Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেন ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার’ একটি পরিপূর্ণ সিনেমা?

২০১৬ সালের মুক্তি পাওয়া মারভেলের সিভিল ওয়ারের প্রায় ৩ বছর হতে চলল। সেলুলয়েড মারভেলের পথচলার শুরু পর থেকেই বহু অপেক্ষিত সিনেমার একটি হলো এই সিভিল ওয়ার। গত আট বছর ধরেই মারভেল তিলে তিলে গড়ে তুলেছে এই সিনেমার নকশা। আর সেইদিক চিন্তা করলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, ক্যাপ্টেন আমেরিকা সিভিল ওয়ার এই দশকের সেরা সুপারহিরো চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম। যদিও অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সেই ব্যাপারে। তাদের ধারণা এভাবে সবার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পেছনে উপযুক্ত অভিসন্ধির অভাব ছিল; অনেকটা সে কারণেই সিনেমাটি পরিপূর্ণতা পায়নি। আপাতদৃষ্টিতে যতটুকু সাধারণ মনে হচ্ছে, আসলে ছবির কাহিনী বা প্রেক্ষাপট এতটাও সাধারণ ছিলো না। আপনি একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই দেখবেন, দু’দলরেই পক্ষে/বিপক্ষে ভিন্ন রকমের উদ্দেশ্য। আর আমাদের আলোচনার মূল বিষয় সেখানেই।

তাছাড়া প্রথমবার দেখার পর যে কারোরই সিনেমার ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন মাথায় আসবে। স্ক্রিন জাঙ্কিস, ক্রিস স্টাকম্যানসহ আরো কয়েকজনের ইউটিউব পর্যালোচকদের রিভিউগুলোতে এই প্রশ্নগুলোর কিছু উল্লেখ ছিল। নিচের আলোচনা থেকে আমরা সেগুলোরই উত্তর খুঁজে নেয়ার চেষ্টা করবো। তবে যারা এখনো সিনেমাটি দেখেননি, তারা লেখাটি পড়ার আগে সতর্ক থাকবেন। আলোচনার সুবিধার্তে সিনেমায় দেখানো বেশ কিছু বিষয় এখানে উঠে এসেছে। অর্থাৎ সামনে ব্যাপক পরিমাণে স্পয়লার আছে!

প্রথমত, আয়রন ম্যান কেন এত সহজে চুক্তি মেনে নেন?

ছবির প্রথমাংশের একটি দৃশ্যের কথা চিন্তা করা যাক। শুরুর দিকে এমআইটি অ্যালামনাই অনার্স অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়ে টনি যখন ফিরছিল। লিফটের কাছে ‘হিউম্যান রিসোর্সে’র একজন নারী তার পথ আগলে দাঁড়ান। কিছুক্ষণ কথা বলার পরই পরিষ্কার হয় তার উদ্দেশ্য। এবং একপর্যায়ে নিজের ছেলের মৃত্যুর জন্যে তিনি সরাসরি দায়ী করেন টনিকে (অ্যাভেঞ্জারস: এজ অব আলট্রন সিনেমায় সোকোভিয়ার ব্যাটলে প্রাণ হারায় তার ছেলে)। দুঃখভরা নয়নে তিনি বলেছিলেন-“আমার ছেলের বদলা কে নেবে? সে তো মরে গেছে। আর এই জন্যে দায়ী তুমি, স্টার্ক।” কথাগুলো বলেই দৃশ্য ত্যাগ করেন তিনি।

সিভিল ওয়ার সিনেমার সেই দৃশ্য © Walt Disney

সেই দৃশ্যে আত্মপক্ষ সমর্থন করেননি, বরং একধরনের অপরাধবোধ দেখা যায় টনির চেহারায়। তার ভেতরে যে একধরনের অপরাধবোধ তৈরি হচ্ছে, সেটা পূর্বের দুই ছবিতেও (আয়রন ম্যান ৩ এবং অ্যাভেঞ্জারস: এজ অব আলট্রন) দেখানো হয়েছিল। তিনি মনে করতে শুরু করেন, তারা হয়তো মাঝে মধ্যে নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছেন কিংবা নিজেদের সুপিরিয়র মনে করা শুরু করেছেন। আর এজন্য তাদের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। এবং নিয়মের বাইরে গেলে তাদের সেজন্যে জবাবদিহিতা করতে হবে। সে কারণেই টনি সোকোভিয়া চুক্তির পক্ষে, আর তার সহকর্মীরা যদি সেই আইনের আওতায় আসতে না চায়, এবং জাতিসংঘের আইন অমান্য করে তাহলে তিনি তাদের বিপক্ষে লড়তেও প্রস্তুত।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাই বলে এতদিনের বন্ধুত্বের পর এত সহজে টনি ক্যাপের বিরুদ্ধে লড়তে যায়? ফ্রাঞ্চাইজির আগের সিনেমাগুলোতে ফুটে উঠেছে, কীভাবে ধীরে ধীরে টনি এবং রজার্সের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।

তবে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন কি না, তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রাক্কালে টনি রজার্সকে সেভাবে সমীহ করতেন না। প্রথম অ্যাভেঞ্জারস সিনেমার একটি সিনেমার দৃশ্যের কথাই ধরা যাক। সেই মুহূর্তে ক্যাপ্টেন আমেরিকা রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ড. ব্যানারকে লক্ষ্য করে টনি বলে ওঠে, “এর কথাই তাহলে বাবা সারাক্ষণ বকবক করতেন? আমার তো দেখে মনে হচ্ছে, হিমায়িত অবস্থায়ই রেখে দিলেই ভালো হতো।”

অ্যাভেঞ্জারস সিনেমার সেই দৃশ্য © Walt Disney

অ্যাভেঞ্জারসের দ্বিতীয় ছবিতে রজার্স ও টনির মধ্যে কথোপকথন থেকে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও তারা একজন আরেকজনকে তখনও সেভাবে বিশ্বাস করেন না। বিশেষ করে তাদের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্যের ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে টনি রজার্সকে বলে ওঠে,

“আমাকে পুরনো আমলের মানুষ ভাবতে পারো, কিন্তু কারও কোনো অন্ধকার দিক না থাকলে কেন যেন আমি তাকে বিশ্বাস করতে পারি না।”

এজ অফ আল্ট্রন সিনেমার দৃশ্য © Walt Disney

ঘটনা যত উদঘাটিত হচ্ছিল, ততই টনি মনে করতে শুরু করেন, তাহলে এই হচ্ছে ক্যাপের অন্ধকার দিক? তার পুরনো বন্ধুর জন্য তার দুর্বলতা, যার বিষয় আসলে সে সঠিক চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলে। তাছাড়া জিমোর পরিকল্পনার ব্যাপারে স্টার্ক কিছুই জানতো না। তাই যখন সে পার্কারকে নিজের দলে ভেড়াতে যায়, তখন ক্যাপ্টেনের সম্পর্কে সে পার্কারকে বলে,

“সে (রজার্স) ভুল করছে, কিন্তু সেটা সে জানে না এবং এজন্য সে বিপজ্জনক।” 

ক্যাপ্টেনের চুক্তির বিপক্ষে যাওয়ার কারণ কী?

প্রথমে একটি কথা বলে নেয়া ভালো, রজার্স নিজেও কিন্তু টনিকে সেভাবে পছন্দ করেননি। তিনি মনে করেন, টনি একজন চরম স্বার্থপর মানুষ, যে সবকিছুতে আগে নিজের ভালো দেখে। অ্যাভেঞ্জারস সিনেমায় এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায়। যদিও তখনও তাদের মধ্যে তেমন ভালো কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু টনির ফাইল পড়ে রজার্সের তাকে সেরকমই মনে হয়েছে। 

অ্যাভেঞ্জারস সিনেমার সেই দৃশ্য © Walt Disney

তাছাড়া তিনি মনে করেন, কোনো এজেন্সি বা সংস্থার হয়ে কাজ করার ব্যাপারটা তার কাছে মোটেও আদর্শ মনে হয়নি। কেননা সব সংস্থারই কিছু এজেন্ডা থাকে এবং সেটা যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। কিংবা তাদেরকে এমন কোথাও যেতে বলা হবে, যেখানে তাদের যাওয়া উচিত নয় অথবা তাদের এমন কোথাও যাওয়া দরকার, যেখানে জাতিসংঘ তাদের যেতে দেবে না। তাদের সব মিশন হয়তো ত্রুটিহীন না, তবে সেই মিশনে নিজেদের স্বাধীনভাবেই থাকাটাই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। তাই তিনি মনে করেন, জাতিসংঘের এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা মানে হচ্ছে নিজেদের অধিকার আত্মসমর্পণ করা। ওয়ান্ডাকে বলা তার সেই কথা থেকেই অনেকখানি পরিষ্কার হয়ে যায় ব্যপারটি। “আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষের জীবন বাঁচানো। কিন্তু সবসময় সবাইকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।”

পরে ভিয়েনার জাতিসংঘ সম্মেলনে এক বোমা বিস্ফোরণ হলে তার জন্য মিথ্যেভাবে দায়ী করা বাকি বার্নসকে যখন গ্রেফতারের আদেশ দেওয়া হয়, তখন ক্যাপ্টেন নিজেই যায় বাকিকে গ্রেফতার করতে। কারণ, সে মনে করে বাকিকে গ্রেফতারের জন্য সে-ই সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি।

সোকোভিয়া চুক্তি নিয়ে হয়তো তাদের বিতর্ক চলতে থাকতো, হয়তো তর্কের একপর্যায়ে রজার্স অবসরের সিদ্ধান্ত নিতো কিংবা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হতো। হয়েও গিয়েছিল, কিন্তু যখন শোনে টনি ওয়ান্ডাকে গৃহবন্দী অবস্থায় রেখেছে, সে তার মত পাল্টে ফেলে।

© Walt Disney

ঘটনা আরো বিপরীত দিকে মোড় নয় এর খানিক পরেই। বাকিকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার পর ড. থিও ব্রোসার্ডের ছদ্মবেশে হেলমুট জিমো বাকির উইন্টার সোলজার রূপ সক্রিয় করে তাকে মুক্ত করে দিলে বাকি পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। মারামারির একপর্যায়ে ক্যাপ্টেন বাকিকে সেখান থেকে গোপন এক জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে জ্ঞান ফেরার পর বাকি ক্যাপ্টেনকে বলে, সে ক্যাপকে চিনতে পারছে এবং তাকে জিমোর পরিকল্পনার কথা জানায়। সময়মত বাধা না দিলে জিমো ভয়ংকর কিছু একটা ঘটিয়ে বসবে।

ক্যাপ্টেন প্রথমে টনিকে ডাকার কথা ভাবলেও ফ্যালকনের কথায় তারও মনে হয় চুক্তির কারণে টনি কি আদৌ সাহায্য করতে পারবে কি না আর করলেও কতটুকু! এই ভেবে পরে সে আর পরে টনিকে কিছু বলেনি। পরে ফ্যালকনের সাহায্যে একটি টিম গঠন করা হয় জিমোকে থামানোর জন্যে।

অন্যদিকে আয়রন ম্যান দল ভারি করে ক্যাপ্টেন আমেরিকা আর তার সহকারীদের থামানোর জন্য। ব্যাপার হচ্ছে দু’দলেরই কেউই জানতো না পরস্পরের উদ্দেশ্য। যার কারণে, তারা ভাগ হয়ে যায় দুই ভিন্ন দলে এবং লিপ্ত হয় এই গৃহযুদ্ধে। প্রশ্ন আসতে পারে, ক্যাপ নিজেই যখন আগে বাকিকে গ্রেফতার করতে যাচ্ছিল সেখানে সে বাকিকে কেন সাহায্য করবে?

এর কারণ হচ্ছে বাকি যখন স্বীকার সে আর খুনাখুনি করবে না এবং জিমোর পরিকল্পনা খুলে বলায় ক্যাপ্টেন তাকে বিশ্বাস করে। বুঝতে পারে যে, জিমো তাকে আবার ব্রেইনওয়াশ করায় আগের ঘটনাটি ঘটেছে। তাই জিমোর পরিকল্পনা তুলে ধরতে এবং ভিয়েনার বিস্ফোরণের ব্যাপারে বাকির হাত নেই প্রমাণ করতে সে সাহায্য করতে রাজি হয়। 

রজার্স ও টনির এই ব্যাপারগুলো অনেকের কাছে পরিষ্কার থাকলেও সন্দেহ করছেন বাকিদের মোটিভ নিয়ে এবং আসলেই কি এয়ারপোর্টের সেই মারামারি দৃশ্যের দরকার ছিল কি না?

টিম আয়রন ম্যান

এখানে আয়রন ম্যানের মোটিভ আগেই বলেছি, তা-ও আবার ছোট করে বলছি। তাদের বিভিন্ন সংঘর্ষে ঘটে যাওয়া কনসিকোয়েন্সের জন্য টনি নিজেদেরকে দোষারোপ করছে। সে মনে করে, তাদের নিয়মের ভেতরে আসা উচিত আর তারা যদি সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে না পারে তাহলে টেরোরিস্টদের সাথে তাদের পার্থক্য কোথায় থাকলো? আর চুক্তি চায় বাকি আর তার সহযোগীদের গ্রেফতার। তাই টনি সেই পক্ষে। এবং তিনি মনে করেন, ক্যাপ্টেন বন্ধুত্বের কারণে অন্ধ হয়ে গেছেন।

ওয়ার ম্যাশিন/রোডস সরকারি লোক। সরকার যা চায় তিনি তা-ই করবেন সেটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে ব্ল্যাক উইডো, নাতাশা রোমানফ মনে করছেন তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস চলে গেছে। তিনি তাদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চান। সেজন্যে তিনি যা করা দরকার করবেন। যদি সোকোভিয়া চুক্তি হয় সেই সমস্যার সমাধান, তাতেও তার আপত্তি নেই।

টিম আয়রন ম্যান; Image Source: Space Battle Fourm

ভিশনের ব্যাপারটা আসলে খুব সাধারণ। তিনি যেমন এইজ অফ আল্ট্রনে বলেছিলেন, “আমি জীবনের পক্ষে”। বাকি যাতে আর কোনো খুন না করতে পারে তাই তিনি বাকিকে গ্রেফতার করতে চান। তাছাড়া সিনেমার প্রথমার্ধের সোকোভিয়া চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বলা তার কথাগুলো থেকেই তার অবস্থান পরিষ্কার। তার মতে, টনি আয়রন ম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই পৃথিবীতে এনহান্সড বা সোজা বাংলায় সুপার পাওয়ার আছে এমন মানুষের পরিমাণ বেড়েছে। এমন না যে তাদের অস্তিত্ব আগে ছিল না। তবে এরপর থেকেই তাদের অস্তিত্ব প্রকাশ পাওয়া শুরু হয়েছে। এবং সেই থেকে পৃথিবীতে ওয়ার্ল্ড-এন্ডিং-ইভেন্টের পরিমাণও বেড়েছে। এতে অ্যাভেঞ্জারসের দোষ নেই, তবে এ দুটোর মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান। আর তাদের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটিগুলোও ত্রুটির পর্যায়েই পড়ে।

ব্ল্যাক প্যান্থারের মোটিভ আসলে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, যেহেতু সে জিমোর পরিকল্পনার কথা জানে না। তার চোখে তার বাবার খুনি বাকি। আর সেজন্যই বাবার বদলা নিতে সে বাকিকে খুন করতে চায়। আর অন্যদিকে স্পাইডারম্যানের মোটিভ অনেকটা আয়রন ম্যানের মতোই। আয়রন ম্যান তাকে বুঝিয়েছেন, ক্যাপ্টেন আসলে ভুল করছেন, কিন্তু তিনি মনে করছেন যে তিনি ঠিক কাজটি করছেন এবং তা তাকে বিপজ্জনক করে তুলছে। তাই তিনি সাহায্য করতে রাজী হন। তাছাড়া সবার চোখে বাকি একজন টেরোরিস্ট।

টিম ক্যাপ

ক্যাপ্টেন আর উইন্টার সোলজার দুজনেই চায় জিমো বিপজ্জনক কিছু করার আগেই তাকে থামাতে। আর ক্যাপ্টেনের আরেকটি উদ্দ্যেশ্য হলো ভিয়েনার বিস্ফোরণে বাকিকে নির্দোষ প্রমাণ করতে। এবং এই ঝামেলাগুলো মিটে যাওয়ার আগপর্যন্ত তিনই লড়বেন।

ফ্যালকনের ব্যাপারে আসলে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। উইন্টার সোলজার সিনেমা থেকেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি ক্যাপকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন। ক্যাপ্টেনকে যেকোনো ব্যাপারে সহায়তা করতে তিনি কখনও পিছপা হবেন না। “যারা তোমাকে লক্ষ্য করে গুলি করে তারা একসময় আমাকেও গুলি করা শুরু করবে।” ক্যাপকে দেয়া এই ডায়লগটি তার মোটিভ প্রমাণ করতে যথেষ্ট।

টিম ক্যাপ; Image Source: Space Battle Fourm

স্কারলেট উইচ নিজের ভয়ের কাছে হেরে যেতে চায় না। সে ক্যাপ্টেনকে বিশ্বাস করে আর সমর্থন করে। এবং সে চুক্তির বিপক্ষে। এই চুক্তির কারণেই টনি তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় রেখেছিল। ক্যাপ্টেনের আমেরিকার প্রতি হক আইয়ের শ্রদ্ধার ব্যাপারটি আগের সিনেমাগুলোতে ফুটে উঠেছে। আর তিনিও পুরোপুরি চুক্তির বিপক্ষে বলেই অবসরে। কিন্তু ওয়ান্ডার একমাত্র ভাই মারা গেছে তাকে বাঁচাতে গিয়ে, তাই সেই ওয়ান্ডাকে সাহায্য করতে তিনি অবসর থেকে ফিরে আসেন।

একমাত্র অ্যান্টম্যানের মোটিভই মনে হবে একটু হাস্যকর। তবে আসলে তার মোটিভ কিন্তু খুব ছোট ছিল না। মনে আছে কি না, ক্যাপের সাথে পরিচয় পর্বের সময় ক্যাপ তাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমাকে কি বলেছে আমরা কাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছি?” সে বলেছিল, “হ্যাঁ, কিছু পাগলাটে গুপ্তঘাতক”। তাই সে এসেছিল সেই পাঁচ উইন্টার সোলজারকে থামাতে টিম ক্যাপকে সাহায্য করতে। এবং ক্যাপ্টেন আর অ্যান্টম্যানের আলাপচারিতা থেকেই বোঝা যায়, টিম ক্যাপ মূলত সেই পাঁচজন উইন্টার সোলজারদের থামানোর জন্যই গড়া। তবে তারা বুঝতে পেরেছিল সামনে বাঁধা আসবে, যার জন্যে তারা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল।

ভিলেন জিমোর আদৌ কি কোন ভূমিকা আছে এখানে? এবং ভিলেন হিসেবে সে কতটুকু শক্তিশালী?

ভিয়েনা বিস্ফোরণে বাকিকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানোর জন্যে দায়ী জিমো। সে বাকিকে না ফাঁসালে ক্যাপ্টেন গোপনে বাকিকে ধরতে যেত না। ঠিক তখনই কিন্তু বাকি ক্যাপ্টেনকে বলে যে, সে ভিয়েনাতে ছিল না এবং ভিয়েনাতে বিস্ফোরণটি সে ঘটায়নি। আর ক্যাপ কিন্তু বাকিকে ঠিক পালাতে সাহায্য করছিলেন না। তিনি চাচ্ছিলেন কোনো ধরনের খুনোখুনি ছাড়াই বাকিকে ধরতে।

তারপরই বাকিকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার পর উইন্টার সোলজার মোড রিএক্টিভের ঘটনা ঘটে। ড. থিও ব্রোসার্ডের ছদ্মবেশে হেলমুট জিমো বাকিকে পর্যবেক্ষণ করতে আসে এবং সোলজার কোড ব্যবহার করে তাকে আবার ব্রেইন ওয়াশ করে। তারপর আরও পাঁচজন উইন্টার সোলজারের অবস্থান জেনে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

আর তার মানে হচ্ছে জিমো যদি বাকিকে না ফাঁসাতো তাহলে ক্যাপ্টেন গোপনে বাকিকে ধরতে যেত না। সোকোভিয়া চুক্তি নিয়ে তাদের বিতর্ক চলতে থাকতো; হয়তো তর্কের একপর্যায়ে রজার্স অবসরের সিদ্ধান্ত নিতো কিংবা হয়তো একসময় চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হতো। এবং জিমোর ব্রেইন ওয়াশের পর যখন বাকি বার্লিন থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ক্যাপ তাকে থামাতে যায়, জিমোকে পেয়ে সে জিজ্ঞেস করে “তুমি কী চাও?” জিমো তখন উত্তর দিয়েছিল, “একটি সাম্রাজ্যের পতন।”

ক্যাপ্টেন ও জিমোর কথোপকথনের দৃশ্য © Walt Disney

আর বাকী পাঁচ উইন্টার সোলজারকে জাগিয়ে তোলার কোনো ইচ্ছেই জিমোর ছিল না। সে চাইছিল ক্যাপ/টনি যাতে তাকে অনুসরণ করে সাইবেরিয়া যায়। কারণ জিমো ভালো করেই জানে সে তাদেরকে খুন করতে পারবে না, তার থেকে অনেক শক্তিশালী লোকও সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই সে এমন একটা পরিকল্পনা করে যাতে অ্যাভেঞ্জারসরা একজন আরেকজনকে খুন করে। অতঃপর যখন ক্যাপ আর বাকি সাইবেরিয়াতে পৌঁছায় এবং ততক্ষণে টনিও জিমোর পরিকল্পনা টের পেয়েও ইউ.এনের কাউকে না জানিয়েই ক্যাপ এবং বাকিকে সাহায্য করতে সেখানে পৌঁছায়। তবে সেখানেই ক্যাপ্টেন এবং টনির মতো দর্শকরাও ঠিক তখনি জিমোর উদ্দেশ্য বুঝতে পারে।

ক্যাপ: তুমি কাউকে হারিয়েছ।
জিমো: আমি সবাইকে হারিয়েছি। এবং তুমিও হারাবে।

এবং তখন সে বাকির একটি ফুটেজ চালু করে। সেখানে দেখা যায় বাকি কীভাবে টনির বাবা-মাকে হত্যা করেছিল। ফুটেজ দেখার পর টনি যেভাবে ক্যাপের দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করেছিলা সে এ ব্যাপারে কিছু জানতো কিনা সেই দৃশ্যটি ছিল আবেগীয় দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী।

প্রথম থেকে ইচ্ছা করেই জিমোর পরিচয় রহস্য হিসেবে রাখা হয়েছিল চরিত্রের স্বার্থেই। প্রথম দিক থেকেই তার পরিচয়, মোটিফ বা পরিকল্পনা দেখানো হয়ে গেলে ছবির শেষের শক্তিশালী দৃশ্য তৈরি করা যেতো না। এমন কি এইজ অফ আল্ট্রনেও যদি জিমোকে একবার করে দেখানো হতো, তাহলেও তার রহস্যময় চরিত্র আর রহস্য থাকতো না। এবং পরে যখন তার রহস্য তুলে ধরা হলে রহস্য পরিণত হয় সহানুভূতিতে।

ব্ল্যাক প্যান্থারকে জিমোর দেয়া কনফেশনের দৃশ্য © Walt Disney

শেষের দিকে তার এবং টি’চালার মাঝের কথাগুলোতে তার উদ্দেশ্য আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। অ্যাভেঞ্জারস: এজ অফ আল্ট্রনের সোকোভিয়া ব্যাটলে প্রাণ হারায় জিমোর পুরো পরিবার। সেজন্য সে দায়ী করে অ্যাভেঞ্জারদেরই। তারই প্রতিশোধ নিতে সে এতকিছু করেছে। যেহেতু সে সোকোভিয়ান এক এলিট প্যারামিলিটারি ইউনিটের কমান্ডার ছিল, তার জন্য পুরো ব্যাপারটি সাজাতে ততটা বেগ পেতেও হয়নি। ব্ল্যাক প্যান্থার তখনই বুঝতে পারে সে ভুল মানুষকে (বাকি) খুন করতে যাচ্ছিল। সিনেমাতে জিমো তার ভূমিকা ভালোভাবেই তুলে ধরেছে এবং সেদিক দিয়ে সে সফল।

তবে হয়তো তার চরিত্র আরও শক্তিশালী আর মোটিভেশনাল করে দেখানো যেত। কারণ প্রথম দেখায় সে যা করছিল সেগুলো অস্বাভাবিক ঠেকছিল। এবং তাকে আরও স্ক্রিন টাইম দিলে হয়তো ভালো হতো। তখন তার ব্যাপারে যে প্রশ্নগুলো আসছে সেগুলো হয়তো তখন আর আসতো না। 

ক্যাপ্টেন ও ক্রসবোনসের মারামারির দৃশ্য © Walt Disney

যে ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি পীড়া দিয়েছে সেটি হলো, সিনেমায় ক্রসবোনসের যথাযথ ব্যবহার হয়নি। আরেকটি ব্যাপার হলো ভিশনের সদ্ব্যবহার হয়নি। তাছাড়া এয়ারপোর্টের মারামারি দৃশ্যে হঠাৎ করে ভিশনকে অনেকক্ষণ দেখা যায়নি। ব্যাপারটি কেমন যেন খাপছাড়া ছিল।

তবে এর পেছনে একটি যুক্তিই থাকতে পারে যে, টনি প্রথমে চেয়েছিল কোনো ধরনের মারামারি ছাড়াই ঝামেলার নিষ্পত্তি করতে। তাই শুরু থেকে ভিশনকে জড়াতে চায়নি। পরে যখন ঘটনা বিপরীত দিকে মোড় নিচ্ছিল তখন ভিশনকে ডেকে আনা হয়। আর স্পাইডারম্যান এবং ব্লাক প্যান্থারের একক চলচ্চিত্র হয়তো আগে বের হলে ভালো হতো। কিন্তু তার মানে এই না যে চরিত্রগুলোর মোটিফ বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। তাছাড়া প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান অসাধারণভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলে ধরেছেন।

লেখা শেষ করার আগে একজন সিনেমা কমিকবুক এন্থুজিয়াস্টিক হিসেবে বলবো, ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র। আমরা ভাগ্যবান যে আমরা এমন একটা সময় অতিবাহিত করছি যেখানে কমিক বইয়ে দেখা আমাদের পছন্দের চরিত্রগুলো এত সুন্দরভাবে বড় পর্দায় দেখতে পারছি। এবং উপরের তথ্যগুলো কোনো ফ্যানফ্যাক্টস বা কমিকবই থেকে তথ্য নিয়ে তৈরি ফ্যান থিওরি নয়। প্রত্যেকটি তথ্যই সিভিল ওয়ার সিনেমা এবং সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের অন্যান্য চলচ্চিত্রে থেকে তুলে ধরা।

This article is an explanation of Captain America: Civil War cinema also why it works and its perfect in its own way. Note that, Captain America: Civil War is a 2016 American superhero film based on the Marvel Comics character Captain America, produced by Marvel Studios and distributed by Walt Disney Studios Motion Pictures. It is the sequel to 2011's Captain America: The First Avenger and 2014's Captain America: The Winter Soldier, and the thirteenth film in the Marvel Cinematic Universe (MCU).

Featured Image: Disney

Related Articles