Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য পার্কস অব বিং আ ওয়ালফ্লাওয়ার: কৈশোরকালের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় যে সিনেমা

“আমার মাধ্যমিক স্কুলের প্রথম দিনের একমাত্র বন্ধু যদি হন ক্লাসের ইংরেজির শিক্ষক, তাহলে সেটা হবে আমার জন্য খুবই হতাশার।”

উক্তিটি ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য পার্কস অব বিং আ ওয়ালফ্লাওয়ার সিনেমার প্রোটাগনিস্ট চরিত্র চার্লির। এটি মাধ্যমিক স্কুলের প্রথম দিনে তার ইংরেজির শিক্ষকের উদ্দেশ্য বলা। এটি নির্দেশ করে চার্লি এক অন্তর্মুখী টিনেজার, যে সহজে অন্যদের সাথে মিশতে পারে না বা বন্ধুত্ব করতে পারে না। 

দ্য পার্কস অব বিং আ ওয়ালফ্লাওয়ার সিনেমার পোস্টার; Image Source: Summit Entertainment

ওয়ালফ্লাওয়ার হচ্ছে দক্ষিণ-ইউরোপীয় এক ধরনের ফুল গাছ, যাতে বিভিন্ন রঙের ফুল বসন্তের শুরুতে ফোটে। ওয়ালফ্লাওয়ার দিয়ে আসলে অন্তর্মুখী ব্যক্তিদের বোঝায়, যারা কখনো আলোচনা বা আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে না। তাদের অস্তিত্ব নিয়ে আশেপাশের লোকজন খুব একটা মাথা ঘামায় না। কোনো অনুষ্ঠানে তারা নিজেদের একপাশে গুঁটিয়ে রাখে। নিজে থেকে এগিয়ে কথা বলতে লজ্জা পায়। পছন্দের মানুষকে দূর থেকে দেখেই যায়, ভালো লাগার কথা বলতে পারে না কখনো। এই সিনেমায় চার্লি এমনই এক নিঃসঙ্গ চরিত্র।

সিনেমার একটি দৃশ্য; Summit Entertainment

সিনেমার কাহিনী মূলত চার্লির এক বন্ধুর কাছে চিঠিতে লেখা তার মাধ্যমিক স্কুলের সময়ের গল্পগুলো নিয়ে। যদিও সেই বন্ধুটি কে তা সিনেমায় উল্লেখ করা হয়নি। হয়তো দর্শকদের উদ্দেশ্য করেই লিখেছে। সিনেমার গল্প শুরু হয় নব্বই দশকের শুরুর দিকের সময়ে মাধ্যমিক স্কুলে চার্লির প্রথম দিন দিয়ে। এর আগের সময়টায় সে মানসিক অবসাদে ভুগছিল। এর কারণ হতে পারে তার শৈশবের সবচেয়ে কাছের মানুষ আন্ট হেলেনের গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া। সেই দুর্ঘটনার জন্য চার্লি নিজেকে দায়ী মনে করে। তার কাছে মনে হয় সে আসলে তার আন্ট হেলেনকে খুন করেছে। এছাড়া একমাত্র কাছের বন্ধু মাইকেলের আত্মহত্যাও আরেকটা কারণ। তবে এগুলোর সাথে আরো কিছু কারণ ছিল।

প্রথম দিন স্কুল গিয়ে চার্লি মনে করে তার নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারবে। কিন্তু এখানেও তার অবস্থার পরিবর্তন হয় না। স্কুলের ক্যান্টিনে খাওয়ার সময় কোনো বন্ধু না পেয়ে ভাবে তার বড় বোন ও বোনের বয়ফ্রেন্ডের  সাথে খেতে বসবে। কিন্তু তার বোনও এটা সিনিয়রদের জায়গা বলে সরিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত তাকে একাই খেতে হয়।

ক্লাসেও সে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। এমনকি যে প্রশ্নের উত্তর ক্লাসের অন্য সবাই ভুল উত্তর দিচ্ছে, সেটা জানা সত্ত্বেও উত্তর দেয় না। তার ইংরেজি শিক্ষক সেটা খেয়াল করেন। এরপর সেই শিক্ষকের সাথে তার ভালো সম্পর্ক হয়। কিন্তু একজন টিনেজারের সমবয়সী কোনো বন্ধু না থাকা খুবই কষ্টের ব্যাপার। তখনই সে শুরুর উক্তিটি করে।

একসময় চার্লির পরিচয় হয় প্যাট্রিক আর স্যাম নামের দুই সিনিয়র সৎ ভাই-বোনের সাথে। তারা চার্লির সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন পার্টিতে নাচগান করে, গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হয়, মাদকের নেশার জগতে তলিয়ে যায়। প্যাট্রিক এক্সট্রোভার্ট প্রকৃতির হলেও ক্লাসমেটদের কাছ থেকে অনেক বুলির শিকার হয়। তাকে সবাই ‘নাথিং’ বলে ডাকে। কিন্তু চার্লি তাকে ‘প্যাট্রিক’ বলেই ডাকে। তখন তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তখন স্যামের সাথেও পরিচয় হয় চার্লির। স্যাম আর প্যাট্রিক একসময় বুঝতে পারে, তারা ছাড়া চার্লির আর কোনো বন্ধু নেই। তখন তারা আরো বেশি ঘনিষ্ট হয় চার্লির সাথে। 

এমা ওয়াটসন ও লোগান লারম্যানের অভিনয় সিনেমাটিকে করেছে অনবদ্য; Image Source: Rotten Tomatoes 

তাদের সাথে ধীরে ধীরে নিজের গণ্ডি থেকে বের হতে শুরু করে চার্লি। নতুন এক জগৎ দেখতে শুরু করে। তারা তাকে ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতি থেকে বের হতে সাহায্য করে। ধীরে ধীরে স্যামের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে চার্লি। তার পছন্দের গানের লিস্ট বানিয়ে উপহার দেয়, তার পড়াশোনায় সাহায্য করে। কিন্তু তাকে নিজের ভালোবাসার ব্যাপারে কিছু বলতে পারে না। কারণ স্যামের বয়ফ্রেন্ড আছে। একসময় স্যাম আর প্যাট্রিকের সাথে চার্লির দূরত্ব সৃষ্টি হয়।

সিনেমায় টিনেজ বয়সের আবেগ, হতাশা, শৈশবের দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে বেড়ানো খুব সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। এই বয়সে কোনো গান বা বই পছন্দ হলে সেটা ভালো প্রভাব ফেলে। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে সেটাও বাজেভাবে প্রভাব ফেলে। সেই বাজে অবস্থা কাটিয়ে উঠতে বন্ধুবান্ধব যে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, তা চার্লিকে দেখলে বোঝা যায়। সে যখন স্যাম আর প্যাট্রিকের সাথে থাকে, শৈশবের দুঃসহ স্মৃতি থেকেও দূরে থাকে। কিন্তু তাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হলে আবার সেগুলো তাড়া করে বেড়ায়।  

একপাক্ষিক ভালোবাসা নিয়েও দারুণ দর্শন ফুটে উঠেছে এই সিনেমায়। চার্লির কাছে মনে হয় স্যাম যাকে পছন্দ করে, তার চেয়ে আরো ভালো কাউকে পেতে পারে। সে তার ইংরেজি শিক্ষককে প্রশ্ন করে, চমৎকার মানুষরা কেন সঙ্গী হিসাবে ভুল মানুষদের বেছে নেয়। তখন তার শিক্ষক বলেন, আমরা আসলে যে ভালোবাসা আমাদের প্রাপ্য মনে করি, তা-ই গ্রহণ করি। কখনো কখনো আমাদের যে এর চেয়ে বেশি প্রাপ্য, তা হয়তো বুঝতে পারি না।  

সিনেমায় সামাজিক বুলিং আর যৌন হয়রানি নিয়েও দারুণ বার্তা দেওয়া হয়েছে। মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসার দিকটাও দেখানো হয়েছে। সব মিলিয়ে এটা একটা টিনেজ সময়কালের ওপর নির্মিত বিশুদ্ধ সিনেমা। তবে এতে মাদকদ্রব্য সেবন কিছুটা মহিমান্বিত করার চেষ্টা ছিল মনে হয়েছে।

দারুণ এই টিনেজ ড্রামা সিনেমাটি ১৯৯৯ সালের একই নামের বেস্টসেলার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। মূল বইয়ের লেখক স্টিফেন চোবস্কি নিজেই এই সিনেমা চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি পরিচালনাও করেছেন। এটা খুবই বিরল ঘটনা। নিজের লেখা বই দেখেই হয়তো পরিচালনায় আরো বেশি আন্তরিকতার ছাপ ছিল।

সিনেমাটোগ্রাফি আর সাউন্ডট্র্যাকগুলোও ছিল দারুণ। বিশেষ করে চার্লি, প্যাট্রিক আর স্যামের গাড়িতে করে টানেলের রাস্তার দৃশ্যটা ছিল দৃষ্টিনন্দন অভিজ্ঞতা। চার্লি চরিত্রে দারুণ কাজ করেছেন পার্সি জ্যাকসন খ্যাত লোগান লারম্যান। অন্তর্মুখী চরিত্রের সাথে সুন্দরভাবে মিশে যেতে পেরেছেন তিনি। স্যাম চরিত্রে হ্যারি পটার খ্যাত এমা ওয়াটসনও যথারীতি পর্দায় নিজের শক্তিশালী উপস্থাপন বজায় রেখেছেন। 

প্যাট্রিক চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন এজরা মিলার; Image Source: Rotten Tomatoes 

তবে তাদের চেয়েও প্যাট্রিক চরিত্রে কাজ করা অ্যাজরা মিলারের অভিনয়ই বেশি প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে অ্যাজরা মিলারের প্রাথমিক অডিশন নেওয়া হয় স্কাইপে। সেখানে তিনি এতই ভালো পারফরম্যান্স দেখান যে, নির্মাতারা মাত্র পাঁচ ঘণ্টাতেই তাকে নির্বাচন করে ফেলেন প্যাট্রিক চরিত্রের জন্য। সম্প্রতি ডিসি কমিকসের ফ্ল্যাশ চরিত্রেও কাজ করছেন তিনি। স্বল্প সময়ের জন্য পর্দায় ছিলেন অ্যান্ট ম্যান খ্যাত পল রাডও।

২০১২ সালের এই সিনেমাটি সমালোচক ও সাধারণ দর্শক উভয় শ্রেণিই খুব পছন্দ করেছেন। যার প্রতিফলন পাওয়া যায় আইএমডিবি আর রোটেন টমেটোসে। আইএমডিবিতে প্রায় সাড়ে চার লাখ ভোটে দ্য পার্কস অব বিং আ ওয়ালফ্লাওয়ারের রেটিং ৮.০। রোটেন টমেটোজে ৮৬% ফ্রেশ। টিনেজ সময়ের আনন্দ-দুঃখের স্মৃতি মনে করার জন্য উপযুক্ত একটি সিনেমা এটি।

অনলাইনে কিনতে ভিজিট করতে পারেন এখানে- The Perks Of Being A Wallflower

This is a Bengali article written about the film The Perks of Being a Wallflower which was released in the year 2012. Necessary references are hyperlinked in the article. 

Featured Image: Summit Entertainment 

Related Articles