Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হ্যারি পটার নামা || পর্ব ১৩ || তুরুপের তাস নেভিল লংবটম

হাউজ গ্রিফিন্ডরের শিক্ষার্থী নেভিল লংবটমকে সবাই হাবাগোবা হিসেবেই চেনে। মুখে স্পষ্ট হওয়া খরগোশের মতো লম্বা দুই দাঁত, মাংস ভর্তি গালদ্বয় যেন তার মুখচোরা স্বভাবকে আরও প্রতীয়মান করে তুলেছে। প্রথমদিকে তাকে জড়বুদ্ধি, বেআক্কেল ও ভীতু গোছের মনে হলেও গল্প আগানোর সাথে সাথে সে ভুলের খোলস ক্রমশ ভাঙতে থাকে। দুর্ধর্ষ কালো জাদুকর লর্ড ভলডেমর্টের সর্বসঙ্গী ও অন্যতম হরক্রাক্স নাগিনীকে খুনের মাধ্যমে নেভিল নিজ হাউজ গ্রিফিন্ডরের মূলভাব সাহসিকতার উপাখ্যান মেলে ধরেছে। 

নেভিল লংবটম; Image Source: Warner Bros.

বিষম শৈশব

বই এবং মুভির প্রথমদিকে নেভিলকে দেখানো হয়েছে তুলনামূলক একজন কম দক্ষ জাদুকর হিসেবে। ছোটবেলা থেকেই নেভিল মাঝেমধ্যে ছোটখাটো জাদুর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে থাকে, যেগুলো পরিবারের কারও দৃষ্টিগোচর হয়নি। ওদিকে শিশুকালে তার পরিবার তাকে একজন স্কুইব (জাদুকর পরিবারে জন্ম নিয়েও যার জাদু ক্ষমতা নেই) হিসেবেই ধরে নিয়েছিল। নেভিল ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে, কিন্তু সেরকম আহামরি কোনো জাদু ক্ষমতা প্রকাশ না পাওয়ায় নেভিল নিজেও হতাশায় ডুবে যেতে থাকে।

কিন্তু এই জিনিসকে মোটেও বিশ্বাস করতেন না নেভিলের দাদার ভাই অ্যালগি লংবটম। নেভিলের ভেতর থেকে জাদুকর ক্ষমতা বের করে আনার জন্য তিনি নানারকম চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। নেভিলকে একবার ব্ল্যাক পুলে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিলেন। সেখানে মরতে মরতে বেঁচে যায় নেভিল। কিন্তু তাও তার মধ্যে কোনো জাদুকরী ক্ষমতা প্রকট হয়নি। তবে নেভিলের দাদা একবার নেভিলকে জানালা থেকে ফেলে দেয়ার পর আবার জানালার কাছে বাউন্স খেয়ে ফিরে এসেছিল। তখনই পরিবারের সবাই বুঝতে পারে, নেভিল স্কুইব নয়। তার ভেতরেও জাদুকরী ক্ষমতা বিদ্যমান।

শিল্পীর তুলিতে অ্যালিস লংবটম, ফ্র্যাংক লংবটম, এবং তাদের সন্তান নেভিল লংবটম; Image Source: Harry Potter Fandom

জাদু জগতের প্রথম মহাযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে, নেভিল লংবটম সবেমাত্র একটা শিশু। তখন বেল্লাট্রিক্স লেস্ট্র্যাঞ্জ, তার স্বামী, এবং বার্টি ক্রাউচ জুনিয়র মিলে নেভিল লংবটমের মাতা-পিতা অ্যালিস লংবটম ও ফ্র্যাঙ্ক লংবটমের উপর অমানবিক জুলুম চালায়। নির্যাতনের একপর্যায়ে তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে তাদেরকে সেন্ট মাঙ্গোস হাসপাতালে পাঠানো হয়।

শৈশবেই পিতা-মাতাকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ নেভিলকে বাধ্য হয়েই তার দাদীর সাথে থাকতে হয়। দাদী অগাস্টা লংবটম অভিভাবক হিসেবে ততটা যত্নশীল না হওয়ায় এতিম লংবটম আরও দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে থাকে। বাল্যকালে সে মাতৃ আদর থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হয়। এমনকি হগওয়ার্টসে ভর্তি হবার পর সহপাঠী এবং বড় ভাই-বোনদের টিটকারি-মশকরা থেকেও সে রেহায় পায়নি। সেজন্য সবসময়ই সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলত, “সবসময় বলির পাঠা আমাকেই হতে হয় কেন?”

সর্বদা বলির পাঁঠা হওয়া নেভিল; Image Source: Warner Bros.

ছড়ির বিড়ম্বনা

হ্যারি পটার ফিল্ম ফ্র্যাঞ্চাইজি দেখা দর্শকেরা হয়তো ভাবতে পারে, নেভিল লংবটম জাদুবিদ্যায় তেমন পারদর্শী নয়। স্পেল কাস্টিং এবং পোশন তৈরিতে নেভিল দুর্বল ধাঁচের, আর হার্বোলজি ছাড়া কোনোকিছুতেই তার তেমন দক্ষতা ছিল না। জাদু ছড়ি হাতে নেভিল যেন এক অপরিপক্ব ভীতুর ডিম। কিন্তু এর পেছনে যথার্থ কারণও বিদ্যমান। নেভিল আসলে তার পিতার পুরনো ছড়ি ব্যবহার করত। জাদু জগতের নিয়ম হলো, ছড়ি তার মালিককে নিজে বেছে নিবে। কিন্তু পিতার ছড়ি যে ছেলের হাতে পুরোপুরি পোষ মানবে, জাদু জগতে এমন ধরাবাঁধা নিয়মের উল্লেখ নেই। সেজন্যই বাবার ছড়ি হাতে নেভিল নিজের জাদু-মেধার তেমন প্রস্ফুটন ঘটাতে পারেনি।

ব্যাটেল অভ দ্য ডিপার্টমেন্ট অভ মিস্ট্রিতে ডেথ ইটার ডলোহভ ভেঙে দেয় নেভিলের হাতে থাকা পিতার ছড়ি। ষষ্ঠ বছরে উঠার আগে অলিভেন্ডারের দোকান থেকে ছড়ি ক্রয় করে নেয় নেভিল। তার দ্বিতীয় ছড়িটি ছিল তেরো ইঞ্চি লম্বা, চেরি ও ইউনিকর্নের চুল দিয়ে তৈরি। ধারণা করা হয় অলিভেন্ডারের সর্বশেষ বিক্রিত ছড়ি ছিল এটিই, এরপর তিনি আর কোনো ছড়ি বেচতে পারেননি। ডাম্বলডোর’স আর্মির মাধ্যমে নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা সুপ্ত জাদু প্রতিভাকে শান দিয়ে পর্যায়ক্রমে ধারালো করতে থাকে সে। এরপরই শুরু হয় নেভিলের জাদুকরী মুনশিয়ানা। প্রথমদিকে যে নেভিল একটা প্যাট্রোনাসই তৈরি করতে পারতো না, সে নেভিলের কাছেই পরবর্তীতে পরাজিত হয় গোটাকতক ডেথ ইটার।

ডাম্বলডোর’স আর্মিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে নেভিল; Image Source: Warner Bros.

জীবন্ত মাতা-পিতা

কষ্টসহিষ্ণু নেভিলের পিতা-মাতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্স’ বইয়ের কোনায় জায়গা করে নিয়েছে। তবে এটা খুব বড় পরিসরে বিশ্লেষণাত্মক নয়। সিনেমা দেখে মনে হতে পারে বেলাট্রিক্স লেস্ট্র্যাঞ্জের অমানবিক অত্যাচারে হয়তো প্রাণ খুইয়েছেন নেভিলের পিতামাতা। কিন্তু আদতে জাদু জগতে এখনো বেঁচে আছেন নেভিলের মা-বাবা দুজনই। এমনকি হ্যারি, রন, এবং হারমায়োনিও হগওয়ার্টস পদার্পণের প্রথম চার বছরেও বিষয়টা টের পায়নি।

ডেথ ইটাররা অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে অ্যালিস লংবটম ও ফ্র্যাংক লংবটমের উপর; Image Source: Hp Lexicon

পঞ্চম বর্ষে উঠার পর বিখ্যাত ওই ত্রয়ী রনের অসুস্থ বাবা আর্থার উইজলিকে দেখার জন্য সেন্ট মাঙ্গো’স হাসপাতালে হাজির হয়। অকস্মাৎ তাদের দেখা হয়ে যায় নেভিলের সঙ্গে, যে কিনা জ্যানাস থিকি ওয়ার্ডে তার মা-বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিল। নেভিলের পিতা-মাতাকে দেখে যারপরনাই বিস্মিত হয় হ্যারি, রন, এবং হারমায়োনি। কিন্তু নেভিল তখন লজ্জায় মুখ লুকালেও পরবর্তীতে সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এই হৃদয়ভেদী মুহূর্তটা ক্যামেরায় ধারণা করা হলেও, মুভির রানটাইম কমানোর জন্য সম্পাদনার কাঁচিতে আটকা পড়ে যায় দৃশ্যটি। এত সুন্দর একটা দৃশ্যকে কেন সিনেমায় স্থান দেয়া হয়নি, তা নিয়ে নেভিল লংবটম চরিত্রে অভিনয় করা ম্যাথিউ লুইসের মনে ক্ষোভও ছিল।

এ ব্যাপারে হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে. কে. রোলিং বলেছেন,

কিছু মানুষ চায় আমি এমনভাবে কাহিনী সাজাই যাতে নেভিলের মা-বাবা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেন। তারা কেন সেটা চান, আমি তাও জানি। কিন্তু হ্যারির সাথে তো নেভিলের চেয়েও খারাপ কিছু ঘটেছে। নেভিল তার মা-বাবার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারছে, হ্যারির কপালে তো সেই সৌভাগ্যটুকুও জুটেনি। কালো যাদু খুবই শক্তিশালী, এর থেকে রেহাই পাওয়া এত সহজ নয়। নেভিলের মা-বাবার এই ক্ষতিটা অপূরণীয়।

সেন্ট মাঙ্গো’স হাসপাতালে হ্যারি, রন, এবং হারমায়োনি; Image Source: Harry Potter Fandom.

নেভিল এবং ইয়ুল বল

প্রথমবারের মতো হগওয়ার্টস এক্সপ্রেসে চড়ার পরই হারমায়োনি এবং নেভিলের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দুজনই হাউজ গ্রিফিন্ডরের জন্য নির্বাচিত হওয়ায় সেই সম্পর্কের ভিত আরও মজবুত এবং পাকাপোক্ত হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে অপরূপা হারমায়োনি নেভিল লংবটমের ক্রাশে পরিণত হয়। সেজন্য নেভিল হারমায়োনিকে তার সাথে ইয়ুল বলে যাবার প্রস্তাবও দিয়ে বসে। কিন্তু ভিক্টর ক্রামের সাথে জুটি বেঁধে ফেলায়, হারমায়োনিকে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিতে হয়। মজার ব্যাপার হলো, বাস্তবে জীবনেও এমা ওয়াটসন ম্যাথিউ লুইসের ক্রাশ ছিল।

নেভিল ও হারমায়োনি; Image Source: Warner Bros.

লাগাতার নিপীড়ন

নিপীড়ন আর নেভিল লংবটম যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। সাত বছরের হগওয়ার্টস জার্নিতে তাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। সর্বপ্রথম আমরা নেভিলকে নিপীড়নের শিকার হতে দেখি প্রথম বই ফিলোসফারস স্টোনে। হ্যারি, রন, এবং হারমায়োনিকে রাতে বের হতে বাধা দেবার সময় হারমায়োনি তাকে বডি-বাইন্ডিং স্পেল পেট্রিফিকাস টোটালাস দিয়ে তার শরীর মূর্তির মতো অবশ করে ফেলে। তবে তাকে বিভিন্ন সময় সবচেয়ে বেশি জ্বালাতন করেছে ড্র্যাকো ম্যালফয় ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।

ব্যাটেল অভ দ্য ডিপার্টমেন্ট অভ মিস্ট্রির সময় ডেথ ইটার ডলোহভ শুধু নেভিলে জাদুর ছড়িই ভাঙেনি, মচকে দিয়েছিল তার নাকও। সপ্তম বর্ষে উঠার পর হগওয়ার্টস ডেথ ইটারদের অধীনে চলে গেলে সেখানে বিভিন্ন বঞ্চনা মুখ বুজে সহ্য করে যেতে হয়েছে তাকে। সেজন্যই হয়তো শেষের দিকে প্রচণ্ড ক্রোধ দিয়ে ভলডেমর্টের হরক্রাক্স নাগিনীকে এক কোপে দুই টুকরা করেছে সে।

পেট্রিফিকাস টোটালাস দিয়ে নেভিলের শরীর মূর্তির মতো অবশ করে ফেলেছে হারমায়োনি; Image Source: Warner Bros.

ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসের পর

পুরো সিরিজে বোকা হিসেবে পরিচিত নেভিল লংবটম হগওয়ার্টস যুদ্ধে নাগিনীকে গ্রিফিন্ডরের তলোয়ারের মাধ্যমে খুন করার পর নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করে দিয়েছে পুরোপুরি। বিধ্বস্ত অবস্থায়ও শক্তিশালী ভলডেমর্টের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি দেখিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ একটা হরক্রাক্স ধ্বংসের মাধ্যমে ভলডেমর্ট বধে নেভিল লংবটমের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হগওয়ার্টস যুদ্ধের পর নেভিল কিছুদিন অরোর হিসেবে কাজ করেছিল। সিনেমা ও বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, হার্বোলজিতে ছিল লংবটমের বিশেষ দখল। তাই সেটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে প্রফেসর স্প্রাউটের অধীনে হগওয়ার্টসের হার্বোলজি বিভাগে যোগ দেয় সে। কিছুদিন পর সহপাঠী হাউজ হাফলপাফের হ্যানা অ্যাবটের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় নেভিল। এই দম্পতির ঘরে কোনো সন্তান জন্ম নেয়নি।

হ্যানা অ্যাবটের সাথে বিবাহ বন্ধে আবদ্ধ হয়েছিল নেভিল লংবটম। Image Source: Warner Bros.

অগাস্টা লংবটমের সাহসিকতা

অন্তিম যুদ্ধের জন্য হ্যারি, রন, এবং হারমায়োনি হগওয়ার্টসে ফিরে আসলে নেভিল তাদের অনুপস্থিতিতে ঘটা সকল কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণ করে দেয়। ডাম্বলডোর’স আর্মিকে পুনরায় সংঘবদ্ধ করার পর যে সে ভলডেমর্টের বিরুদ্ধে দেয়াল উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, ওই কাহিনী এতে উল্লেখ ছিল। তবে সিনেমায় এটুকু দেখানো হলেও, একটু কাহিনী ফাঁক গলে বেরিয়ে গেছে। সেটা হলো, ডেথ ইটাররা জেদের বশে নেভিলকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ডেথ ইটাররা রুম অভ রিকোয়ারমেন্ট (যেখানে ডাম্বলডোর’স আর্মিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো) থেকে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়। তাকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও সন্ধান পায় না লর্ড ভলডেমর্টের অনুসারীরা। তারা ভেবেছিল কান টানলে মাথা আসবে। সেজন্য তারা নেভিলের দাদীকে পাকরাও করে বসে, নেভিলের খবর পাওয়া যাবে এই আশায়। কিন্তু অগাস্টা লাগে লংবটম অত্যন্ত সাহসী এবং বুদ্ধিমতী জাদুকর হওয়ায়, তাদেরকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।

শিল্পীর তুলিতে নেভিল লংবটম ও তার দাদী অগাস্টা লংবটম; Image Source: Harry Potter Fandom

সর্টিং হ্যাটে আগুন

হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোস বইয়ের ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসের একদম শেষ দিকে লর্ড ভলডেমর্ট নিরস্ত্র ও আহত নেভিল লংবটমকে উল্লেখ করে বলে,

“তুমি তো একজন পিউর ব্লাড, তাই না সাহসী ছেলে? তুমি দারুণ বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছ। তুমি একজন ডেথ ইটার হবার যোগ্য। তোমার মতো সাহসের ভাণ্ডারই আমার দলে প্রয়োজন।”

কিন্তু নেভিল ভলডেমর্টের প্রস্তাব সকলের সামনে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। তখন ছড়ি উঁচিয়ে ভলডেমর্ট দুর্গ থেকে সর্টিং হ্যাটকে নিয়ে এসে নিজ হাতে ধরল। তারপর বলল,

“হগওয়ার্টসে কোনো সর্টিং হ্যাট থাকবে না, থাকবে না আলাদা কোনো হাউজ। সকলের জন্য আমার মহান পূর্বপুরুষ সালাজার স্লিদারিনই যথেষ্ট। তার মহিমায় উজ্জ্বল হবে হগওয়ার্টসের আঙিনা।”

এই বলে সে নেভিলের মাথায় হ্যাটটি চাপিয়ে দিল জাদু ছড়ির মাধ্যমে। ছড়ির ইশারাতে সর্টিং হ্যাটটিতে আগুনের মতো ধোয়া বের হতে লাগল। ধোয়ায় তলিয়ে যেতে লাগল নেভিল। এমন সময় হ্যাগ্রিডের ভাই গ্রোপ দূর থেকে গর্জন করে এসে এই সভা ভণ্ডুল করে দিল। আবারও যুদ্ধ বেধে গেল। সেই সুযোগে নেভিল হ্যাটটি তার মাথা থেকে নামিয়ে সেটা থেকে গ্রিফিন্ডরের তলোয়ার বের করে ফেলল। যেটা দিয়ে সে পরবর্তীতে নাগিনী বধ করেছে।

গ্রিফিন্ডরের তলোয়ার দিয়ে নাগিনী বধ করেছে নেভিল; Image Source: Warner Bros.

দ্য চোজেন ওয়ান

ভাবতেই অবাক লাগে, ‘দ্য চোজেন ওয়ান’ এর মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটা টপিককে হ্যারি পটার ফিল্ম ফ্র্যাঞ্চাইজিতে স্থান দেয়া হয়নি। জাদু জগতের প্রথম মহাযুদ্ধের পর প্রফেসর সিবিল ট্রিলনি ডাম্বলডোরের কাছে ডার্ক লর্ডের পতন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে বসে, এবং তা শুনে ফেলে ডেথ ইটারের সক্রিয় সদস্য সেভেরাস স্নেইপ। এই ভবিষ্যদ্বাণী মূলত নেভিল লংবটম কিংবা হ্যারি পটারের উপর বর্তায়। লংবটম ও হ্যারি দুজনের মা-বাবাই অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সে সদস্য, উভয়ের পিতা-মাতাই তিনবার ডার্ক লর্ডের সামনাসামনি হয়েছিল, এবং দুজনেই জন্মেছিল বছরের সপ্তম মাস জুলাইয়ের শেষের দিকে।

কিন্তু একটা কারণে ভলডেমর্ট হ্যারিকেই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়। কারণ হ্যারি ও ভলডেমর্ট, দুজনেই ছিল হাফ-ব্লাড। অপরদিকে নেভিল লংবটম ছিল পিউর-ব্লাড পরিবারে জন্মগ্রহণ করা একজন উইজার্ড, এবং জাদু জগতে তাদের রক্ত বিশুদ্ধতার খুবই নাম-ডাক রয়েছে। হ্যারির বদলে ভলডেমর্ট নেভিলকে বেছে নিলেই পুরো কাহিনী অন্য রকম হয়ে যেত।

হ্যারি এবং নেভিল, দুজনের মধ্যেই অনেক মিল রয়েছে; Image Source: Warner Bros.

গডফাদার নেভিল!

হগওয়ার্টস ছেড়ে যাওয়ার পরেও নেভিল তার সহপাঠীদের সাথে প্রাণবন্ত যোগাযোগ রেখেছিল। হ্যারি এবং জিনির দ্বিতীয় পুত্র অ্যালবাস সেভেরাস পটারের গডফাদার ছিল এই নেভিল লংবটম। এই জিনিসটা প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১৪ সালে Pottermore এর এক আর্টিকেলে। ওই আর্টিকেলের লেখক ছিল রিটা স্কিটার। মূলত কুইডিচ বিশ্বকাপের ব্রাজিল আর বুলগেরিয়ার মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচ দেখার জন্য পুনর্মিলন হয়েছিল ডাম্বলডোর’স আর্মিদের। সেই ধারা ধরে লেখা আর্টিকেলে নেভিলের গডফাদার হবার তথ্যটা উঠে এসেছিল।

হ্যারি ও জিনির সাথে অ্যালবাস সেভেরাস পটার; Image Source: Warner Bros.

হাফলপাফের লংবটম

সর্টিং হ্যাট মাথায় পরার সময় নেভিল হ্যাটকে বারবার অনুরোধ করছিল তাকে হাউজ হাফলপাফে রাখার জন্য। কারণ, তার মনের কোনায় ভয় জমে ছিল যে, সে হয়তো তার বাবা-মায়ের মতো এত সাহসী হতে পারবে না। এ ছাড়াও তার সন্দেহ ছিল, সে হয়তো গ্রিফিন্ডরের মান-ইজ্জত ডুবাবে। নেভিল আর হ্যাটের মধ্যে চলতে লাগলো হাউজ নিয়ে নিশ্চুপ দ্বন্দ্ব, পেরিয়ে গেল সাড়ে চার মিনিটের বেশি। এরপরেই হ্যাট উচ্চস্বরে গ্রিফিন্ডরের নাম উচ্চারণ করে।

হ্যাট আর কিছুক্ষণ সময় নিলেই নেভিল আরও একটা কারণে হগওয়ার্টসের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে থাকতে পারতো। হাউজ নির্বাচনে সর্টিং হ্যাট পাঁচ মিনিটের বেশি সময় নিলে সেই ঘটনাকে ‘হ্যাটস্টল’ বলে উল্লেখ করা হয়। কারণ, শিক্ষার্থীর চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতা বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট হাউজের জন্য নির্বাচন করাটা সর্টিং হ্যাটের জন্য অনেকসময় কঠিন হয়ে পড়ে। হগওয়ার্টসের জানা ইতিহাসে হ্যাটস্টলের ঘটনা ঘটেছে মোট দুইবার। এর মধ্যে প্রথমটি মিনারভা ম্যাকগোনাগলের। তাকে হ্যাট প্রায় দিয়ে ফেলেছিল হাউজ র‍্যাভেনক্ল’তে। আর দ্বিতীয়জন হলো বিশ্বাসঘাতক পিটার পেটিগ্রিউ। তাকে হাউজ প্রায় নির্বাচন করে ফেলেছিল হাউজ স্লিদারিনের জন্য। অবশ্য পিটার পেটিগ্রিউ স্লিদারিনের বাসিন্দা হলে এতসব কাহিনী ঘটার সম্ভাবনা ছিল খুব কম।

সর্টিং হ্যাট মাথায় নেভিল; Image Source: Warner Bros.

ঘৃণার পাত্র নেভিল

কিছু ফ্যান থিওরি অনুসারে, স্নেইপ নেভিলের উপর ঘৃণা পোষণ করতো। কারণ, সিবিল ট্রিলনির ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ‘দ্য চোজেন ওয়ান’ হবার কথা ছিল হ্যারি পটার অথবা নেভিল লংবটমের। লর্ড ভলডেমর্ট যদি হ্যারির বদলে নেভিলকে বেছে নিত, তবে সেভেরাস স্নেইপকে জীবনের অন্যতম সেরা ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হতে হতো না। বেঁচে থাকত লিলি পটার। যার ফলে জীবিত লিলিকে দেখে, তার প্রতি পুষে রাখা অব্যক্ত ভালোবাসাটা দিয়েও স্নেইপ কিছুটা স্বস্তি পেত।

অর্ডার অব দ্য ফিনিক্সের দলগত ছবিতে অ্যালিস লংবটম এবং ফ্র্যাংক লংবটম; Image Source: Warner Bros.

নেভিলের বোগার্ট

হগওয়ার্টসে বোগার্ট নামে একপ্রকার আকৃতি পরিবর্তনকারী ভূত আছে, যাকে শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত করানো হয় ‘ডিফেন্স অ্যাগেইনস্ট ডার্ক আর্টস’ কোর্সে। যে জিনিসে মানুষের অধিক ভয়, বোগার্ট সে ভয়কে পুঁজি করেই তার সামনে সে জিনিসের রূপ ধারণ করবে। হ্যারির বোগার্ট পাজি ডিমেন্টর, রনের বোগার্ট বৃহদাকৃতির মাকড়সা থাকলেও ভীতু স্বভাবের নেভিল লংবটমের সবচেয়ে বেশি ভয় ছিল সেভেরাস স্নেইপকে কেন্দ্র করে। সিনেমায় অবশ্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তা অনেকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। প্রফেসর রেমাস লুপিনের ‘ডিফেন্স অ্যাগেইনস্ট ডার্ক আর্টস’ কোর্সে তা একবার উঠে এসেছে।

‘ডিফেন্স অ্যাগেইনস্ট ডার্ক আর্টস’ কোর্সে রেমাস লুপিনের সাথে নেভিল; Image Source: Warner Bros.

পিউর-ব্লাড ফ্যামিলি

আমাদের জানা ইতিহাসে, ব্রিটিশ জাদু সমাজে বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী জাদুকর পরিবার ছিল সর্বমোট ২৮টি। সেজন্য এই টার্মটাকে অভিহিত করা হতো ‘স্যাক্রেড টুয়েন্টি-এইট’  হিসেবে। পিউর-ব্লাড উইজার্ডিং পরিবারের মধ্যে অ্যাবট, ব্ল্যাক, ক্রাউচ, ফ্লিন্ট, গন্ট, লেস্ট্র্যাঞ্জ, লংবটম, অলিভেন্ডার, ম্যালফয় পরিবারগুলো অন্যতম। পিউর-ব্লাড হিসেবে লংবটম পরিবারেরও বেশ ডাকনাম আছে ব্রিটিশ জাদু সমাজে। এই পরিবার অবশ্য আত্মীয় সূত্রে অ্যাবট পরিবার, ব্ল্যাক পরিবার, ইয়াক্সলি পরিবার, উইজলি পরিবার, ক্রাউচ পরিবার, পটার পরিবারের সাথে আবদ্ধ।

নেভিলকে হগওয়ার্টস এক্সপ্রেসে তুলে দিতে এসেছে তার দাদী অগাস্টা লংবটম; Image Source: Warner Bros.

তাদের পরিবারের বিখ্যাত ও পরিচিত কয়েকজন জাদুকর হলো হ্যারফ্যাং লংবটম (ক্যালিডোরা ব্ল্যাকের স্বামী), ক্যালিডোরা লংবটম (হ্যারফ্যাং লংবটমের স্ত্রী/সেড্রেলা উইজলি এবং শেরিচ ক্রাউচের বোন), অ্যালগি লংবটম (মি. লংবটমের ভাই/ফ্র্যাঙ্ক লংবটমের চাচা), এনিড লংবটম (এলগি লংবটমের স্ত্রী/ফ্র্যাঙ্ক লংবটমের চাচী), মি. লংবটম (অ্যালগি লংবটমের ভাই/ফ্র্যাঙ্ক লংবটমের বাবা), অগাস্টা লংবটম (মি. লংবটমের স্ত্রী/ফ্র্যাঙ্ক লংবটমের মা/নেভিলের দাদী), ফ্র্যাঙ্ক লংবটম (অ্যালিস লংবটমের স্বামী/নেভিল লংবটমের বাবা), অ্যালিস লংবটম (ফ্র্যাঙ্ক লংবটমের স্ত্রী/নেভিল লংবটমের মা), হ্যানা অ্যাবট (লেভিল লংবটমের স্ত্রী)।

Featured Image: WB

Information Sources

1. https://screenrant.com/neville-longbottom-facts-films-leaves-harry-potter/

2. https://screenrant.com/neville-longbottom-harry-potter-trivia-facts-surprising/

3. https://www.factinate.com/people/24-underdog-facts-neville-longbottom/

4. https://www.wizardingworld.com/features/eight-reasons-why-we-love-neville-longbottom

5. https://www.wizardingworld.com/features/6-reasons-neville-longbottom-was-just-as-brave-as-harry-potter

6. https://www.thethings.com/harry-potter-things-wrong-with-neville-longbottom/

7. https://www.hp-lexicon.org/character/longbottom-family/neville-longbottom/

Related Articles