Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য সেভেন্থ সিল: ক্ল্যাসিক সিনেমার অন্যতম মাইলফলক

শর্ত হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ জিতবে না ততক্ষণ আমি বেঁচে থাকবো। আমি জিতে গেলে তুমি আমায় ছেড়ে দেবে।

আন্তোনিয়ুস ব্লকের এই প্রস্তাবে রাজি হয় মৃত্যু। মৃত্যু! আসলেই কি মৃত্যু এমন কোনো প্রস্তাবে রাজি হতে পারে? হতে পারে, কেননা এই সিনেমায় মৃত্যু বিমূর্ত নয়, সে সশরীরে উপস্থিত ব্লকের জীবন নিতে। কিন্তু ক্রুসেডফেরত যোদ্ধা ব্লক উপরোক্ত শর্তে মৃত্যুকে দাবা খেলতে রাজি করায়। দাবার ছক কাটা বোর্ড হয়ে ওঠে ব্লকের জীবন-মৃত্যুর নির্ণায়ক। মৃত্যু কালো ঘুঁটি ও ব্লক সাদা ঘুঁটি পায়। কে জানে- কালো ঘুঁটি হয়তো মৃত্যুর আত্মপরিচয়কেই নির্দেশ করে।

দাবা খেলতে বসেছে আন্তোনিয়ুস ব্লক ও মৃত্যু; Image Source: The Yong Folks

দীর্ঘ ক্রুসেড শেষ করে দেশে ফিরছিল নাইট আন্তোনিয়ুস ব্লক এবং তার সহচর জনস। মহামারী প্লেগের কারণে তাদের দেশ মৃত্যু-নগরীতে পরিণত; চারদিকে লাশ, খুন-খারাবি আর ধর্মীয় কুসংস্কার বয়ে চলছে সমাজের শিরা-উপশিরায়।

সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র যোদ্ধা ব্লক আত্মিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত একজন। মৃত্যু সামনে এসে দাঁড়ালে তখন সে শুরুর উক্তিটি করে। কারণ জীবনের অর্থ উপলব্ধি করা তার এখনও বাকি। চলতি পথে ব্লক গির্জায় প্রবেশ করে। মৃত্যুকে যাজক ভেবে তার নিকট কনফেস শুরু করে ব্লক। বলতে থাকে, সে মারা যেতে চায়, কিন্তু তার আগে ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞান চায়। যে জ্ঞান দ্বারা ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে পারবে নিজের মধ্যে। সে চায় না ঈশ্বর শুধু অলৌকিক ঘটনার মধ্যে লুকিয়ে থাকুক। শুধুমাত্র বিশ্বাসকে মুক্তির পথ মানতে নারাজ, কেননা নিজের ওপরই যে বিশ্বাস নেই তার! ব্লক বিশ্বাস করতে চায়, কিন্তু পারে না, বার বার দ্বিধা এসে যায়। সে বলে, অন্ধকারে কেঁদে ঈশ্বরকে ডাকি, কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দেন না। ঈশ্বর যদি না-ই থাকেন, তাহলে নিজ অন্তরে এত ঈশ্বরভীতি কেন? কেন সে তার ভেতরকার ঈশ্বরকে শেষ করে দিতে পারে না? বিশ্বাসের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে চায় না সে। তাই ঈশ্বরের আওয়াজ শুনতে চায়।

কিন্তু ঈশ্বর নীরব থাকেন। ঈশ্বরের নীরবতাই ‘দ্য সেভেন্থ সিল’ সিনেমার কেন্দ্রীয় বিষয়। সিনেমার শুরুতে ভয়েস ওভার ন্যারেশনে একটি বাক্য বলা হয়, যার মধ্য দিয়ে পরিচালক প্রথমেই সিনেমার আবহ বুঝিয়ে দেন,

এবং মেষপালক যখন সপ্তম সিলমোহরটি খুলল, তখন স্বর্গের সবকিছু আধঘণ্টা ব্যাপী একদম নীরব ছিল।

এটি নেওয়া হয়েছে বাইবেল থেকে, যেখানে বর্ণিত আছে- যীশু একে একে সাতটি সিলমোহর খুলতে থাকবেন এবং প্রতিটি সিলমোহর খোলার সময় পৃথিবীতে একেকটি দুর্যোগ নেমে আসবে। আর সপ্তম সিলমোহর খোলার সময় সাতজন দেবদূত শিঙায় ফুঁ দেবেন।

নাইট আন্তোনিয়ুস ব্লক ও তার অনুচর জনস; Image Source: FilmAffinity

ব্লকের অন্তরের শূন্যতা, অস্তিত্ববাদ, আত্মিক টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে সিনেমা এগিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু এর পাশাপাশি উঠে আসে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি, যেমন- চিত্রকররা গির্জার দেয়ালে প্লেগের ভয়াবহতা (দেহের সর্বাঙ্গে অসহনীয় ব্যথায় কাতরানো, জ্বর-যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাওয়া মানুষের চিত্র), মৃত্যুর নৃত্য এসব নিয়ে চিত্র আঁকে; কেননা তারা চায় মানুষ এসব চিত্রকর্ম দেখে ভয় পাক। মানুষজন যত ভয় পাবে, ততই যাজকদের নিকটবর্তী হবে তারা। যাজকরা মানুষকে বোঝায়, তারা অপকর্ম করেছে বিধায় প্লেগ ঈশ্বরপ্রদত্ত শাস্তি হয়ে এসেছে। পাপমোচনের জন্য মানুষজন নিজেদের গায়ে নিজেরা চাবুক মারতে থাকে। এরকমই একটি ধর্মীয় মিছিল বিষয়ে এক চিত্রকর নাইটের অনুচর জনসকে বলে, “তাদের যেতে দেখলে আপনার কোথাও গিয়ে পালাতে ইচ্ছে করবে।”

নিজেদের শরীরে আঘাত করতে করতে এগিয়ে যায় তারা; Image Source: A sharper Focus

যাজকরা মানুষের মনে ভয় ধরানোর চেষ্টা করলেও দেখা যায় তারা নিজেরাই এক নারীকে ডাইনী আখ্যা দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারার আয়োজন করতে থাকে। রাভাল নামে এক চরিত্র ব্লককে ক্রুসেডে যাওয়ার জন্য তাঁতিয়ে তুললেও সে নিজে না গিয়ে মৃতদেহের শরীর থেকে অলংকার চুরিতে ব্যস্ত।

এরকম নেতিবাচকতার বিপরীতে জফ ও তার স্ত্রী মিয়াকে দেখতে পাওয়া যায় আগত দিনের সুন্দর ভবিষ্যতের প্রতীক হিসেবে। তারা নাট্যদলের সদস্য। সন্তান মিকেলকে নিয়ে সুখী সংসার। জফ যখন বলে প্লেগ থেকে বাঁচতে পাশের একটি এলাকায় যাবে তখন ব্লক তাদের সঙ্গ দেয়। জফের পরিবার ও ব্লকের সঙ্গীরা জঙ্গলের ভেতর যখন রাত কাটায়, তখন মৃত্যু দাবা খেলতে ব্লকের কাছে আসে। মৃত্যুকে দাবার ঘুঁটি ওঠাতে ব্যস্ত রেখে জফের পরিবারকে স্থান ত্যাগ করতে ব্লক সাহায্য করে।

‘দ্য সেভেন্থ সিল’ সুইডিশ চলচ্চিত্র পরিচালক ইংমার বার্গম্যান পরিচালিত ইতিহাসের অন্যতম সেরা ক্লাসিক সিনেমা। সিনেমার ইতিহাসে বার্গম্যানের অবদান উল্লেখযোগ্য। তিনি একাধারে সিনেমা পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার, নাট্য পরিচালক ও নির্দেশক ছিলেন। উড পেইন্টিং নামে বার্গম্যান একটি নাটক লেখেন যা থেকেই ১৯৫৭ সালে ‘দ্য সেভেন্থ সিল’ নির্মাণ করেন তিনি। মানুষের মনের গভীর বেদনা, অনুভূতি, রহস্যময়তা সিনেমায় ফুটিয়ে তুলতে বার্গম্যান ছিলেন পারঙ্গম। সিনেমায় পরিচালকের ব্যক্তিজীবনের অনেক ছাপ রয়ে গেছে। তার বাবা ছিলেন ধর্মযাজক। ফলে ছোটবেলা থেকেই বার্গম্যানের উপর ধর্মীয় প্রভাব থাকলেও সাথে সাথে শিল্প-সংস্কৃতির প্রতিও তার ঝোঁক ছিল।

একসময় বার্গম্যানের ছিল মৃত্যুভয়। তিনি বলেন,

মৃত্যু নিয়ে আমি অনেক ভীত ছিলাম কিন্তু ‘দ্য সেভেন্থ সিল’ তৈরির পর আমি ভয় থেকে মুক্তি পাই।

ধর্মযোদ্ধা আন্তোনিয়ুস ব্লককে মৃত্যু রেহাই দেয় না। ব্লক যখন তার প্রাসাদে ফিরে স্ত্রীর সাথে দেখা করে, তখনই মৃত্যু দরজায় এসে কড়া নাড়ে। মৃত্যু যখন উপস্থিত সেসময় ব্লককে দেখা যায় নিজেকে তুচ্ছ ও ভীত দাবি করে ঈশ্বরের কাছে দয়া চেয়ে প্রার্থনা করতে। মৃত্যু ব্লক ও তার সঙ্গী-সাথীদের পাহাড়ের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে থাকে অন্ধকারের পানে।

মৃত্যু নৃত্য করতে করতে ব্লক ও তার সঙ্গীদের নিয়ে যাচ্ছে; Image Source: Futuro Pasado

সাদা-কালো ফ্রেমে পরিচালক মৃত্যু নামক অমোঘ সত্যকে বিশ্বাস-অবিশ্বাস, নাস্তিক-আস্তিক এসবের থেকে আলাদা করে শৈল্পিকভাবে প্রতিকায়িত করেছেন। মৃত্যুর সাথে যে এসবের কোনো সম্পর্কই নেই! মৃত্যু সবার জন্য সত্য।

‘দ্য সেভেন্থ সিল’ নির্দিষ্ট কোনো স্থান-কাল-পাত্রের সিনেমা হিসেবে বিবেচিত নয়। কেননা পৃথিবীতে একদল ব্যক্তি সর্বদাই মানুষের মনের ভয়, বিশ্বাসকে পুঁজি করে নিজ স্বার্থের খেলায় মেতে থাকে, কিন্তু শেষপর্যন্ত তারাও রক্ষা পায় না।

ক্রুসেড এবং প্লেগের ভয়াবহতা নিয়ে ইংমার বার্গম্যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ১৯৫৭ সালে যখন সিনেমাটি নির্মাণ করেন, তখন এটি যেমন প্রাসঙ্গিক ছিল, আজও তা রয়ে গেছে।

Language: Bengali

Topic: 'The Seventh Seal' movie review

Related Articles