Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্যাসল রক: ঈশ্বর ত্যাজ্য, শয়তান পালিত এক শহর

ক্যাসল রক। বরফের চাদরে মোড়া ছোট এক শহর। শহরটির চারপাশে বরফে ঢাকা উঁচু-নিচু পর্বতমালা, বরফাচ্ছন্ন গাছপালায় আবৃত বনাঞ্চল। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে টলমলে শীতল পানির বিশাল এক লেক। লোকজনের তেমন একটা আনাগোনা হয় না এই শহরে। কারণ অনেকের কাছেই এই শহর যেন এক মৃত্যুপুরী। যুগ যুগ ধরে এই শহরে একের পর এক অবাঞ্ছিত ও রহস্যময় ঘটনা ঘটে গেলেও, আজ অবধি ঘটনাগুলোর পেছনের সত্যটা উন্মোচিত হয়ে উঠেনি।

অনেকদিন ধরে উত্তরাধিকার সূত্রে বসবাস করে চলেছে, এমন প্রাচীন বাসিন্দা ব্যতীত ক্যাসল রকে নতুন কেউ তেমন একটা বসবাস করতে আগ্রহী হয় না। কারণ এই শহরের প্রকৃতিতেই যেন মিশে আছে অতিপ্রাকৃত কোনো অশুভ ছায়া। লোকে বলে, ঈশ্বর এই শহরের উপর থেকে তার কৃপা অনেকদিন আগেই তুলে নিয়েছেন। মৃতপ্রায় এ শহরের অভিভাবক এখন যেন স্বয়ং শয়তান নিজেই। আর তা না হলে, কেন এই শহরে বহুকাল ধরে এত এত অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা, আকস্মিক মৃত্যু ও অমীমাংসিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবে?

বছরের পর বছর ধরে এই শহরের আলো বাতাসে বেড়ে ওঠার পরও কেন শহরের মানুষগুলোর কাছে নিজেকে এই শহরে নতুন পা রাখা আগন্তুকের মতো মনে হয়? এ শহরের রাতের অন্ধকারের লুকায়িত সত্যগুলো কেন দিনের আলোতে দৃষ্টিগোচর হয় না? কেন এ শহরের প্রতিটি বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছে সেই বাড়ির বাসিন্দাদের পাপের চিহ্ন?

ক্যাসল রক নামের শহরটির গল্প আরও বিস্তারিত শোনার আগে আসুন জেনে আসি এই শহরের উৎপত্তির পেছনের গল্পটা।

ক্যাসল রক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবথেকে উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত অঙ্গরাজ্য ‘মেইন’ এর অন্তর্ভুক্ত কাল্পনিক এক শহর। যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্রে মেইন নামের স্টেটটির অস্তিত্ব থাকলেও, ক্যাসল রকের কোনো নামচিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ ‘ক্যাসল রক’ নামের এই শহরের জন্ম হয়েছিল হরর, সায়েন্স ফিকশন, সুপারন্যাচারাল ফিকশন, সাসপেন্স ও ফ্যান্টাসি জগতের কালজয়ী লেখক স্টিফেন এডউইন কিং-এর কল্পনায়।

স্টিফেন কিং তার বিভিন্ন গল্পে, ছোটগল্পে ও উপন্যাসে ‘মেইন’ রাজ্যের ভৌগলিক সীমার মধ্যে অবস্থিত ‘ক্যাসল রক’ নামের একটি শহরের কথা তুলে ধরেন। ১৯৭৯ সালে তার লেখা ‘দ্য ডেড জোন’ উপন্যাসে প্রথমবারের মতো ক্যাসল রকের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া ১৯৮২ সালের ডার্ক কমেডি, হরর ঘরানার মুভি ‘ক্রিপ শো’, ১৯৮৬ সালের ‘ইট’ ও ১৯৯৯ সালের ‘নিডফুল থিংস’ নামে দুটি ভৌতিক উপন্যাসে, ১৯৯২ সালের রহস্য উপন্যাস ‘জেরাল্ড’স গেম’ ইত্যাদি এমন বহু বইয়ে ও সিনেমায় ‘ক্যাসল রক’ নামের এই শহরের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন তিনি।

আবার কিছু ক্ষেত্রে ক্যাসল রকের পরিবর্তে ক্যাসল কাউন্টি, ক্যাসল লেক ও ক্যাসল ভিউয়ের ব্যবহার করতেও দেখা গেছে। মোটকথা, ক্যাসল রক স্টিফেনের আপন তুলির মহিমায় মনের ক্যানভাসে আঁকা এক ভৌতিক ও রহস্যে ঘেরা এক নিষ্প্রাণ শহর।

ক্যাসল রক শহরের জনক; Image Source: Bloody Disgusting

আর স্টিফেন কিং এর আবিষ্কৃত এই শহর পূর্ণতা পেয়েছে আমেরিকান বিনোদনধর্মী প্রতিষ্ঠান ‘হুলু’র মুক্তিপ্রাপ্ত টিভি সিরিজ ‘ক্যাসল রক’ এর মাধ্যমে। প্রথম অনুচ্ছেদে মূলত এই সিরিজের চিত্রনাট্যের আঙ্গিকে ‘ক্যাসল রক’ শহরের দৃশ্যপট বর্ণনা করা হয়েছে। এ বছরের মাঝামাঝি রূপালী পর্দার সামনে আসা এই সিরিজের মূল রচয়িতা হচ্ছেন স্যাম শ্য ও ডাস্টিন থমাসন।

তবে স্টিফেন কিং এর গল্পগুলো থেকে সিরিজের পটভূমি ও চরিত্রগুলো ধার নেওয়া হয়েছে। সিরিজের জনরার কথা যদি তুলতেই হয়, তাহলে আগেভাগে বলে নেওয়া ভালো, ‘ক্যাসল রক’ শহরের মতোই এর জনরাও বেশ জটিল ও দুর্ভেদ্য। সাধারণত এক সিরিজে এতগুলো ঘরানার চমকপ্রদ সংমিশ্রণ তৈরি করাটা চাট্টিখানি কথা নয়।

কিন্তু এই নিপুণতাই দেখিয়েছিন সিরিজের দুই গল্পকার। আরও ৭ জন চিত্রনাট্যকারকে নিয়ে দারুণ এক দল গঠন করে ‘ক্যাসল রক’ সিরিজের প্রথম সিজনের ১০ এপিসোড তারা বেশ কয়েকটি ঘরানার মিশেলে লিপিবদ্ধ করেছেন। সেসব কথা না হয় পরে হবে। আগে সিরিজের প্লট নিয়ে খানিকটা কথা বলে নেওয়া যাক।

সিরিজটির প্লট গড়ে উঠেছে ক্যাসল রক শহরের এক নির্দিষ্ট সময়ের ঘটনাচক্রকে আবির্ভূত করে। সিরিজটিতে এ শহরের বেশ কয়েকজন বাসিন্দার জীবনের পৃথক পৃথক গল্পকে একই সুতার বাঁধনে জড়িয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গল্পে রূপায়িত করা হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধরতে গেলে, সিরিজের গল্প প্রবাহিত হয়েছে হেনরি ডিভার ও তার পরিবারকে কেন্দ্র করে। এছাড়া বাদবাকি চরিত্রের উপস্থিতি ও তাদেরকে ঘিরে দেখানো ঘটনাগুলো মূলত ডিভার পরিবারের কাহিনীচিত্রে পূর্ণতা আনার উপাদান মাত্র।

সিরিজে ‘ক্যাসল রক’ শহরের সামগ্রিক রূপ তুলে ধরতে ডিভার পরিবার প্রতিনিধিত্ব করেছে। তবে যেহেতু ডিভার পরিবারের আসল গুরুত্ব সিরিজের শেষার্ধে আসার আগে দর্শক পুরোপুরিভাবে বুঝে উঠতে সমর্থক হবে না। তাই বলা যায়, বাকি চরিত্রগুলোর ও তাদেরকে জুড়ে থাকা গল্পগুলো সিরিজের মূলভাব ফুটিয়ে তুলতে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করেছে।

এবার কি অতীতের প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে? Image Source: Boston Herald

সিরিজের প্রথম পর্বের একদম প্রথম দৃশ্য দেখানো হয় যে, ১৯৯১ সালের কোনো একদিন, একজন পুলিশ অফিসার ক্যাসল রকের বরফে ঢাকা জনশূন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে বনের ভেতর এসে থামেন। গাড়ির রেডিওতে, হেনরি ডিভার নামের আট বছর বয়সী এক বালকের নিখোঁজ হওয়ার খবর তুলে ধরা হচ্ছিলো। তারপর সেই পুলিশ অফিসারকে বনের পথ দিয়ে একা একা হেঁটে কীসের যেন তল্লাশী করতে দেখা যায়। বেশ খানিকক্ষণ খোঁজাখুঁজির দৃশ্য দেখানোর পর, হুট করে তার চোখ পড়বে বরফাচ্ছাদিত পাহাড়ের ঠিক মাঝখানে এক বালক দাঁড়িয়ে আছে। তৎক্ষণাৎ “হেনরি!” বলে চিৎকার দিয়ে উঠবেন তিনি। আর এভাবেই যাত্রা শুরু করে ‘ক্যাসল রক’ সিরিজ।

এরপর কাহিনীর ঘূর্ণাবর্তে আপনি চলে আসবেন ২০১৮ সালে। শশাঙ্ক স্টেট কারাগারের (কাল্পনিক কারাগার) ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ডেন ড্যাল ল্যাসির সেদিন শেষ কর্মদিবস ছিল। বাড়ি থেকে বের হবার আগে অন্ধ স্ত্রীর জন্য নাস্তা বানিয়ে, তার গালে চুমু খেয়ে কারাগারের উদ্দেশ্যে বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে রওয়ানা দেন তিনি। কিন্তু খানিকবাদেই দর্শক তাকে কোনো এক অজানা কারণে কারাগারের যাবার পথেই নিজ গাড়িতে বসে আত্মহত্যা করতে দেখবে।

তারপর তুলে ধরা হয় শশাঙ্ক স্টেট কারাগারের চিত্র। ল্যাসির অবর্তমানে সেখানে নতুন ওয়ার্ডেন হিসেবে আসেন টেরেসা পোর্টার নামের একজন মহিলা। কারাগারে এসেই তিনি নতুনভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন। আর সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে, দীর্ঘদিন ধরে তালাবন্ধ হয়ে খালি পড়ে থাকা কারাকক্ষ থেকে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় একজন তরুণকে খুঁজে পায় কারাগারের কর্মীরা।

ধারণা করা হয়, ছেলেটির এই করুণ দশার পেছনে ওয়ার্ডেন ল্যাসির হাত ছিল, হয়তো এই ছেলেটি ল্যাসির আকস্মিক আত্মহত্যার পেছনের কারণটাও জানে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন সেই তরুণের মুখ থেকে শুধু ‘হেনরি ডিভার’ নামটাই বলাতে পারে কারা কর্তৃপক্ষ। আর তাই জরুরি তলব করে বোস্টনে উকিল হিসেবে কর্মরত হেনরি ডিভারকে ডেকে আনা হয়।

১৯৯১ সালের হারিয়ে যাওয়া বালকের কথা মনে আছে তো? এই সেই হেনরি। নিজ শহরে ফিরে এসে, নিজ পরিবারেই অনেক পরিবর্তন চোখে পড়তে শুরু করে হেনরির। আর কেন যেন, অতীতের কোনো এক দুঃস্বপ্নের কারণে নিজ শহরটাকেই বড্ড অভিশপ্ত মনে হয় তার। কিন্তু কী সেই দুঃস্বপ্ন সে নিজেও জানে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, খাঁচায় বন্দি থাকা সেই ছেলেটি হেনরির নাম কেন বলেছিল? হেনরি তার এই নির্মম পরিণতির জন্য দায়ী? ছেলেটিকে আসলেই মানসিকভাবে অসুস্থ নাকি সে মানুষরূপী কোনো এক পিশাচ?

রহস্যময়ী এক মানবী; Image Source: Geek Girl Authority

সিরিজের গল্প আপাতত এটুকুই থাক। এবার সিরিজের মূল কয়েকটি চরিত্রকে সূক্ষ্মভাবে বিভাজিত করার মধ্য দিয়ে সিরিজটির তাৎপর্য নির্ণয় করা যাক। কারণ এই সিরিজের ক্ষেত্রে খুব সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে একেকটি চরিত্রকে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি চরিত্রের অন্তরালে যেন একেকটি সূত্র অন্তর্নিহিত রয়েছে।

হেনরি ডিভার

হেনরি ডিভারকে সিরিজের মূল চরিত্র হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। অতীতের কালোছায়া বয়ে বেড়ানো হেনরি ডিভার পরিবারের পালক পুত্র। ছোটবেলায় সে হারিয়ে গেলে, তার বাবা তাকে খুঁজতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন, যার ফলে মৃত্যু হয় তার। পিতার মৃত্যুর কারণেও শহরের লোকে তাকে অশুভ মনে করে। যদিওবা নিপাট ভদ্রলোকের মতো দেখতে হেনরি নিজেও জানে না, তার ছোটবেলায় আসলে কী ঘটেছিল। কিছু খণ্ড খণ্ড দুঃস্মৃতি তার চোখের পর্দায় এসে ভিড়লেও সেগুলোকে মেলাতে পারে না সে। ৯ নং পর্ব তার চরিত্রের আসল সত্য সামনে আসে।

রুথ- তিনি সবসময়ই সব জানতেন; Image Source: Vox

ড্যাল ল্যাসি

ড্যাল ল্যাসির গল্প তুলে ধরা হয় পর্ব দুইয়ে। ছোটকাল থেকে দুঃসহ ঘটনার ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠা ল্যাসির ক্যাসল রকের জন্য বড্ড মায়া হতো। সে চাইতো, একবারের জন্য হলেও, ঈশ্বরকে খুশি করে সে এই শহরে তাকে ফিরিয়ে আনবে। নিজের জীবনের উদ্দেশ্য সন্ধান করে বেড়ানো ল্যাসি, ঈশ্বর থেকে শুধু একটি সুযোগই চেয়েছিল। আর কেন যেন অজ্ঞাত সেই ছেলেটিকে খাঁচায় বন্দি করে নিজের জীবনকে সার্থক করতে পেরেছে বলে মনে করতে শুরু করে সে। বেশ জটিল ও রহস্যেই ঢাকা থেকে গেছে ল্যাসি চরিত্রটি।

ম্যাথিউ ডিভার

হেনরি ডিভারের বাবা। পেশায় ঈশ্বরের পূজারি এই মানুষটিকে প্রথম কয়েকটি পর্বে তেমন গুরুত্ব না দেওয়া হলেও তার চরিত্রের খোলাসা হতে শুরু করে ৬ নং পর্ব থেকে। তার চরিত্রের ভালোমন্দ বিচার করার ভার না হয় দর্শকের উপরেই রইলো। কিন্তু এটা মানতেই হবে, তিনিও অনেকটা ল্যাসির মতোই ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে পুনর্জন্ম দিয়েছে। স্বয়ং ঈশ্বরের বাণী শোনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা ম্যাথিউ পারিবারিক জীবনে ছিলেন চরম অসুখী। কেন সেটা না হয় পরে জানবেন। তার ও হেনরির মধ্যকার সম্পর্ক বুঝতে হলে, দর্শককে ৭ নং পর্ব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদিও বা তার মৃত্যুর কারণ সিরিজের প্রথমদিকে অন্য একজনের ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে দেখানো হয়।

রুথ ডিভার

হেনরি ডিভারের মা। এই মহিলাকে সিরিজের প্রথম থেকেই ভুলোমনা ও কেমন উদাসীন বলে মনে হলেও তার চরিত্রের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে ৭ নং পর্বে। বাকি ৬ পর্বে যে বিষয়গুলো ও সূত্রগুলো আপনার চোখে পড়েনি কিংবা পড়লেও সেগুলোর মর্ম ধরতে পারেননি, এ পর্বে এসে রুথের দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলো দেখতে পাবেন। রুথ আপনাকে নিয়ে যাবে কোনো এক অদ্ভুত জগতে।

অজ্ঞাত ছেলেটি

এ ছেলেটি সিরিজের প্রথম ৮ পর্ব পর্যন্ত অজ্ঞাতই থেকে যাবে। কিন্তু ৯ নং পর্বে এসে তার কাছ থেকে আপনি যে গল্প শুনবেন, তা আপনার বাকি সব পর্বে তার মৌনতার প্রতি যে চাপা ক্ষোভ জমে ছিল সেটা মিটিয়ে দেবে। তবে এই ছেলেটি আসলেই কি শয়তান নাকি নিতান্তই সাধারণ কোনো তরুণ তা জানতে আপনাকে ১০ নং পর্বে যেতে হবে। যদিও শেষপর্যন্ত কিছু রহস্য থেকেই যায়।

নিষ্পাপ নাকি নরপিশাচ; Image Source: Vox

মলি স্ট্র্যান্ড

বোকাসোকা এ নারী চরিত্রের ভূমিকা যে সিরিজে কতটা তা আর না-ই বা বললাম। মলি নিজেকে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারীনী বলে মনে করে। প্রথম থেকেই সে এমনটা দাবি করে। তার দাবি, সে মানুষের মনের কথা থেকে শুরু করে তাদের অনুভূতিগুলোও বুঝতে পারে। এমনকি অন্যের সত্ত্বাকে নিজের ভেতর যেন ধারণ করতে পারে সে। মলির একটা অন্ধকার অতীত আছে। তবে তার থেকে বড় কথা, তার নিজেরই অন্য একটি সত্তা আছে, যেটির কথা ৯ নং পর্বে সেই অজ্ঞাত ছেলেটির মুখ থেকে জানা যায়।

এ কয়টি চরিত্রকে নিয়েই আসলে ক্যাসল রকের গল্প প্রবাহিত হয়েছে।

‘ক্যাসল রক’ সিরিজটি কেমন ও এর মূল প্রেক্ষাপট আসলে কী, সত্যি বলতে, এই প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেই অনেক বড় স্পয়লার দিয়ে দেওয়া হবে। কারণ চিত্রনাট্যকারগণ এমনভাবেই সিরিজিটিকে সাজিয়েছেন যে, প্রথম ৫টি পর্বে দর্শক যা দেখবে ও যেসব বিষয়ে নিয়ে তাদের মনে কৌতূহলের জন্ম নেবে, সেসবের উত্তর ধাপে ধাপে শেষের পাঁচ পর্বে পাবে।

প্রথম পাঁচ পর্বের কথা চিন্তা করলে সিরিজটিকে আপনি সুপারন্যাচারাল, হরর ও সাসপেন্স থ্রিলারের ঘরানার অন্তর্গত করবেন। তবে শেষের পাঁচ পর্বে এসে বুঝতে পারবেন সিরিজের সায়েন্স ফিকশন ও সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ঘরানার উপস্থিতি প্রবলভাবে বিদ্যমান। প্রথমদিকে গল্পকে কিছুটা খাপছাড়া ও স্থিরগতির মনে হবে। তবে শেষের পর্বগুলোতে প্রতিটি সূত্রকে জোড়াতালি দিয়ে মেলানোর পর অনেক কিছুই পানির মতো স্বচ্ছ হয়ে যাবে।

তবে হ্যাঁ, কিছু অতিপ্রাকৃত ব্যাপার ও সিরিজের উপসংহারটা ঘোলাটেই থেকে যায়। সিরিজের ৭ নম্বর পর্বে দর্শকের মনস্তাত্ত্বিক দিকের দারুণ পরীক্ষা নিয়েছেন গল্পকারেরা। এরপর পর্ব ৮ এ ক্যাসল রক শহরের অদ্ভুত ও অমানবিক দুর্ঘটনার পরিচয় পাওয়া যাবে। তবে সিরিজের ৬ নং পর্বে ‘ঈশ্বরের কণ্ঠ’ তত্ত্বের উপর যে আলোকপাত করা হয়, সেটি থেকে দর্শক খানিকটা আন্দাজ করতে পারবেন, এ শহরের এমন মর্মান্তিক দশা কেন। হয়তো সেই কণ্ঠ যা শোনার তীব্র বাসনা নিয়ে ম্যাথিউ ডিভার ও ল্যাসি আমরণ প্রার্থনা করে যাচ্ছিল, সেই কণ্ঠ আসলে শয়তানের।

‘ক্যাসল রক’ সিরিজ নিয়ে লিখতে গেলে বেশ কয়েক পাতা লিখে ফেলা যাবে নির্দ্বিধায়। তবে সিরিজটি নিজে পরখ করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এ বছরের মুক্তি হওয়া সেরা সিরিজগুলোর মধ্যে একটি যে এটি তা একেবারে নিঃসংকোচে বলা যায়। ‘শেপ অব অবজেক্টস’ এর রেশ কাটতে না কাটতেই ‘ক্যাসল রক’ এক দুর্দান্ত সমাপ্তি দিয়ে বেশ কয়েকদিন জন্য একধরনের নেশায় আসক্ত করে গেল। আবার কবে এমন এক সিরিজের দেখার সৌভাগ্য হবে, সেটাই আসল কথা।

কাল্পনিক ক্যাসল রক শহর; Image Source: www.ign.com

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমে হুলু থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, স্টিফেন কিং ও জে. জে. আব্রামস মিলিতভাবে একটি সিরিজের প্লট স্টিফেন কিং এর এত বছরের লেখালিখির ভিত্তি ধরে রচনা করছেন। পরে অবশ্য ব্যাড রোবট প্রোডাকশনস, ওয়ার্নার ব্রোস টেলিভিশনের যৌথ প্রযোজনা এবং স্যাম ও ডাস্টিনের যৌথ ‘ক্যাসল রক’ নামের এই সিরিজের আনুষ্ঠানিকভাবে পথচলা শুরু করে।

সিরিজের বেশিরভাগ শুটিং হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ফ্রাঙ্কলিন কাউন্টির অরেঞ্জ টাউনে। এছাড়া ম্যাসাচুসেটসের ল্যানচেস্টার ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াকেও শুটিং এর স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সিরিজের অসাধারণ সব সাউন্ডট্র্যাক উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে মিউজিক কম্পোজার টমাস নিউম্যান ও ক্রিস ওয়েস্টলেককে বিশেষ অবদান রেখেছেন।

সিরিজটিতে বেশ কিছু পুরনো ক্লাসিক গানের অসাধারণ ব্যবহার রয়েছে। সাধারণ দর্শকশ্রেণী ও সমালোচক শ্রেণী উভয় থেকেই ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে সিরিজটি। রটেন টমেটোসে ৫৯টি রিভিউয়ের ভিত্তিতে ৮৬% রেটিং ও মেটাক্রিটিকে ৩৫টি রিভিউয়ের ভিত্তিতে ৬৬% রেটিং অর্জন করে নিয়েছে ‘ক্যাসল রক’।

ফিচার ইমেজ- Medium

Related Articles