Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মৃত্যুর পরে রূপালি পর্দায় ফিরে আসা বিখ্যাত তারকারা

একেকটি চলচ্চিত্রের শুটিং করতে দুই-চার-ছয় মাস থেকে শুরু করে এক-দুই বছরও লেগে যেতে পারে। ফলে মাঝে মাঝেই এরকম হয় যে, চলচ্চিত্র নির্মাণের মাঝপথেই কোনো অভিনেতা বা অভিনেত্রীর অকালমৃত্যু ঘটে। প্রধান কোনো চরিত্রের অকালমৃত্যু যত দুঃখজনক ঘটনাই হোক, শত শত কোটি টাকার বাজেটের চলচ্চিত্র তো আর মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া যায় না! তাই নির্মাতারা কখনো কখনো অভিনেতাদের মৃত্যুর পরেও বিভিন্ন কৌশলে তাদেরকে দর্শকদের সামনে ফিরিয়ে আনেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু বিখ্যাত অভিনেতার কথা, যারা মৃত্যুর পরেও হাজির হয়েছিলেন হলিউডের রূপালি পর্দায়!

হিথ লেজার, দ্য ইম্যাজিনারিয়াম অফ ডক্টর প্যারনাসাস

দ্য ইম্যাজিনারিয়ান অফ ডক্টর প্যারনাসাসে একই চরিত্রে অভিনয় করা বিভিন্ন অভিনেতাদের পোস্টার; Source: imamovienerd.files.wordpress.com

দ্য ডার্ক নাইট খ্যাত অভিনেতা হিথ লেজারের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল ২০০৮ সালের ফ্যান্টাসি ফিল্ম দ্য ইম্যাজিনারিয়াম অফ ডক্টর প্যারনাসাস। কিন্তু সিনেমার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ চিত্র ধারণ করার পরেই হিথ লেজার মৃত্যুবরণ করেন। ফলে সিনেমাটির ভাগ্য অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায়। এরপর পরিচালক টেরি গিলিয়াম সিদ্ধান্ত নেন, হিথ লেজারের সম্মানে তিনি চলচ্চিত্রটির নির্মাণ সম্পন্ন করবেন।

দ্য ইম্যাজিনারিয়াম অফ ডক্টর প্যারনাসাস এমনিতেই রূপকথা ছিল, গিলিয়াম কাহিনীতে আরেকটু পরিবর্তন এনে লেজারের চরিত্রটিকে এমন এক ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেন, যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চেহারা ধারণ করতে পারে। আর এই পরিবর্তিত চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেন হিথ লেজারের তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু জনি ডেপ, কলিন ফ্যারেল এবং জুড ল। তারা এই চলচ্চিত্র থেকে তাদের আয়কৃত সম্পূর্ণ অর্থ হিথ লেজারের মেয়ে মাতিলদাকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেন।

অলিভার রিড, গ্ল্যাডিয়েটর

গ্ল্যাডিয়েটর চলচ্চিত্রে ডিজিটাল অলিভার রিড; Source: Universal Pictures

২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া মহাকাব্যিক চলচ্চিত্র গ্ল্যাডিয়েটরে রোমান সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী দাস ব্যবসায়ী প্রক্সিমোর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অলিভার রিড। কিন্তু শুটিং শেষ হওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি থাকতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্মাণে সিদ্ধহস্ত পরিচালক রিডলি স্কট সিনেমায় তার উপস্থাপন সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, প্রযুক্তির মাধ্যমেই মৃত অলিভার রিডকে পর্দায় ফিরিয়ে আনবেন।

ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান দ্য মিল কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সাহায্যে কৃত্রিম অলিভার রিডকে পর্দায় নিয়ে আসেন। তারা অলিভারের চরিত্রে অন্য একজন অভিনেতাকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে এরপর কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সাহায্যে তার মুখের স্থানে অলিভারের মুখ প্রতিস্থাপন করেন। কন্ঠস্বর হিসেবে অবশ্য সিনেমাতে পূর্বের একটি দৃশ্যে তার উচ্চারিত কণ্ঠই ব্যবহার করা হয়। মাত্র ২ মিনিটের এই দৃশ্যের জন্য অলিভার রিডকে পর্দায় ফিরিয়ে আনতে তাদের খরচ হয়েছিল প্রায় ৩২ লাখ ডলার!

ব্রুস লি, গেম অফ ডেথ

ব্রুস লি এবং গেম অফ ডেথ চলচ্চিত্রে তার স্থলভিষিক্ত অভিনেতা তাই জেয়ং কিম; Source: theamericanreader

গেম অফ ডেথ চলচ্চিত্রটি ছিল ব্রুস লি অভিনীত, পরিচালিত এবং প্রযোজিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র। ১৯৭২ সালে তিনি চলচ্চিত্রটি নির্মাণের কাজে হাত দেন। এর জন্য তিনি প্রায় ৪০ মিনিট চিত্রধারণও সম্পন্ন করেন। কিন্তু এমন সময় পরবর্তীতে কিংবদন্তী হয়ে ওঠা সিনেমা এন্টার দ্য ড্রাগন-এ অভিনয়ের প্রস্তাব এলে তিনি গেম অফ ডেথের কাজ অর্ধসমাপ্ত রেখেই সেটিতে অভিনয় শুরু করেন। কিন্তু ১৯৭৩ সালে এন্টার দ্য ড্রাগনের শুটিংয়ের শেষ পর্যায়ে ব্রুস লি মৃত্যুবরণ করেন। ফলে গেম অফ ডেথের কাজ অসমাপ্তই রয়ে যায়।

তার মৃত্যুর পাঁচ বছর বছর পর এন্টার দ্য ড্রাগনের পরিচালক রবার্ট ক্লোজকে দায়িত্ব দেওয়া হয় গেম অফ ডেথের নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য। ক্লোজ ব্রুস লির শুট করা অধিকাংশ দৃশ্যই ছেঁটে ফেলেন। তিনি দুজন স্টান্টম্যান দিয়ে ব্রুসের চরিত্রের দৃশ্যগুলো নতুন করে ধারণ করেন, যেখানে চরিত্রটির মুখ প্রায়ই অন্ধকারে অথবা সানগ্লাস পরা অবস্থায় থাকে। মাঝে মাঝে যখন কাছ থেকে চেহারা দেখানোর প্রয়োজন হয়, তখন তিনি ব্রুস লির স্থিরচিত্র প্রদর্শন করেন। তার নির্মিত চলচ্চিত্রটি ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায়। এতে ব্রুস লির ধারণ করা দৃশ্যগুলোর মধ্যে মাত্র ১১ মিনিট দৃশ্য স্থান পায়। এর বাইরে বাকি সব দৃশ্যই ছিল ব্রুস লির মৃত্যুর পরে ধারণ করা দৃশ্য।

ব্র্যান্ডন লি, দ্য ক্রো

দ্য ক্রো চলচ্চিত্রে ব্র্যান্ডন লি; Source: Miramax Films

ব্রুস লির ছেলে ব্র্যান্ডন লি ছিলেন ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র দ্য ক্রোর প্রধান অভিনেতা। কিন্তু ১৯৯৩ সালে চলচ্চিত্রটির শুটিং শেষ হওয়ার আগেই এক দুর্ঘটনায় ব্র্যান্ডন লি মারা যান। শুটিং চলাকালীন যে পিস্তল দিয়ে ব্র্যান্ডন লিকে গুলি করা হয়, ফাঁকা গুলির পরিবর্তে তাতে ছিল সত্যিকার বুলেট! সেই বুলেটের আঘাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন ব্র্যান্ডন লি।

পরিচালক অন্য একজন অভিনেতাকে ব্যবহার করে লির বাকি দৃশ্যগুলো ধারণ করেন এবং এরপর কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তাতে লির চেহারা ব্যবহার করেন। নব্বইয়ের দশকে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে সিজিআইয়ের কাজ এতোই নিখুঁত হয়েছিল যে, কোনটি আসল ব্র্যান্ডন লি এবং কোনটি গ্রাফিক্সের কাজ, সেটি বোঝা খুবই কঠিন ছিল।

ফিলিপ সিমুর হফম্যান, দ্য হাঙ্গার গেমস: মকিংজে পার্ট ২

মকিংজে পার্ট টু চলচ্চিত্রে মৃত্যুর পরে সংযুক্ত দৃশ্যে হফম্যান; Source: Lionsgate Films

দ্য হাঙ্গার গেমস সিরিজের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘দ্য হাঙ্গার গেমস: মকিংজে পার্ট ২‘। সিরিজের এই চলচ্চিত্রের শেষ দিকে জেনিফার লরেন্স অভিনীত মূল চরিত্র ক্যাটনিস এভারডিনের সাথে আবেগঘন একটি মুহূর্তে অভিনয় করার কথা ছিল অস্কারজয়ী অভিনেতা ফিলিপ সিমুর হফম্যানের। এর আগে এই সিরিজের প্রথম দিকের চলচ্চিত্রগুলোতেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু ২০১৪ সালে এই চলচ্চিত্রের শুটিং চলাকালে আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

হফম্যানের মৃত্যুর পরে চিত্রনাট্যে কিছুটা পরিবর্তন এনে ভূমিকাকে সংক্ষিপ্ত করে ফেলা হয়। যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যগুলো তার দেওয়ার কথা ছিল, সেগুলো তার উপস্থিতিতে তার পক্ষ হয়ে অন্য চরিত্রদেরকে দিয়ে বলানো হয়। আর বিভিন্ন দৃশ্যে আর্কাইভে থাকা তার অব্যবহৃত ফুটেজ ব্যবহার করে চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি ফুটিয়ে তোলা হয়।

মার্লন ব্র্যান্ডো, সুপারম্যান রিটার্নস

সুপারম্যান রিটার্নস চলচ্চিত্রে মার্লন ব্র্যান্ডো; Source: Warner Bros. Pictures

অস্কারজয়ী অভিনেতা মার্লন ব্র্যান্ডো ১৯৭৮ সালের অরিজিনাল সুপারম্যান চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সে চলচ্চিত্রে তিনি ছিলেন সুপারম্যানের বাবা। মার্লন ব্র্যান্ডো মারা গিয়েছিলেন ২০০৪ সালে। কিন্তু ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়া সুপারম্যান সিরিজের নতুন চলচ্চিত্র সুপারম্যান রিটার্নসের একটি দৃশ্যে আবার আবির্ভূত হন তিনি।

বাস্তবের মতোই সুপারম্যানের কাল্পনিক জগতেও ব্র্যান্ডোর চরিত্র, সুপারম্যানের বাবার মৃত্যু ঘটেছিল। তাই সুপারম্যান রিটার্নসে সিজিআইয়ের মাধ্যমে অনেকটা ভৌতিক আবহে ফুটিয়ে তোলা হয় চরিত্রটিকে। এর জন্য তার পুরানো স্থিরচিত্র সংগ্রহ করা হয় এবং ভিজুয়াল ইফেক্টসের মাধ্যমে একটি কম্পিউটার মডেলের উপর তা প্রয়োগ করে প্রয়োজনীয় এনিমেশন তৈরি করা হয়। ইউটিউবের এই ভিডিওতে পদ্ধতিটি দেখানো হয়েছে।

পিটার কাশিং, রৌগ ওয়ান

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী জঁনরার ক্লাসিকাল চলচ্চিত্র সিরিজ স্টার ওয়ার্স। সিরিজের প্রথম চলচ্চিত্রটি ছিল ১৯৭৭ সালের স্টার ওয়ার্স: এ নিউ হোপ। এই চলচ্চিত্রে ডেথ স্টারের কমান্ডার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা পিটার কাশিং। এরপর একে একে তৈরি হয় সিরিজটির আরো ছয়টি চলচ্চিত্র, কিন্তু এগুলোতে চরিত্রটির অস্তিত্ব ছিল না। ২০১৫ সালে নির্মিত হয় সিরিজটির অষ্টম চলচ্চিত্র স্টার ওয়ার্স: রৌগ ওয়ান। এর কাহিনী প্রথম চলচ্চিত্রটির ঠিক অব্যবহিত পূর্বের হওয়ায় চরিত্রটিকে আবারও পর্দায় তুলে ধরার প্রয়োজন হয়। কিন্তু চরিত্রটির মূল অভিনেতা পিটার কাশিং ১৯৯৪ সালেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

রৌগ ওয়ানে পিটার কাশিংকে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে; Source: Slashfilms.com

রৌগ ওয়ানের পরিচালক এবং ভিজুয়াল ইফেক্টস টিম পিটার কাশিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ব্রিটিশ অভিনেতা গাই হেনরিকে পছন্দ করেন। গাই হেনরির লম্বা মুখের গড়ন অনেকটাই পিটার কাশিংয়ের মতো। তাকে দিয়ে অভিনয় করানোর পর বাকি ভিজুয়াল ইফেক্টসের মাধ্যমে তার চেহারায় স্থানে পিটার কাশিংয়ের চেহারা এমভভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, তিনি আসল পিটার কাশিং না।

পল ওয়াকার, ফিউরিয়াস ৭

ফিউরিয়াস সেভেন চলচ্চিত্রে পল ওয়াকারের ভাইকে যেভাবে পল ওয়াকার হিসেবে দেখানো হয়েছে; Source: animation-boss.com

পল ওয়াকারের মৃত্যু আধুনিক চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম দুঃখজনক ঘটনা। গাড়ির রেস ভিত্তিক চলচ্চিত্র সিরিজ ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস খ্যাত এই অভিনেতা ২০১৩ সালে এক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় তিনি সিরিজটির সপ্তম চলচ্চিত্র ফিউরিয়াস ৭-এ মাত্র অভিনয় শুরু করেছিলেন।

পলের মৃত্যুর পর কিছুদিন চলচ্চিত্রটির অগ্রগতি থমকে থাকে। কিন্তু তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে তার ভাইদের সাথে পরিচিত হওয়ার পরেই নির্মাতাদের মাথায় নতুন বুদ্ধি আসে। তারা চলচ্চিত্রটির কাহিনীতে কিছু পরিবর্তন আনেন এবং পল ওয়াকারের দৃশ্যগুলোতে তার দুই ভাইকে দিয়ে অভিনয় করান। পলের সাথে তার ভাইদের চেহারার অবিশ্বাস্য রকমের মিল আছে। কিন্তু তারপরেও দৃশ্যগুলোকে আরো নিখুঁত করার জন্য পরবর্তীতে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের সাহায্য নেওয়া হয়।

ফিচার ইমেজ: overmental.com

Related Articles