পুরো দু' বছর বাদে হ্যারি পটার ভক্তদের আরেকটিবার জাদুর জগতে ফিরিয়ে নিতে মুক্তি পেল 'ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস' সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব ‘দ্য ক্রাইমস অফ গ্রিন্ডেলওয়াল্ড’। জে কে রোলিং এর অমর সৃষ্টি হ্যারি পটারের প্রিকুয়েল সিরিজের এ পর্ব আগের যে কোনো বই কিংবা মুভিকে ছাড়িয়ে গেছে বিস্তৃতির দিক থেকে। মূল সিরিজটি প্রধানত ব্রিটেনভিত্তিক হলেও, এবার এই উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড সিরিজটির কাহিনী ব্রিটেন ছাড়িয়ে এবার আমেরিকা ও ইউরোপের অন্য দেশজুড়েও! তা হবেই বা না কেন, সিনেমার খলনায়ক কালো জাদুকর গেলার্ট গ্রিন্ডেলওয়াল্ড যে একই সাথে ইউরোপ ও আমেরিকার ত্রাস! আর তাকে থামাবার জন্য যে নামটি অদ্বিতীয়, সেই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জাদুকর অ্যালবাস ডাম্বলডোরও এবার হাজির! সিরিজের দ্বিতীয় ছবি হিসেবে সমালোচকদের কাছে নিন্দিত হলেও, পটারভক্তদের জন্য মুভিটি এক নস্টালজিক যাত্রা, সেই চিরচেনা হগওয়ার্টস থেকে শুরু করে রক্তিম পরশমণি- কী নেই এ ছবিতে?
মুভিটি বিশ্বজুড়ে মুক্তি পাবার আগে থেকেই অনেক সমালোচকদের দৃষ্টিতে নেগেটিভ রেটিং পেয়ে বসে, যাদের সুযোগ হয়েছিল ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে ছবিটি দেখার। ক্রাইমস অফ গ্রিন্ডেলওয়াল্ড মুভিটির ঘটনাপ্রবাহ আসলেই জটিল, রয়েছে অনেকগুলো প্রধান চরিত্র, মাত্র দু'ঘণ্টার মুভিতে যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড পুরোপুরি তুলে আনা সম্ভব হয়নি। ছবির মূল প্লট প্রথম পর্বের ঠিক ছয় মাস পর থেকে শুরু, ১৯২৭ সালে আমেরিকার জেলখানায় বন্দী কালো জাদুকর গ্রিন্ডেলওয়াল্ড প্রথম দৃশ্যেই নাটকীয়ভাবে পালিয়ে যায় আর তারপর প্যারিসে শুরু করে তার অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধ করা। আর তা ঠেকাতেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে নিউট স্ক্যামান্ডার, অ্যালবাস ডাম্বলডোর, টিনা গোল্ডস্টিনেরা।
কিন্তু এ মূল প্লটের পাশাপাশি চলতে থাকে অনেকগুলো সাবপ্লট, যা কিনা সিরিজের পরবর্তী তিনটি ছবির গল্পের পরিণতি নির্ধারণ করবে; তবে এই সাবপ্লটগুলোর পেছনের কোনো কাহিনী ব্যাখ্যা করা হয় না, ছেড়ে দেওয়া হয় দর্শকের অতীত জ্ঞানের ওপরেই। তাই ক্রাইমস অফ গ্রিন্ডেলওয়াল্ড ছবিটির পুরো কাহিনী এবং সমস্ত রেফারেন্স সম্পূর্ণরূপে বুঝতে হলে দর্শককে কেবল আগের মোট নয়টি সিনেমাই নয়, বরং মূল সিরিজের বইগুলোর পাশাপাশি হ্যারি পটার সংক্রান্ত অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পটারমোরের তথ্যগুলোও জানা থাকা জরুরি, নতুবা একে 'ওভারক্রাউডেড' এবং অতিরিক্ত সাবপ্লটের তোড়ে মূল প্লট ভেসে যাওয়া একটি মুভি হিসেবেই ঠেকবে। তবে লেখক হিসেবে রোলিং যতটা তুখোড়, চিত্রনাট্যকার হিসেবে তিনি তার ধারেকাছেও নেই- এটা মানতেই হবে।
এ পর্বে আমেরিকান, ব্রিটিশ ও ফ্রেঞ্চ মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিক তিনটিরই দেখা মেলে, তবে বেশিরভাগ কাহিনী যেহেতু এবার প্যারিসকেন্দ্রিক, তাই ফরাসি জাদু মন্ত্রণালয়ের উপস্থিতি দেখা যায় সবচেয়ে বেশি, অবশ্য ব্রিটিশ মন্ত্রণালয়ের চেয়ে তার জৌলুস কমই বলা চলে। আগের পর্বের দর্শকপ্রিয় চরিত্র জ্যাকব ফিরে পায় তার স্মৃতিগুলো, আর সেই সাথে চলে কুইনির সাথে প্রেম আর দ্বন্দ্ব- কারণ মার্কিন জাদু আইনে কোনো জাদুকর যে বিয়ে করতে পারে না কোনো মাগলকে (কিংবা, নো-ম্যাজ)! তাই কুইনি আর জ্যাকব চলে আসে ইউরোপে, যেখানে নিয়ম বেশ শিথিল। ওদিকে বাগ্মী গ্রিন্ডেলওয়াল্ড 'গ্রেটার গুড' বা 'বৃহত্তর স্বার্থের' জন্য যে বাণী প্রচার করে চলেছেন তা টানাপোড়েন সৃষ্টি করতে থাকে চরিত্রগুলোর একে অন্যের সম্পর্কের মাঝে।
কিন্তু গ্রিন্ডেলওয়াল্ডকে থামাবার ক্ষমতা আছে একমাত্র যার, সেই ডাম্বলডোর এক অজানা কারণে কিছুই করছেন না, বরং গোপনে তিনি ডেকে নেন এক সময়ের প্রিয় ছাত্র নিউট স্ক্যামান্ডারকে। তাকে বোঝান যে, গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে কেবল নিউটকেই। সব সূত্র নির্দেশ করে প্যারিসের দিকেই যেখানে লুকিয়ে থাকার কথা মায়ের খোঁজে ঘুরে বেড়ানো আগের পর্বের শক্তিশালী অবস্কিউরিয়াল ক্রেডেন্স বেয়ারবোন। মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিক, গ্রিন্ডেলওয়াল্ড, নিউট- সবারই উদ্দেশ্য ক্রেডেন্সকে খুঁজে বের করা। কিন্তু ক্রেডেন্স তখন নাগিনি নামের এক ম্যালেডিক্টাসের সাথে, অভিশপ্ত যে মেয়েটি এখন ইচ্ছেমতো সাপে পরিণত হয়ে অ্যারকানাস নামের এক সার্কাসে বিনোদনের পণ্য, কিন্তু একদিন পরিণত হবে পুরোপুরি এক সাপে, এবং কোনোদিনই ফিরতে পারবে না মানবীরূপে। এই সেই লর্ড ভোল্ডেমর্টের নাগিনি, ট্রেইলারে যার নাম আসার পর সাড়া পড়ে যায় পটারহেড অর্থাৎ হ্যারি পটার ভক্তদের মাঝে। নাগিনির চেহারাতেই যে প্রবল বেদনার ছাপ স্পষ্ট, তার গল্পটা যে আরও অন্ধকারের দিকে গড়াবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই; কীভাবে এই বেদনাগ্রস্থ মেয়েটি হয়ে দাঁড়ায় শেষমেশ সেভেরাস স্নেইপের খুনী সাপ?
অন্যদিকে বহুদিন পর নিউটের সাথে দেখা হয়ে যায় হগওয়ার্টসে থাকাকালীন প্রেমিকা লেটা লেস্ট্র্যাঞ্জের সাথে; ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে লেটা আজ নিউটের বড় ভাই থিসিয়াসের বাগদত্তা। ফ্ল্যাশব্যাক দৃশ্যে পুরনো দিনের হগওয়ার্টসের দিনগুলি এক মধুর মুহূর্তের জন্ম দেয়, সেই শান্ত হ্রদের পাড়ে ঘোরা, সেই পরিচিত হগওয়ার্টস ক্লাসরুমে বোগার্টের সাথে লড়া, কিংবা বেঞ্চের গায়ে তাদের দুজনের খোদাই করে লেখা 'L+N'; কিশোর প্রেমের স্বপ্ন, বড় হয়ে যা ধূসর স্মৃতি। অবৈধ প্রাণী অধিকারে রাখার অপরাধে যখন লেটা হগওয়ার্টস থেকে বহিষ্কার হতে চলেছে, তখন সেই দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নেয় নিউট, লেটা'র বদলে বহিষ্কৃত হয় সে নিজেই। তবে ডাম্বলডোর জানতেন সত্যটা, তার কারণেই নিউট জাদুদণ্ড বহনের অনুমতি পায়, এমনকি একজন হাফলপাফ হগওয়ার্টস গ্র্যাজুয়েট হিসেবেও স্বীকৃত হয়। লেটার কাছে নিউট পরবর্তীতে যা-ই থাক না কেন, নিউট আজীবনই লেটার ছবি সাথে নিয়ে ঘুরত। অন্তত, টিনা গোল্ডস্টিনের সাথে পরিচয় হবার আগ পর্যন্ত। প্রথম পর্বে শুরু হওয়া অতলান্তিকের এপার-ওপারের যে প্রেমে দ্বন্দ্ব শুরু হয় এক অদ্ভুত কারণে। সে সম্পর্ক কঠিন থেকে তরলের দিকে যাওয়ার মুহূর্তগুলো বেশ চমৎকার, যুগিয়েছে হাসির খোরাকও। কিন্তু লেটা আসলে কাকে ভালোবাসে? বহিষ্কারের দায় কাঁধে নেওয়া বাল্যপ্রেমিক নিউটকেই, নাকি মন্ত্রণালয়ের অরোর পদের যোগ্য থিসিয়াসকে?
অনেকটাই ভক্তদের আনন্দ দেবার জন্য রাখা হয়েছে প্যারিসের সুবিখ্যাত আলকেমিস্ট শত শত বছর বেঁচে থাকা শীর্ণ জাদুকর নিকোলাস ফ্লামেলকে। ডাম্বলডোরের বন্ধু এ মানুষটি হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম বই আর মুভিতে সশরীরে উপস্থিত না থেকেও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তার পরশমণি না দেখালে কি আর চলে?
মুভির প্রথম লোম দাঁড়িয়ে যাওয়া মুহূর্তটি আসলে সকল পটারভক্তের স্বপ্ন হগওয়ার্টসের ফিরে যাওয়ার দৃশ্যটি। কিংবদন্তী সুরকার জন উইলিয়ামসের হ্যারি পটারের থিম মিউজিক 'হেডউইগ'স থিম' বাজার সাথে সাথে হগওয়ার্টস দুর্গ ভেসে উঠবার দৃশ্য মনে দাগ কাটার মতো। আগের সে বই আর মুভিগুলোর শত স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় বিশের দশকের হগওয়ার্টসের ক্লাস, যেখানে ডাম্বলডোর তখন ডিফেন্স এগেইন্সট দ্য ডার্ক আর্টসের প্রফেসর। তবে ক্লাসে ফিরে যাওয়া আসলে হগওয়ার্টস দৃশ্যের উদ্দেশ্য ছিল না, বরং তাকে নিউট আর গ্রিন্ডেলওয়াল্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করাই ছিল উদ্দেশ্য। তাকে চোখে চোখে রাখবার জন্য হাতে অ্যাডমনিটর নামের জাদুকরি যন্ত্রও লাগিয়ে দিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তুখোড় ডাম্বলডোর যে আরও এগিয়ে, তা কি আর তারা জানত?
গ্রিন্ডেলওয়াল্ড আর ডাম্বলডোরের তরুণ বয়সের সম্পর্ক যে আসলে ভাইয়ের চেয়েও ঘনিষ্ঠতর কিছু ছিল তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় তখন। হ্যারি পটার সিরিজের প্রথম পর্ব থেকে এরিসেডের আয়না আর ষষ্ঠ পর্ব থেকে আনব্রেকেবল বন্ডের কথা জানা যায় ক্রাইমস অফ গ্রিন্ডেলওয়াল্ড পর্বে, যা অনেক কিছুরই ব্যাখ্যা দেয়। তবে এর থেকে বেশি কিছু বলা সমীচীন হবে না বটে এ লেখায়। তাছাড়া, ক্রেডেন্স, লেটা এবং ইউসুফ কামা নামের নতুন এক ফরাসি চরিত্রের নিজেদের জন্মপরিচয় খুঁজে বের করবার অভিযানও মুভির গুরুত্বপূর্ণ একটি প্লটলাইন।
তবে ক্লাইমেক্স মুহূর্তটি শুরু হয় আগেই রিলিজ করা গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের বিখ্যাত বক্তৃতার পর, জায়গাটি ছিল প্যারিসের বিখ্যাত পের লাশেইজ কবরস্থান (Père Lachaise Cemetery), শুধু প্যারিসের না, এটি বরং পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত কবরস্থান! প্রতি বছর এখানে আসেন প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ। অস্কার ওয়াইল্ডের কবরের ঠিক কাছেই, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ঘিরে আসছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে ধারণা দেয় গ্রিন্ডেলওয়াল্ড মাগলদের বিরুদ্ধে তার দলভারী করবার জন্য, যার শেষে শুরু হয় প্যারিস বিধ্বংসী যুদ্ধ। সিনেমার পর্দায় অসাধারণ স্পেশাল ইফেক্টের গুণে জীবন্ত হয়ে ওঠে সে লড়াই। কিন্তু এরপরই যা জানা যায় তা সিনেমার সবচেয়ে বড় চমক, এমনকি যা কিনা প্রভাব ফেলতে পারে মূল সিরিজের কাহিনীতেও!
জে কে রোলিং এর লেখা গল্প আর চিত্রনাট্য রূপালি পর্দায় ডেভিড ইয়েটস এবার আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন, সত্যি বলতে, প্রথম পর্বের চেয়ে ভালো করে। প্রথম পর্বের কাহিনী যেখানে বেশ সরল ছিল, সেখানে দ্বিতীয় পর্বের কাহিনী বেশ জটিল, তাছাড়া বইয়ের সহায়তা না থাকায় সিনেমাই এবার পুরোপুরি সব তথ্যের উৎস, সময়ের সীমাবদ্ধতাই তাই শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমার্ধ তাই ধীর লয়ে এগোয় কাহিনী গড়ে তুলতে, কিন্তু চরিত্রগুলোর পরিণত হয়ে উঠবার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি, সেক্ষেত্রে মনে হতে পারে, ছবিটি বেশ 'রাশড'।
মিউজিকের কথায় আসা যাক। জেমস হাওয়ার্ড এবারও সুর করেছেন, আর সাথে ছিল বিশেষ কিছু মুহূর্তে জন উইলিয়ামসের আগের সিরিজের মিউজিক। দুজনের সম্মিলিত স্কোর সিনেমাজুড়ে কানে বেজেছে সুললিতভাবে। তবে জন উইলিয়ামসকে হয়তো কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারবেন না এক্ষেত্রে সামনের মুভিগুলোতেও।
জুড ল অভিনয় করেছেন চল্লিশের কোঠায় থাকা ডাম্বলডোরের চরিত্রে, এবং যতটা সময় ছিলেন মাতিয়ে দিয়েছেন তার অসাধারণ ব্যক্তিত্বপূর্ণ অভিনয় দ্বারা। তবে অর্ধচন্দ্র চশমার আড়ালে নীল চোখের মিটমিটে হাসির দেখা কি মিলবে? মজার ব্যাপার, এ চরিত্রে বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ আর ক্রিশ্চিয়ান বেলকেও ভাবা হয়েছিল; কিন্তু শেষমেশ চরিত্রটি পান জুড ল'ই। ওদিকে ভয়ংকর শক্তিশালী কালো জাদুকর গ্রিন্ডেলওয়াল্ডের চরিত্রে নিজের সেরাটাই দিয়েছেন জনি ডেপ, দু চোখের দু রঙের মণি একটা ভীতিকর ভাব এনে দেয়। আর নিউট স্ক্যামান্ডার চরিত্রে এডি রেডমেইন বরাবরের মতোই ছিলেন সাবলীল, লাজুক এ চরিত্রের ব্যাপারে তার নিজেরই ধারণা, চরিত্রটির রয়েছে হালকা অটিজম কিংবা অ্যাসপার্গারস সিন্ড্রোম। লেটা লেস্ট্র্যাঞ্জ চরিত্রে ছিলেন জোয়ি ক্র্যাভিজ, তার চরিত্রটি নিয়ে ছিল একটি দোদুল্যমনা ভাব; কেননা, লেস্ট্র্যাঞ্জ পরিবার খুবই ধনী এবং স্যাক্রেড টোয়েন্টি এইট (আটাশটি পিওর ব্লাড পরিবারের) এর সদস্য, যারা আবার কালো জাদুও করতেন। এদের থেকেই অনেকে পরে ডেথ ইটার হয়েছিল। তাই লেটা আসলে কোন দিকে যাবেন, সেটাও ছিল আগ্রহের বিষয়, জোয়ি হতাশ করেননি সে ব্যাপারে দর্শকদের। ডেথলি হ্যালোজ প্রথম পর্বে তরুণ ডাম্বলডোর আর গ্রিন্ডেলওয়াল্ড হিসেবে যারা ছিলেন তারাই এ মুভিতে আছেন একই বয়সের চরিত্রে।
টানা ছ' মাস কাজ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ইতি টানা হয় শুটিং এর। আগের পর্বের তুলনায় এবার স্পেশাল ইফেক্টস আরও উন্নত, গত পর্বের একটি অভিযোগ ছিল কেন বিভিন্ন জাদুমন্ত্রের রঙ একই- অর্থাৎ রুপালি। আসলে, বাজেট সংকীর্ণতার কারণে সেটি করতে হয়েছিল, এবার সে অভিযোগ আর নেই। লাল-নীল-সবুজের ফুলঝুরি এবার সিনেমা জুড়ে। আর ফ্যান্টাস্টিক বিস্ট যেহেতু সিনেমার নাম, তাই নিখুঁত গ্রাফিক্সের কাজসহ অবাক করা কিছু জাদুকরি প্রাণী তো আছেই- জাপানি পানিদানো, চৈনিক অদ্ভুত জন্তু থেকে শুরু করে পুরনো প্রাণীগুলো আছে, যোগ হয়েছে হাস্যরস নিয়ে আসা শিশু নিফলার।
সেভেরাস স্নেইপ চরিত্রে অভিনয় করা প্রয়াত অ্যালান রিকম্যানকে জে কে রোলিং শেষ বই বের হবারও অনেকদিন আগে জানিয়েছিলেন স্নেইপের প্রকৃত রহস্য, যেন তিনি চরিত্রে ঢুকে যেতে পারেন। এবারও তিনি একজনের সাথে একই কাজটি করেছেন, আর তিনি হলেন ডাম্বলডোর চরিত্রের জুড ল। কী আসছে সামনে? রোলিং তার গল্পের ব্যাপারে টুইস্টের ব্যাপারে এতই সতর্ক ছিলেন, যে একজন অভিনেতা যেন অন্যজনের গোপন টুইস্ট জানতে না পারেন সেজন্য কোডনেম ব্যবহার করে স্ক্রিপ্ট দেওয়া হতো, আর সেভাবেই অভিনয় হতো। রোলিং নিশ্চিত করেছেন যে, সিরিজের শেষ পর্বটির পটভূমি হবে ১৯৪৫ সাল, যখন ডাম্বলডোর ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত দ্বন্দ্বযুদ্ধে গ্রিন্ডেলওয়াল্ডকে পরাজিত করবেন।
১৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে ছবিটি বিশ্বজুড়ে মুক্তি পায়, বাংলাদেশে কেবল স্টার সিনেপ্লেক্সের পর্দায় চলছে মুভিটি, প্রিমিয়াম ও ভিআইপি হলে। একই দিনে মুক্তি পায় জে কে রোলিং এর লেখা মুভিটির চিত্রনাট্য বইটিও।
দ্য ক্রাইমস অফ গ্রিন্ডেলওয়াল্ড মুভিটি সমালোচকদের হতাশ করলেও মাতিয়েছে পটারভক্তদের। ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর মুক্তি পাবে ছবিটির পরের পর্ব। ততদিন না জেনেই থাকতে হবে এ পর্বের জন্ম দেওয়া নানা নতুন প্রশ্নের উত্তর। তবে দুটি বছর পটারহেডদের জল্পনা কল্পনার বিষয় হয়ে থাকবে এগুলো, সে-ই বা কম কীসে?
মুভির ট্রেইলার:
This article is in Bangla language and reviews the second installment of Fantastic Beasts film series: Crimes of Grindelwald. For any furthermore references, please visit the hyperlinked contents.
Featured Image: Wallpaper Abyss - Alpha Coders