েছে।

রাজুর (সুব্বা রাও) বয়স ৪৯ এবং সে অবিবাহিত, কেরানির পদে চাকরি করে সরকারি অফিসে। উড়িষ্যার বাসিন্দা রাধা (রাধা বেসি) রাজুর অফিসে নতুন অফিসার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। কর্মক্ষেত্রে বর্ণপ্রথাকে অতিক্রম তাদের মধ্যে বন্ধন গঠিত হয় অনেকটা অদৃশ্যভাবে, তেমন কোনো আড়ম্বর ছাড়া। এমন কোনো দৃশ্য আমরা দেখি না, যেখানে রাধা রাজুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। বরং তাদের মধ্যে নৈকট্য আসে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং ক্রমবর্ধমান সহৃদয়তার মাধ্যমে।

অপর গল্পে আমরা দেখতে পাই, সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া দুই সহপাঠী সুন্দরম (কেশব কারি) এবং সুনীতাকে (নিত্থিয়া শ্রী)। ইংরেজিতে তাদের নাম লিখতে গেলে দুজনের নামের শুরুতেই ‘Sun‘ অংশটুকু পাওয়া যায়। এই থেকেই তারা একে অপরকে পছন্দ করে ফেলে। এই গল্পে ভেঙ্কটেশ দেখিয়েছেন ভালোবাসার সারল্য। কীভাবে গানের ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তার প্রতি উদাসীন থেকে এক কিশোর অন্যকে গানটি গাইতে সহায়তা করছে। তবে তাদের এই সারল্যের পরিণতি কেমন হয়, তা সিনেমা দেখেই জানতে হবে।

রাজু আর রাধা; Image Source: ncpamumbai.com

আরেক গল্পের মূল দুই চরিত্র ভার্গভী (প্রণিতা পাটনায়েক) এবং জোসেফ (কার্তিক রত্নম)। বয়সের দিক থেকে এরা উভয়েই তরুণ। জোসেফ স্থানীয় এক প্রভাবশালীর ডানহাত। একটা সময় চালচুলোহীন জোসেফকেই ভালোবেসে ফেলে সে। তার জন্য জোসেফকে বদলে যেতেও দেখি আমরা। কিন্তু তাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ধর্ম। এমতাবস্থায় জোসেফ একটি কাজে আরেক শহরে গেলে ভার্গভীর গোঁড়া বাবা অন্য এক ছেলের সাথে তার বিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করেন।

‘কেয়ার অভ কাঞ্চারাপালেম’-এ আরো আছে গাদ্দাম (মোহন ভগত) এবং সালিমা (পারভীনা পারুচুরি)। গাদ্দাম কাজ করে একটি মদের দোকানে। যেখানে প্রত্যেক সন্ধ্যায় এক কোয়ার্টার ম্যানশন হাউজ কিনতে আসে সালিমা। পুরো মুখমণ্ডল নেকাবে ঢাকা থাকলেও তার চোখ দুটি দেখা যায়। এই চোখ দেখেই তার প্রেমে পড়ে যায় গাদ্দাম। একসময় নিজের ভালোবাসা নিবেদনও করে। উত্তরে তাকে সালিমা বলে, সে একজন যৌনকর্মী এবং নিজের পেশা নিয়ে তার বিন্দুমাত্র সংকোচ নেই। সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গাদ্দাম কি তাকে কাছে টেনে নিতে পারবে? এরপরে গাদ্দামের সিদ্ধান্ত কী হয়, তা নিয়েই এগিয়েছে তাদের কাহিনী। 

চারটি গল্পের একটি থেকে হঠাৎ করে আরেকটিতে ঢুকে যান পরিচালক। ফলে, আমরা এখানে কিছুক্ষণ এক যুগলের সাথে সময় কাটাই; আবার ঐখানে কিছুক্ষণ আরেক যুগলের সাথে সময় কাটাই। তবে ভালো গল্প, নির্মাণ এবং গল্প বলার ধরনের কারণে এতসব কাটিংয়ের ভেতরেও গল্পের চরিত্রসমূহের সাথে কী হচ্ছে, সে ব্যাপারে জানার আগ্রহ জাগে দর্শকের ভেতর। 

ভালো বা খারাপ, যেভাবেই নেওয়া হোক, তেলুগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও সুপারস্টারদের চাকচিক্য এবং গ্ল্যামারের ছড়াছড়ি দেখা যায়। এখানকার বেশিরভাগ সিনেমাতেই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ গোছের চরিত্রদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়, যেগুলোর শ্যুটিং হয় দেশ-বিদেশের নানা মনোরম স্থানে। বাস্তব জীবন বা জীবন ঘনিষ্ঠ কোনো ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা এখানে খুব একটা দেখা যায় না। আবার অ্যান্থোলজিক্যাল ফিল্মের সাথে তেলুগু দর্শকরা অপরিচিত, একথাও বলা যায় না। ২০১০ সালের ‘ভেদাম’ বা ২০১৪ সালের ‘চান্দ্রামামা কাথালু’; সম্প্রতি এই ইন্ডাস্ট্রির দুটি উৎকৃষ্ট অ্যান্থোলজির উদাহরণ। তাহলে ‘কেয়ার অভ কাঞ্চারাপালেম’-এর আলাদা মাহাত্ম্য কোথায়? আর কেনই বা দর্শক এটি দেখবে? 

সুন্দরম ও সুনীতা; Image Source : imdb.com

এই সিনেমার মূল মাহাত্ম্য এর নির্বিঘ্নতা বা মসৃণতায়। যে দক্ষতায় ভেঙ্কটেশ সিনেমার চারটি গল্পকে অঙ্গীভূত করে শেষের চমকের দিকে নিয়ে গেছেন, তার জন্য আলাদা বাহবা পাবেন তিনি। তবে যদি এই চারটি গল্পকে অঙ্গীভূত করা না-ও হতো, তাহলেও এটি দেখার অনুভূতিতে খুব একটা খামতি আসত বলে মনে হয় না। চারটি গল্পকেই ধারণ করা হয়েছে সততা আর আন্তরিকতার সাথে। বাস্তবতার নিরিখেই এগুলোতে পরিচালক সঞ্চার করেছেন ভাবপ্রবণতা, অনুভূতি, হাস্যরস এবং বিনোদনের যথেষ্ট উপাদান।

এই সিনেমায় কোনো চাকচিক্য বা আড়ম্বরপূর্ণ চরিত্রের উপস্থিতি নেই। আছে মেকআপ ও কৃত্রিমতা বিবর্জিত নিত্যদিনকার সাধারণ মানুষজন, যাদের বেশিরভাগই স্থানীয়। অভিনয়ে তাদের পারদর্শিতার অভাব দৃশ্যমান, বিশেষ করে রাধার ক্ষেত্রে। কিন্তু এই জবুথবু ব্যাপারটাই অদ্ভুতভাবে প্রীতিকর। দর্শকদের মনে হবে, এখানকার চরিত্ররা অভিনয় করছেন না, বরং নিজেদের দৈনন্দিন জীবনটাই যাপন করছেন; আর পরিচালক তাদের যাপিত জীবনটাকেই বন্দী করেছেন ক্যামেরার ফ্রেমে।

পুরোটা জুড়েই পরিচালকের চেষ্টা আর অধ্যবসায়ের ব্যাপারগুলো দৃশ্যমান। তিনি যে এই এলাকায় থেকেছেন এবং এখানকার জীবনকে বুঝেছেন, অনুভব করেছেন; প্রতিটি দৃশ্যই তার সাক্ষ্য দেয়। তাই বাণিজ্যিক সফলতার পাশাপাশি তেলুগু সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে নিরীক্ষামূলক কাজগুলোর একটি হিসেবে এর স্থান অবশ্যম্ভাবী। এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবিদার আদিত্য জাভাদি এবং বরুণ চাফেকারের সিনেম্যাটোগ্রাফি। তারা ক্যামেরার লেন্সের সীমা পেরিয়ে দর্শকদের কাছে এখানকার চরিত্রদেরকে পৌঁছে দেয়ার একটা সুযোগও হাতছাড়া করেননি।

সিনেম্যাটোগ্রাফারদের মেধার পরিচয় পাওয়া যায় জোসেফ আর ভার্গভীর গল্পের একটি সিকোয়েন্সে, যেখানে জোসেফ ভার্গভীকে ধর্মোপদেশ শুনতে নিয়ে যায়। এই দৃশ্যে মূল দুই চরিত্র ছাড়াও অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী রয়েছেন। সিনেম্যাটোগ্রাফারদের মুন্সিয়ানায় এই দৃশ্যকে একটুও মেকি বা মঞ্চস্থ মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে, এলাকার কোনো গীর্জায় ধর্মানুষ্ঠান চলছিল, আর সিনেমার দল গিয়ে সেই অনুষ্ঠানটিই ধারণ করে নিয়ে এসেছেন। তাদের দক্ষতা আবারও এটি প্রমাণ করে যে, সিনেমার ক্রু যদি মেধাবী হয় এবং আন্তরিকভাবে নিজের কাজকে ভালোবাসে, তাহলে কম বাজেট খুব একটা বড় বাধা হতে পারে না। 

স্বীকার আগাস্তির সঙ্গীতায়োজনকেও প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে হবে। সিনেমার গল্পগুলো যে প্রেক্ষাপটে চিত্রিত হয়েছে, তার সাথে এর শব্দ যেন মিশে গেছে। গল্প বলার ক্ষেত্রে পরিচালক যে সময় নিয়েছেন, তাতে দর্শকের বিরক্তি না আসার তার কারণ আগাস্তির মুন্সিয়ানা। পুরোটা সময় জুড়ে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর সিনেমার দর্শনানুভূতি বাড়িয়ে গেছে, এর সহজ-সরল বাস্তবিকতাকে মোহনীয় করেছে। ব্যবহৃত গানগুলোও গল্পের সাথে সময়োপযোগী। সংলাপও মনোগ্রাহী।

চরিত্রগুলোর কথাবার্তায় যে হাস্যরসের উপস্থিতি রয়েছে, তা বাস্তবিক এবং প্রাঞ্জল। যে কৌতুকগুলো সিনেমার চরিত্ররা বলে, সেগুলোর সবগুলোতে দর্শক হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাবেন, এমন নয়। তবে সবগুলো স্বাভাবিক কথাবার্তাতেই উঠে এসেছে। জোর করে পাঞ্চলাইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। তেলুগুর সাথে পরিচিত না হওয়ার কারণে কিছু হাস্যরস বুঝতে অক্ষমও হতে পারি আমরা। তবে সিনেমার মূল বোধের প্রকাশে ভাষা না জানাটা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। 

জোসেফ-ভার্গভী; Image Source: imdb.com

শুরুতেই একটি গানের মাধ্যমে জীবনের ব্যাপারে দর্শন সম্বন্ধীয় একটি প্রশ্ন রেখেছেন পরিচালক। চারটি গল্পে চার বয়সের মানুষের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছে, কীভাবে সময়ের সাথে আমাদের বিশ্বাস, চিন্তাভাবনা, দর্শন বদলায়। কীভাবে জীবনের অভিজ্ঞতা আমাদের চিন্তা-চেতনায় প্রভাব ফেলে। যেমন, রাজুর কথাই ধরি। রাজুকে দেখলে এমন ভালো মানুষ দুনিয়াতে এখনও আছে কিনা সে ব্যাপারে ভাবতে আমরা বাধ্য হই। কিন্তু কোনোভাবেই তার চরিত্র ঐশ্বরিক বা ঈশ্বরের প্রতিভূ নয়। সে-ও দোষগুণ সম্বলিত মানুষই। গল্পটি থেকে বেঁচে থাকা এবং জীবনে উপভোগ করার মন্ত্রণা পাই।

আবার গাদ্দামকে আমরা দেখি, সমাজ তার সম্পর্কের ব্যাপারে কী বলছে, সেটা না ভেবে নিজের মনের সুখকেই সে গুরুত্ব দেয়। জোসেফের ক্ষেত্রে ভালোবাসা আসে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে। ভার্গভীকে ভালোবেসে সে-ও নিজের অবস্থার উন্নয়নে ব্রতী হয়। আর সুন্দরম আমাদেরকে শৈশবে কাউকে ভালো লাগলে তার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যেসব কর্মকাণ্ড করতাম, সেগুলো মনে করিয়ে দেয়। তার সারল্য আর সুনীতার সাথে একটু সময় কাটানোর আকাঙ্ক্ষা ভালোভাবে উঠে এসেছে এখানে।

এগুলো ছাড়াও কয়েকটি সাবপ্লট রয়েছে সিনেমায়। এক ব্যক্তি যে রাজনৈতিকভাবে পসার লাভ করতে চায়, এক ভাস্কর যে নিজের মেধার স্বীকৃতি চায়, একজন শিক্ষক যে চায় সকল বাধা অতিক্রম করে তার শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও মনোযোগী হোক। আছে দুই এলাকার মাঝে দিয়ে চলে যাওয়া একটি রেলপথ, যেটি অতিক্রম করা নিয়ে এক চরিত্রের জীবনে আসে আমূল পরিবর্তন। 

এভাবেই জীবন সংক্রান্ত নানা ব্যাপার স্পর্শ করেছেন ভেঙ্কটেশ। তিনি দ্বিতীয় বিয়েকে স্বাভাবিকতা দিতে চেয়েছেন, প্রেমের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বাধার স্বরূপ বা গোষ্ঠীগত দাঙ্গাকে নির্মোহভাবে দেখাতে চেয়েছেন। সমাজের মানুষ যে অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলায় এবং তার গায়ে নানা তকমা সেঁটে দেয়, এগুলোও উঠে এসেছে সিনেমায়। তবে যত্নের সাথে সুচারুভাবে লেখা চিত্রনাট্য ‘কেয়ার অভ কাঞ্চারাপালেম’কে আরেকটি উপদেশমূলক বা জ্ঞান বিতরণ করা খটমট সিনেমা হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।

গল্পের কারণেই পুরুষ চরিত্রগুলো মূল ফোকাসে থাকলেও কেয়ার অফ কাঞ্চারাপালেম তার নারী চরিত্রদের প্রতিও সমানভাবে যত্নশীল। প্রাপ্তবয়স্ক মূল নারী চরিত্রগুলো স্বাধীনচেতা। যেমন, সালিমা নিজের পেশা এবং বাস্তবতা সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। কোনো রাজপুত্র এসে তাকে রক্ষা করবে, এই আশা নিয়ে সে বসে নেই। রাধা শত বাধা অতিক্রম করে মধ্য বয়সে এসে নিজের ভালোবাসার স্বীকৃতি পেতে লড়াই করতেও পিছপা হয় না। আবার ভার্গভী ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে ধর্ম, সমাজ, রাজনৈতিক নেতা, নিজের পিতা- সবার বিরুদ্ধে যেতেও কুণ্ঠাবোধ করে না।

সালিমা ও গাদ্দাম; Image Source: ibtimes.co.in

ভেঙ্কটেশ মাহার সবসময় স্বপ্ন ছিল, বৈশ্বিক দর্শকদের জন্য তেলুগু সিনেমা বানাবেন। এই সিনেমার কথা তার মাথায় আসে ঐ এলাকার এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়ে। সেখানে তিনি এলাকার লোকজনের জীবনযাত্রা, চিন্তা-চেতনাকে অবলোকন এবং অনুধাবন করেন। এরপর এখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। নিজে একটা সময় অভিনেতা হতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন, পরিচালনার ক্ষেত্রেও পদে পদে ব্যর্থতা হানা দিল।

প্রযোজকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে প্রচুর। যার কাছেই গিয়েছেন, তিনিই বলেছেন, তার ঠিকানা মাহাকে কে দিয়েছে? তারপর ঘটনাক্রমে পরিচয় হয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কার্ডিওলজিস্ট পারভীনা পারুচুরির সাথে। পারুচুরি প্রজেক্ট সম্পর্কে জেনে মাহাকে অর্থ যোগানে রাজি হন। তিনি বলেন, এমন কাজ কানে যাওয়ার যোগ্য। পরে সালিমা চরিত্রে অভিনয়ও করেন তিনি। একটা সময় রানা ডাগ্গুবতি এই প্রজেক্টে যুক্ত হন এবং সবার কাছে পৌঁছে যায় সিনেমাটি।

সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়েছে কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে। এই সিনেমাতে কোনো ‘তারকা’ নেই। কাঞ্চারাপালেম এলাকার ৮০ জন লোককে অভিনয় করার জন্য নির্বাচিত করা হয়, যারা এর আগে কখনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায়নি। এমনকি তারা বিশ্বাসও করতে পারছিল না, তাদেরকে নিয়ে কেউ সিনেমা বানাবে। তবে অভিনয়ের ব্যাপারে সকলেই সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করে। আর ফলাফল? তা তো চোখের সামনেই!

সিনেমার দৈর্ঘ্য এবং মূল গল্প বলতে একটু সময় নেবার ব্যাপারে একটু খামতি থাকতে পারে। তবে ক্যামেরার পেছনে ভেঙ্কটেশ মাহার এই জোরালো অভিষেক তেলুগু সিনেমার দিন বদলের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে এতসব পাওয়ার মাঝেও আক্ষেপ আছে মাহার। কারণ প্রযোজক বিদেশী নাগরিক হওয়ায় সিনেমাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে অংশ নিতে পারেনি। নিয়মের বেড়াজালে আটকে গেছে তার স্বপ্নের প্রজেক্ট।

This article is in Bangla. It is a movie review of 'Care of Kancharapalem'.

Featured Image: Sify.com

Related Articles