Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মন খারাপ করা নিঃসঙ্গতার ‘তিথিডোর’

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে স্বাতী।সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু তার উপন্যাস ‘তিথিডোর’ এর মাধ্যমে স্বাতীর চিন্তার বিবর্তনের আলেখ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন চল্লিশের দশকের বাঙালি সমাজের মানস চিত্র। সাথে ফুটে উঠেছে অন্যরকম এক পরিস্ফুটিত প্রেমের গল্প।

উপন্যাস শুরু হয় রাজেনবাবুকে দিয়ে। শৌখিন রাজেনবাবু, দু’হাতে বাজারের ব্যাগ বইতে কোনো দ্বিধা করেন না, কিন্তু মাথার বালিশে সুগন্ধটুকু তার চাই-ই। সপ্তাহের ষষ্ঠ দিনটি পর্যন্ত এক জামা গায়ে চাপিয়ে অফিস যেতে তার কোনো সমস্যা হয় না। ওদিকে কিন্তু কাচের গ্লাস ছাড়া জলটি মুখে তুলবেন না। শৌখিনতার বাবু তিনি, অর্থ-জৌলুশের বাবুটি নন কিন্তু।

শিশিরকণা হলেন রাজেন্দ্রবাবুর স্ত্রী। মাত্র পনেরো বছর বয়সে রাজেন্দ্রবাবুর ঘরণী হন তিনি। স্বামীর এই ছোটখাট শখগুলোতে তিনি কৌতুকবোধ করতেন। এমনকি প্রশ্রয়ও দিতেন খানিকটা। ঠিকে-ঝিকে দিয়ে পথে পড়ে থাকা ঝরা বকুল ফুল আনিয়ে খাটের নিচটায় রেখে দিতেন, কিংবা শাড়ির আঁচলে বেঁধে রাখতেন। ভাবতেন, তার স্বামী সুগন্ধি পছন্দ করেনই যখন, সুগন্ধির উৎসটাও ভালো হতে মন্দ কী!

স্বামীর ইচ্ছে ছিল তাদের প্রথম সন্তান হোক মেয়ে, আর শিশিরকণার ইচ্ছে, হোক ছেলে। শেষমেষ রাজেনবাবুর ইচ্ছেই হলো সই। ঘর আলো করে মেয়ে এলো তাদের সংসারে। রাজেনবাবু তার শৌখিনতার আরেক পরত দেখিয়ে দিলেন মেয়ের নাম রাখতে গিয়ে। বড় মেয়ের নাম রেখে দিলেন শ্বেতা। এরপর কোল আলো করে জন্ম হলো মহাশ্বেতা, সরস্বতী, শাশ্বতী আর স্বাতীর। তারপর হলো বিজনের। দেখতে দেখতে রাজেনবাবু আর শিশিরকণার সংসার ভরে উঠলো পাঁচ মেয়ে আর এক ছেলেতে।

তিথিডোর; ছবি: লেখক

মন খারাপ করা নিঃসঙ্গতার উপন্যাস ‘তিথিডোর’। সর্বক্ষণ একটা ছন্নছাড়া জীবনের আবেশ লেগেই থাকে যেন পুরো উপন্যাসজুড়ে। ঠিক যেন মন খারাপ করা নিঃসঙ্গ এক একটি দুপুর। তেঁতে থাকা রোদে একলা উঠোন। সেখানে একাকিত্ব যেমনটি করে ভর করে থাকে গাছগাছালির একলা ছায়ায়।

“মন খারাপ মানুষের কখন লাগে আর কেন লাগে তার কি কোনো নিয়ম আছে? কিছুর মধ্যে কিছু না- সব ঠিক- সব ভাল… হঠাৎ শ্রীযুক্ত মন খারাপ এসে হাজির হলেন, যেন আর নড়বেন না এখান থেকে। তা লোক কিন্তু উনি তত খারাপ নন, মানে- মন খারাপ হওয়াটাই যে খারাপ তা কিন্তু ঠিক না। আমার তো বেশ ভালই লাগে এক এক সময়।”

স্বাতীর মন পড়তে গিয়ে এ লাইনটা খুব ভালো লেগে গিয়েছিল। বড় বোন শ্বেতা, মহাশ্বেতা, সরস্বতী, শাশ্বতী, কিংবা ছোট ভাই বিজনের মতো নয় সে, একটু অন্য ধাতে গড়া। বাবার সবচেয়ে আদরের মেয়ে। বড্ড জেদী। যা মন চায়, তা হাতের কাছে পাওয়া চাই। পড়াশোনাতে মন ছিল ভীষণ, ছোট ভাই বিজনের মতো বখে যাওয়া নয়।

অল্প একটু বড় হওয়ার পর শাড়ি পরাটা রপ্ত করতে বেশ সময় লেগে গিয়েছিল স্বাতীর। অল্পতেই হোঁচট খেতো, ঘরের বাইরে যেতে লজ্জা পেতো। এই স্বাতীই আবার বাবাকে দিয়ে হরেক রকমের বই কিনে আনিয়ে নিতো। সারাটা দিনের বিষন্ন মন নিয়ে কলেজ থেকে ফিরেই চনমনে রোদের দুপুরগুলোতে মেঝেতে গা এলিয়ে আর কোঁকরানো চুল ছড়িয়ে কবিতার বইতে ডুবে যেত, পাতার পর পাতা উল্টে যেত সেই সন্ধ্যে অব্দি। আর ভাবতো, কবিতার মতো করেই যদি জীবনটাকে উপভোগ করা যেত, তবে মন্দ হতো না।

লেখক বুদ্ধদেব বসু; Image: Public Domain

ওদিকে সত্যেন রায়, স্বাতীর কলেজেরই নতুন অধ্যাপক। বাবা ওপারে চলে যান সত্যেনের বয়স যখন খুব অল্প। আর মা? সেই গোড়া থেকেই সত্যেন পড়াশোনাতে মিশে যাওয়ায় মা বা অন্য কোনো আত্মীয়ের দিকে খেয়ালই পড়েনি তার। নতুন কলেজ, আর নতুন অধ্যাপনার খাতিরে অনেক আগেই নিজের সবকিছু ছেড়ে একা একটি ঘর নিয়ে বেশ ছিল সে। পড়াশোনা আর আবৃত্তিতে মজে থাকতো। আর কী চাই তার?

ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রীদের কবিতার প্রতি অত টান ছিল না, যেন শুধু স্বাতীই সত্যেনের সব আবৃত্তি মুগ্ধ হয়ে শুনতো, মনে গেঁথে নেওয়ার চেষ্টা করতো। আর নিজেকে কল্পনা করে নিতো সত্যেনের পাশে, কল্পনায় কাব্যের মেঘ পাড়ি দিতো, ডুবে থাকতো কাব্যের রাজ্যে।

সত্যেনের কাব্যিক মন ঠিকই চিনে নিয়েছিল স্বাতীকে, যখন থেকে ঐ অতটুকুন স্বাতী গিয়েছিল তার কাছে কবিতার বই ধার চাইতে। বুঝে নিয়েছিল, এই বেশ! কবিতা তাহলে ছুঁতে পেরেছে স্বাতীকে।

স্বাতী আর সত্যেনের গল্পটা আর পাঁচটা গল্পের চেয়ে আলাদা। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ভালো লাগতো স্বাতীর। সত্যেনের বাড়িতে ছিল প্রচুর বইপত্তর, সেই দেখে এক এক করে অনেকগুলো বই ধার করে পড়ে নিয়েছিল স্বাতী। একেক সময় সত্যেন কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতো স্বাতীকে। কিংবা ধার করা বইতে খুব শক্ত কোনো লেখা থাকতে স্বাতী বুঝে নিতো সত্যনের কাছে। মুগ্ধ হয়ে শুনতো স্বাতী, কবিতার মধ্যেই অন্তরাত্মাকে খুঁজে পেতো, আর দুজনে বিকেলের স্নিগ্ধ রোদের মতো নিজেদের মিলিয়ে নিতো ঐ দূরের দিগন্তরেখায়।

শেষটায় বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে পাতার পর পাতা ওল্টাতে গিয়ে গল্প টেনে শেষ করার তাড়ায় ছিলাম খানিকটা। বাদবাকিটা ভীষণ ভালো লাগার, বিশেষ করে স্বাতীকে, বারবার প্রেমে পড়ে যেতে হয় মেয়েটার।

বইয়ের নাম: তিথিডোর || লেখক: বুদ্ধদেব বসু || প্রকাশক: আজকাল

This Bangla article is a review of Tithedor by Buddhadeva Bose

Featured Image:Sharmina Shahadath

RB-SM

Related Articles