Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শ্রেষ্ঠ পরিচালকের অস্কার জেতেননি যে পাঁচ বিখ্যাত পরিচালক

২০০৭ সালে ‘দ্য ডিপার্টেড’ মুভির জন্য যখন মার্টিন স্করসেসি অস্কার জেতেন তখন মঞ্চে এসে স্করসেসির প্রথম কথাটি ছিলো ‘Could you double-check the envelope?’ এর আগে এই ক্যাটাগরিতে পাঁচবার নমিনেশন পেয়েও যাকে অস্কারের মঞ্চ থেকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে, তার মুখে বিস্ময়ের সাথে এই কথা মানানসইও বটে।

১৯৭৬ এ প্রথম মুভি ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ এর জন্য নমিনেশনের পর  ২০০৭ এ এসে অবশেষে সেরা পরিচালকের পুরষ্কারটি বগলদাবা করতে সমর্থ্য হন এই গুণী পরিচালক। তবে স্করসেসির মতো অনেক নামী পরিচালকেরও এই পুরষ্কার জেতার ক্ষেত্রে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। চলুন দেখে আসা যাক এমন পাঁচ সমাদৃত পরিচালককে যারা বারবার নমিনেশন পেয়েও কখনো সেরা পরিচালকের অস্কার জিততে পারেননি।

হলিউডের কতিপয় স্বনামধন্য পরিচালক; Source: Justiceavenger

আলফ্রেড হিচকক

অস্কারের আরাধ্য সোনালি মূর্তিটি সত্যিকার অর্থেই রহস্যজনক। এক্ষেত্রে হয়তো অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের সাথে ভাগ্যেরও সহায়তা প্রয়োজন। তা না হলে পাঁচবারের নমিনেশনে একবারও কেন অস্কার জিততে পারেননি সর্বকালের অন্যতম সেরা পরিচালক আলফ্রেড হিচকক? সাইকো, দ্য বার্ড, ভার্টিগো, রেয়ার উইন্ডোর মতো ক্লাসিক সব মুভি বানানোর কৃতিত্ব রয়েছে তার ঝুলিতে। যার ক্যারিশমাটিক পরিচালনায় মুগ্ধ হয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন স্পিলবার্গ, ইনারিতুর মত অস্কারজয়ী মুভি ডিরেক্টরেরা।

বেশিরভাগ সিনেমাবোদ্ধার মতে, তিনিই হলেন সর্বকালের সেরা পরিচালক। হিচককের কল্যাণে ৫০’ এর দশকে আমেরিকানদের মধ্যে টিভির জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যায়। ওই এক দশকেই আমেরিকায় টিভি ব্যাবহারকারীর সংখ্যা ৪ মিলিয়ন থেকে ৪৮ মিলিয়নে দাঁড়ায়। কিন্তু বিস্ময়কর ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এই গুণী নির্মাতা একটি সেরা পরিচালকের অস্কারও বাগাতে পারেননি পুরো মুভি ক্যারিয়ারে।

ছয় দশক ধরে পরিচালনা করেছেন ৫৩টি মুভি। ১৯৪০ সালে ‘রেবেকা’ মুভির জন্য প্রথম নমিনেশন পান হিচকক। মুভিটি ‘বেস্ট পিকচার’ পুরষ্কার জিতলেও হিচকক ফেরেন খালি হাতে। এরপর একে একে নমিনেশন পান ‘লাইফবোট’, ‘স্পেলবাউন্ড’, ‘রিয়ার উইন্ডো’, ‘সাইকো’ মুভিগুলোর জন্য। কিন্তু প্রতিবারই কারো না কারো কাছে আশ্চর্যজনকভাবে সেরা পরিচালকের পুরষ্কারটি খুঁইয়েছেন। তবে চলচ্চিত্রে তার অসামান্য অবদানের জন্য একাডেমি কতৃপক্ষ ১৯৬৮ সালে বিশেষ পুরষ্কার দিয়ে সম্মাননা দেন এই নির্মাতাকে। মুভি পরিচালনার জন্য ২৭টি পুরষ্কার  জিতেছেন এই স্বনামধন্য ইংলিশ পরিচালক।

সাইকো মুভির সেটে আলফ্রেড হিচকক; Source: Getty Image

স্ট্যানলি কুব্রিক

ডার্ক হিউমার আর ইউনিক ডিরেকশনের জন্য দারুনভাবে সমাদৃত ছিলেন স্ট্যানলি কুব্রিক। তার অনন্য পরিচালনা সত্যজিত রায়কে এতটাই টেনেছিলো যে ‘পথের পাঁচালি’ সিনেমা পরিচালনার আগে কুব্রিকের মুভিগুলো তিনি কয়েকবার দেখেছিলেন।

কুব্রিকের সিনেমাটোগ্রাফি ছিলো প্রখর। মানুষ চাঁদে পা রাখার এক বছর আগেই দূর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফিতে চাঁদে যাওয়া নিয়ে ‘২০০১: আ স্পেস অডিসি’ মুভিটি নির্মাণ করেন কুব্রিক। মুভিটির জন্য বেস্ট ডিরেক্টর ক্যাটাগরিতে নমিনেশনও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অস্কারটি বাগাতে পারেননি সেবার।

স্ট্যানলি কুব্রিকের সিনেমা আসক্তি ছিলো অন্য পর্যায়ের। ‘দ্য শাইনিং’ মুভির একটি সিন ওকে করার জন্য ১২৭ বার পর্যন্ত শট নেন তিনি, যা গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে নিয়েছে। ‘২০০১: আ স্পেস অডিসি’ ছাড়াও আরো তিনটি মুভির জন্য একই ক্যাটাগরিতে নমিনেশন পান কুব্রিক। ‘স্ট্রেঞ্জ লাভ’, ‘আ ক্লকওয়ার্ক ওরেঞ্জ’, ‘ব্যারি লিন্ডল’ এই তিনটি মুভিও অস্কারের মঞ্চ থেকে খালি হাতে ফিরিয়েছিলো এই স্বনামধন্য নির্মাতাকে। তার একমাত্র অস্কারটি এসেছে ‘২০০১: আ স্পেস অডিসি’ মুভির ভিজুয়াল ইফেক্টের জন্য। যদিও অস্কারটি পেয়েছেন ভিজুয়াল ইফেক্টে কাজ করা ডগলাস ট্রাম্বল। পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, এটা খুবই দুখঃজনক যে স্ট্যানলি কুব্রিকের একমাত্র অস্কার ভিজুয়াল ইফেক্টের জন্য। কিন্তু ভিজুয়াল ইফেক্ট তার শক্তিমত্তা নয়, তার প্রকৃত ট্যালেন্ট হচ্ছে তার লেখনি আর পরিচালনায়।

মুভি পরিচালনার জন্য স্ট্যানলি কুব্রিকের শোকেসে জমা হয়েছে ৩৮টি পুরষ্কার। ক্যারিয়ারে ১৩টি সিনেমা পরিচালনার পাশাপাশি ৩টি শর্টফিল্মও পরিচালনা করেন এই আমেরিকান সিনেমা পরিচালক।

স্ট্যানলি কুব্রিক; Source: Taste of Cinema          

সিডনি লুমেট

নিজের প্রথম মুভি দিয়েই বাজিমাত করেছিলেন সিডনি লুমেট। ১২ জন মানুষ আর একটি রুম ; এই নিয়েই পরিচালনা করেন ক্লাসিক মুভি ’টুয়েলভ এংরি ম্যান’। প্রথম মুভির জন্যই পেয়েছিলেন অস্কার নমিনেশন। এরপরে নমিনেশন পেয়েছিলেন ‘ডগ ডে আফটারনুন’, ‘ নেটওয়ার্ক’, ‘দ্য ভারডিক্ট’ মুভির জন্যও।

বলা বাহুল্য, জিততে পারেননি একটিও। ‘টুয়েলভ এংরি ম্যান’ অস্কারের লড়াইয়ে হেরেছিলো ডেভিড লিনের ‘দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই’ এর কাছে। সিডনি লুমেট অভিনেতা-অভিনেত্রীদের থেকে সেরাটা বের করে আনায় পারদর্শী ছিলেন। সেরা পরিচালক বাদেও ‘প্রিন্স অফ দ্য সিটি’ মুভির স্ক্রিপ্ট লেখার জন্যও অস্কারের নমিনেশন পেয়েছিলেন এই আমেরিকান পরিচালক। দুর্ভাগ্যক্রমে সেটিও বগলদাবা করতে পারেননি তিনি।

লুমেট তার ক্যারিয়ারে প্রায় ৫০ এর উপর মুভির সাথে জড়িত ছিলেন। ২০০৫ সালে একাডেমি কর্তৃপক্ষ সিডনি লুমেটকে বিশেষ অস্কার দিয়ে সম্মাননা দেয়। গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা, এমিসহ বড় বড় সব পুরষ্কার জিতলেও সত্যিকার অর্থে অস্কার ঘরে তুলতে পারেননি এই বিখ্যাত পরিচালক। ২০০৯ সালে ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ফিল্ম ক্যারিয়ারে অস্কার না পাওয়ায় তিনি একাডেমি কর্তৃপক্ষের উপর অনেকটা বিরক্ত।

ক্যামেরার পেছনে সিডনি লুমেট; Source: Pinterest

ডেভিড ফিঞ্চার

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কয়েকজন পরিচালকের মধ্যে ডেভিড ফিঞ্চার অন্যতম। প্লট টুইস্ট কিংবা মুভিতে টানটান উত্তেজনা ধরে রাখার ক্ষেত্রে এই প্রতিভাবান পরিচালক প্রশংসার দাবিদার। ১৯৯২ সালে ‘এলিয়েন থ্রি’ মুভি দিয়ে পরিচালনার জগতে প্রবেশ করেন তিনি। প্রথম ছবিটি আশানুরূপ না হওয়ায় প্রথমে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন এই আমেরিকান পরিচালক। শেষ সুযোগ হিসেবে ‘সেভেন’ মুভিটি পরিচালনার জন্য বেছে নেন তিনি। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি।সিনেমাপ্রেমীদের একের পর এক উপহার দিয়েছেন ‘ফাইট ক্লাব’, ‘দ্য গেম’, ‘জোডিয়াক’, ‘কিউরিয়াস কেইস অফ বেঞ্জামিন বাটন’, ‘গন গার্ল’, ‘দ্য সোশাল নেটওয়ার্ক’ এর মত দুর্দান্ত সব মুভি। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ‘কিউরিয়াস কেইস অফ বেঞ্জামিন বাটন’ আর ২০১১ সালে ‘দ্য সোশাল নেটওয়ার্ক’ মুভির জন্য বেস্ট ডিরেক্টরের নমিনেশন পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথমবার আরাধ্য সোনালি মূর্তিটি হারান ড্যানি বয়েলের স্লামডগ মিলিওনেয়ারের কাছে। অন্যদিকে ২০১১ সালে ‘দ্য কিংস স্পিচ’ এর জন্য অস্কার জেতেন টম হুপার।

এখন পর্যন্ত ১১টি মুভির পাশাপাশি দুটি টিভি সিরিজেরও নির্মাতা ছিলেন এই নামী পরিচালক। উল্লেখ্য, জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘হাউজ অফ কার্ডস’ এর ক্যামেরার পেছনে ছিলেন ডেভিড ফিঞ্চার। গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা সহ ৬২টি পুরষ্কার জিতলেও এখন পর্যন্ত অস্কার ঘরে তোলার সৌভাগ্য হয়নি এই জনপ্রিয় পরিচালকের।

ডেভিড ফিঞ্চার; Source: Beguiling Hollywood

কোয়েন্টিন টারান্টিনো

কোয়েন্টিন টারান্টিনোকে ধরা হয় বর্তমান মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে প্রতিভাবান পরিচালক হিসেবে, যিনি চলচ্চিত্রে পরিচালনার ক্ষেত্রে তৈরী করেছেন নিজস্ব নন-লিনিয়ার ধারা। স্টাইলিস্ট ক্যারেক্টারের সাথে স্যাটায়ার গল্পের মেলবন্ধনে যিনি অনন্য।

‘রিজেরভয়ের ডগস’ মুভি দিয়ে ডিরেকশন জগতে আত্মপ্রকাশ এই শিল্পীর। তারপর একে একে নির্মাণ করেন ‘পাল্প ফিকশন’, ‘জ্যাকি ব্রাউন’, ‘ডেথ প্রুফ’, ‘কিল বিল সিরিজ’, ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ড’, ‘জ্যাঙ্গো আনচেইনড’ ও ‘দ্য হেইটফুল এইট’। মাত্র ৮টি মুভি দিয়ে ৫টি নমিনেশন সহ ২ বার অস্কার জেতেন তিনি।

তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেরা পরিচালক ক্যাটাগরিতে দুবার নমিনেশন পেয়ে জিততে পারেননি একবারও। পাল্প ফিকশনের জন্য অরিজিনাল স্ক্রিনপ্লেতে অস্কার জিতলেও বেস্ট ডিরেক্টর এর সোনালী মূর্তিটি হারান রবার্ট জেমেকিসের ফরেস্ট গাম্পের কাছে। ২০১০ সালে ১৫ বছর  পর ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ড’ এর জন্য আবার নমিনেশন পান টারান্টিনো। এবারও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। সেই বছর ‘দ্য হার্ট লকার’ এর জন্য অস্কার জেতেন ক্যাথেরিন বিগেলো। তবে জ্যাঙ্গো আনচেইনড সহ দুটি অস্কার জেতেন স্ক্রিনপ্লের জন্য।

এই বিখ্যাত পরিচালকের শোকেসে রয়েছে বাফটা, ক্যানি সহ ১৩৩টি পুরষ্কার। সামনে ২০১৯ সালে ডিক্যাপ্রিও, ব্র্যাড পিট সহ নয় নাম্বার মুভি নিয়ে আসছেন কোয়েন্টিন টারান্টিনো। ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ নামের সেই মুভি দিয়ে সেরা পরিচালকের অস্কারটি টারান্টিনোর শোকেসে যোগ হোক সেই প্রত্যাশা সব সিনেমাপ্রেমীর।

মুভি দৃশ্যায়নে কোয়েন্টিন টারান্টিনো Source ; Vanity Fair

This Bangla article is about the famous director who never won an oscar for directing. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: Movie Wallpaper

Related Articles