Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চীনের ভূতুড়ে শহরগুলোর বর্তমান হাল হকিকত

ভাবুন তো, আপনি এমন একটি শহরে গেলেন যেখানে বিশাল বিশাল অট্টালিকা রয়েছে, বসবাসের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তেমন মনোরঞ্জনের জন্যও রয়েছে পার্ক, শপিং মল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র একটি জিনিসেরই অভাব আছে এখানে। তা হলো মানুষ। পুরো শহরে একটি মানুষও খুঁজে পাবেন না। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে বাস করে এমন কোনো শহর সম্পর্কে জানা যেখানে সব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও কেউ থাকে না সেটা আসলেই আমাদের জন্য অবাক করার মতো বিষয়।

তবে চীনের জন্য এই ব্যাপারটা নতুন নয়। চীনে এমন অনেক শহর রয়েছে যা জনমানবহীন। তবে শহরগুলো কোনো আধুনিক শহরের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। শহরগুলো পরিত্যক্ত হলেও এগুলো দেখাশোনার পেছনে খরচ হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এসব শহরের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির শিকারও হতে হচ্ছে দেশটিকে। 

চীনের ভূতুড়ে একটি শহর; Image source: cnn.com

লক্ষ লক্ষ নির্জন অ্যাপার্টমেন্ট 

চীনের এই ভূতুড়ে শহরগুলো প্রায় ২০ বছর আগে ছিল গ্রাম্য এলাকা। আধুনিকতার বিশেষ কোনো ছাপও দেখা যেত না এসব গ্রামে। তবে আঞ্চলিক বাসিন্দায় ভরে ছিল এলাকাগুলো। তখন বোঝার কোনো উপায় ছিল না যে একসময় এসকল স্থানে কেউ থাকবে না। প্রায় ১০ বছর আগে যখন এসব শহরের উন্নয়নের কাজ শুরু হয় তখনও এরকম পরিস্থিতির কথা সকলের চিন্তার বাইরে ছিল। এই শহরগুলোর কয়েকটির যাত্রা শুরু হয় ২০০০ থেকে ২০০৩ সালের দিকে।

ভিন্ন ভিন্ন গবেষক এবং প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে এরকম জনমানবশূন্য শহর আছে তা হিসাব করেন। যেমন- অনেকে স্যাটেলাইট ছবির উপর নির্ভর করে এই হিসাব করে থাকেন। তাই সংখ্যাটি কম-বেশি হতে পারে। তবে সবচাইতে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় ‘এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ’ এর রিপোর্ট থেকে। এই রিপোর্ট তৈরি হয় কোনো বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে প্রতিদিন কতটা বা আদৌ কোনো ইন্টারনেট সার্ভিস ব্যবহার করা হচ্ছে নাকি তার উপর নির্ভর করে।

৭ মাসের গবেষণার পর তারা একটি রিপোর্ট তৈরি করে। এতে যেমন আসল ভূতুড়ে শহরগুলো চেনা সম্ভব হয়, তেমনই যে শহরগুলো সম্পর্কে দুর্নাম ছিল যে সেখানে মানুষের কোনো অস্তিত্ব নেই এমন ভ্রান্ত ধারণাও দূর হয়। যেমন রুশান এবং কাঙবাশি। রুশান চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের দ্রুত বর্ধনশীল শহর। আর কাঙবাশি খনিতে পরিপূর্ণ একটি শহর। বাহ্যিকভাবে দেখলে মনে হয় শহরটিতে কোনো মানুষের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ভালোমতো কয়েক মাসের জন্য লক্ষ্য করার পর জানা যায় যে, পুরো রুশান বছরের এক মৌসুমে এবং ছুটির দিনগুলোতে ভরা থাকে। আবার অন্যান্য সময় ও সপ্তাহের কার্যদিবসে শহরটি খালি হয়ে যায়। অর্থাৎ এটি বাকি ভূতুড়ে শহরগুলোর মতো নয়, বরং এটি একটি রিসোর্ট শহর।

রুশান; Image source: pixabay.com

পার্কিং ইউনিভার্সিটি এবং বাইডুর ‘বিগ ডাটা ল্যাব’ এর মতে, ইন্টারনেট ব্যবহার করেই ভূতুড়ে শহর খুঁজে বের করা বাকি পদ্ধতির তুলনায় বেশি গ্রহণযোগ্য। এমআইটির প্রকাশিত মানচিত্রে ২০টি শহর শনাক্ত করা হয়। তবে তারা দাবি করে যে, আসলে ৫০টিরও বেশি শহর তারা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তবে কিছু প্রতিবন্ধকতা এবং বিপদের আশঙ্কা থাকায় সেগুলোর অবস্থান আপাতত প্রকাশ করা হচ্ছে না।

এই প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত তথ্যের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্রে সবাই গুগল ব্যবহার করে না, আবার চীনে অবস্থানকারী সকলে যে বাইডু ব্যবহার করবে তা-ও না। এর মানে যারা বাইডু ব্যবহার করছে না তারা এই হিসাব থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে, হিসাবে একটি অস্পষ্টতা থেকে যাচ্ছে। উল্লখ্য, বাইডু হলো একধরনের ওয়েব ব্রাউজার, যা চীনের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট কোম্পানি, যা নিজেদের দেশের অ্যান্ড্রয়েড এবং উইন্ডোজে ব্যবহারের তাগিদে ডেভেলপ করা হয়।

বাইডু ব্রাউজার; Image source: download.cnet.com

যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে সেই মোতাবেক, বর্তমানে এসব এলাকায় মোট ৬৪.৫ মিলিয়ন অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এই সংখ্যাটি চীনের স্টেট গ্রিড করপোরেশন দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। আর এই নির্ধারণের কাজ করা হয় ২০১০ সালে পর পর ছয় মাস কোন কোন শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না সেটার উপর নির্ভর করে। 

এগুলোকে কি সাধারণ শহরে পরিণত হওয়া সম্ভব?

‘চাইনাস গ্রেট ওয়াল অব ডেট’ এর লেখক ডিনি ম্যাকমাহনের মতে, কোনো শহরে জনবসতি থাকবে কি না অথবা থাকলেও বেশি থাকবে নাকি কম তা নির্ভর করে ঐ শহরে চাকরি, ব্যবসা তথা আয় করার সুযোগের উপর।

ডিনি ম্যাকমাহন; Image source: uschina.org

বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা ছাড়া কেউ নির্জন কোনো শহরে যেতে রাজি হবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, জীবনযাপনের জন্যে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান আছে কি না সেটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেন্দ্রীয় চীনের হেনান প্রদেশের রাজধানী ঝেংডংয়ের সরকার ফক্সকনকে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলারের ইনসেন্টিভ দেন।

ফক্সকন; Image source: theverge.com

ফক্সকন হলো অ্যাপল আইফোনের তাইওয়ানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানি। ইনসেন্টিভের কারণে কোম্পানিটি ঐ শহরে শিল্প কারখানা খুলতে রাজি হয়, যা প্রায় ২,০০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে সক্ষম। এর ফলে রাতারাতি একটি ভূতুড়ে শহর সাধারণ একটি শহরে পরিণত হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করে। তবে চীনের অধিকাংশ ভূতুড়ে শহরে পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকার কারণে অথবা সুযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা না থাকায় এগুলো তাদের অলাভজনক অবস্থা থেকে এখনও বের হয়ে আসতে পারেনি। আবার বেইজিং থেকে ১১০ কিলোমিটার থেকে দূরে জিং জিন নিউ সিটি তার জনমানবহীন অবস্থা থেকে উঠে আসতে পারে দ্রুতগতির রেলওয়ে নির্মাণের কারণে।

জিং জিন নিউ সিটির রেলওয়ে নির্মাণ; Image source: fortune.com

এখন এই শহরে বেশ কয়েকটি দোকান ও রিসোর্ট চালু হয়ে গেছে। এগুলো মূলত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বা অন্য কোনো ধরনের ছুটির সময়ে চালু থাকে। এটি রুশানের মতো একটি রিসোর্ট সিটিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু শহরটির নতুন কিছু নিয়মকানুনের কারণে আর কেউ এখানকার অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে পারছে না। 

এর প্রভাব কী?

প্রথমেই ছোট একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যাক। মনে করুন, কোনো দেশে ফল এবং খাদ্যশস্যের যোগান চাহিদার তুলনায় অনেক কম। কম বলতে একেবারে নেই নেই অবস্থা। এরকম কোনো পরিস্থিতিতে খাদ্যের মূল্যের ক্ষেত্রে যে অস্বাভাবিক উত্থান দেখা যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মধ্যপ্রাচ্যে খাদ্যের পেছনে আয়ের শতকরা ৪০ ভাগ খরচ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেয়।

লিবিয়ার তেল সঙ্কট শুধু সেই দেশ নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের তেলের বাজারে প্রভাব ফেলে। মূল্যবান কপার এবং অন্যান্য দামী পদার্থের কারণে ভারত এবং ব্রাজিলে একসময় মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়। জাপানে ভূমিকম্প এবং ইউরোপে একইসাথে ঋণ সংকট দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্রকে নিজে দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে বেশ বেগ পেতে হয়। একটি বিষয় হলো, কোনো একটি দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ উত্থান-পতন এবং সংকট শুধু সেই দেশকেই নয়, বরং সমগ্র বিশ্বকেই প্রভাবিত করে।

খাদ্যের উচ্চ দাম, বৃদ্ধির হার কম হওয়া কিংবা উচ্চ ঋণের সাথে সাথে বর্তমানে আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। চীনের নবনির্মিত জনমানবহীন শহরগুলোই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মূল সমস্যার জন্ম দেয়। এসব শহরে তৈরি বিল্ডিং বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এর মূল কারণ হলো এগুলোর মূল্য সাধারণ জনগণের সামর্থ্যের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বরং সেগুলো দেখাশোনার খরচ অনেক বেশি। এতে বিনিয়োগ করার মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। একটি দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ কমে গেলে স্বভাবতই এর জিডিপিও কমে যায়, যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাছাড়া চীনের সাথে বিশ্বের যেসব দেশ ব্যবসা-বাণিজ্য করছে সেসব দেশও এ কারণে ক্ষতির শিকার হতে পারে। 

চীনের ভূতুড়ে শহরগুলোকে যদি ঠিকমতো কাজে লাগানো যায় তাহলে এগুলো যে দেশটির অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাছাড়া জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচাইতে বড় দেশ চীনে জনমানবহীন শহরগুলোতে বসবাস এবং কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করা গেলে তা অবশ্যই লাভজনক হবে।

This article is in Bangla language. It's about China's ghost cities. Sources have been hyperlinked in this article. 

Featured image: youtube.com

Related Articles