Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্যান্ডস্টর্ম: মরুভূমির হারানো শহর ‘উবার’ এবং অন্যান্য

জনপ্রিয় মার্কিন রহস্য সাহিত্যিক জেমস রোলিন্স রচিত ‘স্যান্ডস্টর্ম’ বইটি বিখ্যাত ‘সিগমা ফোর্স’ সিরিজের প্রথম উপন্যাস।

‘স্যান্ডস্টর্ম’ এর মাধ্যমে সিগমা ফোর্সের রহস্য আর রোমাঞ্চপূর্ণ অভিযানের এবং নানা বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক ধাঁধা সমাধান করে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার সূচনা ঘটে।

‘স্যান্ডস্টর্ম’ বইয়ের প্রচ্ছদ; source: jamesrollins.com

‘স্যান্ডস্টর্ম’ এর কাহিনীর শুরু ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ‘কেনসিংটন গ্যালারি’তে বিস্ফোরণের মাধ্যমে। অদ্ভুত সেই বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে লেগে পড়ে পুরো পৃথিবীর বিশেষজ্ঞরা। অজানা এক ভয়ঙ্কর শক্তির উৎসের অস্তিত্বের কথা আবিষ্কৃত হয়, যা পৃথিবী ধ্বংসের কারণ হতে পারে।

ব্রিটিশ মিউজিয়াম; source: mirandustours.com

এদিকে ‘কেনসিংটন গ্যালারি’র মালিক লেডি কারা কেনসিংটন মিউজিয়ামে বিস্ফোরণের ফলে তার বাবার প্রত্মতাত্ত্বিক সংগ্রহের ধ্বংসের সাথে বাবার মৃত্যুর কাকতালীয় যোগাযোগ খুঁজে পেলেন। বাবার মৃত্যু নিয়ে সারা জীবনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এক দুর্গম অভিযানে তিনি পাড়ি জমালেন ওমানের মরুভূমিতে। বিলিয়নিয়ার কারার সঙ্গী হলেন তার বান্ধবী ও পালিত-বোন প্রত্নতাত্ত্বিক ড. সাফিয়া আল-মায়াজ।

অভিযানের নেতৃত্বে রইলেন প্রত্মতাত্ত্বিক ও অভিযাত্রী ড. ওমাহা ডান। বিশ্বের প্রতি বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত হুমকি নিয়ে কাজ করা ডারপা’র গোপন বিভাগ ‘সিগমা’ থেকে ‘অদ্ভুত শক্তি’র রহস্য উৎঘাটন ও উৎস অনুসন্ধানে নিয়োগ দেওয়া হলো কমান্ডার পেইন্টার ক্রোকে। ক্রোর সেই দায়িত্ব পালন ছাড়াও তার সাবেক পার্টনার এবং এই মিশনের প্রতিপক্ষ ক্যাসান্দ্রা স্যানচেজের বিশ্বাসঘাতকতার শোধ নেয়াও ছিল তার আরেকটি উদ্দেশ্য। ক্রোও যোগ দিল সাফিয়াদের সাথে।

মরুভূমির হারানো শহর ‘উবার’; source: andyinoman.wordpress.com

তথ্য-প্রমাণ ও অনুমান নির্দেশ করছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে হাজার হাজার বছর আগে মরুভূমির বালিতে চাপা পড়ে যাওয়া হারানো শহর ‘উবার’কে। অ্যান্টি ম্যাটার বিস্ফোরণে পৃথিবীর উপর ধেয়ে আসা বিপদ থেকে পৃথিবীকে রক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছতে বদ্ধপরিকর ক্রো এবং তার দল। কিন্তু শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ‘দ্য গিল্ড’ ও ক্যাসান্দ্রার বাহিনীর একের পর এক আক্রমণে তাদের মুখোমুখি হতে হলো অসংখ্য বিপর্যয়ের। এদিকে গিল্ডের সাথে সাথে প্রকৃতিও যেন মেতেছে ধ্বংসলীলায়। মরুভূমিতে ধেয়ে আসছে শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী বালিঝড়। একদিকে ক্ষ্যাপা আবহাওয়া, অন্যদিকে ক্যাসান্দ্রার ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সেনাদল, সাফিয়া আর ক্রোরা কি পারবে ‘উবার’ এ পৌঁছতে? তারা কি পারবে পৃথিবীকে অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে?

মরুভূমির আটলান্টিস খ্যাত ‘উবার’কে নিয়ে কিংবদন্তীর শেষ নেই। উবারকে বলা হতো সহস্র পিলারের শহর। ঐশ্বর্য্যমণ্ডিত এই শহর একসময় ধ্বংস হয়ে মরুভূমির নিঃসীম বালির সাগরে হারিয়ে যায়। কীভাবে ধ্বংস হয়েছিল উবার? কী ঘটেছিল এর অধিবাসীদের ভাগ্যে? এরকম কিছু অমীমাংসিত রহস্যের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ‘স্যান্ডস্টর্ম’ বইটিতে। আরব উপদ্বীপের ইতিহাসের আরো কিছু অজানা, গোপন অধ্যায়ের উঠে এসেছে এখানে। ওমানের শাহরা গোত্রের দাবী, তারা বাদশাহ শাদ্দাদের বংশধর। তারা নিজেদেরকে উবারের প্রবেশদ্বারের রক্ষী বলে পরিচয় দেয়। আসলেই কি তারা উবারের রক্ষী?

একদল মহিলা ওমাহাকে কিডন্যাপ করল। তারাই আবার সাফিয়াকে বাঁচালো শত্রুর হাত থেকে। এই মহিলারা কারা? তাদের সাথে সাফিয়ার কী সম্পর্ক? লর্ড রেজিনাল্ড কেনসিংটনের মৃত্যু হয়েছিল কীভাবে? আসলেই কি অস্তিত্ব আছে মরুভূমির ভূত নিসনাসদের? উবারের সাথে রানী শেবার কী সম্পর্ক? বইটির কিছু অংশে আছে বিজ্ঞান, কিছু অংশে আছে অখণ্ডনীয় বৈজ্ঞানিক যুক্তি সম্বলিত বিজ্ঞান-কল্পনা। বইটিতে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন গোত্র ‘রেহেম’দের কথা বলা হয়েছে যারা পার্থেনোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় অযৌন উপায়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

বাকিবল; source: nanotech.com

মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ, মিউটেশন, টেলিপ্যাথি, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি নিয়ে বেশকিছু চমকপ্রদ বর্ণনা রয়েছে বইটিতে। আরও রয়েছে অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতিপদার্থ সম্পর্কিত আলোচনা, ঘটনা-দুর্ঘটনার বর্ণনা। ভীষণ অস্থিতিশীল এই প্রতিপদার্থ কি প্রকৃতিতে স্থিতিশীল অবস্থায় পাওয়া সম্ভব?’

বজ্রপাতের সময় সৃষ্ট বল লাইটনিং; source: ufotube.org

‘বল লাইটনিং’ কি সত্যিই আছে? পাবলিশার্স উইকলির মতে, জেমস রোলিন্স যদি থ্রিলার গল্প না লিখে আবহাওয়াবিদ হতেন, তাহলেও দারুণ কাজ দেখাতে পারতেন! বালিঝড়, স্থিরবিদ্যুৎ আর বজ্র নিয়ে রোলিন্স তার সৃষ্টিনৈপুণ্য দিয়ে বিধ্বংসী আবহাওয়ার চমৎকার ছবি এঁকেছেন বইটিতে।

রাশিয়ার তানগুসকায় ১৯০৮ সালে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে ঘটা ভয়ানক বিস্ফোরণের মতো অনেক সত্য ঘটনাও বর্ণিত হয়েছে বইটিতে। বইটির পটভূমি বিস্তৃত আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার আরব উপদ্বীপ জুড়ে।

হযরত আইয়ুব (আ) এর সমাধি; source: tripadvisor.com

বিখ্যাত নবী আইয়ুব (আ) এর সমাধি, কুমারী মাতা মরিয়মের বাবা নবী ইমরানের সমাধি থেকে ওমানের মরুভূমি রুবাব-আল খালীর মতো জায়গায় সূত্রের সন্ধানে অভিযান চালানোর রোমাঞ্চকর বর্ণনা আপনাকে নিয়ে যাবে সুদূর অতীত আর বর্তমানের মিলনস্থলে।

রুব আল খালী (the empty quarter); source: youtube.com

‘স্যান্ডস্টর্ম’ বইটিতে যাত্রা শুরু করে ‘ডারপা’র নতুন গোপন সংস্থা ‘সিগমা’। মূলত প্রযুক্তি এবং গবেষণা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে মাঠে কাজ করার জন্য সিগমা সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। সিগমা সদস্যদের থাকতে হয় একইসাথে কঠোর আর্মি ট্রেনিং এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞানে দক্ষতা। কমান্ডার পেইন্টার ক্রোকে নেওয়া হয় নেভি সীল থেকে। তার রয়েছে প্রযুক্তিগত বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা। প্রাক্তন সিগমা সদস্য ক্যাসান্দ্রা এসেছিল স্পেশাল ফোর্স থেকে। মরুভূমিতে বিপজ্জনক মিশন সফলভাবে শেষ করার জন্য পেইন্টার ক্রোকে সিগমার ডিরেক্টর পদে ভূষিত করা হয়। সিগমার হেডকোয়ার্টার নিয়ে আসা হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে, স্মিথসোনিয়ান ক্যাসলের মাটির তলায়। বইয়ের শেষে রয়েছে দারুণ এক চমক। কাহিনীর এক পর্যায়ে পেইন্টারের মনে সন্দেহ জন্ম নেয় যে, সিগমায় নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা আছে। কে সেই ব্যক্তি, যিনি গিল্ডের হয়ে কাজ করছেন? এটুকু শুধু বলে রাখা যায়, তিনি ডারপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি।

পাঠক, এবার চলুন জেনে আসি ‘সিগমা ফোর্স’ এর প্রথম উপন্যাস হিসেবে ‘স্যান্ডস্টর্ম’ সম্পর্কে গণমাধ্যমের রিভিউ

  • “রোলিন্স বিজ্ঞান,ইতিহাস বাস্তবতা ও কল্পনাকে থ্রিলের ঘূর্ণিতে মিশিয়ে দুর্দান্ত গতির অ্যাডভেঞ্চার গল্পে রুপ দিতে পারেন।”
    – স্কুল লাইব্রেরি জার্নাল
  • “রোলিন্স তার গল্পের বিন্যাস ও দৃশ্যগুলোকে উত্তেজনার বলকে ফুটিয়ে নেন, তারপর অ্যাকশনে পরিণত করেন।”
    – পাবলিশার্স উইকলি

এবার থাকছে গণমাধ্যমের করা প্রশ্নের জবাবে জেমস রোলিন্স তার এই বইটি সম্পর্কে কী বলেছেন সে নিয়ে একটি ছোট্ট ইন্টারভিউ।

প্রথমেই যে কথাটি জানতে চাই, এতকিছু থাকতে উবার কেন? মরুভূমির এই আটলান্টিসের প্রতি আপনার মুগ্ধতা কোথা থেকে এল?

— আর্মচেয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক হিসেবে প্রশ্নবোধকচিহ্ন দিয়ে শেষ হয়েছে এরকম ঐতিহাসিক ঘটনা আমাকে সবসময়ই মুগ্ধ করে। আর এই ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করেই আমি গল্প সাজাই। আমি আরবের মরুভূমির হারানো শহর উবার সম্পর্কে শুনেছি। কোরআন অনুসারে, এই শহর জাদুকর আর খারাপ লোকে পরিপূর্ণ ছিল। তাই স্রষ্টা ক্ষুব্ধ হয়ে শহরটি ধ্বংস করে দেন এবং বালির অতলে নিমজ্জিত করেন। তারপর দীর্ঘসময় ধরে উবারকে শুধুমাত্র কিংবদন্তী মনে করা হতো। সৌখিন এক প্রত্নতাত্ত্বিক ঐ এলাকার উপর ব্যাপক গবেষণা করে এবং মাটিভেদী রাডারের সাহায্য নিয়ে উবারের অস্তিত্ব প্রমাণ করার পর এই ধারণার অবসান ঘটে।

আপনি কি কখনো আরব উপদ্বীপে গেছেন? এই ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

— হ্যাঁ, আমি গিয়েছি এবং আমার বারবার সেখানে যেতে ইচ্ছে করে। সেখানকার দৃশ্যগুলো খুবই চমৎকার এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। বাতাস অধ্যুষিত বিশাল মরুভূমিতে ঘন বাগান এবং বাগানের সুদৃশ্য ঝরণাগুলো দারুণ সুন্দর। কিন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, পুরো এলাকাটিতে ইতিহাস, পুরাণ, ধর্ম, কুসংস্কার, প্রাচীনত্ব আর আধুনিকতা একসাথে মিলেমিশে আছে। প্রতিটি পদক্ষেপে এর এই দ্বিরুপতা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে। একজন লেখকের জন্য এটি একটি নির্ভেজাল জাদু।

আপনি কতটুকু আপনার গল্পের চরিত্র পেইন্টার ক্রোকে ধারণ করেন?

— আমার সৃষ্ট প্রতিটি চরিত্রেই কিছুটা হলেও আমি আছি- সেটা ভালোই হোক আর খারাপ। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব আর আশেপাশের লোকজনের থেকেও বৈশিষ্ট্য ধার নিয়ে থাকি। পেইন্টার ক্রোর ব্যাপারে বলতে গেলে বলব, সে আমি যেমন, তার চেয়ে বরং সবসময় যেমন হতে চেয়েছি সেরকম। কিন্তু এটা লেখার বা পড়ার একটা মজার দিক যে, আপনি সেই মুহূর্তের জন্য হলেও সেই চরিত্রটি হতে পারছেন।

জেমস রোলিন্স আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরি থেকে ভেটেরেনারি সায়েন্সে পড়াশোনা করেছেন। তিনি পশুচিকিৎসক হিসেবে কিছুদিন কাজ করেন। এরপর পশুচিকিৎসা ছেড়ে পুরোপুরি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। গল্প বলা ও চরিত্র রূপায়নে দারুণ দক্ষতা তাকে লেখক হিসেবে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছে। তার রচিত ‘সিগমা ফোর্স’ সিরিজের উপন্যাসগুলো সারা পৃথিবীতেই দারুণ জনপ্রিয়। তার রচিত একক গ্রন্থগুলোও ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘সাবটেরানিয়ান’, ’আমাজনিয়া’, ‘অল্টার অব দ্য ইডেন’, ‘এক্সকাভেশন’, ‘আইস হান্ট’ প্রভৃতি তার লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ। তার বইগুলো মূলত থ্রিলার-এডভেঞ্চার ঘরানার হয়ে থাকে। তিনি অসাধারণ এই বইগুলো লিখতে যে শুধু কল্পনাশক্তি ব্যবহার করেন তা কিন্তু নয়। তিনি নিজে গল্পের জন্য নির্বাচিত জায়গাাতে অভিযান করে তারপরই লিখতে বসেন।

‘স্যান্ডস্টর্ম’ এর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। মরুভূমি, রহস্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী আর অ্যাকশন যদি আপনার ভাল লাগে, তাহলে অবশ্যই বইটি পড়বেন। নিশ্চিত করছি, আপনার সময় বৃথা যাবে না।

বইয়ের নাম: স্যান্ডস্টর্ম
লেখক: জেমস রোলিন্স
প্রথম প্রকাশ: ২০০৪
গুডরিডস রেটিং: ৩.৯৪

ফিচার ইমেজ- jamesrollins.com

Related Articles