Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সিনেমায় দেখানো ‘গুপ্তধন উদ্ধার করতে গিয়ে’ মৃত্যু ঘটেছিল যে তরুণীর

২০০১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন এবং ব্রিটিশ পত্রপত্রিকা জুড়ে বেশ কৌতুহলোদ্দীপক একটি সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ অনুযায়ী, তাকাকো কোনিশি নামে এক জাপানী তরুণী ১৯৯৬ সালের ফার্গো (Fargo) সিনেমাটিকে সত্য মনে করে সেখানে দেখানো ১ মিলিয়ন ডলার গুপ্তধন খুঁজতে আমেরিকার ফার্গো শহরে উপস্থিত হন। কিন্তু বলাই বাহুল্য, গুপ্তধন খুঁজে পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। বরং কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ফার্গোর পাশের একটি শহরে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। 

ফার্গো সিনেমাটির কাহিনীকে কেউ সত্য মনে করলে তাকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। কারণ সিনেমার শুরুতে দাবি করা হয়েছিল, সিনেমাটি হুবহু সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। কিন্তু আমাদের এর আগের একটি লেখায় আমরা যেরকম আলোচনা করেছিলাম, বাস্তবে এই দাবিটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। খুবই ক্ষুদ্র দুটি ঘটনার সাথে সামান্য মিল থাকলেও বাস্তবে ফার্গোর কাহিনী প্রায় পুরোটাই কাল্পনিক।

ফার্গো মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার একটি শহরের নাম। কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়ের ১৯৯৬ সালের চলচ্চিত্রটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে এই শহরেরই কিছু চরিত্রকে কেন্দ্র করে। সিনেমাতে এক কার সেলসম্যান দুই ছিঁচকে অপরাধীকে ভাড়া করে তার স্ত্রীকে অপহরণের নাটক সাজানোর জন্য, যেন তার শ্বশুরের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করা যায়। 

যেহেতু কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয়ের সিনেমা, তাই অবধারিতভাবে সেলসম্যানের পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং একের পর এক দুর্ঘটনায় পরিস্থিতি মারাত্মক জটিল রূপ ধারণ করে। শেষপর্যন্ত অপহরণকারীদের একজন নিজের মৃত্যুর আগে ফার্গো শহরের এক রাস্তার ধারে বরফরে চাদরের নিচে গর্ত করে মুক্তিপণের প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার লুকিয়ে ফেলে। সিনেমার কাহিনীটি যদি সত্য হতো, তাহলে অন্য কেউ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত সেই টাকা বহু বছর পর পর্যন্ত বরফের নিচেই চাপা পড়ে থাকতে পারত।

ফার্গোর একটি পোস্টার; Image Source: Movie Poster Shop

ফার্গোর কাহিনী যে আসলে মিথ্যা, তাকাকো কোনিশির এই তথ্য জানা থাকার কথা ছিল না। কাজেই ২০০১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি একদিন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্গোর কাছাকাছি একটি শহর বিসমার্কের একটি হোটেলে গিয়ে ওঠেন। পরদিন সকালে তিনি যখন উদ্দেশ্যহীনভাবে নির্জন এলাকায় ঘুরাঘুরি করছিলেন, তখন স্থানীয় এক ব্যক্তি তার সাহায্যে এগিয়ে আসে। কোনিশি ইংরেজি জানতেন না। ফলে লোকটি তাকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যায়। সেখানে হাতে আঁকা একটি রাস্তা এবং গাছের মানচিত্র দেখিয়ে তিনি শুধু বলতে থাকেন, “ফার্গো”।

পুলিশ অফিসারদের মধ্যে মাত্র একজন, জেসে হেলম্যান, ফার্গো সিনেমাটি দেখেছিলেন। তিনি ব্যাপারটি বুঝতে পারেন। তিনি বারবার কোনিশিকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, ফার্গোতে গিয়ে লাভ নেই, সেখানে কোনো গুপ্তধন লুকানো নেই। ওটা নিছকই সিনেমা, কাল্পনিক কাহিনী। কিন্তু তারপরেও কোনিশি তার অবস্থানে অনড় থাকেন। তিনি মানচিত্রটি দেখিয়ে বার বার বলতে থাকেন, “ফার্গো, ফার্গো”।

পুলিশ পকেট ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে কোনিশির সাথে কথপোকথন চালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। তারা একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সাথেও যোগাযোগ করেছিল এই আশায় যে, তারা হয়তো জাপানি ভাষা জানতে পারে। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। পুলিশকে নিজের বক্তব্য বোঝাতে কিংবা নিজেও পুলিশের বক্তব্য বুঝতে ব্যর্থ হয়ে কোনিশি শেষে হোটেলে ফেরত যান। কিন্তু এক সপ্তাহ পরে তার লাশ আবিষ্কৃত হয় স্থানীয় একটি লেকের পাড়ে।

ফার্গো সিনেমায় বরফের নিচে টাকা লুকানোর দৃশ্য; Image Source: Gramercy Pictures

তাকাকো কোনিশির রহস্যময় মৃত্যু সে সময় গণমাধ্যমে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। বেশ কিছু পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেল তাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছিল। কিন্তু তার সংবাদটি নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি মোহাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন ন্যাথান জেলনার এবং ডেভিড জেলনার নামে দুই ভাই। ঘটনাটি তাদেরকে এতোই আলোড়িত করে, তারা সিদ্ধান্ত নেন, এই ঘটনা অবলম্বনে তারা একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন।

২০০২ সালের মধ্যেই জেলনার ভ্রাতৃদ্বয় তাদের চিত্রনাট্য লিখে শেষ করেন। তাদের চিত্রনাট্যে কোনিশির পরিবর্তে কুমিকো নামে এক জাপানি তরুণীর গল্প তুলে ধরা হয়, যে ফার্গো সিনেমাটির বিরল একটি ভিএইচএস টেপ খুঁজে পায়। সিনেমাটি দেখে তার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে, এতে দেখানো ঘটনাটি সত্য এবং আমেরিকার ফার্গোতে কোনো এক রাস্তার ধারে বরফের চাদরের নিচে আসলেই ১ মিলিয়ন ডলার লুকানো আছে। কুমিকো তাই ভিএইচএস টেপটিকে সম্বল করে ফার্গোর উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এবং জায়গাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।

২০০২ সালে চিত্রনাট্য লেখা শেষ হয়ে গেলেও সিনেমা বানাতে জেলনার ভ্রাতৃদ্বয়ের অনেক দেরি হয়ে যায়। কারণ তাদের ইচ্ছা ছিল সত্যি সত্যিই ফার্গোতে এবং টোকিওতে গিয়ে সিনেমাটির শ্যূটিং করবেন। শেষপর্যন্ত ২০১৪ সালে তারা তাদের চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেন। Kumiko, the Treasure Hunter (2014) নামে তাদের এই চলচ্চিত্রটি বেশ প্রশংসা লাভ করে এবং অনেকগুলো পুরস্কারও অর্জন করে। 

কুমিকো সিনেমার পোস্টার; Image Source: AD HOMINEM ENTERPRISES

কিন্তু কুমিকো, দ্য ট্রেজার হান্টারই তাকাকো কোনিশিকে নিয়ে নির্মিত একমাত্র চলচ্চিত্র না। কোনিশির মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে প্রচারিত সংবাদগুলো আরেকজন চলচ্চিত্র নির্মাতারও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি হলেন বাফটা পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা পল বার্জেলার। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনিও এই ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। কিন্তু জেলনার ভ্রাতৃদ্বয়ের মতো তিনি শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত এবং লোকমুখে প্রচারিত গল্প শুনেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজেই তদন্ত করতে শুরু করেন

বিসমার্ক শহরে গিয়ে বার্জেলার স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলেন, সেই চাইনিজ রেস্টুরেন্টের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন, এবং স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ স্টেশনে গিয়ে সেই পুলিশ অফিসার জেসে হেলম্যানকেও খুঁজে বের করেন। বার্জেলার হেলম্যানের কাছে সেদিনের ঘটনা বিস্তারিত শুনতে চান। হেলম্যান জানান, কোনিশির হাতে একটি মানচিত্রের মতো কাগজ ছিল, যেখানে শুধু একটি রাস্তা এবং একটি গাছ আঁকা ছিল। সেই ছবিটা দেখেই তার ফার্গো সিনেমাটির কথা মনে পড়ে গিয়েছিল।

হেলম্যান জানান, কোনিশি বারবার কিছু একটা বলছিলেন, যেটা শুনতে অনেক “ফার্গো” শব্দটার মতো শোনাচ্ছিল। তখনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, জাপান থেকে কোনিশি এতদূর ছুটে এসেছিলেন সেই ফার্গো শহরে গিয়ে সিনেমায় দেখানো গুপ্তধন উদ্ধার করার জন্যই। কিন্তু হেলম্যানের বক্তব্যের মধ্যেই বার্জেলার ফাঁক খুঁজে পান। তিনি বুঝতে পারেন, পুরো বিষয়টা হেলম্যানের অনুমান ছাড়া আর কিছুই না।

কুমিকো চলচ্চিত্রে একটি দৃশ্য; Image Source: AD HOMINEM ENTERPRISES

কোনিশি ইংরেজি জানতেন না। আর হেলম্যান বা উপস্থিত অন্য কেউও জাপানি ভাষা জানতেন না। কোনিশি হয়তো কোনো জাপানি শব্দ বলছিলেন, যেটা শুনতে ফার্গোর মতো শোনাচ্ছিল। অথবা হতে পারে তিনি সত্যিই ফার্গোর নাম উচ্চারণ করছিলেন এবং সেখানে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু তিনি যে গুপ্তধন উদ্ধার করতেই সেখানে যেতে চাইছিলেন, তার কোনো প্রমাণ নেই। বিষয়টা কেবলই জেসে হেলম্যানের ব্যক্তিগত ধারণা। কাহিনীটি আগ্রহ উদ্দীপক হওয়ায় সেটাই মানুষের মুখে মুখে এবং গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোনিশি যদি গুপ্তধন খুঁজতে না গিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি সেখানে কেন গিয়েছিলেন? বার্জেলার তার অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকেন। তিনি পুলিশের কাছ থেকে কোনিশির জাপানের ঠিকানা খুঁজে বের করেন এবং টোকিওতে তার বাসায় গিয়ে হাজির হন। তার সামনে উঠে আসে নতুন একটি গল্প, যার সাথে গুপ্তধন শিকারের কোনো সম্পর্ক নেই।

পুলিশের কাছ থেকে বার্জেলার আরো কিছু তথ্য পেয়েছিলেন। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য হলো, মৃত্যুর আগের দিন রাতে কোনিশি ৮৮ ডলার দিয়ে ৪০ মিনিট পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের একটি ফোন নাম্বারে কথা বলেছিলেন। বার্জেলার খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, নাম্বারটি এক আমেরিকান ব্যাংকারের। তিনি যখন টোকিওতে গিয়েছিলেন, তখন তার সাথে কোনিশির সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ফেরার সময় তিনি কোনিশিকে নিজের আমেরিকার ঠিকানা দিয়ে এসেছিলেন – ফার্গোর ঠিকানা।

কিন্তু আমেরিকায় ফিরে তিনি ফার্গোতে স্থায়ী হননি। তিনি সিঙ্গাপুরে চলে গিয়েছিলেন এবং কোনিশির সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আর তাই কোনো গুপ্তধন না, নিজের প্রাক্তন প্রেমিককে খুঁজতেই কোনিশি ফার্গোতে ছুটে এসেছিলেন। তাকে না পেয়ে তার সিঙ্গাপুরের ফোন নাম্বার জোগাড় করে তার সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছিলেন।

দিস ইজ এ ট্রু স্টোরি ডকুমেন্টারিতে কোনিশির চরিত্র; Image Source: The Guardian

তাদের মধ্যে কী কথপোকথন হয়েছিল, সেটা এখন আর জানার কোনো উপায় নেই। কিন্তু সেটা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। কারণ সেই ফোন কলের পরপরই গভীর রাতে, -৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্য দিয়েই কোনিশি বরফের মধ্য দিয়ে শুধু একটা শার্ট আর মিনি স্কার্ট পরে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন। বের হওয়ার আগে তিনি একগাদা ঘুমের ওষুধ এবং বেদনানাশক ওষুধ খেয়ে নিয়েছিলেন। ওষুধের প্রভাবে এবং ঠাণ্ডায় জমেই তার মৃত্যু হয়েছিল। 

প্রাক্তন প্রেমিককে না পেয়েই কোনিশি আত্মহত্যা করেছিলেন। ডাক্তারের রিপোর্টের পর থেকে পুলিশ দীর্ঘদিন ধরেই আত্মহত্যার বিষয়টি সন্দেহ করলেও তার কোনো প্রমাণ ছিল না। কিন্তু বার্জেলার যখন জাপানে কোনিশির আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখন তিনি জানতে পারেন, মৃত্যুর আগে কোনিশি একটি সুইসাইড নোট তাদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। 

সিনেমা তৈরির ইচ্ছে থাকলেও বার্জেলার শেষপর্যন্ত কোনিশির ঘটনাটি নিয়ে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রমাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তিনি এর নাম দেন This Is a True Story (2003)। বলাই বাহুল্য, মূল ফার্গোর কাল্পনিক কাহিনী কিংবা কুমিকো, দ্য ট্রেজার হান্টারের কাল্পনিক কাহিনীর তুলনায় এই সত্য ঘটনাটি মোটেও কম নাটকীয় না। বাস্তবতা আসলেই মাঝে মাঝে কল্পনার চেয়েও অদ্ভুত হতে পারে!

This article is in Bangla language. It is the curious case of Takako Konishi, the Japanese lady, who believed the movie Fargo was based on a true story and went to find the million dollar treasure supposedly hidden in Fargo. All the references are hyperlinked inside the article.

Featured Image: AD HOMINEM ENTERPRISES

Related Articles