বাবার কাছে শোনা তার দেশের গল্প রূপকথার চাইতে কম কিছু ছিল না ছোট এন’জাদাকার কাছে। তার বাবা আফ্রিকা মহাদেশের ছোট এক দেশ, ওয়াকান্ডার রাজপুত্র ছিলেন। বাইরে থেকে দেখতে অন্যান্য আফ্রিকান দেশের মতো দরিদ্রতা এবং নিরক্ষতায় আচ্ছন্ন মনে হলেও বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী ধাতু ভাইব্রেনিয়ামকে ব্যবহার করে ওয়াকান্ডা হয়ে ওঠে শিক্ষা, প্রযুক্তিতে বিশ্বের সবচাইতে আধুনিক রাষ্ট্র। আর সেই দেশের রাজবংশের রক্ত বইছে এন’জাদাকার শরীরে।
তার বাবা তাকে আরো বলতেন ওয়াকান্ডার সৌন্দর্যের কথা। ওয়াকান্ডার সূর্যাস্ত তার জন্য ছিল পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর দৃশ্য। তিনি এন’জাদাকার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, একদিন তিনি তাকে সে দেশে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি তার প্রতিজ্ঞা রাখতে পারেননি। নিজের ছোট সেই অ্যাপার্টমেন্টেই মারা যান তিনি, নিজের ভাইয়ের হাতে। মৃত বাবাকে জড়িয়ে ধরে তখনও এন’জাদাকা বুঝতে পারেনি, সেদিন তার কাছ থেকে শুধু তার বাবাকে নয়, তার সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে এই বিশাল পৃথিবীতে তাকে একা ফেলে রাখা হয়েছে।
এটাই ছিল 'ব্ল্যাক প্যান্থার' সিনেমার অ্যান্টাগনিস্ট এরিক 'কিলমঙ্গার' স্টিভেনসের ছোটবেলার গল্প। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটি ছিল বিশ্বের সকল আফ্রিকান জাতিগোষ্ঠির জন্য ভালোবাসার বার্তা। আফ্রিকান সংস্কৃতি, ভাষা, পোশাক, সঙ্গীতসহ আরো অনেক বিষয় সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য সিনেমাটি বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে সিনেমাটির আরো একটি বিষয়, যা সবার নজর কেড়েছে, তা হলো মাইকেল বি জর্দান অভিনীত এরিক কিলমঙ্গার চরিত্রটি। পরিচালক রায়ান কুগলার এবং চিত্রনাট্যকার জোয়ি রবার্ট কোল কাল্পনিক এক আফ্রিকান রাষ্ট্রের গল্পে কিলমঙ্গারের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বিশ্বের বাস্তব একটি সমস্যাকে।
গল্পের নায়ক টি’চালা যখন ব্ল্যাক প্যান্থার হিসেবে ওয়াকান্ডার সিংহাসনে বসে, তখন সে তার বাবার মতো মহৎ রাজা হতে চেয়েছিল। সে ভেবেছিল, তার বাবা এবং পূর্বের ব্ল্যাক প্যান্থারদের দেখানো পথেই কেবল সেটা সম্ভব, যা ছিল বাইরের বিশ্ব থেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখা এবং ভাইব্রেনিয়ামকে নিরাপদ রাখা। ভাইব্রেনিয়ামকে ওয়াকান্ডানরা বলতো ইসিপো বা উপহার। তারা জানত ভাইব্রেনিয়ামের আসল ক্ষমতা। শুধু টি’চালাই নয়, সব ওয়াকান্ডানেরই বিশ্বাস ছিল, যদি বাইরের বিশ্ব তাদের সম্পদ বা তাদের আসল ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে, তাহলে হয়তো তাদের জীবনযাত্রার ধরন বদলে যাবে।
এ বিশ্বাসের ফলে তাদের মধ্যে যেমন অনেক স্বদেশভক্তি জন্ম নেয়, তেমনি তারা পৃথিবীকে দু'ভাবে দেখা শুরু করে। একদিকে ওয়াকান্ডা, আরেকদিকে বাকি সবাই। যে কারণে সবার আগে ওয়াকান্ডার স্বার্থটাই ভাবতে হয় টি’চালাকেও। অর্থাৎ, সে তার পূর্বপুরুষদের দেখানো পথ ধরেই, সেই একই নীতিতে বিশ্বাস রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করে। ঠিক তখনই দৃশ্যপটে আগমন কিলমঙ্গারের।
কিলমঙ্গারের জন্ম আমেরিকার ওকল্যান্ডে। তার বাবা এন’জবুকে আমেরিকায় পাঠানো হয়েছিল একজন ‘ওয়ার ডগ’ হিসেবে। কিন্তু সেখানে কালো চামড়ার মানুষদের কষ্ট এবং সংগ্রাম তার এতদিনের ওয়াকান্ডান চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাস পরিবর্তন করে দেয়। এতটাই পরিবর্তন করে যে সে তার দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে একটুও দ্বিধা করেনি।
পুরো বিশ্ব জুড়ে আমাদের মানুষগুলো কষ্টভোগ করছে, কেননা পাল্টা জবাব দেয়ার অস্ত্র তাদের কাছে নেই। ভাইব্রেনিয়াম অস্ত্রের সাহায্যে তারা যেকোনো দেশকে উৎখাত করতে পারবে এবং ওয়াকান্ডা সঠিক উপায়ে সবাইকে শাসন করতে পারবে।
কিং টি’চালাকে বলা এন’জবুর এ কথাগুলো থেকে বোঝা যায়, সে গোটা বিশ্বের সব কৃষ্ণাঙ্গদের একটি সম্প্রদায় ভাবা শুরু করেছে। আর ওয়াকান্ডানদের গায়ের রঙ যেহেতু একই, তাই তারাও সেই সম্প্রদায়ের একটি অংশ। তাই তার মতে, শোষিত কালো মানুষদের উদ্ধারে ওয়াকান্ডাকে এগিয়ে আসতে হবে। ঠিক একই বিশ্বাস ধারণ করে কিলমঙ্গার। কারণ টি’চাকা যখন এতিম এন’জাদাকাকে একা ফেলে আসে, তখন সে আমেরিকায় তেমন একটি সম্প্রদায়ে বেড়ে উঠেছে এবং নিজেই সে বৈষম্য প্রত্যক্ষ করেছে। সে যখন প্রথমবার ওয়াকান্ডার রাজদরবারে চার গোত্রের প্রধানদের মুখোমুখি হয়, সে তাদের তিরস্কার করে বলে,
বাহ! আপনারা তো আরামেই বসে আছেন। কিন্তু পুরো বিশ্ব জুড়ে আমাদের মতো দেখতে দুই বিলিয়ন মানুষ আছে, যাদের জীবন অনেক বেশি কঠিন। ওয়াকান্ডার কাছে এমন কিছু একটা আছে, যা তাদের সবাইকে মুক্ত করতে পারবে।
কিলমঙ্গারের চিন্তাভাবনার সাথে মিল পাওয়া যায় মুভির আরেক প্রধান চরিত্র নাকিয়ার। নাকিয়া ওয়াকান্ডায় থাকতে চায় না। তার মতে, সে ওয়াকান্ডায় সুখী হতে পারবে না এটা জেনে যে, বিশ্বে আরো অনেক মানুষের সাহায্য প্রয়োজন। তাই তার বিশ্বাস, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতিতে সম্বৃদ্ধ ওয়াকান্ডার উচিত, তাদের হাজার বছরের পুরনো বিচ্ছিন্নতা নীতি থেকে বেরিয়ে এসে সেসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এ পর্যন্ত কিলমঙ্গারের সাথে একমত পোষণ করতে পারাটা সহজ। তবে সে যে উপায়ে ওয়াকান্ডার মাধ্যমে তাদের সাহায্য করতে চেয়েছিল, তা তাকে একজন খলনায়কে পরিণত করে।
টি’চালাকে হারিয়ে ওয়াকান্ডার নতুন রাজা হবার পর কিলমঙ্গার প্রথমেই চায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা তাদের ওয়ার ডগদের ওয়াকান্ডান অস্ত্র পাঠাতে, যারা তা তুলে দেবে নিপীড়িত কৃষ্ণাঙ্গদের হাতে; যাতে করে তারা বিদ্রোহ শুরু করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ক্ষমতাচ্যুত করে বিশ্বব্যাপী ওয়াকান্ডার অস্তিত্ব জানান দিতে পারে। কিলমঙ্গারের মতে, সে ঔপনিবেশিকদের কৌশল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে কিলমঙ্গারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। সে শুধু কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্তিই নয়, সাথে চেয়েছিল গোটা বিশ্ব শাসন করতে। তার বলা,“ওয়াকান্ডান সাম্রাজ্যের সূর্য কখনোই অস্ত যাবে না” কথাটিতে যেন বৃটিশ সাম্রাজ্যের পুরনো সেই উক্তিটিই প্রতিফলিত হয়।
তবে কিলমঙ্গারের ওয়াকান্ডার রাজা হবার পথটা মোটেই সহজ ছিল না। কিলমঙ্গার জানত, টি’চালাকে ছোটবেলা থেকেই ব্ল্যাক প্যান্থার হবার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। তাই কিলমঙ্গার নিজেকেও সেভাবে প্রস্তুত করতে থাকে। অ্যানাপোলিসের ইউনাইটেড স্টেটস নেভাল একাডেমি এবং এমআইটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর সে ইউনাইটেড স্টেটস নেভি সিলসে যোগ দিয়ে আফগানিস্তানে যায়। নেভি সিলসকে বলা হয় বর্তমান সময়ের সবচাইতে দুর্ধর্ষ এবং চৌকস সেনাদল, যারা লাদেন হত্যাসহ গত কয়েক দশকে বেশ কিছু দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছে।
কিলমঙ্গারও নেভি সিলের কঠিনতম প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে গিয়েছে বলেই সে অসাধারণ শারীরিক দক্ষতার পাশাপাশি দৃঢ় মানসিক শক্তি এবং কৌশলগত দক্ষতা অর্জন করেছে। আবার সে JSOC (The Joint Special Operations Command) ঘোস্ট ইউনিট থেকে প্রশিক্ষণ পায়, কীভাবে কোনো দেশের ক্ষমতা বদলের সময়ে সে দেশকে অস্থিতিশীল করে সেদেশের সরকার এবং সামরিক বাহিনীকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। যার কারণে কিং টি’চাকার মৃত্যুর পরেই সে ওয়াকান্ডায় নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়।
তবে কিলমঙ্গারের বিপক্ষে ছিল জেনারেল ওকোয়ে, প্রিন্সেস শুরি, নাকিয়া এবং কুইন মাদার রামোনডার মতো শক্তিশালী কিছু নারী চরিত্র, যারা ওয়াকান্ডার চরম বিপর্যয়েও হাল ছাড়েনি এবং যাদের কারণেই মূলত টি’চালা শেষপর্যন্ত ওয়াকান্ডাকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়। অপরদিকে কিলমঙ্গার পুরোপুরি একা।
কিলমঙ্গার তার বাবা এবং তার নোটবুকের মাধ্যমে জেনেছে ওয়াকান্ডা সম্পর্কে সবকিছু। সে বুঝতে পেরেছিল, যদি সে হঠাৎ করে একদিন ওয়াকান্ডা গিয়ে উপস্থিত হয়, কেউ তাকে গ্রহণ করবে না। তাই সে তার সাথে করে নিয়ে আসে ইউলেসিস ক্লয়ের মৃতদেহ। সে এমন কিছু একটা করে দেখিয়েছে, যেটা টি’চাকা বা টি'চালা কেউই পারেনি। এটি খুব বেশি প্রভাবিত করে ও’কাবিকে, কারণ সে ছোটবেলা থেকেই ক্লকে তার কাজের জন্য শাস্তি দিতে চেয়েছিল। ও’কাবি তখন টি’চালার রাজত্বে খুব বেশি অসন্তুষ্ট ছিল, কারণ টি’চালাও তার বাবার মতোই ক্লকে ধরতে ব্যর্থ হয়েছিল, যে ক্ল ও’কাবির বাবা-মাকে হত্যা করেছে।
ওয়াকান্ডার মূল ভূখণ্ডে প্রবেশের আগেই কিলমঙ্গার বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী ব্যাক্তির সমর্থন পেয়ে যায়, যার নিয়ন্ত্রণে আছে সেদেশের মিলিটারি। এখানে আমরা কিলমঙ্গারের মেধাবী একটি কৌশলের ঝলক দেখতে পাই, যেখানে সে মিলিটারির বিশ্বস্ততা অর্জন করে এটা নিশ্চিত করে ফেলেছে যে, সে যখন সিংহাসনে বসবে, তার বিরুদ্ধে কেউ আর দাঁড়াতে পারবে না।
কিন্তু ইউলেসিস ক্লকে হত্যা করার পরেও রাজদরবারে সবাই তাকে হালকাভাবে নিচ্ছিল, বিশেষ করে তার আফ্রিকান-আমেরিকান কথা বলার ভঙ্গি এবং আচরণে। কিন্তু গোটা পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে যায়, যখন কিলমঙ্গার তাদের ভাষায় নিজের পরিচয় দেয়। এর মাধ্যমে কিলমঙ্গার বুঝিয়ে দেয়, সে তাদেরই একজন। এতে সবার আচরণ পরিবর্তন হয় এবং তাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করে।
তবে কিলমঙ্গার কখনোই তাদের একজন হয়ে উঠতে পারবে না। এত প্রযুক্তিগত উন্নতির পরেও ওয়াকান্ডা তাদের শত বছরের সংস্কৃতি আগলে ধরে রেখেছিল। কিন্তু কিলমঙ্গারের আমেরিকায় বেড়ে ওঠা এবং সেখানকার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কারণে ওয়াকান্ডার প্রথা এবং সংস্কৃতির উপর কখনোই তার শ্রদ্ধা জন্মেনি। তাই সে হার্টশেপ হার্বের ক্ষমতা জানার পর পবিত্র সে বাগান পুড়িয়ে ফেলে; কেননা, সে চায়নি শক্তির দিকে থেকে কেউ তার সমকক্ষ হোক আর অন্য কারো হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার কোনো পরিকল্পনাও তার ছিল না। টি’চালা ফিরে আসার পর তার বিপক্ষে আবার লড়াইতেও অস্বীকৃতি জানায় সে। আর সবচাইতে বড় বিষয়, সে ওয়াকান্ডার শত বছরের বিচ্ছিন্নতা নীতি ভেঙে ওয়াকান্ডার সম্পদকে নোংরা যুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।
আবার সিনেমার সবচাইতে হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য, যেখানে কিলমঙ্গার অ্যানসেস্ট্রাল প্লেইনে (Ancestral Plane) যায়, সেখানে সে কেবল তার বাবাকেই দেখতে পায় সেই অ্যাপার্টমেন্টে। এন’জবু মৃত্যুর পরেও ওয়াকান্ডা থেকে নির্বাসিত ছিলেন, অন্যান্য পূর্বপুরুষদের সাথে একত্র হতে পারেননি তিনি। আবার তখন আমরা ছোট এন’জবুকে দেখতে পাই, যা আমাদের বোঝায়- কিলমঙ্গারের সব দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্বাস, আচরণের মূলে আছে তার ছোটবেলার সেই মানসিক আঘাত, বাবা হারানোর দুঃসহ স্মৃতি। তার মধ্যে ওয়াকান্ডানদের আদর্শ বা মূল্যবোধ কখনোই ছিল না।
কিলমঙ্গার চরিত্রটি এমনভাবে গঠন করা হয়েছে, যাতে তার কষ্ট দর্শক উপলব্ধি করতে পারে, তার ব্যথায় ব্যথিত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে জোয়ি রবার্ট কোল বলেন,
আমার মনে হয়, শ্রেষ্ঠ ভিলেন তারাই, যাদের একটি দৃষ্টিকোণ থাকে, যার সাথে আপনি সাদৃশ্য স্থাপন করতে পারবেন এবং সহানুভূতিশীলও হবেন।
তবে এত চরমপন্থী মনোভাব এবং উদ্দেশ্য থাকলেও, কিলমঙ্গার অসাধারণ কিছু একটা করে দেখায়, যা ভিলেন হিসেবে তার চরিত্রটিকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। সে নায়কের এত বছরের বিশ্বাস পরিবর্তন করে দেয়। টি’চালা যখন জানতে পারে, তার বাবা এন’জবুকে হত্যা করে ছোট এন’জাদাকাকে একা ফেলে এসেছে, সে খুব কষ্ট পায়। তার বাবার প্রতি তার বিশ্বাস ভেঙে যায় এবং এতদিন তাকে মহৎ রাজা ভেবে আসাটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়,
তিনি তার নিজের ভাইকে হত্যা করে তার সন্তানটিকে একা ফেলে এসেছেন। কোন ধরনের রাজা, কোন ধরণের মানুষ এমন কাজ করতে পারে?
কিলমঙ্গার ছিল টি’চালার এতদিনের বিশ্বাসে যে ত্রুটি ছিল, তার বাস্তব রূপ। কিলমঙ্গার সেসব প্রাণের হাহাকার, যারা এখনো নানাভাবে শোষণ-বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। আর কিলমঙ্গার সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে, এভাবে লুকিয়ে থেকে তারা নিজেদের সবসময় রক্ষা করতে পারবে না। যখন টি’চালা এই সবকিছুর মুখোমুখি হয়, তখন তার বিশ্বাস পরিবর্তন হয়ে যায়।
কিলমঙ্গারের বিশ্ব শাসনের মতো উদ্দেশ্য থাকলেও সে একটি বিষয়ে সঠিক ছিল। ওয়াকান্ডা ব্যর্থ। ওয়াকান্ডা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, যখন তাদের এত উন্নত প্রযুক্তি, এত সম্পদ থাকার পরেও চারপাশের পৃথিবীতে জুড়েই শোষণের শিকার হয়েছে কৃষ্ণাঙ্গরা। অসংখ্য প্রাণকে তারা ঝড়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে পারত, কিন্তু তারা তা করেনি। টি’চালা সেটা বুঝতে পারে। দ্বিতীয়বারের মতো যখন টি’চালা অ্যানসেস্ট্রাল প্লেইনে যায়, সে তার বাবাসহ সব পূর্বপুরুষদের ঊদ্দেশে চিৎকার করে বলে,
"তোমরা সবাই ভুল ছিলে, ভুল!"
কিলমঙ্গারের বিপক্ষে লড়াই করে, কিছু নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়ে টি’চালা হয়ে ওঠে একজন ব্ল্যাক প্যান্থার। ওয়াকান্ডার ইতিহাসের প্রথম রাজা হিসেবে টি’চালা ওয়াকান্ডার অন্তর্মুখী নীতির ইতি টানে এবং জাবারি গোষ্ঠির সাথে যুগ যুগ ধরে চলা বিরোধের অবসান ঘটায়। টি’চালা ঘোষণা দেয়, এখন থেকে ওয়াকান্ডা আর লুকিয়ে থাকবে না, তারা এখন থেকে তাদের সম্পদ এবং প্রযুক্তি সবার সাথে ভাগাভাগি করে নেবে। তারা এখন থেকে গোটা বিশ্বকেই একটি গোষ্ঠি হিসেবেই দেখবে। সুবিধাবঞ্চিত সকলের পাশে দাঁড়াবে। কারণ, সংকটের সময় বুদ্ধিমানরা সেতু তৈরি করে, আর বোকারা তৈরি করে বেষ্টনী।
সিনেমার শেষে কিলমঙ্গার মারা যায়। কিন্তু সে চিরদিনের জন্য সে ওয়াকান্ডাকে পরিবর্তন করে ফেলে, ওয়াকান্ডাকে বিশ্বের সকল কৃষ্ণাঙ্গের পাশে দাঁড় করিয়ে দেয়। আর অবলোকন করে পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর দৃশ্য- ওয়াকান্ডার সূর্যাস্ত।
This article is in Bangla language. It's about the Tragedy of Erik Killmonger, the villain character .
Necessary references have been hyperlinked.
Featured Image: Disney/Marvel