Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বডিগার্ড: রাজনৈতিক চক্রান্তের মারপ্যাঁচে আগানো নিখুঁত এক থ্রিলার

১১ মিলিয়ন মানুষের সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই ভুল হতে পারে না? ঠিক এই সংখ্যক মানুষই বসে গিয়েছিলেন টিভি পর্দার সামনে, ব্রিটিশ থ্রিলার সিরিজ ‘বডিগার্ড’ এর প্রথম সিজনের ফাইনাল এপিসোড দেখার জন্য। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ কাহিনী, পদে পদে প্লট টুইস্ট আর দুর্দান্ত অভিনয়ের সমন্বয়ে গত কয়েক বছরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রিটিশ সিরিজগুলোর তালিকায় অনায়াসেই স্থান করে নিয়েছে এই সিরিজটি।

প্রাক্তন ডাক্তার এবং রয়্যাল এয়ার ফোর্স অফিসার, জেড মারকিউরিওর মস্তিস্কপ্রসূত এই সিরিজে উঠে এসেছে ষড়যন্ত্র, রাজনৈতিক রেষারেষি, জঙ্গীবাদ, বর্ণবাদ কিংবা মানসিক বিপর্যয়জনিত অসুস্থতাসহ সাম্প্রতিককালের আলোচিত বিভিন্ন প্রসঙ্গ। টিভি রেটিংয়ের দিক দিয়ে ব্রিটিশ টিভি সিরিজগুলোর মধ্যে এর আগে শেষ এরকম জনপ্রিয়তা পেয়েছিল পিরিয়ড-ড্রামা সিরিজ ‘ডাউনটাউন অ্যাবি’। আজকে কথা হবে থ্রিলারপ্রেমীদের মন জয় করে নেয়া এই দুর্দান্ত সিরিজকে ঘিরেই।

‘বডিগার্ড’ সিরিজের পোস্টার ; © BBC/WORLD PRODUCTIONS

‘বডিগার্ড’ এর কাহিনী শুরু হয় সার্জেন্ট ডেভিড বাডকে দিয়ে। এর আগে ইরাক, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ডে সামরিক দায়িত্ব পালন করা ডেভিড বর্তমানে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ সার্ভিসে কর্মরত একজন স্পেশালিস্ট প্রোটেকশন অফিসার। ট্রেনে করে নিজের সন্তানদেরকে তাদের মায়ের কাছে পৌঁছে দেবার সময়ে আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার আশঙ্কা করে তার সন্দেহপ্রবণ মন। ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ এক পরিস্থিতিকে আশ্চর্য দক্ষতায় নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন বাড। এই ঘটনার পুরস্কার হিসেবে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র সচিব জুলিয়া মনট্যাগিউর স্পেশাল প্রোটেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে।

ক্যারিয়ারের দিক দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে দারুণ সফল ডেভিড। নিজের শান্ত কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠস্বর দিয়ে যেকোনো মানুষের ওপরেই প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা আছে তার। তবে ডেভিডের ব্যক্তিগত জীবন কিন্তু খুব সুখের নয়। সৈন্যজীবনের একপর্যায়ে আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। যে যুদ্ধের ফলে হারিয়েছেন অনেক বন্ধুকে, শরীরেও বহন করছেন তার ক্ষতচিহ্ন। তার ভয়াবহ স্মৃতি দুঃস্বপ্নে তাড়া করে ফেরে তাকে, ভুগছেন তীব্র পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে। একই কারণে স্ত্রী ভিকির সাথেও সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে গেছে। নিজের এই অবস্থার জন্য সঙ্গত কারণেই রাজনীতিবিদদেরকে দায়ী মনে করেন ডেভিড। তবে সেটা তার ক্যারিয়ারের পথে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি, এখনো পর্যন্ত।

জুলিয়া মনট্যাগিউ এবং তার বডিগার্ড ডেভিড বাড; © BBC/WORLD PRODUCTIONS/SOPHIE MUTEVELIAN

বর্তমানে স্বরাষ্ট্র সচিব হিসেবে কর্মরত জুলিয়া মনট্যাগিউ আগে ছিলেন একজন ব্যারিস্টার। তার বডিগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে তার ডেভিড জানতে পারেন, বরাবরই দেশের বাইরে সেনা পাঠানোর ব্যাপারে ভোট দিয়েছেন জুলিয়া। এমনকি সেনাদের হতাহত হবার ঘটনায় কোনো অনুশোচনাবোধও নেই তার। ক্ষুরধার রাজনৈতিক মস্তিস্কের অধিকারী জুলিয়া অনেকের কাছেই ‘সাইকোপ্যাথ’। বর্তমানে আরআইপিএ-১৮ নামের একটি বিতর্কিত বিল পাস করানোর চেষ্টা করছেন। এখনকার কনজারভেটিভ পার্টির নেতাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে তার জায়গা দখল করে নেবার সামর্থ্যও রাখেন তিনি। এ সমস্ত কারণে জুলিয়া অনেকেরই চক্ষুশূল, শত্রু সংখ্যাও বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। 

ডেভিড দায়িত্ব নেবার পরে থেকেই জুলিয়ার ওপর হতে থাকে একের পর এক আততায়ী হামলা। সন্দেহভাজন হিসেবে কাউকে শনাক্ত করা কিন্তু খুব সোজা কথা না। চাকরি চলে যাওয়া পিএ থেকে শুরু করে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিবিদ কিংবা যুদ্ধাহত সৈন্য, তার শত্রুর তালিকা তো আর ছোট নয়। সামনাসামনি কিছুটা ঠোটকাঁটা কিংবা রূঢ় মনে হলেও জুলিয়ার আসল রূপ টের পেতে খুব বেশি সময় লাগেনি ডেভিডের। আস্তে আস্তে তাদের সম্পর্ক মোড় নিতে থাকে অন্যদিকে। এদিকে তার যুদ্ধাহত বন্ধু কিন্তু তাকে দ্বিধায় ফেলে দেয়।

জুলিয়ার প্রাক্তন স্বামী রজার পেনহ্যালিগন আবার দলীয় চিফ হুইপ। সামনাসামনি তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও তিনি প্রয়োজনে জুলিয়ার ক্যারিয়ার শেষ করে দেবার ক্ষমতা রাখেন, এটা বুঝতে কোনো বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন পড়ে না। জুলিয়ার সাথে ঘনিষ্টতার কারণে ডেভিডও মুহুর্মুহু বিপদের মুখোমুখি হতে থাকেন।

সন্দেহভাজন নাদিয়া; © BBC/WORLD PRODUCTIONS/SOPHIE MUTEVELIAN

সিরিজটি এমনভাবে নির্মিত যে কোন চরিত্র কী করতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে আগে থেকে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করার উপায় নেই। ষড়যন্ত্রের পেছনে কলকাঠি নাড়তে পারে যে কেউ। গোয়েন্দা কর্মকর্তা রিচার্ড লংক্রস, বিশেষ উপদেষ্টা রয় ম্যাকডোনাল্ড, সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান লরেন ক্র‍্যাডক, কাউন্টার টেরোরিজম কমান্ডার অ্যান স্যাম্পসন, অস্থায়ী সচিব মাইক ট্র‍্যাভিস, চিফ হুইপ রজার পেনহ্যালিগনের মতো কোনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকেই সন্দেহের বাইরে রাখা যায় না। সেই সাথে সন্দেহের তীর ওঠে ট্রেনের আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী কিংবা খোদ ডেভিড বাডের দিকেও। আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলো জোড়া লাগতে থাকে, খুলতে থাকে রহস্যের জট। এসবের সাথে জড়িয়ে পড়েন স্বয়ং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও।

এসবের অনেক কিছুই হয়তো থ্রিলারপ্রেমীদের কাছে নতুন কিছু নয়। তবে সিরিজের নির্মাতা এই পরিচিত প্রেক্ষাপটকে ভিত্তি করেই উপহার দিয়েছেন অভিনব এক থ্রিলার। দারুণ সাহসী কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা সিরিজটির সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারতো। নেমে পড়েছেন নিজেকেই নিজে ছাড়িয়ে যাবার প্রতিযোগিতায়। ধুন্ধুমার অ্যাকশন যে খুব ছিল তা নয়। কাহিনীর মারপ্যাঁচেই বারবার নেইল-বাইটিং টেনশনে ফেলে দর্শকের সহ্যশক্তির পরীক্ষাই নিয়েছেন যেন। এককথায় সিরিজটিকে তাই প্রায় ছয় ঘন্টার একটি রোলারকোস্টার রাইড বললেও ভুল হবে না।

রিচার্ড ম্যাডেন সিরিজপ্রেমীদের কাছে পরিচিত বিশ্বখ্যাত ফ্যান্টাসি ড্রামা ‘গেম অফ থ্রোন্স’ এর রব স্টার্ক হিসেবে। তাছাড়া ২০১৫ সালের ‘সিন্ডারেলা’ এর লাইভ অ্যাকশন অ্যাডাপ্টেশনে প্রিন্স চার্মিংয়ের ভূমিকাতেও অভিনয় করেছেন। তবে চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে মানসিক টানাপোড়েনকে আড়াল করে চলা পিএস ডেভিড বাডের চরিত্র তাকে নতুন করে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। এছাড়া ‘লাইন অফ ডিউটি’ সিরিজের কিলি হস স্বরাষ্ট্র সচিব জুলিয়া মনট্যাগিউর ভূমিকায় নিখুঁত পারফরম্যান্স দিয়েছেন। সিরিজের পার্শ্ব চরিত্রগুলোর গুরুত্বও কোনো অংশে কম ছিল না। আর থ্রিলার বিশেষজ্ঞ জেড মারকিউরিও নিঃসন্দেহে তার আগের সকল কাজকে ছাড়িয়ে গেছেন। প্রতিটি এপিসোড দেখে মনে হয়েছে, তিনি নিজের সাথেই নিজে পাল্লা দিচ্ছেন। একেকটি এপিসোডের রুদ্ধ্বশ্বাস সাসপেন্সকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিল তার পরেরটাকে। শেষে গিয়ে মনে হবে, ভিলেনের পরিচয়টা প্রত্যাশিত হয়েও অপ্রত্যাশিত।

পরিচালক জেড মারকিউরিও; © Linda Nylind for the Guardian

কতটা বাস্তবসম্মত ডেভিড বাড ওরফে ‘বডিগার্ড’ এর চরিত্রটি? সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল ফ্র্যাঙ্ক মুর নামক একজন সিকিউরিটি কর্মকর্তাকে। অনেকটা ডেভিড বাডের মতোই তার ক্যারিয়ার, অতীতে ব্রিটিশ রয়্যাল মেরিনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আফগানিস্তান, ইরাক এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে। কিছু খুঁটিনাটি জিনিস বাদে তার কাছে এই সিরিজ বেশ নিখুঁত বলেই মনে হয়েছে। তবে তারপরেও কিছু ভুল আছে ধরার মতো। সিরিজে ডেভিডকে সাদা এয়ারপিস ব্যবহার করতে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবের কর্মকর্তারা চোখে না পড়ার মতো এয়ারপিস ব্যবহার করেন।

লন্ডনের রাস্তায় আহত ডেভিড বাড; © BBC/WORLD PRODUCTIONS/SOPHIE MUTEVELIAN

তাছাড়া খ্যাতি হারানোর ভয়েই হোক বা পেশাদারিত্বের কারণেই হোক, একজন সচিব এবং তার বডিগার্ডের মধ্যে সম্পর্ক হবার সম্ভাবনাও বেশ কমই বলা যায়। তবে সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো, ডেভিড বাডের পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারের বিষয়টি সবার চোখ এড়িয়ে যাওয়া। আর্মি থেকে অবসর নেবার সময়েই হোক কিংবা স্বরাষ্ট্র সচিবের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ পাবার সময়েই হোক, সাইকোলজিক্যাল ইভালুয়েশনে তার মানসিক অবস্থার ব্যাপারটি চাপা থাকার কথা না। কিন্তু সিরিজের কাহিনীর একটি প্রধান অংশ আবার পিটিএসডি চেপে রাখা ডেভিডের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কার্যকলাপের ওপরেই নির্ভরশীল ছিল। তবে রিচার্ড ম্যাডেনের অভিনয়ে কোনো খুঁত খুঁজে পাননি তিনি।

‘বডিগার্ড’ সিরিজের নেটফ্লিক্স পোস্টার; © BBC/WORLD PRODUCTIONS

বর্তমানে এর আইএমডিবি রেটিং ৮.৩। এদিকে রটেন টমাটোজে সমালোচকদের ভোটে এর রেটিং ১০০% ফ্রেশ! এককথায়, সকল সমালোচকেরই ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে সিরিজটি। চরম জনপ্রিয়তার কারণে বিবিসি চ্যানেলে প্রচার শেষ হবার সাথে সাথেই একে কিনে নিয়েছে নেটফ্লিক্স। শুধু এতেই শেষ নয়। জেমস বন্ডের ২৫তম মুভিটি করার পরে ড্যানিয়েল ক্রেগ অবসরে যাবেন। আর তার পরের জেমস বন্ড হিসেবে টম হিডলস্টোন, ইদ্রিস অ্যালবাদের মতো জাঁদরেল অভিনেতাদের পেছনে ফেলে অনেকেরই পছন্দের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছেন রিচার্ড ম্যাডেন! এই ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দিতে না পারলেও বডিগার্ডের সিজন ২ আসার ব্যাপারটি ঠিকই নিশ্চিত করেছেন ম্যাডেন। আর দেরি না করে তাই বসে যেতে পারেন দুর্দান্ত গাঁথুনির এই থ্রিলার কাহিনীটি উপভোগ করতে। আশা করি হতাশ হবেন না।

This article is in Bengali Language. It is a review about the intense British thriller series, Bodyguard. For references please check the hyperlinked texts in the article.

Featured Image: BBC/WORLD PRODUCTIONS/SOPHIE MUTEVELIAN

 

Related Articles