Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লা বেল ইপোক: প্রেমের টানে অতীত ভ্রমণ

‘লা বেল ইপোক’ ট্রাইম ট্রাভেলধর্মী সিনেমা, যেখানে আক্ষরিক অর্থে ট্রাইম ট্রাভেলের উপস্থিতি নেই! চলচ্চিত্রে স্পেশাল ইফেক্ট বা প্র‍্যাক্টিক্যাল ইফেক্ট যেমন সরাসরি সেটে, হাত দিয়ে তৈরি করা হয় কোনোরকম কম্পিউটারের কারসাজি ছাড়া, তেমনি টাইম-ট্রাভেলকেও এই সিনেমায় মঞ্চস্থ করা হয়। কোনো কম্পিউটার গ্রাফিক্সে তৈরি ভবিষ্যৎ দুনিয়া নয়, নিখুঁত হাতে তৈরি করা অতীত দুনিয়ার ট্রাইম ট্রাভেল এতে দেখা যায়। কোনো যন্ত্রের ভেতরে ঢুকে হুট করে অতীতে ফেরার ব্যবস্থা এতে না থাকলেও বর্তমানে থেকে অতীতকে ছুঁতে পারার ব্যবস্থা এখানে আছে! বিষয়টা একটু গোলমেলে ঠেকতেই পারে। বিস্তারিত আলাপ করা যাক।

সময়ের অটল অগ্রসরমানতায় মানুষ কোনো না কোনো পর্যায়ে সচেতন কিংবা অবচেতনভাবে অতীতের দিকে একটিবার হলেও ফিরে যেতে চায়। হতে পারে পরিবর্তনের জন্য, কিংবা হতে পারে শুধুই ঐ বিশেষ মুহূর্তের অনুভূতি, খেয়ালগুলোকে আরেকটিবার তাজা করার জন্য। সেই চাওয়া দৃশ্যমান বাস্তবে সম্ভব নয় বলেই কল্পরূপে ট্রাইম ট্রাভেলের আবির্ভাব।

Image Source: teahub.io

যদিও সময়ের ধারণানুযায়ী অতীতে ভ্রমণ সম্ভব নয়, তবে ভবিষ্যত ভ্রমণের সম্ভাবনা তৈরিতে কাজ করা হচ্ছে। ‘প্রিমোনিশন’ যার একপ্রকার উদাহারণ। তবে, ওটার আবার অন্য অনেক ব্যাখ্যা আছে। যাক সেসব। সিনেমার আলাপে ফিরি।

তা বাস্তবে অতীতে ফেরা যেহেতু সম্ভব নয়, তাই প্রখর বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হয়ে এই সিনেমা অন্যভাবে অতীতে ভ্রমণ করতে চেয়েছে। এই সিনেমায় অতীতকে বর্তমানে কৃত্রিমরূপে উপস্থাপনের কাজটি করে একটি কোম্পানি! বিশাল দল আছে তাদের। সুদক্ষ দল। মঞ্চের অভিনেতা-অভিনেত্রীও আছে! সেটার কারণ একটু পরেই বোঝা যাবে।

বিশাল অংকের বিনিময়ে ওই কোম্পানি ধনী লোকেদের অতীত ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়। ক্লায়েন্টের কাছ থেকে সকল তথ্য, বিবরণ সংগ্রহ করে বিশাল-বিস্তৃত সেট নির্মাণ করে তারা। দেখা গেছে, কেউ চায় তার গত হওয়া বাবার সাথে আরেকটি সন্ধ্যা কাটাবে, কেউ চায় স্ত্রীকে আরেকটিবার সেই প্রথমবারের মতো করে পাবে, কেউ চায় প্রেমিকার কাছে প্রথম প্রেম নিবেদন এবং কফিশপে বসে দুজনের চোখে চোখ রেখে ধোঁয়া ওঠা কফিতে আলতো চুমুকের সেই মুহূর্ত আরেকবার ফিরে পাবে।

কেউ আবার হিটলারের সাথে বসে ফ্যামিলি ডিনার করতে চায় (ওরকমই একটা দৃশ্য দিয়ে সিনেমা শুরু হয়)। আবার কেউ চায় বুনুয়েলের সাথে বসে গালগপ্পো করবে। এই জায়গায় এসে নিশ্চয়ই একটু ‘মিডনাইট ইন প্যারিস’ (২০১৩) এর ভাইব পাবে পাঠক। যাক গে, ঘটনা অন্য। তো, এই যে বিভিন্নজনের বিভিন্ন চাওয়া, সেটা নিজস্ব অভিনেতা/অভিনেত্রী দিয়ে পূরণ করে এই কোম্পানি। উইলিয়াম ফকনার, হেমিংওয়ে, সালভাদর দালি, মুসোলিনি- যে কারো সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থাও চাহিদানুযায়ী এই কোম্পানি করে দেয়। মঞ্চ নির্দেশক, ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট, মেকাপ আর্টিস্ট, অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে গোটা একটি দল তারা। 

ভিক্টর আর ম্যারিয়নের বিচ্ছিন্নতা যেখানে সুস্পষ্ট; Image Source: Pathe Films

আর এই দলের পরিচয় হয় গল্পের কেন্দ্রীয় অভিনেতা ভিক্টরের সাথে। ষাটের উপর বয়স হয়েছে। কিন্তু তার এত বছরের দাম্পত্যজীবনে চলে এসেছে বিচ্ছিন্নতা। সম্পর্ক হাজির হয়েছে ভাঙার দুয়ারে। ভিক্টরকে ছেড়ে যায় তার স্ত্রী ম্যারিয়ন। হতভম্ব ভিক্টর অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলো সেই দলের প্রস্তাবে। একটা পূর্বযোগও ভিক্টরের আছে ওই দলের প্রতিষ্ঠাতার সাথে। সেই সুবাদে ভিক্টর তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সপ্তাহে ফিরে যেতে চায়। ১৯৭৪ সালের মে মাসের একটি সপ্তাহ। তার জীবনের একমাত্র ভালোবাসা ম্যারিয়নের সাথে যখন তার পরিচয় ঘটে ‘লা বেল ইপোক’ নামের সেই ক্যাফেতে।

ভিক্টরের চাহিদানুযায়ীই সবকিছু সাজানো হয়। ১৯৭৪ সালের সেই তরুণী ম্যারিয়নের চরিত্রে অভিনয়ের জন্যও একজন অভিনেত্রী জোগাড় করা হয়। কিন্তু সমস্যা হয় যখন ভিক্টর ম্যারিয়নরূপী এই অভিনেত্রীর মাঝেই সত্যিকারের তরুণী ম্যারিয়নকে খুঁজতে শুরু করে। নিজের গড়া অতীতের খেয়ালে দিশেহারা হয়ে পড়ে ভিক্টর। অতীত আর বর্তমানের ফারাক ভুলে সবকিছু জটিল করে তোলে সে। বয়সের উর্ধ্বে গিয়েও এক অন্য আবেগ তাকে পেয়ে বসে। তৈরি হয় নিজের মাঝে এক দ্বন্দ্বমুখর সত্ত্বার!

ভিক্টর আর সেই তরুণী ম্যারিয়ন মুখোমুখি, সেই ক্যাফেতে তৈরি করা অতীতে; Image Source: Pathe Films

‘লা বেল ইপোক’ (২০১৯) সন্দেহাতীতভাবেই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ধারণার সিনেমা। ধারণার বিষয় পাশে রেখেও দেখা যায়, প্রথম প্রেমের স্বপ্নীল অনুভূতির ফাঁপা অনুরণন তোলার কাজ এই সিনেমা করেনি, বরং প্রেমে পড়ার পেছনে মনস্তত্ত্ব কীভাবে কাজ করে সেই অনুসন্ধান চালানোর চেষ্টা করেছে। আর এই কাজে সবটুকু সাহায্য করেছেন নিকোলাস বেদোস, যিনি একইসাথে সিনেমার পরিচালকও। তার লেখা চিত্রনাট্যই সিনেমার সবচেয়ে বড় শক্তি। ভালোবাসা ও সম্পর্ক সবসময় একরকম থাকে না, অন্তত বহিঃপ্রকাশের দিকটিই যদি ধরা হয়। সময়ের সাথে ক্রমাগত বদলায় এর প্রকাশভঙ্গী। সময়ের সাথে জটিলতা উদ্ভুত হয়। এটাই নিয়ম। মানুষের প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সর্বাবস্থায়, সকল প্রতিকূলতায় কীভাবে ভালোবাসা ও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়- সেটিই এই সিনেমার মুখ্য বিষয়। 

নিকোলাস বেদোসের চিত্রনাট্যটি অনেকটা ‘চার্লি কফম্যানীয়’ ধারায় লেখা। ‘বিয়িং জন মালকোভিচ,’ ‘অ্যাডাপ্টেশন,’ ‘কনফেশনস অফ অ্যা ডেঞ্জারাস মাইন্ড,’ ‘ইটারনাল সানশাইন অব স্পটলেস মাইন্ড,’ ‘সিনেকডোকি নিউ ইয়র্ক,’ ‘আই এম থিংকিং অব এন্ডিং থিংস’-এর মতো সিনেমাগুলোর বিস্ময়কর, গূঢ় দর্শন প্রোথিত আইডিয়া এবং চিত্রনাট্য তো ওই চার্লি কফম্যানেরই লেখা। স্বতন্ত্র ধারা আছে তার। ভাষা আছে। তাই সেটা বোঝাতেই ‘কফম্যানীয়’ টার্ম আওড়ানো।

আর, এই সিনেমার স্মৃতি অনুরণনের দিকটি একে ‘ইটার্নাল সানশাইন অব স্পটলেস মাইন্ড’-এর বিপরীত রূপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। আবার রিচার্ড কার্টিসের (‘ফোর ওয়েডিংস এন্ড অ্যা ফিউনেরাল’, ‘লাভ একচুয়ালি’) চিত্রনাট্যগুলোর সাধারণ হাস্যরসে মাতিয়ে রাখার ‘ক্রাউড প্লিজিং’ বৈশিষ্ট্যও এর মাঝে আছে। তবে শেষ অংকে বাস্তব এবং কল্পনার মাঝে জটিলতার সৃষ্টিতে ‘দ্য ট্রুম্যান শো’র কথা মনে করায় এই সিনেমা। জিম ক্যারির ছায়া দেখা যায় এই সিনেমার ভিক্টর চরিত্রে।

আধুনিক পৃথিবী এবং প্রযুক্তির প্রতি নাক সিঁটকানো স্বভাব রাখা ভিক্টর আর্কিটাইপে বাধা চরিত্র মনে হলেও আদতে তেমনটি ঘটে না চরিত্রের ধরন বাস্তবতার নিরীখে হওয়ায়। একমাত্রিকতা বিবর্জিত এবং বিবরণসম্পন্ন লেখা হওয়ায় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই বাস্তব দুনিয়ার চরিত্র মনে হয় সিনেমার চরিত্রগুলোকে। নারী চরিত্রগুলোর স্বীয় সিদ্ধান্তে অটলতা, স্বাধীনচেতা মনোভাব ‘পোস্ট মি-টু’ সময়ের পরিচিতিই বহন করে। আনুষঙ্গিক চরিত্রগুলোও প্রলেপিত হওয়ায় লা বেল ইপোকের দুনিয়া অমোঘ রূপ পায় দর্শকের চোখে। 

আহা প্রেম! আহা ভালোবাসা! শুধুই নিঙড়ানো অতীত; Image Source: Pathe Films

শক্তিশালী চিত্রনাট্য এবং অভিনয়শিল্পীর পাশাপাশি খুবই কমনীয় ফিল্মমেকিংয়ের দেখা মিলেছে এই সিনেমায়। নিকোলাস বেদোস তার আগের কাজের তুলনায় আরো পরিণত ফিল্মমেকিং উপহার দিয়েছেন। তার প্রত্যেকটি ভিজ্যুয়াল ফ্লেয়ারে স্টাইলিশ অ্যাস্থেটিকের পাশাপাশি একটি ক্লাসিক ভাইবও পাওয়া যায়। সেই সাথে গতিময় আর একই ছন্দে দৌড়াতে থাকা সম্পাদনা সিনেমাকে গল্পবয়ানের দিক থেকে আরো উপভোগ্য এবং মসৃণ করেছে। সুবিস্তৃত এবং দক্ষ প্রোডাকশন ডিজাইন সিনেমাকে ঐশ্বর্যময় করে তুলেছে নিঃসন্দেহে। প্রতিটি সেট পিস এখানে ভিজ্যুয়াল ডিটেল হিসেবে যথাযথ কাজই করেছে। এসবে মিলিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসির আভা ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি হৃদয়গ্রাহী অভিজ্ঞতা দেয় ফরাসি সিনেমা ‘লা বেল ইপোক’ (২০১৯)।

This article is a review of the recent french film 'La Belle Epoque' (2019). It's a romantic comedy, drama with a sci fi mixture. It's well received for it's unique premise and originality.

Feature Image: Pathe Films

Related Articles