Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল: অসম্ভবের বিজ্ঞান

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকে বলা হয় ভবিষ্যতের রুপকথা। আজ যেটা বিজ্ঞানের কল্পকাহিনীতে জায়গা করে নিয়েছে, কাল সেটা হতে পারে কঠিন বাস্তবতা। এর উদাহরণও আছে অসংখ্য। আজকের স্যাটেলাইট,  ইন্টারনেট, স্মার্ট কার্ড, রোবট, রকেটসহ অনেক প্রযুক্তি প্রথম দেখা গিয়েছিল কল্পবিজ্ঞানের পাতায়। সেসময় কেউ কেউ এগুলোর সম্ভাব্যতা কড়া ভাষায় নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই অসম্ভব প্রযুক্তিগুলোই আজ আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। সেভাবেই বর্তমানের যেসব কাল্পনিক প্রযুক্তিকে অনেক বিজ্ঞানী অসম্ভব বলে দাবী করেছেন, মিচিও কাকু সেগুলোকে সরাসরি অসম্ভব বলতে নারাজ। তার মতে, ভবিষ্যতে হয়তো এই প্রযুক্তিগুলো সম্ভব হয়ে উঠবে। যে প্রযুক্তিগুলো বর্তমানে অসম্ভব কিন্তু ভবিষ্যতে সম্ভব হবে বলে মনে করেন মিচিও কাকু, সেগুলো নিয়েই তার লেখা বেস্টসেলার বই ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল

ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল বইয়ে অসম্ভাব্যতাকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি শ্রেণীকে কয়েকটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি পর্বের শুরুতে সেগুলোর ইতিহাস বলা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কারা, কবে গবেষণা করেছেন, সেগুলো কতটা সফলতার মুখ দেখেছে এগুলো বর্ণনার পরে লেখক নিজের যুক্তি দিয়েছেন।

প্রথম শ্রেণীর অসম্ভাব্যতার মধ্যে রাখা হয়েছে যে প্রযুক্তিগুলো বর্তমানে অসম্ভব কিন্তু এগুলো পদার্থবিদ্যার কোনো সূত্র অমান্য করে না। কাজেই এগুলোকে এই শতাব্দীতেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতে পারে। কিংবা রূপান্তরিতভাবে সম্ভব হতে পারে পরের শতাব্দীতে। এই শ্রেণীতে আছে ১০টি পর্ব। এগুলোর মধ্যে আছে বলক্ষেত্র, অদৃশ্য হওয়া, ফেজার ও মৃত নক্ষত্র, টেলিপোর্টেশন, টেলিপ্যাথি, সাইকোকাইনেসিস, রোবট, এলিয়েন, স্টারশিপ ও প্রতিবস্তু।

মূল বইয়ের প্রচ্ছদ; Image Source: Amazon

 

দ্বিতীয় শ্রেণীর অসম্ভাব্যতা হলো যেসব প্রযুক্তি ভৌত বিশ্বে আমাদের উপলব্ধির দিক থেকে খুবই কাছাকাছি রয়েছে। এগুলো যদি কখনো সম্ভব হয় তাহলে সেজন্য সহস্রাব্দ থেকে কয়েক মিলিয়ন বছর লেগে যেতে পারে। এই শ্রেণীকে তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো আলোর গতি ছাড়িয়ে, টাইম ট্রাভেল ও সমান্তরাল মহাবিশ্ব।

তৃতীয় শ্রেণীর সম্ভাব্যতা হলো, যেসব প্রযুক্তি আমাদের বর্তমানে জানা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোর বিরুদ্ধে। যদিও এসব প্রযুক্তি হাতেগোনা কয়েকটি। এগুলো যদি কোনোদিন সম্ভব হয় তাহলে আমাদের উপলব্ধির মৌলিক ধারণা পাল্টে দেবে। এই শ্রেণীর দুটি পর্ব হলো অবিরাম গতিযন্ত্র ও ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা। সবশেষে লেখক অসম্ভবের ভবিষ্যৎ দিয়ে বইয়ের ইতি টেনেছেন।

এবার বইয়ে উল্লেখিত প্রতিটি প্রযুক্তি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যাক।

১.১ বলক্ষেত্র

স্টার ট্রেক সিরিজে দেখানো বলক্ষেত্র একটি পাতলা, অদৃশ্য হলেও অপ্রবেশ্য দেয়াল। এই দেয়াল লেজার ও রকেটের মতো কোনো কিছুকে ঠেকিয়ে পথচ্যুত করে দিতে পারে। কোনো সেনাবাহিনী বলক্ষেত্র ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের কাছে অভেদ্য হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ও বুলেটের বিরুদ্ধে অপ্রবেশ্যযোগ্য দেয়াল গড়ে তোলা সম্ভব। অথবা একটি বোতাম টিপলে নিমেষেই রাস্তা, সুপারহাইওয়ে বা আস্ত একটি শহর বানানো যাবে বলক্ষেত্র ব্যবহার করে।

কিন্তু কথা হলো, এই বলক্ষেত্র আসলেই কি আগামী শতকে বানানো সম্ভব? মিচিও কাকু বলেছেন, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে বলক্ষেত্রকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোর সাথে খাপ খায় না। তবে এমন কোনো কিছু থাকা সম্ভব যা থেকে এ ধরনের বলক্ষেত্র আবিষ্কার করা যাবে। এই পর্বে সেগুলো নিয়েই বিশদভাবে আলোচনা করেছেন তিনি।

কাল্পনিক বলক্ষেত্র; Image courtesy: Wallpaper Abyss – Alpha Coders

 

১.২ অদৃশ্য হওয়া

দ্য লর্ড অব দ্য রিংস মুভিতে আংটি পরলেই অদৃশ্য হওয়া যায়। আসলেই কি অদৃশ্য হওয়া সম্ভব? কয়েকজন বিজ্ঞানী বলেছেন, যেহেতু অদৃশ্য হওয়া আলোকবিদ্যার সূত্র মানে না, সেহেতু তা সম্ভব নয়। তবে মিচিও কাকু বলছেন, অসম্ভব ব্যাপারটিও সম্ভব হতে পারে মেটাম্যাটেরিয়ালের সাহায্যে। যদিও একসময় মনে করা হতো মেটাম্যাটেরিয়াল তৈরি করা অসম্ভব। তবে ২০০৬ সালে কিছু গবেষক এই পদার্থটি আবিষ্কার করে প্রচলিত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখান। সে কারণেই লেখক মনে করেন, এই পদার্থ দিয়ে সত্যি সত্যি অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা যাবে। তবে মুভিতে দেখানো রিং বা চাদরের মতো করে নয় নিশ্চয়ই। বাস্তবে কীভাবে অদৃশ্য হওয়া যাবে তার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে এই পর্বে।

১.৩ ফেজার ও মৃত নক্ষত্র

মৃত নক্ষত্র একধরনের প্রকাণ্ড যুদ্ধাস্ত্র। এর আকার প্রায় চাঁদের সমান। এই যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে চোখের পলকেই ধ্বংস করা যায় আস্ত একটি গ্রহকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্টার ওয়ার্সে দেখানো এই ডেথ স্টার বা মৃত নক্ষত্র কি আসলেই বানানো সম্ভব? অথবা আলোকরশ্মি দিয়ে বানানো তলোয়ার সম্পর্কেই বা কী বলা যায়? যে তলোয়ার শক্তিশালী ইস্পাত কেটে টুকরো টুকরো করে দিতে পারে। এই অস্ত্র কি আধুনিক পৃথিবীতে বাস্তবসম্মত কোনো মারণাস্ত্র?

সমালোচকরা বলেছেন, বিনোদনের জন্য এগুলো খুব ভাল। কিন্তু বাস্তবে অসম্ভব। বিশ্বাস করা কঠিন হলেও সত্যি আলোকরশ্মিকে ঠাসাঠাসি করার জন্য প্রাকৃতিক শক্তির কোনো ভৌত সীমানা নেই। পদার্থবিজ্ঞানে এমন কোনো সূত্র নেই, যা মৃত নক্ষত্র বা আলোকরশ্মি তলোয়ার বানাতে বাধা দেয়। সুতরাং সব অসম্ভাব্যতাকে উড়িয়ে দিয়ে বাস্তবে ফেজার বা মৃত নক্ষত্র বানানো সম্ভব বলে মনে করেন মিচিও কাকু। শুধু মনে করেই খেল খতম করেননি, এর বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন।

স্টার ট্রেকে দেখানো ডেথ স্টার বা মৃত নক্ষত্র; Image courtesy: Dizzy Quilter

 

১.৪ টেলিপোর্টেশন

মানুষ বা বস্তুকে খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করার ক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তিই টেলিপোর্টেশন। এই প্রযুক্তি সভ্যতার গতিপথ বদলে দিতে পারে। পাল্টে দিতে পারে বিভিন্ন জাতির ভবিষ্যৎ। বদলে দিতে পারে যুদ্ধের নিয়মকানুন। বিভিন্ন পক্ষের সেনাবাহিনীকে টেলিপোর্টেশনের মাধ্যমে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যেতে পারে। আবার বিপদে যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে। তেমনি যোগাযোগের জন্যও এই প্রযুক্তি খুবই কাজের। মালামাল বহন করতেও কোনো ঝামেলা থাকবে না। বাস্তবে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা কতটুকু?

মিচিও কাকুর মতে, টেলিপোর্টেশন এখনও পারমাণবিক পর্যায়ে রয়েছে। বড় ধরনের বস্তুর টেলিপোর্টেশন করতে আগামী কয়েক দশক থেকে কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করতে হতে পারে।

শিল্পীর চোখে টেলিপোর্টেশন; Image courtesy: Desktop wallpaper HD

 

১.৫ টেলিপ্যাথি

ঐতিহাসিকভাবে মাইন্ড রিডিং বা মন পড়তে পারার ক্ষমতা এতই গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবা হয়েছে যে, এর সঙ্গে প্রায়ই দেব-দেবীদের জড়িয়ে ফেলা হয়। কোনো দেবতার অলৌকিক শক্তির অন্যতম হলো মন পড়তে পারা এবং তাদের গভীর প্রার্থনার উত্তর দেওয়া। অন্যের মন পড়তে পারার ক্ষমতা যেকোনো ব্যক্তিকে সবচেয়ে ধনবান এবং ক্ষমতাবান করে দিতে পারে। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের মিসির আলী সিরিজে টেলিপ্যাথির ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু টেলিপ্যাথির বাস্তবতা কতখানি? মিচিও কাকুর মতে, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে দেখানো টেলিপ্যাথির মতো মন পড়া কখনো সম্ভব হবে না। তবে সম্ভবনা কতটুকু সে ব্যাপারে এই অধ্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

১.৬ সাইকোকাইনেসিস

মানুষের অলৌকিক কিছু করার ক্ষমতাই হলো সাইকোকাইনেসিস। অনেক জাদুকর মঞ্চে চোখের ইশারায় চামচ বাঁকা করতে পারে। এই ক্ষমতাই সাইকোকাইনেসিস। কিন্তু কথা হলো, আসলেই কি চোখের ইশারায় চামচ বাঁকা করা সম্ভব? সাইকিক ক্ষমতা দেখাতে পারে এমন কাউকে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অ্যামেজিং র‍্যান্ডি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই পুরস্কারের জন্য কাউকে অংশ নিতে দেখা যায়নি। সাইকিক ক্ষমতা সত্যি সত্যি কারো থাকলে নিশ্চয়ই এতদিন ১ মিলিয়ন ডলার বাগিয়ে নিত। তাহলে ভবিষ্যতে কি কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার করা সম্ভব যার মাধ্যমে সাইকিক ক্ষমতা অর্জন করা যাবে?

কাকুর মতে, সাইকোকাইনেসিস বর্তমান প্রেক্ষাপটে অসম্ভব। তবে ভবিষ্যতে হয়তো ইইজি, এমআরআই ও অন্যান্য পদ্ধতিতে আমাদের মস্তিষ্কে চিন্তার মধ্যে ঢুকে আরও অনেক কিছু বুঝতে পারা সম্ভব হবে। 

সাইকিক ক্ষমতার বলে চামচ বাঁকানোর দৃশ্য; Image courtesy: Andriy Popov

 

১.৭ রোবট

কল্পকাহিনী বা মুভিতে দেখানো অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রোবট এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বলিউডের রোবট মুভিতে দেখানো হয়েছে, একসময় রোবটটি প্রেমে পড়ে। সেই রোবটের চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতাও আছে। তাহলে বাস্তবে কি রোবট এতই উন্নত হতে পারে যে একদিন আমাদের অস্তিত্বের জন্যও চূড়ান্ত হুমকি হয়ে দাঁড়াবে?

কিছু কিছু বিজ্ঞানীর মতে এর উত্তর, না। তাদের মতে, চিন্তা করতে পারে এমন যন্ত্র বানানো অসম্ভব। প্রকৃতির এযাবৎকালে বানানো সবচেয়ে জটিল সিস্টেম হলো মানবমস্তিষ্ক। মানুষের চিন্তা প্রতিলিপি বা নকল করতে পারে এমন যন্ত্র বানানো তো দূরের কথা, নকশা করাও সম্ভব নয়। এ তো গেলো কিছু গবেষক ও বিজ্ঞানীর কথা। রোবট সম্পর্কে লেখকের কী বক্তব্য? তার দাবি, বাস্তবে রোবট আমাদের চেয়েও বেশি স্মার্ট হয়ে উঠতে পারে। তবে সেজন্য মুরের সূত্র (প্রতি দুই বছরে কম্পিউটারের হিসাব করার ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে এবং একই সময়ের মধ্যে দ্বিগুণ হবে সিলিকন চিপের ট্রানজিস্টারের সংখ্যা) অকার্যকর হওয়া থামাতে হবে এবং সাধারণ বিচারবোধ-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে। সেটি হয়তো সম্ভব হবে এই শতকের শেষের দিকেই।

ভবিষ্যতের রোবট এরকম হতে পারে; Image courtesy: TechnoEN

 

১.৮ মহাকাশের আগন্তক ও ইউএফও

এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের নিয়ে যুগে যুগে মানুষের আগ্রহ ছিল। অনেকেই দাবী করেছেন, তারা এলিয়েন বা এলিয়েনদের যান দেখেছেন। নিজেদের মতো করে সেগুলোর ব্যাখ্যাও করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো এলিয়েন ও ইউএফও দেখার প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। যারা এলিয়েন দেখার দাবী করেছেন তাদের ব্যাখ্যাকে খুব সহজেই উড়িয়ে দেওয়া যায়। সুতরাং ধরে নেওয়া যায়, এখনও এলিয়েন ও ইউএফও দেখার সৌভাগ্য কারো হয়নি। তবে এখনও হয়নি বলে যে কোনোদিন হবে না তা তো নয়। হয়তো ভবিষ্যতে সত্যি সত্যি এলিয়েনের দেখা মিলতে পারে। আমাদের গ্রহের বাইরে এলিয়েন থাকাটা অসম্ভব নয়।

তাহলে প্রশ্ন হলো- তারা কোথায় থাকে? দেখতে কেমন হবে? মুভিতে দেখানো দানবের মতো? তারা যেখানে থাকে সেখানকার সভ্যতা কি আরও উন্নত? হলে কতটা উন্নত? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে এই অধ্যায়ে। কাকুর মতে, সেটি (SETI) প্রজেক্টের দ্রুত অগ্রগতি এবং অনেকগুলো বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ আবিষ্কারের কারণে এলিয়েন আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকে বলে ধরে নেওয়া যায়। আর তা যদি সত্যি হয় তাহলে তাদের সাথে এই শতকেই যোগাযোগ সম্ভব হবে। কীভাবে যোগাযোগ করবে এলিয়েনদের সাথে বা কোন ভাষা ব্যবহার করা হবে? জানা যাবে এই অধ্যায়ে।

এলিয়েনের কাল্পনিক ছবি; Image courtesy: The Mirror

 

১.৯ স্টারশিপ

পদার্থবিজ্ঞানের একটি সূত্রমতে, অদূর ভবিষ্যতে (কয়েক বিলিয়ন বছর পর) গোটা মহাকাশ তীব্র আগুনে ছেয়ে যাবে। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে কোনো পানি থাকবে না। পাহাড়-পর্বতগুলো গলে লাভায় পরিণত হবে। তখন পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তাই বাঁচতে হলে হয়তো আমাদের সৌরজগৎ ছেড়ে অন্য কোনো নক্ষত্রে পাড়ি দিতে হবে। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র আলফা সেন্টুরাই, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৪ আলোকবর্ষ দূরে। যদি এই কাছের নক্ষত্রেও যেতে চাই তাহলে ৭০ হাজার বছর লেগে যাবে। তাহলে উপায়? রকেটের নতুন নকশা খুঁজতে হবে। হয় রকেটের থ্রাস্ট বাড়াতে হবে নয়তো সক্রিয়তার সময় বাড়াতে হবে। অনেকে মনে করেন, ভবিষ্যতে স্টারশিপে করে পাড়ি দিতে পারবে এক নক্ষত্র থেকে আরেক নক্ষত্রে? আসলেই কি বাস্তবে স্টারশিপ তৈরি করা সম্ভব হবে? কাকুর মতে, এই শতকে মনুষ্যবাহী স্টারশিপ তৈরি করা অসম্ভব হলেও মানুষবিহীন ন্যানো স্টারশিপ অন্য নক্ষত্রে প্রেরণ করা যেতে পারে।

স্টার ওয়ার্সে দেখানো স্টারশিপ; Image courtesy: Gadżetomania

 

১.১০ প্রতিবস্তু ও প্রতি-মহাবিশ্ব

আমাদের চেনা-জানা জগতের বিষয়বস্তুর ঠিক বিপরীতে একধরনের বস্তু বিদ্যমান, বিজ্ঞানীরা যেসবের নামকরণ করেছেন প্রতিবস্তু কিংবা এন্টিম্যাটার নামে। আর প্রতি-মহাবিশ্বে আমাদের চেনা জগতের সব বিপরীত ঘটনা ঘটবে। আমাদের সব অনিয়ম পরিণত হবে তাদের নিয়মে। সমস্যা হলো যখন বস্তু আর প্রতিবস্তু পরস্পর সংস্পর্শে আসবে, তখন তারা একে অপরকে ধ্বংস করে দেবে। তাই রবার্ট ফাইনম্যান ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটি মজার উক্তি করেছেন!

কোন মহাজাগতিক প্রাণ যদি তোমার নিকট এসে ডান হাতের বদলে বাম হাত এগিয়ে করমর্দন করতে চায়, তবে তাকে সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করো!

ড্যান ব্রাউনের ‘অ্যাঞ্জেল এন্ড ডেমনস’ বইয়ে একদল উগ্রবাদীকে দেখানো হয়েছে। তারা প্রতিবস্তুর তৈরি বোমা দিয়ে ভ্যাটিকান সিটিকে উড়িয়ে দিতে চায়। এই বোমা হাইড্রোজেন বোমার চেয়ে ১০০ গুণ শক্তিশালী। অবশ্য প্রতিবস্তু বোমা এখন পর্যন্ত বাস্তবে দেখা না মিললেও প্রতিবস্তু পুরোপুরি বাস্তব। ল্যাবে প্রতিবস্তু তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। তবে খুবই সামান্য পরিমাণে। প্রতিবস্তু উৎপাদনের হার বর্তমানে বছরে ১ গ্রামের ১ বিলিয়ন ভাগের ১ ভাগ থেকে ১০ বিলিয়ন ভাগের ১ ভাগ মাত্র। তবে এ বছরে এর হার তিনগুণ বাড়ার সম্ভবনা আছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তু কী জানেন? প্রতিবস্তু। ১ গ্রাম প্রতিবস্তু তৈরি করতে খরচ হবে ১০০ কোয়াড্রিট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই সাথে প্রতিবস্তু তৈরির কারখানাকে ১০০ বিলিয়ন বছর ধরে অবিরাম চালু রাখতে হবে। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাকাশে প্রতিবস্ত পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রতিবস্তু দিয়ে হবে কী? প্রতিবস্তু রকেট তৈরি করা যাবে। যে রকেটে অতিদ্রুত এক নক্ষত্র থেকে আরেক নক্ষত্রে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তবে প্রতিবস্তু ইঞ্জিনের প্রযুক্তিগত জটিলতা আছে প্রচুর। তাই এ ধরনের যান পেতে হয়তো এই শতক বা পরের শতক লেগে যেতে পারে।

২.১ আলোর গতি ছাড়িয়ে

আলোর চেয়ে বেশি গতিতে চলাচল করা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে সবসময় জলভাতের মতোই ব্যাপার ছিল। তবে সম্প্রতি এই সম্ভাবনা নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভাবতে শুরু করেছেন। আইনস্টানের মতে, আলোর বেগই হলো আমাদের মহাবিশ্বের চূড়ান্ত গতিসীমা। তবে কি আলোর বেগ অতিক্রম করা সম্ভব নয়?

মিচিও কাকুর মতে, ওয়ার্মহোল ও প্রসারণশীল স্থান হয়তো আলোর গতিসীমা ভাঙতে আমাদের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত উপায়ের যোগান দেবে। কিন্তু এই প্রযুক্তি স্থিতিশীল কি না তা এখনও অজানা। কোনো টাইপ থ্রি সভ্যতা (পুরো ছায়াপথের সব শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা রাখে এই সভ্যতা) হয়তো এরই মধ্যে এ ধরনের প্রযুক্তি হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছে। এই প্রযুক্তি অর্জন করতে আমাদের হয়তো আরো ১০০ বছর লাগবে।

২.২ টাইম ট্রাভেল

টাইম ট্রাভেল নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ইতোমধ্যে অনেকেই দাবী করেছেন তারা ভবিষ্যৎ থেকে এসেছেন। যদিও প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সত্যি সত্যি কি সময় পরিভ্রমণ করা সম্ভব? কোনো কোনো বিজ্ঞানীর মতে, শুধু ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব। অতীতে কেন সম্ভব নয়? তাতে প্যারাডক্সের সৃষ্টি হয়।

ধরুন আপনি অতীতে গিয়ে আপনার শৈশবের দাদাকে খুন করে বসলেন। তাতে আপনার বাবার জন্মানো সম্ভব নয়। তাহলে আপনার অস্তিত্ব নিয়ে সমস্যার জন্ম দেয়। আবার কেউ বলেছেন, কেউ যদি অতীতে গিয়ে তার তরুণ মায়ের প্রেমে পড়ে এবং তাদের মধ্যে বিয়ে হয় তাহলে তাদের ছেলেমেয়ের কী অবস্থা হবে! সেই কারণে অনেকে অতীতে ভ্রমণ করা অসম্ভব বলে মনে করেন। তবে এই অধ্যায়ে এ ধরনের প্যারাডক্সের সমাধানও আছে।

কাকু মনে করেন, টাইম ট্রাভেল আলোচনার প্রধান উপলব্ধি হলো, কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনা দিগন্তের পদার্থবিজ্ঞান বোঝা। আর একটিমাত্র থিওরি অব এভরিথিং এটি ব্যাখা করতে পারবে। পদার্থবিজ্ঞানীরা এখন একমত যে একটি উপায়ে টাইম ট্রাভেল সংক্রান্ত প্রশ্নের নিশ্চিত সমাধান সম্ভব, সেটি হলো মহাকর্ষ ও স্থান-কালের পরিপূর্ণ একটি তত্ত্ব। সেজন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েক শতাব্দী বা এর চেয়েও বেশি সময়।

২.৩ সমান্তরাল মহাবিশ্ব

বিকল্প কোনো মহাবিশ্ব থাকা কি সত্যই সম্ভব? বিজ্ঞানে বর্তমানে তিন ধরনের সমান্তরাল মহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনা চলছে। উচ্চতর মাত্রা, বহুবিশ্ব ও কোয়ান্টাম সমান্তরাল মহাবিশ্ব। যদি সত্যি এ মহাবিশ্ব থাকে তাহলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ করা কি সম্ভব? অথবা গবেষণাগারে কি একটি শিশু মহাবিশ্ব বানানো সম্ভব? এই অধ্যায়ে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মিচিও কাকু। তিনি বলছেন, সমান্তরাল মহাবিশ্বের উপস্থিতি প্রমাণের জন্য বর্তমানে আমাদের প্রযুক্তি একেবারেই আদিম। তবে এখন অসম্ভব হলেও এটি পদার্থবিজ্ঞানের কোনো সূত্র লঙ্ঘন করে না। কয়েক হাজার থেকে কয়েক লক্ষ বছর পরে হয়তো এই অনুমান টাইপ থ্রি সভ্যতার জন্য নতুন প্রযুক্তির ভিত্তি হয়ে দাঁড়াবে।

৩.১ অবিরাম গতিযন্ত্র

ইতিহাসে বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে হাতুড়ে ডাক্তার, ভন্ড ও প্রতারক শিল্পী সবার কাছে অলীক পারপেচুয়াল মোশন মেশিন বা অবিরাম গতিযন্ত্র দেখা যায়। এটি এমন এক যন্ত্র যা শক্তি ছাড়া চিরকাল চলতে পারে। আবার এমন অনেক যন্ত্র দেখা যায়, যেখানে যতটুকু শক্তি খরচ করে তার চেয়ে বেশি শক্তি উৎপাদন করে।

অবিরাম গতিযন্ত্রের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অনেক ব্যক্তিই অবিরাম গতিযন্ত্রের আবিষ্কারক হিসেবে নিজেকে পরিচয় করিয়েছেন। আসলেই কি অবিরাম গতিযন্ত্র বানানো সম্ভব? কাকুর মতে, সত্যিকারের কোনো অবিরাম গতিযন্ত্র বানানোর জন্য মহাজাগতিক পরিসরে পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলো নিয়ে আমাদের নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে। হয় এই যন্ত্র বানানো সত্যি সত্যি অসম্ভব, নয়তো মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানের পরিবর্তন করতে হবে।

অবিরাম গতিযন্ত্র; Image source: Vísindavefurinn

 

৩.২ ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা

ভবিষ্যৎ দেখা কি সত্যিই সম্ভব? অনেকেই ভবিষ্যৎ দেখার দাবি করেছেন। পৃথিবীর ধ্বংস নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করা বহু পুরোনো কাহিনী। তবে কোনো ভবিষ্যদ্বানী আজ পর্যন্ত সঠিক হয়নি। পৃথিবীর ধ্বংস ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়েছে। এই সত্যি হওয়া ভবিষ্যদ্বাণী অনেকটা রুপকার্থে লিখিত। যেমন- নস্ত্রাদামাসের চার লাইনের একটি পদ্য আছে, যা যে কেউ তার ইচ্ছামতো ভেবে নিতে পারে,

‘ওয়ার্ল্ড সেন্টার থেকে ঝলসে উঠবে দুনিয়া কাঁপানো আগুন:
নিউ সিটির চারপাশে শিহরিত হবে পৃথিবী
অর্থহীন এক যুদ্ধের মূল্যচুকাতে হবে বিশাল দুটো লম্বকে
বসন্তের দেবী বেরিয়ে আসবে নতুন, লাল এক নদী থেকে।’ 

নিউটনিয়ান পদার্থবিদ্যায় ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতা নাকচ করে দেয়। সুতরাং ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা বাতিল হয়ে গেল। অত্যন্ত কয়েকশো বছরের মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়। তবে এ ক্ষমতা যদি কখনও বার বার পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটি হবে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জন্য বড় এক ধাক্কা।

লেখক পরিচিতি

মিচিও কাকু

মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকুর জন্ম ১৯৪৭ সালের ২ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। বহুল আলোচিত স্ট্রিং থিওরি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন। ২৫ বছর অধ্যাপনা করেছেন নিউ ইয়র্ক সিটি কলেজে। সর্বস্তরে বিজ্ঞান জনপ্রিয় করতে একাধিক বই লিখেছেন, উপস্থাপনা করেছেন বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন টিভি ও রেডিও অনুষ্ঠানে। তার লেখা জনপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিজিকস অফ দ্য ইমপসিবল, ফিজিকস অফ দ্য ফিউচার, দ্য ফিউচার মাইন্ড, প্যারালাল ওয়ার্ল্ড, দ্য ফিউচার অব হিউম্যানিটি, ভিশন, হাইপারস্পেস ও আইনস্টাইন কসমস। এর অধিকাংশ বই নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ বেস্ট সেলারের মর্যাদা পেয়েছে।

লেখক মিচিও কাকু; Image source: Arab News

 

আবুল বাসার (অনুবাদক)

আবুল বাসারের জন্ম ১৯৭৭ সালে পাবনায়। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। ইতোমধ্যে স্টিফেন হকিংয়ের পাঁচটি বই অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে দ্য থিওরি অব এভরিথিং, মাই ব্রিফ হিস্ট্রি, ব্রিফ আনসার টু দ্য বিগ কোয়েশ্চেনস এবং দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল প্রথমা প্রকাশন প্রকাশ করেছে। এছাড়া অ্যা ব্রিফার হিস্ট্রি অব টাইম সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

তুমুল জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’র সম্পাদনা বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে। বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞান ম্যাগাজিন ‘বিজ্ঞানচিন্তা’র নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত। ভালোবাসেন বই পড়তে, আড্ডা দিতে, গান শুনতে। প্রকৃতি আর ইতিহাসেও দারুণ আগ্রহ।

অনলাইনে কিনুন- ফিজিকস অব দ্য ইমপসিবল

This is a bengali book review article on 'Physics of the Impossible' by Michio Kaku that has been translated in Bengali by Abul Bashar.

Related Articles