বাঙালি সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে রাঙিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে আগামী ২১ শে সেপ্টেম্বর মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি প্রাঙ্গণে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ‘অঙ্কুর ২০১৯'। প্রতি বছর এম.আই.এস.টি. লিটারেচার এ্যান্ড কালচারাল ক্লাব প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে থাকে, যেখানে সারা দেশের অন্তত ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০টি কলেজের প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে থাকে।
২০১৭ এবং ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং ২০১৮ সালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম, তরুণ কথা সাহিত্যিক সাদাত হোসাইন, চিরকুট ব্যান্ড, চলচ্চিত্র পরিচালক শিহাব শাহীন, নাট্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু সহ আরও অনেকে। এমনকি বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং অনেক কীর্তিমান ব্যাক্তিবর্গ যারা আসতে পারেননি তারাও শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন। অঙ্কুর ২০১৮ এবং ২০১৭ এ মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল চ্যানেল আই, প্রিন্ট মিডিয়া হিসেবে ছিল ডেইলি স্টার, বেভারেজ পার্টনার হিসেবে নেসক্যাফে এবং স্পন্সর হিসেবে ছিল বাংলাদেশ নৌবাহিনী, ট্রাস্ট ব্যাংক, সনিক প্রাইম গ্রুপ।
প্রতিযোগিতায় নাচ, গান, অভিনয়কে ভিত্তি করে রঙমেশালী, সাহিত্যকে ভিত্তি করে গল্প পূরণ, কথোপকথন, বাংলা ও বিশ্ব সাহিত্য অলিম্পিয়াড, চিত্রকথা এবং চিত্রকর্মকে ভিত্তি করে তুলিকাব্য, ক্যানভাসে আঁকি, ফটোটেল কম্পিটিশন, ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক কম্পিটিশন সহ সর্বমোট ১১টি সেগমেন্ট রয়েছে। যার মধ্যে গত দুই বছর রঙমেশালী, চিত্রকথা, কুইজ প্রতিযোগিতা, কালচারাল কেস কম্পিটিশন প্রচুর সাড়া পেয়েছিল। রংমেশালী সেগমেন্টে যেকোনো একটি দল তাদের উপস্থাপনার মূল বিষয়বস্তুকে নাচ, গান ও অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরবে, যেখানে তাদের বিষয়বস্তু এবং উপস্থাপনার উপর ভিত্তি করে নম্বর প্রদান করা হবে।
চিত্রকথা সেগমেন্টে চলমান সময়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ৫-১০ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হবে। প্রামাণ্যচিত্রের ভিত্তিতে অর্থগত ভাব লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হবে। কালচারাল কেস কম্পিটিশনে বাংলা সাহিত্য ও শিল্প সংস্কৃতির আলোকে একটি বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে আগে থেকে। সেই বিষয়কে নিয়ে প্রতিটি দল তাদের উপস্থাপনার সারসংক্ষেপ Google Drive-এ আপলোড করে রেজিস্ট্রেশন পেইজে লিংক পাঠাতে হবে। বাছাইকৃতদের থেকে সেরা ১২টি দল সুযোগ পাবে মূল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। কথোপকথন সেগমেন্টে ২টি চরিত্রের মধ্যে ৪ লাইন কথোপকথন দেওয়া থাকবে। সে অনুযায়ী বাকি কথোপকথনগুলো শেষ করতে হবে।
একটি A4 সাইজ কাগজ দেওয়া হবে। এক পিঠে থাকবে ৪ লাইন কথোপকথন। সেই চরিত্র দুটি নিয়েই শেষ করতে হবে কথোপকথন। বাংলা ও বিশ্বসাহিত্য অলিম্পিয়াডে ৪০ নম্বরের MCQ এবং ২০ নম্বরের একটি লিখিতসহ সর্বমোট ৬০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। অলিম্পিয়াডটি হবে মূলত রুলবুক-এ উল্লেখিত বাংলা সাহিত্যের মহান ৪ জন সাহিত্যিকের জীবনী ও সাহিত্যকর্ম এবং বিদেশি সাহিত্যের ৩টি নির্ধারিত উপন্যাস ও কমিক্সের উপর ভিত্তি করে। ফটোটেল কম্পিটিশনে প্রতিযোগীদের একটি আলোকচিত্র পাঠাতে হবে এবং সাথে পাঠাতে হবে একটি ছোট লেখা। লেখাটি হতে পারে ছবিটির পেছনের গল্প নিয়ে কিংবা শুধু ছবিটির ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে। লেখাটি হতে পারে গল্পমূলক, অনুভূতিমূলক, অভিজ্ঞতা নিয়ে। বাছাইকৃত সেরা কাহিনীসহ আলোকচিত্রগুলো নিয়ে হবে প্রদর্শনী।
কুইজ প্রতিযোগিতায় লিখিত এবং Buzzer এই দুটি রাউন্ড থাকবে। অর্থাৎ লিখিত রাউন্ডটি হবে এলিমিনেশন রাউন্ড যেখান থেকে সেরা ৪টি দল Buzzer রাউন্ডে অংশগ্রহণ করবে। লিখিত রাউন্ডটি হবে বিষয়ভিত্তিক তবে Buzzer রাউন্ডটি হবে যেকোনো বিষয়ের উপরে, যা সম্পূর্ণ কুইজ মাস্টারের উপর নির্ভর করবে। তুলিকাব্য সেগমেন্টে প্রতিযোগিতার দিন নির্ধারিত সময়ের আগে বিষয়বস্তু অথবা কাঠামো প্রদান করা হবে। প্রতিযোগিরা বেশ কিছুক্ষণ সময় পাবেন চিন্তাভাবনা করার, চিন্তাকে গুছিয়ে নেবার। তারপর সীমিত সময় পাবেন তাদের চিত্রকর্ম তোলার জন্য।
চিত্রকর্ম হতে পারে স্কেচ, তৈলচিত্র, অ্যাক্রিলিক ইত্যাদি (যেকোনো মিডিয়াম)। ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক কম্পিটিশনে ইভেন্ট পেইজে কয়েক লাইনের একটি বিষয়বস্তু দেওয়া হবে। বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে এবং নিজের কল্পনাশক্তিকে ব্যবহার করে দৃষ্টিনন্দন একটি ডিজিটাল আর্টওয়ার্ক প্রস্তুত করতে হবে। আর্টওয়ার্কটি হতে পারে একটি ছবি অথবা একটি ভিডিও। গল্প পূরণ প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক প্রতিযোগীকে ২ পৃষ্ঠা A4 কাগজ দেওয়া হবে (এপিঠ ওপিঠ মিলিয়ে ৪ পৃষ্ঠা)। প্রথম পৃষ্ঠার শুরুতে একটি গল্পের কয়েকটা লাইন দেওয়া থাকবে। সেই লাইনগুলো বুঝে সেই অনুযায়ী পুরো গল্প সাজাতে হবে। সময় বেঁধে দেওয়া হবে এবং সেই সময়ের মধ্যে যার যার গল্প শেষ হবে। ক্যানভাসে আঁকি প্রতিযোগিতায় ক্যানভাসে আঁকা চিত্রের/চিত্রগুলোর ছবি তুলে পাঠাতে হবে। পাঠানো ছবিগুলো থেকে সেরা কয়েকটি ছবি বাছাই করা হবে এবং বাছাইকৃত সেরা চিত্রগুলো নিয়ে হবে প্রদর্শনী। বাছাইকৃত প্রতিযোগীগণ তাদের চিত্র বাঁধাই করে প্রতিযোগিতার দিন উপস্থিত থাকবেন।
এছাড়াও প্রতিবছরের মতো এবারেও প্রতিযোগিতাটির স্মারক হিসেবে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ম্যাগাজিন ‘ওঙ্কার', যেখানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশের বাইরের শিক্ষার্থীদের পাঠানো লেখা ছাপানো হয়ে থাকে। ওঙ্কার ম্যাগাজিনে গতবছর জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং সাদাত হোসাইন এর লেখা ছাপা হয়েছিল। এমনকি সুদূর কোলকাতা থেকেও ম্যাগাজিন ‘ওঙ্কার’ এ লেখা এসেছিল। এম.আই.এস.টি. লিটারেচার এ্যান্ড কালচারাল ক্লাব প্রতিযোগিতাটি সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করার মাধ্যমে তাদের সাফল্য সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এছাড়াও এম.আই.এস.টি. লিটারেচার এ্যান্ড কালচারাল ক্লাব সারাবছর এমআইএসটি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। তার মধ্যে বসন্তবরণ উৎসব, পহেলা বৈশাখ, বর্ষা বরণ উৎসব, ক্যাফে কনসার্ট, পাঠচক্র অন্যতম। ক্লাবটি এম.আই.এস.টি-র শিক্ষার্থীদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে আগ্রহী করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মশালা আয়োজন করে থাকে। এ সকল কাজ সম্পাদন করার জন্য ক্লাবটিতে অভ্যন্তরীণ ৭টি দল কাজ করে থাকে, যাদের মধ্যে দল আনন্দলোক সাহিত্য চর্চা নিয়ে, দল অগ্নিবীণা গান এবং সুর নিয়ে, দল অবনীল যন্ত্রসংগীত নিয়ে, দল সেলুলয়েড স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র নিয়ে, দল ঝংকার নৃত্যশিল্প নিয়ে, দল ছন্নছাড়া পর্যটনশিল্প নিয়ে, দল চারকোল চিত্রশিল্প নিয়ে কাজ করে থাকে। এছাড়াও দল আনন্দলোক প্রতিবছর এম.আই.এস.টি-তে দেয়াল পত্রিকা ‘চিত্রকূট’ প্রকাশ করে থাকে, যেখানে শুধুমাত্র এম.আই.এস.টি-র শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিভা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। এম.আই.এস.টি লিটারেচার এ্যান্ড কালচারাল ক্লাব সাহিত্য এবং সংস্কৃতির শেকড়কে তুলে ধরার জন্য ‘শেকড়ের তরে’ মূলমন্ত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।
আগামী ২১ শে সেপ্টেম্বর, শনিবার সারাদিনব্যাপী অনুষ্ঠানটিতে বাঙালি সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক নিদর্শন দেখা যাবে এমআইএসটি প্রাঙ্গণে, যেখানে সারা দেশের চলচ্চিত্র এবং চিত্রকর্মের যশস্বী ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। ‘অঙ্কুর ২০১৯' প্রতিযোগিতাটিতে সব সেগমেন্টে সর্বমোট প্রাইজমানি থাকবে ২ লক্ষ টাকা। সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাহিত্য এবং সংস্কৃতির এক বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনা প্রদর্শিত হবে এম.আই.এস.টি. প্রাঙ্গণে।
আয়োজনটিকে সুষ্ঠু ভাবে পরিবেশনের সমন্বয়ে এম.আই.এস.টি. ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণকে আরো রঙিন করে তুলতে সকলে সাদরে আমন্ত্রিত।
‘অঙ্কুর ২০১৯’ ইভেন্ট লিংকঃ www.facebook.com/events/396036651257708/
রেজিস্ট্রেশন লিংকঃ apps.mist.ac.bd/aunkur/
ওয়েব সাইটঃ mistlcc.com/
ফেসবুক পেইজঃ www.facebook.com/mistlcc/
This is an article in Bangla language. It describes the detail of a literature and cultural festival, 'AUNKUR 2019' happening at Military Institute of Science and Technology. It is the third edition of this colorful festival.
Featured Image: MISTLCC