Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হগওয়ার্টসের প্রতিষ্ঠাতারা || পর্ব ১ || গড্রিক গ্রিফিন্ডর

শৈশবের স্মৃতি রাঙিয়ে দেওয়া হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজি সাথে নিয়ে এ বিশ্বের একটা প্রজন্মের শৈশবকাল বেশ আনন্দঘন পরিবেশে কেটেছে। ফ্যান্টাসি জগতের ভিত গড়ে দিতে হ্যারি পটারের অবদান আছে অনেকাংশে। স্বপ্নের ‘হগওয়ার্টস স্কুল অভ উইচক্র্যাফট অ্যান্ড উইজার্ড্রি’তে পড়ার জন্য অনেকেই ব্যাকুল আশায় বসে থাকে এখনো। যদি কোনোদিন কোনো পেঁচা দিয়ে যায় হগওয়ার্টস ভর্তির চিঠি? সত্যিই যদি অস্তিত্ব থেকে থাকে কল্পনার ক্যানভাসে তৈরি করা সেই হগওয়ার্টসের?

এ-তো গেলো কল্পনা আর স্বপ্নের হগওয়ার্টস। কিন্তু মোহময় সেই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের সম্পর্কে অনেক কিছুই অনেকের অজানা। জে. কে. রোলিংয়ের মস্তিষ্ক-প্রসূত কল্পনা কাগজ-কলমে ও সেলুলয়েডের ফিতায় আবদ্ধ হয়ে আমাদের ফ্যান্টাসি জগতকে করেছে আরও সমৃদ্ধ। তিনি বর্ণনা করে গেছেন কাল্পনিক এক জাদু স্কুলের, সেখানের বিভিন্ন সময়ের কাহিনী।

হগওয়ার্টস স্কুলের চারজন প্রতিষ্ঠাতা। বাঁ থেকে যথাক্রমে গড্রিক গ্রিফিন্ডর, হেলগা হাফলপাফ, রোয়েনা র‍্যাভেনক্ল, এবং সালাজার স্লিদারিন; Image Source: wizardingworld.com

‘হ্যারি পটার’ নামটা উচ্চারণ করলে যে ক’টা নাম সবার আগে স্মৃতিপটে ভেসে উঠে, তার মধ্যে হাউজ গ্রিফিন্ডর অন্যতম। হাউজ গ্রিফিন্ডর যে হ্যারি পটার ফ্র্যাঞ্চাইজির সবচেয়ে আলোচিত হাউজ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ জে. কে. রোলিং পুরো হ্যারি পটার সিরিজ জুড়ে শুধু হাউজ গ্রিফিন্ডরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় মেতেছেন বেশি। প্রধান শিক্ষক প্রফেসর ডাম্বলডোর থেকে শুরু করে মাঠ ও চাবি-রক্ষক রুবিয়াস হ্যাগ্রিড, অধিকাংশই ছিলেন হাউজ গ্রিফিন্ডরের।

অনেকে হগওয়ার্টস সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ ধারণা রাখলেও, এর কর্মকাণ্ড ও পেছনে রটে যাওয়া ইতিহাস সম্পর্কে অবগত নয়। হগওয়ার্টসের চারজন প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন গড্রিক গ্রিফিন্ডর। চার পর্বে আয়োজিত হগওয়ার্টস নির্মাতাদের নিয়ে আলোচনার প্রথম পর্ব আজকে। বাকি তিন পর্বে অন্য তিনজনকে নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সাহসের উপাখ্যান- গ্রিফিন্ডর; Image Source: wallpapercave.com

গড্রিক গ্রিফিন্ডর ছিলেন তৎকালীন সেরা জাদুকরদের একজন এবং হগওয়ার্টসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন আরেক প্রতিষ্ঠাতা সালাজার স্লিদারিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গ্রিফিন্ডর জন্মেছিলেন ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট কান্ট্রির ছোট্ট এক গ্রামে। জাদু-জগতে যেটি বর্তমানে ‘গড্রিক হোলো’ নামে পরিচিত।

গড্রিক গ্রিফিন্ডর, সালাজার স্লিদারিন, হেলগা হাফলপাফ, রোয়েনা র‍্যাভেনক্ল- এই চার জাদুকরের বন্ধুত্ব ছিল হীরের মতো অটুট। তারা একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, এমন এক জাদু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন, যেটি হবে পৃথিবী বিখ্যাত। যেখানে জাদু শিখতে আসবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। তখন যুক্তরাজ্যে কোনো জাদু মন্ত্রণালয় বা জাদু বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব ছিল না। জাদুকরেরা তাদের সন্তানদের তখন ঘরে বসেই জাদু শিক্ষা দিতেন। কারণ জাদু নিয়ন্ত্রণ করা না জানলে, তা মাঝেমধ্যে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াত। সকল আয়োজন সম্পন্ন করে, স্কটল্যান্ডের অবস্থিত গহীন অরণ্যে আচ্ছাদিত এক দ্বীপে স্থাপন করলেন সে স্কুল। গ্রিফিন্ডর বিশ্বাস করতেন সততা, সংকল্প ও সাহসিকতাই সবকিছুর মূল চালিকাশক্তি। তাই নিজ হাউজে ছাত্র ভর্তি করানোর সময় এই বৈশিষ্ট্যগুলোর উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। সতর্কভাবে বেছে বেছে ভর্তি করেন শিক্ষার্থীদেরকে।

হগওয়ার্টস স্কুল অভ উইচক্র্যাফট অ্যান্ড উইজার্ড্রি; Image Source: wall.alphacoders.com

কিন্তু কিছুদিন পর চারজনের মাথায় দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে উঠল। তাদের চারজনের মৃত্যুর পর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন হাউজে আলাদা করা হবে কীভাবে? সমস্যা সমাধানের জন্য, গড্রিক নিজের হ্যাট খুলে বাকি তিনজনকে এর উপর মন্ত্র প্রয়োগ করতে বললেন। মন্ত্র প্রয়োগ করার ফলে জীবন্ত হয়ে উঠল সেই হ্যাট, কথা বলতে শুরু করলো তোতাপাখির মতো। একে এমন ক্ষমতা দান করা হলো, যাতে সে হাজার বছর পরেও শিক্ষার্থীদের বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে, তাদেরকে সে অনুযায়ী উপযুক্ত হাউজের জন্য নির্বাচন করতে পারে। সে থেকেই এই হ্যাটের নাম হয়ে যায়, সর্টিং হ্যাট।

হ্যারি পটারের মাথায় সর্টিং হ্যাট; Image Source: businessinsider.com

শুরু থেকে গ্রিফিন্ডর আর স্লিদারিনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলেও, একটা সময় পর সে সম্পর্কে চির ধরে যায়। এর প্রধান কারণ হলো, ভিন্ন মানসিকতা। কারণ, স্লিদারিন বরাবরই মাগল-বর্নদের অবিশ্বাস করতেন। মাগল-বর্ন বলতে এমন জাদুকরদের বোঝায়, যাদের পিতামাতা জাদু-ক্ষমতাহীন সাধারণ মানুষ, অথচ তারা নিজেরা জন্মেছে জাদুকরী ক্ষমতা নিয়ে। তাই তিনি চাইতেন না, মাগল-বর্নরা এই স্কুলে ভর্তি হয়ে জাদুবিদ্যা রপ্ত করুক। তার ইচ্ছা, শুধু পিওর ব্লাড বা জাদুকরদের বংশধররাই এ স্কুলে পড়ার সুযোগ পাক। সেই থেকে শুরু হলো মতবিরোধ।

বাকি তিনজন বেঁকে বসলেন স্লিদারিনের বিরুদ্ধে। কারণ, তারা বিশ্বাস করতেন, কারও পরিবার দেখে তাকে বাছ-বিচার করা ঠিক না। প্রতিভা কখনো পারিবারিক বা বংশগতভাবে বাহিত হয় না। সেটা অর্জন করে নিতে হয়। গড্রিক গ্রিফিন্ডর তো স্লিদারিনের মুখের উপর সরাসরি সে প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন। ফলে, বাকবিতণ্ডা খারাপের দিকে মোড় নিতে নিতে একসময় তা দ্বন্দ্বযুদ্ধে গিয়ে গড়াল। সুবিধা করতে পারবেন না ভেবে, স্লিদারিন চিরকালের জন্য সে স্কুল ছেড়ে চলে আসেন।

পোর্ট্রেট দেখে বোঝা যায়, গড্রিক ছিলেন সিংহের মতো বিশালদেহী, আপাদমস্তক একজন বীরযোদ্ধা, লম্বা-চওড়া, লাল চুল ও লম্বা দাঁড়ি সমেত। একজোড়া সবুজ চোখ, পীচ রঙের চামড়া, এবং তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় প্রথম দেখায় তাকে কেউ বাদশাহ বলে ভুল করতেই পারে।

শিল্পীর তুলির আঁচড়ে গড্রিক গ্রিফিন্ডর; Image Source: aminoapps.com

গড্রিক গ্রিফিন্ডর সাহস, সংকল্প, শৌর্য, সততা সমেত সেরা একজন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। নিজ সংকল্পের প্রতি আস্থা রেখে তিনি প্রিয় বন্ধুর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতেও পিছপা হননি। তার বুদ্ধির ধার কতটুকু, তা সর্টিং হ্যাট উদ্ভাবনের গল্পটা দিয়েই আন্দাজ করা যায়। তিনি সময়ের অনেক আগেই চিন্তা করতে পারতেন। সেজন্য তিনি না থাকলেও, তার রেখে যাওয়া সর্টিং হ্যাট হগওয়ার্টসে তার উত্তরাধিকার সত্ত্বা টিকিয়ে রেখেছে ঠিকই।

অন্যরা যেখানে জাদুর ছড়ি বেছে নিয়েছে, তিনি সেখানে ছড়ির বদলে প্রাধান্য দিয়েছেন গবলিনদের তৈরি করা এক তলোয়ারকে। কারণ জাদুকে সবসময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। জাদুর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার অনেকসময় অনেক বিপদ ডেকে এনেছে। তাই, তিনি জাদুর ছড়ির বদলে একটা তরবারি বেছে নিয়ে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। সেজন্য হাউজ গ্রিফিন্ডর বরাবরই সাহসিকতার জন্য জনপ্রিয় ছিল।

হ্যারি পটার সিনেমায় হাউজ গ্রিফিন্ডরের কয়েকজন শিক্ষার্থী; Image Source: screenrant.com

গড্রিক গ্রিফিন্ডরকে তার সময়ের সেরা দ্বন্দ্ব-যোদ্ধা বলে বিবেচনা করা হয়। তলোয়ারের মাধ্যমে তিনি মাগল এবং জাদুকরদের সাথেও যুদ্ধ লড়তে ছিলেন পটু। তিনি সর্বদা নিরপেক্ষ বিচারে বিশ্বাস করতেন বলেই, মাগলদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য জাদুর ছড়ি বাদ দিয়ে হাতে তলোয়ার উঠিয়ে নিয়েছেন। কারণ, মাগলেরা জাদু-ক্ষমতাহীন। তাদের বিপক্ষে জাদু ব্যবহার করাটা হবে সম্পূর্ণ অন্যায় এবং অবিচার। তলোয়ার হাতে যুদ্ধের ময়দানে তিনি যে পরিমাণ দক্ষ ছিলেন, তা অন্য কোনো জাদুকর ছিল না। এই বৈশিষ্ট্য তাকে সকলের চেয়ে স্বতন্ত্র বানিয়েছে। 

তিনি নিজ হ্যাটকে কথা বলা ও শিক্ষার্থী নির্বাচনের জন্য প্রায় নতুন এক জীবন দান করেছিলেন। এ থেকেই বোঝা যায়, জাদুমন্ত্রের উপর তার কী পরিমাণ দখল ছিল।

গ্রিফিন্ডরের বিখ্যাত সেই তরবারি পুরো হ্যারি পটার সিরিজেই বিশেষ একটা গুরুত্ব বহন করে নিয়ে গেছে। সেটা বানিয়ে দিয়েছিল মূলত গবলিন সর্দার ‘র‍্যাগনাক দ্য ফার্স্ট’। গ্রিফিন্ডর এই তরবারি আর সর্টিং হ্যাটকে এমন ক্ষমতা দান করে দিয়ে গেছেন, যাতে একজন সত্যিকার গ্রিফিন্ডরের দরকারের সময় সর্টিং হ্যাট থেকে তরবারিটা বেরিয়ে আসে।

হ্যাটের ভেতর গ্রিফিন্ডরের তরবারি; Image Source: pinterest.com

এই তরবারি দিয়েই হ্যারি পটার চেম্বার অভ সিক্রেটসের দানবীয় সরীসৃপ ব্যাসিলিস্ককে হত্যা করেছে। লর্ড ভলডেমর্টের হরক্রাক্সগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে গ্রিফিন্ডরের তলোয়ারের মাধ্যমে। এছাড়াও অ্যালবাস ডাম্বলডোর মারভলো গন্টের আংটি, নেভিল লংবটম নাগিনীকে হত্যার মাধ্যমে ভলডেমর্টের সর্বশেষ হরক্রাক্সটিকে ধ্বংস করেছিল এই তরবারির মাধ্যমেই।

গ্রিফিন্ডরের তরবারি হাতে হ্যারি পটার; Image Source: looper.com

হ্যারি পটার সিরিজে অন্যান্য হাউজের তুলনায় গ্রিফিন্ডরকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বেশি। কারণ, হগওয়ার্টসের প্রধান শিক্ষক ডাম্বলডোর, উপ-প্রধান শিক্ষক ম্যাকগোনাগল, সিরিয়াস ব্ল্যাক, রেমাস লুপিন, রুবিয়াস হ্যাগ্রিড, উইজলি পরিবার, হ্যারি পটার, হারমায়োনি গ্রেঞ্জার, রন উইজলি সহ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের সবাই-ই ছিল হাউজ গ্রিফিন্ডরের। প্রতি বছর শেষে হাউজকাপও জিতেছে হাউজ গ্রিফিন্ডরই। তাই, গড্রিক গ্রিফিন্ডরের রেখে যাওয়া স্মৃতিকে, খ্যাতির মাধ্যমে তারা জিইয়ে তুলেছে আগের মতোই। (এরপর দেখুন ২য় পর্বে)

Related Articles