Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সভ্য হতে বন্য হয়ে উঠার আখ্যান ‘দ্য কল অব দ্য ওয়াইল্ড’

কখনো ভেবে দেখেছেন কি যদি কোনো নম্র-ভদ্র ও সভ্য একটা প্রাণী জঙ্গলে গিয়ে বন্য হয়ে যায়, তখন সে কতটা হিংস্র হয়ে উঠতে পারে? সে এতটাই হিংস্র হয়ে উঠবে, যার কাছে কুলোতে পারবে না আগে থেকেই বন্য জীবন-যাপন করা অন্যান্য প্রাণী। একই কথা মানুষের ক্ষেত্রেও খাটে; একজন ভদ্র মানুষ যদি পরিস্থিতির শিকার হয়ে খারাপ মানুষে পরিণত হয়ে যায়, তবে তার চেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার হবে।

এমনটা ঘটার কারণ হলো প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যেই ভালো-খারাপ দুটি সত্ত্বা বিদ্যমান। এছাড়া সকল প্রাণীর মধ্যেই স্বাধীনতা লাভ করার একটা চেতনা থাকে, যা সুযোগ পেলেই লাফ দিয়ে মাথায় চড়ে যায়। এমনই কিছু বিষয়বস্তুর আঙ্গিকে বিখ্যাত আমেরিকান ঔপন্যাসিক জ্যাক লন্ডন তার সেরা সাহিত্যকর্ম ‘দ্য কল অব দ্য ওয়াইল্ড‘ রচনা করেছেন।

তখন বিংশ শতাব্দী শুরু হয়েছে সবে। স্বর্ণ সন্ধানী ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষেরা সুবিশাল পৃথিবীর নানা অদেখা প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখনো যান্ত্রিক যোগাযোগব্যবস্থা অতটা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বন্য পরিবেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র অবলম্বন ছিল কুকুরের টানা স্লেজ ও ঠেলাগাড়ি। জ্যাক লন্ডনের এই মাস্টারপিসটি সেই সভ্য-সামাজিকতার পূর্বকালীন সময়ের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে একটি কুকুরের জীবনের বর্ণনাকে ঘিরে।

Dog sled
কুকুরের দ্বারা টানা স্লেজ; Image source: museumsyndicate.com

উপন্যাসটি লেখার পূর্বে কানাডার উত্তরাঞ্চলের একটি জায়গা ক্লনডাইকে গিয়ে কিছুদিন রয়েছিলেন শুধুমাত্র সেখানকার জলবায়ু, পরিবেশ ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে। যাতে ‘দ্য কল অব দ্য ওয়াইল্ড’ অনেকটাই বাস্তবিক হয়ে ওঠে। ১৯০৩ এর গ্রীষ্মে The Saturday Evening Post নামক সাপ্তাহিক পত্রিকায় উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়, একই বছরে বই আকারেও বের হয়। বইটিকে লন্ডনের জীবনের সেরা সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা তাকে সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে সর্বাধিক বিক্রিত ও সম্মানী পাওয়া লেখকে পরিণত করে দেয়।

এটি একটি অ্যাডভেঞ্চার ধারার বই, যা ‘বাক’ নামের একটি কুকুরের জীবনের বিভিন্ন উত্থান-পতনের কাহিনী। এই বাকই হলো কাহিনীর মূল নায়ক বা প্রোটাগনিস্ট। বাক সেইন্ট বার্নার্ড ও স্কটিশ শেফার্ডের সংকর জাতের কুকুর, যার শক্তিমত্তায় ‘খোদ শয়তানও তাকে ভয় পেতে বাধ্য হবে’।

১৯০৬ সালে জ্যাক লন্ডনের আরো একটি বই প্রকাশিত হয় ‘White Fang’ নামে, যেটার মূল কাহিনীও আবর্তিত হয় এক কুকুরের জীবনকে ঘিরে। ‘The Call Of The Wild’ এবং ‘White Fang’ এর মধ্যে অনেক সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য আছে। অন্যতম প্রধান সাদৃশ্য হলো যে বই দুটির মূল চরিত্রদ্বয় বাক ও হোয়াইট ফ্যাং উভয়েই সভ্য ও বন্য সমাজে বসবাস করে, এবং বৈসাদৃশ্য হলো হোয়াইট ফ্যাং বন্য সমাজ থেকে সভ্য সমাজে যায়, যেখানে বাক সভ্য সমাজ থেকে বন্য জীবে পরিণত হয়।

বইয়ের প্রচ্ছদ; Image: Bulk Book

 

বাক একটি অতি প্রিয় ও আদুরে কুকুর হিসেবে তার সম্পদশালী মালিকের র‍্যাঞ্চে শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করতো। কিন্তু তার জীবনটি এক নাটকীয় মোড় নেয় যখন তার মালিকের এক বিবেকবর্জিত চাকর তাকে বিক্রি করে দেয়। সে প্রথমবারের মতো খাচায় আবদ্ধ হলো এবং তাকে আলাস্কায় বিক্রি করা হলো, যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রাথমিক উপায় কুকুর-টানা স্লেজ। বাককে অতি দ্রুত তার নতুন জীবনযাত্রার সাথে মানিয়ে নিতে হলো একটি স্লেজ কুকুর হিসেবে, যেখানে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতা করতে হয়, আর এসব প্রতিযোগিতা কখনো কখনো মৃত্যুও বয়ে আনতে পারে। বাক দ্রুতই সবকিছু শিখে নিলো। এতে তার শারীরিক গঠন ও প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা সহায়তা করলো। সে এত দ্রুতই মানিয়ে নিলো যে শীঘ্রই তাকে স্লেজ কুকুরদের মধ্যে নেতা বানিয়ে দেওয়া হলো।

তার জীবনে আবার পরিবর্তন আসলো যখন তাকে হ্যাল ও তার স্ত্রীর নিকট বিক্রি করে দেওয়া হলো, যারা স্লেজ সম্বন্ধে ও পশুদের যত্ন নেওয়া সম্পর্কে কিছুই জানে না। সেখানে তার জীবনে মৃত্যু প্রায় আসন্ন হয়েছিল; কিন্তু শেষ রক্ষা হলো তার শেষ মনিব উদার ও দয়ালু জন থর্নটনের হস্তক্ষেপে। শেষপর্যন্ত বাক এমন একজন মনিব খুঁজে পেলো যিনি তাকে যত্ন নেওয়া ও আদর করার বাইরেও ভালোবাসেন। যদিও তার এই সুখের জীবন স্থায়ী হলো না, যখন তার মনিব জন থর্নটন ‘ই-হাটস’ নামক এক অসভ্য আদিবাসী গোষ্ঠীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন। এরই মধ্যে বাক তার পরিচয় সম্পর্কে মনের ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং বন্য জীবনের ডাকে ও আপন ভাগ্যের খোঁজে জঙ্গলে হারিয়ে যায়। তার পূর্বে অবশ্য প্রিয় মনিব হত্যার প্রতিশোধ পুরোপুরিভাবে আদায় করে নেয় বাক।

উপন্যাসের প্রধান চরিত্র বাকের জীবন ও তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে তৃতীয় পক্ষের কাহিনী বর্ণনার মাধ্যমে রচিত হয়েছে। এর লেখার ভাষা ও ভঙ্গিমা এতটাই সহজ যে স্বল্প বই পড়ুয়াদের মতো কিশোররাও এর অন্তর্নিহিত কথাগুলো বুঝতে সক্ষম হবে। জ্যাক লন্ডন একটি কুকুরের পরিপ্রেক্ষিতে তার সমসাময়িক সমাজ বিশ্লেষণ করেছেন। লেখক যেভাবে কুকুরের দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন, সেটা এই বইয়ের আলাদা বিশেষত্ব বহন করে।

লেখক জ্যাক লন্ডন; Image: Wikimedia Commons

জ্যাক লন্ডনের এই অমর রচনাটি কিছু গভীর ধ্যান-ধারণা ও দার্শনিক তত্ত্ব বহন করে। কিন্তু এ সকল কথা রচিত হয়েছে অতি স্বাভাবিক রূপে, ফলে অনেকের নিকট একে সাধারণ একটি অ্যাডভেঞ্চারের বই মনে হতে পারে। সেটা মনে হলেও কিন্তু কম উপভোগ্য নয়, দারুণ থ্রিলিং কিছু অংশও এতে রয়েছে। যেকোনো ধরনের পাঠকের জন্য এ বইটি সমান উপযোগী। 

বইয়ের নাম: The Call Of The Wild || লেখক: Jack London
প্রথম প্রকাশ: ১৯০৩ ||  অনলাইন প্রাপ্তিস্থান: রকমারি কম

This Bangla article is a review of 'The Call Of The Wild' by Jack London.

Featured Image: unitedbyblue.com

RB-RF

Related Articles