Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হ্যারি পটার নামা || পর্ব ১২ || জাদু জগতের বিখ্যাত কয়েকজন মাগল-বর্ন

মাগল-বর্ন বলতে এমন জাদুকরদের বোঝায়, যাদের পিতামাতা জাদু-ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষ, অথচ তারা নিজেরা জন্মেছে জাদু ক্ষমতা নিয়ে। হ্যারি পটার সিরিজে মাগল-বর্ন শব্দটা উঠে এসেছে বহুবার, অনেক সময় জন্ম দিয়েছে নানা বিতর্ক এবং লড়াইয়ের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ‘হগওয়ার্টস স্কুল অভ উইচক্র্যাফট অ্যান্ড উইজার্ড্রি’র চার প্রতিষ্ঠাতার একজন সালাজার স্লিদারিন কখনোই চাইতেন না হগওয়ার্টসে মাগল-বর্ন জাদুকরেরা ভর্তি হোক। সে নিয়ে একপর্যায়ে হগওয়ার্টসের আরেক প্রতিষ্ঠাতা গড্রিক গ্রিফিন্ডরের সাথে মল্লযুদ্ধে হেরে হগওয়ার্টস থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নেন তিনি।

শুরু থেকেই মাগল-বর্নদের প্রতি ক্ষোভ এবং ঘৃণা পোষণ করত পিউর-ব্লাড তথা হাউজ স্লিদারিনের অধিকাংশ জাদুকরেরা। তবে, মাগল-বর্নদের মধ্যে থেকেও হারমায়োনি গ্রেঞ্জার, লিলি পটারদের মতো জাদু জগত কাঁপানো শক্তিশালী জাদুকর বেরিয়ে এসেছে। 

হগওয়ার্টস স্কুল অভ উইচক্র্যাফট অ্যান্ড উইজার্ড্রি; Image Source: Wallpaer Flare

টারটিয়াস

ষোড়শ শতাব্দীতে স্কটল্যান্ডের এক মাগল পরিবারে জন্মগ্রহণ করে টারটিয়াস। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার বড়। যুবক বয়সেই টারটিয়াস ও তার ভাইদের এতিম করে রেখে দুনিয়া ছেড়ে চলে যান তাদের পিতা-মাতা। কিন্তু তার ভাইয়েরা সবসময় তার জাদুকরী ক্ষমতার ভয়ে তটস্থ থাকত। সেজন্য দুই ভাই টারটিয়াসের জাদু ছড়ি ভেঙে, তাকে বাড়ি থেকে বের করে এক সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দিলো। অচেতন টারটিয়াসের দেহ সমুদ্রের পানিতে ভাসতে ভাসতে হারমেট্রে’র এক দ্বীপে গিয়ে পৌঁছল। ওইখানে তাকে কুড়িয়ে পেলো জাদুকর সন্ন্যাসী জায়াগমান্ট বাজ।

পোশন তৈরিতে জায়াগমান্ট ছিলেন অন্যদের চেয়ে এক কাঠি সরেস। টারটিয়াসকে দেখে মনে বড়ো দয়া হলো জায়াগমান্টের, নিয়ে আসলেন নিজ বাসস্থানে। সেবা-যত্ন দিয়ে সুস্থ করে তুললেন টারটিয়াসকে। এরই মধ্যে ফেলিক্স ফেলিচিস নামক এক সৌভাগ্য বর্ধক পোশন তৈরি করেছেন বাজ। কিন্তু তিনি ভয়ে ছিলেন, কেউ তার এই কঠোর সাধনার ফল চুরি করে নিয়ে যায় কি না। টারটিয়াসের প্রতিও মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকে তার। সেজন্য তিনি টারটিয়াসকে কিছু পয়সা, একটা আলখাল্লা, একটা নৌকা এবং সামান্য পরিমাণে ফেলিক্স ফেলিচিস পোশন দিয়ে বলে, টারটিয়াস যাতে দ্রুত এই দ্বীপ ত্যাগ করে।

ফেলিক্স ফেলিচিস হাতে প্রফেসর স্লাগহর্ন; Image Source: Warner Bros.

এক ঢোক পোশন গিলে নৌকায় পাল তুললেন টারটিয়াস। বাতাস তার নৌকাকে এমন জায়গায় নিয়ে ঠেকাল, যেখানের পঞ্চাশ মাইলে শুধু জাদুকর পরিবারেরই বসবাস। তাদেরকে নিজের সব জাদুকরী ক্ষমতার কথা খুলে বললেন টারটিয়াস। টারটিয়াসের কাছে কোনো ছড়ি ছিল না বিধায়, তারা তাকে ডায়াগন অ্যালিতে যাবার পরামর্শ দিলেন। তবে সেসময় টারটিয়াসের নিকট একটা কানা-কড়িও ছিল না।

কিন্তু তিনি তো সৌভাগ্য বর্ধক পোশন পান করেছেন, সৌভাগ্য তার পায়ের কাছে এসে কদমবুসি করবে। ডায়াগন অ্যালি যাবার পথে হঠাৎ দেখলেন নর্দমায় একটা সোনা-ভর্তি থলে পড়ে আছে। সেই সোনা দিয়ে তিনি তার নতুন ছড়ি এবং জাদুকরদের ঢিলে আলখাল্লা কিনে নিলেন। ফিরে আসার সময় তিনি গ্রিংগটস উইজার্ডিং ব্যাংকের সামনে দিয়ে আসছিলেন। দুইজন জাদুকরকে তিনি একটা বিষয়ে আলোচনা করতে শুনলেন। আলোচনা শুনে তিনি বুঝতে পারলেন, গ্রিংগটস ব্যাংক একজন কার্স ব্রেকার খুঁজছে, যে কিছু অভিশপ্ত ভল্টের অভিশাপ কাটাতে পারবেন। তিনি সেটাতে চেষ্টা করলেন, সফলও হলেন। এরপর জাদু জগতে টারটিয়াসের আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তিনি জাদু জগতে অমর হয়ে আছেন, গ্রিংগটসের বিখ্যাত ‘কার্স-ব্রেকার’ হিসেবে।

গ্রিনগটস উইজার্ডিং ব্যাংক; Image Source: Warner Bros.

ডোনাঘান ট্রেমলেট

১৯৭২ সালে জন্ম নেয়া ডোনাঘান ট্রেমলেট একজন মাগল-বর্ন উইজার্ড, যিনি জনপ্রিয় উইজার্ডিং ব্যান্ড ‘দ্য উইয়ার্ড সিস্টার্স’ এর জন্য ব্যাজ প্লেয়িং করতেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ব্যাজ গিটার বাজানো শুরু করেন, এবং সময়ের সাথে সাথে নিজের দক্ষতাকে শান দিয়ে ক্রমশ ধারালো করে তুলেন। এই প্রতিভার ঝলক দেখা গিয়েছিল তার হগওয়ার্টস অধ্যয়নকালেই। ডোনাঘান হগওয়ার্টসে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৮৩ বা ১৯৮৪ সালের দিকে। সেখানে পড়ার সময়, তিনি দ্য উইয়ার্ড সিস্টার্স ব্যান্ডকে তাদের রচিত গান ‘ডু দ্য হিপ্পোগ্রিফ’ এ পারফর্ম করতে দেখে পুরোপুরি ওই ব্যান্ডের ভক্ত বনে যান। তখন তিনি ঐ ব্যান্ডে যোগ দেবেন বলে মনস্থির করে ফেলেন। সেজন্য তিনি ব্যান্ডের নতুন ব্যাজ প্লেয়ার হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য একটা অডিশনও দিয়েছিলেন। ব্যাটে-বলে মিলে গেলো, ডোনাঘানকে নতুন সদস্য হিসেবে ভেড়ানো হলো ব্যান্ড দলে। ছাটাই করা হলো জ্যাকব ভ্রাতৃদ্বয়কে। কারণ, ডোনাঘান জাদুর ব্যবহার ছাড়াই ব্যাজ প্লেয়িং করতে পাড়তেন।

জুন ১৯৯৭ তে, অ্যালবাস ডাম্বলডোরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ডোনাঘান। এতো ভিড়ের মধ্যে হ্যারি পটার যে কয়জন মানুষকে চিনতে পেরেছিল, তাদের মধ্যে ডোনাঘান অন্যতম। সে বছর সেপ্টেম্বরে লর্ড ভলডেমর্ট ব্রিটিশ জাদু মন্ত্রণালয় দখল করে ফেললে, ডোনাঘানকেও সম্ভবত মাগল-বর্ন রেজিস্ট্রেশন কমিশনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল। তাকে আজকাবানে পাঠানো হয়েছিল, নাকি তিনি গা ঢাকা দিয়েছিলেন সে ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কোনো তথ্য উঠে আসেনি।

দ্য উইয়ার্ড সিস্টার্স ব্যান্ড। বাঁ দিকে গিটার হাতে দেখা যাচ্ছে ডোনাঘান ট্রেমলেটকে; Image Source: Warner Bros.

জোহানেস জোনকার

হ্যারি পটার নিয়ে সকল আলোচনা ব্রিটেন কেন্দ্রিকই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে জে. কে. তার উইজার্ডিং ওয়ার্ল্ড আরও সম্প্রসারণ করার দরুন আমেরিকা, ব্রাজিল, ফ্রান্সের বিভিন্ন জাদু প্রতিষ্ঠানের কথাও উঠে আসছে এখন। হ্যারি পটারের প্রিকুয়েল ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস’ এর পর্বগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। যুক্তরাজ্যে জাদু না জানা সাধারণ মানুষকে মাগল বলে সম্বোধন করা হলেও, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের বলা হয় ‘নো-ম্যাজ’। এ রকমই এক নো-ম্যাজ দম্পতির কোল আলো করে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছিল জোহানেস জোনকার নামক এক জাদুকর। 

তার বাবা ছিলেন দক্ষ এক কাঠমিস্ত্রি। সেই সূত্রেই কাঠ-কর্মে জোনকারের হাতও ছিল ভীষণ পাকা। ফলে তিনি তার শিল্পকর্ম দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা ছড়ি নির্মাতা হিসেবে জাদু জগতে বিখ্যাত হয়ে আছেন। ১৯২৬ সালে ‘ম্যাজিক্যাল কংগ্রেস অভ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অভ আমেরিকা‘ এর ছড়ি নির্মাতাদের তালিকায় তার নাম উপরের দিকেও স্থান করে রয়েছে। তার ছড়ি ছিল মুক্তা-খচিত, এবং এর কেন্দ্র ছিল ওয়াম্পাস ক্যাটের চুল দিয়ে নির্মিত। ছড়ি নির্মাণে তার সুখ্যাতি পুরো উত্তর আমেরিকায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল। জাদুর ছড়ির কেন্দ্র সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিল অসাধারণ, এবং ছড়ি দেখেই তিনি এর বৈশিষ্ট্য বলে দিতে পারতেন।

ম্যাজিক্যাল কংগ্রেস অভ দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অভ আমেরিকা; Image Source: Harry Potter Fandom

ম্যারি এলিজাবেথ ক্যাটারমোল

ম্যারি এলিজাবেথ ক্যাটারমোল ছিলেন একজন ব্রিটিশ মাগল-বর্ন উইচ। ছোটখাটো গড়নের এই মহিলা জাদুকরের চুল ছিল ঘন কালো রঙয়ের, যেটাকে তিনি সবসময় খোপা বেঁধে রাখতেন। তিনি ছিলেন এক মাগল সবজি বিক্রেতার মেয়ে। ম্যারি বিয়ে করেছিলেন জাদু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রেজিনাল্ড ক্যাটারমোলকে। তাদের ঘরে জন্ম নিয়েছিল ম্যাইসি এবং এলি নামক দুই কন্যাসন্তান, এবং এক পুত্রসন্তান, যার নাম ছিল আলফ্রেড।

১৯৯৭ সালে একজন পিউর ব্লাড বা হাফ ব্লাড জাদুকর থেকে জাদু ছড়ি চুরির দায়ে তাকে মাগল-বর্ন রেজিস্ট্রেশন কমিশনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়। সেখানে তার বিচারকার্য পরিচালনা করেন ডলোরেস আমব্রেজ এবং ইয়াক্সলি। সৌভাগ্যক্রমে, হ্যারি আর হারমায়োনি সেদিন ম্যারিকে সাহায্য না করলে, তাকে আজকাবানে প্রেরণ করা হতো। শুধু ম্যারিই নয়, হ্যারি এবং হারমায়োনি একদল মাগল-বর্নকেও মন্ত্রণালয় থেকে পালাতে সাহায্য করেছিল। হ্যারি ম্যারি আর তার স্বামী রেজিনাল্ডকে বলেছিল, ভলডেমর্ট যতদিন ক্ষমতায় আছে, ততদিন তারা যাতে তাদের সন্তানদের নিয়ে দেশের বাইরে থাকে।

বিচারের সম্মুখীন ক্যাটারমোল; Image Source: Warner Bros.

নবি লিচ

১৯৪৫ সালের দিকে গ্রেট ব্রিটেনের কোনো এক মাগল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নবি লিচ। তিনি হগওয়ার্টসে ভর্তি হয়ে জাদু প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কিনা, সে ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে, তিনি ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডের জাদু মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে জাদু মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান নবি লিচ। সে ঘটনার পর জাদু জগতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাদু মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন কোনো মাগল-বর্ন। তিনি মন্ত্রিত্বের পদ পাবার পর, জাদু বিষয়ক উচ্চ আদালত উইজেনগ্যামটের কতক বয়স্ক সদস্য ক্ষোভে পদত্যাগ করেন। এর কিছু বছর পর রহস্যময় কোনো এক কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেজন্য ১৯৬৮ সালে তিনি মন্ত্রীর পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলেন।

ব্রিটিশ জাদু মন্ত্রণালয়; Image Source: Warner Bros.

কেন্ড্রা ডাম্বলডোর

জাদুকর হিসেবে কেন্ড্রা ডাম্বলডোর নামটা অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তিনি ছিলেন বিখ্যাত জাদুকর পারসিভ্যাল ডাম্বলডোরের অর্ধাঙ্গিনী, সময়ের অন্যতম সেরা দুই জাদুকর অ্যালবাস ডাম্বলডোর এবং অ্যাবারফোর্থ ডাম্বলডোরের মাতা। ১৮৫১ সালের দিকে জন্মগ্রহণ করা এই মাগল-বর্ন উইচের জীবনাবসান ঘটে ১৮৯৯ সালের এক গ্রীষ্মে, মাত্র ৪৮ বছর বয়সে। আরিয়ানা ডাম্বলডোর নামে একজন মেয়েও ছিল তার।

আরিয়ানা ডাম্বলডোর; Image Source: Harry Potter Fandom

আঠারো বছর বয়সী অ্যালবাস ডাম্বলডোর যখন তার বন্ধু এলফিয়াস ডজের সাথে পুরো দুনিয়া জুড়ে গ্রাজুয়েশন পরবর্তী সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই ঘটে বসে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। একবার ডাম্বলডোরের বোন অ্যারিয়ানার উপর একদল মাগল যুবক আক্রমণ করায় ক্রোধের বশে তাদের উপর জাদু প্রয়োগ করেছিলেন অ্যালবাসের বাবা পারসিভ্যাল। জাদু নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করার দরুন, তার বাবাকে আজীবনের জন্য আজকাবান কারাগারে প্রেরণ করা হয়। ওদিকে কেন্ড্রা তার পরিবারকে নিয়ে স্থানান্তরিত হয়ে যান গড্রিক’স হোলো নামক জায়গায়।

পারসিভ্যাল এবং কেন্ড্রা, কেউই আরিয়ানার উপর মাগল আক্রমণের কথা কাউকে জানতে দেননি। কারণ, তারা ভেবেছিলেন এই কাহিনী ‘International Statute of Wizarding Secrecy’ জানতে পারলে আরিয়ানাকে বিভিন্ন জেরার সম্মুখীন করে শেষমেশ মানসিক রোগী হিসেবে পাগলা গারদে পুরে দিবে। একদিকে তার ছেলেরা হগওয়ার্টসে জ্ঞানের স্ফুরণ ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে তার স্বামী আজকাবান কারাগারে বন্দী। তাই তিনি মেয়ে আরিয়ানাকে নিয়েই কষ্টেসৃষ্টে দিন গুজার করতে লাগলেন। এমন সময় চারিদিকে গুজব ছড়িয়ে গেলো, কেন্ড্রার মেয়ে আরিয়ানা একজন স্কুইব, (জাদু পরিবারে জন্মেও যাদের কোনো জাদু ক্ষমতা নেই) এবং তাকে অন্ধকার এক কুঠুরিতে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

এই গুজব ছড়ানোর নেপথ্যে যারা ছিল, তাদের মধ্যে মুরিয়েল এবং তার কাজিন ল্যান্সেলট অন্যতম। আরিয়ানা ডাম্বলডোর তার নিজ জাদু শক্তির উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারত না। সেজন্য ১৮৯৯ সালের গ্রীষ্মের কোনো একদিনে অ্যারিয়ানার হাতেই দুর্ঘটনাবশত প্রাণ খুইয়ে বসেন তার মা কেন্ড্রা ডাম্বলডোর।

শিল্পীর দৃষ্টিতে ডাম্বলডোর পরিবার; Image Source: Tumblr

মার্টল এলিজাবেথ ওয়ারেন

হগওয়ার্টসে সে ‘মোয়ানিং মার্টল‘ নামেই অধিক পরিচিত। মাগল-বর্ন এই উইচ হগওয়ার্টস স্কুল অভ উইচক্র্যাফট অ্যান্ড উইজার্ড্রিতে মার্টল ভর্তি হয়েছিল ১৯৪০ সালে। সর্টিং হ্যাটের বদৌলতে সে স্থান পেয়েছিল নীল রঙে রাঙানো হাউজ র‍্যাভেনক্লতে। তবে অন্যদের মতো সে ৭ বছর অধ্যয়নের পর গ্রাজুয়েশনের পাঠ চুকাতে পারেনি। ১৯৪৩ সালেই থেমে যায় তার জীবন ঘড়ি। হগওয়ার্টসে ভর্তি হবার পর তার কপালে কোনো বন্ধু জুটেনি। শারীরিক গঠনের জন্য এর বিপরীতে সে হয়েছে মানসিক নির্যাতনের শিকার। ১৯৪৩ সালে মার্টল যখন হগওয়ার্টসে পড়াশোনা করছে, তখনই প্রথমবারের মতো টম রিডল খুলে ফেলেছিল সালাজার স্লিদারিনের রেখে যাওয়া ‘চেম্বার অভ সিক্রেটস’।

১৩ জুন ১৯৪৩ সাল, জীবনের শেষদিনটিতেও অলিভ হর্নবাই নামে এক শিক্ষার্থী উত্ত্যক্ত করে মার্টলকে। সে মার্টলের চশমা নিয়ে মশকরা করায়, মন বিষণ্ণ হয়ে যায় তার। তাই সে বাথরুমে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে। মার্টল বাথরুমে ঢুকার পরেই চ্যাম্বার অভ সিক্রেটস খোলার উদ্দেশ্যে টম রিডল সর্প-ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। ওই চ্যাম্বার অভ সিক্রেটস ছিল মেয়েদের বাথরুমের সাথেই। সালাজার স্লিদারিন ওই গোপন কক্ষে ব্যাসিলিক্স নামক এক বিরাট সরীসৃপকে পুষে রেখেছিল স্কুল থেকে সকল মাগল-বর্নকে নিধন করতে। আর ওই ব্যাসিলিক্স বের হওয়ার পর চোখের সামনেই পেয়ে গেলো এক মাগল-বর্নকে। চোখের নিমিষেই হত্যা হলো মার্টল। এরপর থেকেই তার আত্মা সেকেন্ড ফ্লোরের মেয়েদের বাথরুমে ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মার্টল ওয়ারেনের ভূত; Image Source: Warner Bros.

এডওয়ার্ড টেড টঙ্কস

পিতা হিসেবে মাগল-বর্ন উইজার্ড এডওয়ার্ড টেড টঙ্কস বুক ফুলিয়ে খানিকটা গর্ব করতেই পারেন। কারণ তিনি নিম্ফ্যাডোরা টঙ্কসের মতো খ্যাতনামা জাদুকরকে জন্ম দিয়েছেন। তবে, মাগল-বর্ন হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিয়ে করেছিলেন জাদু জগতের অন্যতম বিশুদ্ধ রক্তের বংশ ব্ল্যাক পরিবারের অ্যান্ড্রোমিডা টঙ্কসকে। টেডকে বিয়ের মাধ্যমে ব্ল্যাক পরিবারের রক্ত-বিশুদ্ধতার অহমিকা ভেঙে চুরমার করে দেন অ্যান্ড্রোমিডা।

ফ্যামিলি ট্রি-তে টেড টঙ্কস; Image Source: Warner Bros.

জাদু জগতের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাসে নিম্ফ্যাডোরা টঙ্কসের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে গেছে। লর্ড ভলডেমর্টের আগ্রাসন দমনে সে ‘অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্স’ সংঘে যোগদান করেছিল। তবে টেড এবং অ্যান্ড্রোমিডা সেই সংঘে সরাসরি যোগদান না করলেও, তারা বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে ‘ব্যাটেল অভ সেভেন পটারস’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেসময় তারা জাদুকরদের নিরাপদ জায়গা হিসেবে তাদের বাড়িতেই আশ্রয় দিয়েছিলেন। হিলিং ম্যাজিকে দারুণ দক্ষ ছিলেন টেড টঙ্কস। ব্যাটেল অভ সেভেন পটারস’ এ তিনি হ্যারি পটারের ভাঙা দাঁত জাদু দিয়ে মেরামত করে দিয়েছিলেন।

১৯৯৭ সালে লর্ড ভলডেমর্ট ব্রিটিশ জাদু মন্ত্রণালয় দখল করে নিয়ে একে একে মাগল-বর্ন নিধন শুরু করলে, জান বাঁচাতে পালিয়ে যান টেড। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯৯৮ সালের মার্চে তিনি স্ন্যাচারদের কাছে ধরা পড়ে যান, এবং সেখানে তাকে মেরে ফেলা হয়।

শিল্পীর তুলিতে টেড এবং অ্যান্ড্রোমিডা; Image Source: DeviantArt

জাস্টিন ফিঞ্চ-ফ্লেচলি

হ্যারি পটারের সাথে একই ব্যাচে হগওয়ার্টসে পড়ালেখার যাত্রা শুরু করেছিল জাস্টিন ফিঞ্চ। ১৯৮০ সালের দিকে যুক্তরাজ্যে উচ্চ এক বংশে জন্মগ্রহণ করা এই মাগল-বর্ন উইজার্ড ছিল হাউজ হাফলপাফের শিক্ষার্থী। ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চ্যাম্বার অভ সিক্রেটস’ সিনেমায় ডুয়েল প্রশিক্ষণে বেশ খানিকটা সময় স্ক্রিনে দেখা গিয়েছে তাকে। হগওয়ার্টসের চিঠি আসার আগ পর্যন্ত জাস্টিন তার জাদুকরী ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুই জানত না। তাকে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়েছিল ইংলিশ পাবলিক স্কুল ‘এটন’ এ। এটনের চেয়ে সে হগওয়ার্টস স্কুলকেই উপভোগ করত বেশি। প্রথম বর্ষ শেষে গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে সে তার মাকে গিল্ডেরয় লকহার্টের লিখা একটা বই উপহার দিয়েছিল।

জাস্টিন ফিঞ্চ-ফ্লেচলি; Image Source: Warner Bros.

১৯৯২ সালের ২ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম হার্বোলজি ক্লাসে তাকে হ্যারি, রন ও হারমায়োনির গ্রুপে দেয়া হয়েছিল। তখন জাস্টিন সে বিখ্যাত ত্রয়ীর সাথে পরিচিতি পর্ব ও কুশল-বিনিময় সেরে নেয়। সে হ্যারির সুখ্যাতি, হারমায়োনির বুদ্ধিমত্তা, আর রনের বাবার উড়ন্ত গাড়ি ফ্লাইং ফোর্ড অ্যাংলিয়া’র ভূয়সী প্রশংসা করে।

কিছুদিন পর মিসেস নরিসকে হ্যালোউইনে প্যাট্রিফাইড করা হলে, হ্যারির সাথে জাস্টিনের আবার স্কুল করিডরে দেখা হয়। অ্যারগাস ফ্লিচ এরকম গুজব ছড়িয়েছিল যে, হ্যারি স্লিদারিনের একজন উত্তরসূরি এবং সেই সাথে একজন মাগল-বর্ন। এই গুজব জাস্টিন পুরোপুরি বিশ্বাস করতে শুরু করে। সে নিজে মাগল-বর্ন হওয়ায় তার ভিতরে ভয় ক্রমশ দানা বাধতে শুরু করে। রন তখন তাকে ধমক দিয়ে বলে, কোনো গুজবে বিশ্বাস না করে বুকে সাহস ধারণ করতে। জাস্টিন তার হাফলপাফ হাউজমেট আর্নি ম্যাকমিলান এবং হ্যানা অ্যাবটকে সাথে নিয়ে ৯ অক্টোবর ডাম্বলডোর’স আর্মিতে যোগ দেয়। সেখানে সে লুনা লাভগুডের সাথে জোড়া বেধে এক্সপেলিয়ারমাস অনুশীলন করেছিল।

১৯৯৭ সালে লর্ড ভলডেমর্ট মাগল-বর্ন নিধন শুরু করলে হগওয়ার্টস ত্যাগ করতে বাধ্য হয় জাস্টিন। সে ডেথ ইটার এবং স্ন্যাচারদের থেকে পালিয়ে পালিয়ে থেকেছে সেসময়। তবে, সে ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টসে অংশগ্রহণ করেছিল কিনা, সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

হ্যারি পটারের সাথে জাস্টিন ফিঞ্চ-ফ্লেচলি; Image Source: Warner Bros.

কলিন ক্রিভি

হ্যারি পটার ফিল্ম ফ্র্যাঞ্চাইজি দেখা প্রত্যেকেই কলিন ক্রিভির সাথে বিশেষভাবে পরিচিত। সবসময় ক্যামেরা নিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানো চঞ্চল গোছের ছোট্ট ছেলেটা মুহূর্তেই যে-কারও নজর কাড়তে সক্ষম। আর পাঁচটা সাধারণ মাগল পরিবারের মতোই বছর দশেক ধরে বেড়ে উঠেছিল মাগল-বর্ন উইজার্ড কলিন ক্রিভি। তার বাবা ছিল মামুলি একজন গোয়ালা। পিয়ন চিঠি নিয়ে আসার পর, কলিনের জাদুকরী ক্ষমতা আছে এবং সেজন্য সে জাদুর স্কুল হগওয়ার্টসে ভর্তি হতে পারবে, এ কথা জানতে পেরে কলিনের বাবা যারপরনাই বিস্মিত হয়েছিল। ১৯৯২ সালে হগওয়ার্টসের আঙিনায় পা রাখে কলিন। সাহসী গোছের ছেলে হওয়ায় সর্টিং হ্যাট তাকে হাউজ গ্রিফিন্ডরে পাঠিয়ে দেয়। এরপর থেকেই হগওয়ার্টসের নানা মঞ্জিলে তাকে ক্যামেরা নিয়ে ছুটতে দেখা গেছে। প্রথম বছরেই ব্যাসিলিস্ক দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হলে দারুণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় তার পরিবার।

প্যাট্রিফাইড কলিন ক্রিভি; Image Source: Warner Bros.

১৯৯৭ সালে ভলডেমর্ট মাগল-বর্নদের উপর সরাসরি অত্যাচার শুরু করলে, থমকে যায় কলিনের পড়াশোনার গতিশীল চাকা। সে তখন ষষ্ঠ বর্ষের ছাত্র। মাগল-বর্ন রেজিস্ট্রেশন কমিশনের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাকে ওইসময় লুকিয়েও থাকতে হয়। দেখতে ছোটখাটো গড়নের হলেও, সাহসের কোনো কমতি ছিল না কলিনের মাঝে। মিনারভা ম্যাকগোনাগল তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয়নি। তবুও লর্ড ভলডেমর্ট এবং ডেথ ইটারদের বিরুদ্ধে সে ‘ব্যাটেল অভ হগওয়ার্টস’ এ স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় দেয়নি তাকে। শহীদী তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় কলিন।

ক্যামেরা হাতে কলিন ক্রিভি; Image Source: Warner Bros.

ডেনিস ক্রিভি

মাগল এক ক্রিভি পরিবারে মাগল-বর্ন উইজার্ড ডেনিস ক্রিভির জন্ম। সে ছিল আরেক মাগল-বর্ন উইজার্ড কলিন ক্রিভির ছোটভাই। একই মাগল পরিবারে দুইজন জাদুকরের জন্ম হয়েছে- এ রকম জিনিসের সচরাচর দেখা পাওয়া মুশকিল। ডেনিসের ভাই ভর্তি হবার দুইবছর পর অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে হগওয়ার্টস থেকে চিঠি আসে তার কাছে। ১৯৯৭ সালে ডেনিস হগওয়ার্টসে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। লর্ড ভলডেমর্ট ও তার অনুসারীরা স্কুল করায়ত্ত নিয়ে মাগল-বর্ন নিধন শুরু করলে, হগওয়ার্টস ছাড়তে হয় ডেনিসকে। রেজিস্ট্রেশন কমিশনের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাকে সেসময় লুকিয়েও থাকতে হয়।

শিল্পীর তুলিতে ডেনিস ক্রিভি; Image Source: Martin Tenbones/DeviantArt

ডির্ক ক্রেসওয়েল

১৯৬০ বা ১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে মাগল ক্রেসওয়েল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাগল-বর্ন উইজার্ড ডির্ক ক্রেসওয়েল। এগারো বছর বয়সেই তার মধ্যে জাদুকরী ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে শুরু করে। তখনই হগওয়ার্টস তার কাছে ভর্তির চিঠি পাঠায়। ১৯৭২ সালের ১ সেপ্টেম্বর হাউজ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে সর্টিং হ্যাট মাথায় দেয় সে। পরিশ্রমী এবং বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের জন্য সর্টিং হ্যাট তাকে হাউজ হাফলপাফের জন্য নির্বাচিত করে। প্রফেসর স্লাগহর্ন থেকে পোশন তৈরির শিক্ষা হাতে-কলমে গ্রহণ করেছিল ক্রেসওয়েল। ডির্কের মেধার ধার আন্দাজ করতে পেরেছিলেন প্রফেসর স্লাগহর্ন। সেজন্য তিনি ডির্ককে স্লাগ ক্লাবে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান।

শিল্পীর তুলিতে স্লাগ ক্লাব; Image Source: Blue straggler/DeviantArt

হগওয়ার্টস থেকে গ্রাজুয়েশনের পর ১৯৭৯ সালে ব্রিটিশ জাদু মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন ক্রেসওয়েল। ক্রমে ক্রমে পদোন্নতি হতে হতে একসময় গবলিন লিয়াইসন অফিসের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। মন্ত্রণালয়ে যোগ দেয়ার পরেও স্লাগহর্নের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন তিনি। স্লাগহর্নকে তিনি গ্রিনগটস উইজার্ডিং ব্যাংকের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ খবরাখবর সম্পর্কে অবহিত করতেন, যা স্লাগহর্নের কাছে অনেক ভালো লাগত।

১৯৯৭ সালে ডেথ ইটাররা মন্ত্রণালয় থেকে মাগল-বর্ন ছাটাই শুরু করলে তিনি একজন জাদুকরকে দিয়ে ভুয়া ফ্যামিলি ট্রি’র নথি তৈরি করেন, যাতে মন্ত্রণালয় তার ব্লাড স্ট্যাটাস ধরতে না পারে। কিন্তু ডেথ ইটারদের খাস মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা আলবার্ট রানকর্ন সেই ছলচাতুরী ধরে ফেলেন। ক্রেসওয়েলকে সাথে সাথে গ্রেফতার করা হয়। অরোর জন ডলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়, তিনি যাতে ব্রুমস্টিক দিয়ে ক্রেসওয়েলকে আজকাবানে প্রেরণ করে আসেন। জন ডলিশকে মূলত কনফান্ডাস চার্ম দিয়ে মনভোলা করে দেয়া হয়, যাতে তিনি ডেথ ইটারদের প্রত্যেকটা আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। আজকাবানে যাবার পথে ডলিশকে অচেতন করে ফেলেন ডির্ক, এবং সেই ব্রুমস্টিক নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান তিনি। তারপর ডির্ক মিলিত হন আরও কয়েকজন পলাতকের সাথে। এদের মধ্যে ছিল টেড টঙ্কস, ডিন থমাস, গবলিন গ্রিপহুক, এবং গরনাক।

১৯৯৭ সালের শরতের এক রাতে ওয়েলসের এক নদীর তীরে তাঁবু গেড়েছেন তারা। উদ্দেশ্য, নদী থেকে কিছু স্যামন মাছ মেরে খাওয়া। তারা গল্প-গুজবে ডুবে গেলেন। প্রথমেই ডির্ক শুরু করলেন তার পালানোর কাহিনী দিয়ে। একপর্যায়ে সে আলোচনা রূপ নিলো মহাযুদ্ধ এবং হ্যারি পটারে। হঠাৎই একদল স্ন্যাচারস পাকরাও করে তাদের। ক্রেসওয়েল, টেড টঙ্কস, এবং গরনাককে সাথে সাথেই মেরে ফেলা হয়। গ্রিপহুক আর ডিন থমাস ওইখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিল।

জাদু মন্ত্রণালয় থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে ডির্ক ক্রেসওয়েলকে; Image Source: Warner Bros.

হারমায়োনি গ্রেঞ্জার

হ্যারি পটার ফ্র‍্যাঞ্চাইজিতে হারমায়োনি গ্রেঞ্জার এক অতি পরিচিত নাম। স্বভাবে চালাক-চতুর, আচরণে কঠোর-কোমল এই ফুল-কুমারী, মেধার জোরে কাঁপিয়েছে হগওয়ার্টসে আঙিনা, দাপিয়ে বেড়িয়েছে জাদু জগতের জাদুকরী ভুবন। হ্যারি পটার ও রন উইজলিকে সাথে নিয়ে তৈরি করেছে পৃথিবীর জনপ্রিয় কয়েকটি ত্রয়ীর মধ্যে একটি। ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্স’ বইয়ে বর্ণনা করা আছে, হগওয়ার্টসে হারমায়োনির হাউজ নির্বাচনের সময় সর্টিং হ্যাট গোলকধাঁধায় আটকে গিয়েছিল। হ্যাট প্রথমে চেয়েছিল, তাকে হাউজ র‍্যাভেনক্ল’র জন্য নির্বাচন করতে। এর পেছনের কারণটাও অবশ্য যুক্তিযুক্ত। কারণ, এ হাউজের শিক্ষার্থীরা বেশ পড়ুয়া স্বভাবের অধিকারী হবার পাশাপাশি তাদের বুদ্ধির ধারও থাকে বেশ। সকল গুণের অনুপম মিশ্রণে গড়া হারমায়োনির পড়ুয়া, বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তা স্বভাবই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে ফুটে উঠেছে সবচেয়ে বেশি। কেউ এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হলে, সর্টিং হ্যাট সে শিক্ষার্থীকে হাউজ র‍্যাভেনক্লতে পাঠায়। কিন্তু উপরোক্ত গুণগুলোর পাশাপাশি অসম সাহসের অধিকারী এবং নিয়ম ভাঙতে পটু হওয়ায়, সে হ্যারি ও রনের সাথে স্থান পায় হাউজ গ্রিফিন্ডরে।

উইজার্ডিং এক্সামিনেশন অথোরিটির পক্ষ থেকে হগওয়ার্টস পড়ুয়া পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের একপ্রকার পরীক্ষা নেয়া হয়, যা আউল বা O.W.L (অর্ডিনারি উইজার্ডিং লেভেল) নামে পরিচিত। হ্যারি এবং রন এ পরীক্ষায় ৭ স্কোর অর্জন করেছিল, যা যথেষ্ট প্রশংসার যোগ্য। অর্থাৎ, এ মানের নাম্বার অর্জন করতে পারলেই, একজন ছাত্রকে প্রথম সারির মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে, ছান্দসিক হারমায়োনি ওই পরীক্ষায় পাক্কা ১১ স্কোর বাগিয়ে নেয় নিজের ঝুলিতে।

হগওয়ার্টস মহাযুদ্ধের জন্য সে বছর শেষ বর্ষ সমাপ্ত করতে না পারায়, আবারো ফিরে যায় হগওয়ার্টসে। হ্যারি পটার, আর রন উইজলি পরীক্ষায় বসতে অসম্মতি জানালে, সে একাই পাড়ি দেয় বাকি পথ। N.E.W.T পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফলাফলের মাধ্যমে হগওয়ার্টসের পড়ালেখার পাট চোকায় হারমায়োনি। কিংসলি শ্যাকলবোল্টের অবসরের পর ২০২৯ সালের দিকে হারমায়োনিকে জাদু মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়। এছাড়াও ‘ডিপার্টমেন্ট ফর দ্য রেগুলেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অফ ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচার’-এ সে হাউজ এলভদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য উকিল হিসেবে নিযুক্ত ছিল।

রন-হারমায়োনির প্রেম রসায়নের অনেক বিক্রিয়া দেখা গেছে তাদের হগওয়ার্টস পিরিয়ড চলাকালীন। হগওয়ার্টস যুদ্ধের পর একসময় রন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে হারমায়োনির সামনে। দুজনের বিয়ে হবার পর তাদের ঘরে দুই সন্তান জন্ম নেয়। এদের নাম রাখা হয় যথাক্রমে রোজ উইজলি ও হিউগো উইজলি। রোজকে হ্যারি-জিনির ছেলে অ্যালবাস সেভেরাস পটারের সাথেই হগওয়ার্টসে ভর্তি করা হয়। (হারমায়োনি গ্রেঞ্জার সম্পর্কে আরো জানতে দেখুন এখানে।)

হারমায়োনি গ্রেঞ্জার; Image Source: Warner Bros.

লিলি পটার

লিলি পটার বিভিন্ন কারণে জাদু জগতে বিখ্যাত হয়ে আছেন। যে কয়টা কারণ উল্লেখ করা যাবে, এর মধ্যে হ্যারি পটার অন্যতম। কারণ নিজ সন্তান হ্যারি পটারকে লর্ড ভলডেমর্টের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজ জীবন উৎসর্গ করে দেন। ১৯৬০ সালের ৩০ জুন, ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ডসে মিস্টার এবং মিসেস ইভানসের কোল আলো করে জন্ম নেন এই মাগল-বর্ন উইচ। তিনি পেটুনিয়া ইভানসের ছোট বোন, যার বাড়িতেই এতিম হ্যারির দুঃস্বপ্ন-খচিত শৈশবগুলো পার হয়েছে।

১৯৭১ সালে হগওয়ার্টসে ভর্তি হবার পর তিনি হাউজ গ্রিফিন্ডরের জন্য নির্বাচিত হন। পোশনবিদ্যায় প্রচুর আগ্রহ থাকায়, অল্পসময়েই প্রফেসর স্লাগহর্নের নজরে আটকে যান লিলি ইভানস। সপ্তম বর্ষে এসে তিনি হগওয়ার্টসের হেড গার্ল নির্বাচিত হোন। ওইসময় লিলি জেমস পটারের সাথে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

সর্টিং হ্যাট মাথায় ছোট্ট লিলি ইভানস; Image Source: Warner Bros.

গ্রাজুয়েশনের পর তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক রূপ নেয় বিবাহ বন্ধনে। জাদু জগতের প্রথম মহাযুদ্ধের সময় বন্ধু সিরিয়াস ব্ল্যাক, রেমাস লুপিন, পিটার পেট্টিগ্রুর সাথে অর্ডার অভ দ্য ফিনিক্সে যোগ দেয় সেই দম্পতি। কিছুদিন পরই তাদের ঘরে হ্যারি পটার নামে এক সন্তানের জন্ম হয়, যার ধর্মপিতা ছিলেন সিরিয়াস ব্ল্যাক। এক ভবিষ্যদ্বাণীর কারণে, লর্ড ভলডেমর্টের হাত থেকে বাঁচার জন্য তাদেরকে গড্রিক’স হোলো নামে এক গ্রামে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হয়। পিটার পেট্টিগ্রু’র বিশ্বাসঘাতকতার কারণে লিলি এবং জেমসের আসল ঠিকানা জানতে পেরে যায় লর্ড ভলডেমর্ট। ফলে, ১৯৮১ সালের ৩১ অক্টোবর গড্রিক’স হোলোতে লর্ড ভলডেমর্টের হাতে প্রাণ হারায় লিলি ও জেমস পটার।

জেমস ও লিলি পটারের সাথে শিশু হ্যারি পটার; Image Source: Warner Bros.

মাগল-বর্ন সম্পর্কে যা না জানলেই নয়

প্রশ্ন থাকতে পারে, সাধারণ মাগল পরিবারে জন্মেও মাগল-বর্নদের মধ্যে জাদুকরী ক্ষমতা আসে কীভাবে? আকর্ষণীয় এ উত্তরটা পাওয়া যাবে স্কুইবদের কাছে। স্কুইব হলো মাগল-বর্নদের ঠিক বিপরীত, অর্থাৎ জাদু পরিবারে জন্মেও যাদের কোনো জাদু ক্ষমতা নেই। জাদু জগতে এমন পরিচিত কয়েকজন স্কুইব হলো হগওয়ার্টসের তত্ত্বাবধায়ক অ্যারগাস ফ্লিচ, প্রফেসর গিল্ডেরয় লকহার্টের দু বোন, ডলোরেস আমব্রিজের ভাই, ম্যারিয়াস ব্ল্যাক প্রমুখ। এ রকম স্কুইবদের জাদুর জগতে থাকার অনুমতি মেলে না। এর পরিবর্তে তারা ঠাই পায় জাদু-হীন মাগল সমাজে। পরবর্তী সময়ে তারা কোনো মাগলের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাধারণ মাগল হিসেবে জীবনযাপন শুরু করে।

স্কুইবদের মধ্য জাদুকরী ক্ষমতা প্রকাশ না পেলেও, তাদের ডিএনএ-তে নিহিত প্রচ্ছন্ন জাদুকরী ক্ষমতা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। পরবর্তী কয়েক প্রজন্মে তারা মাগলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে, একসময় তাদের পরিবার তাদের বংশের উইজার্ডিং লিগ্যাসি ভুলে যায়। কিন্তু সুপ্তাবস্তায় থাকা সেই জাদুর জিন কয়েক প্রজন্ম পরে কোনো সন্তানের মধ্যে দেখা দিলে, সে জাদু ক্ষমতা হয়ে উঠে প্রকট। এভাবে মাগল দম্পতির ঘরে জন্ম নিলেও তারা আপাদমস্তক একজন জাদুকর হিসেবে চিহ্নিত হয়।

মাগল-বর্ন জাদুকরেরা এগারো বছর বয়সে পা রাখলে তাদের জাদু স্কুলে ভর্তির চিঠি পাঠানো হয় একজন মানুষের মাধ্যমে। কোনো পেঁচার মাধ্যমে নয়। এর কারণ একটাই, সে লোকটা যাতে মাগল-বর্ন জাদুকরের অভিভাবককে সবকিছু ঠিকঠাক মতো বুঝিয়ে আসতে পারে। নইলে জাদু স্কুলের কথা শুনলে যে-কোনো মাগল অভিভাবকই হকচকায়ে উঠার পাশাপাশি, তা হেসে উড়িয়ে দিতে পারেন। এছাড়াও সে পিয়ন তাদেরকে অবহিত করে আসে, কোথায় স্কুলের যাবতীয় সরঞ্জাম পাওয়া যাবে এবং কীভাবে সেখানে যেতে হবে।

মাগল-বর্ন উইজার্ড বা উইচরা অধিকাংশ পিউর-ব্লাডদের নিকট চক্ষুশূল। তারা মাগল-বর্নদের মশকরা করে মাডব্লাড বলেও ডেকে থাকে, যা একপ্রকার গালির সমার্থক। অনেক পিউর-ব্লাড জাদুকর বিশ্বাস করে যে, মাগল-বর্নরা জাদু শেখার জন্য অনুপযুক্ত এবং জাদু জগতে তাদেরকে জায়গা দেয়া উচিত নয়। উইজলি পরিবার মাগল-বর্ন এবং মাগলদের প্রতি দয়া দেখায় বলে, অনেক পিউর-ব্লাড তাদেরকে ব্লাড ট্রেইটর বলে গালিও দিয়ে থাকে।

Featured Image: Wallpaper Flare

Necessary references have been hyperlinked inside the article. 

Related Articles