ড্রিংকিং বাডিস (২০১৩): অব্যক্ত কথামালাতেই যার সৌন্দর্য

‘ড্রিংকিং বাডিস’ রোমান্টিক ড্রামা সিনেমা হলেও, এই জনরার মূলধারার সিনেমাগুলোর মতো নয়। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি বরং ‘মাম্বলকোর’ সিনেমা। সংক্ষেপে; এই মাম্বলকোর জনরা হলো, ইন্ডি সিনেমার একটা সাবজনরা। এ ধরনের সিনেমা ইন্ডির মতোই একদম স্বল্প বাজেট, স্বল্প চরিত্র এবং সীমিত পরিসর নিয়ে নির্মিত হয়। তবে এটি আলাদা হয়েছে, গল্পের দিক থেকে। মাম্বলকোর ঘরানায় গল্পসর্বস্ব সিনেমা নয়, এখানে সংলাপই প্রধান এবং সংলাপগুলো অনেকাংশে ইম্প্রোভাইজেশন নির্ভর। অভিনয়ের ধারা পুরোপুরি ন্যাচারালিস্টিক। আর এ সিনেমাগুলোয় চরিত্রদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের দিকগুলো উপস্থাপিত হয়। ২০/৩০ বছর বয়সসীমায় থাকে চরিত্রগুলো। 

এই ড্রিংকিং বাডিস’ও তেমনই একটি সিনেমা, যেখানে স্বাভাবিক অর্থে তেমন কোনো গল্প নেই। চরিত্রগুলোকে গতিশীল করতে যেটুকু আছে, সেটুকুর শুরু একটি ভাটিখানা বা মদ তৈরির কারখানা থেকে। সিনেমার কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র, কেইট এবং লুক এখানেই কাজ করে। দু’জনেই খুব ভালো বন্ধু। বিশেষত, বন্ধুর চাইতেও বেশি কিছু। দুজনেরই প্রেমিক এবং প্রেমিকা আছে। এই চার কপোত-কপোতীর সম্পর্ক দুটোতেই একটা বড় সাদৃশ্য আছে। দুটো সম্পর্কেই একজন হাস্যরসিক, সবকিছুকে হালকা মেজাজে নেওয়া মানুষ। আরেকজন গম্ভীর এবং সম্পর্কের একটা নিশ্চিত গতি নিয়ে ভাবা মানুষ।

দুই প্রধান চরিত্র; Image Source: Empire

একজন অগোছালো সবকিছুতে ছন্দ খুঁজে পায়, আরেকজন গোছানোর মাঝেই প্রশান্তি অনুভব করে। একজন ‘আজকেই শেষ, কাল কী হবে, তা নিয়ে ভেবে কী হবে’ মনোভাবাপন্ন, আরেকজন ‘ভবিষ্যৎ ভাবনাটাই উত্তম’- তেমন চিন্তাধারার। আশ্চর্যজনকভাবে, দুটো সম্পর্কেই খোশ মেজাজের মানুষ দু’জন, কেইট এবং লুক, যে দু’জনে ভালো বন্ধু। এ বিবরণ থেকে, কেইট এবং লুককে ঘিরে একটা আলাদা কোণ দর্শক সচেতনভাবেই ভেবে রাখতে পারে কিংবা ভাবে, কিন্তু পরিচালকের চিন্তাভাবনা এই গড়পড়তা দিকটায় প্রবাহিত হয়নি। এবং সেখানেই ড্রিংকিং প্রধান বাডিসের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। 

তো জটিলতা উত্থাপন হয়, যখন চার কপোত-কপোতী মিলে সপ্তাহান্তে ঘুরতে যায়। মুহূর্তের কাছে নতি স্বীকার করে হোক কিংবা হোক ভেতরের কামনার কাছে, কেইটের প্রেমিক ক্রিস এবং লুকের প্রেমিকা জিল পরস্পরকে চুমু খেয়ে বসে। বিষয়টা অতটুকু পর্যন্তই। ওটা নিয়ে অনুশোচনায় ভুগতে দেখা যায় না তাদের।

জিল এবং ক্রিসের সেই মুহূর্তের সন্ধিক্ষণে; Image Source: NPR

ট্যুর থেকে ফিরে ক্রিস সম্পর্কছেদের প্রস্তাব করে কেইটকে। কারণ ক্রিস এই সম্পর্কের একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ বুঝতে চায়, যেটা বিগত আটমাসে সে বুঝে উঠতে পারেনি কেইটের সাথে থেকে। আর এই সম্পর্কছেদই সিনেমার গল্পের বড় মোড়। এ ঘটনার পাড় ধরেই কেইটের চরিত্রে কিছু নতুন কোণ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা সিনেমার চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। তবে অভিঘাতী কিছু যে এখানে অবস্থান নিয়েছে, তা কিন্তু নয়। তেমনটা এ সিনেমার উদ্দেশ্যও নয়। কারণ এটি মূলধারার রোমান্টিক-ড্রামা গল্প নয়, মাম্বলকোর সিনেমা, ধরনটাই যার এমন।

সাবজনরা হিসেবে মাম্বলকোর আত্মপ্রকাশ করে ২০০০ পরবর্তী সময়ে। পরিচালক অ্যান্ড্রু বুজালস্কিকে এ জনরার ‘গডফাদার’ ধরা হয়। এ সিনেমার পরিচালক জো সোয়ানবার্গও মাম্বলকোর জনরার অন্যতম প্রখ্যাত পরিচালক। তার পরিচালনায় দেখা কাজগুলোর মাঝে সর্বাপেক্ষা সূক্ষ্মতম কাজ হিসেবে ড্রিংকিং বাডিসের নামটা আসবে। কারণ প্রকৃতি অনুযায়ী ‘চ্যাটি’ বা বকবকে সিনেমা হলেও, একদিক থেকে খুবই নীরব এই সিনেমা। কেইট এবং লুক কাজ শেষে সন্ধ্যাবেলায় বিয়ারের গ্লাসে আছড়ে পড়ে রাজ্যের গপ্পো করলেও, মূল কথাগুলো তারা বলে না। ওগুলো অব্যক্তই থেকে যায়। ছোট ছোট আচরণে সেগুলো প্রকাশ পায়। হয়তো শব্দ দিয়ে সে কথাগুলো সাজানো হলে, আকুলতার সবটুকু তাতে ভিড়বে না। তাই না বলে, অনুভব করাটাই বরং সহজ কাজ বলে ভেবে নেয় তারা।

ওই ‘না বলা’তেই অনেককিছু বলা হয়ে যায়। ওই না বলাতেই আছে সূক্ষ্মতা, গোটা সিনেমার। বন্ধুর চেয়েও বেশিকিছু, গাঢ় আবেগ, বোঝাপড়া, দু’জনের একই স্বভাবপ্রকৃতি; এই বিষয়গুলো মূলধারার পরিচিত রোমান্টিক ড্রামা সিনেমার অলংকার সবের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে মনে হলেও শেষ অব্দি, চিত্রনাট্যে ছকটা নিজের মতো করেই কষেছেন সোয়ানবার্গ। হবে বলেই যেটা ধরে নিয়েছে দর্শক, সেটাকে উল্টে দিয়ে একরকম স্যাডিস্টিক মজা নিয়েছেন তিনি। এড়ানোযোগ্য জিনিসটাকে না এড়িয়ে আর এড়ানোর অযোগ্য জিনিসটাকে এড়িয়ে রসবোধের পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি ভিন্ন হয়েছে ‘ড্রিংকিং বাডিস’।

কেইট এবং লুক; Image Source: Burn Later Productions

একটা সিনেমায় সাধারণত চরিত্রদের গঠনবিন্যাস যেভাবে করা হয়, এই সিনেমায় সোয়ানবার্গ তার চরিত্রগুলোকে ওভাবে বিন্যস্ত করেননি। চরিত্রগুলোর নামধাম তো আছে, তবে কোনো পেছনের গল্প নেই। তাদের মনস্তত্ত্বের গভীরেও দর্শককে নিয়ে যাওয়া হয়নি। কিন্তু তা বলে চরিত্রগুলোকে সংকীর্ণ মনে হয় না। জো সোয়ানবার্গ প্রতিটি চরিত্রকে আলাদা করেছেন তাদের ভিন্ন ব্যক্তিসত্ত্বার বহিঃপ্রকাশে, যেমনটা তিনি তার আগের কাজগুলোতেও করেছিলেন। চরিত্রগুলো রূপায়ণকারী কুশীলবদের একদম বিশুদ্ধ ও নিজস্বতায় পরিপূর্ণ অভিনয়ে, ইম্প্রোভাইজড সংলাপে, জেশ্চারেই তাদের একক ব্যক্তিসত্ত্বার বৈশিষ্ট্যগুলো দর্শকের কাছে স্পষ্টরূপে ধরা দেয়।

কেইট চরিত্রটির কথাই ধরা যাক। এই চরিত্রটি হাস্যোজ্জ্বল, কর্মজীবনে পরিশ্রমী কিন্তু ব্যক্তিজীবনে এলোমেলো আর অসতর্ক একজন। ওদিকে লুক চরিত্রটি এমন, যার মতো একজনকে যে-কেউই পাশে চায়। বন্ধু হয়ে কাঁধ বাড়িয়ে দিতে পারে, আবার প্রেয়সীকে আগলে রাখার নিশ্চয়তাও দিতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কের মতো সিদ্ধান্ত যেমন সে নিতে পারে, তেমনি আবার বালকসুলভ কমনীয়তা দিয়ে সকল জটিলতাকে এড়িয়ে যেতে পারে। এবং এ চরিত্রে জেইক জনসন পরিণত পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছেন।

মাম্বলকোরে সংলাপ যেহেতু ইম্প্রোভাইজেশন নির্ভর আর অভিনয় হতে হয় ন্যাচারাল, তাই চরিত্রদের জন্য উপযুক্ত অভিনেতা-অভিনেত্রী বাছাই করাটা এ জনরায় অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সে জায়গা থেকে বলতে হয়, জো সোয়ানবার্গের কাস্টিং নির্বাচনে নিজস্ব একটা পদ্ধতি আছে এবং সেটা প্রায় নিখুঁত। তার আগের সিনেমাগুলোর দাগে টানলে দেখা যায়, ড্রিংকিং বাডিসের কাস্টিং বেশ নজরকাড়া। সুপরিচিত এবং পরিপক্ব কিছু অভিনয়শিল্পীকে তিনি বাছাই করেছেন। চরিত্রদের ক্ষেত্রে তিনি চান, তার অভিনয়শিল্পীরা ‘অভিনয়’ না করুক। তার কাছে ইম্প্রোভাইজেশন মানে, কোনো অভিনয় নয়। তিনি কাস্টদের চরিত্র সম্বন্ধে ধারণা দেন এবং তাদের পরিচালনা করেন অ-অভিনেতা হিসেবে, যাতে করে চরিত্রদের সাথে তারা পুরোপুরি মিশে যেতে পারে।

ইম্প্রোভাইজেশনকে তিনি গল্প বয়ানের একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি যে মুহূর্তটা তৈরি করেন, অভিনয়শিল্পীরা সে মুহূর্তটায় বাস করবে; সেটাই চান। তারা যেমন, ঠিক তেমনটাই তারা বাচিক ভঙ্গি এবং শরীরী ভঙ্গিতে বলবে এবং করবে। পরিচালকের সেই চাওয়ার সাথে শতভাগ মিলে গেছে এই সিনেমার অভিনয়শিল্পীদের অভিনয়। সে কারণেই তো অলিভিয়া ওয়াইল্ডের মতো হলিউডের মূলধারার একজন ঐশ্বর্যময় অভিনেত্রীকে এ সিনেমার কেইট চরিত্রটিতে চেনাই দায়। অতি সাধারণ, ওয়ার্কিং ক্লাসের এ চরিত্রটি থেকে তাকে আলাদা করা যায় না। এত নিটোল আর গভীর তার অভিনয়, যার সামনে বড় প্রোডাকশনের ওই সিনেমাগুলো ফিকে হয়ে যায় এবং প্রকাশ করে সেই ফাঁপা, সংকীর্ণ চরিত্রগুলোতে তার অভিনয়ের পরিসীমা বোঝানোর অসারতা। আনা কেন্দ্রিকের ‘জিল’ চরিত্রটি বেশ শান্ত, দায়িত্বশীল আর নরম স্বভাবের। এবং তার অভিনয় চরিত্রটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। 

তারা চারজন; Image Source: Den of Geek

 

জো সোয়ানবার্গের সিনেমাগুলোর সূক্ষ্ম বক্তব্যে কিংবা চরিত্রদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার দিকটি লক্ষ করলে, তার ব্যক্তিগত মতাদর্শের একটা দিক গাঢ়ভাবে প্রতিভাসিত হয়। সেটা হলো, তিনি একজন মোরালিস্ট বা নৈতিকতাবাদী। লুক এবং কেইটের সম্পর্কটার ব্যবচ্ছেদ করলেই পরিচালকের নিজের নৈতিকতার অবস্থানটি এখানে পরিষ্কার উঠে আসে। শুধু তা-ই নয়, বিবরণ তুলে আনায় সোয়ানবার্গের আলাদা নজরের পরিচয়ও এখানে পাওয়া যায়। রোজকার জীবনের সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বিবরণ নিখুঁতভাবে রেখেছেন তিনি। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের দূরত্ব, অসুবিধাগুলোকেও দৈনন্দিন সবকিছুর মধ্য দিয়ে চিত্রায়িত করেছেন জো। বিষয়গুলোর চিত্রায়নে তার স্পর্শটা এতটাই সূক্ষ্ম আর ‘র’ যে, সেগুলোকে খণ্ডিত করে দেখতে আর হয় না। বাস্তবে বিষয়গুলো যেমন এবং যেভাবে কাজ করে, তেমন করেই সিনেমার চিত্রনাট্যে লেখা হয়েছে।

সিনেমায় কমেডির পরতটা রাখা হয়েছে ‘অবজারভেশনাল কমেডি’র ধাঁচে। দৈনন্দিন জীবনের এমন কোনো জিনিস কিংবা কোনো দিক, যেগুলো সচরাচর চোখ এড়িয়ে যায় সাধারণের কিংবা অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সেগুলোকে ব্যবহার করে হাস্যরসের খোরাক জাগানোটাই অবজারভেশনাল কমেডি। এই সিনেমায় সেটা সম্ভব হয়েছে চিত্রনাট্যে যথেষ্ট পরিমাণ বিবরণের জন্য। একেবারে দৈনন্দিন জীবন আর চরিত্রদের মিথস্ক্রিয়া নিয়েই সিনেমাটি। পাশাপাশি এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে- বিয়ার। হাসির উদ্রেক ঘটালেও ব্যাপারটা এমনই। নামেই তো সেটার টুকরো আভাস পাওয়া যায়। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যেই বলতে গেলে বিয়ারের উপস্থিতি আছে।

পরিচালক জো সোয়ানবার্গ; Image Source: IndieWire

তবে, বিয়ারকে পরিচালক শুধু শুধু ব্যবহার করেননি প্রতিটি দৃশ্যে। সিনেমার আন্ডারটোনে গাঢ় বিষাদ ঢাকার একটা উপাদান হিসেবে তো বিয়ার ব্যবহৃত হয়েছেই, তাছাড়া বিয়ার কিংবা মদ্যপানের পর মানবচরিত্রের স্বাভাবিক পরিবর্তনটাকে সিনেমার এগিয়ে নেওয়া গতির সাথে মিলিয়ে ছন্দটাকে আরো জটিল করে তুলেছেন জো। হিংসা, কামনা, হতাশা; চরিত্ররা এই বিষয়গুলোর মুখোমুখি সন্ধ্যায় বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দেওয়ার পরই হয়। মানুষের সহজাত প্রকৃতিটাকে ভালোভাবে বোঝেন বলেই সামান্য বিয়ারকে একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে চারিত্রিক এই জটিলতাগুলোকে কেন্দ্রে এনেছেন তিনি। 

চরিত্রদের নিজেদের জটিলতার সাথে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মুহূর্তে ক্লোজ-আপ শটের ব্যবহার করলেও, প্রধানত লং শটই গোটা সিনেমায় প্রভাব খাটিয়েছে। ‘বিস্টস অভ দ্য সাউদার্ন ওয়াইল্ড’ (২০১২), ‘দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’ (২০১৪), ‘উইন্ড রিভার’ (২০১৭) সিনেমাগুলোর সিনেমাটোগ্রাফার বেন রিচার্ডসনকে সাথে নিয়ে দক্ষ কম্পোজিশনের সব লং শট উপহার দিয়েছেন জো সোয়ানবার্গ। তার পরের আরো দুই সিনেমায়ও রিচার্ডসনকে সাথে নিয়ে কাজ করেন তিনি। সোয়ানবার্গ ইম্প্রোভাইজেশনে জোর দিয়েছেন যেহেতু, তাই টেকগুলোও নিয়েছেন বেশ দীর্ঘ। ফলত, দৃশ্যগুলো খাঁটি মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরায় ধারণ করতে পেরেছে। আর এই লং টেকগুলোতে জো অভিনয়শিল্পীদের সুযোগ দিয়েছেন চরিত্রটা পুরোপুরি বুঝে ইম্প্রোভাইজ করার, কেইটের ঘর বদল করার লং টেকের সেই দৃশ্যটা দিয়েই যার একটা প্রমাণ দেওয়া যায়। তবে এ দৃশ্যে সেটাকেও ছাপিয়ে কেইট আর লুকের পরস্পরের প্রতি সংকোচবোধটা প্রধান হয়ে ওঠে। এবং সে বিষয়টিই গোটা দৃশ্যে একটা চাপা উত্তেজনা তৈরি করে।

লং টেকের সেই সিনের একটি সিকুয়েন্স; Image Source: Burn Later Productions

তাদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া আর পরিচালনায় সোয়ানবার্গের সূক্ষ্ম স্পর্শের জন্যই যতবার কেইট এবং লুক একা থাকে, ততবারই একটা চাপা উত্তেজনা আর ইতঃস্ততবোধ দৃশ্যটায় প্রভাব বিস্তার করে। ওই ‘না বলতে পারা’ থেকেই এর উৎপত্তি। ড্রিংকিং বাডিসের সম্পাদনার কাজটিও করেছেন জো সোয়ানবার্গ নিজে। কোনো তাড়াহুড়ো নেই সম্পাদনায়। দৃশ্যের প্রভাবটা দর্শকের মাঝে জন্ম দিতে সম্পাদনার কাজটা করেছেন একটা চিকন দড়ির উপর ভারসাম্য রেখে হেঁটে যাওয়ার মতো জটিলতর আর সূক্ষ্মতর উপায়ে। পুরোপুরি অন-লোকেশন ধারণ করেছেন গোটা সিনেমা। কিন্তু সাজিয়েছেন এমনভাবে, যাতে করে জাঁকজমকপূর্ণ প্রোডাকশন ডিজাইনের সিনেমার ভাবটা এতে থেকে থেকে আসে।

গোটা সিনেমাটাই এমনভাবে তৈরী যেন, কিছুই এখানে ঘটেনি। কিন্তু ঘটেছে অনেক কিছু। পার্থক্য হলো, সেসব খুব আড়ম্বরতা যুক্ত করে ঘটানো হয়নি। সেসব ঘটেছে হুট করে চোখ পড়লে চোখটা ফিরিয়ে নেওয়ায়, কাঁধটা বাড়িয়ে দেওয়ায় আবার মুহূর্তটা বুঝে ভদ্রোচিতভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়ায়। এই সকল টুকরো মুহূর্ত, দ্বন্দ্বগুলো দর্শকের খুব চেনা, কাছ থেকে দেখা। সেগুলো সাধারণ, চরিত্রগুলোও সাধারণ। আর এই সাধারণত্বই দর্শককে কোমল স্পর্শে আরো কাছে টেনে নিয়েছে। প্রত্যাশাকে উল্টে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সবশেষে বুঝিয়েছে, ওটাই বাস্তবে ঘটে। সেখানেই এই সিনেমার বিশেষত্ব, সেখানেই এই সিনেমার আবেদন।

This bengali article is a review of the film 'Drinking Buddies.' It's directed by Joe Swanberg. He is one of the most popular director of the 'mumblecore' genre. He is very prolific. This film is one of his finest and most subtle works.

Featured Image: Den of Geek

Related Articles