Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়: সেরাদের মাঝে সেরা, শ্রেষ্ঠত্বের মাঝে অনন্য

২০০৯ সালে নিজেদের প্রতিষ্ঠার ৮০০ বছর পালন করলো ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইংল্যান্ডের এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আরেক বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ডের কাছাকাছি সময়েই। সেই থেকে আজ অবধি সগৌরবে চলে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। সমানতালে প্রতিযোগিতা করে চলেছে অক্সফোর্ডের সাথে। কিছু ক্ষেত্রে অক্সফোর্ডকেও পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে বহুদূর। শত শত বিজ্ঞানী, দার্শনিক আর বিপ্লবীদের পদচারণায় সর্বদা মুখর থেকেছে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। অন্য সব দিক বাদ দিলেও কেবল একটি দিকের জন্যই ক্যামব্রিজের গুণগান করে শেষ করা যাবে না। আর তা হচ্ছে এর বিপ্লবী প্রকৃতি এবং পরমত সহিষ্ণুতা।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়; source: NDTV.com

শুরুর কথা

সে সময় পুরো ইংল্যান্ডের একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ডের পণ্ডিতদের সাথে স্থানীয় লোকদের বিবাদ লেগেই থাকতো অহরহ। চার্চ বনাম বিশ্ববিদ্যালয়, এরূপ বৈরী আবহাওয়া ছিল অক্সফোর্ডের জন্য স্বাভাবিক। অবশ্য এর কারণও আছে। প্রাথমিকভাবে অক্সফোর্ড ছিল অতিমাত্রায় চার্চ দ্বারা প্রভাবিত এবং সেখানে পড়ালেখার সুযোগ পেত কেবলই সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তানরা। ফলে শ্রেণীভেদ থেকে প্রায়ই কলহের সৃষ্টি হতো। অন্যদিকে প্রবল ক্ষমতাধর চার্চের পাদ্রীগণ ইহুদিদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে বিষিয়ে তুলতো। উত্তেজিত জনতার হাতে ইহুদিদের নির্মমভাবে হত্যা হবার ঘটনা ছিল নিত্যদিনের ব্যাপার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে চার্চের কালো তালিকাভুক্ত হয় আরো একটি শ্রেণী। এই শ্রেণীটি হচ্ছে উদারপন্থী ধর্মনিরপেক্ষ শ্রেণী।

১৩ শতকে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়; source: harvardmitcasecompetition.com

মোটের উপর শ্রেণীবিভেদ আর চার্চের বিষোদগার মিলে ১৩ শতকের শুরুর দিকে অক্সফোর্ডে সৃষ্টি করে এক ভয়াবহ দাঙ্গা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভিন্নমত পোষণকারী শিক্ষার্থী এবং পণ্ডিত সেখান থেকে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। তারা আশ্রয় নেন ক্যামব্রিজ শহরে। আর অক্সফোর্ড থেকে পালিয়ে আসা এই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাতে গড়ে ওঠে পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। ১২৩১ সালে অক্সফোর্ডের পাশাপাশি ক্যামব্রিজকে রয়্যাল চার্টার প্রদান করে করমুক্ত ঘোষণা করেন রাজা ৩য় হেনরি। এর দু’বছর পর পোপ এই প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীকে ইংল্যান্ডের যেকোনো স্থানে শিক্ষকতা করার অনুমতি দেন।

মধ্যযুগে ক্যামব্রিজ

ক্যামব্রিজের শুরুটাও মধ্যযুগীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো হয়। স্নাতক শ্রেণীর পাঠ্যক্রমে ছিল ব্যাকরণ, যুক্তিশাস্ত্র এবং অলংকারশাস্ত্র। আর স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল পাটিগণিত, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা আর সঙ্গীতের মতো বিষয়গুলো। এসবের অধিকাংশই ছিল ক্লাসিক্যাল অ্যারিস্টটলীয় বিদ্যা। কিন্তু রেনেসাঁর পর থেকে সব পাল্টে যেতে শুরু করে। পরিবর্তন আসে পাঠ্যক্রমে, অ্যারিস্টটলের সাথে যোগ হয় আরো অনেক দার্শনিকের দর্শন। ১৫ শতকের শুরু দিকেই ৪ বছরের সম্মান এবং ২ বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। আরো চালু হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোর্স। এসব সংস্কারকে কেন্দ্র করে অল্প সময়ের ব্যবধানে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থাপিত হয় ৫টি কলেজ, যার মধ্যে ভুবনখ্যাত ট্রিনিটি কলেজও (১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দ) রয়েছে।

ট্রিনিটি কলেজ; source: trin.cam.ac.uk

এরপর এলো নিউটনীয় যুগ। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত বিপ্লবের গোড়াপত্তন হয় কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই পদার্থবিজ্ঞানীর হাত ধরেই। ১৭ শতকে তার ক্যালকুলাস, গতির সূত্র, মহাকর্ষের মতো আবিষ্কারগুলো সে সময়কার জ্ঞান-বিজ্ঞানের গতিপথই পাল্টে দেয়। সাথে বদলে দেয় ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়কেও। এরপর ক্যামব্রিজের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পদার্থবিজ্ঞান, দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, প্রযুক্তি সহ জ্ঞানের সব শাখাতেই ক্যামব্রিজে অসংখ্য মহামানবদের আগমন ঘটতে থাকে একে একে। যার ধারাবাহিকতায় এই প্রতিষ্ঠান আজ অনায়াসে স্থান করে নেবে পৃথিবীর সফলতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছোট্ট তালিকায়।

নারীশিক্ষার সূচনা

নারীদের জন্য প্রথম কলেজ, গার্টন কলেজ; source: artuk.org

উচ্চশিক্ষায় নারীদের পদচারণার ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়। এই ইতিহাসের অগ্রে থাকবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। ১৯ শতকের শুরু থেকেই ক্যামব্রিজে নারীদের পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়া নিয়ে কথা উঠতে শুরু করে। আলাপ আলোচনা আর পরিকল্পনা বাস্তব রূপ পায় ১৮৬৯ সালে। সে বছর ক্যামব্রিজে প্রথম নারীদের জন্য কলেজ, গার্টন কলেজ স্থাপন করা হয়। এরপর একে একে নিউহ্যাম কলেজ, মারে এডওয়ার্ডস কলেজ, হিউজেস হল স্থাপিত হলে নারীশিক্ষার পথ সুগম হয়। তবে এতটুকু পড়েই ভাববেন না যে ১৯ শতকেই ক্যামব্রিজ একেবারে নারীশিক্ষাবান্ধব হয়ে উঠেছিল!

ডারউইন কলেজ; source: alamy.com

নারীশিক্ষার দ্বার খুলে দিলেও প্রাথমিকভাবে তা পুরোপুরি উন্মুক্ত করেনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে তো নারীদের কোনো পরীক্ষাও নেয়া হতো না, কেবল পাঠদানের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কর্মসূচী আবদ্ধ! ১৮৮২ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপারটি ছিল এই যে, নারীদের তখন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ সদস্যই বিবেচনা করা হতো না। নিজের জন্য বিশেষায়িত কলেজগুলোর সীমাবদ্ধ সুযোগ সুবিধার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কিছুতেই তাদের অধিকার ছিল না। তাছাড়া চার বছরের স্নাতকও নারীদের জন্য অনুমোদিত ছিল না। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ‘ডিপ্লোমা’ কোর্স চালু করা হয়। এসব বৈষম্যও অবশ্য নারীশিক্ষা অবদমিত করে রাখতে পারেনি। ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষেত্রে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেই নিয়েছে নারীরা। বর্তমান শতকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীর শতকরা অনুপাত ৫০: ৫০ বা সামান্য কম-বেশি হয়ে থাকে।

কলেজ ও প্রশাসনিক দিক

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় মোট ৩১টি কলেজের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি কলেজই স্বনিয়ন্ত্রিত। এদের মধ্যে মারে অ্যাডওয়ার্ড, নিউহ্যাম ও লুসি ক্যাভেন্ডিস কেবল নারী শিক্ষার্থী ভর্তি করে। বাকী সবগুলোই মিশ্র। তবে প্রাথমিকভাবে প্রতিটি কলেজই কেবল পুরুষ শিক্ষার্থী ভর্তি করতো। মিশ্র কলেজগুলোর মধ্যে ডারউইন কলেজই প্রথম পুরুষের পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থী ভর্তি করে। সকল অনুষদ, বিভাগ, গবেষণাকেন্দ্র, ল্যাবরেটরি এবং পাঠাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। আর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও বাসস্থান, ডিগ্রি প্রদান, পাঠ্যক্রম ঠিক করা, শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি কার্যক্রম চলে কলেজগুলোর আওতায়। তবে সবকিছুই চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় নিয়মকানুন অনুযায়ী। ৬টি কলেজ ব্যতীত বাকীগুলো যেকোনো বয়সের শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। তাছাড়া কলেজগুলোর থাকা, খাওয়া এবং পড়ালেখার খরচের পার্থক্যও চোখে পড়ার মতো।

লুসি ক্যাভেন্ডিস কলেজ; source: .lucy-cav.cam.ac.uk

৩১টি কলেজের আওতায় ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে মোট ১৫০টি বিভাগ, অনুষদ, স্কুল আর সিন্ডিকেট। এগুলো মূলত ৬টি প্রধান স্কুলের অন্তর্ভুক্ত। এ ৬টি স্কুল হচ্ছে আর্টস অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ, সোশ্যাল সায়েন্স, ফিজিক্যাল সায়েন্স, বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, ক্লিনিক্যাল মেডিসিন এবং টেকনোলজি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষকই কোনো না কোনো অনুষদের অন্তর্ভুক্ত হন। অনুষদের মূল কাজ পড়ালেখা ও পাঠদানের সার্বিক বিষয়াবলী দেখাশোনা করা। অন্যদিকে গবেষণা ও শিক্ষকদের মূল্যায়নের মতো কাজগুলো করে থাকে সিন্ডিকেট।

রিজেন্ট হাউজ; source: alamy.com

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রধান হচ্ছেন আচার্য এবং কার্যত প্রধান উপাচার্য। ক্ষমতা অনুযায়ী তার পরেই থাকেন একজন স্টুয়ার্ড, সহকারী স্টুয়ার্ড, কমিসারি ও দুজন প্রোক্টর। প্রোক্টর ব্যাতীত এই প্রধান ব্যক্তিবর্গের প্রত্যেকেই নির্বাচিত হন সিনেটের ভোটে। সিনেট গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর অ্যালামনাইদের সমন্বয়ে। আর প্রোক্টর নির্বাচিত হন প্রতিটি কলেজের অধ্যক্ষের ভোটে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে ‘রিজেন্ট হাউজ’, যা পদাধিকার বলে সর্বোচ্চদের থেকে শুরু করে সর্বনিম্নদের সমন্বয়ে গঠিত।

ওল্ড স্কুল এলাকা, যেখানে সিনেট ভবনও দৃশ্যমান; source: keytothecity.co.uk

আট শতাধিক বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ ক্যামব্রিজের প্রতিটি ভবনই দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কলেজই ক্যামব্রিজ শহরের কেন্দ্রভাগে ছড়িয়ে আছে। পুরো শহরের মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগের বেশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক স্থাপনাগুলো কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিভক্ত। বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি সহজে বোঝা যাবে। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে জেনে থাকবেন যে সেখানে কার্জন হল, কলা ভবন, রেজিস্টার বিল্ডিং, ফুলার রোড ইত্যাদি রয়েছে। কার্জন হল দ্বারা বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোর অঞ্চল পুরোটাকেই বোঝানো হয়। আবার রেজিস্টার বিল্ডিং হচ্ছে প্রশাসনিক ভবন এবং উপাচার্যের কার্যালয়। সেখানে সিনেট ভবনও রয়েছে। আর আড্ডা দেবার স্থান হিসেবে ফুলার রোডের সুখ্যাতি তো রয়েছেই, যেখানে আছে ব্রিটিশ কাউন্সিল, শিক্ষকদের কোয়ার্টার এবং শিক্ষার্থীদের একটি আবাসিক হল। একইভাবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ও এমন কিছু অঞ্চলে বিভক্ত। যেমন- অ্যাডেনব্রুক, সিলভার স্ট্রিট, ওল্ড স্কুলস, নিউ মিউজিয়াম সাইটস, ওয়েস্ট ক্যামব্রিজ ইত্যাদি।

লাইব্রেরি ও জাদুঘর

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি; source: cambridgeindependent.co.uk

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে মোট ১১৪টি লাইব্রেরি, যা বিশ্বের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লাইব্রেরি ‘ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিগুলোর একটি। এতে রয়েছে ৮০ লক্ষাধিক বই, গবেষণাপত্র এবং পাণ্ডুলিপি। তাছাড়া ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডে প্রতিবছর যত নতুন বই প্রকাশিত হয়, সবগুলোরই একটি সৌজন্য কপি পৌঁছে যায় এই লাইব্রেরিতে। তাছাড়া প্রতিটি কলেজেরই রয়েছে একটি করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। সেগুলোর মধ্যে ২ লক্ষাধিক বই সম্বলিত ট্রিনিটি কলেজের রেন লাইব্রেরি সবচেয়ে বড়। বলা বাহুল্য, প্রতিটি অনুষদ এবং বিভাগেরও রয়েছে নিজস্ব বিশেষায়িত লাইব্রেরি।

রেন লাইব্রেরি; source: trinitycollegelibrarycambridge.wordpress.com

একটি বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ৮টি জাদুঘর। এগুলোর মধ্যে ফিটজউইলিয়াম জাদুঘর চিত্রকর্ম এবং পুরাতত্ত্বের, ‘মিউজিয়াম অব আর্কেয়লজি অ্যান্ড অ্যানথ্রপলজি’তে আছে প্রাচীন এবং দুর্লভ সব পুরাকীর্তি আর হস্তনির্মিত দ্রব্যাদি, জীববিজ্ঞানের পসরা সাজিয়ে রেখেছে ‘মিউজিয়াম অব জুলজি’, রয়েছে নৃবিজ্ঞানের জন্য বিশেষায়িত জাদুঘর ‘মিউজিয়াম অব আর্থ সায়েন্স’। এসব জাদুঘর ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের জন্য বিনা খরচে উন্মুক্ত থাকে। তবে ১৮৩১ সালে স্থাপিত বিশাল বোটানিক্যাল বাগানটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার নেই।

র‍্যাংকিং

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন; source: philanthropy.cam.ac.uk

বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তুলনা করবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিং ব্যবস্থা বর্তমানে তুমুল জনপ্রিয়। আর এসব র‍্যাংকিংয়ে প্রায় প্রতিবারই সেরা পাঁচের মধ্যেই অবস্থান করে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৮ সালে দেশীয় সবগুলো র‍্যাংকিংয়ে ক্যামব্রিজের অবস্থান ১ নম্বরে হলেও, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিছুটা অবনমন হয়েছে। টাইমস হায়ার এডুকেশন র‍্যাংকিংয়ে নিজেদের দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখলেও ‘কিউএস’ র‍্যাংকিংয়ে ক্যামব্রিজ নেমে এসেছে পাঁচে। র‍্যাংকিং ব্যবস্থা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এই লিংকে। যা হোক, র‍্যাংকিংয়ে ক্যামব্রিজের এই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ‘ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস’ এর। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসটি ঐতিহ্যের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো প্রেস।

বাৎসরিক বাজেট ও অন্যান্য

প্রতিযোগী অক্সফোর্ডের চেয়ে তো বটেই, পুরো ইউরোপেই সবচেয়ে ধনী বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট সম্পদের অর্থমূল্য ৪.৮ বিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত হয়। একই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট খরচ ছিল ১.৮ বিলিয়ন পাউন্ড যা বাংলাদেশি টাকায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি, যেখানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ৭০০ কোটি টাকা মাত্র! যা-ই হোক, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের এক-তৃতীয়াংশ আসে সরকারি অনুদান থেকে। বাকী অর্থ আসে গবেষণা, শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য খাত থেকে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী ক্যামব্রিজের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১,৬৫০ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করতে একজন শিক্ষার্থীর খরচ হয় (কোনোরকম বৃত্তি বাদে) ১৬,৬০০ পাউন্ড বা ১৯ লক্ষ টাকা।

জুলজি জাদুঘর; source: coolplaces.co.uk

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সকল দিক থেকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সুবিধা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ঈর্ষণীয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন ‘ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ যা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরই প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলাদেশের ছাত্র ইউনিয়নের সাথে একে তুলনা করলে ভুলই করবেন বৈকি, কারণ এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি অংশ। অন্যদিকে সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার অঙ্গণে ৭৫০টি সংগঠন রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে! তাছাড়া এখানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সংবাদপত্র ‘ভার্সিটি’ এবং রেডিও চ্যানেল ‘ক্যাম এফএম’।

source: rtaylor.co.uk

সুদীর্ঘ এক ইতিহাসের গৌরবময় সব অধ্যায় ধারণকারী ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল অসংখ্য ঐতিহ্য এবং প্রথা, যেগুলোর অধিকাংশই কালের স্রোতে হারিয়ে গেছে। প্রচলিত প্রথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রথাটি ছিল ‘উডেন স্পুন’ বা কাঠের চামচ প্রথা। স্নাতক পরীক্ষায় সবচেয়ে কম নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে দেয়া হতো উডেন স্পুন। তবে ১৯০৮ সাল থেকে পরীক্ষার ফলাফল বর্ণক্রমে প্রকাশ করতে শুরু করলে এই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ উডেন স্পুন পাওয়া শিক্ষার্থীর নাম ল্যামপ্রেয়ার। তার চামচটি ছিল ৩ মিটারের মতো লম্বা। তবে ক্যামব্রিজের একটি প্রথা আজও বেঁচে আছে এবং তা বিশ্বজুড়েই প্রচলিত হয়ে গেছে। বড়দিনের উৎসবমুখর সন্ধ্যায় ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম গাওয়া হয়েছিল ‘দ্য ফেস্টিভাল অব নাইন লেসনস অ্যান্ড ক্যারলস’ যা কিনা ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডের একটি জাতীয় প্রথা ও ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে এটি বড়দিনে বিশ্বজুড়ে প্রচার করে থাকে বিবিসি ।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ উডেন স্পুন ও তার বিজেতা ল্যামপ্রেয়ার; source: wordhistories.net

দীর্ঘকাল ধরে নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য যথাযথভাবে ধরে রেখে এমন কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীতে বিরল। সেক্ষেত্রে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই নিজের তুলনা। কত শত মহামানব এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন, অধ্যাপনা করেছেন তার তালিকা করতে গেলেও ভিরমি খেতে হয়। শেষ করবো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হওয়া সবচেয়ে উজ্জ্বলতম নামগুলোর একটি ছোট্ট তালিকা দিয়ে, যাদেরকে শুধু ক্যামব্রিজ নয়, পুরো পৃথিবীই স্মরণ করে প্রতিনিয়ত।

  • এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা মোট ১১৬টি নোবেল পুরস্কার জিতেছেন যা বিশ্বের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি।
  • পদার্থবিজ্ঞানী- স্যার আইজ্যাক নিউটন, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল, রজার বেকন, নীলস বোর, পল ডিরাক, আর্নেস্ট রাদারফোর্ড, রোবার্ট ওপেনহাইমার, স্টিফেন হকিং।
  • গণিতবিদ- ডি মরগ্যান, শ্রীনিবাস রামানুজান, ব্রুক টেইলর।
  • জীববিজ্ঞান- চার্লস ডারউইন, জগদীশ চন্দ্র বসু, রোজালিন্ড ফ্রাংকলিং, জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক।
  • কম্পিউটারবিজ্ঞানী- চার্লস ব্যাবেজ, অ্যালান টিউরিং।
  • সাহিত্যিক- এডমান্ড স্পেন্সার, জন মিল্টন, ই. এম ফস্টার, জে. বি প্রিস্টলি, সেবাস্তিয়ান ফকস, থমাস ন্যাশ, রোবার্ট গ্রিন।
  • রাজনীতিবিদ- ১৫ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ৩০ জন বিদেশি প্রধানমন্ত্রী/প্রেসিডেন্ট, ৯ জন রাজা।

ফিচার ছবি: pinterest.co.uk

Related Articles