Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দুর্গেশনন্দিনী: ইতিহাস ও প্রেমের সার্থক আখ্যান

সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এবং একইসাথে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী। বঙ্কিমের সাতাশ বছর বয়সে ১৮৬৫ সালের মার্চ মাসে প্রথম প্রকাশিত হয় দুর্গেশনন্দিনী। অবশ্য বঙ্কিম এটা রচনা করেছেন ১৮৬২-৬৪ এর মধ্যে। বঙ্কিমের জীবদ্দশায়ই ১৩টি সংস্করন প্রকাশিত হয়।

দুর্গেশনন্দিনী‘র উৎস তৎকালীন সময়ে প্রচলিত একটি কিংবদন্তী থেকে। কথিত আছে, উড়িষ্যা-অধিকারী পাঠানেরা মান্দারণ অঞ্চলের (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলা) জমিদার বাড়ি লুট করেছিল এবং সস্ত্রীক জমিদার ও তার কন্যাকে বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিল। রাজপুতবীর কুমার জয়সিংহ তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে পাঠানদের হাতে বন্দী হন। এই গল্পটি বঙ্কিম শুনেছিলেন তার পিতামহের কাছে। এর কয়েকবছর পরই বাংলা সাহিত্যের জয়ঢাক বাজিয়ে জন্ম নেয় দুর্গেশনন্দিনী

Image Courtesy: BoiBazar.com

দুর্গেশনন্দিনী‘র গল্পে দেখা যায়, পাঠান আর মোগলদের মধ্যে উড়িষ্যার দখল নিয়ে যুদ্ধে দিল্লীশ্বর আকবর অম্বররাজ মানসিংহকে বাংলা-বিহারের শাসনকর্তা হিসেবে পাঠান উড়িষ্যা দখল করতে। মহারাজ মানসিংহ তার সুপুত্র জগৎসিংহকে এ কাজে নিয়োজিত করেন। সুদক্ষ যোদ্ধা রাজপুতবীর জগৎসিংহ বার বার ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ করে পাঠানদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন। এরকম সময়েই একদিন জগৎসিংহের সাথে স্থানীয় ভূস্বামী বিরেন্দ্রসিংহের একমাত্র ষোড়শী কন্যা, সুন্দরী তিলোত্তমার সাক্ষাৎ হয় শৈলেশ্বরের মন্দিরে। নিজের অজান্তেই উভয়ে একে অপরের প্রেমে পড়েন। নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তাদের প্রেম এগিয়ে যায়, এগিয়ে যায় আমাদের দুর্গেশনন্দিনী‘র কাহিনী।

ইতিহাসের মোগল-পাঠানের দ্বন্দ্বের সাথে জগৎসিংহ আর তিলোত্তমাকে জড়িয়ে বঙ্কিম তার দুর্গেশনন্দিনী তৈরি করেন। দুর্গেশনন্দিনী‘র মূল উপজীব্য ইতিহাস নয়, বরং ভালোবাসা। ইতিহাসের ছায়া থাকলেও ইতিহাসের চেয়ে এখানে জগৎসিংহ-তিলোত্তমা-আয়েশা’র ত্রিভুজ প্রেমই পাঠককে বেশি নাড়া দিয়েছে। সিনেমার ম্যাকগাফিনের মতো বঙ্কিম তার উপন্যাসে ইতিহাসটা শুধু গল্পের জো তোলার জন্য, প্লটকে সচল রাখার জন্য ব্যবহার করেছেন।

রাজা মানসিংহের প্রতি বীরেন্দ্রসিংহ ক্ষুদিত ছিলেন। প্রথমদৃষ্টে পাঠকের কাছে এটাকে খুবই স্বাভাবিকই মনে হতে পারে, কারণ মানসিংহের মোগলদের প্রতি বশ্যতা স্বীকার তৎকালীন সময়ে অনেক রাজাই মেনে নিতে পারেননি। বিশেষত রাজপুত যোদ্ধা ও রাজারা এবং বঙ্গ প্রদেশের অনেক নৃপতিই এ ব্যাপারে ভীষণ বীতরাগ ছিলেন। কিন্তু বীরেন্দ্রসিংহের এই ঘৃণার কারণ যে শুধু তা-ই নয়, বরং মানসিংহের সাথে তার অন্য কোনো হিসেবও এই ক্ষোভের কারণ, তা পাঠক উপন্যাসের ক্লাইমেক্সে ক্রমশ টের পাবেন।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়; Image Source: Wikimedia Commons

উপন্যাসের বিমলা চরিত্রটি রহস্যাবৃত। পাঠক প্রথমে তার পরিচয় নিয়ে ধন্দে পড়ে যাবেন। পরিশেষে পাঠকের সম্মুখে যখন তার আসল পরিচয় উদ্ঘাটিত হবে তখন সত্যিই বিস্মিত হতে হবে। আসলে বিমলা চরিত্রটি আবহমান সমাজের নিপীড়িত নারীজাতির প্রতিচ্ছবি যে কি না নিজের অধিকার মুখ ফুটে দাবী করতে পারে না। পুরুষশাসিত সমাজে বিমলার মতো এখনো অসংখ্য নারী বিদ্যমান যারা নিগ্রহের স্বীকার হতে হতেই জীবনযাপন করছে।

আয়েশা আর ওসমান এই দুই হতভাগার জন্য পাঠকের মন অবশ্যই দুঃখভারাক্রান্ত হবে। এই দুই চরিত্রকে বঙ্কিম ইচ্ছে করলেই আরও সুন্দর পরিণতি দিতে পারতেন। কিন্তু উপন্যাসের স্বার্থেই হোক অথবা ইতিহাসের আবেদনের প্রেক্ষিতেই হোক বঙ্কিম তা করেননি।

দুর্গেশনন্দিনীতে আছে ভালোবাসা, আছে রাজনীতি, কূটনীতি। আর আছে একটুখানি কমেডি। বঙ্কিম তার স্বভাবসুলভ রসিকতা দিয়েই কিছু অংশ বর্ণনা করেছেন। কিছু অপ্রয়োজনীয় চরিত্র সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র উপন্যাস যেন একেবারে কাঠখোট্টা না হয়ে যায় এজন্য। গজপতি বিদ্যাদিগগজ, আশমানি এই দুটো চরিত্রই বিনোদনের উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আশমানির রূপ আর দেহসৌষ্ঠবের বর্ণনা, গজপতির সংস্কার ইত্যাদির সরস বর্ণনা পাঠককের মনে অবশ্যই হাসির সঞ্চার করবে।

উপন্যাসের চরিত্রগুলো একে অপরের সাথে আন্তঃসম্পর্কিত। মানে চরিত্রগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো সত্তা নয়- আপাত বিচ্ছিন্ন মনে হলেও তাদের একে অপরের সাথে কোনো না কোনো সম্পর্ক তাদের এবং পাঠকের অজ্ঞাতসারেই বিদ্যমান। প্রথম উপন্যাস হলেও বঙ্কিম এই অন্বয়কে খুবই মুন্সিয়ানার সাথে তুলে ধরেছেন। পাঠক এই যোগসমষ্টি আবিষ্কার করে বিস্মিত হবেন।

উপন্যাসের সমাপ্তিটা কিঞ্চিৎ কূটাভাসপূর্ণ। যেন সুখ আর দুঃখ পাশাপাশি- পাঠককে ঠিক করতে হবে তিনি কোনটা বেছে নেবেন- সুখের আবেশ নিয়ে উপন্যাস শেষ করবেন না দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে কারও জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে উপন্যাসের সমাপ্তি টানবেন।

অনলাইনে বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করতে পারেন নিচের লিঙ্কে:

১) দুর্গেশনন্দিনী

This is a bengali book review article on Durgeshnandini by Bankim Chandra.

Related Articles