পর্দায় আমরা যা কিছু দেখি বা শুনি, তাদের প্রায় কোনো কিছুই আসলে সত্য নয়। ভিএফএক্সের যুগে গ্রিন স্ক্রিনের সামনে অভিনয় করে, ইচ্ছেমতো কল্পনাকে বাস্তব রূপে সাজিয়ে পর্দায় উপস্থাপন করা যায়। কিন্তু ভিএফএক্স ছাড়াও সিনেমার গল্প বলতে এমন অনেক কিছুরই ব্যবহার হয়, যা আদতে নকল!
অভিনেতার হাতে যে তলোয়ারটা দেখছেন, তা হতে পারে প্লাস্টিকের, কিংবা দোর্দণ্ড প্রতাপে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা পাথরের প্রাসাদটিও হতে পারে বিশেষ কাগজের। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, দু'চোখের পর্দায় যা কিছু দেখছেন, সেসবে তো মিথ্যে আছেই; কিন্তু কানে যা শুনছেন, সত্যিই কি তা শুনছেন?
যা শুনছি, তা- তা না!
কখনো ফোন কিংবা কোনো রেকর্ডারে সাউন্ড বা ভিডিও রেকর্ড করে থাকলে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, যে শব্দটা আপনি রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন, সেটা ছাড়াও বাতাসের শোঁশোঁ শব্দ কিংবা আশেপাশের বিভিন্ন রকম নয়েজও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে রেকর্ড হয়ে গেছে। তাহলে সিনেমায় আমরা তেমন কিছু শুনতে পাই না কেন?
একটি সিনেমা আপনার সামনে উপস্থাপন করার সময় আপনাকে ঠিক সেই দৃশ্যগুলোই দেখানো হয়, যেগুলো পরিচালক আপনাকে দেখাতে চান। একইসাথে, ঠিক সেই শব্দগুলোই শোনানো হয়, যেগুলো পরিচালক আপনাকে শোনাতে চান। সিনেমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো শব্দ।
শ্যুটিং চলাকালীন সময়ে সাউন্ড রেকর্ডিং ক্রুদের চেষ্টা থাকে শুধুমাত্র সংলাপগুলো রেকর্ড করা। কিন্তু খুব চেষ্টা করেও সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পারিপার্শ্বিক শব্দগুলোর রেকর্ড হওয়া পুরোপুরি এড়ানো যায় না। আর ঠিক সে কারণেই সিনেমার পোস্ট প্রোডাকশনের বড় একটি অংশ হলো সাউন্ড মিক্সিং।
পরিষ্কারভাবে সংলাপ শোনানোর জন্য ভয়েসওভারে অভিনেতাদের দিয়ে প্রয়োজনীয় সংলাপগুলো আবারও রেকর্ড করা হয়। ঠিক একইভাবে, সিনেমার দৃশ্যপটে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহের সাথে সম্পর্কযুক্ত পারিপার্শ্বিক বস্তুসমূহ কর্তৃক সৃষ্ট শব্দও গ্রহণ করা হয় নতুন করে।
হয়তো শুনে একটু অদ্ভুতই ঠেকবে, কেননা যে শব্দগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে, পরবর্তীতে সেগুলোকেই আবার যোগ করা হচ্ছে কৃত্রিমভাবে। কিন্তু শব্দের সময়, মান ও মাত্রার তারতম্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই কাজটি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সিনেমায় ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দ-ধ্বনি চাহিদামতো তুলে ধরা যায়। আপাতদৃষ্টিতে এসব ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডকে অতটা গুরুত্ববহ মনে না হলেও, এসবের অনুপস্থিতি সিনেমাকে করে তোলে রসকষহীন।
আর নতুন করে এই শব্দগুলোকে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করে বাস্তবধর্মী ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে সিনেমায় সংযোজন করার পদ্ধতিটির নামই ফলি। শ্যুটিং শেষে পোস্ট প্রোডাকশন পর্বে বাড়তি সাউন্ড ইফেক্ট ব্যবহারের মাধ্যমে কাজটি করা হয়।
বিষণ্ণ বিকেলে আনমনে একজন মানুষের পায়ে হেঁটে যাবার শব্দ হোক, কিংবা যুদ্ধক্ষেত্রে রক্তের নেশায় মেতে ওঠা লাখো যোদ্ধার লড়াইয়ের শব্দ, সবই তৈরি করা হয় ফলির মাধ্যমে! গ্লাস ভাঙা, পায়ের হাঁটাচলা, কাপড়ের নড়াচড়া, কাগজে কলমের আঁচড়, পশুপাখির ডাক, কল থেকে পানির পড়া, অথবা দরজা খোলা-বন্ধ করা; হেন কোনো শব্দ নেই যা ফলি আর্টের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত করা যায় না!
ফলির ইতিহাস
১৮৯১ সালের ১২ই এপ্রিল ইয়র্কভিল নিউ ইয়র্কে জন্ম নেয়া জ্যাক ডনোভান ফলি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন চলচ্চিত্রানুরাগী। আর তাই কর্মজীবনের শুরুটা বেতার দিয়ে হলেও, বাকি জীবন চলচ্চিত্র নিয়েই কাজ করে গেছেন তিনি। চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকে নিজে নিজেই আয়ত্ত করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের সাউন্ড ইফেক্ট কলাকৌশল। এই অঙ্গনেই কাজ করতে করতে ইউনিভার্সাল পিকচার্স স্টুডিওতে যখন ডাক পেলেন, তখন তার বয়স ৩৩ বছর।
তখনকারই কোনো একদিন ইউনিভার্সাল পিকচার্সের দশ নং স্টেজে পোস্ট-প্রোডাকশনে ব্যস্ত ছিলেন জ্যাক ফলি। সিনেমার একটি দৃশ্যে পেছনের দরজা আছড়ে ফেলে নায়িকার বেরিয়ে যাবার দৃশ্যটি নিয়ে কাজ করছিলেন। আর তখনই সেখানে ফিল্ম-প্রজেকশনের সাথে কৃত্রিম উপায়ে শব্দ উৎপন্ন করে নিখুঁত শব্দগ্রহণের এক অনন্য উপায় বের করলেন ফলি।
তারই নামানুসারে কাজটিকে বলা হতে লাগলো 'ফলি ইফেক্ট'। আর এই কাজটি যারা পর্দার নেপথ্যে থেকে করে থাকেন, তাদের পেশাগত পরিচয়ই হয়ে গেলো 'ফলি আর্টিস্ট'।
১৯১৪ সালে নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে যোগ দেন জ্যাক ফলি। মূলত গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শুরুর দিকে রেডিও নাটকে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম শব্দ যোগ করার মধ্য দিয়েই শুরু হয় এ পদ্ধতির পথচলা। ১৯২৭ সালে 'দ্য জ্যাজ সিংগার'-এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মুক্তি পায় শব্দযুক্ত চলচ্চিত্র। ব্যাপক সাফল্য আর প্রশংসার জোয়ারে ভাসছে তখন ওয়ার্নার ব্রোস স্টুডিও।
ওদিকে ব্যবসায়িক দ্বৈরথে টিকে থাকতে তৎপর হয়ে ওঠে ইউনিভার্সাল। আর তাই রেডিওতে কাজ করার পূর্ব-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মীদেরকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানানো হয়। ফলির অন্তর্ভুক্তিতে গড়া দলটির হাত ধরেই তখন ইউনিভার্সাল মুক্তি দেয় তাদের প্রথম মিউজিক্যাল 'শো বোট'!
সে সময়কার মাইক্রোফোনগুলোর রেঞ্জ কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সেগুলো দিয়ে সংলাপ ছাড়া আর কিছু রেকর্ড করা সম্ভব হতো না। আর তাই ফিল্ম শ্যুট করার পরেই সাউন্ড ইফেক্ট ব্যবহার করে ভিডিও ফুটেজে সিঙ্গেল অডিও ট্র্যাক যুক্ত করা হতো।
রূপালী পর্দায় কখনো হাজির না হলেও, মেলোডি অফ লাভ, শো বোট, ড্যাট ওল'রিবার, স্পার্টাকাস, অপারেশন পেটিকোট-সহ বহু চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন ফলি। ১৯৬৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন শব্দ তৈরি করার এ শিল্পে। আর আজ এত বছর পরেও তার সেই মৌলিক পদ্ধতিগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, আধুনিক প্রজন্মের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সব সিনেমায়।
ফলি কেন?
ফলি ব্যতীত সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা যেমন পানসে হয়ে যায়, তেমনি বাস্তবও মনে হয় না। সংলাপ ছাড়াও সিনেমার পর্দায় গল্পকে জীবন্ত করে তুলতে পারিপার্শ্বিক অনেক শব্দেরও প্রয়োজন হয়। কাপড় কিংবা জুতোর শব্দ, আসবাবপত্রের শব্দ, গাছের পাতার শব্দ ইত্যাদিরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেসব শব্দ যেন কোনোভাবেই মূল সংলাপকে ছাপিয়ে না যেতে পারে, সেজন্যই চাই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। সময়মতো এসব পারিপার্শ্বিক শব্দের মাত্রা কমবেশি করা হয়, ডায়লগের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলতে।
এছাড়াও, ডকুমেন্টারি ফুটেজেও ফলি সাউন্ডের ব্যবহার করা হয়। পুরনো যেসব ঐতিহাসিক ফিল্ম শব্দ-ব্যতীত অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে, ফলি সাউন্ডের সাহায্যে সেগুলোকে নীরবতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিয়ে ফিরিয়ে আনা যায় প্রাণ। ডকুমেন্টারিতে ধারাবর্ণনা ব্যতীতও নেপথ্যে পায়ের শব্দসহ বিভিন্ন রকমের ফলি সাউন্ড ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়।
কমেডি ও অ্যাকশন দৃশ্যেও রয়েছে ফলি সাউন্ডের বিশেষ ব্যবহার। একটু লক্ষ করলেই বোঝা যায়, কমেডি দৃশ্যগুলোতে হাস্যরসের উদ্রেক করা শব্দগুলোকে একটু বেশি গুরুত্বের সাথে অধিক মাত্রায় ফুটিয়ে তোলা হয়।
তাছাড়া সত্যিকারের শ্যুটিংয়ে কখনোই হাতাহাতিতে অভিনেতারা একে অপরকে কোনো রকম ক্ষতিকর শারীরিক আঘাত করেন না। যদি করতেনও, সিনেমায় আঘাতের যেমন শব্দ আমরা শুনে অভ্যস্ত, তেমনটা করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হতো না। আর তাই, অ্যাকশন দৃশ্যে হাতাহাতি, মারামারি কিংবা আঘাতের শব্দকে সন্তোষজনক করতেও ব্যবহার করা হয় বাড়তি ইফেক্ট।
সাধারণত, বাঁধাকপি, শাক-লতাপাতা এবং মাংসের টুকরো ব্যবহার করে ফলি আর্টিস্টরা কৃত্রিমভাবে এসব ‘বাস্তবধর্মী’ শব্দ উৎপন্ন করে থাকেন। এছাড়াও, বিভিন্ন রকম কৃত্রিম শব্দ সৃষ্টি করতে ফলি আর্টিস্টরা এমন অদ্ভুত সব প্রপ ব্যবহার করেন।
ফলির প্রকারভেদ
কিন্তু খেলাটা শুধু শব্দের হলেও একে একদমই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ ঠিকঠাকভাবে কাজটা করা মোটেও সহজ নয়। মূলত ফলি আর্ট-কে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:
১. ফিট
এই ক্যাটাগরিতে আছে পায়ে হাঁটার শব্দ। সিঁড়ি বেয়ে নামার শব্দের অনুরূপ তৈরি করতে, ফলি আর্টিস্টরা মার্বেল স্লাবের ওপর পা দিয়ে শব্দ করেন। তবে পুরো কাজটিই ফুটেজ দেখে একদম নিখুঁত টাইমিংয়ে করতে হয়। ফলি স্টুডিওগুলোতে বৈচিত্র্যময় বাস্তবধর্মী শব্দগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের ফ্লোরের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের জুতোও থাকে। এই ফ্লোরগুলো ফলি পিটস নামে পরিচিত।
২. মুভস
মুভস ক্যাটাগরিতে থাকে সিনেমার সূক্ষ্ম শব্দগুলো। যেমন ধরুন, একজন অভিনেতা চায়ের দোকানে বসে আছে, দোকানদার চা বানাচ্ছে। চা বানানোর শব্দের মতন সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম এই শব্দগুলোই সিনেমাকে করে তোলে জীবন্ত।
৩. স্পেসিফিকস
পায়ে হাঁটার শব্দ ও পেছনের সূক্ষ্ম শব্দগুলো ছাড়াও কিছু বিষয় থাকে ফলি আর্টে। যেমন দরজা খোলা বা লাগানোর শব্দ, কলিং বেলের শব্দ। যদিও এসব ক্ষেত্রে সাউন্ড এডিটরদের কাছে স্টক সাউন্ড ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। তবুও ক্ষেত্রভেদে, ফলি আর্টিস্টরা নতুন করে শব্দগ্রহণ করে থাকেন।
ফলি ট্রিকস!
ফলি আর্টিস্টরা কৃত্রিমভাবে শব্দ উৎপন্ন করতে নানান রকম অদ্ভুত পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। তেমনই বিখ্যাত কিছু পদ্ধতি হলো:
- চামড়ার ব্যাগে কর্ন স্টার্চ নিয়ে তুষার ভাঙার শব্দ,
- হাতমোজা দিয়ে পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ,
- তীর কিংবা সরু কাঠি দিয়ে বাতাসের সাঁইসাঁই শব্দ,
- পুরনো চেয়ার দিয়ে ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ,
- বিভিন্ন ধরনের ধাতব টুকরো থেকে বন্দুকের শব্দ,
- প্লাস্টিকের বর্জ্য পুড়িয়ে মোম জ্বালানো এবং গলিত মোমের ফোটা পড়ার শব্দ,
- পুরনো অডিও ক্যাসেট টেপের দলা নাড়িয়ে ঘাস ও ঝোপঝাড়ের শব্দ,
- বরফ জমা লেটুস থেকে হাড় কিংবা মাথায় সজোরে আঘাতের শব্দ,
- নারিকেলের মালা থেকে ঘোড়ার খুরের শব্দ,
- পানির গ্লাসে কাঠবাদাম দিয়ে বরফের টুকরোর শব্দ,
- কাঠের ওপর ছোট ছোট আপেল ও কাঠবাদাম ব্যবহার করে হাড় ভাঙার শব্দ।
এমন দারুণ সব কৃত্রিম পদ্ধতিতে তৈরি হয় আমাদেরই পরিচিত সব শব্দ। এছাড়াও, নিত্যনতুন শব্দ নিখুঁতভাবে সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ফলি আর্টিস্টরাও নানান রকম সৃষ্টিশীল কারিকুরির খোঁজে চোখ-কান খোলা রাখেন সবসময়ই।
কীভাবে করা হয় ফলি?
সাধারণত ফলি স্টুডিওতে আর্টিস্টরা বিভিন্ন রকমের শব্দ নিখুঁতভাবে গ্রহণের জন্য বিশেষ মঞ্চ ব্যবহার করেন, যা ফলি-স্টেজ নামে পরিচিত। এছাড়াও যে কোনো সাউন্ড স্টুডিওতেও এ পদ্ধতির সাহায্যে কাজ করা সম্ভব।
ফলি-স্টেজের সামনে একটি বড় স্ক্রিনে ফলি আর্টিস্টদেরকে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। বারবার দেখে ফুটেজের সাথে টাইমিং ঠিক রেখে ফলি আর্টিস্টরা প্রয়োজনীয় শব্দগুলো উৎপন্ন করে থাকেন। রেকর্ডিং ডিভাইসে শব্দগুলো রেকর্ড করা হয়।
আর একজন শব্দ প্রকৌশলী কম্পিউটারে সেগুলোর আওয়াজ বাড়ানো-কমানোসহ প্রয়োজনমাফিক এডিট করে তৈরি করেন সাউন্ড-ট্র্যাক। মূলত স্ক্রিনে দেখানো ফুটেজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাউন্ড-ট্র্যাক নিশ্চিত করতেই কাজ করেন তিনি।
পরবর্তীকালে, সেই সাউন্ড-ট্র্যাকের সাথে ডাবিং করা সংলাপ, বিভিন্ন সাউন্ড ইফেক্ট ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর যুক্ত করে সিনেমায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়।
ফলি ও একটি শিল্প
ফলি শুধুই একটি পেশা নয়। শিল্পের স্বীকৃত নান্দনিক এক ঘরানাও এটি। কারণ, শুধু শব্দ উৎপন্ন করার কৌশল জানা থাকলেই কেবল ভালো ফলি আর্টিস্ট হওয়া যায় না। পাশাপাশি প্রয়োজন হয় বিশেষ দক্ষতা। কাজ করার সময় ফলি আর্টিস্টরা প্রতিটি ফুটেজ অসংখ্যবার দেখেন। নিজেদের মধ্যে ক্রমাগত আলোচনার করেন। এভাবেই নির্ধারিত করেন ফুটেজের কোন কোন সময়ে কোন কোন শব্দগুলো যুক্ত করা প্রয়োজন।
এছাড়াও দৃশ্যপটের আবহের সাথে মানানসই শব্দ নির্ধারণ করার মতো জ্ঞান থাকাটাও জরুরি। কায়িক ও মানসিক শ্রমকে শিল্পরূপে তুলে ধরা মানুষগুলোর কাছে খ্যাতি কিংবা চোখ ধাঁধানো সম্মাননা থেকে যায় অধরা। আর তাই পর্দার অন্তরালে, নীরবতার কালো দেয়ালে শব্দের আলপনা এঁকে চলা এই শব্দ-শিল্পীদের গল্পও থেকে যায় আড়ালেই।
ফলি ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
রেকর্ডিং প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে মডার্ন ফলি আর্টেও এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। বর্তমানে আর একটি সিঙ্গেল অডিও ট্র্যাকে লাইভ সাউন্ড রেকর্ড করা হয় না। বিভিন্ন সময়ে রেকর্ড করা শব্দগুলোকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে একসাথে যুক্ত করে তৈরি করা হয় একটি ফাইনাল সাউন্ড-ট্র্যাক।
ইউএস ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিকস ফলি আর্টিস্টদের পারিশ্রমিকের কোনো হিসাব রাখে না। কিন্তু মোশন পিকচার্স এডিটরস গিল্ডের দেয়া তথ্যানুসারে, একজন গিল্ড মেম্বার ফলি আর্টিস্টের সম্মানি সাধারণত সপ্তাহে দুই হাজার ডলার, অর্থাৎ দিনে ৩৪০ ডলার এবং ঘন্টায় ৪২ ডলার।
ফলি স্টুডিওতে শতশত প্রপের সাথে বিভিন্ন ডিজিটাল ইফেক্ট ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে সিনেমার জন্য পারিপার্শ্বিক শব্দ তৈরি করা হয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ফলি ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্নভাবে যুক্ত আছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজেক্টের অংশ হয়ে আমাদের জন্য শব্দ-সৃষ্টি করতে পর্দার আড়ালে নিঃশব্দে কাজ চলেছেন তারা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসারের ফলে প্রায় সব ইন্ডাস্ট্রিতেই মানব কর্মীর অধিকাংশ স্থান দখল করেছে স্বয়ংক্রিয় নানান প্রযুক্তি। ব্যতিক্রম নয় ফলি ইন্ডাস্ট্রিও। ডিজিটাল মিডিয়ার প্রসারের ফলে স্টক সাউন্ড ইফেক্ট লাইব্রেরির ব্যবহার ফলির কাজটাকে বেশ খানিকটা সহজ করে তুলেছে। হয়তো ভবিষ্যতে করে তুলবে আরো বেশি সহজ। তবু প্রযুক্তি কখনোই একজন ফলি আর্টিস্টের স্থান কেড়ে নিতে পারবে না। কারণ শব্দের এ খেলায় একজন ফলি আর্টিস্ট আপন মেধা, সৃজনশীলতা ও মননশীলতার পরম মিশেলে গড়ে তোলেন কৃত্রিম শব্দের বাস্তব অনুভূতির এক জগৎ।
The article is about Foley; Foley is the reproduction of everyday sound effects that are added to film, video, and other media in post-production to enhance audio quality. These reproduced sounds can be anything from the swishing of clothing and footsteps to squeaky doors and breaking glass.
References:
- The Art of Foley - Feet, marblehead
- Jack Foley: Feet to the Stars, npr
- FOLEY, FilmSound.org
- Foley Effects | Artists, Sound Ideas
- Foley Sounds, Zapsplat
Featured Image ©Berklee College of Music