Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

২০১৯ সালের সেরা দশটি বিজ্ঞানের বই

২০১৯ সাল শেষ হয়ে এলো। বিগত বছরে মানবসভ্যতা আরো একধাপ এগিয়ে গেছে মহাকাশের ব্ল্যাক হোল এর ছবি তোলার মধ্য দিয়ে; মহাজাগতিক বিজ্ঞানের যাত্রার মধ্য দিয়ে কিংবা নিত্যনতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সাথে।

আর সাধারণত বিজ্ঞানের বইসমূহ আমাদেরকে চলমান গবেষণার বিস্তারিত প্রভাব সম্পর্কে নাটকীয় নতুন আবিষ্কারের সম্পর্কে বুঝতে এবং জানতে পারার একটা সুযোগ দেয়। বিজ্ঞানের বইগুলো আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় – কীভাবে আমরা মানব সভ্যতায় প্রবেশ করেছি, কীভাবে হয়েছি প্রাণীজগতের সেরা জীব, কীভাবে নিজেদের চারপাশের বিশ্বকে পরিবর্তন করেছি এবং জ্ঞানের সম্পর্কে আমাদের আসক্তি আর ত্রুটিগুলোকে কি করে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেছি বা করছি প্রতিনিয়ত। 

বিগত বছরে বিজ্ঞানের আবিষ্কার যেমন আমাদেরকে চমকে দিয়েছে; ঠিক তেমনি সামনের বছরগুলোতে বিজ্ঞান আমাদের জন্য আর কী কী চমক রেখেছে, তাও কিন্তু জানার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। তবে জানব কী করে? তাই, বইপড়ুয়াদের কাছে বিজ্ঞানের বইগুলো যেন আরেক অপার বিস্ময়ের রাজ্য। বিজ্ঞানের নতুন সূত্র যেন তাদেরকে নতুন কোন জগতের সন্ধান দেয়। 

Illustration by Shaylyn Esposito

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীটপতঙ্গের জীবনযাপন থেকে শুরু করে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থার অলৌকিক কর্মকাণ্ড, কিংবা পৃথিবীর অতীত ইতিহাস থেকে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জসমূহ; এসবই আলোকিত করতে সহায়তা করে বিজ্ঞানের নানাবিধ বইসমূহ।

স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি গবেষণাগার এবং জাদুঘর। আর এই গবেষণার প্রকাশিত রূপ হচ্ছে স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন। অনেক ভোটাভুটি এবং যাচাই বাছাই শেষে বছরের এই প্রাক্কালে এসে ২০১৯ সালের সেরা দশটি বই বিজ্ঞানের বই নির্বাচন করেছে এই ম্যাগাজিনটি। আজকের আয়োজনে থাকছে স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন নির্বাচিত সেরা দশটি বিজ্ঞানের বইয়ের বর্ণনা। 

১. অরিজিন্স – লুইস ডার্টনেল 

নাহ, এটি বিখ্যাত থ্রিলার লেখক ড্যান ব্রাউনের বই অরিজিন নয়; বইটার পুরো নাম হচ্ছে – অরিজিন্স: হাউ আর্থস হিস্টোরি শেপড হিউম্যান হিস্টোরি। আর বইটি লিখেছেন ওয়েস্টমিনিস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষক এবং অধ্যাপক লুইস ডার্টনেল। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার এই লেখক অরিজিনে ব্যাখ্যা করেছেন, একটা প্রাকৃতিক দুনিয়া কী করে আমাদের প্রজাতির ইতিহাসকে আকার দিয়েছে। 

যখন আমরা মানব ইতিহাসের বিষয়ে কথা বলি, তখন আমরা বেশিরভাগ সময়ই মহান নেতা, জনসংখ্যা বাহিনী এবং স্থিরবুদ্ধি সম্পন্ন যুদ্ধগুলোর দিকেই মনোনিবেশ করি। কিন্তু পৃথিবী কীভাবে আমাদের নিয়তি নির্ধারণ করেছে? আমাদের গ্রহটি সদা কম্পমান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যাযাবর প্রবৃত্তি থেকে প্রাচীন যুগের মানুষেরা কৃষিকাজে ঝুঁকেছিল। পার্বত্য অঞ্চল গ্রীসকে গণতান্ত্রিকতার দিকে ধাবিত করেছিল।

Image Credit: hachettebookgroup.com

বৈশ্বিক অনুসন্ধান, উপনিবেশ স্থাপন এবং বাণিজ্যের অগ্রগতির আকার পেয়েছিল বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালনের ধরনগুলোর মাধ্যমে। এমনকি আজও, দক্ষিণ-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোটদানের প্রকৃতি এক প্রাচীন সমুদ্রের আদর্শকেই মেনে গড়া হয়। মানব সভ্যতার প্রতিটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাপারেও গ্রহের স্পষ্ট আর গভীর ছাপ বিদ্যমান। পৃথিবীর প্রথম ফসলের চাষ থেকে আধুনিক নগর রাষ্ট্র স্থাপিত হওয়া অবধি, মানব সভ্যতার বিকাশে আমাদের পায়ের নীচের পৃথিবীর যে শ্বাসরুদ্ধকর প্রভাব তাই প্রকাশ করেছে অরিজিন্স বইটি।

২. বাজ, স্টিং, বাইট: হোয়াই উই নীড ইনসেক্টস – অ্যান স্যাভারড্রপ-থাইগিসন 

কীটপতঙ্গের জগতের প্রবল কৌতূহলী, রসিক ও বুদ্ধিমান এবং তথ্যমূলক পরিচয় আর কেন আমরা – এবং আমরা যে গ্রহে বাস করি তা – তাদেরকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না; এরকমই এক বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করেছেন থাইগিসন তার বাজ, স্টিং, বাইট: হোয়াই উই নীড ইনসেক্টস নামক বইটিতে। 

প্রাণিজগতের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে আছে পোকামাকড়। তারা বাস করে সর্বত্র – গুহার অভ্যন্তরে, ১৮,০০০ ফুট উঁচু হিমালয়ের চূড়ায়, কম্পিউটারের ভেতরে, ইয়োলোস্টোনের উত্তপ্ত ঝরনায় কিংবা অন্য কোনো বড় জন্তুর নাক বা কানের ভেতরে। এমনও পোকামাকড় আছে, যেগুলোর হাঁটুতে আছে চোখ, শিশ্নতেও আছে চোখ কিংবা পায়ের নিচে আছে জিহবা। কিছু কীটপতঙ্গ রোগ ছড়ায়, কিছু আবার কামড় দেয় বা হুল ফোঁটায়, আবার অনেকগুলো আছে, যেগুলো কেবল বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। আর এই অদ্ভুতুড়ে আর ভয়ালদর্শন বলেই আমাদের বেশিরভাগেরই ধারণা, পোকামাকড় ছাড়া হয়তো আমাদের জীবনযাপন আরো ভালো হতো। কিন্তু আসলে, পোকামাকড় ছাড়া জীবন অসম্ভব!

Image Credit: Simon & Schuster CA

আমাদের সকলেরই জানা আছে, মৌমাছি ছাড়া মধু হবার নয়, ডাঁশ পতঙ্গ ছাড়া চকলেট তৈরির কোকোয়া ফুলের পরগায়ন সম্ভব নয়। এমনকি পূর্বে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লেখার কাজে যে কালি ব্যবহার করা হতো, তা ওক গাছের বাকল থেকে উদ্ভূত হতো, আর সেটাও একটা ভিমরূলের কারণেই পাওয়া যেত। ফলের মাছিগুলো সাধারণত চিকিৎসা এবং জৈবিক গবেষণার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যার ফলস্বরূপ ছয়-ছয়টা নোবেল পুরস্কার বাগিয়েছে ফল-মাছির গবেষকেরা। ব্লোফাই জাতের শুককীট গভীর ক্ষত সারাতে পারদর্শী; ফ্লাওয়ার বিটল জাতের শুককীট এমনকি প্লাস্টিকও হজম করে ফেলতে পারে; অ্যান্টিবায়োটিকের উন্নতির পিছনে আছে হাজারো জাতের পোকামাকড়ের অবদান।

পোকামাকড় মৃত গাছ-গাছড়া আর প্রাণীসমূহকে মাটিতে পরিণত করে। ফুলে পরগায়ন ঘটায়, এমনকি কৃষির ফসলেও, যা আমাদের বেঁচে থাকার খাদ্যবিশেষ। তারা নিজেরাই আবার অন্য প্রাণী যেমন পাখি বা বাদুড়ের খাবার সরবরাহ করে। তারা এমন সব জীবসমূহদের নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলো মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জীবন হিসেবে আমরা যেটিকে চিনি, সেটি অনেকাংশেই এই ক্ষুদ্র প্রাণীটির উপর নির্ভরশীল। 

৩. ইনভিজিবল উইমেন: ডেটা বায়াস ইন অ্যা ওয়ার্ল্ড ডিজাইনড ফর ম্যান – ক্যারোলাইন ক্রিয়েদো-পেরেজ 

এমন একটা পৃথিবীর কথা কল্পনা করুন, যেখানে আপনার ব্যবহার্য ফোনটি আপনার হাতের জন্য খুব বড়, যেখানে চিকিৎসক আপনার শরীরের জন্যে একটি ভুল ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন, যেখানে কোনো গাড়ি দুর্ঘটনায় আপনার আহত হবার সম্ভাবনা প্রায় ৪৭% এর চেয়েও বেশি, যেখানে গণনাবিহীন ঘন্টা ধরে প্রতি সপ্তাহে করা আপনার কাজের কোনো স্বীকৃতি বা মূল্য নেই। এই ব্যাপারগুলো যদি আপনার খুব পরিচিত মনে হয়, তাহলে আপনি যে একজন নারী, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!  

ইনভিজিবল প্লানেটস বইটি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় যে, পুরুষদের জন্য এবং তাদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত এই বিশাল পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাকেই আমরা পরিকল্পিতভাবে উপেক্ষা করছি। লিঙ্গ বৈষম্যের উপাত্তের বিশাল বৈসাদৃশ্যে কথা প্রকাশ করেছে বইটি- এমন একটি বৈসাদৃশ্য, যা আমাদের শাশ্বত জ্ঞানের অস্তিস্ত্বকে আজীবন নারীর বিরুদ্ধে ভাবার মূলে থেকেছে। আর এই ব্যাপারটি নারীদের জীবনে গভীর প্রভাবসহ বিস্তৃত, তবে অদৃশ্য এক পক্ষপাতিত্ব তৈরি করেছে।

Image Credit: harpymagazine.com

পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রচারক ও লেখক ক্যারোলিন ক্রিয়েদো-পেরেজ প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কেস স্টাডি, গল্পসমূহ এবং নিত্যনতুন গবেষণাগুলোকে একত্রিত করেছেন, যা চিত্রিত করেছে সেই গোপনীয় সূত্রগুলোকে যার জন্য নারীরা বিস্মৃত; এবং তাদের স্বাস্থ্য আর সুস্বাস্থ্যের ওপরও এর প্রভাবটা পড়ে।

সরকারি নীতি এবং চিকিৎসা গবেষণা থেকে শুরু করে প্রযুক্তি, কর্মক্ষেত্র, নগর পরিকল্পনা এবং মিডিয়া; ইনভিজিবল প্লানেটস পক্ষপাতদুষ্ট সেসব তথ্যগুলো প্রকাশ করেছে, যা নারীদের বর্জন করে। পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, এই শক্তিশালী এবং উত্তেজন বইটি আপনাকে নতুন বিশ্ব দেখায় সাহায্য করবে। 

৪. দ্য বডি: এ গাইড ফর অকুপ্যান্টস – বিল ব্রায়সন 

বেস্টসেলার এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত এ শর্ট হিস্টোরি অফ নিয়ারলি এভরিথিং বইটি দিয়ে বিল ব্রায়সন, আমাদের বিশ্বের বিজ্ঞানকে উপলব্ধিযোগ্য এবং পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষের কাছে বিনোদনমূলক করে তুলেছে; যা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে অর্জন করেছে। 

এবার তিনি তার পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করেছে মানুষের দেহে, এটি কীভাবে কাজ করে এবং নিজেকে নিরাময় করার লক্ষণীয় দক্ষতা আবিষ্কার করার বিষয়গুলোতে দৃষ্টি দিয়েছেন বিল। অসাধারণ সব তথ্য এবং দারুণ বিস্ময়কর কাহিনী দিয়ে পূর্ণ, দ্য বডি: এ গাইড ফর অকুপ্যান্টস আমাদের শারীরিক এবং স্নায়বিক গঠনের অলৌকিক ঘটনাটি বোঝার জন্য দারুণ এক প্রচেষ্টা।

Image Credit: newsweek.com

ব্রায়সন মানব জীববিজ্ঞানের বিস্ময়, ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের ইতিহাস এবং কখনো কখনো রোগের ভীতিজনক বিশ্ব সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এক বিবরণ পেশ করেছে। গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং চিত্তাকর্ষক সব উপাখ্যানগুলোতে পূর্ণ দ্য বডি বইটি একটি দুর্দান্ত বই, যদি কেউ মানবদেহের মেশিন সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে। 

৫. এন্ড অফ ম্যাগাফোনা: দ্য ফেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস হিউজেস্ট, ফিয়েরসেস্ট অ্যান্ড স্ট্রেঞ্জার্স অ্যানিমেল – রস ডি. ম্যাকফি এবং পিটার শাউট্যান 

এই কয়েক হাজার বছর আগে পর্যন্ত আমাদের পদচিহ্ন পড়া এই মাটিতেই গরিলা আকারের লেমুরস, ৫০০ পাউন্ড ওজনের পাখি এবং এক টনের ওজন বা তারও বেশি ওজনের কুমির – সাই-ফাই থ্রিলারের সেই অদ্ভুত সৃষ্ট জীব্জন্তুগুলোই পৃথিবীর বুকে ঘোরাফেরা করে বেড়াত। এই বিশাল জন্তুগুলো, বা “ম্যাগাফোনা” প্রতিটি বাসযোগ্য মহাদেশেই এবং এমনকি অনেক দ্বীপেও বসবাস করতো। কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু ব্যতিক্রম বাদে এখন সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 

এই প্রাগৈতিহাসিক দৈত্যাকার জীবজন্তুগুলোর অন্তর্ধানের কারণ কী? কোনো সুনির্দিষ্ট ঘটনা বা কারণ চিহ্নিত করা হয়নি, তবে বেশ কয়েকটি কারণ এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

প্যালিওম্যামোলোজিস্ট রস ডি. ম্যাকফি এই সবকিছুর অনুসন্ধান করেছেন, প্রধান বিলুপ্ত তত্ত্বগুলোকে পরীক্ষা করেছেন, প্রমাণের ওজন নিরীক্ষণ এবং সবশেষে নিজের সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করেছেন। তিনি উল্লেখ করে দেখান যে, কিভাবে মানুষের অতিমাত্রায় ও বিপদজনক জলবায়ু পরিবর্তনের তত্ত্বগুলো এই সমালোচক বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য দায়বদ্ধ হতে ব্যর্থ হয়। সাথে এও ব্যাখ্যা করেন যে, এই রহস্যময় বিলুপ্তির ব্যাখ্যা নতুন করে ভাবনাই শ্রেয়। 

Image Credit: twitter.com

ইতিমধ্যেই আমরা জানি যে, কিভাবে পৃথিবীর ইতিহাসে সময় নির্ধারিত করা হয়েছিল; ম্যাগাফোনার বংশগত এবং জাতিগত ইতিহাস ব্যাখ্যা করতে কী করে ডিএনএ ব্যবহৃত হয়; যার জন্যে অতীতের এই দানবসদৃশ জন্তু জানোয়ারগুলো আমাদের কাছে পুনর্প্রতিষ্ঠা পায়। তবে পিটার শাউট্যান চমৎকার ইলাস্ট্রেশনের মাধ্যমে এই ব্যাপারগুলোকে আমার নতুন করে চিত্রিত করেছেন এই বইতে পাঠকের জন্যে। 

৬. দ্য ফার্স্ট সেল: এন্ড দ্য হিউম্যান কস্টস অফ পারসুয়িং ক্যান্সার টু দ্য লাস্ট – আজরা রাজা 

মানবসভ্যতা একমাত্র ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে গিয়েছে এবং হারছে প্রতিনিয়তই। প্রতি বছর কেবল ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যই বিশ্বব্যাপী ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়, তাও কয়েকটি উদ্ভাবন সত্ত্বেও, একজন ক্যান্সার রোগী তেমন করেই মৃত্যুবরণ করেন, যেমনটি হতো ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেটি হয় যে, নিত্যনতুন ওষুধ সেবনের মধ্য দিয়ে রোগী কেবল আরো কয়েকটা মাস এই সুন্দর পৃথিবীতে যন্ত্রণাদায়ক নিজের জীবনে আরো কয়েকটা দিন বা মাস যোগ করতে পারে। ব্যস এটুকুই। 

দ্য ফার্স্ট সেল বইটিতে আজরা রাজা কীভাবে আমাদের চিকিৎসা এবং সমাজব্যবস্থা (খারাপভাবে) উভয়ই ক্যান্সারের চিকিৎসা করে, আরো ভালো কীভাবে করা যেতে পারে এবং কেন আমাদের অবশ্যই করা উচিত; এসবেরই বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। আশা থেকে হতাশায় বিচ্যুতি এবং হতাশা থেকে আবার আশার ফিরে পাওয়ার মধ্য দিয়ে, দ্য ফার্স্ট সেল বইটি প্রতিটি দৃষ্টিকোণ থেকে ক্যান্সারের অন্বেষণ করে। 

Image Credit: goodreads.com

প্রকৃতপক্ষে, আজরা বর্ণনা করেছেন তার স্বামী একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়েছিলেন। দ্য ফার্স্ট সেল চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাধারণ কোনো বই নয়, বরঞ্চ এটা এমন একজন লেখকের অভিজ্ঞতা আর জ্ঞানের বই, যিনি কিনা অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করেও ব্যাপারটিকে খুব সহজে করে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছেন। 

৭. ইটিং দ্য সান: স্মল মিউজিংস অন অ্যা ভাস্ট ইউনিভার্স – এলা ফ্রান্সেস স্যান্ডার্স 

আমাদের বিশ্ব, মহাবিশ্ব এবং নিত্যদিনকার জীবনকে শাসন করে এমন নীতি, আইন এবং অবাক করা ব্যাপারগুলোর সুন্দরভাবে চিত্রিত উপস্থাপন করেছেন, নিউ ইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার লেখক এলা ফ্রান্সেস স্যান্ডার্স। 

আপনি কি কখনো এভাবে ভেবে দেখেছেন যে, তারা বা নক্ষত্রগুলোর সাথে আমাদের কি কোনো মিল আছে কিনা? কিংবা চাঁদই বা কেন আমাদের ছেড়ে চলে যায় না? গ্রহগুলোর নিয়মনীতি, সময়ের বয়ে চলা এবং প্রাকৃতিক জিনিসের প্রকৃতি সম্পর্কে কি কখনো ভেবেছেন? 

Image Credit: ellafrancessanders.com

আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহটি অদম্য সব রহস্য দিয়ে পরিপূর্ণ। আর যদিও আমরা আগের তুলনায় আরো অনেক জটিলভাবে সভ্যতা গড়ে তুলেছি, তা সত্ত্বেও কীভাবে এবং কেন জানার ক্ষেত্রে সরলতা আর আশ্বাসের আশ্রয় প্রার্থনা করি। ইটিং দ্য সান বইটি সুন্দভাবে চিত্রিত মহাবিশ্বের অস্তিত্ব এবং এ সম্পর্কীয় অনুসন্ধানের জন্য পাঠককে স্বাগত জানায়। 

৮. দ্য এন্ড অফ আইস: বিয়ারিং উইটনেস এন্ড ফাইন্ডিং মিনিং ইন দ্য পাথ অফ ক্লাইমেট ডিসরাপশন – দহর জ্যামাইল 

যুদ্ধের বিশেষ প্রতিবেদক হিসেবে বিদেশে প্রায় এক দশক পার করার পর, আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত সাংবাদিক দহর জ্যামাইল নিজের দেশ আমেরিকায় ফিরেছিলেন পর্বতারোহনের প্রতি তার আসক্তিকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে; কিন্তু তিনি খুঁজে পান যে, অনেককাল আগে আরোহণ করা একটা ঢাল ইতিমধ্যে জলবায়ু সংকটের কারণে ধূলিস্মাৎ হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জ্যামাইল জলবায়ু সংকটের প্রধান কারণগুলো অনুসন্ধানে নেমে পড়েন; আলাস্কা থেকে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ের রীফ হয়ে আমাজনের রেইনফরেস্ট পর্যন্ত তিনি ছুটে চলেন – বরফ গলার কারণে মানুষের এবং প্রকৃতির কী কী ক্ষতি সাধন হতে পারে- তা সন্ধানে। 

Image Credit: katu.com

দ্য এন্ড অফ আইস বইতে, পাঠক জ্যামাইলকে অনুসরণ করে তার উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ শিখর ডেনালির দিকে ছুটে চলা দেখতে পান। দেখতে পান, প্রশান্ত মহাসাগরীয় উষ্ণ স্ফটিক জলে কেবল অদ্ভুত দর্শন প্রবাল প্রাচীরের সন্ধানে কীভাবে ডুব দেন লেখক। সেন্ট পল দ্বীপে লেখকের তুন্দ্রার সন্ধান করা এবং সেখানে বেরিং সাগরের সর্বশেষ প্রজাতি শিকারি সিল আর হিমবাহ গলনের সাক্ষী হওয়ার অভিজ্ঞতাও যেন পাঠক চাক্ষুস উপভোগ করবেন। লেখকের সাথে পাঠকও এই তিক্ত সত্যটা মেনে বাধ্য যে, পৃথিবী বর্তমানে একটি আশ্রয়কেন্দ্রিক পরিস্থিতিতে আছে। 

৯. সুপিরিয়র: দ্য রিটার্ন অফ রেস সাইন্স – অ্যাঞ্জেলা সাইনি 

সুপিরিয়র বইটি বিজ্ঞানের জগতের জৈবিক বর্ণগত পার্থক্যের প্রতি অবিচল বিশ্বাসের অদ্ভুত গল্পটি বলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি শাসনের ভয়াবহতার পরে মূলধারায় সুপ্রজননবিদ্যা এবং বর্ণগত পার্থক্যের অধ্যয়নকে আড়াল করে রাখা হয়েছিল। তবে বিশ্বব্যাপী অনুশোচনাপ্রসূত সুপ্রজননবিদ্যার বিজ্ঞানীরা নীরবে এর গবেষণা চালিয়ে গেছে, সাময়িক পত্রিকা দিয়ে বিশ্বব্যাপী জানান দিয়েছে নিজেদের উপস্থিতি, গবেষণার জন্য অর্থায়ন সংগ্রহ করেছে; যার ফলে তারা এমন অধ্যয়নকে তুলে ধরেছে, যার জন্য শেষ পর্যন্ত রিচার্ড হার্নস্টেইন এবং চার্লস মারে ১৯৯৪ সালে দ্য বেল কার্ভে শিরোনামে প্রকাশ পেয়েছিল। 

Image Credit: twitter.com/angelasaini

বর্তমানে বর্ণবাদী জাতীয়তাবাদের স্বরূপ বিশ্বজুড়ে পুনরুত্থানের ফলে যে হুমকি দেখা দিয়েছে, সুপিরিয়র হলো সেই হিসেবে জৈবিকভাবে একটি শক্তিশালী অনুস্মারক মাত্র কিংবা এর থেকেও অনেক অনেক বেশি কিছু। 

১০. দ্য রিয়েলিটি বাবল: ব্লাইন্ড স্পটস, হিডেন ট্রুথস অ্যান্ড দ্য ডেঞ্জারাস ইলিউশন দ্যাট শেপ আওয়ার ওয়ার্ল্ড – জিয়া টং 

আমাদের নগ্ন চোখ কেবল বাস্তবের একটা পাতলা স্ফুলিঙ্গই দেখতে পায়। ত্বকের মধ্য দিয়ে যাওয়া এক্স-রে, জীবের অভ্যন্তরে মৃত কোনোকিছু শনাক্তকারী ম্যাস স্পেকট্রোমিটারগুলি কিংবা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাথে দেখতে পাওয়া উন্নত প্রযুক্তির নজরদারি পদ্ধতিসমূহের তুলনায় আমরা নিতান্তই অন্ধ। লাল উজ্জ্বল আলো কিংবা অতিবেগুনী রশ্মি অথবা ৩৬০ ডিগ্রী কোণে দেখতে পাওয়া সেইসব প্রাণীদের তুলনায়ও আমরা নিতান্তই অন্ধ।

নিজের বই হাতে লেখিকা। Image Credit: boingboing.net

আমরা যে গ্রহে বাস করি, এই প্রাণীগুলোও কিন্তু একই গ্রহে বসবাস করে, কিন্তু তাদের দেখার দৃষ্টি আর আমাদের দেখার দৃষ্টির মধ্যে রাত আর দিনের ফারাক। এইসব কৌতূহল আর উদ্দীপনাসমূহই এই লুকানো দুনিয়াটাকে আলোকিত করতে এবং মানব সভ্যতার দশটি বৃহত্তম অন্ধত্বের দাগের সন্ধান করতে জিয়া টংকে সাহায্য করেছে। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বইটি আমাদের দেখায় যে, কিভাবে বিজ্ঞান এবং কৌতূহল আমাদেরকে তাড়িত করে; যা আমাদের সভ্যতা উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে। 

This article is in Bangla language. It's about Smithsonian Magazine's Top 10 books of 2019.
Necessary references have been hyperlinked inside the article. 

Feature Image: Lightfieldstudios/Getty 

Related Articles