Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মিসেস চ্যাটার্জি বনাম নরওয়ে: চলচ্চিত্র যখন কূটনৈতিক বিভেদের কারণ

গত ১৭ মার্চে ভারতে মুক্তি পায় ‘মিসেস চ্যাটার্জি বনাম নরওয়ে’ নামের একটি চলচ্চিত্র। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চলচ্চিত্রশিল্পের কেন্দ্র হিসেবে ভারতে প্রতি বছর বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পায়৷ কিন্তু সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মিসেস চ্যাটার্জি বনাম নরওয়ে’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। শুধু তা-ই নয়, এই বিতর্কের জল গড়িয়ে গিয়েছে বেশ খানিকটা। ভারত এবং নরওয়ের মধ্যে কিছুটা কূটনৈতিক টানাপোড়েনও তৈরি হয়েছে এই চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে। চলচ্চিত্রটির মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রানি মুখার্জি। এতে দেখানো হয়েছে কীভাবে একজন তার সন্তানকে ফিরে পেতে একটি দেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। একটি সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করেই এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন বলিউডের চলচ্চিত্র পরিচালক আশিমা চিব্বার।

সাগরিকা ভট্টাচার্য ও অনুরূপ ভট্টাচার্য তাদের দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে শান্তিতেই বসবাস করছিলেন নরওয়েতে। কিন্তু ২০১১ সালে প্রাপ্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নরওয়ের সরকারি ‘চাইল্ড কেয়ার সিস্টেম’ এর কর্মকর্তারা তাদের বাসায় হানা দেন। তাদের কাছে অভিযোগ দেয়া হয় যে সাগরিকা শাসন করার জন্য তার সন্তানের গায়ে মৃদু হাত তুলেছিলেন।

নরওয়ের শিশুর পরিচর্যার আইনগুলো অত্যন্ত কঠোর। আপনি যে সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠা মানুষই হন না কেন, যদি আপনি আপনার সন্তানের গায়ে হাত তোলেন এবং সেটি প্রমাণিত হয়, তবে সেখানকার আইন অনুযায়ী আপনাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দম্পতির বাসায় প্রথমবার হানা দেয়ার দেশটির ‘চাইল্ড কেয়ার সিস্টেম’ এর কর্মকর্তারা সতর্কবার্তা জারি করেছিলেন। পরবর্তীতে আবারও বাড়িতে হানা দেয়ার কর্মকর্তারা দেখতে পায় সাগরিকা তার হাত দিয়ে তাদের সন্তান অভিজ্ঞান ও ঐশ্বরিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে এবং তিন বছর বয়সী শিশু অভিজ্ঞান তার বাবা-মায়ের সাথে একই বিছানায় ঘুমাচ্ছে।

Image source: Outlook India

একপর্যায়ে নরওয়ের ‘চাইল্ড কেয়ার সিস্টেম’ এর কর্মকর্তারা দুটো শিশুকে তাদের বাবা-মায়ের হাত থেকে নিয়ে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া সাগরিকা-অনুরূপ দম্পতিকে তাদের সন্তানের সাথে দেখা করার ক্ষেত্রেও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা তাদের সন্তানের লালনপালনের অধিকার ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হন। এই বিষয়টি নিয়ে সেসময় ভারত ও নরওয়ে সরকারে মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি হয়। শেষপর্যন্ত বাচ্চা দুটোর রক্ষণাবেক্ষণের ভার অনুরূপ ভট্টাচার্যের ভাইয়ের হাতে দেয়া হয়। তিনি দুটো শিশুকেই ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। মূলত এটিই ছিল সেই সত্যি ঘটনা, যার উপর ভিত্তি করে ‘মিসেস চ্যাটার্জি বনাম নরওয়ে’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। রানি মুখার্জি এখানে সাগরিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, অপরদিকে অনুরূপের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

ভারতীয়রা নিজেদের সংস্কৃতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। চলচ্চিত্রটির আবেগঘন ঘটনাগুলো যেকোনো ভারতীয়কেই আবেগে বিহ্বল করার সামর্থ্য রাখে।

এই চলচ্চিত্র মুক্তি পাওয়ার পর নরওয়েতে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। নরওয়ের সরকার দাবি করছে, এই চলচ্চিত্রে নরওয়েকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভারতে অবস্থানরত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যান্স জ্যাকব ফ্রাইডেনলান্ড এই চলচ্চিত্রের প্রতিক্রিয়ায় একটি বিবৃতি প্রদান করেছেন। এছাড়া ভারতের বহুল জনপ্রিয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে একটি বড় কলাম লিখেছেন, যার শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘নরওয়ে কেয়ারস’ (Norway Cares)। তিনি দাবি করছেন, চলচ্চিত্রটিতে ‘শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক ভিন্নতা থাকার কারণে দম্পতিকে সন্তান লালনপালনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে’ এরকম একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তার মতে, শিশুদের সঠিক পরিচর্যার জন্য নরওয়ে সরকারের যে প্রচেষ্টা, তা কোনো বিশেষ লাভ কিংবা অর্থের জন্য পরিচালিত হচ্ছে না। নরওয়ে সরকার সাংস্কৃতিক ভিন্নতাকে সম্মান করে।

Image source: Business Today

কিন্তু নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের সেই কলাম ভারতীয়দের আরও ক্ষিপ্ত করেছে। রানি মুখার্জি কলামের বিপরীতে বেশ শান্তভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তার মতে, “সবারই নিজস্ব মতামত দেয়ার অধিকার রয়েছে৷ কাউকে আঘাত করার জন্য এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়নি। এটা একজন মায়ের গল্প, যেটি বলা প্রয়োজন ছিল। মানুষের এ ধরনের ঘটনাগুলোর সম্পর্কে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।” তবে আসল সাগরিকা ভট্টাচার্য বেশ কড়াভাবেই নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমি সংবাদপত্রে প্রকাশিত নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের মিথ্যা বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি আমার কেইসটি সম্পর্কে কথা বলার ক্ষেত্রে আমার কোনো অনুমতি নেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি।” ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ রানি মুখার্জি ও এই চলচ্চিত্রের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছে।

Language: Bangla
Topic: Controversy about the movie 'Mrs Chatterjee vs Norway'
References:
1. Controversy on Mrs Chatterjee vs Norway: Why Norwegian govt is upset with Rani Mukerji's latest film - DNA India
2. All about Mrs Chatterjee Vs Norway controversy: Norwegian ambassador's comment to real-life Mrs Chatterjee's retort - Zoom
3. What is the controversy around 'Mrs Chatterjee Vs Norway'? - One India
Feature Image: Times of India

Related Articles