Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য পাওয়ার অফ দ্য ডগ: পুরুষত্ব, কর্তৃত্ব আর প্রতিশোধের গল্প

পোর্ট্রেইট অফ আ লেডি (১৯৯৬), পিয়ানো (১৯৯৩), বা ব্রাইট স্টার (২০০৯); নারীদের জটিল ব্যক্তিগত জীবনের গল্প বলায় কিউই ফিল্মমেকার জেন ক্যাম্পিয়নের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু প্রায় ১ যুগ বিরতির পর পরিচালকের চেয়ারে বসে তিনি সাঁতরাতে চাইলেন ভিন্ন স্রোতে। সিনেমার বিষয় হিসেবে বেছে নিলেন পুরুষদের, বা পুরুষত্বের জটিলতাকে। নির্মাণ করলেন ওয়েস্টার্ন ঘরানার দ্য পাওয়ার অফ দ্য ডগ (২০২১)। তাই বলা যায় নিজের প্রত্যাবর্তনে কমফোর্ট জোনের বাইরে গেলেন জেন। আবার সিনেমার মনোযোগী দর্শকমাত্রই এটা উপলব্ধি করতে পারেন যে, ওয়েস্টার্ন ধারার রমরমা অবস্থা এখন আর নেই। নিজের প্রজেক্টে এই জনরায় যুগান্তকারী কিছু করার অভিপ্রায়ও ছিল না পরিচালকের। তথাপি পুরষ্কারের এই মৌসুমে সর্বত্র দ্য পাওয়ার অফ দ্য ডগের জয়জয়কার। 

পরিচালক জেন ক্যাম্পিয়ন; Image Courtesy : hollywoodreporter.com

বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক কাহিনী সংক্ষেপ। কাহিনীর প্রেক্ষাপট ১৯২৫ সালের মন্টানা, যেখানে ফিল এবং জর্জ নামে দুই বারব্যাংক ভাই একটি লাভজনক র‍্যাঞ্চ বা পশু খামারের মালিক। সহোদর হলেও আচার-আচরণের দিক থেকে দুই ভাই যেন দুই মেরুর। জর্জ বারব্যাংক (জেসে প্লেমন্স) ভদ্র এবং শান্তশিষ্ট। তার পোশাক-পরিচ্ছদে থাকে আভিজাত্যের ছোঁয়া। নিজের বৃদ্ধ পিতামাতার মত সমাজে উচ্চ স্তরের বাসিন্দা হতে চায় সে, চায় নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি।

অন্যদিকে তার ভাই ফিল বারব্যাংক (বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ) সুশিক্ষিত, ক্যারিশম্যাটিক হলেও অনেকটা বন্য প্রকৃতির। বুলি বা নিপীড়কের সকল বৈশিষ্ট্য তার ভেতরে সমভাবে উপস্থিত। আপন ভাইকে সে ডাকে ‘ফ্যাটসো’ নামে, নিজের কর্মচারীদেরকেও সে উৎসাহিত করে তার সাথে নিপীড়নে যোগ দিতে। র‍্যাঞ্চ চালাতে জর্জের তার উপর নির্ভরতা তাকে দেয় প্রবল সুখ। কিন্তু ফিল নিজেই আসলে তার ভাইয়ের উপর নির্ভরশীল। গুরু ‘ব্রঙ্কো’ হেনরির স্মৃতিও তার মনে সর্বক্ষণ দোলা দিয়ে যায়, পুঁথিগত বিদ্যা ছেড়ে যার শিক্ষাকে সে আঁকড়ে ধরেছে জীবনের পাথেয় হিসেবে। প্রাপ্ত বয়ষ্ক এই দুই পুরুষ ঘুমান একই রুমে।

নিজেদের কাজে একবার শহরে গেলে জর্জ রোজ (ক্রিস্টেন ডানস্ট) নামক এক ক্যাফে মালকিন বিধবার প্রেমে পড়ে এবং তাকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে আসে। এ ব্যাপারটি ফিলকে ক্রোধান্বিত করে এবং সে রোজকে নিজের শত্রু বলে গণ্য করে। তার ক্রূরতা রোজের কৈশোরে পা দেখা ছেলে পিটারের (কোডি-স্মিট ম্যাকফি) ক্ষেত্রেও সমানভাবে ক্রিয়াশীল। ফিল কর্তৃক নিজেদের ক্যাফেতে মা ও ছেলেকে একবার অপদস্ত হয়। এরপর বারব্যাংকদের র‍্যাঞ্চে রোজের আগমনের পর কী ঘটে তাই নিয়ে এগিয়ে চলে মুভির প্লট, ধীরে ধীরে আভাস দেওয়া হয় নানা অজানা বিষয় সম্পর্কে। 

ফিল বারব্যাংক চরিত্রে বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ; Image Courtesy : buzzmag.co.uk

থমাস স্যাভেজের ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে দ্য পাওয়ার অফ দ্য ডগের চিত্রনাট্য লিখেছেন জেন ক্যাম্পিয়ন নিজেই। উনবিংশ শতকের গল্প বলা তার জন্য নতুন কিছু না। ১৯২৫ সালের মন্টানাকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন নিজ দেশের ওটাগোতে। মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করলে দর্শক দেখবেন সিনেমায় মোট পাঁচটি চ্যাপ্টার রয়েছে। প্রথম দেখায় এই চ্যাপ্টারগুলোকে গল্পের আবর্তনে তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় না। কেননা, এক চ্যাপ্টার থেকে অন্য চ্যাপ্টারে গেলে মুভির দৃষ্টিভঙ্গি, লোকেশন বা গল্পের খুব একটা পরিবর্তন হয় না। এসবের ক্ষেত্রে জেনের অ্যাপ্রোচ সিনেম্যাটিক নয়, বরং অনেকটা যেন নভেলিস্টিক। পরিচালকের নভেলিস্টিক অ্যাপ্রোচে এই চ্যাপ্টারসমূহ ব্যবহৃত হয়েছে কেন্দ্রীয় চরিত্রের সাথে সহযোগী চরিত্রদের সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশে। কোনো একটি চ্যাপ্টারে ফিলের সাথে অন্য একটি চরিত্রের দ্বন্দ্ব বা টানাপোড়নের উৎপত্তি হয়। পরবর্তী কোন চ্যাপ্টারে গিয়ে আমরা দেখি সময়ের সাথে সেই দ্বন্দ্ব কীভাবে এখনো তাদের মিথস্ক্রিয়ায় প্রভাব ফেলছে।

এই সিনেমা বিষয়ক যেকোনো আলাপে বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচের অভিনয়ের ব্যাপারটি অবশ্যই উঠে আসবে। ওয়েস্টার্ন ঘরানার কোনো সিনেমায় তার নাম হয়তো কাস্টিং ডিরেক্টরের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করে না। কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে যা যা করা দরকার তার সবটাই তিনি করেছেন সফলতার সাথে। নিজের পৌরুষ নিয়ে সংকটে থাকা একটি চরিত্রকে মূর্ত করে তুলেছেন তিনি; যে চরিত্রটি ফিল্মের বেশিরভাগ অংশজুড়ে ডুবে থাকে কলুষতায়। নিজেকে দলের ভেতর সবচেয়ে রাফ অ্যান্ড টাফ ব্যক্তি প্রমাণের এক অনিবারণীয় ক্ষুধা তার মধ্যে সর্বদা বিরাজমান। এই ক্ষুধা সে চরিতার্থ করে অপরের উদ্দেশ্যে তির্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়ে এবং কর্তৃপক্ষের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে।

পাহাড়ি কনকনে বাতাসের মতো শীতল ফিলের চোখ, মুখের পাথুরে অবয়ব দেখে আন্দাজ করা যায় না ভেতরে কী চলছে। আর মুখ নিঃসৃত শব্দ যেন সাপের বিষদাঁতের মতোই বিষাক্ত। বেনেডিক্ট অভিনীত আগের বিচিত্র এবং চিত্তাকর্ষক চরিত্রদের কথা ভুলে যান। এখানে তিনি কুণ্ডলী পাঁকিয়ে বসে আছেন শিকারের অপেক্ষায়। পুরো মুভিতে তার হাঁটাচলা করেন খাপখোলা তলোয়ারের ন্যায়, আর কেউ খুব বেশি কাছে চলে এলে তাকে করে দেন ক্ষতবিক্ষত। দ্য হবিটের স্মগ বা স্টার ট্রেক: ইনটু ডার্কনেসের খান নুনিয়েন সিংয়ের চেয়েও করাল রূপে এখানে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। ফিলের মনোভাব কেমন তা বুঝতে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে করা এই একটি উক্তিই যথেষ্ট,

“I stink and I like it.”

ম্যারির সাথে জর্জ; Image Courtesy: cbsnews.com

দুই ভাইয়ের কথোপকথনে আমরা রোমান মিথোলজির রোমুলাস এবং রেমাস নামক দুই জমজ ভাইয়ের কাহিনীর উল্লেখ পাই। পুরাণ মতে, পিতামাতা পরিত্যক্ত এই দুই জমজকে খুঁজে পেয়েছিল এক নেকড়ে। পরে তাদেরকে লালন-পালন করেন একজন মেষপালক। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তারা দুজন একটি শহরের গোড়াপত্তন করে। স্থান হিসেবে তারা নির্বাচন করে ঐ জায়গাকে, যেখানে নেকড়ে তাদের খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু শহরের নামকরণ নিয়ে তাদের ভেতর গোলযোগ সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে রোমুলাস রেমাসকে খুন করে এবং শহরের নাম দেয় রোম।

রেমাস আর রোমুলাসের গল্পটি নিছক রূপকথা হলেও জর্জের প্রতি ফিলের আচরণ রেমাসের প্রতি রোমুলাসের আচরণের মতো। যা পরে তার স্ত্রী রোজ এবং রোজের ছেলে পিটারের প্রতিও ব্যপ্ত হয়। তবে একটা সময় পিটারের সাথে তার সম্পর্ক বদলে যায়। আর আমরা ফিলের দুর্বল দিকের সাথে পরিচিত হই। জানতে পারি হেনরির সাথে তার সম্পর্কের স্বরূপ। 

পিটাররূপী কোডি-স্মিট-ম্যাকফি; Image Courtesy: latimes.com

চিত্রনাট্য সাজাতে গিয়ে জেন মূল উপন্যাসের মতো করে চরিত্রদের ব্যাকস্টোরি দেখাননি। এক্ষেত্রে তিনি নির্ভর করেছেন সিনেম্যাটোগ্রাফার অ্যারাই ওয়েগনারের উপর। তারা দুজনে মিলে ক্যারেক্টার স্টাডি রচনা করেছেন ক্লোজ-আপ শটের মাধ্যমে। চরিত্রদের আচার-আচরণের মাধ্যমেই তাদের ব্যাকস্টোরি বুঝে নিতে হবে দর্শককে। চরিত্রদের ব্যাকস্টোরি আমাদের সামনে উন্মোচিত হয় ফিলের আচরণের ফলে রোজ কী করে তার মাধ্যমে, কষ্ট পাচ্ছে এমন সময়ে পিটারের হিমশীতল চাহনিতে অথবা ফিলের সামনে বেচারা জর্জের মেঝের দিকে তাকিয়ে থাকার মাধ্যমে।

এই কৌশল আগেও ব্যবহার করেছেন জেন। এ ব্যাপারে তার পারঙ্গমতা ফুটে উঠে রোজের আগমনে ফিলের ক্রোধান্বিত হওয়ায়। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, রিয়্যাকশন, চোখ রাঙ্গানো এবং বাঁকা হাসির মাধ্যমে কাম্বারব্যাচ ফুটিয়ে তোলেন ঐসব অভিব্যক্তি; যা থাকে অব্যক্ত। বাকি শিল্পীরাও কম যান না। ডানস্ট, প্লেমন্স, ম্যাকফি সকলেই অস্কারে মনোনীত হয়েছেন সহযোগী শিল্পীর ক্যাটাগরিতে। খুব কম স্ক্রিনটাইম পাওয়া থমাসিন ম্যাকেঞ্জি বা জেনেভিয়েভ লেমনও নিজেদের অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। পাশাপাশি বুনো পশ্চিমের বনানী, পাহাড়, তৃণভূমি, তুষার আর খোলা প্রান্তরের অনিন্দ্য সৌন্দর্যও নিজের ক্যামেরায় বন্দী করেছেন ওয়েগনার।

সিনেমার চরিত্রদের মাঝে কর্তৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েনকে জেন ক্যাম্পিয়নের সিগনেচার বলা চলে। কার হাতে কর্তৃত্বের ব্যাটন আছে, তা কীভাবে হারায় এবং এটি ফিরে পাওয়ার জন্য ঐ চরিত্র কী করে; এসব ব্যাপার তার পরিচালনায় বার বার ঘুরেফিরে এসেছে। দ্য পাওয়ার অফ দ্য ডগেও আমরা এই থিমটি অবলোকন করি। পরিবারে রোজের আগমনকে ফিল দেখে নিজের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। কারণ রোজ ঐ যৌনতার প্রতিনিধিত্ব করে, যার বিন্দু পরিমাণ আকাঙ্ক্ষা তার মাঝে নেই। আবার এটি এমন একটি চরিত্র যাকে ফিল কব্জা করতে পারবে না। ফলে উভয়ের মাঝে এক শীতল যুদ্ধাবহ সৃষ্টি হয়। এই পরিবেশ বাকিটা সময়জুড়ে বিরাজমান থাকে। পিটারে আগমনে আবার সম্পর্কের পাওয়ার ডায়নামিক বদলে যায়, হাত বদল হয় কর্তৃত্বের ব্যাটন। 

ফিলের সাথে পিটার; Image Courtesy: opentapes.org

দর্শকের উপর গল্পের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সিনেমার সংগীতায়োজনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জনি গ্রিনউডের মিউজিক অনায়াসে ২০২১ সালের সেরা কাজগুলোর তালিকায় থাকবে। পর্দার দৃশ্যাবলী আরো অমোঘ হয়ে উঠে তার পারদর্শীতায়। কাহিনী উত্থান পতনের সাথে সংগীতও তাল মিলিয়ে উঠে-নামে। টিপিক্যাল ওয়েস্টার্ন ঘরানার সাউন্ডের কাছাকাছি থেকেই তাতে নতুনত্ব আনয়ন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পুরোটা সময় আসন্ন বিপদের পূর্বাভাস দিয়ে গেছেন জনি।

অভিনয়শৈলী এবং পরিচালনার দিক থেকে এটি একটি মাস্টারপিস। তবে এটি উপভোগ করতে হলে প্রচুর ধৈর্য্য থাকতে হবে দর্শকের। কারণ দৈর্ঘ্যের দিক থেকে ১২৫ মিনিটের হলেও জেন ক্যাম্পিয়নের গল্প বলার গতি ধীর। তাই হাতে সময় নিয়ে ধৈর্য্য ধরে উপভোগ করতে পারলে, পাঠক বসে যেতে পারেন ২০২১ সালের অন্যতম সেরা এই চলচ্চিত্রটি দেখতে। 

Related Articles