Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লেডি বার্ড: এক অসংবৃত হৃদয়ের মুক্ত কৈশোর

“I wish I could live through something.”

অবিরাম, দুরন্ত ও পাখির মতো মুক্ত হৃদয়ের অধিকারী লেডি বার্ডের দীর্ঘশ্বাস এই একবাক্যেই অনুভব করা যায়। চলচ্চিত্রটির নাম দেওয়া হয়েছে প্রধান চরিত্র ক্রিস্টিন ম্যাকফিরসনের নিজেকে অর্পিত ‘লেডি বার্ড’ নামটি থেকেই। স্যাক্রামেন্টো, যে শহরকে সে নাক সিঁটকে বলে ‘ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্যপাশ্চাত্য’ বলে, সে শহরেরই একটি ক্যাথলিক হাই স্কুলের শেষ বর্ষের ছাত্রী সে। ছবির শুরু থেকেই দেখা যায়, লেডি বার্ডের জীবনে সবকিছুই নিদারুণভাবে চলছে: তার কলেজ জীবনের প্রত্যাশা, ভালোবাসার সম্পর্কগুলো এবং বিশেষভাবে তার মা; যার নিত্যকার সন্দেহ, উদ্বেগ লেডিবার্ডের কাছে একরকম অসহনীয় হয়ে উঠছে।

ওপেনিং শট থেকেই ছবিটি কিশোর বয়সের স্বকীয় অভিজ্ঞতার প্রবলতায় আবৃত। প্রতিটি অযত্ন, দ্রোহ ও বিধ্বংসী সিদ্ধান্ত হৃদয়কে ছেয়ে ফেলার মতো। প্রতিটি ইশারাপূর্ণ সংকেত যেন অসম্ভব সব প্রতিশ্রুতিতে ভরপুর। প্রতিটি ভালোবাসার নাম বেডরুমের দেয়ালে ম্যাজিক মার্কারে লেখা, যেন অনন্তকালের জন্যে সংরক্ষিত।

স্কুলের শেষ বর্ষে এসে স্যাক্রামেন্টো লেডি বার্ডের জন্যে অসহনীয় হয়ে ওঠে। যেকোনো মূল্যে সে এই শহর ছেড়ে যেতে চায়। ইস্ট কোস্টের কোনো এক মর্যাদাপূর্ণ কলেজে গিয়ে তার বর্তমান জীবনের সকল অপ্রাপ্তি ও অপছন্দ ভুলে যেতে চায়। কিন্তু স্কুলের গ্রেড তার পক্ষ হয়ে কথা বলছে না। আর তার রাশভারি মা তো রয়েছেই, যে সবসময়েই মনে করিয়ে দেয় যে, ইয়েল বা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সামর্থ্যের বাইরে। কিন্তু তারপরেও সে গোপনে নিউ ইয়র্কের একটি কলেজে আবেদন করে। লেডি বার্ডের ধারণা, ৯/১১ পরবর্তী সময়ে অন্য সবার সন্ত্রাস আতঙ্কের ফলে তার সেখানে সুযোগ পাওয়াটা তুলনামূলক সহজ হবে। 

মা ম্যারিয়ন লেডিবার্ডের এসব ‘বাস্তবতা বিরোধী’ ভাবালুতার উপর জেঁকে বসে। স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ার পরে পরিবারের যাবতীয় খরচের সামাল দিতে সে ডাবল শিফটে কাজ করতে বাধ্য হয়। মা ও মেয়ের সাংঘর্ষিক ভাবনাগুলো যখন পরস্পরের সম্মুখীন হয়, তখন দুজনের যে বিক্ষুব্ধ প্রকাশ ঘটে, সেটাই এই সিনেমাটিকে অনেক দূর টেনে নিয়ে যাওয়ার পেছনের প্রধান শক্তি। বাস্তবতা ও কল্পনাবিলাস- এই দুই তীব্র বিপরীতের একে অপরকে বুঝতে না চাওয়ার যে প্রবণতা, সেটাই শেষ পর্যন্ত এই শক্তিকে পর্দায় ধরে রেখেছে।

মা ও মেয়ের বাকযুদ্ধ; Image Source: A24

লেডি বার্ড চরিত্রটিকে অনুসরণ করলে যে কেউ কৈশোরে অনুভব করা তার প্রবল আবেগের ঢেউগুলো সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে। একই আবেগ তাড়নার কারণে তীক্ষ্ণ প্রকৃতি, চুলে গোলাপি রঙের ঢেউ খেলানো, পরিবারের সামর্থ্য বুঝতে না চেয়ে তাকে মায়ের সাথে নিয়মিত ঝগড়া করতে দেখা যায়। যেকোনো কিশোর বয়সীই পর্দায় লেডি বার্ডের মায়ের দৃশ্যগুলোতে অস্বস্তি অনুভব করবে। কিন্তু, পরিচালক গ্রেটা গারউইগ এই বিষণ্ণ ও বাস্তবতার চাপে পড়া মহিলার পরিস্থিতি বোঝার মতো করেই তার চরিত্রটিকে মাত্রা দিয়েছেন। লেডি বার্ডের মা একজন সীমাবদ্ধ ঘরানার মানুষ এবং মেয়ের অনুপস্থিতিতে তার মধ্যকার শূন্যতা উপলদ্ধি করা যায়।

এই ছবিতে ক্যাথলিক স্কুলের অভিজ্ঞতা বেশ হাস্যরসের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। যদিও এই হাস্যরসের মধ্যে স্কুলের প্রতি সম্মান অক্ষুণ্ণ হয়নি। স্কুলের ড্রামা থিয়েটারের দৃশ্যগুলো অনবদ্য।

স্কুলজীবন শেষ হওয়ার পথে আর সেখানে প্রেমের উপস্থিতি থাকবে না, তা কি হয়! আমেরিকান সংস্কৃতি স্কুলজীবনেই প্রেমের সম্পর্কগুলো সমর্থন করে। লেডি বার্ড প্রথমবারের মতো প্রেমে পড়ে স্কুল থিয়েটারের তারকা ড্যানির। নানাবিধ জটিলতার কারণে এই সম্পর্ক সামনের দিকে এগোয়নি। তার নতুন সম্পর্ক হয় কাইলের সাথে, যে তার নিজের মতো করেই অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিচালক গারউইগ ও তার অভিনেতারা দক্ষতার সাথেই কমবয়সী আবেগের দ্বিধা ও রোমাঞ্চ ফুটিয়ে তুলেছেন। একইসাথে একজন অল্পবয়স্কার অভিলাষ চরিতার্থ করার অস্বস্তি, ছলনা ও অনিশ্চয়তাগুলো চমৎকারভাবে আঁকা হয়েছে।

কৈশোরের প্রেম; Image Source: A24

এই ছবিটি এককভাবে পরিচালনা ও চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে গ্রেটা গারউইগের প্রথম ছবি। প্রধান চরিত্রটি বলতে গেলে পনেরো বছর অতীতের গ্রেটা নিজেই। ২০১৭ সালে টেলুরাইড ফিল্ম ফেস্টে প্রথমবার যখন এই ছবির প্রদর্শনী চলে, অনেক সমালোচক অবাক হয়েছিলেন; কারো প্রথম ছবি এতটা মার্জিত হতে পারে! অবশ্য যারা গারউইগের ক্যারিয়ার অনুসরণ করেছে, তাদের আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। গারউইগ ‘ফ্রান্সেস হা’ (২০১৩) ও ‘মিস্ট্রেস আমেরিকা’ (২০১৫) লেখার মাধ্যমে নিজেকে এর আগেই একজন দক্ষ চিত্রনাট্যকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

দুটি ছবিই কমবয়সী নারীর সৃজনশীল উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাহিনী নিয়ে আবর্তিত। দুটি ছবিই তিনি লেখক ও পরিচালক নোয়াহ বাউমবাকের সাথে পরিচালনা করেছেন। কিন্তু লেডি বার্ড স্বতন্ত্রভাবে শুধুমাত্র তারই এবং একান্তই ব্যক্তিগত ও আত্মজীবনীমূলক। যদিও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি ‘আত্মজীবনীমূলক’ শব্দটি ফিরিয়ে দিয়েছেন; লেডি বার্ডের মতো তিনি এতটা দুর্বিনীত ছিলেন না, এ-ই বলে।

গ্রেটা গারউইগ; Image Source: Scott Gries

লেডি বার্ড চলচ্চিত্রটি একটি সার্থক কমেডি-ড্রামা, যেটি স্বাধীন ছবির মতো অনুভূতি দিলেও মূলধারার সিনেমার মতোই সমানরকম শক্তিশালী। এর একটা কারণ, গারউইগ তার পার্শ্ব চরিত্রগুলো নির্বাচনে বেশ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। লেডি বার্ডের দুই প্রেমিক হিসেবে অভিনয় করেছেন লুকাস হেজেস ও টিমোথি শ্যালামেট। ২০১৬ সালের ছবি ‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি’ ছবিতে অভিনয় করে লুকাস অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। নতুন অভিনেতা হিসেবে বেশ নামও কুড়িয়েছিলেন সমালোচকদের। আর টিমোথি শ্যালামেট ‘কল মি বাই ইওর নেইম’ (২০১৭) ছবিতে অভিনয় করে অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

‘ম্যানচেস্টার বাই দ্য সি’ ছবিতে লুকাস হেজেস; Image Source: Amazon Studios

লেডি বার্ড সিনেমা ছোট ছোট নিকৃতি ও তা থেকে পরিত্রাণের অনুচ্চারণীয় আকুলতার মাধ্যমে বয়ঃসন্ধি সময়টি বোঝার চেষ্টা করেছে। কিশোর বয়সীরা কীভাবে একটি ব্যক্তিত্ব থেকে আরেকটি ব্যক্তিত্বে ঘুরপাক খেতে থাকে, নিজেকে বোঝার জন্যে একটা অস্থির চেষ্টা অব্যাহত থাকে, এরকম উত্থান-পতনের সময়ে পরিবারের উষ্ণতা পেতে চায়। কিন্তু, একইসাথে তা অপছন্দও করে; এ ব্যাপারগুলো সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে।

সায়োরসি রোনান ‘ব্রুকলিন’ (২০১৫) ছবিতে একটি কমনীয় চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন। এখানে নিজেকে সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে মেলে ধরে এই চপলা মূল চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন। এই ছবির রোনান একই সাথে বুদ্ধিমান ও আবেগপ্রবণ, সমানভাবে তীব্র ও সরল স্বভাবের অধিকারী। লেডি বার্ড তার উদ্ধত ও প্রবল সংলাপগুলো আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে থাকলেও একইসাথে তার মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার একটা অন্তঃপ্রবাহ সবসময়েই ধীরভাবে উপস্থিত। এই ব্যাপারটি রোনানের অভিনয়ে বেশ সাবলীলভাবে উঠে এসেছে। তার উচ্ছ্বাস ও আমেরিকান কিশোরীদের মতো চাঞ্চল্য দেখে তিনি আইরিশ, একথা মনেই হয় না।

লেডি বার্ডের বাবাকে প্রথমে খুব গুরুত্বপূর্ণভাবে না দেখালেও পরবর্তী সময়ে তার কারণ বোঝা যায়। দীর্ঘসময় ধরে বেকার থাকার কারণে পরিবারের যেকোনো ব্যাপারে নিজের মতামত জানানো থেকে সে বিরত থাকে। তবে এটা পরিষ্কার যে, লেডি বার্ড তার বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে এবং শেষ পর্যন্ত তার জীবনে মায়ের চেয়ে নিরীহভাবে তার বাবারই বেশি নিয়ন্ত্রণ দেখা যায়।

তারপরেও যে সম্পর্কটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে লেডিবার্ড ও তার মা। সম্পর্কটি ভালোবাসা দিয়ে আবৃত হলেও দুজনেই তা দেখাতে অপারগ হওয়ায় তাদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। মায়ের ভূমিকায় লরি মেটক্যাফ ছিলেন অনবদ্য। এর আগে তিনি কখনো এরকম বড় পর্দার চরিত্রে অভিনয় করেননি, কিন্তু এবার সুযোগ পেয়ে তার সম্পূর্ণটাই ব্যবহার করেছেন। আপাতভাবে লেডিবার্ডের প্রতি তাকে অনমনীয় দেখালেও প্রতিটি শক্ত আচরণের পেছনে প্রচণ্ড ভালোবাসা ও উদ্বেগের ছোঁয়া যথার্থভাবে তিনি অভিনয় দক্ষতায় দেখিয়েছেন। লেডিবার্ডের কলেজে ভর্তির সিদ্ধান্তের সময়ে তাদের দুজনের সম্পর্কের চরম রূপটি দেখা যায়।

যে তিন নারীতে ভর দিয়ে চলেছে এই সিনেমাটি; Image Source: Buckne/Deadline/REX/Shutterstock

গ্রেটা গারউইগ ২০০২ সালে ক্যাথলিক হাই স্কুলে পড়ালেখার সমাপ্তি টেনে নিউ ইয়র্কের স্বনামধন্য বার্নার্ড কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। নিজের শহর থেকে কৈশোরের আকাঙ্ক্ষিত মুক্তিটি তিনি পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু লেডি বার্ড সাক্ষ্য দেয়, তিনি কোথা থেকে এসেছেন, তা ভুলে যাননি।

This Bangla article is a review of 2017 movie Lady Bird written and directed by Greta Gerwig in her solo directorial debut.

Featured Image: A24

Related Articles