Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাকতূব: যে বইয়ে আপনার কথাই লেখা হয়েছে

আমরা অদৃষ্টে বিশ্বাস করি অনেকে। কারও বিশ্বাস পরিশ্রমে। কেউ স্রষ্টার হাতে সব ছেড়ে দেন। জীবনকে একেকজন একেকভাবে দেখে। সবার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। ভিন্নতার মাঝে আমরা কোনো এক বিন্দুতে মিলিত হই। সেখানে ভেদাভেদ নেই। দুঃখগুলো এক, না পাওয়ার গল্পগুলো এক, ব্যর্থতার অভিন্ন বৃত্তে আটকে পড়ার নিয়তি এক। লেখক পাওলো কোয়েলহো তার দৃষ্টিকোণ থেকে সেসব দেখার চেষ্টা করেছেন। দেখার চেয়ে দেখাবার চেষ্টাটাই প্রবল। ছোট ছোট উক্তি দিয়ে সাজানো ‘মাকতূব’ বইয়ে আপনি অসংখ্যবার নিজেকে খুঁজে পাবেন, বদলানোর তাগিদ অনুভব করবেন।

ব্রাজিলিয়ান লেখক পাওলো কোয়েলহো; Image Source: DW

আমাদের অবচেতন মনে অধিকাংশ সময় নেতিবাচকতা ঘুরপাক খায়। তা পারিপার্শ্বিক কারণে হোক কিংবা ব্যক্তিগত নেতিবাচকতার খপ্পরে পড়ে। মানবমনে ভালো কিছু যতটা সাড়া ফেলে, খারাপ তার চেয়ে দ্রুত ছড়ায়। ভাবনার জগতে যার গতি সম্ভবত আলোর চেয়ে বেশি। নেতিবাচক ভাবনা উঁকি দিলেও মানুষকে চলতে হয়। ভাবনাকে বাস্তবে রূপ না দেওয়া পর্যন্ত তা কোনো ক্ষতি করতে পারে না। বরং সময়ের তালে তালে কেটে যায়। সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর সঠিক ব্যবহার জানতে হয়। একটি ফল পেকে যাওয়ার পর না খেলে সেটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আবার কাঁচা থাকলে অপেক্ষা করতে হয় পাকা পর্যন্ত। পাকার পর তা উপভোগ করতে হয়। উপভোগের সময়টা মূলত বর্তমান। বর্তমানকে ফেলে না রেখে কাজে লাগাতে জানলে জীবন সুন্দর। 

মাকতূব আশপাশকে নতুন করে জানতে শেখাবে; Image Courtesy: Jahirul Quayum Feroz 

জীবনকে কাজে লাগানোর সময়ে অনেকে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। নির্ভরশীলতা খারাপ নয়। তবে অতিরিক্ত যেকোনো কিছুই খারাপ। নিজের শক্তি খর্ব করে দেয়। পাশাপাশি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা জিনিসের বলয় থেকে বের হতে দেয় না বলে চারপাশ অন্ধকার লাগে। সম্ভাবনাও তখন নজর এড়িয়ে যায়। সূর্যের দিকে একটানা কতক্ষণ তাকিয়ে থাকার মতো। সূর্য আমাদের আলো দেয়, সময় চেনায়, পথ দেখায়। দিনের আলোতে সব সহজ হয়। কিন্তু একটানা সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকার পর চোখ নামালে চারপাশে কিছুই দেখা যায় না। একটা ঘোর তৈরি হয়, যা ভীষণ ক্ষতিকর। ক্ষতি প্রসঙ্গে চলে আসে, পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ও কাপুরুষোচিত অস্ত্র কোনটি- জিজ্ঞেস করলে একেকজন একেক জবাব দেবে। খুব কম সংখ্যক লোকের উত্তর হবে, ‘কথা!’ অথচ এটাই সবচেয়ে ভয়ানক অস্ত্র। কোনো চিহ্ন না রেখেই কেবল কথা দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো সম্ভব।

খড়কুটোর মতো উড়ে যাওয়া জীবনে মাকতূব হতে পারে আগলে ধরার মাধ্যম; image: Jahirul Quayum Feroz 

আমরা প্রতিনিয়ত এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালাই। কখনও শিকার হই, কখনও শিকারি। মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানোর সবচেয়ে সুন্দর মাধ্যম কথা, দূরে সরে যাবার কারণও এটি। বুঝে-শুনে প্রয়োগ করতে হয়। সুন্দর মনে নাকি সৃষ্টিকর্তা বাস করেন! সৃষ্টিকর্তা সেখানেই বাস করেন, যেখানে তাঁকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। বলা বাহুল্য, সুন্দর মন ছাড়া স্রষ্টাকে আপন করে নেওয়া অসম্ভব। যদি কেউ এই কথার বিরোধিতা করে, বুঝতে হবে মিথ্যে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, যা আখেরে ক্ষতির কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ নিরেট সত্য বলতে ভয় পায়। অনুজ কিংবা স্নেহভাজন কেউ এমন কিছু করতে চায়, যা কোনোভাবেই হওয়ার নয়, তবুও কেন যেন মন ভাঙার ভয়ে আমরা সত্যটা বলি না। এই চর্চা থাকতে হবে। অসম্ভবকে অসম্ভব বলতে হবে। মৃত্যু যেমন আসবে; আজ, কাল বা পরশু, সুনিশ্চিত। যত পরিকল্পনা থাকুক আমাদের, মৃত্যুর সময় হলে সকলে নিরুপায়।

বর্তমানকে উপভোগ করার উৎসাহ দেয় মাকতূব। নইলে ঝরা পাতা কিংবা নষ্ট ফলের মতো অকেজো হয়ে যাবে সব; Image Courtesy: Jahirul Quayum Feroz

বইয়ে লেখক বিশাল কোনো গল্প ফাঁদেননি। যা লিখেছেন, যতটুকু লিখেছেন, রোজকার বাজারের ফর্দের মতো চেনা। একবার চোখ বোলালেই বুঝতে পারবেন, কী লিখেছে, কেন লিখেছে। পাওলো কোয়েলহোর যারা নিয়মিত পাঠক, তারা জানেন- তিনি বইয়ে কিছুটা আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া রাখেন। দর্শনের ডালি সাজিয়ে বসেন। এসবের মাধ্যমে হতাশ হৃদয়ে সুচিন্তার বীজ বুনে দেন। মাকতূবেও ব্যতিক্রম ঘটাননি। বাংলা অনুবাদও হয়েছে যথেষ্ট ঝরঝরে। যারা হতাশায় ডুবে আছেন, বইটি তাদের বেশ যত্ন করেই তীরে আনবে। জমে থাকা বরফ কেটে জীবনের তরীকে ফের ঢেউয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামাবে। বইয়ের প্রতিটি উক্তি খুব গভীরভাবে ভাবনার উদ্রেক ঘটাবে সচেতন ও অবচেতন মস্তিস্কে। 

মাকতূব শব্দের অর্থ যা লেখা হয়েছে; Image Courtesy: Jahirul Quayum Feroz

মাকতূব! শব্দটির বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘যা লেখা হয়েছে।’ বইয়ের নামকরণ সার্থক। আক্ষরিক অর্থেই বইতে যা লেখা হয়েছে, একটু পর্যবেক্ষণ করলে আপনার মনে হবে, আপনার জীবনে এমনই কিছু লেখা হয়েছিল যার রেখা ধরে আপনি এগিয়ে চলছেন! বইটি পড়ার পর আপনি বুঝতে পারবেন, এতে যা লেখা হয়েছে, তা আপনার জীবনের প্রতিচ্ছবি। একদম স্বচ্ছ কাচের মতো। এতদিন চোখে ধুলা রেখে যে কাচকে ঘোলা মনে হতো, মাকতূব পড়ার পর ঘোলাটে আবরণ কেটে সব পরিস্কার হয়ে যাবে।

Language: Bangla
Topic: Maktub book review, written by Paolo Coelho
Feature image: Jahirul Quayum Feroz

Related Articles