ব্যাটম্যান, ডি.সি. কমিক্স প্রকাশিত একটি কাল্পনিক চরিত্র এবং ‘দ্য গ্রেটেস্ট সুপারহিরো অফ অল টাইম’। যার সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অবদান ছিল সুপারম্যানের সাফল্যের প্রতিক্রিয়ার।
তাকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল ১৯৩৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত কমিক বই ডিটেকটিভ কমিকস এর ২৭তম সংখ্যায়। চিত্রশিল্পী বব কেইন আর লেখক বিল ফিঙ্গার হলেন তার স্রষ্টা।
এক সাক্ষাৎকারে তার অমর সৃষ্টি ব্যাটম্যানকে নিয়ে বব কেইন বলেছিলেন,
“ব্যাটম্যান উন্মাদনা আমাকে এক বিশাল পরিতৃপ্তি দেয় যখন উপলব্ধি করি ব্যাটম্যানের কারণে সারা বিশ্বে আমার অগণিত ভক্ত রয়েছে। এক চমৎকার আধ্যাত্মিক সন্তুষ্টি আমার অন্তরাত্মা শিহরিত করে দেয় যখন দেখি আমি এমন এক প্রতিকৃতি তৈরি করেছি যা গোটা বিশ্বের বিপুল পরিমাণ মানুষকে প্রভাবিত করে। আমি এমন সুপারহিরোর প্রণেতা যে আমাদের সমাজের সর্বক্ষেত্রের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে- এই কথাটা চিন্তা করলে আমার নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে হয়।”
মূলত কেইনকে ব্যাটম্যানের স্রষ্টা বলা হলেও, বিল ফিঙ্গারেরও এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ব্যাটম্যানের পোশাকের মূল রূপটি বিলেরই দেয়া। অনেকেরই এ সম্পর্কে ধারণা নেই যে, বব কেইনের ব্যাটম্যান ভার্সন ছিল বাদুড়ের ডানা বিশিষ্ট লাল পরিচ্ছদের সাথে একটি ছোট ডমিনো মাস্ক। পরে ফিঙ্গারের পরামর্শেই ব্যাটম্যানকে সূচাগ্র বাদুরকর্ণবিশিষ্ট অন্তরীপের সঙ্গে একটি কালো আলখেল্লা পরানো হয় এবং এতে আরো চিত্তাকর্ষক আবির্ভাব দিতে তিনি ব্যাটম্যানকে একটি গাঢ় কৃষ্ণাভ পরিচ্ছদ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন।
শুরু থেকে ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত ব্যাটম্যানের জনপ্রিয়তায় কোনো ভাটা পড়েনি। বিশেষ করে শিশুদের কাছে ব্যাটম্যান হয়ে উঠেছিল এক বিশাল তারকা। উদ্ভট বিজ্ঞান কল্পকাহিনী, এলিয়েন যুক্ত করার কারণে এই দশকেরই শেষের দিকে ব্যাটম্যান তার জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে।
তারপর ১৯৬৪ সালের দিকে কমিকস সম্পাদক জুলিয়াস শোয়ার্জ এর ভার নেন এবং সিরিজটিকে ফিরিয়ে আনেন পূর্বের গোয়েন্দা শেকড়ে। তখন ব্যাটম্যান তার জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করে। এরই চিন্তাভাবনা থেকে ১৯৬৬ সালে অ্যাডাম ওয়েস্ট এবং বার্ট অভিনীত ‘ব্যাটম্যান’ টিভি সিরিজটি নির্মাণ করা হয়।
ধন্যবাদ দিতে হবে ডেনিস ও’নীল এবং চিত্রশিল্পী নীল অ্যাডামসকে, ১৯৭০ এর দিকে ব্যাটম্যানকে দৃঢ় চরিত্রের দ্য ডার্ক অ্যাভেঞ্জার হিসেবে আখ্যায়িত করে আবার পুরনো সেই ব্যাটম্যানে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। ও’নীল বলেছিলেন,
“আমি শুধু চেয়েছি তাকে আবার তার শুরুর দিকে গল্পে ফিরিয়ে নিতে। আমি ডিসির লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম পুরোনো কিছু গল্প পড়তে। বোঝার চেষ্টা করছিলাম কেইন এবং ফিঙ্গার আসলে কীসের পেছনে ছুটেছিলেন।”
পরে ১৯৮৬ সালে ফ্রাঙ্ক মিলারের ডার্ক নাইট রিটার্নসের মাধ্যমে ব্যাটম্যান গল্পগুলো আরও গভীর হয়। এতে দেখা যায় ৫৫ বছর বয়স্ক এক ব্রুস ওয়েইনকে যে অপরাধীদের কবলে পড়া গথাম সিটিকে রক্ষা করতে অবসর থেকে ফিরে এসেছে।
সেই বছরই ডেনিস ও’নীল আবার ব্যাটম্যানের এডিটরের দায়িত্ব নেন। ধারণা করা হয় তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল যাতে তিনি চরিত্রটি আবার পুনর্গঠন করেন। তিনি ব্যাটম্যানের আগের বইগুলো থেকে ব্যতিক্রম কিছু গল্প বানানোর চেষ্টা করেন। নতুন এই গল্পের প্রথম ইস্যু ছিল ব্যাটম্যান ইয়ার ওয়ান, যেখানে ফ্রাঙ্ক মিলার এবং চিত্রকর মাৎজুকেলি ব্যাটম্যানের অরিজিন নতুন রূপে তুলে ধরেন।
ব্যাটম্যানের এই ডার্ক টোনের গল্পধারা অব্যাহত রেখে লেখক অ্যালান মুর এবং শিল্পী ব্রায়ান বুল্যান্ড ১৯৮৮ সালে দ্য কিলিং জোক ব্যাটম্যানের একটি ওয়ান-শট রচনা করেন। এই বইয়ে জোকারের একটি অরিজিন দেখানো হয়। যদিও জোকারের একটি অতীত প্রতিষ্ঠা করার জন্য আগেও অনেক ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে, তবুও এখন পর্যন্ত তার অফিশিয়াল অরিজিন তৈরি করা হয়ে ওঠেনি। তবে এখন পর্যন্ত কিলিং জোকই একমাত্র কমিকস যেখানে জোকারের অতীত জীবনের একটি বর্ণনা রয়েছে।
ব্যাটম্যানের বিস্তৃতি আরও বাড়ে ১৯৮৮ সালে যখন ডিসি কমিক্স ৯০০ নাম্বারে একটি ফোন নাম্বার তৈরি করে। সেখানে কল করে রিডাররা জেসন টডের মৃত্যুর পক্ষে এবং বিপক্ষে ভোট দিবে। এর পরেই রচিত হয় ‘ব্যাটম্যানছ এ ডেথ ইন দ্যা ফ্যামিলি’। এই কমিকসে জোকারের হাতে দ্বিতীয় রবিন জেসন টডকে খুন হতে দেখা যায়।
১৯৯৩ সালে চাক ডিক্সন, অ্যালান গ্রান্ট এবং ডগ মঞ্চ নতুন একটি সিরিজ রচনা করেন যার নাম ছিল নাইটফল ট্রিলজি। এই ট্রিলজিতে তিনটি বিশাল কমিক বই বের হয় যেগুলোর নাম- নাইটফল, নাইটকোয়েস্ট, নাইটএন্ড। এই সিরিজেই ব্যাটম্যানের নামকরা কিছু ভিলেনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ করে বেইন এবং এজ্রিয়েল।
এরপরে এই দশকেরই শেষের দিকে জেফ লব এবং টিম সেল ব্যাটম্যানের আরও দুটি জনপ্রিয় মিনি সিরিজ রচনা করেন, যার একটির নামে ‘দ্য লং হেলুইন’ এবং অন্যটি ‘ডার্ক ভিক্টরি’ এবং ২০০৩ সালে লোব আর্টিস্ট টিম লি-কে সাথে নিয়ে মূল ব্যাটম্যান সিরিজের জন্যে রচনা করেন জনপ্রিয় আরেকটি রহস্য গল্প ‘ব্যাটম্যানঃ হাশ’। রহস্যময় সুপারভিলেন হাশের পেছনে ছোটার সময়ই ব্যাটম্যানকে মুখোমুখি হতে হয় পুনরুত্থিত জেসন টডের। যার ফলে ২০০৫ সালে রচিত হয় ‘আন্ডার দ্য হুড’।
২০০৫ সালে ডিসি ইউনিভার্সের মূল ধারাবাহিকতার বাইরে ‘অলস্টার ব্যাটম্যান এন্ড রবিন’ নামে আরেকটি স্ট্যান্ডএলন সিরিজ চালু হয়। এর লেখার দায়িত্ব ছিলেন ফ্রাঙ্ক মিলার এবং অঙ্কনে ছিলেন জিম লি। সিরিজটি বাণিজ্যিকভাবে সফল ছিল। তবে সহিংসতার বর্ণনার জন্যে সমালোচকদের কাছে সেটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।
গ্রান্ট মরিসন; Image Source: আইজিএন
২০০৬ সালের দিকে ডিটেকটিভ কমিক্সের রেগুলার লেখক গ্র্যান্ট মরিসন সিরিজের দায়ভার নেন। মরিসন ব্যাটম্যানের বিতর্কিত উপদলগুলোকে পুনর্বিবেচনা করে ১৯৫০ দশকের সিরিজের সাথে মিল রেখে নতুন ইস্যু রচনা করেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘ব্যাটম্যান আরআইপি’। তারই লেখা ফাইনাল ক্রাইসিসের সাথে তিনি ‘ব্যাটম্যান আরআইপি’ সিরিজটি যুক্ত করে নেন, যেখানে ডার্কসাইডের হাতে ব্যাটম্যানের মৃত্যু হয়। পরে ২০০৯ সালে রচিত মিনি সিরিজ ‘ব্যাটম্যানঃ ব্যাটল ফর দ্যা কোল’-এ ফরমার প্রটিজি ডিক গ্রেসনকে ব্যাটম্যান হিসেবে দেখা যায় এবং ডামিয়েন ওয়েইনকে রবিন হিসেবে।
পরে জুড উইনিকের উপর ব্যাটম্যানের মূল সিরিজ লেখার দায়িত্ব পড়লে গ্রান্ট মরিসনকে তার নিজস্ব একটি আলাদা ব্যাটম্যান সিরিজের দায়িত্ব দেওয়া হয় যেখানে রবিন হিসেবে ছিল তার ছেলে ডামিয়েন ওয়েইন। সিরিজের লাস্ট বের হওয়া ভলিউম হচ্ছে ‘রবিন রাইজেস’।
‘নিউ ৫২’ রচনার সাথে আগে বের হওয়া সবগুলো সুপারহিরো সিরিজ বন্ধ করে দেয়া হয়। নিউ ৫২ তে সকল সুপারহিরোর নতুন অরিজিন দেখানো হলেও, একমাত্র ব্যাটম্যানের আগের অরিজিনই বলবৎ ছিল, তাতে বিশেষ কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। নিউ ৫২ ধারাবাহিকতায় গ্রান্ট মরিসনের অধীনেই ‘ব্যাটম্যানঃ দ্য ডার্ক নাইট’ সিরিজ চালু করা হয়। নিউ ৫২ শুরু থেকেই ব্যাটম্যানের গল্প রচনার দায়িত্ব বর্তায় স্কট স্নাইডারের উপরে। তার প্রথম ব্যাটম্যান আর্ক ছিল ‘নাইট অফ দ্য ওলস’। পরে তিনি রচনা করেন ‘ডেথ অফ দ্য ফ্যামিলি’।
২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় ফ্রাঙ্ক মিলারের ‘দ্য ডার্ক নাইট রিটার্ন্স’ এবং ‘ডার্ক নাইট স্ট্রাইক্স এগেইন’-এর পরের কিস্তি ‘দ্য মাস্টার রেইস’।
২০১৬ ডিসি ইউনিভার্স আবার রিবুট করা হয়। ব্যাটম্যান ওয়ান-শট এবং ব্যাটম্যান ভলিউম ৩ সিরিজের প্রথম ইস্যু বের হয়। সিরিজটি লিখেছিলেন টম কিং এবং অংকনের দায়িত্বে ছিলেন ডেভিড ফিঞ্চ।
পরিচালক টিম বার্টন ১৯৮৯ সালে ‘ব্যাটম্যান’ এর চলচ্চিত্র সংস্করণ করেন যার অভিনয়ে ছিলেন মাইকেল কিটন। ১৯৮৯ সালের ব্যাটম্যানের সিক্যুয়েল হিসেবে ১৯৯২ সালে মাইকেল কিটনকে নিয়ে টিম বার্টন নির্মাণ করেন ‘ব্যাটম্যান রিটার্ন্স’। তারই কিছু পরে ১৯৯৫ সালে টিম বার্টনের প্রয়োজনা ও জোয়েল শুমেখারের পরিচালনায় নির্মিত হয় ‘ব্যাটম্যান ফরেভার’ এবং ১৯৯৭ সালে পরিচালক জোয়েল শুমেখার জর্জ ক্লুনি, উমা থুরম্যান, ক্রিস ও’ডনল এবং আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন’।
পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে ক্রিস্টোফার নোলানের পরিচালনা ও নির্দেশনায় নির্মিত হয় ‘ব্যাটম্যান বিগিন্স’ যার সিক্যুয়েল হিসেবে ২০০৮ সালে নির্মিত হয় ‘দ্য ডার্ক নাইট’ এবং ২০১২ সালের জুলাইয়ে মুক্তি প্রায় নোলান পরিচালিত ব্যাটম্যানের শেষ সিক্যুয়েল ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পেয়েছে ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সে ‘ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যানঃ ডন অফ জাস্টিস’।
এ যাবতকাল পর্যন্ত ব্যাটম্যান নিয়ে পরিচালিত চলচ্চিত্র সমূহ এবং প্রকাশকাল
- ব্যাটম্যান – ৩০ জুলাই ১৯৬৬
- ব্যাটম্যান – ২৩ জুন ১৯৮৯
- ব্যাটম্যান রিটার্ন্স – ১৯ জুলাই ১৯৯২
- ব্যাটম্যান ফরেভার – ৯ জুন ১৯৯৫
- ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন -১২ জুন ১৯৯৭
- ব্যাটম্যান বিগিন্স – ১০ জুন ২০০৫
- দ্য ডার্ক নাইট – ১৪ জুলাই ২০০৮
- দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস – ১৬ জুলাই ২০১২
- ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান: ডন অফ জাস্টিস – ২৩ মার্চ ২০১৬
Batman is a fictional superhero appearing in American comic books published by DC Comics. The character was created by artist Bob Kane and writer Bill Finger, and first appeared in Detective Comics #27 in 1939. And this particular article is about the Writers, Artists and Co-Artists that helped this character to become a sensation.