Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

উপযোগবাদ: ২৫ জন নির্দোষকে বাঁচাতে একজন নির্দোষকে হত্যা করবেন কি?

হলিউডের জনপ্রিয় মুভি সিরিজ ব্যাটম্যান কে না ভালোবাসে? কঠোর নীতি এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার এক অসম লড়াইয়ে সদা ব্যস্ত থাকা ব্যাটম্যানের সততার দিকে আঙ্গুল তুলতে বললে অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নেবে? কিন্তু ব্যাটম্যান কি আসলে পুরোপুরি নির্দোষ? ব্যাটম্যান অসংখ্যবার জোকারকে হত্যা করার সুযোগ পেয়েও হত্যা করে না। অথচ জেল থেকে বেরিয়ে জোকার বারংবার শহরজুড়ে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে চলে। ব্যাটম্যান যদি জোকারকে প্রথম সুযোগেই হত্যা করে ফেলতো তাহলে বেঁচে যেত অনেকগুলো জীবন। তাহলে এবার ব্যাটম্যানের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে একবার ভাবুন তো, আপনি কোনো মানুষ খুন করেননি বলে আপনি ভালো মানুষ? নাকি একজন খুনীকে খুন না করার জন্য আপনার সততা প্রশ্নবিদ্ধ? এই উত্তর মিলবে নীচের উক্তিটিতে।

কান্টিয়ানিজমে বিশ্বাসী ব্যাটম্যান কখনোই জোকারকে হত্যা করতে পারে না; image source: coffeeandgeeks.wordpress.com

“কে কী করছে তা বিচার্য নয়। একজন ভালো মানুষ কখনো সীমা লঙ্ঘন করে না!”- ইমানুয়েল কান্ট

১৮ শতকের বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের এই দর্শন ‘কান্টিয়ানিজম’ নামে পরিচিত। আর কাল্পনিক গোথাম শহরের রক্ষক ব্যাটম্যান হলেন একজন আগাগোড়া কান্টি, অর্থাৎ যিনি কান্টিয়ানিজমে বিশ্বাস করে। এই কান্টিয়ানিজম হচ্ছে পরম একটি ব্যাপার। আপনার পরিপার্শ্বে যা কিছুই ঘটুক না কেন, আপনি আপনার সততার সীমা লঙ্ঘন করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে খুন করা অবশ্যই সীমা লঙ্ঘন, হোক সে হাজার খুনের খুনী জোকার! এই দর্শনের কোনো ব্যতিক্রম নেই, নেই কোনো প্রশ্রয় বা অছিলা। নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষা কিংবা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার দোহাই দিলেও কান্টিয়ানিজম হত্যা করার অনুমতি দেবে না। কান্টিয়ানিজমের এই একগুঁয়ে দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় ২৩০০ বছর আগে গ্রিক দার্শনিক ইপিকিউরাসের হাত ধরে প্রবর্তিত হয়েছিল। কী সেই দৃষ্টিভঙ্গি?

গ্রিক দার্শনিক ইপিকিউরাস; image source: thephilosophersmail.com

নীতি নৈতিকতাকে কান্ট যেভাবে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, ইপিকিউরাস করেছিলেন একটু ভিন্নভাবে। তিনি বাঁধাধরা নীতি ঠিক না করে বরং ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নিজের নীতি ঠিক করতেন। যে কাজটি করলে ফলাফল ভালো হবে বলে মনে হতো, তিনি সে কাজই করতেন। আর এই দর্শনকে বলা হয় ইপিকিউরিয়ানিজম। এই ইপিকিউরিয়ানিজমের সূত্র ধরেই ১৮ শতকে কান্টের কান্টিয়ানিজমের বিপরীত তত্ত্ব দাঁড় করান দার্শনিক জেরেমি বেন্থাম এবং জন স্টুয়ার্ট মিল। এই তত্ত্বের নাম ‘ইউটিলিটারিয়ানিজম’ বা উপযোগবাদ। ইপিকিউরিয়ানিজমের মূল বক্তব্য হচ্ছে মানুষের কাজ এমন হতে হবে যেন তার সমতুল্য সুখ ভোগ করা যায়। কিন্তু উপযোগবাদ সমতুল্য নয়, বরং সর্বোচ্চ সুখের প্রতি গুরুত্ব দেয়। উপযোগবাদ কোনো কাজের পেছনের উদ্দেশ্যের চেয়ে বরং পরবর্তী ফলাফলের উপর অধিক গুরুত্ব দেয়।

ভালো ফলাফল মানেই ভালো কাজ, যদি তা সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তিকে খুশি করতে পারে। হ্যাঁ, এটিই হচ্ছে উপযোগবাদ, যেখানে যেকোনো কর্মের পেছনে যুক্তি হিসেবে এর ফলাফল বিচার করা হয়। ফলাফল যদি সুখদায়ক হয়, তাহলে সে কাজকে আর কোনো ছাঁচে ফেলে মাপবার দরকার নেই। মোটের উপর আমাদের সব কাজের উদ্দেশ্য তো সুখই। কোনো দ্বিমত আছে? তাহলে একটা উদাহরণ দেয়া যাক। আপনি পড়ালেখা করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে চান কেন? একটু ভিন্ন পথে যদি উত্তর দেন তাহলে বলবেন আপনি নিজের মেধার স্বীকৃতি চান, পিতামাতাকে খুশি করতে চান কিংবা ভালো একটি চাকরি চান। এরপর আরো প্রশ্ন আসবে যে মেধার স্বীকৃতির কী প্রয়োজন, ভালো চাকরিই বা কেন চাওয়া? এভাবে একটির পিঠে আরেকটি প্রশ্ন জুড়ে দিতে থাকলে শেষতক উত্তর একটি দাঁড়াবে, সেটি হচ্ছে “আমার যা ভালো লাগে আমি তা-ই করি।” অর্থাৎ ভালো লাগা বা সুখানুভূতি লাভই সব কাজের শেষ কথা।

এ দুজনের হাত ধরেই আধুনিক উপযোগবাদের উত্থান; image source: youtube.com

সুতরাং উপযোগবাদের মূল কথা হচ্ছে যেকোনো কাজই করা হোক না কেন, তা হতে হবে সুখের উদ্দেশ্যে এবং দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য। এ কারণে অনেকে উপযোগবাদকে একটি ‘হিডোনিস্টিক’ বা আনন্দবাদী তত্ত্ব বলে অভিহিত করেন। আবার অনেকে এর সাথে ‘ইগোইজম’ বা অহংবাদের সাদৃশ্য খুঁজে পান। উল্লেখ্য ইগোইজম বলে, প্রত্যেক মানুষকে নিজের সুখ আহরণের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী নৈতিকতা ঠিক করতে হবে। কিন্তু উপযোগবাদ আদতে তা বলে না। উপযোগবাদ সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে সুখী করা যায়, এমন নৈতিক পন্থা অবলম্বন করার পরামর্শ দেয়। সোজা কথায়, উপযোগবাদে বিশ্বাসী হলে আমাদেরকে এমন কাজ করতে হবে যা সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের জন্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ উপকার বয়ে আনবে। আর একে বলা হয় উপযোগবাদের মূলনীতি।

এ পর্যন্ত এসে উপযোগবাদকে বেশ ভালোই মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই? তাহলে মনে করিয়ে দেই, গোলাপেরও কাঁটা থাকে। হ্যাঁ, পৃথিবীর কোনো তত্ত্বই পরম নয়, উপযোগবাদও নয়। এই তত্ত্বে পুরোপুরি বিশ্বাসী হলে ব্যবহারিক জীবনে পদে পদে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। একটি তুচ্ছ উদাহরণ দিয়ে উপযোগবাদের সীমাবদ্ধতার আলোচনা শুরু করা যাক। মনে করুন, আপনার চাইনিজ খাবার পছন্দ, তবে সবচেয়ে বেশি পছন্দ থাই খাবার। আপনার জন্মদিনে আপনার বাবা প্রস্তাব করলেন যে পুরো পরিবার মিলে আপনার সবচেয়ে পছন্দের রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো, আপনি বাদে পরিবারের সবার চাইনিজ খাবার অধিক পছন্দ। এই পরিস্থিতিতে আপনি কী করবেন?

এরকম পরিস্থিতিতে কোনটা বেছে নেবেন আপনি? image source: restaurantxpozz.wordpress.com

উপযোগবাদের কাছে সমাধান চাইলে আপনাকে অবশ্যই চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যেতে হবে, যদিও আপনার তা ইচ্ছে করছে না। কারণ উপযোগবাদ সর্বোচ্চ সংখ্যার সর্বোচ্চ পরিমাণ সুখে বিশ্বাসী। একটি বড় পরিসরে উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশের সকল জেলায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। কিন্তু শিল্পোন্নত অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুতের সরবরাহ মোটামুটি ভালো। এক্ষেত্রে উপযোগবাদ প্রয়োগ করলে বিদ্যুৎ সেবাপ্রাপ্তির সংখ্যাটা বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু মান হ্রাস পাবে। যদি একই পরিমাণ উৎপাদনে সকল জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়, তাহলে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ বিদ্যুৎ পেয়ে খুশি হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিল্পকারখানা। তাহলে আপনি কোনটা করবেন? শিল্পের উন্নয়নের জন্য কেবল উন্নত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবেন, নাকি উপযোগবাদ মেনে অধিক সংখ্যক মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে শিল্পোন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত করবেন?

অনেকেই হয়তো উন্নত অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু উপযোগবাদ এক্ষেত্রে দাবি করবে যে, সকলেই সমান এবং কোনোপ্রকার সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কেউ কারো চেয়ে ‘বিশেষ’ নয়। সেক্ষেত্রে শহরের শিল্পোন্নত জনগোষ্ঠী যতটুকু বিদ্যুৎ পাবার অধিকার রাখে, গ্রামের দরিদ্র চাষাভুষারাও ততটুকুই অধিকার রাখে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহের সিদ্ধান্তটি যিনি গ্রহণ করবেন, তাকে অবশ্যই নিরপেক্ষ জায়গা থেকে বিবেচনা করতে হবে। কারণ তিনি যে অঞ্চলের অংশ, সে অনুযায়ী তার ভাবনা প্রভাবিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাকে “আমি কী করবো” না ভেবে এভাবে ভাবতে হবে যে “আমি একজন আগন্তুক হলে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে কী করতাম”।

উপযোগবাদের ঝামেলাগুলো সবে উঁকি দিতে শুরু করেছে। উপযোগবাদের সমালোচনা করতে গিয়ে উপরের দুটি দৃশ্যকল্পের চেয়েও আরো জটিল এক দৃশ্যকল্পের অবতারণা করেছিলেন ব্রিটিশ দার্শনিক বার্নার্ড উইলিয়াম। ধরা যাক, জন নামক একজন পর্যটক ঘুরতে ঘুরতে কোনো এক দ্বীপে পৌঁছে গেছেন, যেখানে একজন অত্যাচারী রাজার শাসন চলছে। তিনি যখন রাজদরবারে পৌঁছুলেন, তখন দেখলেন যে ২৫ জন নির্দোষ বন্দীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এই বন্দীদের জন্য জনের মন খারাপ দেখে রাজা একটি বিকল্প রাস্তা ঘোষণা করলেন। বিকল্পটি হচ্ছে এমন, জনকে যেকোনো একজন বন্দীকে গুলি করে হত্যা করতে হবে। তাহলে বাকি ২৪ জনকে রাজা মুক্ত করে দেবেন! এখন জনের কী করা উচিৎ?

২৪ জনকে বাঁচাতে একজনকে হত্যা করবেন নাকি ২৫ জনের মরে যাওয়া দেখবেন? image source: youtube.com

উপযোগবাদ অনুযায়ী চোখ বন্ধ করে একজনকে হত্যা করে ফেলা উচিৎ জনের। কিন্তু বার্নার্ড উইলিয়ামের সেদিকে সায় নেই। তার মতে পৃথিবী ধ্বংস হবার উপক্রম হলেও একজন নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা যাবে না (কান্টিয়ানিজম)। এক্ষেত্রে জনের উপরও দোষ চাপানো যাবে না যে তিনি সুযোগ পেয়েও ২৪ জন মানুষের জীবন রক্ষা করেননি। বরং, বার্নার্ড এভাবে ভেবেছেন যে, এখানে জনের তো কোনো দোষই নেই। যা হচ্ছে সব অত্যাচারী রাজার খামখেয়ালিপনার জন্য। জন কেন অযথা একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করতে যাবে? তবে উপযোগবাদীরা বার্নার্ডের এই দৃশ্যকল্পের বিপরীত সমাধানও দিয়েছেন। তারা বলছেন, জন কোনো একজনকে হত্যা করলেও তা আসলে হত্যা করা হবে না! কারণ, জন হত্যা না করলে তো সে মারাই যাচ্ছে। তাই, জন আদতে একজন মৃত মানুষকেই কেবল গুলি করে ২৪ জন মৃত্য মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে!

উপযোগবাদকে পরিত্যাগ করবেন কি না সে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে এর প্রকারভেদ আলোচনা করলে। বেন্থাম এবং মিল উপযোগবাদের দুটি শ্রেণী করে দিয়ে গেছেন। প্রথমটি হচ্ছে ‘অ্যাক্ট ইউটিলিটারিয়ানিজম’ যা ক্লাসিক্যাল উপযোগবাদ নামেও পরিচিত। ক্লাসিক্যাল উপযোগবাদ যেকোনো অবস্থায় যেকোনো পরিস্থিতিতে উপযোগবাদের মূলনীতি, অর্থাৎ “সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যকের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণ সুখ” এর জন্য কাজ করতে বলে। এই নীতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়তো সুফল বয়ে আনবে। কিন্তু নীচের দৃশ্যকল্পটির মতো কোনো দৃশ্যকল্প কি ভেবে দেখেছেন কখনো?

এই পাঁচজন রোগীকে ইচ্ছা করলেই বাঁচাতে পারেন আপনি, কিন্তু তার বদলে আরেকজনকে হত্যা করবেন?; image source: youtube.com

আপনি একজন ডাক্তার। আপনার কাছে পাঁচজন রোগী এসেছেন যাদের যথাক্রমে ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, যকৃৎ এবং শেষ দুজনের একটি করে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করানো প্রয়োজন। এরা সবাই বয়োবৃদ্ধ এবং আপনি মোটামুটি নিশ্চিত যে ট্রান্সপ্লান্ট করার পরও এরা কেউ ১ বছরের বেশি বেঁচে থাকবে না। তথাপি ডাক্তারের কাজ জীবন বাঁচানো, কতদিন বাঁচবে সে হিসাব করা নয়। তাই আপনি প্রয়োজনীয় অঙ্গসমূহ খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু রক্তের গ্রুপ, বয়স ব্যবধান, বংশগত রোগসহ নানা জটিলতার কারণে যথার্থ সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে বিস্ময়করভাবে আপনার প্রতিবেশী এক তরুণের প্রতিটি অঙ্গই পাঁচজন রোগীর চাহিদার সাথে পুরোপুরি মিলে গেল। বলে রাখা ভালো, এই তরুণের কোনো আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বা পরিচিতজন কেউ নেই। সে নিতান্ত একজন বেকার ভবঘুরে। সে মরে গেলে পৃথিবীর কোনো উপকার না হলেও কোনো ক্ষতিও হচ্ছে না! তাহলে আপনার কি উচিৎ নয় তাকে হত্যা করে তার ৫টি অঙ্গ ট্রান্সপ্লান্ট করে পাঁচজন রোগীর জীবন বাঁচানো?

এখানে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকাদের জন্য রয়েছে উপযোগবাদের দ্বিতীয় শ্রেণী ‘রুল ইউটিলিটারিয়ানিজম’। উপযোগবাদের এই ধারা অনুযায়ী উপযোগবাদের মূলনীতি অবশ্যই মেনে চলতে হবে তবে কিছু ‘রুল’ বা নিয়ম মেনে। সেসব নিয়মের একটি হচ্ছে উপযোগ বিবেচনার সাথে সাথে স্থায়ীত্ব বিবেচনা করা। অর্থাৎ, উপযোগ কত সময় স্থায়ী হবে তা-ও একটি বিবেচ্য বিষয় এখানে। এক্ষেত্রে উপযোগবাদের মূলনীতিটি হবে, “সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যকের জন্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সময় স্থায়ী হবে এমন সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সুখের ব্যবস্থা করা।” তাহলে উপযোগবাদের দ্বিতীয় ধারা মানলে আপনাকে আপনার প্রতিবেশী তরুণকে হত্যা করতে হবে না। কারণ, তাকে হত্যা করে যে ৫ জনের জীবন আপনি বাঁচাবেন, তাদের সম্মিলিত উপযোগের স্থায়ীত্ব মাত্র ৫ বছর। বিপরীতক্রমে আপনার প্রতিবেশী তাদের সম্মিলিত উপযোগের স্থায়ীত্বের চেয়েও বেশি সময় বেঁচে থাকবেন। তাই, পাঁচজন রোগীর জন্য আপনি একজনকে হত্যা করার অনুমতি পাচ্ছেন না।

পুরো আলোচনা পড়ে থাকলে উপযোগবাদের প্রাথমিক ধারণা আপনি পেয়ে গেছেন। আরো গভীরভাবে জানতে জন স্টুয়ার্ট মিলের ‘অন লিবার্টি’ ও ‘ইউটিলিটারিয়ানিজম’ কিংবা জেরেমি বেন্থামের ‘অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য প্রিন্সিপ্যালস অব মোরালস অ্যান্ড লেজিসলেশন’ পড়তে পারেন। তবে পৃথিবীর তাবৎ তত্ত্বের মতো এই উপযোগবাদের ভালো মন্দের আলোচনারও কোনো শেষ নেই। গ্রহণ করা না করা পুরোটাই পাঠকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। যদি অধিক সংখ্যক মানুষ উপযোগবাদের বিপক্ষে মতামত প্রদান করে, তাহলে কিন্তু লাভ হবে জোকারের! কারণ, ব্যাটম্যান উপযোগবাদে বিশ্বাসী হলে কতকাল আগেই যে তাকে ধরাধাম ত্যাগ করতে হতো!

ফিচার ছবি: ethicsunwrapped.utexas.edu

Related Articles