Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মুকুন্দান উন্নি অ্যাসোসিয়েটস: একটি অনবদ্য ব্ল্যাক কমেডি

মুকুন্দান উন্নির (ভিনিথ শ্রীনিবাসন) বয়স ৩৬। কিন্তু বার বার পরিচয়পত্র এডিট করে সে নিজের জীবনকে ঠেকিয়ে রেখেছে ২৯ বছরে। কিন্তু সে এটাও বুঝতে পারছে যে এসবের দিন শেষ হয়ে এসেছে। কেননা, বয়সের ছাপ চেহারায় পড়তে শুরু করেছে। তার সারাজীবনের স্বপ্ন সফল হওয়ার। এজন্য পর্যাপ্ত গুণাবলীও নিজের ভেতর রয়েছে বলে মনে করে সে। কিন্তু সাফল্যের সোনার হরিণের দেখা কিছুতেই মিলছে না। 

সকল আইনজীবীই চায় তার নিজের প্র্যাকটিস, চেম্বার, নাম-জশ হবে। উন্নিও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু সে এখনও রয়ে গেছে শিক্ষানবিশ হিসেবে। শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবেই তার দায়িত্ব পড়ে এক রাজনীতিবিদের বাসায় যাওয়ার। সেখানে গিয়ে  নিজের প্রথম কেইস পেতে একটু চালাকি করতে গিয়ে বেমক্কা সে শিক্ষানবিশির চাকরিই হারিয়ে ফেলে। কিন্তু এসব সে গায়ে মাখে না। কেননা, একদিন না একদিন এই চাকরি সে ছাড়তোই। তার মতে, এসব তাকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছিল। অপ্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়তেই হবে। 

কী করবে না করবে এ নিয়ে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ তার মায়ের পায়ে ফ্র্যাকচার হয়। কিন্তু তার কাছে যে অর্থ আছে, তাতে হাসপাতালের খরচ মিটবে না। টাকার অভাবে দালাল ধরতে গেলে তার সাথে পরিচয় হয় অ্যাডভোকেট ভেনুর (সুরাজ ভেঞ্জারামাধু)। ভেনু আবার সাদামাটা কেইসকে রোড অ্যাক্সিডেন্টে রূপান্তর করে ফেলতে পারে। এরপর ইন্স্যুরেন্সের টাকা দাবি করে। উন্নিকেও সে একইভাবে মায়ের চিকিৎসার টাকার বন্দোবস্ত করে দেয়। ধুরন্ধর উন্নি ভেনুর সাথে সাথে থেকে শিখে ফেলে ইনস্যুরেন্সের অর্থ দাবি বিষয়ক কেইসের ফাঁকফোকর। হয়ে দাঁড়ায় ভেনুরই প্রতিদ্বন্দ্বী।

উন্নির চরিত্রে ভিনীথ শ্রীনিবাসন; Image source: Joy Movie Productions

এভাবে একসময় পুলিশ তৌফিক আহাম্মদ কেইস নিয়ে আসে তার কাছে। একটি কাস্টোডিয়াল টর্চারকে তারা অ্যাক্সিডেন্ট কেইসে রূপান্তর করতে চায়। সুযোগ বুঝে উন্নিও চেয়ে বসে অর্থের চেয়ে অনেক দামী কিছু। কিন্তু সেই কেইস হাতে নিয়ে নিজের ক্যারিয়ারই হুমকির মুখে ফেলে দেয় উন্নি। এখন কীভাবে সে বাঁচাবে ক্যারিয়ার? নাকি সবসময় যেমন বলে, তেমনিভাবে পরাজয়ের চেয়ে মৃত্যুকে বেছে নেবে সে? এর আগে-পরে-মাঝে আছে নানা কাহিনী। এসব জানতে হলে দেখতে হবে ১২৭ মিনিট দৈর্ঘ্যের মুকুন্দান উন্নি অ্যাসোসিয়েটস (২০২০)

সিনেমার গল্প বুঝতে হলে বা এটি উপভোগ করতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে এর মূল চরিত্রকে। যে পার্থিব সাফল্যের জন্য ভীষণভাবে ক্ষুধার্ত। তার সাথে সে বেশ উচ্চ লেভেলের নার্সিসিস্ট। নিজের সাফল্যের জন্য সে যেকোনো সীমায় যেতে পারে, যেকোনো কাজ করতে পারে, খুনও করে ফেলতে পারে কাউকে। তার কাছে নিজের আর ব্যবসার উন্নতিই বড়। বাকি যত লোকজন বা বিষয়বস্তু আছে- এ সবকিছুই ব্যবসায় উন্নতির একেকটি সুযোগ বিশেষ, যা সে গ্রহণ করে পরিপূর্ণরূপে।

যখন মুকুন্দান উন্নিকে আমরা কেবল চালকের জন্য এয়ার ব্যাগ সম্বলিত গাড়ি কিনতে দেখি, তখন মনে হয় খরচ বাঁচানোর জন্যেই সে এটা কিনছে। কিন্তু তার মনে চলছে অন্য চাল। যেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হয় শেষ অঙ্কে গিয়ে। যখন আমরা তাকে দেখি নিজের পথের কাঁটা সরাতে। যে কাঁটা একসময় ছিল তার খুব কাছের মানুষ। 

ভেনুর সাথে উন্নি; Image source: Joy Movie Productions

উন্নির মতো এমন কোল্ড ব্লাডেড ট্যাকটিশিয়ান চরিত্রে ভিনিথের কাস্টিংও খানিকটা চমক হিসেবেই এসেছে। কারণ মালায়লম সিনেমার ভক্তদের কাছে তিনি পরিচিত নাম। সাধারণত ‘ফিল গুড’ ঘরানার সিনেমাতেই তাকে বেশি দেখা যায়। বিপরীতমুখী এ চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সকল আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন তিনি। তিনিই ছিলেন সিনেমার মূল চালিকাশক্তি। সহশিল্পীদের ভালো অভিনয় তাকে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে। 

‘সফলতা’র নিজস্ব আইডিয়ার প্রতি উন্নি এতটাই মোহাচ্ছন্ন যে, অন্য কোনোভাবেও সফল হওয়া যায় এটা সে ভাবতেই পারে না! গল্পের শুরুতে ছোটখাট প্রতারণা থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে যে অভাবনীয় সব অপকর্মের মাধ্যমে তার চরিত্রের বিবর্তন হয়, তাতে আমাদের মনে হয় তার দ্বারা যেকোনো কিছুই করা সম্ভব। তার আশেপাশের বা কাছের লোকজনের জন্যেও সে হুমকিস্বরূপ। কেননা, একটু এদিক-ওদিক হলেই সে অন্যকে ছেঁটে ফেলে। কিন্তু তার চারপাশের লোকজনও দুধে ধোয়া তুলসী পাতা না। এ কথা এমনকি মিনাক্ষীর (আর্শা বাইজু) ক্ষেত্রেও সত্যি। যে হসপিটাল রিসেপশনিস্টের সে প্রেমে পড়ে এবং বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। এটাও ছিল তার একটি মাস্টার স্ট্রোক, যা তার ব্যবসাকে এগিয়ে নেয় বহুদূর। 

পুরো ব্যাপারটার জন্য সে দায়ী তা-ও বলা যায় না। বরং তাকে মনে করা যায় পাজলের একটি টুকরা রূপে, যে চারপাশের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। বা সেটাকে আরো শানিত করছে নিজের প্রয়োজনমতো, নিজের বুদ্ধি দিয়ে। তার এই পরিবেশে আছে ছোট-বড় নানা অঙ্গ। যেমন: দুর্নীতিবাজ ডাক্তার, পুলিশ সদস্য, অ্যাম্বুলেন্স চালক, দ্বাররক্ষক ইত্যাদি। এরা উন্নি এ জগতে প্রবেশের আগেও ছিল। এখন কেবল সে তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে। সাফল্যের সিঁড়ি বাইতে এ চরিত্র যেরকম বোধ-চেতনাহীন নির্মমতা প্রদর্শন করে, সেটি আমাদের ২০১৪ সালের নাইটক্রলার সিনেমার কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। যেখানে জেইক গিলেনহাল অভিনীত লু ব্লুম চরিত্রটি অনেকটা একইভাবে দুর্ঘটনার ফুটেজ সংগ্রহ করতো। এবং তা স্থানীয় টিভি চ্যানেলে পৌঁছে দিত টাকার বিনিময়ে। 

মিনাক্ষী চরিত্রে আর্শা বাইজু; Image source: Joy Movie Productions

কিন্তু সিনেমার মেজাজের দিক থেকে মুকুন্দান উন্নি অ্যাসোসিয়েটস নাইটক্রলার থেকে আলাদা। অন্যসব ব্ল্যাক কমেডিতে যেখানে গল্প বলতে সাধারণত ডার্ক, মলিন এবং বিষণ্ণ মেজাজ রাখা হয়, এখানে তার বদলে দেখা গেছে কোলাহলময় হাস্যরসাত্মক আবহ। ফিল্ম এডিটর থেকে ডিরেক্টর বনে যাওয়া সুন্দর নায়ক আর তার সহ-লেখক বিমল গোপালাকৃষ্ণাণের এই পদক্ষেপ সিনেমার উপভোগ্যতার পথকে ত্বরান্বিত করেছে। আরো একটা কারণে তারা বাহবা পাবেন। সেটা হলো ফোর্থ ওয়াল ভাঙার সাহস দেখানো। অর্থাৎ, গল্পের অন্য চরিত্রের সামনে অল্পভাষী এবং ভাবলেশহীন থাকলেও উন্নি দর্শকদের সাথে কথা বলে গেছে সর্বক্ষণ। এসব কারণে সিনেমার থিম আরো উৎকৃষ্টতার সাথে দর্শকের কাছে পৌঁছেছে। এতে তার কাজের উদ্দেশ্য আমাদের মনে বিতৃষ্ণার জন্ম দিলেও, তার কর্মকাণ্ড দেখে আমরা হেসেছি। তবে এর একটা নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এতে একই ঘটনার বার বার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। বিশ্বজিতের সিনেম্যাটোগ্রাফি আর ম্যাথু অ্যালেক্সের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর সিনেমার উপভোগ্যতাকে বাড়িয়েছে। এবং উন্নির কাজগুলোর নির্যাস মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে ভূমিকা রেখেছে। 

সিনেমাতে যারা নিজেদের বিবেককে পুরোপুরি জলাঞ্জলি দেন না তারা হলেন যথাক্রমে তার বন্ধু, প্রাক্তন প্রেমিকা এবং একজন বিচারক। কিন্তু তারা উন্নি বা অন্যদের মতো ‘সফল’ও হতে পারেন না। বাস্তবের মতো এখানেও ভালোরা নিজেদের প্রাপ্য ঠিকমতো বুঝে পান না। তবে সিনেমায় কোনো নৈতিকতা বিষয়ক কোনো রায় দেওয়া হয় না। জোর দেয়া হয় না ইতিবাচক ক্লাইম্যাক্সের প্রতি। বালাই নেই কোনো জ্ঞানগর্ভ বার্তার। উন্নির মতো তার গল্পও ধূসর।

কিন্তু, দিনশেষে মুকুন্দান উন্নি অ্যাসোসিয়েটস পরিণত হয় বাস্তবতার এক মর্মন্তুদ দলিলে। একে আমরা একটি সামাজিক কমেন্টারি হিসেবেও দেখতে পারি। সরাসরি না বললেও এটি প্রমাণ করে যে, আমরা সফলতাকেই জীবনের সবকিছু মনে করি। কোন পথে সেটি এলো তাতে সমাজের কিছুই আসে-যায় না। 

The article is in Bangla. It is a review of 2022 Malayalam Black Comedy film Mukundan Unni Associates. Necessary links are hyperlinked in the article.

Sources :

1. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mukundan_Unni_Associates

2. https://m.imdb.com/title/tt15546822/

3. https://www.rottentomatoes.com/m/mukundan_unni_associates

Related Articles