Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হ্যানিবল সিরিজ: এক নরখাদকের পুনঃজন্ম

উইল গ্রাহাম। তার কাজ এফবিআইয়ের হয়ে ক্রিমিনালদের প্রোফাইল করা। তার এক বিশেষ মানসিক অবস্থার কারণে সে যেকোনো মানুষকে অনুভব করতে পারে, তাদের সাথে পুরোপুরি মিশে যেতে পারে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ ক্রিমিনালদের মতো করে চিন্তা করতে পারে। কিন্তু তার এই মানসিক অবস্থা বলতে গেলে একধরনের মানসিক বিকলতা। যার কারণে এফবিআই থেকে উইলকে পূর্ণ এজেন্ট হওয়ার ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়নি।

তার প্রধান কাজ ছিল ব্যুরোর ট্রেইনিদের ক্লাস নেয়া। কিন্তু তার এই বিশেষ দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পান ডিটেকটিভ জ্যাক ক্রফোর্ড। ক্রফোর্ড তাকে ক্লাসরুম থেকে নিয়ে যায় ক্রাইম সিনে।

উইল গ্রাহাম চরিত্রে হিউ ড্যান্সি; Image Source: vulture.com/
উইল গ্রাহাম চরিত্রে হিউ ড্যান্সি; Image Source: NBC

ডিটেকটিভ ক্রফোর্ড এবং এফবিআইয়ের ঘুম নষ্ট করছে দ্যা চেসেপিক রিপার নামের এক সিরিয়াল কিলার। কোনোভাবেই এই খুনির হদিস করতে না পেরে ডিটেকটিভ ক্রফোর্ড উইলের বিশেষ দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই ইনভেস্টিগেশনের কাজে ক্রিমিনালদের মাথায় ঘোরাঘুরি করতে করতেই উইলের পরিচয় হয় একজন সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে। তার নাম ডক্টর হ্যানিবল লেক্টার। ডক্টর লেক্টারের সাথে পরিচয়ের মুহূর্ত থেকে উইল গ্রাহামের জীবন পরিবর্তিত হয়ে চলতে শুরু করে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পথে, যে পথে মিশে আছে রক্ত, মৃত্যু, উন্মত্ততা আর ক্যানিবালিজম। আর দর্শকদের সামনে উন্মোচিত হয় উইল গ্রাহাম আর হ্যানিবল লেক্টারের একের পর এক পাগলামির অধ্যায়।

উইল গ্রাহাম এবং হ্যানিবল লেক্টার
উইল গ্রাহাম এবং হ্যানিবল লেক্টার; Image Source: NBC

হ্যানিবল লেক্টার নামটা সিনেমাপ্রেমী প্রায় সকলেই জানে। সাহিত্য জগতের সবচেয়ে কুখ্যাত ও হিংস্র ক্যানিবল, হ্যানিবল লেক্টারের  সাথে অনেকেরই পরিচিতি আছে। ১৯৮১ সালে টমাস হ্যারিসের ক্রাইম ফ্যান্টাসি ‘রেড ড্রাগন’ বইয়ে জন্ম হয় হ্যানিবল দ্যা ক্যানিবলের। এরপর থেকে বহু মাধ্যমে বহুবার এডাপ্টেড হয়েছে কুখ্যাত এই চরিত্র। ১৯৮৬ সালে রেড ড্রাগন প্রথম বড় পর্দায় এডাপ্ট করা হয় মাইকেল ম্যান পরিচিত Manhunter সিনেমায়। হ্যানিবল চরিত্রের এ যাবৎকালের সবচেয়ে সফল এবং জনপ্রিয় এডাপ্টেশন আসে ১৯৯১ সালে Silence of the Lambs সিনেমায় স্যার এন্থনি হপকিন্সের কালজয়ী উপস্থাপনায়। এ পারফরমেন্সের জন্য হপকিন্স ১৯৯২ সালের একাডেমি এওয়ার্ডে বেস্ট এক্টর পুরস্কারে ভূষিত হন।

দ্যা সাইলেন্স অভ দ্যা ল্যাম্বস-এ হ্যানিবল চরিত্রে এন্থনি হপকিন্স; Image Source: Orion Pictures Corporation

দীর্ঘদিন পরে ২০০১ সালে পরিচালক রিডলি স্কট হপকিন্সের হ্যানিবলকে ফিরিয়ে আনেন সাইলেন্স অভ দ্যা ল্যাম্বস চলচ্চিত্রের সিক্যুয়েল Hannibal-এ। হ্যানিবল লেক্টারের পরের কিস্তি আসে সাইলেন্স অভ দ্যা ল্যাম্বসের প্রিক্যুয়েল চলচ্চিত্র ২০০২ সালের Red Dragon-এ। এরপরে আসে আমাদের আজকের আলোচ্য সিরিজ, ২০১৩ সালে শুরু হওয়া ব্রায়ান ফুলারের সৃষ্টি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার Hannibal। ব্রায়ান ফুলার তার টিভি সিরিজে দেখাতে চেয়েছেন হ্যানিবলের শুরুর দিকের গল্প। এই হ্যানিবল এখনো উইল গ্রাহামের হাতে ধরা পড়েনি। এখনো সে সমাজের সম্মানিত এক মনোবিজ্ঞানী। এই ব্রিলিয়ান্ট সাইকিয়াট্রিস্টের ছদ্মবেশে চালানো পশুত্বের চিত্র উঠে এসেছে খুব নৈপুণ্যের সাথে। 

বিশেষ সতর্কতা

হ্যানিবল সিরিজে রক্ত আর নির্মমতার কোনো কার্পণ্য নেই। সরাসরি মানুষের মাথা কেটে মগজ বের করা থেকে পেট কেটে লিভার বের করা, মুখের চামড়া খুলে খুলে খাওয়া, এককথায় যতরকম বীভৎস দৃশ্য আছে সব স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে।  প্রতি এপিসোডেই নতুন নতুন বীভৎসতার দেখা মেলে। এজন্য যাদের এ রকম দৃশ্য দেখার অভ্যাস না থাকে বা দেখলে সমস্যার অবকাশ থাকে তাহলে এটি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো হবে।

টিভি সিরিজটি নিয়ে কথা বললে সবার আগে টাইটেল ক্যারেক্টারে ম্যাডস মিকেলসেনের অভিনয়ের প্রশংসা দিয়েই শুরু করা যায়। এন্থনি হপকিন্সের হ্যানিবল লেক্টারের পরে এই ক্যারেক্টার নিজের করে নেয়া ছিল অসম্ভবের কাছাকাছি এক কাজ। কিন্তু মিকেলসেনের শক্তিশালী পারফরমেন্স সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছে। সিরিজের হ্যানিবলকে পুরোপুরিই তার নিজস্ব কাজ মনে হয়েছে। হ্যানিবলের ব্যক্তিত্ব, উদ্যম, চিন্তার প্রক্রিয়া আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তার উন্মাদ প্রবৃত্তি সবকিছুই নৈপুণ্যের সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।

হ্যানিবলের কয়েনের উল্টো পিঠ হচ্ছে উইল গ্রাহাম। এই চরিত্রে হিউ ড্যান্সির পারফরমেন্সকে অসাধারণ বললেও কম হয়ে যাবে। হিউ ড্যান্সি সব দৃশ্যে, সব মুহূর্তে উইলের জটিল চরিত্রকে দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন। সিরিজের সবগুলো চরিত্রই বেশ নিখুঁতভাবে কাজ করেছে।

হ্যানিবল চরিত্রে ম্যাডস মিকেলসন
হ্যানিবল (ম্যাডস মিকেলসন); Image Source: NBC

কিছু দারুণ পারফরমেন্সের অবদান আছে কয়েকজন অতিথি অভিনেতা-অভিনেত্রীর। তাদের মধ্যে দুজনের নাম উল্লেখ না করলেই নয়। মাইকেল পিট-এর মেসন ভার্জার আর জিলিয়ান এন্ডারসন-এর ডক্টর বেডিলিয়া ডি মরিয়ে। 

সিরিজে হ্যানিবলকে আমরা মূলত দেখি উইল গ্রাহামের চোখ দিয়ে। এ দিকটাই সিরিজটাকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। আমরা জানি যে হ্যানিবল লেক্টার শুধুই একজন সাইকিয়াট্রিস্ট না, কিন্তু উইলের চোখে সে তা-ই। একজন ক্রিমিনাল প্রোফাইল কর্মী, যার কাজই ক্রিমিনালদের মতো করে চিন্তা করা, তার এতো কাছে ভয়ংকর এক ক্যানিবল ঘুরে বেড়াচ্ছে কোনোরকম সন্দেহের বাইরে। পুরো সেটিংটাই অন্যরকম।

সিরিজটির অন্যতম শক্তিশালী উপাদান এর রাইটিং। খুব জটিল সাইকোলজিক্যাল বিষয় নিয়ে গভীর কথাবার্তা আছে। যেহেতু সিরিজের মূল চরিত্র একজন সাইকিয়াট্রিস্ট আর মূল বিষয় মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে, সেহেতু জটিল সাইকোলজিক্যাল তর্ক-বিতর্কেই কাটে সিরিজের সিংহভাগ। কিন্তু রাইটিংয়ের কল্যাণে এই বিষয়গুলো যথেষ্ট উপযুক্ত ও আগ্রহোদ্দীপক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। 

সিরিজের পোস্টার; Image Source: NBC

হ্যানিবল লেক্টারের লেগ্যাসিতে হ্যানিবল সিরিজ এক উপযুক্ত ও বিশেষ সংযোজন। সিরিজটি এই চরিত্রের মূল ভিত্তি সুন্দরভাবে ধরতে পারার মধ্য দিয়ে এই কালজয়ী চরিত্রে আরো কিছু মাত্রা যোগ করেছে। মাত্র তিন সিজনে শেষ হয়ে যাওয়া এই সিরিজের পুনর্জন্মের আশায় রয়েছে শত শত ভক্ত।

Related Articles