Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিভিন্ন সময়ে মহামারী যেভাবে পাল্টে দিয়েছে পৃথিবীকে

বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া মহামারীসমূহ কেবল এককালীন ক্ষতি করেই ক্ষান্ত হয়নি। একদিকে যেমন নিয়ে গিয়েছে অজস্র প্রাণ, তেমনই রেখে গিয়েছে সভ্যতার নানা পরিবর্তন। অর্থনৈতিক, সামাজিক, কৃষি ব্যবস্থাপনা সব ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু পরিবর্তন রেখে যায় মহামারীসমূহ। এর প্রভাবে কখনও পুরো পৃথিবীর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, আবার কখনও একটি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আর্থসামাজিক ব্যবস্থাপনা সবকিছুরই চেহারা পাল্টে দিয়েছে।

মানবসভ্যতার ইতিহাসের শুরু থেকে পর্যালোচনা করলে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অজস্র মহামারীর সন্ধান পাওয়া যায়। এর কোনোটির ব্যাপ্তি ছিলো বিশ্বব্যাপী। কোনোটির বিস্তৃতি ছিল কেবল একটি দেশ কিংবা আঞ্চলিক কয়েকটি দেশে। আবার কোনো কোনো মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো মহাদেশ ব্যাপী। এর প্রায় সবকটিই বিপুল পরিমাণ ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি রেখে গিয়েছে নানাবিধ পরিবর্তন। আর বৈশ্বিক মহামারীর খাতায় সর্বশেষ সংযোজন হলো কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস।

২০১৯ এর ডিসেম্বর থেকে দ্রুতই পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে মরনঘাতি করোনা ভাইরাস। এর ফলে ইতোমধ্যেই পৃথিবীবাসী দেখেছে ব্যাপক পরিবর্তন। লকডাউন, অর্থনৈতিক মন্দা, শ্রমবাজারের বেহাল দশা, চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ পরিণতি এবং আরও অনেক কিছু। তবে পূর্ববর্তী মহামারীগুলোর ক্ষেত্রে কেমন সব পরিবর্তন দেখেছে পৃথিবীবাসী? চলুন তা জেনে নেয়া যাক।

সমাজের দরিদ্র শ্রেণির দ্রুত উন্নতি

১৪শ শতাব্দীতে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়ে একধরনের প্লেগ রোগ, যার পরিচিতি ব্ল্যাক ডেথ বা কালো মৃত্যু নামে। খ্রিষ্টাব্দ ১৩৪৬ থেকে ১৩৫৩ সাল পর্যন্ত ছিল এই মহামারীর ব্যপ্তিকাল। ধারণা করা হয়, এ সময়ের মাঝে ৩ মহাদেশে ৭৫–২০০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এশিয়া মহাদেশ থেকে ছড়িয়ে পড়া এই রোগের বিস্তার ঘটেছিল মালাবাহী জাহাজে পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে। জাহাজের নাবিকরাই ছিল এই প্লেগ রোগের জীবাণুর মূল বাহক।

শিল্পির তুলিতে প্লেগ মহামারী; Image source: ORONOZ/ALBUM

তবে এই মহামারীতে আক্রান্ত দেশগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থার যেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তা পুরোপুরি বদলে যায় মহামারী পরবর্তী সময়ে। বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ফলে শ্রম বাজারে দেখা দেয় অসামঞ্জস্যতা। এর ফলে সমাজের দরিদ্র শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য তখন কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনেকেই তাদের প্রচলিত পেশা ছেড়ে কৃষিকাজে যোগ দেন। কারণ কৃষকরা তখন তাদের উৎপাদিত শস্যের জন্য অধিক অর্থের দাবি করতে পারছিল। ফলে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ দ্রুত তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করছিল। এমনকি তখন যারা কেবল একজন ব্যাক্তির হয়ে কাজ করতেন, তারা একাধিক জায়গায় কাজ করার সুযোগ পায়। পাশাপাশি এলাকাগুলোর প্রশাসন জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য কঠোর হতে শুরু করে। অর্থাৎ ১৪শ শতাব্দীর প্লেগ মহামারী পরবর্তী সময়ে ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকায় আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয় হতে শুরু করে।

মহামারী পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন

যদিও একটি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা রাতারাতি বদলে যেতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন ব্যাপক পরিকল্পনা ও পর্যালোচনা। আর এর সবকিছুই নির্ভর করে দেশের নীতিনির্ধারকদের উপর। ১৯১৮ সালে পুরো পৃথিবীতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে এক ইনফ্লুয়েঞ্জা জীবাণু। যার অপর নাম স্পেনিশ ফ্লু। ধারণা করা হয়, এই মহামারীর কারণে পুরো বিশ্বে প্রায় ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে। আর এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি। কিন্তু এই মহামারী পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত দেশগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থায় দেখা যায় ব্যাপক পরিবর্তন।

১৯২০ সাল থেকে রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য সহ আরও অনেক দেশ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু করে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র চালু করে কর্মজীবী ভিত্তিক স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থা। উভয় ক্ষেত্রেই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে দেশের সরকার। ফলে পরবর্তী কোনো দুর্যোগ বা মহামারীতে চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার আশংকা অনেকাংশেই কমে যায়।

পাশাপাশি দেশগুলোর হাসপাতাল কাঠামোতে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। হাসপাতালের ভেতরকার পরিবেশ জীবাণুমুক্ত এবং নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে কাঠের তৈরি সকল আসবাবপত্র সরিয়ে ধাতব উপাদানে তৈরি আসবাব সরবরাহ করা হয়। এর ফলে হাসপাতালের ভিতর জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত অনেক সহজ হয়ে যায়।

মহামারীর কারণে বদলে যেতে পারে চিকিৎসা ব্যবস্থা; Image source: AIDS Healthcare Foundation

 

সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধি

বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে ব্যাক্তিগত সুরক্ষার প্রধান কিছু উপকরণ হলো, বাইরে বের হলে মুখোশ বা মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা এবং স্যানিটাইজার দিয়ে নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা। তাছাড়া চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য রয়েছে পিপিই এবং অন্যান্য বিশেষ সুরক্ষা সামগ্রী। এ সকল সুরক্ষা সামগ্রী কেবল বর্তমান সময়ের জন্যই নয়, পূর্ববর্তী সকল মহামারীর সময়ও এগুলোর ব্যবহার ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে এগুলোর গঠন এবং কার্যকারিতায় এসেছে নানা পরিবর্তন। সকল মহামারীর ক্ষেত্রেই লক্ষণীয় হলো, নিজেদের সুরক্ষার জন্য সাধারণ জনগণ ব্যাপক আকারে সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার শুরু করে।

কালক্রমে ধরন বদলেছে সুরক্ষা সামগ্রীর; Image source: Smith’s Lawyers

ঊনবিংশ শতাব্দীতে পিপিই’র ব্যবহার ছিল কেবল অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের ব্যবহারের জন্য। সময়ের সাথে সাথে এর ব্যবহার চিকিৎসা ক্ষেত্রেও শুরু হয়। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এসে পিপিই এর ব্যবহার চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং এর বহুবিধ ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে চিকিৎসাকর্মী ছাড়াও নিরাপত্তাকর্মীদের মাঝেও এই পিপিই এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

বাড়ি নির্মাণে বিশেষ সতর্কতা

মহামারী ছড়িয়ে পড়া রোধে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সব জায়গায় দেয়া হচ্ছে কড়া নির্দেশনা। পূর্ববর্তী মহামারীর ক্ষেত্রেও বিষয়টি একইরকম ছিল। তবে তখন অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার তেমন প্রচলিত না থাকায়, শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ছিল বেশ কঠিন কাজ।

১৯১৮ সালের স্পেনিশ ফ্লুয়ের সময় চিকিৎসা গবেষকরা লক্ষ্য করেন, ঘনবসতি এলাকায় যেকোনো জীবাণু খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এসব অঞ্চলে জীবাণুর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করাও অনেকটা সহজ হয়ে উঠবে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ঘোষণা করেন, একটি বাড়ির পাশে অপর একটি বাড়ি নির্মাণের সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব অবশ্যই রাখতে হবে। অন্যথায় সেখানে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া যাবে না। পরবর্তীতে আরও অনেক দেশে এই নিয়ম চালু করা হয়।

এই নিয়মের কারণে যেসব অঞ্চলে ঘন বসতি নেই, সেসব অঞ্চলে সহজেই জীবাণুর গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কিন্তু দরিদ্র কিংবা স্বল্প উন্নত দেশে এই নিয়মের ব্যবহার বেশ অলক্ষণীয়। কারণ সেখানে বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর বাসস্থান নির্মাণে এই নিয়ম মেনে চলা সত্যিই কঠিন। ফলে এসব দেশে মহামারী দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিশ্বকে কীভাবে বদলে দিচ্ছে?

এটা খুবই অনুমেয় যে, যেকোনো মহামারী দেখা দিলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় দেশের বাণিজ্য ও চিকিৎসা খাত। আপনি যতই আগাম প্রস্তুতি রাখেন না কেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনাকে হিমশিম খেতে হবে। স্বল্প উন্নত কিংবা বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশসহ অনেক উন্নত দেশেই এখন অর্থনীতি ও চিকিৎসা খাতের বেহাল দশা

এর একটি বড় প্রমাণ হলো বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ করে কমে যাওয়া। এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদাও কমে যায়। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো দেখছে চরম অর্থনৈতিক মন্দা। পাশাপাশি স্বল্প উন্নত দেশগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। এসব দেশের অর্থনীতি যেসকল খাতের উপর নির্ভরশীল, তার বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে শ্রম বাজারে দেখা যাচ্ছে নানা বিশৃঙ্খলা।

হঠাৎ করে ব্যবহার কমে গিয়েছে জ্বালানি তেলের; Image source: Information Age

তবে এসব মন্দার মাঝেও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কেউ কেউ দেখছেন উন্নতির আশা। ই-কমার্স ব্যবসায় যারা নিয়োজিত আছেন, তারা এই সময়কে কাজে লাগিয়ে অধিক সংখ্যক গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে পারছেন। জরুরি ব্যবহারের পণ্য ছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এখন দিন দিন ই-কমার্সের দিকে ঝুঁকছেন।

এতদিন যারা নির্দিষ্ট অফিস ছাড়া কাজ করতে পারতেন না, তারাই এখন কোনো প্রকার অফিস ছাড়া বাসা থেকেই গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন। তাই ধারণা করাই যায় করোনা ভাইরাস পরবর্তী সময়ে বিশ্ব এক ভিন্ন রকম অর্থনৈতিক বিপ্লব দেখতে চলেছে।

This is a Bengali article based on how pandemics have change the world throughout years.

All the references are hyperlinked.

Feature image: Yorgos Karahalis/Bloomberg

Related Articles