Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভালেরি অ্যান্ড হার উইক অভ ওয়ান্ডার্স (১৯৭০): কিশোরীর বেড়ে ওঠার গল্প

বিশাল বাগানের মাঝের ওই ছোট্ট কুঠিতে, ১৩ বছরের এক কিশোরী নিশ্ছিদ্র নীরবতায় ঘুমোচ্ছে। ছাদ বেয়ে সন্তর্পণে কেউ একজন তার কক্ষে প্রবেশ করল। তারপর ঘুমন্ত কিশোরীর কানের দুল খুলে নিয়েই ছাদ বেয়ে নেমে ছুট দিল লোকটি। কিশোরীর ঘুম ততক্ষণে কেটে গেছে। মুহূর্তখানেক পরিস্থিতি বুঝে উঠে দুলজোড়া উদ্ধারে লোকটির পিছুপিছু দৌড়াতে লাগল সে। দৌড়াতে গিয়েই নেউলের মুখোশ পড়া বীভৎস এক ব্যক্তির মুখোমুখি হলো কিশোরী। এবং সেই মুহূর্ত থেকেই বিরতিহীনভাবে অস্বাভাবিক কিছু ঘটনাবলীর সামনাসামনি হতে লাগল সে। পরাবাস্তব এক দুনিয়াতে পা রেখেছে যেন সে। অসংখ্য রূপক দৃশ্যে ভারি এই সিনেমার, প্রারম্ভিক এ দৃশ্য সেসব রূপকের একটি ক্ষুদ্র অংশ।

জ্যারোমিল জায়ার্স (এরোমিল ইয়েরেস)-এর ‘ভালেরি অ্যান্ড হার উইক অভ ওয়ান্ডার্স’ সিনেমাটি যেন শব্দ এবং ইমেজের প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ এক ভাণ্ডার। গল্প বর্ণনার চেনা ঢঙে এ সিনেমার গল্পকে ঠিক বয়ান করা সম্ভব নয়। আকৃতি অনুসারে এ গল্প কিছুটা সংকীর্ণ এবং প্রকৃতিগত দিক থেকে পুরোপুরি দ্ব্যর্থবোধক। হতে পারে, উপন্যাসের প্রতি সৎ থেকেই এই সিনেমা এমন দ্ব্যর্থবোধকতায় অটল থেকেছে। সহজ ভাষায় গল্পটিকে সংক্ষেপে বললে দাঁড়ায়; ১৩ বছরের কিশোরী ভালেরি, সে থাকে তার এক বয়স্কা খালার সাথে। হঠাৎ তার খালা নিরুদ্দেশ হয়ে যায় এবং যুবতী হয়ে ফিরে আসে। সিনেমা এগিয়ে চলার সাথে সাথে খালার সাথে ভালেরির সম্পর্ক এবং তার বাবা-মায়ের সম্পর্কে জানতে পারা যায়।

বহু উপায়ে ব্যাখ্যার উপযুক্ত এই গল্পকে ধরা যায়, ভালেরির বাবা-মা’কে খুঁজে বেড়ানোর সফর হিসেবে। তবে গল্পের মূল কেন্দ্রের জায়গায়, তা বড়জোর একটি অংশ হয়ে থাকবে। ভালেরির রোজকার জীবন নানা কল্পচিত্রে সাজানো। সরলতায় ঘন কল্পচিত্র। কিন্তু তার চারপাশটা বদলে যায়, তার যখন প্রথমবারের মতো ঋতুস্রাবের অভিজ্ঞতা হয়। এবং এখানটাতেই গল্পের মূল শেকড় বিস্তৃত। সেই থেকে ভালেরি এক নতুন কাঁচে দেখতে শুরু করে তার পৃথিবীটাকে, যে কাঁচ যৌনতার ভুলভাল ব্যাখ্যা আর অদ্ভুতুড়ে চরিত্রদের আনাগোনায় হয়ে ওঠে অস্বচ্ছ। এবং ভালেরি যতই তার নতুন কাঁচের কল্পপৃথিবীর গভীরে যেতে শুরু করে, ততই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে বাস্তব আর কল্পজগতকে আলাদা করা।

ভালেরির কল্পজগতের একটি সুরিয়াল দৃশ্য;
Image Source: Studio Barrandov

পরিচালক এরোমিল ইয়েরেস, ষাটের দশকের চেক নব-তরঙ্গের সিনেমার পরিচালকদের একজন। তবে ‘ভালেরি অ্যান্ড হার উইক অভ ওয়ান্ডার্স’ পুরোপুরিভাবে চেক নব-তরঙ্গের সিনেমা নয়। কেননা, মোটাদাগে সেই ন্যারেটিভে এ সিনেমা এগোয়নি। শুধু তা-ই নয়, এরোমিল ইয়েরেসের নিজস্ব বৃত্তেরও বাইরের কাজ এটি। ভালেরির গল্পটা স্বকীয় ধারা মেনে চলেছে। যৌনাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে প্রথমবার বুঝতে পারার জটিলতাকে, অসংখ্য রূপক, আর দৃশ্যগত ও ভাবগত দিক থেকে ফ্রয়েডিয়ান তত্ত্বের ছায়ায় দেখিয়ে অনন্য এক ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছে এ সিনেমা।

“আমি ঘুমিয়ে আছি এবং এই সবকিছুই আমার কল্পনা।”

সিনেমা আরম্ভের কিছু সময় পরে, ভালেরির এ সংলাপ জানান দেয় ঘোরলাগা বাস্তবের এবং এটাও নিশ্চিত করে, পর্দায় ঘটতে যাওয়া সবকিছুই ঘটবে এই কিশোরীর অবচেতনে। কিন্তু যা ঘটছে, তা এতই সারল্যমাখা যে, বাস্তব বৈ অন্য কিছু খেয়ালে আসে না। ভালেরি এই ঘোরলাগা বাস্তবের মুখোমুখি তার দিবাস্বপ্নে হচ্ছে, নাকি দুঃস্বপ্নে- নাকি দুটোই; সে প্রশ্ন প্রথম উত্থিত হয় তার ঋতুস্রাবের পর থেকে।

ভালেরির প্রথম ঋতুস্রাবের অভিজ্ঞতাকে রূপকের ব্যবহারে বোঝাতে দেখানো হয়; বেলিফুলের মাথায় এক ফোঁটা রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। এই গোটা দৃশ্যটি তৈরি করে স্মরণীয় এক কাব্যিক মূর্ছনার। এর পরপরই গল্পের গতিপথ বদলে ধাবিত হয় ভ্যাম্পায়ার, কালো জাদু, অসৎ পাদ্রী, ডাইনী শিকারের মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউরোপিয়ান লোককাহিনীর দিকে। ভালেরির সদ্য নারীত্বে পদার্পণকে নাটকীয় করে তুলতেই এই বিষয়গুলোর সন্নিবেশ ঘটানো হয়। সিনেমার নামে উল্লিখিত ওই ‘সপ্তাহ’ দিয়ে নারীত্ব পাওয়ার পরের স্বপ্নিল সময়টাকে নির্দেশ করা হয়েছে।

নেউলের মুখোশ পরা সেই অদ্ভুত জাদুকর;
Image Source: Studio Barrandov

সিনেমার মূল ন্যারেটিভ, বিভিন্ন অদ্ভুতুড়ে চরিত্র দিয়ে ভালেরির নিজের যৌন আকাঙ্ক্ষাকে বুঝতে পারা এবং খুব সরলভাবে বিভিন্ন মানুষের প্রেমে পড়ে যাওয়া দিয়ে তার সাবালিকা হয়ে ওঠার দিকটাকে উপস্থান করে। ভালেরি যেন মুক্তচিন্তার জাগরণ আর প্রথাগত বিশ্বাসের মাঝে ভাগ হয়ে যায়। এই বিভক্তি শুধু তার আগের সত্ত্বা আর নতুন বোধের সঞ্চারণ ঘটা সত্ত্বার মাঝেই নয়, বরং তার সমবয়সী কিশোর ইগলেট, যার উপস্থিতি শুধুমাত্র রূপক ন্যারেটিভে আর মূল ন্যারেটিভের ভ্যাম্পায়ার আকৃতির সেই মানুষটির মাঝে। এখান থেকেই ‘ভালেরি অ্যান্ড হার উইক অভ ওয়ান্ডার্স’ হয়ে যায় দ্বৈততার সিনেমা। সরলতা এবং যৌনতা, বিশ্বাস এবং স্বাধীনতা, ভয় এবং আনন্দের মাঝে সেতু স্থাপনের একটি ফলক হিসেবে উল্লেখ করা যায় এই সিনেমাকে।

অর্থ এবং আকৃতির দ্বৈততা অর্জন করতে ইয়েরেস এই সিনেমার নান্দনিক উপস্থাপনায় অনেককিছুকে একত্র করেছেন। দ্বিমাত্রিক ভিজ্যুয়াল আর লুবোস ফিসারের সঙ্গীত দিয়ে, দৃশ্য আর সঙ্গীতের চেনা সম্পর্কে বৈপরীত্য এনেছেন তিনি। নেউলের মুখোশ পরিহিত অদ্ভুতুড়ে মানুষটি যেসব দৃশ্যে উপস্থিত ছিলেন, সেসব দৃশ্যে এই সঙ্গীত আর দৃশ্যের সংঘর্ষ আরো বেশি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। এসব দৃশ্যে ব্যবহার করা অনেকটা ঘুমপাড়ানি গানের মতো সঙ্গীত অদ্ভুতুড়ে চরিত্র এবং সিনেমার প্রকৃতির স্বভাববিরুদ্ধ। অন্ধকার কিছু যে ভালেরিকে সবসময় ছেয়ে থাকবে, সেটি নির্দেশ করতে সঙ্গীত দিয়ে দৃশ্যগুলোর মেজাজে বৈপরীত্য সৃষ্টি করেছেন ইয়েরেস। সিনেমার আবহগত অস্পষ্টতাকে সঙ্গীত আরো জটিল করছে মনে হলেও, লুবোস ফিসারের আবহসঙ্গীত অন্যরকম এক মোহময়তা সৃষ্টি করে।

মুখোশ পরা অবস্থায় ভালেরি, (সুরিয়াল ইমেজারি);
Image Source: Studio Barrandov

‘ভালেরি অ্যান্ড হার উইক অভ ওয়ান্ডার্স’-এর গ্রামটি স্থান নিয়েছে ছেলেবেলার রূপকথার গল্পের সেসব গ্রামে। একইসাথে মধ্যযুগীয় এবং উনিশ শতকের গোড়ার দিককার গ্রাম্য পরিবেশের গন্ধ খুঁজে পাওয়া যায় এতে। ভালেরির সারল্যকে ফুটিয়ে তুলতে সিনেমায় ‘মিজ-অঁ-সেন’-এর ব্যবহার করেছেন ইয়েরেস। এর চমৎকার ব্যবহার সিনেমার প্রারম্ভিক দৃশ্যেই পাওয়া যায়। ভালেরির গায়ের জামা থেকে শুরু করে ঘরের কিংবা বিছানার রঙ- সবকিছুতেই সাদাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, ভালেরির সরলতা উপস্থাপন করতে।

সিনেমার অধিকাংশ শট অবশ্য ভালেরির মুখের ক্লোজআপে নেওয়া হয়েছে। কখনো মিডিয়াম ক্লোজও হয়েছে, কখনো আবার পরিস্থিতি বুঝে এক্সট্রিম ক্লোজআপ ব্যবহার করা হয়েছে। এই ক্লোজআপ শটগুলোতে ভালেরির অভিব্যক্তি, সিনেমার বাস্তব আর কল্পনার মাঝের সূক্ষ্ম ফারাককে আরো জটিল করে তুলেছে। ভালেরির চলন-বলনে নমনীয়তা এতখানিই যে, তাকে দেখা যেতে পারে ১৩ বছর বয়সী যেকোনো সাধারণ মেয়ের জায়গায়। রূপকথার গল্পের রাজকুমারীদের সহজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো ভালেরির সারল্যে হয়ে উঠেছে, যেকোনো ত্রয়োদশীর চেনা অবচেতন। এবং ডিটেলড্ ওয়াইড শটগুলো তার চরিত্রটিকে আরো বেশি কাছের আর চেনাজানা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।

বিশ্বাস এবং বাস্তবের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক উপস্থাপন করাটাই ছিল এ সিনেমার সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার। এবং তা বেশ নিখুঁতভাবেই করা হয়েছে। তবে ধর্মতত্ত্বের বিশ্বাস নয়, বরং প্রধান চরিত্রের নৈতিক বিশ্বাসের জায়গাটিই সিনেমার গোটা ন্যারেটিভ গঠন করে। এই চরিত্রের কল্পনাবিলাসই আবার মাঝেমধ্যে ন্যারেটিভে বিচ্ছিন্নতা এনেছে। ভালেরির সদ্য আবিষ্কৃত যৌনচাহিদা কোনো অদৃশ্য শক্তির দ্বারা নিবৃত; এমনটা দেখাতে ধর্মের প্রসঙ্গ গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। ভিজ্যুয়ালেও সেটা প্রকাশ পায়। সিনেমার বক্তব্য ধর্মান্ধদের প্রশ্নের সম্মুখীন করার পাশাপাশি, নিজেকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এবং শেষ দৃশ্যটি বিশ্বাস ও ভালেরির কামনা; দুয়ের মাঝে যোগসূত্র বয়ে আনে বিদ্রূপাত্মক ভঙ্গিতে।

শেষ দিকের একটি দৃশ্য;
Image Source: Studio Barrandov

‘ভালেরি অ্যান্ড হার উইক অভ ওয়ান্ডার্স’কে বলা যায় শারীরিক এবং মানসিক বিবর্তনের এক স্বপ্নিল যাত্রা। ইয়েরেসের পরিচালনা আর ন্যারেটিভ এ যাত্রার অস্থিমজ্জা হলেও, যাত্রার তৃপ্তি এনে দেয় ফিসারের আবহসঙ্গীত। কিশোরী ভালেরির জটিলতাগুলো যেমন সার্বজনীন, তেমনি এর ফলাফলও অনিবার্য। 

This article is in Bangla. It is a review of a surreal film 'Valerie and Her Week of Wonders' (1970). It's directed by Jaromil Jires, who is a part of the Czechoslovak New Wave. This film is an important work of the Czechoslovak New Wave, though it developed a narrative of its own.

Featurd Image: Studio Barrandov

Related Articles