Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেমন হয়েছে বেস্টসেলার লেখক মাইকেলিডিসের বই দ্য মেইডেনস? ভালো না মন্দ?

‘দ্য সাইলেন্ট প্যাশেন্ট’ উপন্যাস দিয়ে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পাওয়া আলেক্স মাইকেলিডিসের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য মেইডেনস’ একটি অতিদীর্ঘ, আধাসেদ্ধ এবং অসংহতিপূর্ণ উপন্যাস। মিডিওক্রিটির কাদাজলে চুপচুপে হয়ে থাকা এই উপন্যাসে লেখকের স্বকীয় কোন শৈলী খুঁজে পাওয়া দায়। বই লেখার আগে তিনি দুটো সিনেমার চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে দুটোই প্রচন্ড বাজে রিভিউ পেয়েছিল সমালোচকদের কাছ থেকে।

একজন সাইকোথেরাপিস্টকে নিয়ে এই গল্প। তার নাম মারিয়ানা। স্বামী হারিয়ে অতলে নিজেকেও হারাতে দিয়েছেন যিনি। স্বামী সেবাস্টিয়ান আর তার ভালোবাসার বিয়ে ছিল। ঘুরতে গিয়েই সাগরের উত্তাল ঢেউ আর ঝড় কেড়ে নেয় সেবাস্টিয়ানকে। মারিয়ানা দোষ দেন দেবীকে! গ্রিক দেবীকে। সেই ঘটনার পর কাটে ১৪ মাস। হঠাৎ একদিন ভাগিনী জোয়ির ফোন পেয়ে ছুটলেন ক্যামব্রিজে। ভাগিনীর বান্ধবী টারা খুন হয়েছে। স্বভাবতই এবং জরাজীর্ণ প্রত্যাশার পাড় ঘেঁষে থাকা ন্যারেটিভ অনুযায়ী যা হয়; তিনি সাইকোথেরাপিস্ট থেকে ক্ষণকাল ইস্তফা দিয়ে ফুলটাইম ডিটেক্টিভ হয়ে ওঠেন। আরো একটা খুন হয়। জানা যায়, ক্যামব্রিজের চৌকস, সুদর্শন, রহস্যময়ী প্রফেসর ফস্কার গোপন দলের দুই সদস্য এরা। তার গোপন দলে সব সুন্দরী যুবতীরাই আছে। এখানে আছে গোপন সংঘের আধার। অবশ্য সেদিকে খুব বেশি বাড়েনি গল্প। যেমনভাবে দুটো খুনের পরও বাড়েনি প্রশাসনের তদারকি।

আরো একজন মারা পড়ার আগে প্রশাসনও তাদের অহমে, অলসতায়, আত্মকেন্দ্রিকতায় ভরা নিতম্ব চেয়ার থেকে সরিয়ে দৌড়ুতে চায় না। তাই তাদের জন্য আরেকটা খুন হয়। প্রফেসর ফস্কার ৩ ‘মেইডেনস’ মারা যাবার পর তারা নড়েচড়ে ওঠে। আর প্রত্যাশিতভাবেই সাইকোথেরাপিস্ট মারিয়ানা সন্দেহ করে ফস্কাকে। উপন্যাসের একমাত্রিক এক্সপোজিশনও তাকে ঘিরে। কিন্তু সে-ই হয়ে গেলে তো ৩২০+ পৃষ্ঠার ‘দ্য মেইডেনস’ লজ্জায় ঝুরঝুর করে ঝরে পড়বে শত বছরের জীর্ণ বাড়ির অধিক জীর্ণ পলেস্তারার মতো। তাই হঠাৎ করে ছুটে আসা কোন খুনিকে যে মঞ্চে আনতেই হবে। তবে লেখককে এও বুঝতে হতো, আক্রমণাত্মক ভঙ্গীতে হঠাৎ করে ধেয়ে আসা হন্তারকের জন্য, তার গমনপথকে অনেক মসৃণ করতে হবে, এক্সপোজিশনও যথাযথ উপায়ে মেলে ধরতে হবে। নইলে হুট করে ধেয়ে চমক লাগাতে তো খুনি আসবে, কিন্তু পাঠকের কানের পাশ দিয়ে বাতাস কেটে চলে যাবে, প্রভাব রাখার আগেই। বলা বাহুল্য, তেমনই হয়েছে এক্ষেত্রে। 

বইয়ের হার্ডকভার; Image Source- missgossipaddict.com

লেখক ছয় পর্বে উপন্যাসটাকে বিভক্ত করার পাশাপাশি গ্রিক মিথোলজির অনেক রেফারেন্স এনেছেন। ডেমিটার, পার্সেফোনি, রাজা অ্যাগামেমনন, তার কন্যা ইফিজেনিয়ার কথা এসেছে বারংবার। গল্পের পিঠে, চরিত্রদের ছায়াতে। কথায় কথায় মিথোলজির রেফারেন্সে যাওয়াটা বর্তমানের থ্রিলারে অবশ্য একটা ‘ইজি গেটওয়ে’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যে লেখক দক্ষতার সাথে সাযুজ্যতা আনতে পারে সে তো পারেই, আমাদের দেশের বেশিরভাগ থ্রিলার লেখকের ক্ষেত্রে অবশ্য এসব হিতে বিপরীত হয়ে কাজ করে। মানে তাদের অনেকেই অনেক রিসার্চ করেন ইতিহাস, পুরাণ, চাঞ্চল্যকর নানান জিনিস নিয়ে। এরপর রিসার্চ পেপারের তথ্য গল্পের ভাঁজে বলতে গিয়ে এমন ঠেসেঠুসে ঢোকান যে, গল্পটাই আর ঠিকঠাক করে বলতে পারেন না। শুধু তথ্যই পাওয়া হয়। ওমন অবস্থায় ‘নন-ফিকশন’ ধরাই বোধকরি শ্রেয়। কেন অহেতুক তার পিঠে ফিকশনকে বলি দেওয়া, কিংবা ফিকশনের পিঠে তথ্যের মাত্রাতিরিক্ত অপচয় করা! তা যাক। ধান ভানতে দেশীয় মিডিওক্রিটির গীত গাওয়ার সুর খাদে নামাই। তবে মাইকেলিডিস কিন্তু গ্রিক মিথোলজিকে গল্পের আর চরিত্রদের আষ্টেপৃষ্ঠে ঝাপটে রাখার কাজটা বরাবরের মতোই মসৃণভাবে করেছেন।

গ্রিক দেবী ডেমিটার আর তার কন্যা পারসেফোনি; Image Source- Mythos

হ্যা, ‘দ্য মেইডেনস’-এর শুরুটা কিন্তু বেশ। অন্তত গোটা বইয়ের অবস্থার সাপেক্ষে। পতি হারানো মারিয়ানাকে যেভাবে পরিচয় করানো হলো, তার মানসিক অবস্থা, গ্লানির কথা যেভাবে বর্ণনা করা হলো, সেই দুর্ঘটনার বৃত্তান্ত; এসবের বয়ানভঙ্গীমা চরিত্রের গভীরতা যেমন প্রদান করে, তেমনি আড়ষ্টতা না জাগিয়েই বর্ণনায় মাংসল অংশটার ভালোরকম উপস্থিতি জানিয়ে এগিয়ে যায়। কিন্তু ক্যামব্রিজে ঢুকতে ঢুকতেই গল্প যেভাবে বিহ্বল দিশেহারা হয়ে পড়ে, তা আর সেই হতবুদ্ধিকর অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা এক ছাত্রের সাথে মারিয়ানার যেই দোনোমনা শুরু হয়, বোধকরি তাতেই যুক্তির ধার ভোঁতা হয়ে গেছে।

অথচ এই কোণটাকে এমন ক্লিশে, জবড়জং পদ্ধতিতে না এনে স্বামী হারা মারিয়ানার একাকীত্ব, বিষণ্ণতা, সেইসাথে চাহিদার জায়গাটাকে আরো স্পষ্ট, বিশ্লেষণীয় করে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের জটিল একটা সাবপ্লটের অবতারণা করা যেত। বিশ্বাসযোগ্যতা আর যৌক্তিকতা সেভাবেই ধীরে ধীরে খুইয়ে ফেলতে শুরু করে এই উপন্যাস। একটা সমান্তরাল এবং সিংগেল প্লটেই যখন পুরো গঠনপ্রণালী তখন মাইকেলিডিসের অবশ্যই উচিত ছিল চরিত্রগুলো নিয়ে প্রচুর কাজ করা। তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের জায়গাগুলোকে পাঠকের কাছে আরো অভিঘাতীরূপে উপস্থাপন করা। কিন্তু তেমন কিছুই করা হয়নি। (পৃষ্ঠার) আকারে ঠিকই বেড়েছে, কিন্তু মাংসটাই ঝোলা। চরিত্রগুলো নিয়ে কিছু অনুভব করার, ভাবার কিংবা তাদের অ্যাকশানে ঘা করবার প্রয়োজনও পাঠক খুঁজে পায় না। ভীষণ একমাত্রিকভাবেই সবকিছু দাঁড় করানো কি না, তাই আরকি। 

রাতারাতি বেস্টসেলার হওয়া লেখকের প্রথম বই; Image Source- Goodreads

‘দ্য মেইডেনস’-এ থ্রিলারের অলংকারগুলোকে ওমন পাল্টেও ব্যবহার  করা হয়নি যে, ওগুলো আলাদা করে উল্লেখ্য হবার সুযোগ রাখে। ক্যামব্রিজের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের রাতটাকে ব্যবহার করেছেন একটা গথিক আবহ সৃষ্টি করতে। ব্যাপারটা বেশ। কিন্তু গদ্যভাষায় তেমন নতুনত্ব না থাকায়, খুব বেশি ডিটেলও না আনায় পাঠক ভিজ্যুয়ালটা সেভাবে পায় না। সুদক্ষ বর্ণনায় কোনকিছু ‘স্পর্শনীয়’ হয়ে উঠবার যে বিস্ময়কর ব্যাপারখানি, সেরকম কিছুই এখানে পাওয়া হয়নি। প্রয়োজনীয় ডিটেলও অনেকাংশে নেই, যা দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যেকটি চরিত্রকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্মরণে রাখা যায় কিংবা তাদের ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জানতে পারা যায়।

কয়েকটি চরিত্র তো হঠাৎ হঠাৎ অপ্রকৃতিস্থ আচরণ করে, যার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। ফোরশ্যাডোয়িং বা পূর্বাভাসের টেকনিকটা ন্যারেটিভে দক্ষভাবে ব্যবহারও করেননি মাইকেলিডিস। অথচ হেনরি, ফ্রেড, জো, প্রফেসর ফস্কা- এই চরিত্রগুলো; যেগুলো মারিয়ানাকে এগিয়ে নিতে প্রধান সহকারী চরিত্র, তাদের নিয়ে তেমন কোনো ইনসাইট প্রদান করা হয়নি। খুব সংকীর্ণ গঠন প্রতিটি চরিত্রের। শুধু গল্পের নাক এদিকওদিক ঘুরিয়ে নিতেই যেন তাদের সৃষ্টি। কংকালটা আছে কিন্তু রক্তমাংস নেই। 

গতির ব্যাপারে খুব একটা বেশি সংগতি রাখতে পারেননি অ্যালেক্স মাইকেলিডিস। কখনো খুব গতিময়তার সাথে দৃশ্যপট বদলেছে, কখনো কোনদিকে যাবে তা নির্ধারণ না করতে পেরে একই বৃত্তে ঘুরেছে। লেখক নিজেই যেন দ্বন্দ্বে পড়েছেন গল্পের টোন ঠিক করা নিয়ে। সাধারণত থ্রিলার গল্পের ক্লাইম্যাক্সে এসে তো মাঝারি গোছের লেখকদের চিন্তাই থাকে, পাঠকদের চোয়াল ঝুলিয়ে দেওয়া যায় কীভাবে। হোক সেটা ন্যারেটিভের সাথে অসামঞ্জস্য কিংবা সাংঘর্ষিক। কিন্তু একজন দক্ষ লেখকের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ থাকে তার ন্যারেটিভের উপর, গল্পের গতিপথের উপর। এক্সপোজিশন কতখানি ব্যবহার করবেন তার উপর।

মাইকেলিডিসের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবশত, সেই নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তার এক্সপোজিশন ব্যবহারের পন্থা শুরু থেকেই একমাত্রিক, অনুমেয়। আর টুইস্ট দিয়ে তিনি মুহূর্তের জন্য পাঠককে বিস্মিত কিংবা হতবুদ্ধি বানাতে পারলেও, অতিশীঘ্রই বিরক্তির সহিত দুর্বলতা বেরিয়ে পড়ে। টুইস্টের জন্য তো আর গল্প হতে পারে না। গল্পের প্রেক্ষিতেই বাঁক আসবে, বিস্ময় আসবে। ওইযে ওসময় হুট করে ধেয়ে আসার কথা বলছিলাম। ধেয়ে এসে, লক্ষ্যবস্তু ভেদ না করে চলেও গেলো। ধরে রাখার মতো কিছুই ছিল না। যৌক্তিকতা আর বিশ্বাসযোগ্যতা তো আগেই খুইয়েছিল এই উপন্যাস, চরিত্রের ইনসাইট আর মোটিফ পরিষ্কারভাবে বর্ণিত না হওয়ায় টুইস্ট/ক্লাইম্যাক্স হালকা হয়েই রইলো। সমঝদার পাঠকের তখন মনে হবে, এ কারণে তবে এত বাক্যব্যয়!

নিজের উপন্যাস নিয়ে লেখক মাইকেলিডিস; Image Source- Bibliography

পুরো উপন্যাস গতি রেখে পড়ে আসা গেছে কারণ, গল্প বয়ানের ক্ষেত্রে পোক্ত বর্ণনায় না গিয়ে সংলাপে সংলাপে এগিয়েছেন মাইকেলিডিস। আলাপের ঢঙে। কথ্যভাবে। পাশে বসে কেউ গল্প বলছে এই ঢঙে। কিন্তু বর্ণনার ভাষায় গড়পড়তা ডিটেল ছাড়া, সত্যিকার অর্থে অন্তর্ভেদী ডিটেল নেই। এটা সংকীর্ণ দৃষ্টিরই নামান্তর। সেকারণেই তো একদম পলকা দেহের ভারের সমান মাঝারি মানে আঁটকে থাকা থ্রিলার উপন্যাসই হয়েছে ‘দ্য মেইডেনস’।

This Bengali article is a review of the thriller novel 'The Maidens' written by the bestselling author of 'The Silent Patient', Alex Michaelides. It's his 2nd novel. A psychological thriller, mystery novel with Greek mythological references.

Feature Image- Amazon

Related Articles