Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সাই-ফাই মাস্টারপিস ইন্টারস্টেলারের ব্যাখ্যা

ভাবুন তো, একজন ব্যক্তি তার ছোট্ট মেয়েটাকে রেখে মহাকাশ ভ্রমণে বের হলেন আর যখন পৃথিবীতে ফিরে এলেন তখনও সে একজন তড়তাজা যুবক কিন্তু সেই ছোট্ট মেয়েটা ততোদিনে বুড়ো হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। অদ্ভূত, তাই না? অদ্ভূত হলেও কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু নেই। অন্ততঃ আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব (Theory of Relativity) আমদের তা-ই বলে। ক্রিস্টোফার নোলানের সায়েন্স-ফিকশন সিনেমা ইন্টারস্টেলারে এমনটিই দেখানো হয়েছে।

সিনেমাপ্রেমীদের কাছে ক্রিস্টোফার নোলানের অনুপম সিনেমা তৈরির ক্যারিশমার কথা অজানা নয়। মেমেন্টো, ইনসমনিয়া, দ্য প্রেস্টিজের মতো সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার থেকে দ্য ডার্ক নাইট ট্রিলজির মতো সুপারহিরো কিংবা ইনসেপশনের মত সাই-ফাই মাস্টারমাইন্ড সিনেমা সব জায়গাতেই তিনি তার বহুমুখী প্রতিভার ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ইন্টারস্টেলারও তারই পরিচালনায় তৈরি। বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও কল্পকাহিনী, মহাকাশবিদ্যা সাথে ভালবাসা-আবেগ দিয়ে আবর্তিত হয়েছে সিনেমাটির কাহিনী।

২০৬৭ সাল। নাসার সাবেক পাইলট জোসেফ কুপার (Matthew McConaughey) তার দশ বছরের মেয়ে মারফি, বড় ছেলে টম এবং বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে প্রতিকূল এক সমাজে (dystopian future) বসবাস করছেন। যেখানে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যে মানুষের চাঁদে যাওয়ার মিশন (Apollo Moon Missions) ছিল তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য সাজানো নাটক। কারণ এর ফলে সোভিয়েত ঈর্ষাবশত মহাকাশ গবেষণা আর স্পেসশীপ তৈরীতে অর্থ খরচ করে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল।

নাসা থেকে অবসরের পর কুপার এখন একজন কৃষক। কিন্তু ব্লাইট রোগ (crop blight) আর ধূলিঝড়ের (dust storm) কারণে কোনো ফসল টিকতে পারছে না। শুধুমাত্র ভূট্টাই কোনোমতে টিকে আছে। কিন্তু এটাও আর বেশিদিন টিকতে পারবে না। ধূলিঝড়ের কবলে পড়ে মানুষের শ্বসনতন্ত্রও বিপর্যস্ত। মানবজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন। মহাবিশ্বে মানুষের প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে নতুন কোনো উপায় খুঁজতে হবে।

ব্লাইটে আক্রান্ত ফসল পোড়ানো হচ্ছে। Image Source:From the book 'The Science of Interstellar' by Kip Thorne ( page 51 of epub file), used courtesy of Warner Bros. Entertainment Inc.
ব্লাইটে আক্রান্ত ফসল পোড়ানো হচ্ছে; Image: The Science of Interstellar

এরকমই একটি ধূলিঝড়ের পর মারফি তার বেডরুমের মেঝেতে কিছু অদ্ভূত ধূলোর বিন্যাস (dust pattern) দেখতে পায়। তার ধারণা অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তি তার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে। কারণ এর পূর্বেও সেই শক্তি মারফির রুমের বুকসেল্‌ফ থেকে নির্দিষ্ট বিন্যাসে বই ফেলে দিয়ে মোর্স কোডের (Morse Code) মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। 

কিন্তু কুপার বুঝতে পারেন ধূলোর প্যাটার্নগুলো মোর্স নয় বরং বাইনারী কোড। যেখানে মোটা ও চিকন প্যাটার্নগুলো যথাক্রমে 1 ও 0 নির্দেশ করে। প্যাটার্নগুলো বাইনারী থেকে রূপান্তর করে যে দুই ডিজিটের সংখ্যা হয় কুপার ধরতে পারেন আসলে সেটা একটা জিওগ্রাফিক্যাল কোঅরডিনেট নির্দেশ করছে। কৌতূহলবশত ম্যাপ ধরে বাবা ও মেয়ে সে কোঅরডিনেটে গিয়ে দেখেন সেটা নাসার গোপন মহাকাশ অভিযানকেন্দ্র (secret Nasa facility) যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রফেসর ড. ব্র্যান্ড (Michael Caine)।

মানবজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাদের দুটি প্ল্যান রয়েছে। প্ল্যান ‘এ’: স্পেস স্টেশনে করে মানবজাতিকে মহাশূন্যে স্থানান্তর করা; প্ল্যান ‘বি’:প্ল্যান ‘এ’ বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে ইনডিওরেন্স নামক এক ভারসেটাইল স্পেসশিপের মাধ্যমে মানুষের পাঁচ হাজার হিমায়িত ভ্রূণ বাসযোগ্য কোনো গ্রহে নিয়ে গিয়ে সেগুলোকে প্রতিপালনের মাধ্যমে কলোনি স্থাপন করা।

ইনডিওরেন্স, Image Source: interstellarfilm.fandom.com
 ভারসেটাইল শীপ ‘ইনডিওরেন্স’; Credit: Warner Bros

ড. ব্র্যান্ডের প্ররোচনায় শেষ পর্যন্ত ইনডিওরেন্সের পাইলট হিসেবে অভিযানে যেতে রাজি হন কুপার। যাওয়ার পূর্বে কুপার মারফিকে তার একটি হাতঘড়ি দিয়ে যান যাতে ফিরে আসার পর তারা তাদের সময়ের মধ্যে তুলনা করতে পারেন। এমনও হতে পারে কুপার ফিরে আসার পর বাবা আর মেয়ের বয়স সমান হয়ে গেছে! কিন্তু কুপার ঠিক কবে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

এরও পঞ্চাশ বছর পূর্বে বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে মহাকর্ষের কিছু ব্যত্যয় (gravitational anomalies) ধরতে শুরু করেন। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল শনি গ্রহের কাছাকাছি একটা ওয়ার্মহোলের অবস্থান যা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্ল্যালাক্সী অতিক্রম করে নতুন এক গ্ল্যালাক্সির ১২টি গ্রহে যাওয়ার জন্য পথ করে দিচ্ছে। এই ১২টি গ্রহ কতটা বাসযোগ্য তা জরিপ করার জন্য ১০ বছর পূর্বে ‘দ্য ল্যাজারাস মিশন’ নামক এক অভিযানে পাঠানো হয়েছিল ১২ জন নভোচারীকে। আর গ্রহগুলোর অবস্থান ছিল গারগ্যাঞ্চুয়া (Gargantua) নামক একটি ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি।

ব্ল্যাক হোল গারগ্যাঞ্চুয়া। Image Source: Physics Central
ব্ল্যাক হোল ‘গারগ্যাঞ্চুয়া’; Image: The Science of Interstellar

মানবজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর মহান উদ্দেশ্য নিয়ে স্পেসরেঞ্জারে করে ছুটে চলেছেন কুপার। সঙ্গী প্রফেসর ব্র্যান্ডের মেয়ে অ্যামেলিয়া ব্র্যান্ড (Anne Hathaway), নাসার দুই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ডয়েল ও রোমিলি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন দুই রোবট টার্‌স ও কেস। রেঞ্জার নিয়ে ইন্ডিওরেন্সে ল্যান্ড করার পর তারা প্রথমে মঙ্গল (Mars) এবং তারপর শনির উদ্দ্যেশে যাত্রা করে। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ওয়ার্মহোলের উদ্দেশ্যে।

ওয়ার্মহোল, Image Source: BMT Entertainment
ওয়ার্মহোল; Credit: Warner Bros

ওয়ার্মহোল স্পেসকে বাঁকিয়ে যাত্রাপথকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত করে দিতে পারে। এর ফলে কুপারের টিম একসময় ওয়ার্মহোল পাড়ি দিয়ে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্ল্যালাক্সী অতিক্রম করে পূর্বে উল্লেখিত নতুন গ্ল্যালাক্সীতে এসে পৌঁছায়। সে মুহূর্তে তাদের কাছে রয়েছে তিনটি গ্রহ থেকে পাঠানো অনুকূল ডাটা। এর মধ্যে ড. মিলার ও ড. ম্যানের গ্রহ উভয়ই গারগ্যাঞ্চুয়া নামক ব্ল্যাক হোলটিকে প্রদক্ষিণ করছে। তবে ড. এডমান্ডস এর গ্রহ থেকে ডাটা ট্রান্সমিশন তিন বছর পূর্বে বন্ধ হয়ে গেছে। প্রথমে তারা ড. মিলারের গ্রহে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গ্রহটি গারগ্যাঞ্চুয়ার বেশি নিকটে হওয়ায় এর অতিমাত্রায় শক্তিশালী মহাকর্ষীয় প্রাবল্যের ফলে টাইম স্লিপেজ অনেক বেশি। মিলারের গ্রহে অতিবাহিত মাত্র ১ ঘন্টা পৃথিবীর হিসেবে ৭ বছর! এ গ্রহে বেশি সময় অতিবাহিত করলে ততোদিনে হয়ত পৃথিবীতে মানবজাতি বিলীন হয়ে যেতে পারে।

রোমিলি গবেষণার জন্য ইনডিওরেন্সে থেকে যায় আর বাকিরা রেঞ্জার নিইয়ে মিলারের গ্রহে ল্যান্ড করে। মিলারের শীপের ধ্বংসাবশেষ থেকে তারা বুঝতে পারে মিলার তারা পৌঁছানোর কয়েক মিনিট পূর্বেই সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে মারা গেছে। মিলারের গ্রহ বাসযোগ্য নয় এটা বুঝতে পেরে দ্রুত ইনডিওরেন্সে ফিরে আসার পরিকল্পনা করে তারা কিন্তু রেঞ্জারে উঠার পূর্বেই পর্বতের মত বিশাল সমুদ্রের ঢেউয়ের কবলে পড়ে মারা যায় ডয়েল।

মিলারের গ্রহে বিশাল ঢেউয়ের কবলে ইনডিওরেন্স, Image Source: pinterest.com
মিলারের গ্রহে বিশাল ঢেউয়ের কবলে ইনডিওরেন্স; Credit: Warner Bros

কুপার ও অ্যামেলিয়া যখন ইনডিওরেন্সে ফিরে আসে তখন রোমিলির হিসেবে ২৩ বছরেও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। বলাই বাহুল্য পৃথিবীর হিসেবে সময় অতিবাহিত হয়েছে আরও অনেক বেশি। 

পূর্বানুমানের চেয়ে মিলারের গ্রহে বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ায় তাদের ম্যান আর এডমান্ডস উভয়ের গ্রহে যাওয়ায় মতো জ্বালানীর যোগান শেষ হয়ে যায়। তাই এদের মাঝে যেকোনো একটা গ্রহকে বেঁছে নিতে হবে তাদের। কিন্তু দুটো গ্রহই প্রমিসিং ডাটা ট্রান্সমিট করেছে। কুপার ও অ্যামেলিয়ার মধ্যে এ নিয়ে বিতর্ক হয়। কুপারের ধারণা অ্যামেলিয়া এডমান্ডসের গ্রহে যেতে চায় কারণ সে এডমান্ডসকে ভালবাসে। অ্যামেলিয়া সেটা স্বীকার করলেও এর পেছনে সে তার মহাজাগতিক যুক্তি দাঁড় করায়।

“…love isn’t something we invented. It’s observable, powerful. It has to mean something. Maybe it means something more, something we can’t yet understand. Maybe it’s some evidence, some artifact of a higher dimension that we can’t consciously perceive. Love is the one thing we’re capable of perceiving that transcends dimensions of time and space. Maybe we should trust that, even if we can’t understand it yet.”

এটাই ছিল তার সে যুক্তি। কারন অ্যামেলিয়া একটা গ্ল্যালাক্সী পাড়ি দিয়ে অবস্থানরত এডমান্ডসের প্রতি ভালবাসা অনুভব করতে পারে। কিন্তু কুপার এ যুক্তিতে সন্তুষ্ট না হলে তারা ড. ম্যানের গ্রহের গিয়ে অবতরণ করে।

ড.ম্যানের গ্রহ, Image Source: pinterest.com
ড. ম্যানের গ্রহ; Credit: Warner Bros

এদিকে কুপারের মেয়ে মারফি, যে এখন একজন বিজ্ঞানী, তাদের কাছে প্রফেসর ব্র্যান্ডের মৃত্যুর সংবাদ প্রেরণ করে এবং সাথে বলে যে ব্র্যান্ডের প্ল্যান ‘এ’ ছিল পুরোপুরি মিথ্যা। বিগত ৪০ বছর যাবত তিনি যে গ্রাভিটির সমীকরণ (gravity equation) সমাধানের চেষ্টা করেছেন সেটা অপর্যাপ্ত ডাটার কারণে আপেক্ষিকতা এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারছে না। কারণ সমীকরণটি সমাধানের জন্য ব্ল্যাক হোল থেকে পর্যাপ্ত তথ্য প্রয়োজন। প্রফেসর ব্র্যান্ড মিথ্যা বলেছিলেন কারন তিনি মানবজাতিকে আশাহত না করে প্ল্যান ‘বি’ এর জন্য কাজে লাগিয়েছিলেন।

ড. ম্যানের গ্রহ ছিল আসলে বসবাসের অযোগ্য। তিনি তার গ্রহের ব্যাপারে অনুকূল তথ্য পাঠিয়েছিলেন যাতে কুপারের টিম এসে তাকে উদ্ধার করে। তিনি কুপারকে হত্যার চেষ্টা করে একটি স্পেস ল্যান্ডার নিয়ে ইনডিওরেন্সের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কুপার ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান এবং অ্যামেলিয়াকে নিয়ে দ্রুত আরেকটা ল্যান্ডারে করে ইনডিওরেন্সে যাত্রা করেন। ইতোমধ্যে রোমিলি নিহত হন ম্যানের পেতে রাখা বিস্ফোরণে। ম্যান ইনডিওরেন্সে গিয়ে ল্যান্ড করার সময় একটি ব্যর্থ ডকিং অপরাশনের কারণে আরেকটি বিস্ফোরণে নিহত হন। বিস্ফোরণে ইনডিওরেন্সও মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কুপার শেষপর্যন্ত ইনডিওরেন্সের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পান। কিন্তু ততক্ষণে ইনডিওরেন্স গারগ্যাঞ্চুয়ার মহাকর্ষীয় প্রাবল্যের অনেক নিকটে চলে গেছে।

পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট লাইফ সাপোর্ট না থাকায় কুপার ও অ্যামেলিয়া গারগ্যাঞ্চুয়ার মহাকর্ষীয় প্রাবল্য ব্যবহার করে যতটা সম্ভব সেটার ইভেন্ট হরাইজোনের (event horizon) দিকে অগ্রসর হয়ে এডমান্ডস এর গ্রহে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তারা গারগ্যাঞ্চুয়ার অনেক কাছে চলে যাওয়ায় কাল দীর্ঘায়নের ফলে আরও ৫১ বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। সে হিসেবে কুপার তখন ১২০ বছরের যুবক!

অ্যামেলিয়া ও কেস যাতে এডমান্ডসের গ্রহে পৌঁছাতে পারে সেজন্য কুপার ও টারস ইনডিওরেন্সের ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে সেখান থেকে আলাদা করে নেয় এবং গারগ্যাঞ্চুয়ার ইভেন্ট হরাইজোনে পতিত হয়। কুপার ও টার্‌স নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। কুপার একসময় একটা প্রকান্ড টেসারেক্টে (Tesseract) নিজেকে আবিষ্কার করেন।

সেখানে কুপার মারফির বুকসেল্‌ফের ভেতর দিয়ে দশ বছরের মারফিকে দেখতে পান। অর্থাৎ তিনি অতীতে ফিরে এসেছেন। তিনি মারফির সাথে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন কারন কুপারের অবস্থান মারফি বুঝতে পারেনা আর তার কথাও মারফির কানে পৌঁছাচ্ছিল না। হঠাৎ টার্‌স কুপারের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সফল হয়। টার্‌সের মাধ্যমে কুপার বুঝতে পারেন ভবিষ্যৎ মানব সভ্যতা তাদের পাঁচ মাত্রার জগতের ভিতর এই তিনমাত্রার টেজারঅ্যাক্টটি নির্মাণ করেছে যাতে কুপার অতীতে ফিরে গিয়ে মারফির সাথে যোগাযোগ করতে পারে। কেননা প্রফেসর ব্র্যান্ডের গ্রাভিটির সমীকরণ সম্পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য তখন টার্‌সের কাছে। কারণ সে গারগ্যাঞ্চুয়ার ইভেন্ট হরাইজোনে গিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছে। কুপার প্রথমে নাসার জিওগ্রাফিক্যাল কো-অরডিনেট বাইনারীতে রূপান্তর করে ধূলির বিন্যাসের (dust pattern) মাধ্যমে মারফির বেডরুমের মেঝেতে পাঠান যার কথা প্রথমদিকে উল্লেখ করা হয়েছিল।

আসলে বাবা কুপারই ছিল মেয়ে মারফির ভূত (The Ghost) যে ভবিষ্যৎ থেকে মারফির সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। কুপার মনে করে বাবা মেয়ের ভালবাসার কারনেই এটা সম্ভব হয়েছে। কারন কুপার আর মারফির আত্নার টান কোয়ান্টিফিবল।

টেজারঅ্যাক্টের ভিতরে পতিত কুপার। Image Source: interstellarfilm.fandom.com
টেজারঅ্যাক্টের ভিতরে পতিত কুপার; Credit: Warner Bros

কুপার টার্‌সের নিকট থেকে পাওয়া ব্ল্যাক হোলের তথ্য মোর্স কোডে রূপান্তর করে মারফিকে দেওয়া হাতঘড়িটির সেকেন্ডের কাটার চলাচলের মধ্যদিয়ে তাকে পাঠান কারণ তাদের মধ্যে কোনো ভোকাল কমিউনিকেশন সম্ভব ছিল না।

মোর্স কোড (Morse Code)

এটি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত একধরনের পদ্ধতি যেখানে কোনো ভাষার বর্ণনাগুলোকে কোডে রূপান্তর করে একধনের ছন্দের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। কোড হিসেবে এক্ষেত্রে ডট (.) এবং ড্যাশ (-) ব্যবহৃত হয়।

মোর্স কোড, Image Source: WordPress.com
মোর্স কোড; jeromeglick.net

ক্লাইম্যাক্স

তরুণী মারফি মোর্স কোডগুলোকে ডিকোড করে প্ল্যান ‘এ’র জন্য প্রয়োজনীয় গ্রাভিটির সমীকরণটি পুরোপুরি সমাধান করে ফেলেন যার ফলে শনিকে প্রদক্ষিণরত মহাশূন্যের স্পেসস্টেশনে মানবজাতির স্থানান্তর সম্ভব হয়। মানুষ তখন চার মাত্রার স্পেস কোঅরডিনেটে উন্নীত হয়ে গেছে। টেসারেক্ট একসময় কলাপস করে, তবে মানুষের স্পেসরেঞ্জার কুপার ও টার্‌সকে খুঁজে পায়। কুপার তখন ১২৪ বছরের যুবক আর তার মেয়ে মারফি তখন বুড়ো হয়ে মৃত্যুশয্যায়। মারফি কুপারকে অ্যামেলিয়ার কাছে অর্থাৎ এডমান্ডস এর গ্রহে যেতে বলে। এডমান্ডস জীবিত নেই। সে প্রকান্ড এক পাথরের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে। অ্যামেলিয়া শুধু রোবট কেসকে নিয়ে ভয়ংকর রকম একা। যেখানে অ্যামেলিয়া পূর্বউল্লিখিত হিমায়িত ভ্রূণ দিয়ে কলোনী স্থাপন শুরু করেছে।

এডমান্ডসকে সমাহিত করছেন অ্যামেলিয়া। Image Source: Stack Exchange
এডমান্ডসকে সমাহিত করছেন অ্যামেলিয়া; Credit: Warner Bros

 

এডমান্ডসের গ্রহে কলোনী স্থাপন শুরু করেছেন অ্যামেলিয়া। Image Source: medium.com
এডমান্ডসের গ্রহে কলোনী স্থাপন শুরু করেছেন অ্যামেলিয়া; Credit: Warner Bros

আর ইতোমধ্যেই কুপার টার্‌সকে নিয়ে অ্যামেলিয়ার উদ্দেশ্যে মানবজাতির জন্য নতুন বাসযোগ্য গ্রহে যাত্রা শুরু করেছে। সিনেমাটিকে আরও বিস্তারিত ভাবে বুঝতে চাইলে পড়তে পারেন Kip Thorne এর লেখা ‘The Science of Interstellar’ বইটি পড়তে পারেন।

সায়েন্স-ফিকশন এবং আমাদের সাইকোলজি

“We used to look up in the sky and wonder our place in the stars. Now we just look down and worry about our place in the dirt.”

সিনেমাটিতে কুপারের একটি চমৎকার উক্তি। আসলেই আমরা যেন সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে আকাশ দেখা ভুলে গেছি। সেটার সময়ই বা কোথায়! ব্যস্ত জীবনের ধকল, একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অসম প্রতিযোগীতা, ঈর্ষা, অহংকার আমাদের উন্মত্ত করে তুলছে। মরিচীকার পেছনে ছুটে বেরিয়ে আমরা যে হৃদয়ের খোরাকটাই দিতে ভুলে যাচ্ছি। আমাদের জীবনে হয়ত সমৃদ্ধি আছে কিন্তু ভালবাসা ও শান্তি সেখানে নেই।

আপনার কি মনে হয় পৃথিবী নামক এই গ্রহটিতে আমরা খুব বেশিদিন টিকে থাকতে পারব? নিঃশ্বাসের বাতাসে ঢুকে পড়েছে বিষাক্ত পদার্থ, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে, ওজোন স্তর ক্ষয়ে যাচ্ছে, মাটি, পানির দূষণ বেড়ে চলেছে। পৃথিবী হয়ে উঠছে বসবাসের অনুপযোগী। মানব প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে হলে হয়ত খুব শীঘ্রই আমাদের মহাশূন্যে কলোনী স্থাপনের কথা ভাবতে হবে। Mankind was born on Earth, it was never meant to die here.

This Bangla article is a review of Interstellar (2014), directed by Christopher Nolan

Featured Image: Warner Bros

Related Articles