Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য ইনোসেন্টস (১৯৬১): হরর সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম সেরা সৃষ্টি

মিশমিশে কালো পর্দা। ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে চলেছে শোকার্ত কন্ঠের এক গান। কন্ঠটা শুনে মনে হয়, গাইছে কোনো শিশু। কিন্তু কন্ঠটি শুধু শোকার্তই নয়, কেমন যেন গা ছমছমে ভাব জাগায়। তবে ওদিকে আরো ভাবনা দেওয়ার আগেই, কালো পর্দার বৈরিতা কেটে হঠাৎ ভেসে ওঠে দুটি হাত, প্রার্থনারত ভঙ্গিতে। ধীরে ধীরে ভেসে উঠে তার মুখটিও। কন্ঠটি বলে ওঠে, “আমি যা কিছুই করতে চেয়েছি, শুধুমাত্র বাচ্চাগুলোকে বাঁচাবো বলেই করতে চেয়েছি। আমি বাচ্চাদের ভালোবাসি, যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি।” 

এমন একটি দৃশ্য দিয়েই শুরু হয় ১৯৬১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ইনোসেন্টস’ সিনেমার। প্রারম্ভিক দৃশ্য মনে হলেও পরবর্তীতে বোঝা যায়, এটি ছিল একটি ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ড দৃশ্য। এই ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ড হলো ফ্ল্যাশব্যাক টেকনিকের ঠিক বিপরীত। ফ্ল্যাশব্যাকে অতীতের ঘটনা দেখানো হয়। আর ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ডে ভবিষ্যতে কী ঘটবে তা বলা হয় বা দেখানো হয়। শুধু সিনেমাতেই নয়, সাহিত্যেও ব্যবহার করা হয় এই ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ডের।

গ্রেট হরর সিনেমা হিসেবে দ্য ইনোসেন্টস আজ চর্চিত নাম, কিন্তু যখন ট্রেলার বেরিয়েছিল, কেউ ভাবেনি অতিরঞ্জিত জাম্প স্কেয়ার আর উদ্ভট আর্তচিৎকারে ভরা অমন সাধারণ মানের ট্রেলারের ভেতরে লুকিয়ে থাকতে পারে মেরুদন্ড দিয়ে শীতল স্রোত বইয়ে দিতে পারার একটি গল্প। এই গল্প ধার করা হয়েছে লেখক হেনরি জেমসের উপন্যাসিকা দ্য টার্ন অফ দ্য স্ক্রিউ থেকে। 

বিখ্যাত সাহিত্যিক হেনরি জেমসের সেই উপন্যাসিকা; Image source: Amazon

গল্পটা এমন- অভিজাত একজন ইংরেজ, গ্রামে বাস করা তার দুই ভাতিজা-ভাতিজিকে দেখে রাখার জন্য এক গভর্নেস নিযুক্ত করেন। ভাতিজা-ভাতিজির প্রতি খুব বেশি স্নেহপরায়ণতা তার নেই। একজন গভর্নেস খুঁজে পেলেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন যেন। আগের গভর্নেস আকস্মিক এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে বলেই নতুন গভর্নেস নিযুক্ত করার ঝক্কিটা তাকে নিতে হচ্ছে। ইন্টারভিউ দিতে আসা মহিলা যখন বলে ওঠেন, বাচ্চাকাচ্চার প্রতি ভালোবাসাকে সবকিছুর উপরে তিনি স্থান দেন, তখনই একরকম নিশ্চিন্ত মনে সাতপাঁচ না ভেবে তাকেই গভর্নেস হিসেবে নিযুক্ত করেন ভদ্রলোক। গ্রামে বিশাল জমিদারি তার। বিশাল বাগান, রাজপ্রাসাদতুল্য ঘর।

এই নির্জন, বিচ্ছিন্ন, সুবিস্তৃত জমিদারিতে এসে গভর্নেস মিস গিডেন্সের প্রথম পরিচয় ঘটে সুমিষ্ট, প্রাণচঞ্চল স্বভাবের শিশু ফ্লোরার সাথে। ভাব হয়ে যায় ক্ষণিকেই। ফ্লোরার ভাই মাইলস আছে শহরের স্কুলে। ছুটি ছাড়া এদিকটা তার মাড়ানো হবে না। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ছোট্ট ফ্লোরা সেদিন বিড়বিড় করে, মাইলস আসছে। মাইলস আসছে। একমাত্র ভাই ছাড়া এ বিশাল প্রাসাদে ফ্লোরার সমবয়সী সঙ্গী তেমন কেউ নেই। তাই অকারণেই ভাইকে স্মরণ করছে ভেবে ফ্লোরার কথায় গা করেনি কেউ।

এদিকে, গভর্নেস হিসেবে নিযুক্ত হবার প্রথমদিন রাতে ঘুমের মাঝে মিস গিডেন্স ছটফট করছিলেন সারা বিছানায়। দুঃস্বপ্ন দেখার মতো। ফ্লোরা গুটি গুটি পায়ে মিস গিডেন্সের বিছানার কাছে আসে, অদ্ভুত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ঘুমন্ত গভর্নেসের দিকে। অদ্ভুতুড়ে কিছুর আভাস তো এই জমিদারিতে পা দেওয়ার পরক্ষণেই মিস গিডেন্স পেয়েছিলেন, কিন্তু ফ্লোরার এই অদ্ভুত আচরণ সেই আভাস আরো গাঢ় করলো দর্শকের মনে। তবে সেটি আরো পাকাপোক্ত হয় পরদিন, যখন মাইলসের স্কুল থেকে চিঠি আসে তাকে বরখাস্ত করার ব্যাপারে। মিস গিডেন্স অবাক হন ভারী। কড়ি মেলাতে পারছেন না যেন। মাইলস বাড়ি ফিরলে তাকে বরখাস্তের কারণ জিজ্ঞাসা করেও মিলছে না কোনো সদুত্তর। অতটুকু বাচ্চা এরা দুজনে, কিন্তু তাদের কথাবার্তায় জড়িয়ে আছে এক নিগূঢ় রহস্যময়তা।

রহস্যময় দুই বাচ্চা আর মিস গিডেন্স। এদের হাসির আড়ালেই যে এক সিনিস্টার কিছু চলছে; Image Source: IMDB

অদ্ভুত এক আতঙ্ক জন্ম নিতে থাকে মিস গিডেন্সের মনে। তা আরো গাঢ় হয় ওই টাওয়ারের উপরে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। এই সারা বাড়িতেই জড়িয়ে আছে রহস্য, গভীর আতঙ্ক। পুরোনো কাঠের মড়মড় শব্দও জানান দেয় সেটি। অদ্ভুত ফিসফিসানির শব্দ আরো গমগমে হয়ে কানে বাজে মিস গিডেন্সের। অশরীরী ছায়াগুলো আরো অধিক আকারে আসে তার সামনে। এসবের সাথে পূর্বের গভর্নেস এবং বদরাগী, দুষ্ট কর্মচারী পিটার কুইন্টের রহস্যজনক মৃত্যুর যোগ আছে বলে ভাবেন মিস গিডেন্স। ওদিকে বাচ্চা দুটির আচরণ মোটেও স্বাভাবিক নয়। তাদের অতি গোপনীয়তা ভাবায় মিস গিডেন্সকে। তিনি মনে করেন, অনেক কিছুই জানে এই বাচ্চা দুটি। সাধারণ সরলমনা শিশু তারা নয়। বাস্তব, নাকি ভয় হতে জন্মানো কল্পনা- এ নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব আর যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে ওঠেন মিস গিডেন্স। 

দ্য ইনোসেন্টস, হেনরি জেমসের উপন্যাসিকা থেকে গল্পই হয়তো ধার করেছে, কিন্তু কালোত্তীর্ণ সিনেমা হয়ে আছে স্বীয় ক্ষমতায়। তাই এমন কী আছে এই সিনেমার মাঝে, যা প্রায় ৬০ বছর পরেও মানুষকে ভয় দেখাতে বা বিস্মিত করতে পারছে সেটা আলোচনার দাবী রাখে। কারণ জঁনরা হিসেবে হরর সাবজেক্টিভ। সময় এবং চলমান ফ্যাশনের অনেকখানি ধারণ ও অনেকখানির উপর নির্ভর করে হরর সিনেমাগুলো। সেকারণেই বিশ্লেষিত হওয়ার দাবী রাখে এই সিনেমা।

হেনরি জেমসের উপন্যাসিকা থেকে ‘দ্য ইনোসেন্টস’ কতটুকু নিয়েছে বললে বলতে হয়, উপন্যাসিকার সীমারেখার গা সেঁটে ছিল সিনেমাটি। তবে চলচ্চিত্রায়িত হবার আগে পঞ্চাশের দশকে এই উপন্যাসিকা থেকে যে নাটক মঞ্চায়িত হয়েছিল, সংলাপের ক্ষেত্রে সেই নাটককেও নিগমবদ্ধ করেছে এটি। কারণ ওই নাটকের লেখক উইলিয়াম আর্চিবাল্ডই প্রাথমিক অবস্থায় এই সিনেমার চিত্রনাট্যকার ছিলেন। কিন্তু তার চিত্রনাট্যে মঞ্চের ভাবটা প্রকট থাকায় সিনেমার পরিচালক জ্যাক ক্লেটন চিত্রনাট্য পুনরায় লেখার দায়িত্ব দেন বরেণ্য লেখক ট্রুম্যান কাপোতিকে। এবং কাপোতির হাত ধরেই তৈরি হয় এই অসামান্য চিত্রনাট্য।

ভয় তখন ক্রমশ বাড়ছে; Image Source: IMDB

তা কেন এই চিত্রনাট্য অসামান্য, এমন প্রশ্নের জবাবে উপন্যাসিকার কথাই আবার টেনে আনতে হয়। উপন্যাসিকাটির মূল চমৎকারিত্বের জায়গা ছিল এর অস্পষ্টতা বা দ্ব্যর্থবোধকতায়। একটা সহজাত অস্পষ্টতা মিশে ছিল গোটা উপন্যাসিকায়। সেই অস্পষ্টতাকে এই চিত্রনাট্যে সংরক্ষণের পাশাপাশি আরো পরিবর্ধনের কাজও করেন কাপোতি। এবং এই জায়গাতেই দ্য ইনোসেন্টস তার নিজস্ব ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ফেলে। কাপোতি, জেমসের গল্পকে সংরক্ষণের খাতিরে একেবারে নতুন কোনো দিকে পরিচালিত না করলেও পরিবর্ধনের অর্থেই কিছু পরিবর্তন এই চিত্রনাট্যে এনেছেন।

উপন্যাসিকায় যেখানে দ্বিতীয় অংকে যাওয়ার আগ অব্দি ফ্লোরা চরিত্রের কোনো সংলাপ ছিল না, সেখানে সিনেমায় চরিত্রটির পর্দায় উপস্থিতির প্রথম মুহূর্ত থেকেই ভরপুর সংলাপ ছিল। আবার উপন্যাসিকায় মাইলসকে স্বাভাবিকভাবেই ছুটি কাটাতে আসতে দেখা যায়, যেখানে সিনেমায় দেখানো হয়, ফ্লোরা ব্যাপারটি আগে থেকে জানতে পারে এবং মাইলস বরখাস্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। চিত্রনাট্যে কাপোতির স্বল্প কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত এই পরিবর্তনেই খুব সূক্ষ্মভাবে দু-দুটো রহস্যময় কোণ তৈরি হয়ে যায়। 

আবার; জেমসের গল্পে সবকিছু বাস্তব নাকি গভর্নেসের অবচেতন মনের কল্পনা সেই দ্ব্যর্থকতা সিনেমায় আরো সূচারু হয়ে ওঠে। কারণ সিনেমায় এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো বাচ্চা দুটোকে জেমসের গল্পের চেয়ে আরো বেশি রহস্যময় করে তোলে এবং আসলেই এই বাচ্চা দুটো সবকিছুর মূলে কিনা- সেই প্রশ্ন উত্থাপন করে। এরই পিঠে জেমসের গল্পে মাইলস এবং গভর্নেসের মাঝে আকর্ষণের সূক্ষ্ম যে ইংগিত ছিল, ফ্রয়েডিয়ান তত্ত্বের ছোঁয়া যেটিতে পাওয়া যায়, তা সিনেমায় আরো বেশি শারীরিক এবং স্পর্শনীয় হয়ে উঠেছে, যার কারণে মিস গিডেন্সের মনস্তত্ত্ব নিয়ে সন্দেহের অবকাশ জাগানোর পাশাপাশি একটা পরাবাস্তব আবহও তৈরি করে দেয়।

মাইলস আর মিস গিডেন্স। যৌন আকর্ষণ নিয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ফ্রয়েডিয়ান তত্ত্বের অবতারণা ঘটার সিনগুলোর একটি;
Image Source: IMDB

সিনেমায় একদম প্রারম্ভিক দৃশ্য থেকেই গভর্নেস চরিত্রে বিভ্রমের কোণ যুক্ত করা হয়, যে কারণে চরিত্রটি প্রগাঢ়তা পাওয়ার পাশাপাশি অস্পষ্টও হয়ে ওঠে দর্শকের নিকট। গল্পে অশরীরী ছায়াগুলো সবসময় আশেপাশে উপস্থিত থাকতে দেখা গেলেও, সিনেমায় দেখা যায় তারা হুটহাট এসে পড়ে না। একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে থাকে। চিত্রনাট্যে কাপোতির এই পরিবর্তনে গভর্নেস চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব এবং ভঙ্গুর প্রকৃতি আরো পরিষ্কার হয়ে ওঠে। পাশাপাশি, যৌন অবদমন, বাইরের দুনিয়া থেকে শিশুদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হলে তাদের মনস্তত্ত্ব এবং আচরণে কেমন পরিবর্তন আসতে পারে সেসব নিয়েও সূক্ষ্ম তল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চিত্রনাট্যে। 

হেনরি জেমস, তার গল্পে শক্ত ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা এবং অস্পষ্টতা ধরে রাখার জন্য মিজ-অঁ-অ্যাবিম টেকনিকের ব্যবহার করেছিলেন। চলচ্চিত্র কিংবা সাহিত্যের আঙ্গিকে, সহজ কথায় এই মিজ-অঁ-অ্যাবিম হলো গল্পের ভেতরে গল্প। মানে একটি গল্পের ভেতর দিয়ে আরেকটি গল্প বলা। কিন্তু সিনেমার চিত্রনাট্যে দেখা যায়, অমন ন্যারেটিভ বা বয়ানভঙ্গী এবং বয়ানকারী দুটোই অনুপস্থিত। কাপোতি বরং এক্ষেত্রে একটা পুরনো পদ্ধতির ব্যবহার করেছেন। সেটি হলো অমনিসিয়েন্ট বা সর্বদর্শী ন্যারেটর। মিস গিডেন্সকে তিনি উপস্থিত রেখেছেন প্রতিটি দৃশ্যে। সাধারণ অর্থে তৃতীয় ব্যক্তি এখানে না থাকলেও ধরনটা তেমনই। ফলে দ্ব্যর্থকতা সিনেমায় আরো বেশি অনুভূত হয়, জেমসের গল্পের তুলনায়।

অস্পষ্টতা বা দ্ব্যর্থকতাকে যে শৈল্পিক মাত্রা জেমস তার উপন্যাসিকায় দিয়েছিলেন, সে শৈল্পিক মাত্রা সিনেমায় আরো বেশি দৃষ্টিগোচর এবং বোধগম্য হয়েছে। অস্পষ্টতা মানেই কিছু প্রকাশ না করে দর্শককে আঁধারে রাখা নয়। সুস্পষ্টভাবে একাধিক কোণ এবং সম্ভাবনা প্রকাশ করে দর্শককে দ্বন্দ্বে রাখাটাই অস্পষ্টতা। তেমনটি করতে পেরেই স্বকীয় হয়ে উঠতে পেরেছে দ্য ইনোসেন্টস। কাপোতির অমন মহৎ চিত্রনাট্যটি এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা তো রেখেছেই, তবে সফলতার মূল জায়গাটি হলো যখন তা ক্যামেরার ভাষায় যথাযথভাবে অনূদিত হলো। 

চিত্রনাট্য, সে তো কাগজে-কলমে। চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষায় যথাযথভাবে অনূদিত না হতে পারলে তার মাহাত্ম্য ঢাকা পড়ে যায়। আর সেদিক থেকে দ্য ইনোসেন্টস হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। জেমসের গল্পের মতোই দ্য ইনোসেন্টস যতখানি না ভীতিকর তার চেয়ে অনেক বেশি চিন্তাউদ্রেককারী। জেমসের বলিষ্ঠ, ছন্দময় গদ্যগুলোকে অনিশ্চয়তায় ভরা অন্ধকারাচ্ছন্ন ইমেজারিতে রূপান্তর করেছেন পরিচালক জ্যাক ক্লেটন। সিনেমাটোগ্রাফার ফ্রেডি ফ্রান্সিসকে সাথে নিয়ে ওয়াইডস্ক্রিন পেতে সিনেমাস্কোপ লেন্সে গোটা সিনেমা ধারণ করেন ক্লেটন। এই ধরনের চেম্বার ড্রামা সিনেমায় সিনেমাস্কোপ ব্যবহার করে কাজ করাটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল সেকালে। কারণ ওয়াইড স্ক্রিন যেহেতু, অনেকখানি ফাঁকা জায়গা পর্দায় থাকতো।

আর হরর সিনেমায় ভীতিকর জগতের আবহ সৃষ্টি করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তাই আবহ তৈরিতে পর্দার সবটুকুতেই ভয়ের যথাযথ উপাদান রাখার দিকে নজর দিতে হয়। এবং সেক্ষেত্রে জ্যাক ক্লেটন আর তার সিনেমাটোগ্রাফার এই সিনেমাস্কোপ লেন্স ব্যবহার করে যে জগত তৈরি করেছেন তা অনন্য। অন্ধকারাচ্ছন্ন একেকটা ইমেজারিতে দ্য ইনোসেন্টসের মূল চরিত্র মিস গিডেন্স যেভাবে পাগলামির দিকে ধাবিত হন এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন, তা বিখ্যাত পরিচালক স্ট্যানলি কুব্রিকের দ্য শাইনিংয়ের কথা মনে করায়। আর ডেবোরাহ্ কারের সূক্ষ্ম অভিনয় আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে চরিত্রটির প্রতিটি পদক্ষেপ।

সম্মোহনী ডিজলভের একটা উদাহারণ Image Source: IMDB

সময় যত গড়াতে থাকে, দ্য ইনোসেন্টসের ইমেজারিগুলো ততই অসমতার সৃষ্টি করতে থাকে। ক্লোজ আপ শটে মিস গিডেন্সের আতঙ্কিত প্রকৃতি আরো স্পর্শনীয় হয়ে ওঠে। আবার ডাচ অ্যাঙ্গেলে মিস গিডেন্সের পুরো মানসিক জগতই ধসে যাওয়ার দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। সিনেমাস্কোপের এই গোটা ওয়াইড স্ক্রিনই মিস গিডেন্সের ভেতরকার ভয়ার্ত অবস্থার প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়ায়। এবং সেকারণেই গোটা পরিবেশ হয়ে ওঠে ক্লস্ট্রোফোবিক। সিনেমাস্কোপ কাজে লাগিয়ে ডীপ ফোকাসের অসামান্য ব্যবহার দেখিয়েছেন ফ্রেডি ফ্রান্সেস, যিনি নিজেও পরবর্তীতে বেশ কিছু হরর সিনেমা পরিচালনা করেছেন। তবে এই সিনেমাতেই প্রতিষ্ঠা করেছেন তার নিজস্ব ধারা। সাথে ডিজলভ প্রক্রিয়ার বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার দিয়েছে খাঁটি সিনেম্যাটিক অনুভূতি। খুব স্বল্প আলোতে তৈরি এই ক্লস্ট্রোফোবিক জগত স্বকীয় সর্বার্থেই। তবে, সেই জগত তৈরিতে জর্জেস অরিক ও ড্যাফন্ ওরামের ইলেক্ট্রনিক মিউজিকও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ন্যাচারাল সাউন্ডের সাথে ইলেক্ট্রনিক কর্ডের অনিয়ত মিশ্রণ গোটা পরিবেশে আরো বিচলিত ভাব জাগিয়েছে। 

দ্য ইনোসেন্টস কোনো আত্মারাম খাঁচা ছাড়া করার মতো হরর সিনেমা নয়, তেমন হতেও চায়নি। শরীরে রক্তের শীতল স্রোত জাগানোর মতো অভিজ্ঞতা দিতে চেয়েছে, এবং দিয়েছে। জেমসের গল্পের মতোই হুট করে সমাপ্তি ঘটে সিনেমারও। বিক্ষিপ্ত ভঙ্গীতে। অস্পষ্টতাকে ধরে রেখে দর্শকদের মনে অনেক অনেক প্রশ্ন, সন্দেহ আর সম্ভাব্যতার সুযোগ রেখেই ইতি ঘটে সিনেমার। আর নিদর্শন রেখে যায় প্রলেপিত গল্পে গ্রেট ফিল্মমেকিংয়ের, যে ধারায় হরর জঁনরা পেয়েছে ‘রোজমেরি’স বেবি’, ‘দ্য এক্সরসিস্ট’-এর মতো সকল গ্রেট সিনেমা।

সংযুক্তি: টাইম আউট ম্যাগাজিন এই সিনেমাকে শ্রেষ্ঠ ১০০ সিনেমার মধ্যে ১৮ নাম্বারে অবস্থান দিয়েছে। মার্টিন স্করসেজির ১১টি পছন্দের সিনেমার মধ্যে এটি একটি। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা শ্রেষ্ঠ ১০০ সিনেমার মধ্যে একে অবস্থান দিয়েছে ১১-তে।

This Bengali article is a detailed analysis of the great film 'The Innocents' (1961). It's regarded as a CLASSIC! One of the greatest horror films of all time, as Martin Scorsese said!

Feature Image- The Guardian

Related Articles