Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের বাছাইকৃত ২০২০ সালের সেরা দশ বিজ্ঞানের বই

বছর শেষ হবার একদম দ্বারপ্রান্তে। যদি চলতি এই বছরের বিজ্ঞান নিয়ে কোনো কথা ওঠে, তাহলে প্রথমেই আসবে কোভিড-১৯ এর কথা। অন্যান্য বছর যেখানে আবিষ্কার আর বিজ্ঞানের অধ্যয়ন নিয়ে আলোচনা হয় বছরের সালতামামি, সেখানে এই/গেল বছরের বেশিরভাগ আলোচনাই সম্ভাব্য ভ্যাকসিন আর সংক্রমণের হার নিয়ে। তা সত্ত্বেও মহাকাশ ভ্রমণ আর দাবানলের মতো খবরগুলো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, এই এতসব কন্টেন্টের বন্যায় বিজ্ঞানের আবিষ্কার আর বিজ্ঞানের অধ্যয়নগুলো যেন হারিয়ে না যায়। 

আর তাই, এই বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করে রেকর্ড আকারে রাখা হয় ছাপার অক্ষরে। হ্যাঁ, ছাপানো বইয়ের কথাই বলা হচ্ছে এখানে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার এবং জাদুঘর হচ্ছে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানের একটা জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন রয়েছে, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন নামে। প্রতি বছর অনেক যাচাই-বাছাই শেষে স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন সেরা দশটি বিজ্ঞানের বই নির্বাচন করে থাকে। আজকের আয়োজনে থাকছে স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন নির্বাচিত করোনাকালীন ২০২০ সালের সেরা দশটি বিজ্ঞানের বইয়ের বর্ণনা।

দ্য বুক অফ ইলস: আওয়ার এনডিউরিং ফ্যাসচিনেশন উইথ দ্য মোস্ট মিস্ট্রিরিয়াস ক্রিয়েচার ইন দ্য ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড 

ইল এক প্রজাতির মাছের নাম। দেখতে অনেকটা বাইন মাছের মতো। কোথা থেকে এসেছে ইল? আদতে ইল কোন প্রজাতির? আসলেই কি ইল মাছ নাকি অন্য কোনো প্রাণী বিশেষ? এমনকি এই আধুনিক আর উন্নত বিজ্ঞানের যুগেও ইল মাছের সঙ্গম বা বংশবৃদ্ধি এবং জন্মদান পদ্ধতি সম্পর্কে কেউই অবগত নয়। দশকের মতো সময় মিঠাপানিতে কাটানোর পর জীবনের শেষ মুহুর্তে ইলগুলো কেন সমুদ্রে ফিরে যায়- সেটাও এক রহস্য হয়ে রয়ে গেছে আজো। 

বুক অফ ইলস; Image Source: time.com

সাহিত্য, ইতিহাস এবং সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে ইল মাছ ধরার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়েই প্যাট্রিক সেভেনশন এই গ্রন্থ রচনা করেছেন। বুক অফ ইলস এ, আমরা ঐতিহাসিক চিন্তাবিদদের দেখা পাই। অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে সিগমুন্ড ফ্রয়েড, র‍্যাচেল কার্সনের সাথে। আরো সাক্ষাত হয় বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে গবেষণা চালানো ডেনিস সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী জোহান্স স্মিডটের সঙ্গে। যে কিনা হাজার ইলের উপর গবেষণা চালিয়েছে তাদের জীবনপ্রক্রিয়া উদ্ভাবন করার উদ্দেশ্যে। এই সবকিছুই এক মলাটে বন্দী করেছেন প্যাট্রিক বুক অফ ইলস নামে।  

অল উই ক্যান সেইভ: ট্রুথ, কারেজ অ্যান্ড সল্যুশন অফ ক্লাইমেট ক্রাইসিস 

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন বেশ বড় সমস্যা। সর্বস্তরের মানুষজন এগিয়ে আসছে এই সমস্যার সমাধানে। একাট্টা করা হচ্ছে অর্থ তহবিল। মানুষজনকে সচেতন এবং এগিয়ে আসার আহবানে জড়ো করা হচ্ছে দারুণ সব লেখা আর স্লোগান। এই কাজকেই আরো সহজ করে দিয়েছেন সম্পাদক আইয়্যানা এলিজাবেথ জনসন এবং ক্যাথারিন কে. উইলকিনশন। নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে তারা এমন এক বই রচনা করেছেন যেখানে প্রবন্ধ আর কবিতায় মানুষ খুঁজে পায় আশ্বাসের বাণী।

অল উই ক্যান সেইভ; Image Source: momscleanairforce.org

জনসন, একজন সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী এবং ওশেন কালেকটিভের প্রতিষ্ঠাতা; উইলকিনসন প্রজেক্ট ড্রডাউন এর প্রধান সম্পাদক যেটি মূলত গ্রীনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি হ্রাসের বিপক্ষে একটি অলাভজনক কার্যক্রম চালায়, যেখানে প্রায় ৬০ জন নারী নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রম অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়। অল উই ক্যান সেইভ, এমন এক গ্রন্থ যা বিভিন্ন ধরনের বিশেষজ্ঞদের প্রদর্শন করে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শক্তিশালী আর ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে কাজ করে। বইটি কেবলই বিনোদনমূলক আর বৈচিত্র্যময় এক পাঠ নয়- এটি পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকও বটে। এটি এমন একটি নতুন প্রকল্প যেখানে নেতৃত্ব দিচ্ছে একদল নারী পৃথিবীর দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে। 

হিডেন ভ্যালি রোড: ইনসাইড দ্য মাইন্ড অফ অ্যান আমেরিকান ফ্যামিলি 

নন-ফিকশন বই হলেও গল্পটি আদতে ডন আর মিমি গ্যালভিনের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ডন বিমান বাহিনীতে যোগদানপূর্বক কলোরাডোতে চলে আসে। ১৯৪০ এর দশক থেকে ‘৬০ এর দশকে মোট ১২ সন্তানের জন্ম দেয় গ্যালভিন পরিবার। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ৬টি শিশুই স্কিৎজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এমনই এক পরিবারের গল্প রচিত হয়েছে হিডেন ভ্যালি রোড নামক বইয়ে। বিজ্ঞানের অন্ধকার এক যুগের কথা রচিত হয়েছে বইটিতে। আরো প্রচার হয়েছে চিকিৎসার অভাবে রোগ বিস্তারের গল্প। তবে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে টিকে থাকার দারুণ আর দুর্দান্ত এক গল্পও শোনায় বটে । 

হিডেন ভ্যালি রোড; Image Source: time.com

পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক রবার্ট কোলকারের এই বই মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার দ্বারা প্রভাবিত এক পরিবারের ইতিহাসের চাইতেও বেশি কিছু। পারিবারিক সমস্যার অলিগলি পেরিয়ে কোলকার বিজ্ঞানীদের স্কিৎজোফ্রেনিয়ার সমস্যাসমূহ বোঝার বিষয়গুলোকেও তুলে ধরেছেন। পরিবারের কয়েক দশকের বিবর্তন আর প্রজন্মের পরম্পরার পাশাপাশি উঠে এসেছে পরিবেশগত প্রভাব থেকে জিনগত কারণ, স্কিৎজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসার প্রচেষ্টা এবং প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ থেকে শুরু করে অ্যান্টিসাইকোটিক ড্রাগ এবং রোগের কারণ ও লক্ষণ এবং উপশম নিয়ে বিশদ বিবরণ আর আলোচনা। 

আউলস অফ দ্য ইস্টার্ন আইস: অ্যা কোয়েস্ট টু ফাইন্ড অ্যান্ড সেইভ দ্য ওয়ার্ল্ড লার্জেস্ট আউল 

জোনাথন সি. স্লট একজন পাখিপ্রেমী। তবে কিঞ্চিৎভাবে তাকে অনভিজ্ঞ এক পাখি বিশেষজ্ঞও বলা চলে। একবার তার সুযোগ হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় এক পাখির মুখোমুখি হবার। অন্তত তার জানামতে, পৃথিবীর অন্যান্য যেকোনো পেঁচার চাইতেও বিশাল ছিল সেটা। এতটাই বিশাল যে, ফোলানো পালকগুলো দেখে ছোটখাট একটা ভালুকের বাচ্চা মনে হতেই পারে ওটাকে। দ্রুত কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে পাখি বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হন তিনি তারপরের গল্পটা এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রার। আগামী পাঁচ বছরের জন্য এক দুঃসাহসিক অভিযান চালান তিনি রাশিয়ার প্রত্যন্ত সব অঞ্চলে এই রহস্যময় আর বিশালাকৃতির পাখির সন্ধানে। এই অভিযানই তাকে এক বিজ্ঞানী, পাখি বিশেষজ্ঞ এবং দুঃসাহসিক অভিযাত্রীর পদবী দেয়। 

আউলস অফ দ্য ইস্টার্ণ আইস। Image Source: waterstone.com

ছয় ফুট ডানা এবং দুই ফুট উচ্চতাসম্পন্ন এই ব্ল্যাকিসটোন ফিশ আউল জাতের পেঁচা একটি অধরা প্রাণী। চাইলেই অতি সহজেই এর দেখা মেলে না। তবে হ্যাঁ, শীতকালে এদের খুঁজে বের করা অনেকটাই সহজ। কেননা, খাবারের সন্ধানে এরা ছুটে আসে নদীর কিনারে। একইসঙ্গে, এই জাতের পেঁচা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। হয়তো গুটি কতকই টিকে আছে এই বৈশ্বয়িক প্রতিকূল পরিবেশে। তবে জোনাথন সি. স্লট শুধু গ্রন্থই রচনা করেননি, বরং এদের প্রজাতি টিকিয়ে রাখতে যত ধরনের কার্যক্রম আর সহায়তা দরকার তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন। সেই শুরুর একঝলক থেকে শুরু করে অভিযানের প্রতিটি মুহূর্ত এবং প্রজাতি সংরক্ষণে করণীয় সবকিছুই লিপিবদ্ধ করে ছাপার অক্ষরে ছাপিয়েছেন জোনাথন আউলস অফ অফ ইস্টার্ন বইটিতে। 

নার্ভ: অ্যাডভেঞ্চার্স ইন দ্য সায়েন্স অফ ফিয়ার 

পুরষ্কারপ্রাপ্ত দীর্ঘ-ধারার সাংবাদিক ইভা হল্যান্ড সর্বদাই একটা ভয়ে ভীত থাকেন; আর তা হচ্ছে প্রিয়জনের বা প্রিয় কিছু একটার মৃত্যু। আচমকা মায়ের মৃত্যুতে হল্যান্ড দারুণভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। ভয় জয় করে নিয়েছিল হল্যান্ডের সমস্তটা জুড়ে। কিন্তু হল্যান্ড নিজেকে টেনে তুলেছিলেন সেই অবর্ণনীয় আর অযাচিত আতঙ্কের মুখ থেকে। সেই ভয়ের বিজ্ঞানকে নিয়েই শুরু করেন নিজের তদন্ত আর গবেষণার কাজ। এছাড়াও, নিজেকে পরীক্ষার একটা বিষয় বানিয়ে তিনি বিমান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং পাহাড় চড়েছিলেন। তবে এসবই ছিল বিজ্ঞান, ভয় এবং চিকিৎসা ইতিহাস নিয়ে তার ব্যক্তিগত তদন্তের কাজ। 

নার্ভ; Image Source: time.com

পরবর্তীতে হল্যান্ড এমন একজনের সঙ্গে পরিচিত হন যিনি কিনা এমন এক ওষুধ নির্মাণ করতে চাচ্ছেন, যেটা খেয়ে মানুষ ভয়কে দূর করতে কিংবা অন্তত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে। হল্যান্ড তার এই অভিজ্ঞতা নিয়েই নিবন্ধগুলো সাজান যা নার্ভ নামক বইরূপে প্রকাশ পায়। এই বইতে হল্যান্ড দারুণ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন – কেন এবং কীভাবে আমরা ভয় পাই? বায়ুবাহিত ভাইরাসের মতোই কি করে ভয় সদলবলে লোকজন কিংবা ভিড়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: ভয়ের কি কোনো প্রতিকার আছে? যদি থেকেই থাকে তাহলে ভয়ের মুখোমুখি হওয়াটা কি সত্যিই নিরাময়ের যোগ্য? 

ক্লিন: দ্য নিউ সায়েন্স অফ স্কিন 

করোনার কথা উঠলেই আসে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার কথাও। করোনা এলো বলেই হাত ধোয়ার রীতিটা যেন অভ্যাসে বদলে গেল। কিন্তু, অভ্যাসটা কিন্তু সবারই আগে থেকেই ছিল; হয়তো এতটা নিয়মিত আর প্রচারিত ছিল না। যাকগে, মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক। বাইরে থেকে ফিরলেই কিংবা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার আশায় আমরা সাবানের ব্যবহার করে থাকি। ত্বক পরিষ্কার আবার ত্বকের যত্নেও সাবান জাতীয় সামগ্রী ব্যবহার আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। কিন্তু কথায় আছে, অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো কিছু বয়ে আনে না। ক্লিন গ্রন্থে চিকিৎসক এবং সাংবাদিক জেমস হ্যাম্বলিন কীভাবে আমরা আমাদের ত্বকের যত্ন নেই তা বিজ্ঞান এবং আমাদের সংস্কৃতি পরীক্ষা করে খুঁজে বের করেছেন। 

ক্লিন; Image Source: thepassionatereader.blog

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, অণুজীববিজ্ঞানী, অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ, ইমিউনোলোজিস্ট, নন্দনতত্ত্ববিদ, পুঁজিবাদী, সাবান-সামগ্রী ব্যবসায়ী, আমজনতা, অসাধু ব্যবসায়ী বা লোক- সকলের কাছে তিনি খুঁজে ফিরেছেন একটিই প্রশ্ন আর তা হচ্ছে – ক্লিন শব্দের অর্থ কী? একেকজনের দৃষ্টিকোণ থেকে শব্দের অর্থ আসে একেকরকম। কিন্তু তিনি যেটা খুঁজে পেয়েছেন তা হচ্ছে- ক্লিন শব্দের সঙ্গে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে আমাদের সচেতনতা একদমই তলানীতে। তারপর তিনি আমাদের ত্বকে বসবাসরত কোটি কোটি জীবাণু নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাই, ক্লিন গ্রন্থটি কেবলই একটি সাধারণ নিবন্ধ নয় বরং এটি বেশ যুগান্তকারী একটি বইও বটে। 

দ্য হিউম্যান কসমস: সিভিলাইজেশন অ্যান্ড দ্য স্টারস 

বিশ হাজার বছর কিংবা তারও অধিক সময় ধরে আমরা পৃথিবীর অস্তিত্বে টিকে আছি। বা বলা যায়, মহাজাগতিক অস্তিত্বে টিকে আছি। সৌরজগতের চক্র আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। তারাগুলোর সঙ্গে আমাদের সহজাত সম্পর্কই নির্ধারণ করে দেয় আমাদের শিল্প, ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক অবস্থান, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, এবং এমনকি আমাদের জীববিজ্ঞান পর্যন্ত। কিন্তু বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে আমাদের চারপাশের এই মহাজগত থেকে প্রতিনিয়ত আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। বরং তারাগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে এখন বিশ্বাস, অবাক এবং কুসংস্কার থেকে বদলে এমন একদিকে চলে গেছে যেখানের রাজা-মহারাজা হচ্ছে প্রযুক্তি। 

দ্য হিউম্যান কসমস; Image Source: goodread.com

তাই মহাজগত এখন স্ক্রিনের ডেটার মাধ্যমেই আমরা প্রত্যক্ষ করে থাকি; পূর্বের মতো খালি চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে নয়। প্রকৃতপক্ষে, বেশিরভাগ শহরের আকাশই ঢেকে যায় আলোক দূষণে। রাতের আঁধার জমাট বাধতে পারে না এই আলোক দূষণের তীব্রতায়। ঠিক এমন একটা মুহূর্ত থেকেই জো মারচেন্ট পাঠকদের নিয়ে বেরোন বিশ্বভ্রমণে। তিনি পাঠকদের নিয়ে যান ফ্রান্সের হাউজ অফ বুলস নামক এক গুহায়; সেখান থেকে বেরিয়ে ইংল্যান্ডের  গ্রাউঞ্জে, যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো মন্দির আছে; এসব জায়গায় মধ্যযুগের সন্ন্যাসীরা কীভাবে মহাজগত পর্যালোচনা করতো কিংবা তাশিয়ান নাবিকরা কী করে প্রতিকূল পরিবেশেও তারার সাহায্যে সমুদের দিক নির্ণয় করতো- সেসব সম্পর্কে জানতে পারে পাঠক। মহাজগত বা তারাগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিই আমাদের মানব করে তুলেছিল। জো মারচেন্ট এসব নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তার দ্য হিউম্যান কসমস নামক গ্রন্থে। 

ওয়েস্ট: ওয়ান উইমেন’স ফাইট এগেইনস্ট আমেরিকা’স ডার্টি সিক্রেট 

ক্যাথরিন কোলম্যান ফ্লাওয়ার্স বেড়ে উঠেছেন আলাবামার গ্রাম্য শহর লাউন্ডেসে; যেটাকে “ব্লাডি লাউন্ডেস বা কুখ্যাত লাউন্ডেস” বলা হয় সংঘাত আর বর্ণবাদী ইতিহাসের কারণে। কিন্তু বর্তমানেও সেখানে সংগ্রাম চলছে আর সেটাই হচ্ছে ফ্লাওয়ার্সের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। বেশিরভাগ আমেরিকানই মৌলিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধানের অন্তর্ভুক্ত সুবিধাসমূহ পায় না। বিশেষ করে, অসংখ্য গরীব আর দরিদ্র লোক যারা পরিষ্কার করার মতো যথেষ্ট সামর্থ্যবান নয়; তাই নোংরা পরিবেশেই তারা বসবাস করে। ফ্লাওয়ার্স একেই আমেরিকার ডার্টি সিক্রেট বলে অভিহিত করেছেন। 

ওয়েস্ট; Image Source: newyorker.com

ওয়েস্ট গ্রন্থের মাধ্যমে ফ্লাওয়ার্স দেখিয়েছেন, শ্রেণীগত বৈষম্য, জাতিগত বিবাদ এবং ভৌগলিক সমস্যা ও অসুবিধাসমূহ; যা শুধু আলাবামাই না বরং সমগ্র আমেরিকা জুড়েই বিদ্যমান। এটি এক অনুপ্রেরণামূলক গ্রন্থ যেখানে এক গ্রাম্য মেয়ে ছাত্র অধিকার আন্দোলনের সংগঠক থেকে ধীরে ধীরে ব্রায়ান স্টিভেনশন ইক্যুয়াল জাস্টিস ইনিশিয়েটিভের পক্ষ থেকে এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস চ্যাম্পিয়নে ভূষিত হয়েছেন। স্যানিটেশন যে কত বড় একটা সমস্যা, শুধু রাষ্ট্রীয়ই নয় বরং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও, তা-ই মূলত ফ্লাওয়ার্সের বইয়ের প্রতিপাদ্য বিষয়। 

হোয়াই ফিশ ডোন্ট এক্সিস্ট: এ স্টোরি অফ লস, লাভ, অ্যান্ড দ্য হিডেন অর্ডার অফ লাইফ 

ডেভিড স্টার জর্ডান একজন কর আদায়কারী ছিলেন। পাশাপাশি মাছ বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তার ছিল দারুণ খ্যাতি। কিন্তু তার আরো বিশাল রত্নভাণ্ডার দেখার সৌভাগ্য হয়নি এই বিশ্বের। কেননা, তার নমুনা সংগ্রহশালা বজ্রপাত, আগুন, এবং এমনকি ১৯০৬ সালের সান ফ্রান্সিসকো ভূমিকম্পে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার সহস্রাধিক আবিষ্কার এভাবেই কাচের জারে করে হারিয়ে গিয়েছিল কালের গর্ভে। এমন অবস্থায় অনেকেই হয়তো হাল ছেড়ে দিতো, হতাশ হয়ে পড়তো। কিন্তু জর্ডান? মোটেই এমন কিছু না করে বরং নিজ পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে পুনরায় নির্মাণ করেছিল তার সংগ্রহশালা। 

হোয়াই ফিশ ডোন্ট এক্সিস্ট; Image Source: chicagobookreview.com

ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও এর রিপোর্টার লুলু মিলার যখন এই গল্পের সন্ধান পান ততদিনে জর্ডান স্মৃতির অতলে হারানোতে মত্ত। কিন্তু সেই অতল থেকেই মিলার তাকে ফের তুলে আনলেন। ধীরে ধীরে মিলার জর্ডানের জীবনের গভীরে প্রবেশ করলেন। খুঁজে বের করলেন অজানা সব তথ্য। আর সেসব তথ্য নিয়েই সাজিয়ে ফেললেন আস্ত একটা বই। যার নাম হোয়াই ফিশ ডোন্ট এক্সিস্ট। কিছুটা জীবনী, কিছুটা স্মৃতিচারণ, কিছুটা বৈজ্ঞানিক অ্যাডভেঞ্চার মাখানো হোয়াই ফিশ ডোন্ট এক্সিস্ট এমন একটি গ্রন্থ – যা আমাদের শেখায় এমন একটি বিশৃঙ্খল দুনিয়ায় কী করে ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হয়। 

দ্য অ্যালকেমি অফ আস: হাউ হিউম্যানস অ্যান্ড ম্যাটার ট্রান্সফর্মড ওয়ান এনাদার 

বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখিকা আইনিসা রামিরেজ আটটি আবিষ্কার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন ভালো করে। যার মধ্যে ছিল ঘড়ি, ইস্পাত রেইলস, কপার কমিউনিকেশন ক্যাবল, ফটোগ্রাফিক ফিল্ম, বাল্ব লাইট, হার্ড ডিস্ক, বিজ্ঞানের ল্যাবের জিনিসপত্র এবং সিলিকন চিপস। এবং তিনি এটাই সফলতার সঙ্গে প্রকাশ করেছেন যে, এসব আবিষ্কার কেমন করে মানুষের অভিজ্ঞতাকে রূপদান করেছে। রামিরেজ সেই মহিলার কথা বলেন যিনি সময় বিক্রি করতেন, সেই আবিষ্কারকের কথা বলেন যিনি এডিসনকে অনুপ্রাণিত করেছিল, এবং তার কথাই ব্যক্ত করেন যার ইশারায় কম্পিউটার আবিষ্কারের দিক নির্দেশনা এসেছিল। 

দ্য অ্যালকেমি অফ আস; Image Source: scienceontaporwa.org

তিনি আরো অনেক কিছুই বর্ণনা করেন – ঘড়ি কীভাবে আমাদের ঘুমকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেললো; রেলপথ কী করে ক্রিসমাসের বাণিজ্যকীকরণে সহায়তা করেছিল; টেলিগ্রাফ কীভাবে হেমিংওয়ের লেখার স্টাইলকে প্রভাবিত করেছিল; এবং একজন তরুণ রসায়নবিদ কী করে আফ্রিকার নাগরিকদের পাসবুক তৈরি করতে গিয়ে পোলারয়েড ক্যামেরার আবিষ্কার করে ফেলেছিল। দ্য অ্যালকেমি অফ আস গ্রন্থে রামিরেজ আমাদের দেখান কী করে আবিষ্কারগুলো উদ্ভাবকদের দ্বারা রূপান্তরিত হয়েছিল এবং সেসব আবিষ্কার কী করে আমাদের সংস্কৃতি, এবং সবকিছু ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছকৃতভাবে বদলে দিয়েছিল। তিনি আরো প্রচার করেন উদ্ভাবন হচ্ছে সার্বজনীন।

This article is in Bangla Language. This is a Top 10 Science books list of 2020 from the renowned Smithsonian Magazine. 

Necessary references have been hyperlinked inside the article. 

Feature Image: Illustration by Shaylyn Esposito/smithsonian.com. 

Related Articles