Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

করোনা পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ

চলমান করোনা ভাইরাস মহামারীর প্রভাবে সকল দেশের জনগণের জীবন একদিকে যেমন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে, একই সাথে প্রায় সকল রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থার চিন্তার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কীভাবে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল রাষ্ট্রের সরকার কাজ করছে জনগণের জরুরি সেবা নিশ্চিতের জন্য। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি, ক্ষুদা নিবারণ এবং দারিদ্রের হার নিয়ন্ত্রণেই প্রায় সকল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আর এই অর্থের মূল যোগান দাতা হলো বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক সমূহ এবং দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার।

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনে গোটা দেশ; Image Source: United News Bangladesh

বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র সচল রাখার জন্য। কিন্তু মহামারীর প্রভাবে রাষ্ট্রের আয়ের প্রায় সকল উৎস এখন বন্ধ হয়ে আছে। যদিও বাংলাদেশ সহ বিশ্বে বেশ কয়টি দেশ সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেছে, কিন্তু তা একটি দেশের অর্থনীতির চাকা পুরোপুরি সচল করতে যথেষ্ট নয়। বরং চলমান পরিস্থিতিতে দেশের দারিদ্রের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এরকম পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পূর্ববর্তী বিভিন্ন দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিশ্ব ব্যাংক কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমের পরামর্শ অনুসরণ করলে দেশের অর্থনীতির চাকা পুনরায় সচল করা সম্ভব। এই কার্যক্রম তৈরি করার আগে মাথায় রাখা হয়েছে একটি দেশের জনগণের মৌলিক চাহিদা, তাৎক্ষণিক চাহিদা, দেশের অবকাঠামোর ভিত্তি এবং চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় উপকরণ বনাম ব্যবহারযোগ্য উপকরণ। সেই সাথে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিভিন্ন দেশের পূর্ববর্তী দুর্যোগ পরবর্তী পদক্ষেপের ধরন। এসব বিষয় মাথায় রেখে স্বল্প-মেয়াদী এবং দীর্ঘ-মেয়াদী দুরকম সময়সীমার কার্যক্রমের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এই কার্যক্রমগুলোতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে দেশের শ্রম বাজার বৃদ্ধিকরণ, অর্থনীতি সচল করা, ভবিষ্যৎ দুর্যোগের আগে পূর্ব প্রস্তুতি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশ সবুজায়নের উপর। চলুন জেনে নেয়া যাক বিশ্ব ব্যাংকের সেই পরামর্শগুলো

বিশ্বজুড়ে ক্রমশই বাড়ছে দারিদ্রের হার; Image Source: www.orfonline.org

স্বল্প-মেয়াদী কার্যক্রম

স্বল্প-মেয়াদী কার্যক্রমে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে শ্রম বাজার বৃদ্ধি এবং দ্রুততম সময়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচলের দিকে। যাতে অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের অর্থনীতির চাকা পুনরায় সচল করে তোলা যায়।

শ্রম বাজার বৃদ্ধি: দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় বেকারত্ব। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এই দুর্যোগকালীন সময়ে বেকারত্বের হার কয়েকগুণ আকারে বেড়ে চলেছে। আর বেকারত্বের অধিক হার একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রথম বাঁধা। এজন্য দুর্যোগ পরবর্তী প্রথম কাজ হলো দেশের শ্রম বাজার স্থিতিশীল করা। চাকুরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনঃবহাল করা কিংবা দ্রুততম সময়ে দেশে চাকরির নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা।

দ্রুত চালু করতে হবে দেশের শ্রম বাজার; Image Source: Dhaka Tribune

হারানো চাহিদা পূরণ করা: দুর্যোগকালীন সময়ে অনেক পণ্যের চাহিদাই বাজার থেকে উঠে যায়। আবার অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য ও চাহিদা লাগাম ছাড়া হয়ে পড়ে। এর কারণ হলো জনবল এবং কাঁচামালের সংকট। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাজারে সেই পণ্যের চাহিদা পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জনবল বৃদ্ধি এবং কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

সময় এবং ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক থাকা: যেহেতু এটি স্বল্প-মেয়াদী পরিকল্পনা এবং অল্প সময়ের মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তাই ঝুঁকির বিষয়টি থেকেই যায়। অদক্ষ জনবল এবং দুর্নীতি এক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি দুর্যোগ পরবর্তী দেশের সকল অঞ্চলের পরিস্থিতি এক থাকে না। এলাকাভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। তাই পরিকল্পনা হাতে নেয়ার আগে সময়ের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। স্বল্প-মেয়াদের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করলেও, পরবর্তীতে এটি দীর্ঘ-মেয়াদে অর্থনীতির চাকা সচল করতে সহায়তা করবে। এজন্য জনবলকে প্রশিক্ষিত করা এবং কর্তৃপক্ষের সু-নজর খুবই জরুরি।

দীর্ঘ-মেয়াদী কার্যক্রম

দীর্ঘ-মেয়াদী কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য হলো স্বল্প-মেয়াদে হাতে নেয়া পরিকল্পনার অব্যাহত গতি ধরে রাখা। চাহিদাসম্পন্ন পণ্য বাজারে আনার পাশাপাশি পরবর্তী দুর্যোগের জন্য আগাম প্রস্তুতি নেয়া এবং প্রকৃতির সবুজায়নের দিকে নজর দেয়া এই কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য।

বাজারে পণ্যের চাহিদা ধরে রাখা: স্বল্প-মেয়াদী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পর নজর দিতে হবে সেই পণ্যের চাহিদায় যাতে নতুন করে অসামঞ্জস্যতা দেখা না দেয়। এজন্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি বাজারে নতুন পণ্য পরিচয় করানোর মাধ্যমে বাজার বৃদ্ধি করতে হবে। জীবনমান সহজ করে, পরিবেশ দূষণ রোধ করে, কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনে এমন সব পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ দিতে হবে। এ সকল পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে নজর দিতে হবে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে। কারণ দক্ষ জনশক্তি ছাড়া পরবর্তী দুর্যোগের জন্য আগাম প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব নয়।

বৃদ্ধি করতে হবে দেশের পণ্যের বাজার; Image Source: The Statesman

পরবর্তী দূর্যোগের ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি নেয়া: চলমান দূর্যোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পরবর্তী দূর্যোগের জন্য প্রস্তুতি নেয়া দরকার। এক্ষেত্রে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, জনজীবনে দূর্ভোগ, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের অপ্রতুলতা, নতুন করে অর্থনৈতিক মন্দার আশংকা এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে কর্মসূচী হাতে নেয়া উচিত। চলমান কোভিড-১৯ এর দূর্ভোগ কবে শেষ হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা শংকা। তার উপর পরবর্তী দূর্যোগে পরিস্থিতি যে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

পরিবেশ রক্ষায় প্রকৃতির সবুজায়ন: দীর্ঘমেয়াদী সকল পরিকল্পনার মাঝে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মাঝে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের নিঃসরণ কমানো অত্যন্ত জরুরি। সেই সাথে কমাতে হবে বায়ু ও পানি দূষণ। পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে অধিক জোড় দিতে হবে। পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে পরবর্তী দূর্যোগের আগে আমরা হয়তো প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগও পাব না।

জোড় দিতে হবে পরিবেশ বান্ধব শিল্পায়নে; Photographer: Md. Maksudur Rahman

বিশ্ব ব্যাংকের এসকল পরামর্শ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে একটি দেশের সরকার প্রশাসনকে। এজন্য কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করা অতীব জরুরি তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু এখানে স্বল্প সময়ে অর্থনীতি সচলের কথা বলা হচ্ছে, তাই পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে ঝুঁকি না নেয়াই ভালো। যেহেতু সিদ্ধান্ত নেয়ার কাজ রাষ্ট্রের প্রশাসনের উপর, তাই পরিস্থিতি ভিত্তিতে সেরা পরামর্শ নিয়েই এগোনো উচিত।

This is a Bengali article focusing on the suggestions of the world bank on recovering economy after COVID-19.

All the references are hyperlinked.

Feature image: Dhaka Tribune

Related Articles