Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য গ্রেট ডিবেটার্স: ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল যে বিতার্কিক দল

শুরুর আগে

বৈষম্যমূলক আইন কোনো আইনই নয়

An unjust law is no law at all
       -St. Augustine of Hippo

‘দ্য গ্রেট ডিবেটার্স’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। পরিচালক: ড্যানজেল ওয়াশিংটন। শুধু পরিচালনাই নয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রটির মূল প্রতিপাদ্য সেন্ট অগাস্টিন অফ হিপোর উপরের উক্তিটি। তবে আমেরিকানদের কাছে এবং বিশ্বের কোণায় কোণায় উক্তিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল মার্টিন লুথার কিংয়ের হাত ধরে। উক্তিটির সাথে সাথে বর্ণবাদ, নারী অধিকার, অসহযোগ আন্দোলনসহ আরো বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে ২ ঘন্টা ৭ মিনিটের এই মুভিতে।

দ্য গ্রেট ডিবেটার্স মুভির পোস্টার; Image Source: The Great Debaters

সত্য ঘটনা অবলম্বনে বানানো হলেও, চলচ্চিত্রের রোমাঞ্চকর আবেশ ফুটিয়ে তোলার জন্য মূল ঘটনার কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। স্বাভাবিক। পরিচালকের ক্রিয়েটিভ রাইটস তাকে এটুকু করার অধিকার দেয়। ক্রিয়েটিভ রাইটসের এই ব্যবহার আমরা অনেক সময়ই মেনে নিতে পারি না। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘কাহিনী’ কবিতা থেকে কয়েকটি লাইন তুলে দেয়া যেতে পারে,

সেই সত্য যা রচিবে তুমি,
ঘটে যা তা সব সত্য নহে। কবি, তব মনোভূমি
রামের জনমস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।

কিছু কিছু চলচ্চিত্রের প্রত্যেকটি মুহূর্ত, প্রতিটি ফ্রেম অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়। মূল কথা বা সারকথা থেকে মুভির ব্যাপারে কিছুটা ধারণা হয়তো পাওয়া যেতে পারে, তবে সম্পূর্ণভাবে অনুভব করা সম্ভব নয়। এই মুভিটাও সেরকম।

মুভির গল্পটা গড়ে উঠেছে মূলত টেক্সাসের ওয়াইলি কলেজের ৪৭তম বিতার্কিক দলকে ঘিরে। দলের কোচ মেলভিন বি. টোলসন এখানে মূল কেন্দ্রীয় চরিত্র। সাথে আছে বিতর্ক দলের চার সদস্য জেমস ফার্মার জুনিয়র, হেনরি লো, সামান্থা বুক এবং হ্যামিল্টন বার্জেস।

টোলসন বলতেন, শব্দের চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই; Image Source: The Great Debaters

১৯৩০ দশকের ঘটনা। শুরুতেই আমরা দেখতে পাই, ওয়াইলি কলেজে নতুন ছাত্রছাত্রীদের ওরিয়েন্টেশন চলছে। স্থানীয় পাদ্রী এবং বিখ্যাত লেখক জেমস ফার্মার সিনিয়র বক্তৃতা দিচ্ছেন। সেই ওরিয়েন্টেশনেই জেমস ফার্মার জুনিয়র, সামান্থা বুক এবং হ্যামিল্টন বার্জেসের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ওরিয়েন্টেশনের সঙ্গে সমান্তরালে আরো দুটো দৃশ্য চলতে থাকে। একটি দৃশ্যে একজন মানুষকে জগিং করতে দেখা যায়। তিনিই কোচ টোলসন। আরেকটি দৃশ্যে, স্থানীয় এক উৎসবের মাধ্যমে আমাদের পরিচয় হয় হেনরি লো’র সঙ্গে। এই সব কিছু গিয়ে এক সুতোয় মিলে যাবে কয়েক দৃশ্য পরে, ওয়াইলি কলেজের বিতর্ক দল বাছাই অনুষ্ঠানে।

কোচ টোলসন যেখানে বিতর্ক করতে ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদেরকে যথেচ্ছভাবে বিব্রত করবেন। ঠেলে দেবেন কঠিন সব পরিস্থিতিতে। দাঁড় করিয়ে দেবেন হটস্পটে, যার মধ্যে দিয়ে ওয়াইলি কলেজ তাদের চার সদস্যের নতুন বিতার্কিক দলকে পেয়ে যাবে। এবং শুরু হবে মুভিটির সেকেন্ড অ্যাক্ট বা দ্বিতীয় পর্ব।

তিন বিতার্কিক হেনরি লো, সামান্থা বুক এবং জেমস ফার্মার জুনিয়র; Image Source: The Great Debaters

জেমস ফার্মার পরিবার গাড়িতে করে যাচ্ছিল। স্থানীয় দুই সাদা লোক রাস্তার মাঝে হঠাৎ করেই একটা শুকরকে দাঁড় করিয়ে দিল। ব্রেক কষেও লাভ হলো না। মারা গেল শুকরটি। এবং সাদা দুজন মিলে বন্দুক ধরে, জেমস ফার্মার সিনিয়রকে তার মাসিক বেতনের চেকটি জরিমানা হিসেবে দিতে বাধ্য করলো। এবং বলে গেল, ১৭ ডলারে চলবে না, আরো ৮ ডলার দিয়ে যেতে হবে পরে। সেই সঙ্গে নিজ হাতে শুকরটিকে সরাতে বাধ্য করা হলো তাকে। নিজের পুরো পরিবারের সামনে মুখ বুজে সব অপমান সয়ে গেলেন জেমস ফার্মার সিনিয়র।

কোচ টোলসন ওয়াইলি কলেজের বিতর্ক দলটিকে প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় জানিয়ে দিলেন, মূল বক্তব্য তিনিই লিখে দেবেন। বিতার্কিকরা শুধু মঞ্চে দাঁড়িয়ে আউড়ে যাবে মুখস্ত বুলি। চারজনের সবাই একসঙ্গে মঞ্চে ওঠার সুযোগ পাবে না। কাজেই, মূল বক্তা হিসেবে থাকবে হেনরি এবং হ্যামিল্টন। সামান্থা হলো অতিরিক্ত বক্তা। আর, জেমস ফার্মার জুনিয়র গবেষণা করবে, খুঁজে বের করবে প্রয়োজনীয় তথ্য। বিতার্কিকরা বাধ্য হলো কোচের কথা মেনে নিতে। এছাড়া আর উপায়ই বা কী! এখানে টোলসনই সর্বেসর্বা।

রাত করে পার্টি থেকে ঘরে ফিরতে গিয়ে জেমস ফার্মার জুনিয়র আবিষ্কার করলো, কোচ খুব সাবধানে কোথায় যেন যাচ্ছেন। পিছু নিল সে। স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ কৃষকদেরকে নিয়ে গোপন বৈঠক করছিল কোচ টোলসন। সেখানে দল বেঁধে হানা দিল সাদারা। যারা পালিয়ে যেতে পারেনি, তারা মার খেল। ফার্মার জুনিয়র পালাতে গিয়ে পড়ল বিপদে। কোচ টোলসন তাকে দেখে এগিয়ে এলেন। তবে অনুরোধ করলেন, সে যেন এই ঘটনার কথা কাউকে না বলে। প্রতিজ্ঞা করল ফার্মার জুনিয়র, কাউকে বলবে না। কিন্তু রাত অনেক হয়েছে। ঘরে ফিরে তাই বাবার জেরার মুখে পড়তে হলো। মুখ খুলতে অস্বীকৃতি জানাল সে। মুখের উপর বাবাকে বলে দিল, মুখ বুজে সেদিন যেভাবে সাদাদের সব কথা মেনে নিয়েছেন, তার মুখে এসব কথা মানায় না।

স্থানীয় শেরিফ কৃষকদের সেই গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে গেছে। দুই কৃষককে ধরে এনে প্রচণ্ড অত্যাচার এবং জেরা করা হলো। তারপর, তাদের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হলো কোচ টোলসনকে। স্থানীয় নিগ্রোরা শেরিফের অফিস ঘিরে ফেললো। তারা টোলসনের মুক্তি চায়। টোলসনকে ছাড়িয়ে আনতে গিয়ে শেরিফের মুখোমুখি হলেন স্থানীয় পাদ্রী জেমস ফার্মার সিনিয়র। বললেন, প্রমাণ ছাড়া কাউকে ধরে রাখাটা আইন হতে পারে না। সেই সঙ্গে সেন্ট অগাস্টিনের উক্তিটিও স্মরণ করিয়ে দিলেন শেরিফকে। জানালেন, বাইরের এত মানুষ এত সহজে ঘরে ফিরে যেতে রাজী হবে না। কাজেই, একরকম বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিতে হলো টোলসনকে। বাবাকে দেখে ফার্মার জুনিয়র জানল, সাদাদের সামনেও মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায়।

একের পর এক বিতর্কে জিতেই যাচ্ছে ওয়াইলি কলেজের বিতার্কিক দল। পল কুইন কলেজকে দিয়ে শুরু হয়েছিল। তারপর প্রায় ১০০টির মতো বিতর্ক তারা টানা জিতেছে। কাজেই, প্রথমবারের মতো একটি সাদা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো নিগ্রো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিতর্ক করতে রাজি হলো। ইউনিভার্সিটি অফ ওকলাহোমা। তবে সেই বিতর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হবে না। হবে বাইরে এক জায়গায়। এদিকে হ্যামিল্টন বার্জেস জানালো, সমাজবাদী টোলসনের অধীনে তাকে বিতর্ক করতে নিষেধ করে দিয়েছে বাবা-মা। ইতিহাস থেকে ছিটকে গেল বার্জেস। তার জায়গায় বিতর্কের মঞ্চে জায়গা করে নিল প্রথম নিগ্রো নারী বিতার্কিক সামান্থা বুক। বিতর্কের বিষয়: নিগ্রোদের উচিত স্থানীয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া।

সামান্থা সেদিন সাহসী উচ্চারণে বিপক্ষ দলের হয়ে যুক্তি দিয়েছিল। বলেছিল, স্টেট একজন সাদা বাচ্চার পড়াশোনার পেছনে কালোদের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি ব্যয় করে। কালো বাচ্চাটা তো পিছিয়ে পড়বেই। প্রতিপক্ষের ভাষ্যমতে, সাদাদের মধ্যে গিয়ে কালোরা মানসিকভাবেই অশান্তিতে থাকবে। পড়াশোনা করবে কীভাবে তাহলে? হয়তো ভবিষ্যতে কখনো হবে সেটা। তবে এখন এসব নিয়ে ভাবাটাও অর্থহীন। সামান্থা বুক স্পষ্ট ভাষায় বলেছিল,

সামান্থা ব্রুক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, কবে আসবে সেদিন? Image Source: The Great Debaters

এই ভাবনা লজ্জাজনক। যে ভবিষ্যতের কথা তারা বলছে, কবে আসবে সেদিন? ১০ বছর পরে? নাকি ১০০ বছর? না, এভাবে হয় না। ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং সাম্য আসার জন্য এভাবে পথ চেয়ে বসে থাকলে চলবে না। এসব বদলাতে হবে, এখনই।

সেই বিতর্কে জিতেছিল ওয়াইলি কলেজ। এবং এর মাধ্যমে নতুন এক ইতিহাস রচনা করেছিল তারা।

গাড়ি করে এক জায়গায় যাচ্ছিল দলের সবাই। জানতো না, জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতাটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। মাঝ রাস্তায় দেখতে পেল, এক নিগ্রোকে একদল লোক গাছে ঝুলিয়ে দিচ্ছে। লিঞ্চিং। ১৯৩০ এর দশকে আমেরিকায় এই রীতি ছিল। সাদারা বিচার-টিচারের ধার ধারতো না। আসলে বিচার তো পরে। নির্দোষ কতশত কালো মানুষকে যে কোনো কারণ ছাড়াই ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, তার কোনো হিসেব নেই। গাড়ি দেখে উন্মত্ত জনতা তেড়ে এলো। কোনোরকমে পালিয়ে প্রাণে বাঁচল ওরা। একজন মানুষকে শুধু কালো হওয়ার দোষে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে, ব্যাপারটা বাস্তবে চোখের সামনে দেখার পর মাথা ঠিক রাখা কঠিন। কতটা কঠিন, সেটা নিজে না দেখলে বোঝা সম্ভব না আসলে।

এদিকে কোচ টোলসনকে নজরবন্দী করা হয়েছে। এলাকা ছেড়ে বেরোনো নিষেধ। এই ভয়াবহ সময়ে দারুণ এক খবর পেলেন তিনি। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। হার্ভার্ড সেই চিঠির উত্তর দিয়েছে। জানিয়েছে, ওয়াইলি কলেজের সাথে বিতর্ক করতে তারা রাজি। শুরু হলো মুভির থার্ড অ্যাক্ট বা তৃতীয় পর্ব।

হেনরি লোকে দলনেতা করে তিনজনের দলটিকে হার্ভার্ডে পাঠিয়ে দিলেন। বিষয় অনুযায়ী বক্তব্য লিখেও দিয়েছেন। সাথে যাননি, পাছে আবার বিতর্কটা পণ্ড হয়। ওয়াইলি কলেজের দলটি হার্ভাডে পৌঁছেই চিটি পেল। হার্ভার্ড থেকে পাঠিয়েছে। তারা বলেছে, কোচ ওয়াইলি কলেজের বিতার্কিকদের বক্তব্য লিখে দেন বলে জানা গেছে। সেজন্য বিতর্কের বিষয় পাল্টে দেয়া হচ্ছে। নতুন বিষয়: ন্যায়বিচারের যুদ্ধে গণ-অসহযোগ একটি নৈতিক অস্ত্র। বক্তব্য গোছানোর সময়, ৪৮ ঘন্টা।

ওয়াইলি কলেজ সেই বিতর্ক করেছিল। দলনেতা হেনরি নিজে মঞ্চে না উঠে, জেমস ফার্মার জুনিয়রকে বলেছিল অংশ নিতে। জেমস ফার্মার সেদিন অসহযোগ আন্দোলনের উদাহরণ হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল সবাইকে। ১৯১৯ সালে, ডায়ারের বিরুদ্ধে ১০,০০০ মানুষ অমৃতসরে একত্র হয়েছিল। ডায়ার সৈন্যদেরকে নির্দেশ দেয় সবাইকে গুলি করে মারতে। এর প্রতিবাদে মহাত্মা গান্ধী অসযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। পুলিশ পিটিয়েও রাস্তা থেকে কাউকে সরাতে পারেনি। দেখতে দেখতে বাংলাদেশী দর্শকের মনে পড়ে যাবে আমাদের ইতিহাস।

প্রতিপক্ষের যুক্তিটাও দারুণ ছিল। আইনের কিছু মানা আর কিছু না মানাটা অন্যায়। আইন ভঙ্গকারীকে ঠেকাতে গিয়ে কত পুলিশ অফিসার যে মারা গেছে। একটা বিশ্বযুদ্ধে অত্যাচারী প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে গিয়ে গুলি ছুঁড়তে হয়েছে মানুষকে। আবারো ইতিহাস মনে পড়ে যাবে। হয়েছে তো এমন।

কিন্তু যেখানে কোনো আইন নেই? যেখানে মানুষ বিচার পায় না? অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায়? ১৯৩০ এর দশকে সাদারা শুধু কালো হওয়ার অপরাধে যাদেরকে ঝুলিয়ে দিয়েছে, তাদের অপরাধ কী? তাদের জন্যে কি বাসায় কেউ অপেক্ষা করে ছিল না? আইন যদি এর বিচার না করে, কী করতে পারি আমরা?
মুভিতে জেমস ফার্মারকে আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে শুনি,

উপায় আমাদের দুটো। এক, প্রতিবাদের জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া। দুই, অসহযোগ আন্দোলন। আপনাদের বরং প্রার্থনা করা উচিত, আমি যেন দ্বিতীয়টা বেছে নেই!

ওয়াইলি কলেজ কি সেই বিতর্কে জিতেছিল? জানতে হলে মুভিটা দেখতে হবে। তবে শুধু জানার জন্যই না, এই ব্যাপারগুলো ঠিকভাবে অনুভব করার জন্যও দেখা উচিত পুরো মুভিই। শেষটা যা-ই হোক, সেদিনের সেই বিতর্ক সারা আমেরিকায় রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তারপরও, অনেক মানুষের ভিড়ে একজন মানুষ ঠিকই উপস্থিত হয়ে গিয়েছিলেন। মেলভিন বি টোলসন। নজরবন্দী করে রাখা লোকগুলো তাকে আটকাতে পারেনি।

মেলভিন বি টোলসন; Image Source: poetryfoundation.org

মুভিতে মেলভিন বি টোলসনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ড্যানজেল ওয়াশিংটন। তিন বিতার্কিক জেমস ফার্মার জুনিয়র, হেনরি লো এবং সামান্থা বুকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন যথাক্রমে ড্যানজেল হোয়াইটেকার, নেইট পার্কার এবং জুনি স্মলেট-বেল। এবং জেমস ফার্মার সিনিয়র চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিখ্যাত অভিনেতা ফরেস্ট হেয়াইটেকার।

প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চটুকুই দেয়ার চেষ্টা করেছেন। সত্যি বলতে, গল্প এতটাই আকর্ষণীয় যে, সমালোচকের কড়া চোখে খুঁটিয়ে না দেখলে, চরিত্রগুলোকে কখন যে আপন করে নিয়েছেন, টেরই পাবেন না!

বর্তমানে বর্ণবাদ, নারী অধিকারের ইস্যু নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর একটা চল তৈরি হয়েছে হলিউডে। এর সঙ্গে জড়িত আছে পুরষ্কার ঘরে তোলার প্রশ্ন। ২০০৭ সালে এই চল ছিল না। ড্যানজেল ওয়াশিংটনের এই কাজ সে সময়ের হিসেবে যথেষ্ট সাহসী ছিল, বলা যায়। বক্স অফিসে প্রথম সপ্তাহে ১১তম স্থান দখল করেছিল চলচ্চিত্রটি। ১৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই মুভিটি সর্বমোট আয় করেছিল ৩০.২ মিলিয়ন। হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থেই দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে প্রচুর প্রশংসাও পেয়েছে দর্শক এবং সমালোচক- উভয়ের কাছ থেকেই।

চলচ্চিত্রের রঙিন রোমাঞ্চে হারিয়ে যাওয়াটা ঠিক আছে। তাই বলে বাস্তবতা ভুলে গেলে চলবে না। সত্যি সত্যি হার্ভার্ড কিন্তু ওয়াইলি কলেজের সঙ্গে বিতর্ক করতে রাজি হয়নি। বিতর্কটা ওয়াইলি কলেজ ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সঙ্গে করেছিল। তখনকার বিতর্কে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। সেসময় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করার ফলে যে দারুণ সাড়া পড়ে গিয়েছিল, তার সঙ্গে এখনকার হার্ভার্ডের তুলনা চলে। সেজন্যেই এমনটা দেখানো হয়েছে বলে দাবী করেছেন মুভিটির লেখক এবং প্রযোজকদের একজন, রবার্ট আইল। তবে এমনটা না করলেও হতো। বাস্তব ঘটনাই যথেষ্ট রোমাঞ্চকর। একে বদলে দিয়ে মুভিটির মাহাত্ম্য এমন কিছু বাড়েনি বলে মনে করেন অনেকেই।

গল্পের এখানেই শেষ নয়। বাস্তবে এই মানুষগুলো পরবর্তী যা করেছেন, তার কোনো তুলনা হয় না।

বাস্তবের তিন বিতার্কিক – হেনরিটা বেল ওয়েলস, জেমস ফার্মার জুনিয়র এবং হেনরি লো; Image Source: thewilsonacademy.org

মেলভিন বি টোলসন হয়ে উঠেছিলেন বিখ্যাত কবি। তার গড়ে তোলা সাউদার্ন টেনেন্ট ফার্মারস ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৩৬ সালের শেষে দেখা গেল তাদের সদস্য সংখ্যা একত্রিশ হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে!

সাত বছর পর, ১৯৪২ সালে, জেমস ফার্মার জুনিয়র কংগ্রেস অফ রেসিয়াল ইকুয়ালিটি প্রতিষ্ঠা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল রাইটস আন্দোলনের একজন নেতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

দীর্ঘ লেখালেখি এবং শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনে ১৯৬১ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জেমস ফার্মার সিনিয়র। তার একদিন আগে আইনজীবী হেনরিটা বেল ওয়েলস (সামান্থা ব্রুক) আলবামার উদ্দেশ্যে প্রথম ফ্রিডম রাইডে অংশ নেন।

হেনরি লো ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে পাদ্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

এই মানুষগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। মানুষের গণ-অধিকার এবং বর্ণবাদ নিয়ে তাদের কাজ বিখ্যাত হয়ে আছে। বিশেষ করে তাদের কর্মপদ্ধতি। কারণ, তারা আসলেই বিশ্বাস করতেন, আইন যদি অন্যায় দেখে চোখ বুজে থাকে, তাহলে প্রতিবাদ করা জরুরি। এবং শান্তিপূর্ণ ও যৌক্তিক অসহযোগ আন্দোলন বিশ্বটাকে বদলে দিতে পারে।

This article is in Bangla language. It is about a movie named The Great Debaters . Necessary references are hyperlinked inside.

Feature Image: knightleyemma.com

Related Articles