Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মেঘে ঢাকা তারা : বিস্মৃত এগারো বাঙালি বিজ্ঞানীর গল্প

বিস্মৃত এগারো জন বাঙালি বিজ্ঞানীকে নিয়ে অমর একুশে বইমেলা ২০১৯ এ প্রকাশিত হয় ‘মেঘে ঢাকা তারা: বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি বিজ্ঞানী‘। ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত এই বইটি লিখেছেন অতনু চক্রবর্ত্তী।

বইটিতে যে এগারোজন বাঙালি বিজ্ঞানীর কথা উঠে এসেছে, তাদের প্রায় কারো নামই এখন আর সেভাবে শোনা যায় না। প্রতিবছর গুগল হয়তো এদের কারো কারো প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ডুডল করে, কিন্তু সেই মানুষটির কাজ, বা তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না বললেই চলে।

‘মেঘে ঢাকা তারা’ বইয়ের প্রচ্ছদ; Image Source: Atonu Chakrabortty

দুঃখজনক হলেও সত্যি, তাদের না চিনলেও তাদের কাজের সঙ্গে আমরা পরিচিত। এর অনেকগুলো আমাদের চোখের সামনেই আছে, আবার কিছু কাজ থেকে আমরা প্রতিদিনের জীবনে প্রচুর সুবিধাও ভোগ করছি। শুধু কাজগুলোর সঙ্গে মানুষগুলোর নাম নেই দেখে আমরা তাদেরকে চিনতে পারি না। যে মানুষগুলো এদেশে বিজ্ঞান চর্চার ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন, আবিষ্কার করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত বেশ কিছু জিনিস, তাদের এভাবে আড়ালে পড়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ, তারা বাঙালি।

নির্মম এই সত্যটি আমাদের জন্য বড় লজ্জার। আশার কথা হলো, একেবারে ইতিহাসের অতলে হারিয়ে যাওয়ার আগেই লেখক অতনু চক্রবর্ত্তী এই বিজ্ঞানীদের জীবন ও কাজ তুলে আনার চেষ্টা করেছেন দুই মলাটে। নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করে দিতে চেয়েছেন তাদের সাথে। বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি এ প্রসঙ্গে লিখেছেন,

মেঘে ঢাকা তারা একটি ভিন্ন ধরনের বই। আমরা যখন কোনো শিল্পী, সাহিত্যিক বা বিজ্ঞানীকে নিয়ে বই লিখি, সবসময়ই তখন বিখ্যাত কাউকে বেছে নেই। আমরা ধরেই নিয়েছি কারো জীবনী লিখতে হলে এমন কাউকে বেছে নিতে হবে যাকে সবাই এক নামে চেনে। অতনু চক্রবর্ত্তী কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কাজ করেছেন। তার বইটি লিখেছেন এগারোজন বাঙালি বিজ্ঞানী নিয়ে, যাদের সবাই বিস্মৃতপ্রায়। নূতন প্রজন্ম যদি এদের কাউকে চিনতে না পারে আমি একটুও অবাক হব না, কিন্তু তাঁদের কয়েকজন সম্পর্কে একটুখানি বলা হলেই তাঁরা বিষ্ময়ে অভিভূত হয়ে যাবে।

কারা এরা, যাদের সম্পর্কে জানলে অভিভূত হয়ে যেতে হবে? চলুন, দেখে নেওয়া যাক।

গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের লেখা বই ‘আমার দেখা পোকা-মাকড়’; Image Source: munirhasan.com

গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য

ভারতীয় উপমহাদেশে কীট আচরণ বিদ্যার পথিকৃৎ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য। পিপড়ার লিঙ্গ নির্ধারণের পরীক্ষা এবং এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তিনি। ইংরেজিতে পেপার লিখেছেন ২২টি। এই ২০২০ সালে এসেও ২০টি পেপার লিখেছেন, এমন বাঙালি বিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়াটা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না!

মধুসূদন গুপ্ত

ভারতীয় উপমহাদেশের গোঁড়ামি ভেঙে দেওয়ার কাজটি খুব ভালোভাবে করেছিলেন তিনি। প্রাচীন চিকিৎসাবিজ্ঞানী সুশ্রুতের পরে প্রথম ভারতীয় হিসেবে শবব্যবচ্ছেদ করেন তিনি। এর মাধ্যমে ভারতে সার্জারী করার প্রচলনও ঘটান মধুসূদন। প্রাচীনপন্থী হিন্দুরা প্রয়োজন হলেও অস্ত্রোপাচার করতে রাজি হতেন না। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদের চিকিৎসা দিতেন মধুসূদন।

সতীদাহ প্রথা ভেঙে বিদ্যাসাগর যেমন ভারতীয় অনেক নারীর জীবন বাঁচিয়েছেন, তেমনি মধুসূদনও বাঁচিয়ে দিয়েছেন অনেক প্রাণ। তিনি না হলে কবে এসে ভারতে অস্ত্রোপচার বা সার্জারির প্রচলন হতো, আর কে-ইবা সেটা করতে রাজি হতেন, কে জানে!

রাধানাথ শিকদার; Image Source: Alok Bhatt

রাধানাথ শিকদার

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গের নাম কী, বলুন তো? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, মাউন্ট এভারেস্ট। আপনি কি জানেন, এটি কে আবিষ্কার করেছিলেন? কে প্রথম এটি মেপে, হিসেব কষে দেখিয়েছিলেন, এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্বতশৃঙ্গ? একজন বাঙালি। রাধানাথ শিকদার।

তাঁর ঊর্ধ্বতন ইংরেজ কর্মকর্তা কর্নেল ওয়া নিজের পুরনো প্রভু জেনারেল এভারেস্টকে খুশি করার জন্য হিমালয় পর্বতের শৃঙ্গ ‘পিক ফিফটিন’-এর নাম দিয়ে দেন মাউন্ট এভারেস্ট। আসলে, এভারেস্ট কর্নেল ওয়াকে এই পদ পাইয়ে দিয়েছিলেন। সেই কৃতজ্ঞতাই জানালেন ওয়া। মাঝখান থেকে হারিয়ে গেলেন রাধানাথ শিকদার।

নেচারে মাউন্ট এভারেস্ট নিয়ে ১৯০৪ সালে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল। সেই প্রবন্ধে জেরাল্ড বারার্ড লিখেছেন,

১৮৫২ নাগাদ কলকাতার দফতরে কর্মরত প্রধান গণক দেরাদুনে অবস্থানরত সার্ভেয়র জেনারেল অ্যান্ড্রু ওয়াকে জানালেন, ‘আ পিক ডেজিগনেটেড ‘XV’ (ফিফটিন) হ্যাড বিন ফাউন্ড টু বি হায়ার দ্যান এনি আদার হিদারটু মেজারড ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’।

হ্যাঁ, রাধানাথ শিকদারের কথা এখানে প্রধান গণক হিসেবে এসেছিল। কিন্তু তাঁর নাম আর আসেনি।

ভূতাত্ত্বিক বিভিন্ন জরিপের কাজও করেছেন রাধানাথ। হায়দ্রাবাদের বিদর থেকে মুসৌরির ব্যানোগ পর্যন্ত ৮৭০ মেইল দূরত্বের গ্রেট আর্কটিও তিনি জরিপ করেছিলেন। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এটাও তিনি করেছেন এভারেস্ট সাহেবের অধীনে। তাঁর এই দক্ষতা ছিবড়ে নেওয়ার জন্য এভারেস্ট এবং ওয়া রাধানাথ যেন আর কোথাও যেতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। বারবার তাঁর বদলির আবেদন পর্যন্ত নাকচ করে দিয়েছেন। এমনকি এভারেস্ট তো তাঁর বাবাকে চিঠি লিখে বলেছিলেন, ছেলেকে দেখতে চাইলে এখানে চলে আসুন। ছুটিতে গেলে ওর কাজে বাধা পড়বে।

এই কৃতি বাঙালিকে পৃথিবী মনে রাখেনি। আমরাও কি রেখেছি?

রাধাগোবিন্দ চন্দ্র

বাঙালি এই জ্যোতির্বিজ্ঞানীর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট ছিল না। অথচ সেই আমলে, ১৯২০ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে ৩৮ হাজার ভ্যারিয়েবল স্টার পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তিনি। ভ্যারিয়েবল স্টারের বাংলা করেছিলেন ‘বহুরূপ তারা’। জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক পারিভাষিক শব্দের এত সহজ বাংলা তো আমাদের এখনকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরাও করতে পারেন না! 

তাঁর কাজের জন্য তিনি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ভ্যারিয়েবল স্টার অবজার্ভার থেকে সম্মান পেয়েছেন। ওরা তাঁকে সদস্যও করে নিয়েছিল। সম্মান পেয়েছেন ফ্রান্স সরকারের কাছ থেকেও। এমনকি ব্রিটেন অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনেরও সদস্য ছিলেন তিনি।

জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে এদেশে যারা বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের জন্য রাধাগোবিন্দ চন্দ্র অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন আজীবন।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র

তালিকার এই মানুষটি সম্ভবত অনেকের পরিচিত। তবে নামে চিনলেও তাঁর কাজের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানি না আমরা।

খুলনার মানুষ আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র। শুধু গবেষকই না, সফল উদ্যোক্তাও ছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্সি কলেজে থাকতেই দেশি-বিদেশি জার্নালে তাঁর লেখা ১০১টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে! ৮০০ টাকা মূলধনে গড়ে তুলেছিলেন বেঙ্গল ক্যামিকেলস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস ওয়ার্কস। সেই উদ্যোগের বর্তমান মূল্য আট কোটি টাকার কাছাকাছি!

প্রফুল্লচন্দ্রের জীবন, গবেষণা ও সামাজিক কাজকর্ম দারুণভাবে উঠে এসেছে এই বইতে।

অসীমা চট্টোপাধ্যায়; Image Source: anandabazar.com

অসীমা চট্টোপাধ্যায়

নারী হওয়ায় সমাজের সাথে কী ভীষণ লড়াই করতে হয়, সেটা আজকের নারীরা ভালোভাবেই জানেন। আর, অসীমা ছিলেন বিশ শতকের মানুষ। কিন্তু সব বাধা ঠেলে নিজেকে টেনে নিয়ে গেছেন তিনি।

সে সময় রসায়ন বিভাগে স্নাতক শিক্ষার্থী ছিলেন মাত্র তিনজন। তার একজন ছিলেন তিনি। ছেলে-মেয়েরা একসাথে পড়ত, এই নিয়ে কম ঝামেলা সহ্য করতে হয়নি তাঁকে। এর মধ্য দিয়েই অনার্স শেষ করেছেন, পেয়েছেন স্বর্ণপদক।

মাস্টার্স শেষ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা করেছেন আমৃত্যু। বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং এদের মধ্যকার রাসায়নিক নিয়ে চমৎকার সব কাজ আছে তাঁর। স্টেরয়ডাল এলকালয়েড নিয়েও কাজ করেছেন। পাশাপাশি, ‘ভারতীয় বনৌষদি’ নামে ছয় খণ্ডের ঢাউস গ্রন্থ সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

অসীমা চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে ডুডল; Image Source: anandabazar.com

বিজ্ঞানী সত্যেন বোস তাঁকে নিয়ে বলেছিলেন,

বিজ্ঞান কলেজে যখন সব ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তখন যে একটা ঘরে দেখবে আলো জ্বলছে, সেটা অসীমা চট্টোপাধ্যায়ের ঘর।

উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী

কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছিলেন উপেন্দ্রনাথ। তাঁর একার চেষ্টায় এই মহামারীকে পৃথিবীর বুক থেকে নির্মূল করা গিয়েছিল। তিনি যখন এন্টিমাইক্রোবিয়াল ড্রাগ ইউরিয়া স্টিবামাইন আবিষ্কার করেছেন, তখনও পেনিসিলিনও আবিষ্কার হয়নি!

মৃণাল কুমার দাশগুপ্ত

দেশে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে বিদেশে পড়তে গিয়েছিলেন মৃণাল। এর আগে শিশির কুমার মিত্রের অধীনে কিছুদিন গবেষণা করেছিলেন। পরে তাঁর সুপারিশে ‘জডরেল ব্যাংক এক্সপেরিমেন্টাল স্টেশন’ নামে বিখ্যাত গবেষণাগারে অধ্যাপক লোভেলের অধীনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এখানে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছিলেন রোজার জেনিসন।

তাঁদের গবেষণার মধ্য দিয়েই প্রথম কৃষ্ণগহ্বরের পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়!

হাবিবুর রহমান

গণিতজ্ঞ ও পেশায় শিক্ষক হাবিবুর রহমান একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হন।

২৫শে মার্চের ভীষণ নির্মমতার পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের বেশিরভাগটাই খালি হয়ে যায়। কিন্তু হাবিবুর রহমান নিজের বাসায় কালো পতাকা উত্তোলন করেন এবং সেখানেই অবস্থান করেন।

সেই কালে বাংলায় গণিত নিয়ে চমৎকার সব কাজ করেছিলেন তিনি। পঞ্চম-ষষ্ট শ্রেণী থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর জন্যেও গণিত নিয়ে বই লিখে গেছেন। আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থার পেছনেই তাঁর অবদান নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে একটি হল আছে। কিন্তু সেখানকার কেউই তাঁকে গণিতজ্ঞ হিসেবে চেনেন না, চেনেন বুদ্ধিজীবী হিসেবে। এটা লেখক নিজেই সেখানে গিয়ে যাচাই করে দেখেছেন। একজন বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধির ব্যবহার, মানে তাঁর কাজের ব্যাপারে না জানলে যে তাঁকে জানা হয় না, সেটা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

শুধু সেই হলের শিক্ষার্থীরাই নয়, আমরা কয়জনই বা তাঁকে চিনি?

শম্ভুনাথ দে

কলেরা নিয়ে গ্রাম বাংলায় তখন ভীষণ ভয়। মহামারিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে গ্রামের পরে গ্রাম। কেউই আসলে সমস্যাটা শনাক্ত করতে পারছিল না, চিকিৎসা কীভাবে করবে? লোকে ততদিনে কলেরার নামও দিয়ে দিয়েছে। ওলাবিবি। একবার আসলেই হয়েছে, সব শেষ!

শম্ভুনাথ এই রোগ নিয়েই গবেষণা করেছেন। কারণ উদঘাটন করে দেখিয়েছেন, সমস্যাটা কী। মোটামুটি তাঁর একার চেষ্টাতেই ভারতীয় উপমহাদেশ ওলাবিবির হাত থেকে মুক্তির সুযোগ পেয়েছিল।

আব্দুস সাত্তার খান

আব্দুস সাত্তার খান নিজ দেশে কখনোই সেভাবে স্বীকৃতি পাননি। কিন্তু পৃথিবীর উন্নত সব দেশে তাঁকে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। স্বাভাবিক। যে মানুষ চল্লিশটির বেশি সংকর ধাতু তৈরি করেছেন, মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ-১৫ ও এফ-১৬ এর ইঞ্জিনের সমস্যা মেটানোর জন্য উদ্ভাবন করেছেন নিকেলভিত্তিক সংকর ধাতু; তাঁকে শ্রদ্ধা না করে উপায় কী?

এই হলেন বইয়ের এগারোজন বিজ্ঞানী। বইতে তাঁদের প্রত্যেকের জীবন বিস্তৃত কলেবরে উঠে এসেছে।

পর্যালোচনা

‘মেঘে ঢাকা তারা’ আসলেই আড়ালে পড়ে যাওয়া নক্ষত্রদের নিয়ে কথা বলেছে। দুই মলাটে তুলে এনেছে তাঁদের জীবন ও কর্ম। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাঙালি বিজ্ঞানীদের পৌঁছে দেওয়ার এই প্রচেষ্টার জন্য লেখক অতনু চক্রবর্ত্তী অবশ্যই সাধুবাদ পাবেন।

লেখকের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে এই বই নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। এই বিজ্ঞানীদের নিয়ে অন্তর্জালে কোথাও সেভাবে বিস্তারিত তথ্য নেই। সেজন্য যেখানেই তথ্যের খোঁজ পেয়েছেন, ছুটে গেছেন। নিজে যাচাই করে দেখেছেন সেসব তথ্য। কিন্তু নিজের রেফারেন্সে তো আর সরাসরি তথ্য দেওয়া যায় না। তাই কষ্ট করে বিভিন্ন ডকুমেন্ট ঘেঁটে বের করেছেন রেফারেন্স। সত্যি বলতে, এই বইটি নিজেই হয়তো অদূর ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসেবে গণ্য হবে।

বইটিতে বানান ভুল নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য প্রকাশনী এ ব্যাপারে দারুণ যত্নশীল ছিল। তবে বইটির মেকআপ বা সাজানোর কাজটি আরো যত্ন করে করা যেত। অধ্যায়ের মাঝের কিছু পৃষ্ঠা ছবির বিন্যাসের জন্য এমনভাবে খালি রয়ে গেছে যে, চোখে লাগে।

টোকিয়োতে ডঃ রাধা বিনোদ পালের স্মারক ছবির সামনে লেখক অতনু চক্রবর্ত্তী;  Image Source: Atonu Chakrabortty

লেখক পরিচয়

অতনু চক্রবর্ত্তীর জন্ম নড়াইলে। বর্তমানে কোরিয়ার পুসান বিশ্ববিদ্যালয়ে অণুজীববিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন। সেই সঙ্গে একই বিভাগে সহকারী গবেষক হিসেবে প্যান্ট মাইক্রোবায়োলজি গবেষণাগারে কাজ করে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞান ভালোবাসেন ও এ নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। বিজ্ঞানকে ছড়িয়ে দিতে চান সবার মাঝে। তাই বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে যে কয়দিন সুযোগ পেয়েছিলেন, কাজ করেছেন বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড কমিটিতে।

এছাড়াও, বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখি করেন। সম্প্রতি জীববিজ্ঞান নিয়ে তাঁর লেখা ‘জীববিজ্ঞানের জন্য ভালোবাসা‘ বইটি প্রকাশিত হয়েছে। অমর একুশে বইমেলা ২০২০-এ ‘মেঘে ঢাকা তারা’-এর দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশ পাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তাঁর হাত ধরে আধুনিক প্রজন্ম বাঙালি বিজ্ঞানীদের সাথে পরিচিত হবে, তাঁদেরকে হৃদয়ে লালন করবে, আগ্রহী হয়ে উঠবে গবেষণায়-এটুকু আশা বোধ হয় করা যায়।

বইটি অনলাইনে কিনতে চাইলে ক্লিক করতে পারেন নিচের লিংকে- 

https://cutt.ly/xfkm5yS

This article is in Bangla. It's a review of a biography book of scientists named Meghe Dhaka Tara by Atonu Chakrabortty.

Featured Image: Writer

Related Articles